শিশিরের আদ্র পর্ব ৫
#Neel
আদ্র যেন আরেক বার শিশিরের দুষ্টুমির প্রেমে পড়লো। হঠাৎ ছেলেটা আর মেয়েটির ঝগড়া লেগে গেল।
ছেলেটি মেয়েটির হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর বলছে – চুরি করছো, এখন বেঁধে রাখবো, চলো। জীবনের প্রথম মেয়ে চোর পেয়েছি, আসো।
ওদের শব্দে আদ্রের ধ্যান ভাঙল,আদ্র ছেলেটিকে বলল – আরে ভাই, এ মেয়েটি চুরি করে নাই। মেয়েটি সত্যি বলছে। যে চুরি করছে সে এখানে নেই। আপনি ওকে ছেড়ে দেন। মেয়েটি ভয়ে কান্না করে দিয়েছে। কেউ চুরি করলে কি এখানে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতো?
ছেলেটি – আমি এতো সব জানি না। তবে আমি ফুল এই মেয়েটির হাতে পেয়েছি,মানে এই মেয়েটি চোর, এখন শাস্তি পেতে হবে।
আদ্র একটু রুষে গেল। রাগী কন্ঠে বলল – তোকে যা বলছি তাই কর। মেয়েটির হাত ছাড়। না হয় তোকে টেনে নিয়ে পুলিশের কাছে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিব। ছাড় মেয়েটাকে।আর ফুল এর পরিবর্তে কী চাস বল।
ছেলেটি আদ্রের রাগী কন্ঠে দমে গেল। মেয়েটি কে বলল- আবার যদি কোন দিন তোমাকে ফুল ছিঁড়তে দেখেছি পিচ্চি মেয়ে, সেদিন দেইখো, কারো কথা মানবো না, বেঁধে রেখে দিব।আর ঐ দুষ্টু চোর মেয়েটাকে বইলো, ধরতে পারলে খবর আছে। ঠিক আছে ভাইয়া, কিছু লাগবে না।
…বলেই ছেলেটি চলে গেল।
মাহি আদ্রকে ধন্যবাদ জানালো। চোখের পানি মুছে বলল – ভাইয়া কি বলে যে শুকরিয়া করবো।
আদ্র – শুকরিয়া করতে হবে না, পৃথিবীতে কান্না করলে মানুষ দূর্বল ভাবে। লড়াই করতে শিখ । (আদ্র শিশিরকে না চেনার ভান করে)ঐ মেয়েটি কে ছিলো। নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আগে থেকেই পরিচিত।
মাহি – ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড শিশির। পুরো নাম অনামিকা শিশির চৌধুরী। এক নাম্বার এর বদের হাড্ডি।ও পারে না এমন কোন দুষ্টুমি, এ পৃথিবীতে নেই। এই যে এখনকার ঘটনাটাই দেখুন। আমি যে কিছু করি নাই তাও ও আমি ফেঁসে গেলাম।
আদ্র শিশির সম্পর্কে যা শুনছে শুধু অবাকই হচ্ছে। আদ্র কল্পনা ও করতে পারে নাই শিশির এতো দুষ্টু হবে। আদ্রকে শিশির সম্পর্কে সব কিছু জানতে হবে। এই মেয়েটির থেকে। কিন্তু মেয়েটি সহজে বলবে না , আদ্র একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলল- এ তুমি কি বলছো? ঐ মেয়েটা দেখতে কি কিউট, নিষ্পাপ। বাচ্চাদের মতো লাগে। ও এরকম হবে আমার তো মনেই হয় না!!
মাহি – একিইই আপনি ওর বাচ্চামো মায়াবী ফেইসের অভিনয়ে ফাঁসবেন না। জানেন ই তো, এখন ও কি করলো। কথায় আছে না, উপরে ঠিক ঠাক, ভেতরে সদরঘাট।ও ঠিক সেরকম আপনার সামনে উপর দিয়ে বাচ্চামো বাচ্চামো অভিনয় করবে , আর ভিতর দিয়ে প্লান করবে, কীভাবে আপনাকে সদরঘাট বিক্রি করা যায়।
আদ্র – কিহ্, এই বিচ্ছু মেয়েটা এরকম।
মাহি – হুম। তাই নয়তো কি? আপনি ই বলেন এই গোলাপ ফুল দিয়ে আমি কী করবো? এগুলো ও কালকে আমার কাছে ঠিক ই চাইবে, না দিতে পারলেই আমার সাথে ৩ য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিবে। এই ফুল গুলো এখন আমার যত্ন করে রাখতে হবে। জানেন ভাইয়া, ও একটা সাইকো মেয়ে। যা চাই , তো চাই ই। মানে ঐ জিনিষটা যা ই হোক না কেন, পুরো একটা পাগলি মেয়ে। আসলে চৌধুরী বাড়ির একমাত্র মেয়ে তো , সকলের আদরে আদরে বাঁদর হয়েছে।
আদ্র – ও কি এমন ই, কোন ভাল দিক নেই?( তবে সাইকো কথাটা শুনে খুশি হলো, মনে মনে বলল – সাইকোর বউ সাইকো না হলে চলে। প্রিয়তমা তোমার সাথে ভালো খেলা জমবে)
কথায় আছে না, রতনে রতন চেনে আর কাক চেনে কয়লা। আদ্র ও চিনে শিশির কে, আর বাকিদের চোখে তাঁরা সাইকো।
মাহি মুচকি হাসলো। বললো – ভালো না হলে আমি কীভাবে বান্ধবী হলাম । সত্যি অর্থে ওর মতো স্বচ্ছ মনের মেয়ে ই হয় না। এই দেখুন না, এতো বড়লোক বাপের মেয়ে হয়েও, আমার মতো গরিব ঘরের মেয়ের সাথে কি সুন্দর ছোটবেলা থেকেই বোনের মতো খুনসুটি করে। আমার অনেক আবদার ও মিটায়।যেন বড় বোন। সবাইকে সাহায্য করে বেড়াবে। তবে জানেন কলেজে, ও হচ্ছে টপার+ ফাঁকিবাজ+ ক্রাশ গার্ল। অনেক ছেলেরা ওর জন্য পাগল। কিন্তু ও কি সুন্দর, এগুলোর ধারে কাছে ও নেই। আমার বেস্টির সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, ও এত্তো সুন্দর ও কিউট হওয়া স্বত্তেও ওর মনে হিংসে নেই । ওর বন্ধু বান্ধব এর অভাব নেই । সবাই ওর দেওয়ানা।
আদ্র শিশিরের সম্পর্কে এগুলো শুনে টেনশনে পড়ে গেল। কি জিজ্ঞাসা করবে আর সব ই তো বলে দিল মেয়েটা ।
মাহি – ভাইয়া স্বভাবগত একটু বেশি ই কথা বলি। কতকিছু বলে ফেললাম। ঐ যে আমি ওখানে থাকি। আসি। বিদায় এবং আবারো ধন্যবাদ।
আদ্র ও মুচকি হাসি দিয়ে বলল – ঠিক আছে যাও।
মেয়েটি যেতেই আদ্রের একটা কথা মনে পড়লো, শিশিরের কোন বয়ফ্রেন্ড নেই তো?
আদ্র ভয়ংকর শয়তানি হাসি দিয়ে বলল – থাকলে ঐ ছেলেকে শাস্তি পেতে হবে, ভয়ংকর শাস্তি। মাফিয়া এসি আদ্রের হাতের ভয়ংকর শাস্তি।
আদ্র চিন্তা করতে করতে শিশিরের নানু বাড়ি এসে পৌঁছায়। এসে যা দেখলো আদ্রের প্রান যায় যায় অবস্থা। উঠোনে, শিশির ৫/৭ বছরের এক পিচ্চি মেয়ের সাথে কিটক্যাট চকলেট নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিছে।
বাড়ির ভেতর থেকে একটা মহিলা চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলছে- অশি, ওর চকলেট ওকে দিয়ে দে, আমি তোকে কিনে দিবো।
শিশির তো শিশির ই , কে শোনে কার কথা। তাও ও চকলেট নিয়ে টানাটানি। আদ্র হেঁটে শিশিরের পিছনে এসে দাঁড়ায়।
আদ্র – এরে মাথা মোটা, তোর কি লজ্জা করে না? কাল এতো গুলো চকলেট খেলি, আজ আবার এই পিচ্চি মেয়ের চকলেট নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিছোস। বাসায় চকলেট কম আনছি? এই , হতবুদ্ধি ওর চকলেট ছাড়।
এরে, এটা তো আদ্র ভাইয়ের আওয়াজ। চকলেট ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মাথা নিচু করে ঘরের দিকে আস্তে আস্তে পা বাড়াতেই, মামা ঘর থেকে বের হয়ে এলো।
মামা – আদ্র যে। তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভেতরে এসো।
আমি ছাড়া পেয়ে দৌড় দিলাম তবে দৌড় দেওয়ার আগে জান্নাত ( মহিদ ভাইয়ার মেয়ে) হাত থেকে কেড়ে নিয়েছি।
ও এতে চিৎকার করে মাটিতে বসে কান্না করতে শুরু করলো।
মামা – এই অশি, তুই জীবনেও ভালো হবি না।দেখছোস মেয়েটি কান্না করছে।
আদ্র ভাইয়া জান্নাতের হাতে টাকা দিয়ে বলল- ঐতো দোকান কিনে ফেল, দ্রুত , যাও।
জান্নাত টাকা পেয়ে দৌড়ে চলে গেল।
মামা – এগুলো ওদের রোজকার কাহিনী, তুমি ভেতরে চলো।
আদ্র ভাইয়া আর মামা টুকটাক কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো। আমি সোফায় বসে চকলেট টা খাচ্ছিলাম, একটা মাত্র কামর দিছি , এতো টুকুর মধ্যে হঠাৎ আদ্র ভাইয়া আমার হাতের চকলেট টা টেনে নিয়ে গেল ,সে ও এক বাইট খেলো। ইশ্ আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে, আমার চকলেট । আর আমার পাশে বসলো। সামনের সোফায় ই মামা বসলো। মামার সাথে সাথে মামি ও এসে হাজির হলো।
আমি আদ্র ভাইয়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছি। ভয়ে বলতে ও পারছি না, আমার চকলেট টা দেন।
মামি – আদ্র (হাসতে হাসতে) ওর চকলেট টি দিয়ে দে বাবা, এই মেয়ে জামাই ছাড়া থাকতে পারবে তবে চকলেট ছাড়া না।কত বছর পর দেখা, আমার বাচ্চামনির(আদ্রকে, নাহিদ নিজাম,আয়ান, এদের এই ভাবেই ডাকে,মামি) সাথে, অশি কে ছাড়, আমরা কথা বলি।
মামির কথায় আদ্র ভাইয়া আমাকে চকলেট টা দিয়ে দিলো। আমি খুশি হয়ে দৌড়ে চলে গেলাম। আমি মামা বাড়ি আসলে একটা রুম আমার জন্য থাকেই, ওখানে গোসল দিয়া ফ্রেশ হয়ে নিচে ড্রইংরুমে আসলাম।
ওমা এখনো এই আদ্র পাদ্র এই বাড়িতে আছে।আমি লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে আদ্র ভাইয়ের সামনে গেলাম, এই প্রথম নিজ ইচ্ছায় আদ্র ভাইয়ের সামনে দাঁড়ালাম। সত্যি ই আদ্র ভাইয়া আমার কল্পনা থেকে ও সুন্দর। কত্তো লম্বা, চাপ দাড়ি, ভাসা ভাসা চোখ, ইংরেজদের মতো ফর্সা, অবশ্যই মাই ফর্সা, তাই তো আদ্র ভাইয়া ও ফর্সা, কিন্তু ছেলেদের ফর্সা হতে নেই, ওফ্ আদ্র ভাইয়ের জন্য ঠিক আছে।
আদ্র দেখলো শিশির তার সামনে এসে দাড়িয়ে তাকে পর্যবেক্ষন করছে। আদ্র তো এটাই চায়, শিশির তাকে কাছ থেকে দেখুক,চিনুক,জানুক ,তার প্রেমে পড়ুক। এক শীতের সকালে শিশিরের আদ্রে তাদের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রেমের শিহরণ জেগে উঠুক।
আদ্র শিশিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল –
……আদ্র অপেক্ষায় আছে এক কাল ধরে
…. সেথায় কখন আসিবে শিশির সুখ,
রুপ রঙ্গ,আর উচ্ছাস নিয়ে….
….. প্রকৃতির সাথে সকল কিছু লজ্জা পাবে
….এক শীতের সকালে শিশিরের আদ্রের
মিলিত হওয়া দেখে!!
#Noor
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম , তাড়াতাড়ি দূরে সরে গিয়ে বললাম – এগুলো , উফ্ আজব।এই আদ্র পাদ্র আপনি আমার নানু বাড়ি কি করছেন। যান নিজের নানু বাড়ি যান।
আদ্র শিশিরের কথার পৃষ্ঠে বলার আগেই কেউ একজন দরজার সামনে থেকে বলল….
চলবে…