শিশিরের আদ্র পর্ব ৩
Neel
শিশির রুম থেকে বের হওয়ার মিনিট দুয়েক পর আদ্র ও বের হয়েছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আদ্র বলল – ওর কিছু হয়নি। আমি দেখছি।
বলেই আদ্র দ্রুত আমার ওয়াসরুম এর সামনে এসে দাঁড়ায়।
আদ্র – কিরে মাথা মোটা, এখন তুই কি চাস আমি সবাইকে বলে দেই আমার রুমে যেয়ে আমাকে কিস দিছোস?
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমার মুখের পানি বের হয়ে গেল। সব যেয়ে আদ্র ভাইয়ের উপরে পড়ল। আমি আদ্র ভাইয়ের দিকে রাগী চোখে তাকালাম। বললাম – আমি কখন তোমাকে কিস করলাম খাম্বা কোথাকার। লজ্জা করে না, মিথ্যা কথা বলতে? ক্যারেকটার লুজ।
আদ্র ভাইয়া না শোনার ভান করে বলল – লাস্টে কি বললি? আমি কি?
এর মধ্যেই দাদি এসে বলল , কিরে আদ্র আসতে না আসতেই ওর সাথে আবার জগড়া শুরু করে দিলি? এই ছেমরি, তোরে আমি এতকাল কি বুঝাইছি? মাইয়া মানুষ, দূর্বল তুই , তুই পোলাগো লগে কেন লাগতে যাস।
আদ্র ভাইয়া আমাকে ভেংচি মেরে চলে গেল।
দাদির কথায় আরো মন খারাপ হয়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বিছানায় কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।
দাদি আমাকে পিছনের দিক থেকে খোঁচা দিয়ে বলল – আমার রজপুত্তিটা, রাগ করে না। মেয়ে মানুষের রাগলে দিন চলে।মেয়েরা রাগলে হয় বে** , আর পোলারা রাগলে হয় বাদশা।
দাদির কথাটা শুনে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।কাথা সরিয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম – এই বুইড়ি শয়তান, একদম উল্টা পাল্টা কথা কইবা না বলে দিচ্ছি। কি বলতে চাচ্ছ, তোমার আদরের আদ্র পাদ্র, বাদশা। এহ্ আইছে আমার বাদশা হতে ।
দাদি জরিয়ে ধরে বলল – আমার একটা ই আদরের মধ্যমনি, সেটা হচ্ছে আমার শিশির মনি। আচ্ছা বলতো, আদ্রের সাথে তোর ঠিক কি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। ছেলেটি আসে ও নাই, তুই ও পারিস বটে।
এই এই, একদম নাতির চামচাগিরি করবা না। তা না হলে রুম থেকে বের করে দিব। দাদি হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি সব কথা, ছোট থেকেই দাদির কাছে শেয়ার করি। তাই আজকের ঘটনা সব বলে দিলাম। দাদি কথাগুলো শুনে কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। আমি দাদিকে জোরে ডাক দিয়ে বললাম – কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে?
দাদি হচকচিয়ে উঠলো , বলল-কিছু না। জানিস আদ্র ঠিক ১৮ বছর পর ফিরে এসেছে। সে ফিরে এসেছে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম, ১৮ বছর , সকালে ও এ কথাটা বলছিল। দাদি কি পাগল হয়ে গেছে। বললাম – দাদি, ও দাদি ১৮ বছর নয় ১২ বছর, হুহ ।
দাদি মুচকি হেসে আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল – সব কথা তুই কেসেটের মতো রেকর্ড করে রাখস, পাকনি বুড়ি। তোর দাদা কত বছর ধরে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বল তো?
১৮ বছর হবে হয়তো?
দাদি – তোর দাদার মৃত্যুর ১ বছর পর তুই জন্ম হয়েছিস। তোর দাদার খুব প্রিয় ছিল আদ্র। আচ্ছা শিশির মনি, তোর কাছে আদ্রকে কি রকম লাগে?
আদ্র পাদ্র, ঘোরার পাদের মতো লাগে ।
দাদি – এই( রাগ দেখিয়ে) যা বলছি তা উত্তর দে। তাহলে সব বলবো, না হয় বলবো না। আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
এইরে দাদি ক্ষেপে গেছে। বললাম – আচ্ছা বলছি বলছি। আদ্র ভাইয়াকে আমি এখনো ভালো মতো ঐ নজরে দেখিনি। তবে আদ্র ভাইয়া সত্যি ই অনেক সুন্দর। কাল ভালো মতো দেখে বলবো। তবে তুমিও জেনে রাখ আমি ও আদ্র পাদ্রকে, আমার প্রথম কিস চুরির জন্য শাস্তি দিব।
দাদি – ওটা তোদের ব্যাপার। তোর দাদার মতো দেখতে আদ্র হয়েছে। ইয়ং কালে আদরের মতো ছিল তোর দাদা। তাই এতো বছর পর আদ্রকে দেখে আমি মুখ ফসকে বলে ফেলি ১৮ বছর পর আদ্র এসেছে।
মহনা বেগম (দাদি) এগুলো বলছিল শিশির কে , শিশির শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে। মহনা বেগম আদ্রের সেই কথার মিনিং বুঝে গেছে – যেটা আদ্র তাকে দেখে রাখতে বলেছিলো। এগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলেন।
____
অন্যদিকে প্রেমিকের চোখে ঘুম নেই। প্রিয়তমার ঠোঁটের অমৃতের স্বাদ পেয়ে , প্রিয়তমাকে ই কাছে পাওয়ার লোভ জেগে উঠেছে। এতো গুলো বছর এর জন্য ই তো সে যোজন যোজন দূরত্ব সহ্য করেছে।
সেদিন আদ্র ছোট্ট শিশিরের নালিশ দিতে ছোট মায়ের(শিশিরের মা) রুমের দিকে যায়। দরজার সামনে গিয়ে ই পা দুটো থেমে যায়। ছোট মায়ের সাথে আদ্রের মা কথা বলছিল। ছোট মা সেদিন কথাটা মজার ছলে বললেও কথাটা আদ্রের মনে গেঁথে যায়। শিশিরের মা বলছিল – ভাবি আমি কিন্তু আদ্রকে আমার মেয়ের জামাই বানাবো, তবে তোমাকে তোমার দুষ্ট মিষ্টি আদ্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
আদ্রের মা বলল – আমার পাগল ছেলের কাছে তুই কেন তোর ফুলের মতো মেয়েকে বিয়ে দিবি। তোর মেয়ের জন্য আদ্রের থেকে ও ভালো ছেলে খুঁজব আমি।
আদ্র তখন পুরো ই কৈশোর। শিশির ছোট থাকলেও, তার স্বচ্ছ মনে শিশিরের জন্য ভালোবাসা, ভালোলাগা কাজ করতো। আদ্র মনে মনে চেয়েছিল, শিশির বড় হলে সে শিশির কে বিয়ে করবে। কিন্তু তার গর্ভধারিনী মা ই তাকে বিকলাঙ্গ,পাগল ভাবছে, তাই সেদিন মায়ের একটু কথায়, অভিমান এ দেশ ছেড়ে চলে যায়। পিছনে ফিরে আর তাকায়নি।
সাইকো স্বভাবের ছেলেটা ও মায়ের তাচ্ছিল্য কাঁদে। হা,আদ্র কাঁদছে । নিজের সেই রুমে, যেটাকে একসময় একঘেয়ে জগৎ তৈরি করেছিল, সেই রুমটাতে কাঁদছে।
____
সকাল বেলা তবে কম বাজে না, প্রায় ৯টা। শিশির রেডি হয়ে খাবার খেতে ড্রইংরুমে হাজির। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এত্তো সকাল বেলা যে তারা শিশির কে দেখবে কল্পনার ও বাহিরে। শিশির কে ঘুম থেকে জেগে ই তোলা যায় না।
বড়মা- কিরে অশিএতো সকাল সকাল তুই, এখানে কি করস।
উম্ মাইই, আমি নাস্তা করছি ডিস্টাভ করো না তো। খুব খিদে পেয়েছে। খেতে দাও, আরো দাও।
মা রান্না ঘর থেকে বলল-এই অশি, তোর কোন উল্টো পাল্টে বুদ্ধি কাজে আসবে না। সত্যি করে বল, এই সকাল বেলা উঠে রেডি হয়ে আছোস কেন?
আরে ছোট মা, তুমি চিল্লাচিল্লি করো না। তোমার মাথা মোটা মেয়ে অনেক পেটুক গো পেটুক। যা রাক্ষসের মতো খায় না। আমার তো ভয় ই করে, কবে না আমাদের ই খেয়ে ফেলে- আদ্র
কথাটা শুনে খাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আদ্র ভাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকালাম, মুখ ফসকে বলে ফেললাম – হ্যা হ্যা, আমি তো পেটুক,রাক্ষস ই , আয় আয় তোর বা/ল ছিরে খাই। (বলেই মুখ ধরে ফেললাম)
ইরেএএ, এ আমি কি বলে ফেললাম। মা তো সামনে আছে, আরে আছে না, মা হাতে খুন্তি নিয়ে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এলো। আর মেজচাচি পাদ্র সরি আদ্রের খাবার টেবিলে সার্ভ করে দিল।
আমি তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে রুমের দিকে দৌড় দিলাম।
মা নিচ থেকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে – আজ রান্না করছি বলে, বেহায়া নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার, এই খুন্তি দিয়ে পিটিয়ে মুখের কথা ঠিক করে দিতাম। বাড়ির সকলের আদরে এই মেয়েটা পাজি , নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মাইই মাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল। কিন্তু মা ঘেনর ঘেনর করছে ই। শয়তান আদ্র মুচকি মুচকি হাসতেছে। ঘর থেকে ব্যাগ রেডি করে নিচে নামলাম মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই।
বড়মা – তুই কবে যে বড় হবি? দুষ্টুমি ছাড়বি না কখনো। তা এখন আমার অশিমনি কোথায় যাচ্ছে।
অতি আদরে হয় বাঁদর। আমি ও ঠিক তেমনি হয়ে গেছি, মুখ ফসকে বলে ফেললাম – শশুর বাড়ী।
আদ্র ভাইয়ের খাওয়া গলায় আটকে গেল। কাঁশতে কাঁশতে দম আটকানোর মতো অবস্থা। মেজ চাচি পানি দিল।
বড়মা – তা আপনার শশুর বাড়ীর লোকজন জানে?
আমি মুচকি হাসলাম। হুম মহিদ ভাইয়া, না না, ওনি জানে না, সারপ্রাইজ দিব। আমি গেলাম, কাল এসে পড়বো, মাকে বলে দিও। ভাইয়া ও রাতে যাবে নানু বাড়ি না না শশুর বাড়ী।
বলেই আমি ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে চলে আসলাম বাড়ির বাহিরে। ১০ মিনিট লাগে নানু বাড়ি যেতে। আমাদের গলির পরের দুই গলির পর ই আমার শশুর বাড়ী।
(আপনাদের পরে বলবো শশুর বাড়ীর কাহিনী)
__
অন্যদিকে আদ্র ড্রইয়রুমের জিনিস পত্র ভাংচুর শুরু করলো। ভাংচুর শুরুর শব্দে সবাই ড্রইংরুমে জড়ো হয়ে গেল।আদ্র আবারো…
চলবে…