শিশিরের আদ্র পর্ব ১১
Neel
অহনা – গ্রাউন টা ছাড়ো অশি। তোমার মতো মেয়েদের এসব গ্রাউনে মানায় না। আর..(কিছু বলার আগেই, কেউ একজন গ্রাউন টা টেনে নিয়ে গেল দুজনের হাত থেকে)
ব্যাক্তির দিকে তাকাতেই আমি মুখ ফুলিয়ে ওখানকার ফ্লোরে বসে পড়লাম। কান্না করার অভিনয় করে, কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম – তুমি ও ঐ পাদ্রের মতো ওর দিকে কথা বলবে? তুমি ও ওকে আমার প্রিয় ড্রেস টা দিয়ে দিবে।ওওও এখন তো তোমার মামাতো বোন, আমার থেকে ও বেশি ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে গেছে। সবাইকে বলে দিব (ঠোঁট ফুলিয়ে)
ব্যাক্তিটি আর কেউ নয়, আয়ান। আয়ান শিশিরের এই বাচ্চামো মায়াবী ফেইসটা দেখে, হেসে ফেললো। বলল- তুই কবে বড় হবি অশি। একটা ড্রেস নিয়ে ও এইভাবে কেউ ফ্লোরে বসে কাঁদে। (শিশিরের দিকে ঝুঁকে, ফুলা ফুলা গাল গুলো টান দিয়ে) আমার গলুমলু পিচ্চি টা এখনো পিচ্চি রয়ে গেছে।
অহনা রাগে ফুঁসছে। মনে মনে বলল-এই মেয়ে কত রকমের অভিনয় করতে পারে ,ভাবা যায়!! কোথায়, কীভাবে, কখন,কি,কার কাছ থেকে আদায় করতে হবে, আর কোন কৌশলে এটা এই বজ্জাত মেয়েটা ভালোই করে জানে।
অহনা – আয়ান ভাই , গ্রাউন টা কি …
আয়ান – না, অহনা। গ্রাউনটা অশি ই নিবে। কেননা অশি আগে গ্রাউন টা ধরেছিল। আর কারো একজনের বিশেষ আবদার আছে, অশির পছন্দ করা সব কিছু যেকোন মূল্যে যেন অশি পেয়ে যায়।
আয়ান ড্রেসটা প্যাক করে শিশিরের হাতে দিল।
আরে বাহ্! সত্যি। খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। আয়ান ভাইয়ের এক হাত জড়িয়ে ধরে লাফাতে লাফাতে বললাম – তুমি সত্যি বলছো? তা সে ব্যক্তি টা কে? বলো না।
আয়ান – আমি বলতে পারবো না। এই নে তোর গ্রাউন আর সময় হলে সে নিজেই সামনে আসবে।
অহনা আপু রাগ করে আগেই চলে গেল। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে আমাকে ফিসফিসিয়ে বললো- আমি ও দেখবো তুমি এই ড্রেসটা কীভাবে পড়ো।
আমি ও চোখ উল্টিয়ে, মুখে একটা ভেংচি কাটলাম। আয়ান ভাইয়া ও কেনাকাটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে, আর প্রেমেন্ট করতে চলে গেল। আমি মাঝখান থেকে ফেঁসে গেলাম চিন্তায়। ঐ ব্যক্তিটা কে? (আনমনে হাঁটছি)
হুট করে ধাক্কা খেলাম। সামনে দেখলাম মীনা ভাবি।
মীনা – ওফ্,অশি রেএএ। চোখে দেখস না। গেলাম রে।
মীনা ভাবিকে দেখে মনে পড়লো, এই ড্রেস এর প্যাকেট টা আমার কাছে থাকলে ঐ অহনা গহনা চুরি করবে না হয় নষ্ট করে দিবে। মীনা ভাবিকে সব বলে দিলাম আর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম – ঔ অহনা গহনা চুরি করতে পারে, এখন এই ড্রেস তোমার কাছে রেখে দাও, বিয়ের দিন দিও, প্লিজ। কাউকে বলবে না কিন্তু।
মীনা, শিশিরের বাচ্চামো, দুষ্টুমি কান্ডতে হেসে দিল। বলল-আচ্ছা, বাবা আচ্ছা।
শপিং করতে করতে রাত অনেক টা ই হয়ে গেছে। রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে নিবো সবাই।
এবার আমি অহনা আপু, আদ্র ভাইয়ের সাথে বসি নাই। আদ্র ভাইয়ের সাথে একটা ও কথা বলি নাই। বলবো না। দেমাগ দেখাচ্ছে তাই তো, এই শিশির ও কম দেমাগ দেখাতে পারে না।
সবাই সবার প্রিয় জিনিস ওর্ডার করে খাচ্ছে। খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। আমি খাওয়া শেষে চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম খাচ্ছি। এর মধ্যেই এক ওয়েটার বলল- এখানে অনামিকা শিশির চৌধুরী কে?
আদ্র ভুরু কুঁচকে তাকালো শিশির আর ওয়েটার এর দিকে। আমি ও খানিকটা অবাক হলাম। আমি তো কিছু ওর্ডার দেই নাই। তাহলে?
আমি দাঁড়ানোর আগে আদ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে বললো – কী হয়েছে?
ওয়েটার – তার নামে একজন একটু আগে এটা (পার্সেল) দিয়েছে। বলছে এটা যেন তার হাতেই দেই।
আদ্র ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকালো। ওয়েটার এর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে পার্সেল টা কেড়ে নিল। থমথমে গলায় বলল – তুমি যাও ।ওয়েটার চলে গেল।
আমি খাওয়া শেষ করে এগিয়ে গেলাম। আদ্র ভাইয়া পার্সেল টা খুলল।
পার্সেল টা খুলতেই আমি চমকে উঠলাম। একটা সাদা রঙের শাড়ি, কাজ করা, মসৃণ (শাড়ি সম্পর্কে আমার আইডিয়া নেই, আপনারা আপনাদের মতো ভেবে নিয়েন)
শাড়িটা খুব সুন্দর। সাথে একটা চিরকুট আর গোলাপ।
আদ্র ভাইয়া চিরকুট টা খুলল –
প্রিয়, শিশির
আমার গোলাপ টা গ্রহণ করিও। তুমি তো গোলাপ খুব পছন্দ করো তাই না। আমি কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ করি। তুমি এই গোলাপ থেকে সুন্দর। অতুলনীয়।
প্রথম দেখায় মাশাআল্লাহ বলতে ভুলিনি, আজ ও ভুলবো না। হলুদে সাদা শাড়িটা না হয় একবার পড়ো। হয়তো প্রেমিক হিসেবে চিঠি লেখাতে আমি খুবই বাজে। কিন্তু আমার ভালোবাসা তে নয়। অল্পদিনেই,
খুব ভালোবাসি তোমায়।
ইতি,
তোমার!!
চিরকুটে কি আছে জানি না। আদ্র ভাইয়ের মুখে হঠাৎ শক্ত ভাবটা চলে এলো। যেন সে রেগে গেছে। ধেৎ , চিরকুট এ কি আছে, আমাকে কেন বলছে না।
বললাম – আদ্র ভাইয়া, এই চিরকুট টা কে দিছে? আর কী লেখা আছে? দেও আমি ও দেখি….(ঠাস করে গালে একটা চড় দিলো)
আমি জীবনে ও কখনো মার খাইনি এতো জোরে। মা যদিও বলে মারবে, কখনো মাই, মেজমা, বাবা দাদি, তাদের জন্য মারতে পারে নাই। কিন্তু এ প্রথম চর খেয়ে আমি কান্না থামাতে পারলাম না। অশ্রু মাখা চোখে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম, দেখলাম চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, আমার দিকে তেড়ে এসে গলাটা চেপে ধরে বলল – এই বয়সে কত নাগড় জোগাইছোস।সবুর করতে পারিস নাই? কিছু হলেই একে জরিয়ে ধরা তো ওকে জড়িয়ে ধরা। কত সহ্য করবো। তুই কি আমাকে বুঝিস না? কেন বুঝিস না? বল, এই ছেলে কে? বল, না হয় আজ মেরেই ফেলবো।
আদ্র ভাইয়া কে আয়ান,মহিদ ভাইয়া টেনে সরালো। আমাকে শান্ত ভাইয়া জরিয়ে ধরলো। আর একটু হলেই আমার দম যায় যায় অবস্থা। শান্ত ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।গলা মনে হয় ফুলে গেছে।কথা বলতে পারছি না।
শান্ত – আদ্র , তুই সব জায়গায় হিতাহিত জ্ঞান কেন হারিয়ে ফেলিস? তোকে বলছি না, শিশির ছোট, এই ফিলিং গুলো বুঝে না। সামান্য একটা চিরকুট এর জন্য তুই, শিশিরকে মেরে ফেলতে চাইছিলি। আমার বোনের থেকে তুই দূরে থাকবি। সত্যি ই তুই একটা সাইকো।
আদ্র ভাইয়া চেঁচিয়ে উঠলো। রেস্টুরেন্টে সবাই বলাবলি করতেছে। মানুষ জমে গেছে।
আদ্র- হা আমি সাইকো। আমার জিনিস মানে আমার। আজ তো ওকে ছেড়ে দিসি, ভবিষ্যতে ছাড়বো না। আমার সাথে প্রতারণা করলে ছাড়বো না। মেরে ফেলবো সবাইকে। তোদের ও ছাড়বো না। আর তুই, দূরে থাকতে বললেই হবে নাকি, এতোসময় ওকে আমি দূরে দূরে রাখছি সব বিষয় থেকে, এখন থেকে আরো কাছে যাবো
বলেই একটা টেবিলে লাথি মেরে টেবিল টা ভেঙে ফেলল। তারপর হনহন করে চলে গেল।
____
রেস্টুরেন্টের ঝামেলা শেষ এ বাসায় এসেছি। বড়দের এগুলো বলতে মানা করছে। তাই এগুলো সম্পর্কে বড়দের বলিনি। যেহেতু রাত ও অনেক হয়ে গেছে তাই , যার যার রুমে সবাই চলে গেছে।
আমি ও রুমে চলে গেলাম। এখানে দাদি আগেই ঘুমিয়ে গেছে। আমি আর স্বর্নালি আপু ও শুয়ে পড়ছি।
স্বর্নালি- অশি, আমি তোর থেকে বয়সে বড়, তাই না? একটা কথা বলবো, বিশ্বাস করবি?
আমি বললাম – হু, বলো।
স্বর্নালি- আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আদ্র তোকে ভালোবাসে । অনেক। তোর প্রতি অনেক প্রসেসিভ সে।
আদ্র ভাইয়ের নাম শুনে ই ঘটনা টা মনে পড়ে গেল। আদ্র ভাইয়ের প্রতি রাগ ও হচ্ছে আবার কান্না ও পাচ্ছে। শুধু কান্না পাচ্ছে না, ভয় ও করছে। আজ জীবনে প্রথম আদ্র ভাইয়াকে আমি রাগতে দেখেছি। তার সাইকো রুপ দেখেছি।
স্বর্নালি – কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি।
বললাম – ছাই করে ছাই। আদ্র পাদ্র।আস্ত একটা কুত্তার লেজ। কুত্তার লেজ জীবনে টানলে ও সোজা হয় না। এই আদ্র তেমন, সাইকো একটা, পাগল। তুমি বাজে কথা বন্ধ করো, মরে গেলেও এই পাগলকে আমি ভালোবাসবো ও না, বিয়ে করবো না। মানছি, আদ্র ভাইয়া সুন্দর, তবুও। এখন ঐ মিচকা শয়তান টার কথা বলবে না, রাগ উঠছে ঘুমোও।
শিশির ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু স্বর্নালি মুচকি হেসে মনে মনে বলল- অশি, তুমি খুব বোকা। কিন্তু ভিশন ভালো একটা মেয়ে। আমার বড় ভাই থাকতো, আমি তোমার মতো একটা ভাবি চাইতাম। হয়তো তোমাকে ই বানাতাম। আদ্রের মতো প্রসেসিভ প্রেমিক সবাই চায়। আদ্র কে আমার ও ভালো লাগে। কী নেই তার মধ্যে। তুমি বুঝতে পারছ না অশি, আদ্র সাইকো, তোমার সম্মতি হোক আর না হোক, সে তোমাকে আর তোমার পিছু ছাড়ছে না এই জনমে। আজকের পাগলামো দেখে আমি কেন সকল সদস্য বুঝে গেছে তুমি, আদ্র #শিশিরের_আদ্র। একদিন তুমি ও আদ্রকে পাগলের মতো ভালোবাসবে , প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে আদ্রের নাম ঝপবে।
____
মধ্যরাতে আদ্র বাড়ি ফিরেছে। তাও ছাদ টপকে। সে জানে এখন, কেউ জেগে নেই। আদ্র নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। তার শিশির কে এভাবে হার্ট করা উচিত হয় নাই। শিশির ও তো এটার সম্পর্কে জানতো না।আদ্র নিজের রুমে না গিয়ে চুপচাপ শিশিরের রুমে চলে গেল। শীতের মৌসুম ।সবাই কম্বল গা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অন্ধকার ও বটে। আদ্র পড়লো মহা বিপদে। এখন এই তিনজনের মধ্যে কিভাবে বুঝবে কোনটা শিশির।
আদ্র ১ম জনের কম্বল সরাতে গিয়ে….
চলবে…