- রোমান্টিক লাভ স্টোরি ঢাকা।
- রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প
- রিয়েল খুব রোমান্টিক গল্প।
- লাভ স্টোরি।
- Real love golpo.
- বাংলা লাভ স্টোরি গল্প।
১.রোমান্টিক লাভ স্টোরি ঢাকা
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দুইটা মেসেজ এসেছে ফোনে। একটায় লিখা আছে “ক্যাশ ইন ১০ হাজার টাকা”। আরেকটা নতুন প্রেমিকার। ওটায় লিখা ” টাকা পেয়েছ জান?”।
তাড়াতাড়ি উঠে চোখে পানি দিয়ে আবার চেক করলাম। না ঠিক ই আছে। বিকাশে আমার একাউন্টে ১০ হাজার টাকা। আর টাকাটা যে প্রেমিকা দিয়েছে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। চুপচাপ থাকলাম রুমমেট বলদগুলোকে এই কথা বলা যাবে না। শালারা কথায় কথায় ট্রীট চায়। এই কথা শুনলে নির্ঘাত ২ হাজার টাকা চলে যাবে ওদের খাওয়াতে। মনের মধ্যে যদিও পিটবুলের গান চলছিল। কিন্তু বাইরে অপরাধী গানের মতো মুখ করে ছিলাম।
প্রেমিকার মেসেজের রিপ্লাই দিলাম।
হ্যাঁ জান টাকা পেয়েছি। কিন্তু হঠাৎ এতো টাকা কেন?
ওপাশ থেকেঃ তোমার রুমমেটদের এই টাকা দিয়ে দিও। ওরা কিছু কিনে নিবে।আর দুপুরে তোমাকে নিয়ে বের হবো শপিং করার জন্য।তোমার জন্য যা যা লাগে আমি কিনে দিবো।
আমিঃ ওদের দশ হাজার টাকা দিয়ে দিবো? মানে বুঝলাম না।
ওপাশ থেকেঃ হ্যাঁ, ওদের দেখিয়ে দেও তোমার প্রেমিকার মন কেমন।
আমিঃ ঠিক আছে দিয়ে দিলাম।( যদিও দেইনাই। দিমুও না)
ওপাশ থেকেঃ ঠিক দুপুরে রেডি থাকবা কিন্তু।
আমিঃ ঠিক আছে।
আমার এই প্রেমের বয়স মাত্র ২৬ দিন। কিছুদিন আগেই নাদিয়া নামের এই মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় টিএসসিতে। একা বসে আছি দেখি একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ফুল বিক্রি করতে করতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এসে বললো ” ভাইয়া এখান থেকে আপনাকে একটা ফুল কিনতে হবে”। আমি অবাক হয়ে বললাম “কেন?”। নাদিয়া উত্তর দিলো ” আসলে ফুল গুলো ওর না, একটা পিচ্চি মেয়ের। মেয়েটার খুব অসুস্থ ছিল সেদিন। তাই ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নাদিয়াই ওর ফুল বিক্রি করছে। এসব শুনে ওর সবগুলো ফুল কিনে নিয়েছিলাম ( টিউশনির টাকা পাওয়াতে পকেট গরম ছিল)। তারপর সেখান থেকেই নাদিয়ার সাথে আমার পরিচয়।
নাদিয়া আর আমি মার্কেটে ঘুরছি আর শপিং করছি। ও আমাকে ৫ টা প্যান্ট, ২ টা শার্ট ২ পাঞ্জাবি আর ৫ টা টিশার্ট কিনে দিয়েছে। আমি ওকে একটা জামা কিনে দিতে গিয়েছিলাম।ও একদম রাজি হয়নি। বলেছে আমি চাকরি পেলে তখন আমার কাছে থেকে ইচ্ছেমতো মার্কেট করে নিবে।মনে মনে ভাবছি আল্লাহ আমার কপালে কি প্রেমিকা দিয়েছে এটা। এতো ভালো কপাল কোনো ছেলের হয়!
নাদিয়াই বললো, চলো আজ দুজন একসাথে ইফতার করি? মেসের পঁচা ইফতার খাইতে খাইতে পেটের খারাপ অবস্থা। তার উপর প্রেমিকার এই চমৎকার অফার শুনে মনটা একদম আনন্দে নেচে উঠলো।
পুরান ঢাকা এসেছি নাদিয়ার সাথে ইফতার করতে। কাবাব, কাচ্চি, বিরিয়ানি কি ছিল না সেই ইফতারে। ইফতার করে নাদিয়া বললো ” চলো তোমাকে মেসে পৌঁছে দেই”। সিএনজি তে উঠে নাদিয়ার কাঁধে মাথা দিয়ে গল্প করছি। কখন যে ঘুম এসেছে মনে নেই।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি। সামনে একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমার চোখ খুলতে দেখে বললেন ” খুব বেঁচে গিয়েছেন এবার। একটা কিডনি নিয়েছে খালি”। অপেক্ষা করুন এক্ষুনি পুলিশ আসবে।
ডাক্তারের কথা শুনে বা পাশের কোমরে হাত দিয়ে দেখি পিছন দিকে ব্যান্ডেজ করা। বাংলা ছবির মতো মনে হলো স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি ডাক্তার কি বলে এসব!
একটুপর পুলিশ এগিয়ে এসে বললো “আপনি রুদ্র আহমেদ?”
মাথা উপর-নিচে করে “হ্যাঁ” জানলাম। উনি বললেন আপনার সাথে কি ঘটেছিল সব বিস্তারিত ভাবে বলুন তো শুনি। পুলিশ কে সব ঘটনা খুলে বললাম। উনি শুনার পর বললেন ” হায়রে বলদা বেডা আজকালকার দিনে ২৬ দিন প্রেম করে এতো টাকা কোনো মেয়ে খরচ করে বলদ কোথাকার! ঢাকা শহরে ইদানীং একটা চক্র নেমেছে। এদের কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যবান মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা তারপর সুযোগ বুঝে কিডনি চুরি করা। গত তিন মাসে এমন ৮ টা কেস ঘটেছে। আপনি নয় নাম্বার। সবার একটা করে কিডনি নিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। আপনাকে রাতে রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে টহলদার পুলিশ তুলে এনে এখানে ভর্তি করে।
ডাক্তার কে ডাক দিয়ে বললাম ” ডাক্তার আমার আরেকটা কিডনি বের করে নেন। এই জীবন রাখমু না”।
প্রেমিকা
রিফাত আহমেদ
…………………………………
…………………………………….
২.রোমান্টিক লাভ স্টোরি গল্প
গল্পঃ বান্ধবী।
এক.
_আজ খেয়ে যাবেন।
– কী?
– মা বলেছে আজ রাতে আমাদের এখানে খেয়ে যাবেন।
সুরাজ কিছুটা বিস্মিত হলো। দুই মাস ধরে সুমনাকে পড়ায়, এখনো সুমনার মাকে দেখেনি। ওর বড় বোন চা- নাস্তা দেয়। নাস্তার কোয়ালিটি খুব ভালো। সুরাজের এক বন্ধুর মাধ্যমে এ টিউশনি পেয়েছে। ১ম মাসের টাকার খাম সুমনার বড় বোনই দিয়েছে। ওদের বাবা নেই। এর বেশি কিছুু আর সুরাজ জানেনা।
সুরাজের বন্ধু ইয়াসিনের দূর সম্পর্কের খালা সুমনার মা। সুমনা ক্লাস টেনে আর ওর বড় বোন অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের অপেক্ষায়। নাম সুজানা। লম্বা, শ্যামবর্ণ, কোন ছেলের সর্বনাশ ডেকে আনার মতো দুটো চোখ, মায়াবী মুখশ্রীর অধিকারী সুজানা। দুইবোনই কথা খুব কম বলে। পড়ার বাইরে সুমনার সাথে অতিরিক্ত কোন কথা যেমন হয়না সুজানাও নাস্তা দিতে এসে কোন কথা বলেনা।
ইয়াসিনের কাছ থেকেও ওদের সম্পর্কে বিশদ কোন গল্প শোনেনি সুরাজ। তাই হঠাৎ করে সুমনার এ কথায় কিছুটা আশ্চর্যই হলো সুরাজ। বাইরে তার কোন কাজ না থাকায় খাওয়ার কথা প্রত্যাখ্যান করলো না।
শুধু বলল- ঠিক আছে।
সুরাজ যদিও সুমনার শিক্ষক, সুমনা কখনো সুরাজকে স্যার বা ভাইয়া কিছুই ডাকেনা। ভাববাচ্যে কথা বলে আর কথা বলার পরিমাণ নিতান্তই অল্প। ছাত্রী হিসেবে সুমনা খুবই ভালো।তাই, তেমন কথাবার্তার প্রয়োজনও পরেনা।
পড়া শেষ করে সুমনা চলে গেলো।
যাওয়ার সময় শুধু বলে গেলো- বসেন।
পনেরো মিনিট পরেই সুজানা এলো। সুরাজের কাছে মনে হলো সুজানা আজ হালকা সাজগোজ করেছে। অন্যদিন সাধারণভাবেই থাকে। সাজ করায় আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বললঃ
– চলেন, মা বসে আছেন। খাবো।
– চলুন।
সুরাজ সুজানার পিছু পিছু গেলো।দুইটা রুম পেরিয়ে ডাইনিং। বাইরে থেকে বুঝা যায়না ঘরে এতগুলো কক্ষ রয়েছে।
ডাইনিং রুমে ঢুকে সুরাজ ইয়াসিনকে দেখে আশ্চর্য হলো। ইয়াসিন তো তাকে বলেনি যে,আজ সে আসবে। ইয়াসিনের পাশে বসে আছেন অত্যন্ত রূপবতী মধ্যবয়সী একজন মহিলা, রাতেও চোখে কালো চশমা। না চিনিয়ে দিলেও বুঝা যায়- ইনিই সুজানা,সুমনার আম্মা।
– আচ্ছালামুআলাইকুম, সুরাজ সালাম দিলো।
সালামের উত্তর দিয়ে উনি সুরাজকে বললেন
– বসো বাবা। যদিও আজ তোমার সাথে প্রথম দেখা, ছেলের বয়সী বলে তুমি করেই বললাম।
– ঠিকাছে খালাম্মা, তুমি করেই তো বলবেন আর আমিও আপনাকে খালাম্মা ডাকলাম।
– ঠিক আছে বাবা। এসো আমরা খেয়ে নেই। খাওয়ার পর আরো কথা কবে।
বলেই সুজানাকে ডাক দিয়ে খাবার আনতে বললেন। ইয়াসিন চুপচাপ বসে আছে।
খাওয়া শেষ করে ডাইনিং টেবিলেই আবার আলাপ শুরু হলো। একথা সে কথার পর খালাম্মা সুরাজকে বললেন ঃ
– বাবা সুরাজ,তোমাকে আমি তোমার জন্মকাল থেকেই চিনি। তোমার মা আমার খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলো। বিয়ের পরও আমাদের মাঝে যোগাযোগ ছিলো। ভাগ্যক্রমে আমরা পাশাপাশি বাসায়ই ছিলাম। হঠাৎ দুর্ঘটনায় আমার চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা ঢাকায় চলে আসি। তোমার মায়ের সাথে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকদিন পর খবর পাই, ২য় বার বাচ্চা নিতে গিয়ে তোমার মা মারা যায়। ইয়াসিনের কাছ থেকে তোমার গল্প শুনে ইয়াসিনকে তোমার ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলি। সব মিলে যায়। তোমাকে টিউশনির অফার দিয়ে নিয়ে আসি।
দুই.
সুজানার মায়ের আলাপ শুনে সুরাজ অতীতে হারিয়ে যায়। মায়ের চেহারা তার মনে নেই।কয়েকটি ঝাপসা ফটোগ্রাফ দেখে কল্পনায় সে মায়ের ছবি পুরো করতো। সুরাজের বাবা তাকে আট বছর বয়সে মামার বাড়ি রেখে বিদেশে যান। এসএসসি দেওয়া পর্যন্ত তিনি খোঁজখবর রাখতেন,খরচ দিতেন। হঠাৎ করে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন। সে জানেনা বাবা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা! এইসএসসি পর্যন্ত মামাই পড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠার পর হলেই থেকেছে, টিউশনি করে নিজের খরচে চলার শুরু তখন থেকেই। মাস্টার্স শেষ করে দুই বছর ধরে চাকুরীর খোঁজ করছে মেসে থেকেই।
সুজানার মা বলতে থাকেন- তোমার মায়ের সাথে কথা ছিলো আমার মেয়ে হলে আমরা সম্পর্ক দীর্ঘ করতে নতুন করে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হতে দুজনে বেয়াইন হবো। তোমার খোঁজ পাবার আগেই সুজানার সাথে আমি এসব আলাপ করেছি। এখনতো সে তোমাকে দেখেছে, যতটুকু সম্ভব জেনেছে আর আমার মেয়ের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব প্রখর এবং সে তোমাকে পছন্দ করেছে। এখন বাবা তোমার যদি মত থাকে,আমরা এগুতে পারি। তবে তুমি ভাবার মতো সময় নাও,ভেবেই বলো।
সুরাজ এরকম পরিস্থিতির জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলনা। কিন্তু তার মনে হচ্ছে, সে একজন আপনজনের দেখা পেয়েছে। সাথে সাথে সিদ্ধান্ত না নিয়ে সে বলল- খালাম্মা আমি দুয়েকদিনের মধ্যেই আপনাকে জানাবো। তারপর বিদায় নিয়ে ইয়াসিন আর সে একসাথে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় দেখলো একটু দূরে দাড়িয়ে সুজানা আর সুমনা মিটিমিটি হাসছে।
পথে ইয়াসিন তাকে আরো বুঝালো আর পরামর্শ দিলো সুরাজ যেন তার মামার সাথে পরামর্শ করে। সুরাজের মনেও এরকমই ছিলো। পরদিনই সে মামাকে বিস্তারিত জানালো। সুরাজের মামা সুজানার মা নাদিয়া বেগমকে আগে থেকেই ভালো করে জানতেন। তিনি সুরাজকে বললেন- তোর যদি মত থাকে তবে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবেই আলাপ করবো। সুরাজ মামাকে ইতিবাচক উত্তর দিয়ে সুমনাকে পড়াতে গেলো। আজ সুমনা তাকে বলল- স্যার না ভাইয়া ডাকবো?
সুরাজ বলল- তোমার খুশি।
ভাইয়াই ভালো, বলল সুমনা।
সুজানা নাস্তা নিয়ে আসলে আজ অনেকক্ষণ কথা হলো। তারপর সুরাজ নাদিয়া বেগমের সাথে দেখা করে জানালো- খুব তাড়াতাড়িই তার মামা বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসবেন।
চারজনের চোখেমুখে দেখা গেলো আনন্দের ঝিলিক।
৩.রিয়েল লাভ স্টোরি
সুন্দরী একটা মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর জানতে পারলাম এই মেয়ে আমার সাবেক প্রেমিকার ছোট বোন। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। এইডা আমি কি করছি।
এর বড় বোনের জ্বালায় পাগল হয়ে দুই মাস আগে পাবনা থেকে ছাড়া পাইছি। আবার যদি এই মেয়ের সাথে আমার প্রেয় হয়। তাহলে ডাক্তার বলছে “এবার মাথার গন্ডগোল হলে। আমি তাহলে সারাজীবনের জন্য পাগল হয়ে যাবো”।
হঠাৎ দেখি একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন। ফোনের ওপাশ থেকে কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে আর বাকি রইলো না এটাই আমার সেই সাবেক প্রেমিকা।
সে চিৎকার দিয়ে বললো “তোর মতো একটা ছাগলের সাথে প্রেম করে আমার জীবন শেষ। আর সেই তোর সাথে প্রেম করে আমার ছোট বোনের জীবন শেষ হতে দিবো”?
ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না আমার। এমন সময় হঠাৎ করে আব্বার একটা মহান বাণী মনে পড়লো, আব্বা কইছে বিপদে সব সময় সাহস রাখবি। আমি বুকে সাহস এনে বললাম “কও কি! ঐ সুন্দরী মেয়েটা তোমার ছোট বোন? কিভাবে সম্ভব”! সে বললো, কিভাবে সম্ভব মানে? আমি আমতাআমতা করে বললাম, “না মানে তোমার গায়ের রংয়ের সাথে ওর রঙ যায় না”।
সাবেক প্রেমিকা বললো “তুই এইডা কি কইলি? আমার গায়ের রঙ নিয়ে খোটা দিলি? অই তুই চিনস আমারে? আমি কিন্তু সামীম ওসমানের এলাকার লোক। তোর লাশ যদি শীতলক্ষ্যা নদীর মধ্যে না ডুবাইছি তাইলে আমার নাম শিলা না”।
মনে মনে তিনবার বিপদের দোয়া পড়ে বুকে ফু দিলাম। খুব মনে আছে একবার রমযান মাসে দিনের বেলায় কি যেন একটা কথায় উত্তেজিত হয়ে ফোনে শিলাকে চুম্মা দিছিলাম বলে সে রমযান পরে আমাকে ৩০ টা রোযা করাইছিল। এইবারে তার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিছি। সেই সাথে শরীর নিয়েও খোটা দিছি। আল্লাহ জানে কপালে কি আছে।
ভয়ে ফোন কেটে দিয়ে ভাবলাম বাসা থেকে আর বের হবো না। কপালে যা হবার হবে। এই মেয়ের সাথে এখান থেকেই সব শেষ।
আমি এখন খুব ভদ্র ছেলে। বাসা থেকে বের হইনা। ঘরেই নামাজ কালাম পড়ি। আম্মা কয়েল আনতে দিলেও আমি বাসা থেকে বের হইনা। ছোট ভাইকে পাঠায় দেই৷ বলা যায় না। শিলা যদি সত্যি সত্যি আমাকে মেরে ফেলে।
কি যেন একটা কাজে একটু জন্য বের হইছি।হঠাৎ পিছন থেকে একটা রুমাল দিয়ে কে যেন নাক চেপে ধরলো। তারপর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম চেয়ারের সাথে হাত পা বাঁধা। মুখের মধ্যে একটা কাপড় ঢুকানো। হাত পা একটু এদিকওদিক করার ব্যবস্থা নেই। বুঝলাম মৃত্যু খুব কাছে। সামনে তাকিয়ে দেখি শিলা সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইয়া বড় একটা চাকু নিয়ে। ১০০ পাওয়ারের লাইটের আলো সেই চাকুর উপর পরে চকচক করছে। শিলা সেই চালু নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো, হারামজাদা তুই আমার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দেস। আর আমার গায়ের রঙ নিয়ে মজা নেস৷ আজকেই তোর জীবনের শেষ দিন। সাথে সাথে চাকুটা আমার পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে এলো। মনে হলো আমি মরে গেছি। এখানেই আমার জীবনের শেষ।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে বুঝতে চেষ্টা করলাম আমি জান্নাতে, না জাহান্নামে। যতটুকু মনে আছে জাহান্নামে শুধু আগুন আর আগুন। কিন্তু আমার আশেপাশে কোনো আগুন নেই অথচ আমি চোখের সামনে একটা সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পাচ্ছি। শাড়ি পরে ঝাটা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম জান্নাতে ঝাটার দরকার কি? আর এই মেয়ে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন। আচ্ছা এটা জান্নাতের হুর নয় তো? আচ্ছা দেখিতো অর্ডার করে, কথা শুনে নাকি।
মেয়েটাকে বললাম “এই যাও আমার জন্য ছাগলের দুধের চা নিয়ে আসো”। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললো ” ভাইজান আমি ছাগলের দুধ পামু কই”? আমি মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বললাম ” এই তুমি কোথায় পাবা সেটা আমি কিভাবে জানি, তুমি যেখান থেকে পারো এনে দেও”। মেয়েটা হঠাৎ ও আল্লাহ ও আল্লাহ করে বলে উঠলো “চাচিমা ভাই আবার পাগল হয়ে গেছে।আসেন দেখেন ভাই এসব কি উল্টাপাল্টা বলতেছে। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন”।
হঠাৎ দেখি আম্মা আমার সামনে। আম্মাকে দেখে কইলাম “আম্মা আপনিও জান্নাত পাইছেন? আপনি মরলেন কবে? আব্বা জান্নাত পায়নাই? আব্বাকে দেখতেছি না যে ? নাকি আব্বা এখনো মরেনাই”?
দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দেওয়ার পর আম্মা কইলো” চাইয়া দেখ এইটা জান্নাত না, দুনিয়া। আর আমি এখনো মরিনাই”। আম্মারে কইলাম “তাইলে আমার সামনে শাড়ি পরে ঝাটা হাতে দাঁড়িয়ে আছে এইটা হুর না”? আম্মা আরো দুইটা থাপ্পড় দিয়ে কইলো ” এইটা আমাদের নতুন কাজের মেয়ে সুরমা। তোর রুম পরিষ্কার করতে আসছে”।
মনে মনে কইলাম ” তার মানে আমি মরিনাই, স্বপ্ন দেখছি”।
আম্মা চিৎকার করে আব্বাকে ডেকে কইলো, পাবনার হটলাইনে কল দিয়ে তারাতাড়ি কও এম্বুলেন্স পাঠাইতে। পোলা আমার আবার গেছে”।
দুঃস্বপ্ন
রিফাত আহমেদ
****রিয়েল খুব রোমান্টিক গল্প
“আমি বিয়ে করব না, আকাশ’দা!”
থমথমে মুখে আকাশের টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল পিহু।
আকাশ খাতা থেকে মুখ না তুলেই বলল, “আমাকে এসে এসব বলছিস কেন? খালাকে গিয়ে বল।”
পিহু ভেংচি কেটে বলল, “বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি বললে হেসে উড়িয়ে দেবে। তুমি বল।”
আকাশ এবার মুখ তুলল।
একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আর আমি বললে কেঁদে ভাসাবে!”
পিহু মাথা চুলকালো।
“তাহলে কি করব?”
আকাশ হাই তুলে চুটকি বাজাল৷
“বিয়েটা করে ফেল। ঝামেলা করিস না।”
পিহু এবার পিছিয়ে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল।
চিন্তিত মুখে বলল, “কাল সকালে পার্লারে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে যাই?”
আকাশ এক ভ্রু উঁচু করল, “কার সাথে?”
পিহু বিরক্ত হল।
“কার সাথে আবার? একাই!
কোন বান্ধবীর বাড়ি গিয়ে লুকিয়ে থাকব।”
আকাশ কিছুক্ষণ চুপচাপ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “তোর সমস্যাটা কি?”
“আমার আবার কি সমস্যা?”
“এরকম পাগলের মত কথাবার্তা বলছিস কেন?”
পিহু চুপ করে রইল৷
আকাশ বলে চলল, “ছেলে তোর পছন্দ না, আগে বললেই পারতিস। বিয়ের আগের দিন এরকম ভ্যানতারা করার মানে কি?”
পিহু এবারও চুপ করে রইল।
ছেলে পুরো টম ক্রুজের মত দেখতে।
লম্বা, ফর্সা!
ভালো জব করে, ফ্যামিলি ভালো।
কি দেখে না করত পিহু!
কিন্তু অজানা একটা ভয় যেন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল ওকে।
ভেবেছিল, চেনাজানা হলে হয়ত ভয়টা কেটে যাবে।
উল্টো দিনে দিনে আরো বেড়ে চলেছে।
কিসের ভয়, সে জানে না!
ম্রিয়মাণ সুরে সে মাথা নিচু করে বলল, “ভয় লাগছে, আকাশ’দা!”
আকাশ হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মত করে যেন ভয়টা উড়িয়ে দিল।
“দূর!
ভয়ে তো থাকার কথা ওই ব্যাটার!
তোর মত মাথা খারাপ একটা মেয়েকে বিয়ে করছে, কপালে না জানি কী আছে ওর!”
পিহুর মুখের ভাব ভীষণ হয়ে উঠল।
“আমার মাথা খারাপ?”
আকাশ কিছু না বলে ঘুরে খাতার দিকে মন দিল।
পিহু কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
“কি হল? বল! আমার মাথা খারাপ?”
আকাশ মুখ না তুলেই বলল, “নীরবতা সম্মতির লক্ষণ, তাও বুঝিস না?
এখন যা এখান থেকে, আমাকে কাজ করতে দে!”
পিহু কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে গেল।
তারপর ঝড়ের বেগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল৷
আকাশ আড়চোখে সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
পাগলিটা আর বড় হল না!
চার বছরের পিহুকে সাথে নিয়ে ছোট খালা যেদিন ওদের বাড়িতে আসে, তখন আকাশ বছর দশেকের।
ছোট ভাইবোন ছিল না বলে বাড়িটা বরাবরই শান্ত থাকত। কিন্তু পিহু আসার পর সেই শান্তবস্থায় ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করল।
ছোট্ট পিহু গুটি গুটি পায়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। আর মাঝে মাঝে এটা সেটা উল্টে ফেলে দেয়। কেউ তাকে ধরতে গেলে ধরতে গেলে ঠোঁট উল্টে কাঁদে।
এই উল্টো পাল্টা বিচিত্র বাচ্চাটা বাড়িতে বৈচিত্র্য এনে দিল৷
বাড়ির সবাই ওকে নিয়ে তটস্থ!
কিন্তু বাচ্চাটা কারো কথা খুব বেশি মানে না।
কেবল আকাশকে দেখলে শান্ত হয়ে যায়।
লক্ষী মেয়ের মত সব কথা মেনে নেয়।
বড় হওয়ার পর আরো।
পিহুর বাবা ডিফেন্সে জব করতেন।
কালেভদ্রে বাড়ি আসতেন। পুরোটা সময় পিহু বাবার উপর যে অদৃশ্য অভিমান করে থাকত, তার অনেকটাই ভুলিয়ে দিত ওর আকাশ দা।
ভাই হোক, বন্ধু হোক, বাবা হোক- সব যেন সে একাই।
বছর পাঁচেক হল আকাশ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে বাড়ি ছেড়েছে।
কিন্তু পিহুকে ছাড়তে পারেনি।
দিনের মধ্যে অন্তত তিনবার ফোন করে পিহুর বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হয় তার।
বিয়ের কথা শুনে প্রথমে একটু রাগই করেছিল আকাশ।
এত ছোট একটা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার এখনি কী তাড়া?
সবে টুয়েলভথ এ উঠল।
ওর নিজেকে সামলানোর বুদ্ধি নেই, সংসার কী সামলাবে!
কিন্তু ছেলেটাকে সামনাসামনি দেখার পর ভালো লেগেছে ওর।
মনে হয়েছে, ছেলেটা সৎ।
পিহুকে খুব ভাল রাখবে।
“হ্যাঁ রে, পিহুকে কি বলেছিস, ও কাঁদছে কেন?”
মায়ের গলা শুনে ফিরে তাকাল আকাশ।
“আমি আবার কি বললাম?”
“আমি কি জানি?
বিয়ের কনে, এরকম নাক মুখ ফুলিয়ে কাঁদছে!
তুই যে কবে বড় হবি!”
আকাশ হা করে তাকিয়ে বলল, “আমি কবে বড় হব?
ওই নেকু পুষি কবে বড় হবে!
আজ বাদে কাল বিয়ে, গিন্নী হয়ে যাবে।
এখন এসব ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কাঁদার কি মানে?”
উত্তর খুঁজে না পেয়ে মা মুখ বাঁকিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
আকাশ এক মুহূর্ত দরজার দিকে তাকিয়ে উঠে পড়ল।
ফতুয়া ছেড়ে টি-শার্ট গায়ে দিল।
গাধীটার কান্না থামাতে হবে।
মোড়ের আইসক্রিমের দোকানের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বের হল।
আকাশকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে বাবা গেটের কাছ থেকে ডাকলেন, “আকাশ কি বাইরে যাস নাকি?”
“হ্যাঁ বাবা!” সাড়া দিল আকাশ।
বাবা এগিয়ে এসে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলেন।
“এই বেটা কিবরিয়া সকালে জিনিসপত্র দিয়ে যাবে বলে আর পাত্তা নেই। তুই আসার সময় ওর দোকান হয়ে আসিস।”
আকাশ লিস্ট হাতে নিয়ে মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল।
*
সামিয়ানার নিচে বর চুপচাপ বসে আছে।
মুখে রুমাল দেয়ার আদিখ্যেতা নেই।
সাধারণত বিয়ের দিন বরকে খুব ম্রিয়মান দেখায়।
কিন্তু এই ছেলেকে রাজপুত্রের মত লাগছে।
আকাশ ব্যস্ত হয়ে খাবারের একটা বড় ডিশ হাতে এদিকে আসছিল, পথের মাঝে ছোট খালা ওকে ধরে এক কোণায় নিয়ে এলেন।
কম্পিত গলায় ফিসফিস করে বললেন, “পিহুকে কোথাও পাচ্ছি না।”
আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
“পাচ্ছি না মানে? বাড়িভর্তি লোক।
কোথায় যাবে?”
খালার মুখটা ফ্যাকাশে।
“জানি না।
আধাঘন্টা আগেও ঘরে ছিল। বর আসার পর সবাই এদিকে বর দেখতে চলে এসেছে।
একটু আগে উপরে গিয়ে দেখছি, ঘরে নেই।”
আকাশ ফোঁস করে নি:শ্বাস ফেলল।
মেয়েটার কি সত্যিই মাথা খারাপ?
হাতের খাবারের ডিশটা খালার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আকাশ আশ্বাস দিল।
“আমি দেখছি খালা। তোমার এখনি কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।”
খালা ডিশ হাতে কাঁপতে লাগলেন।
কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, “ছেলের বাড়ির সবাই বউকে দেখতে উপরে যেতে চাচ্ছে।
আমি কি করি!”
“বলো যে, বিয়ের আগে কনে দেখা কিসের?
কবুল হোক, তারপর তাদের বউ বাড়ি নিয়ে গিয়ে দিনরাত প্রাণ ভরে দেখবে। আসছি।”
আকাশ দ্রুত গলায় কথাগুলো বলে ছুট দিল।
পাগলি মেয়েটা কোথায় যে কী করছে, কে জানে!
*
চিলেকোঠার ঘরটাতে কেমন ধুলো ধুলো গন্ধ।
দরজায় ঠেলা দিতে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেল।
সামনেই মেঝেতে ধুলোমাখা তক্তপোশে জমকালো সাজে সজ্জিত পিহু বসে আছে।
চোখের কাজল হালকা লেপটানো।
আকাশ ঢুকতেই সে মুখ তুলে বলল, “ভয় লাগছে আকাশ’দা!”
আকাশের মুখচোখ লাল।
ভেবেছিল, খুঁজে পাওয়ার পর ছোটবেলার মত কান ধরে নিচে নিয়ে আসবে।
কিন্তু পিহুর চোখের এই ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি দেখে পুরো রাগটা কেমন পানি হয়ে গেল।
সে এগিয়ে এসে ওর পাশে হাঁটু ভাঁজ করে বসল।
নরম গলায় বলল, “তাই এখানে এসে বসে আছিস?”
পিহু মলিনমুখে বলল, “ছোটবেলায় মা’র পিটুনি থেকে বাঁচতে দৌড়ে এসে এই ঘরে লুকাতাম৷ এই ঘরে তুমি ছাড়া আর কেউ তো আসত না। নিরাপদ মনে হত।
আজ পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে মনে হল, কোথায় পালাই?
তারপর কখন যে এখানে চলে এলাম, বুঝতেই পারলাম না।”
আকাশ আলতো করে ওর মাথায় হাত রাখল।
মৃদু গলায় বলল, “আজ থেকে তোর আরেকটা চিলেকোঠার ঘর হতে যাচ্ছে রে পাগলি!
সেই ঘরটা এমন ধুলোয় ভরা না, ফুলে সাজানো!
বিশ্বাস না হলে নিচে এসে দ্যাখ, একটা রাজপুত্র এসেছে। তোকে রাণী করে নিয়ে যাবে বলে!”
পিহুর চোখ উপচে জল এল।
সে ধরা গলায় বলল, “যদি কখনো আমার সেই ঘর ছেড়েও আবার পালাতে মন চায়?”
আকাশ ওকে হাত ধরে টেনে তুলল৷
হেসে বলল, “পালিয়ে যাবি।
কিন্তু রাজপুত্রের হাতটা ছাড়বি না।
যেখানে যাবি, বগলদাবা করে নিয়ে যাবি।
আন্ধাগিট্টু, বুঝলি?”
আকাশের বলার ধরনে চোখভর্তি পানি নিয়ে পিহু ফিক করে হেসে ফেলল।
আকাশ তাড়া দিল, “এখন তাড়াতাড়ি চল।
তোর প্রজারা সব রাণীকে দেখবে বলে নিচে হুল্লোড় করছে!”
পিহু লাজুক মুখে চোখ মুছে মাথা নাড়ল।
চিলেকোঠার ছোট জানালা দিয়ে বাইরের আলো এসে ওর মুখে পড়েছে।
ইন্দ্রাণীর সাজটাতে যেন আলোটা আরো মাধুর্য যোগ করেছে।
পিহুর মুখের সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেখে আকাশের চোখে অকারণেই জল চলে এল।
পিহুকে আড়াল করে সে দ্রুত চোখ মুছে নিল।
ছেলেমানুষদের কাঁদতে আছে নাকি?
*
“আমি বিয়ে করব না রে পিহু!”
বছর তিনেক পরে পিহুদের বাড়িতে আবার সানাই এর সুর বেজেছে। চারপাশে মৃদু কোলাহল।
একটু পরে বরযাত্রী বেরুবে।
এর মাঝে আকাশের হতাশ গলা শুনে কোলের ভেতর ছটফট করতে থাকা দুরন্ত বাচ্চার দিক থেকে চোখ ফেরাল পিহু।
মুখ বাঁকিয়ে বলল, “আহা!
এখন কেন? খুব তো ভোলাভালা কথা বলে আমাকে বিয়েটা দিয়ে দিয়েছিলে।
এবার বোঝ, কেমন লাগে?”
“পালিয়ে যাব?”
“কে পালাবে? কোথায় পালাবে?”
দরজার কাছে থেকে ভরাট গলা বলে উঠল।
আকাশ আর পিহু যুগপৎ দরজার দিকে তাকাল।
পিহুর বর, ফয়সাল।
হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
এগিয়ে এসে পিহুর কোল থেকে বাবুকে নিয়ে বলল, “ভাইয়া, পালিয়ে বেশিদূর যাওয়া যাবে না।
তারচেয়ে গিট্টুটা বেঁধেই নিন।”
“গিট্টু?”
আকাশ চোখ কপালে তুলল।
পিহু হাসি হাসি গলায় উত্তর দিল, “হ্যাঁ, কেন মনে নেই?
যে সে গিট্টু নয়,
একেবারে আন্ধাগিট্টু!”
**
(সমাপ্ত)
ছোটগল্প- #প্রজাপতি_বিস্কুট
-মাহবুবা মাহমুদ
৪. লাভ স্টোরি
পায়ের মোজার মধ্যে এক হাজার টাকার তিনটা নোট লুকিয়ে রাখলাম। ছাত্রের মা একটু আগেই এই মাসের টিউশনির টাকা দিয়ে গেলো। ছাত্রের সামনে এমন ভাব করলাম যে যেন মনে করে পা চুলকাচ্ছি।
টিউশনি থেকে বের হয়েই দেখি রিমু রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। রিমু হচ্ছে আমার প্রেমিকা। আট বছর ধরে প্রেম করি। আমার থেকে দুই ক্লাস উপরে পড়ে। আগে একসাথেই পড়তাম। কিন্তু দুইবার ফেল করার কারণে এখন ও আমার সিনিয়র। এইজন্য ওর কথায় ওঠবস করতে হয়।
আমাকে দেখেই ও বললো ” টিউশনির টাকা দিছে?”
আমি আমতাআমতা করে বললাম, না দেয়নাই তো। কেন কি হইছে? তুই না বললি আজ টিউশনির টাকা দিবে? রেগে গেলে প্রেমিকা আমাকে তুই করে বলে। সিনিয়র তো তাই কিছু বলতে পারি না। চুপচাপ থাকলাম কোনো উত্তর দিলাম না।
কিরে উত্তর দেস না কেন? আবার আমতা আমতা করে বললাম ” আজকে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দেয় নাই।”
প্রেমিকা কাছে এগিয়ে এসে বললো ” প্যান্টের পকেট থেকে হাত বের কর। আমি চেক করে দেখবো “। আমি বাধ্য ছেলের মতো পকেট থেকে হাত বের করে থাকলাম। প্রেমিকা আমার পকেট আর মানিব্যাগ সব একটা একটা করে চেক করলো। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে বললো ” ঠিক আছে আর চেক করবো না। মনে মনে ভাবলাম যাক বাবা বাঁচলাম। ধরা খেলে আজ নির্ঘাত ১২ টা বাজিয়ে ছাড়তো।
প্রেমিকা হঠাৎ বলে উঠলো, আজ আমি টিউশনির টাকা পেয়েছি চলো আজ আমি তোমাকে খাওয়াবো। দুনিয়াতে প্রেমিকার টাকায় খাওয়া খাদ্যের স্বাদ বেশি হয়। এটা প্রত্যেকটা পুরুষ মাত্রই জানে।
রেস্টুরেন্ট বসে আছি প্রেমিকা একটার পর একটা অর্ডার দিয়েই যাচ্ছে। খাবারের তালিকা দেখে প্যান্টের বেল্ট একটু ইজি করে দিলাম ( বেশি খাওয়ার জন্য)। ওয়েটার একটার পর একটা খাবার দিচ্ছে আর আমি সাবাড় করে দিচ্ছি।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে চুপচাপ বসে আছি ভদ্র ছেলের মতো। এমন সময় প্রেমিকা বলে উঠলো ” আজ সকাল ৯ টা ২৩ এ তুমি ঘুম থেকে উঠছ। তারপর বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েছ ১৮ মিনিটে। তারপর আমাকে বলছ কাপড় ধুয়ে দিবা কিন্তু ঐ সময় তুমি পাশের রুমের ছেলেদের সাথে বসে তাস খেলছ। সেখান থেকে উঠে গোসল করছ ২৫ মিনিট ধরে। তারপর আমাকে বলছ নামাজ পড়তে যাবা কিন্তু নামাজ পড়তে না গিয়ে ফেইক আইডি দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে চ্যাটিং করেছ। তারপর আমাকে বলেছ ঘুম আসবে কিন্তু ঘুম না এসে তুমি তোমার মোবাইলে এন্ডগেম মুভি দেখেছ। তারপর মুভি দেখা শেষ করে আমাকে বলেছ পড়তে বসবে কিন্তু পড়তে না বসে ছাদে গিয়ে পাশের বিল্ডিংয়ে আসা নতুন ভাড়াটিয়ার মেয়ের সাথে উঁকিঝুঁকি দিয়েছ। তারপর সেখান থেকে সোজা এই টিউশনিতে এসেছ। আমি কি কিছু ভুল বলেছি?”
প্রেমিকার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি। একটা কথাও ও মিথ্যে বলেনি। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? মাথার মধ্যে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল। ঘোর ভাঙ্গলো ওয়েটারের কথা শুনে।
এক্সকিউজ মি ম্যাম আপনার বিলটা। আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ৩ হাজার ১৫ টাকা বিল এসেছে।
ওয়েটার চলে গেলে রিমু বলে উঠলো ” আমাকে মিথ্যে বলে কি হয় তোমার?”
ধরা পড়া চোরের মতো চুপচাপ বসে আছি। কোনো কথা বলছি না মুখ দিয়ে। কথা বললেই বিপদের আশংকা।
হঠাৎ রিমুর ফোনে একটা মেসেজ এলো। রিমু মেসেজ টা বের করে আমার দিকে ফোন ধরে বললো ” মেসেজ টা জোরে পড়ে শুনাও তো”। ফোনের ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে দেখি লিখা আছে ” ম্যাম স্যারের মোজার মধ্যে টাকা রাখা আছে”। মেসেজের উপরে তাকিয়ে দেখি “রুদ্র” লিখা। আর রুদ্র আমার সেই স্টুডেন্টের নাম।
প্রেমিকা উঠে হনহন করে চলে গেলো। মোজার মধ্যে থেকে একহাজার টাকার তিনটা কনকনে নোট বের করে টেবিলে রেখে দিলাম।
বেড়িয়ে আসবো এমন সময় পিছন থেকে ওয়েটার ডেকে বললো ” স্যার আরো পনেরো টাকা দিতে হবে”। পকেট মানিব্যাগ চেক করে ১০ টাকা বের করে দিয়ে বললাম ” ভাই বিশ্বাস করেন আমার পকেটে আর কোনো টাকা নাই”।
ওয়েটার আমার কথা শুনে বললো ” স্যার আপনি তো পকেটে টাকা রাখেন না। টাকা রাখেন মোজায়। একটু চেক করে দেখবেন প্লিজ। রাগে দুই পায়ের দুইটা মোজা খুলে ওয়েটার কে চেক করে দেখিয়ে বের হয়ে এলাম”।
স্পাই গার্লফ্রেন্ড
রিফাত আহমেদ
৫.Real love golpo
গল্প- একটা সুন্দর গল্প।
আমার বিশ্বাস এত সুন্দর জীবনের গল্প অনেকের জীবনেই ঘটেছে কিন্তু কেউ কোনদিন প্রকাশ করেনি। হয়ত প্রকাশ করার সাহস বা সুযোগ পায়নি।
ফলে এই পৃথিবীতে জন্ম নেয়া অতি সুন্দর একটা মুহুর্তের নিঃশব্দে মৃত্যু ঘটেছে কারো নিরবতার অপরাধে।
সে কারনেই আমি ঠিক করেছি এই গল্প আমাকে লিখতে হবে। আমার এই অতি নগন্য জীবনের এত সুন্দর একটা মুহুর্ত শুধুমাত্র আমার সাথেই পৃথিবী থেকে নিরবে বিদায় নিবে তাতো হতে পারেনা!
গল্পটা তাহলে শুরু করি।
আমার বরের নাম মাহমুদ হাসান। আমার চেয়েও দশবছরের বড় মাহমুদ। আমাদের সুখের সংসারে এইটাই এই সমাজের একমাত্র খুঁজে নেয়া খুঁত।
বিশবছর আগে, অক্টোবর মাসের পঁচিশ তারিখ আমার বিয়ে হয়।
আগের দিন কাঠফাটা গরম থাকলেও বিয়েরদিন প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সকাল থেকে বৃষ্টির ফলে রাস্তাঘাট ডুবু ডুবু অবস্হা। বৃষ্টির তীব্রতা দেখে ভয় পেয়ে আমার মা কাঁদতে বসে। বড়খালা দোয়াদুরুদ পড়তে থাকে। বৃষ্টিতে বরযাত্রীর জন্য রান্না করা খাবার বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে যায়। চারদিক অন্ধকার হয়ে অনবরত বৃষ্টি বাড়তেই থাকে। বরযাত্রী আসার কথা ছিল দুইশ জন, আসে বিশ জন। বরের গাড়ি মাঝরাস্তায় রেখে আসতে হয়। আমার বর বৃষ্টিতে জুবুথুবু শেরোয়ানী পাল্টে ছোটচাচার লুংগী পান্জাবী পরে বিয়ে করতে বসে।
বিয়ে পড়ানোর আধঘন্টা পরই হটাত করে বৃষ্টি থেমে যায়। এতক্ষনের কালো জমাট মেঘ হটাত করেই উধাও হয়ে যায়। ঝকঝকে রোদ উঠে! মা আবারো কাঁদতে বসে। আমার বিদায়ের কান্না।
আমার বিয়েটা হয় তিনদিনের সিদ্ধান্তে। এক মংগলবার সন্ধ্যে সাতটার দিকে বড়খালু উনার বন্ধু সহ আমাদের বাসায় এসে হাজির! মা তখন চাকা চাকা করে বেগুন কাটছে। দিনে চিটচিটে গরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে দমকা হাওয়া সহ বৃষ্টি শুরু হচ্ছিল। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছিল। আমি হারিকেনে কেরোসিন ঢেলে সলতে জ্বালাচ্ছিলাম। বড়খালু উনার বন্ধুকে বসার ঘরে বসিয়ে মাকে ডাকতে ডাকতে সরাসরি রান্নাঘরে চলে যায়। আমি হারিকেন জ্বালিয়ে আলো দিতে গিয়ে শুনি বড়খালু চাপা গলায় মাকে বলছে, “রাহেলা, তুই আমার উপর ভরসা কর বোন। মিনি, রিনি আমারো মেয়ের মতন। এতিম বাচ্চাগুলোর উপর কোন অন্যায় হলে আল্লাহ আমাকেও ছাড়বে না। ওদের বাপ মরে গেছেতো কি হয়েছে? আমি যতদিন বেচে আছি ওরা আমারই মেয়ে।”
আমি হারিকেনের বাসন্তি আলোতে দেখি আমার মায়ের দুচোখ থেকে বাসন্তি রংয়েরই জলের ধারা নামছে।
মানুষের সব কান্না দেখতে কষ্ট লাগেনা। কারো আশার কান্না আর হতাশার কান্না ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের হয়। আমার ক্রন্দনরত মাকে সেসময় অপূর্ব সুন্দর লাগছিল। তবে কী বড়খালু আশার বাণী বয়ে এনেছিল? তখনো চারপাশ অন্ধকার থাকলেও হারিকেনের দূর্বল সলতে কেমন যেন রহস্যময় আলো ছড়াচ্ছিল।
সেরাতে বড়খালুরা অনেকক্ষন ছিল। মা উনাদের সাথে ভীষন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সারতে সারতেই বেগুন ভাজা, মুগডালের খিচুড়ি আর ভুনা গরুর মাংস রান্না করে ফেলে।
সেরাতে ইলেকট্রিসিটি আর আসেনি। খাটের পাশে রাখা হারিকেন ফু দিয়ে নিভিয়ে মা আমার পাশে এসে শুয়েছিল। আমার পেটের উপর হাত রেখে শুয়েছিল।
আমার মায়ের গায়ে একটা গন্ধ আছে। কেমন যেন পুরোনো, নরম হয়ে আসা সবচে আরামদায়ক জামার গন্ধের মতন! গরম কিন্তু বৃষ্টির রাতে গায়ে টেনে নেয়া নরম পাতলা কাঁথার ওম ওম গন্ধের মতন। এই গন্ধ এমন যে কাউকে উপহার দেয়া যাবেনা। কেউ এর মূল্য বুঝবেনা। কেউ এটা বিনামূল্যেও কিনবেনা তবে আমি জানি এ গন্ধ আমার কাছে অমূল্য!
মা সরাসরিই আমাকে বলে, বড়খালু আমেরিকা প্রবাসী এক পাত্রের খোঁজ এনেছে আমার জন্য। পাত্রের বিজনেস আছে মিশিগানে। বাড়িও নাকি আছে কয়েকটা। গ্রিনকার্ড পেতে পেতে বিয়ে করার সময় হয়নি। দেশে এসেছে মাত্র একসপ্তাহের জন্য। মাবাপ কেউ নাই। বোনের কাছে উঠেছে দেশে এসে। পাত্রের বয়স সামান্য বেশি তবে বেশ ভদ্র। পাত্রের বড়বোনের দেবর বড়খালুর বন্ধু।
মা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলে, “এবার আর কিছু বলবিনা তুই। পাত্রের সব খোঁজ নেয়া হয়েছে। তুই আর আলাদা করে কথা বলতে যাইস না। প্রতিবারই এক ঝামেলা আর ভাল লাগেনা। যা বলার বিয়ের পর বলিস মা। দেশের বাইরে থাকা ছেলে, মনমানসিকতা উদার হবে। দেশে থাকা পুরুষরা নিজেদের আন্ধার ঢেকে পরের আলো খোঁজে খালি।”
আমি মায়ের গন্ধে ডুবে যেতে যেতে বলি, “কিন্তু মা…”
মা অন্ধকারেই আমার মুখ চেপে ধরে। ভেজা ভেজা গলায় বলে, “আমার মেয়ে নিষ্পাপ। আমার ফুলের মতন মেয়ের কোন অপরাধ নাই। এই কথা বুঝার মতন মানুষ এই কুৎসিত পৃথিবীতে নাই। আমার মেয়ে পবিত্র।”
আমার মা সেরাতে অঝোরে কাঁদে। আমাকে জড়িয়ে ধরে মা কাঁদতে থাকে। আমি কাঁদিনা। কেন যেন আমার কান্না পায়না। আমি মায়ের কান্নাতে সুর আর রং খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। মায়ের সেরাতের কান্নাতে আমি বিষাদের সুর পাইনা, আশার রং দেখতে পাই। মন চায় মায়ের গায়ের গন্ধটা দুহাত দিয়ে আজলা ভরে একটা ব্যাগে ভরে রাখি। এই গন্ধ আমার খুব দরকার । সারাজীবন দরকার।
তার ঠিক দুদিন পরই জুমার নামাজের পর আমার বিয়ে হয়ে যায়। আসরের নামাজের পর আমি আমার সদ্য বিয়ে হওয়া বরের সাথে ওর বোনের বাড়ি চলে আসি।
সেরাতেই ছোট্ট একটা বন্ধ জানালাওয়ালা ঘরে আমার ফুলশয্যার ব্যবস্হা করা হয়। ফুলশয্যা বলতে শক্ত তোশকের উপরে কটকটে লালহলুদ ফুল প্রিন্টের একখানা বেডকভার বিছানো শয্যা!
যাইহোক, সারাদিনের গরম আর বৃষ্টিময় একটা দিনের অর্ধেক জুড়ে বিয়ের মতন জটিল একটা জীবনের ধাপ কবে কখন কিভাবে যে আমি পাড়ি দিয়ে ফেল্লাম তখনো মাথায় ঢুকেনি। আমি অবাক আর কিছুটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমার বরের আসা যাওয়া দেখছিলাম। চিরাচরিত বা বহুল কথিত বাসর রাতে মেয়েদের লজ্জা বা ভয় কিছুই না। অনেকটা খনি খোঁড়ার মতন কৌতুহলের নেশা ঢুকে পড়েছে মাথায় তখন। হাতের নখ থেকে সকালে লাগানো নেইলপলিশ খুটতে খুটতে ভাবছিলাম মাহমুদের মুখের এক্সপ্রেশন কেমন হবে আমার সব কথা শোনার পর?
একসময় মাহমুদ এসে আমার পাশে বসে। বলে, “মিনি, আরাম করে বস। আসো গল্প করি। তোমার কি কলেজ বন্ধ? আমি চলে গেলে নিয়মিত কলেজে যেও। তোমার যাকিছু বাজে টেনশন আজ থেকে আমার কাছে জমা রাখ। পড়া শেষ করে ফেরত নিও।”
আমার চোখ থেকে তখন টপটপ করে পানি পড়ছিল। আমি নেইলপলিশ খুটতে খুটতে বলি, আমি পড়া বন্ধ করে দিয়েছি।
মাহমুদ অবাক হয়ে বলল, কেন?
আপনিতো এখনো জানেননা, আমার জীবনে একটা দূর্ঘটনা ঘটে সাত আটমাস আগে। এই কথা আপনাকে বিয়ের আগেই বলা উচিত ছিল। আমার অভিভাবকরা বলতে চায়নি কারন এটা জানার পর তিনবার বিয়ের কথা ভেঙে যায়। গ্রামে একটা মেয়ের জীবনের সবচে বড় দূর্ঘটনা হল বারবার বিয়ে ভেঙে যাওয়া। অপয়া ট্যাগ একবার কপালে বসে গেলে সেটা পুরো পরিবারেরই ট্যাগ হয়ে বসে যায়।
আজ এখন শোনার পর আপনি যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই সমাজে অবশ্য আইবুড়ো হবার চেয়েও তালাকপ্রাপ্ত মেয়েরা সামান্য হলেও ভাগ্যবতি।
যাইহোক, আমাদের ঘরে এসে পড়াতেন একজন শিক্ষক। আমাদের দুবোনকে ইংরেজী পড়াতেন। একদিন আমার বোনের জ্বর ছিল বলে আমি একা পড়তে বসি। মা গিয়েছিল বড়খালার বাড়ি, ছোটবোন ভিতরের ঘরে শুয়েছিল, ইলেক্টট্রিসিটি ছিলনা। হারিকেনের আলোতে পড়তে বসেছিলাম। হটাত করে একা পেয়ে আমার মুখ চেপে ধরে শয়তানটা। আমি শক্তিতে পারিনা। লোকটা আমাকে অসন্মান করে। আহত করে। ধর্ষন যেটাকে বলা হয় সে অবদি পৌঁছুতে পারেনা। আমি কোনমতে চিৎকার করে উঠি। পাশের বাসা থেকে আমার চাচাচাচি চলে আসে। তাদের চিৎকার শুনে আরো মানুষ আসে, লোকটা পালিয়ে বাঁচে।
তাতে কি! সেতো এমনিতেই বাঁচবে। মরবতো আমি। আহত, ক্ষত, অপমানিত আমি। লোকটা যদিও তথাকথিত ধর্ষন অবদি পৌছুতে পারেনা, তাতে কি? মেয়েদের সন্মানতো আর যোনীতে থাকেনা! যোনী কেন আছে সেটাই তাঁর অপরাধ। ততক্ষনে যা হবার তাতো হয়েই গেছে।
এই সমাজে মুরুব্বিরা শুধু মেয়েদের জন্য উদগ্রীব থাকে। আমার জন্যও ছিল। কোথাও দেখলে বারবার মনেকরিয়ে দিত, “মফিজ মাস্টরনা তোমাকে রেপ করেছিল?”
আমি কিভাবে বুঝাই, “না না …রেপ করেনি। ঐ অবদি পৌঁছাতে পারেনি।”
তবুও কয়েকবার চেষ্টার পর ভাবলাম, “নিজেকে নির্মল প্রমান করার চেষ্টা আসলে বৃথা। সবাই যেভাবে ধর্ষনকে সংজ্ঞায়িত করে সেসব আসলে ভুল। ঘটনাক্রমে কেউ একজন একবার যদি করতে পারে, সজ্ঞানে বাকি সমাজ সারাজীবন সে নারীকে ধর্ষণ করতে থাকবে এটাই সত্য।
মাহমুদ আমার হাতে হাত রাখে। নরম গলায় বলে, “আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার কোন কষ্ট আছে। কেমন যেন বিষাদভরা চোখ দুটো। আর শোন, বিয়ের আগে সব কথা যে বলতে হবে এটা কেমন কথা? নিজের ব্যাক্তিগত কিছু কষ্ট সবারই থাকে, কিছু শেয়ার করার মতন আর কিছু যত্ন করে গোপনে রাখার মতন। আমার ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ ছিল, খুব ভালবাসতাম। বিয়ে করেছিলাম তাকে। তারপর হটাত একদিন সে চলে যায়। কলিগের সাথে প্রেম হয়ে চলে গিয়েছিল। আমি প্রশ্ন করিনি, জানি উত্তরটা ভাল লাগবেনা তাই কোন প্রশ্ন করতে যাইনি তাকে। জানো মিনি, প্রচন্ড ভালবেসেছিলাম তাকে।”
বলেই মাহমুদ বাচ্চাদের মতন কাঁদছিল। আমি বসে বসে ওর কান্নাতে ভালবাসার রং খুঁজছিলাম। এই কান্নাতে কেমন যেন একটা সুঘ্রাণ আছে। পবিত্র একটা সুগন্ধ।
আমি মাহমুদের হাতে হাত রেখে বললাম, “আপনি তাকে ঘৃনা করেন বললেই আমার বেশি খারাপ লাগত। আপনি ভালবাসেন কারন আপনার হৃদয় আছে। হৃদয় আছে যার সেইতো ভালবাসে, তাইনা!”
জীবনে প্রথমবারের মতন একজন হৃদয়বান মানুষের গায়ের গন্ধ পেলাম আমি সেরাতে।
পরেরদিন সকাল সকাল আমার মা, বড়খালা, খালু আর ছোট চাচী আমার শশুড়বাড়ি এসে হাজির। আমি তখন একদম ঝরঝরে মুডে। সারারাত না ঘুমানো ক্লান্তির ছিটেফোটাও নাই শরীরে। মা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। মায়ের কান্নাতে আমি অপরাধের গন্ধ পাই। বড়খালা, চাচীর মুখে থমথমে রাগ।
বড়খালু চাপা গলায় বাড়ির মুরুব্বিদের বলছে, “ছেলের বয়স বেশি মানা যায়, আগের বিয়ের কথা গোপন করল কোন সাহসে!”
চাপা গলার হৈচৈ শুনে মাহমুদ ঘুম ঘুম চোখে এসে দাঁড়ায়। বাকিরা তাঁর দিকে এমন ভাবে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় যেন ঝলসে দিবে পারলে।
সবমিলিয়ে ভীষণ বিব্রতকর এক পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়।
সেদিনই প্রথম আমি নিজেকে প্রমান করতে সামনে এগিয়ে যাই।
বড়খালুকে বলি, “আমি সব জেনেছি খালু। বিয়ে হচ্ছে বলেই যে সবার সব কথা বলতে বাধ্য তাতো নয়! গোপন কিছু সুখদুঃখ যত্ন করে গোপনে রাখতে হয়।”
মা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। মায়ের কান্নাতে দ্বিধাদন্দের গন্ধ পাই। না তাকিয়েও বুঝতে পারি মাহমুদ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের কোনাতে অল্প একটু পানি জমেছে। ঐ সামান্য পানি থেকে আমি একটা গানের ঘ্রান পাচ্ছি কেন?
আশ্চর্য শোনালেও সত্য যে আমি মাহমুদের গা থেকে ঘ্রান নিতে নিতে শুনতে পাই, “ইয়ে জিন্দেগী উসিকি হে যো কিসিকা হো গেয়া…..”
৬. বাংলা লাভ স্টোরি গল্প
সহজ প্রেম
-আপনার ঐ পাশের সিটটা আমার।
-ওহ…সিওর। প্লিজ ঢুকে পড়ুন।
-থ্যাংকিউ।
-বাসে বমি হওয়ার সমস্যা আছে? না মানে মেয়েদের অনেকেরই থাকেতো। আর তাছাড়া এই ঠাণ্ডায়ও উইন্ডো সিট নিয়েছেন।
-না।
-যাক। বাঁচা গেলো। আমার আবার কারো বমি করা দেখলে প্রবলেম হয়।
…
-ল্যাগেজটা তো বক্সে দিতে পারতেন। কাছে রেখে বসতে প্রবলেম হচ্ছেনা?
…
-আচ্ছা, আমি একাই কথা বলছি। আপনি কিছু বলছেননা!
-আমি অপরিচিত কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলিনা।
-ওকে, তাহলে আমরা পরিচিত হয়ে নেই। এতোটা পথ চুপচাপ বসে থাকা কঠিন। আমি সায়েম। পড়াশুনা করি। আপনি?
-সেতু। পড়াশুনা করি।
-কি পড়ছেন?
-অনার্স। ইডেনে।
-আমি ডিইউতে।
…
…
-আবার তো চুপ হয়ে গেলেন।
-কী বলবো?
-যে কোন কিছু।
-পূর্ব পরিচয় বা কোনো সম্পর্ক ছাড়া কি কথা এগোয়?
-সম্পর্ক আছে তো আপনার-আমার মধ্যে।
-কী সম্পর্ক?
-আমরা একে অন্যের সহযাত্রী।
-(হাসি)
-আপনার হাসিটা সুন্দর।
-আপনার চোখ দুটো।
-পটল চেরা? নাকি পাখির নীড়ের মতো?
-কোনটাই না। এগুলো মেয়েদের চোখের উপমা দিতে ব্যবহার করা হয়। আমি লিটারেচারের স্টুডেন্ট।
-ছেলেদের চোখের উপমা কী দিয়ে দেওয়া হয় আপনার সাহিত্যে?
-ছেলেদের সৌন্দর্য চোখে নয়। পেশিতে। তাই চোখের উপমা খুব একটা দেখা যায়না।
-আচ্ছা, চিরে ফেলা অর্ধেক পটল বা পাখির নীড় কি কোন ভাবে সুন্দর টানা টানা চোখের মতো? বিছ্রী দেখতে তো। চোখের উপমা কেনো এগুলো দিয়ে দেওয়া হয়?
-আমি সাহিত্যে নতুন। কেবল সেকেন্ড ইয়ারে। এতো কিছু জানিনা। আপনি কি পড়ছেন?
-বিবিএ।
…
…
-কয়টা বাজে? আমার ফোনটা পার্সের মধ্যে তো।
-দেড়টা, একটা তেত্রিশ।
-সবাই তো ঘুমাচ্ছে।
-আপনার ঘুম পাচ্ছে? আমার কাঁধটাকে বালিশ হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। আমি কিছু মনে করবোনা।
-নাহ। ঠিক আছে। আমার একটু শান্ত পরিবেশ ছাড়া ঘুম হয়না।
-ঘুম হয়না নাকি আমি পাশে বলে ভয় হচ্ছে?
-না, ভয় করবে কেনো? আপনি ছেলে হিসাবে ভালোই। বিশ্বাস করা যায়।
-এটুকু সময়ে কিভাবে বুঝলেন আমি ছেলে হিসাবে ভালো?
-আমি যখন আমার সিটে বসেছিলাম তখন আপনার ও আমার মাঝে পাঁচ ইঞ্চি গ্যাপ ছিলো। গত চার ঘণ্টায় ড্রাইভার সাহেবের এত গুলো কড়া ব্রেক, টার্নিং ও ঝাকির পরও মাঝের গ্যাপ পাঁচ ইঞ্চিই আছে। আমি কয়েক বার আপনার গায়ে পড়ছি। আপনি পড়েননি।
-আপনার তো বালিশের দরকার নাই। আমার দরকার।
-কেন? ঘুমাবেন?
-না। আপনার কাঁধে মাথা রাখতে ইচ্ছা হচ্ছে।
-ইশ্। সখ কতো। ভদ্র বলেছি বলে ঘাড়ে মাথা রাখতে দিব ভেবেছেন?
-ভাবিনি। আমি সিওর মাথা রাখলে আপনি কিছু মনে করবেননা।
-কিভাবে এতোটা সিওর হলেন?
-আমি অলরেডি মাথা রেখেছি।
-ওকে। তাহলে আমিও রাখবো।
-দুজন তো একই সাথে দুজনের ঘাড়ে মাথা রাখতে পারবোনা। আসুন আমরা দুজন দুজনের মাথায় মাথা রাখি।
-ওকে।
-বাড়িতে কে কে আছে আপনার?
-আব্বু, আম্মু আর এক ছোট ভাই। আপনার?
-আমার আব্বু আর আম্মু। একটা বড় বোন আছে। বিয়ে হয়ে গেছে।
-আর মনের বাড়িতে কে আছে?
-মনের বাড়িতে কেউ নেই। এক জন দরজায় দাড়িয়ে আছে। বাড়িতে ঢুকবে না বের হয়ে চলে যাবে বুঝতে পারছিনা। আপনার?
-আমারও আপনার মতোই আবস্থা।
-একি! পানি পুরাটা শেষ করে ফেললেন!
-আপনি খাবেন? একটু আগে বলতেন।
-কেন আপনি জানেননা? আমি আপনার পানি প্রার্থী?
-ও তাই? এখনো আমার ঠোঁটে দু-এক ফোটা পানি লেগে আছে। চলবে?
সাই সাই করে এগিয়ে চলেছে বাস রাজ পথ ধরে। লাইট বন্ধ। যাত্রীরা সব গভীর ঘুমে মগ্ন। আর দুজন মনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করায় ব্যাস্ত।