শিশিরের আদ্র পর্ব ১৭
#Neel
নাহিদ আর নিজাম ভাইয়া একসাথে ৫০হাজার ?(চিৎকার করে)
তাদের চিৎকার শুনে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে এলো। সাথে বড়রা ও। দরজার সামনে থেকে একজন বলে উঠল – ঐ তোরা ৫০ হাজার বলে চিৎকার করলি কেন?
তাকিয়ে দেখলাম শান্ত ভাইয়া এসেছে। শান্ত ভাইয়া কে হাতের ইশারায় ডাক দিলাম। শান্ত ভাইয়া এগিয়ে এলো। কানে কানে ফিসফিস করে বললাম – প্লিজ আমার সাথে থাকো। একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করব। তুমি তো জানো শীতকাল আসলেই আমার টাকা লাগে (মুখ টা ফুলিয়ে)। সো সু্যোগ পাইছি, এবার বেশি করে আদায় করতে পারবো। প্লিজ ( ভুরু কুঁচকে, কান্নার অভিনয় করে) হেল্প মি, ভাইয়া।
শান্ত – বড়রা সবাই এখানে কি করছেন। আপনারা ঘুমাতে যান। এটা আমাদের ছোট দের ব্যাপার।
বড়রা হয়তো বুঝতে পারলো। মুচকি হেসে চুপচাপ চলে গেল। কিন্তু আদ্র ভাইয়ার মামি মুখ ভেংচে চলে গেল। বুঝলাম না ব্যাপারটা। থাক না সব ব্যাপারে নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।
নাহিদ ভাইয়া – একটু কম নিলে হয় না,অশি । এখন তো পকেটে টাকা ও নেই।
নিজাম – হ্যা হ্যা, ঠিক।একটু কম নে, টাকা নাই সব ব্যাংক এ।
বললাম – আমার বয়ে গেছে টাকা কম নিতে। পারলে আরো বেশি দাও। আমাকে চেক দাও, আমি কাল ব্যাংক থেকে তুলে নিব। আর কথা বাড়ালে, কান্না করে দিব।না হয় টাকা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিব।হু ।
হঠাৎ অহনা আপু বলে উঠলো – এই মেয়ে। টাকা কি গাছে ধরে? এতো টাকা চাইছো। তোমার মতো মেয়ে, এতো টাকা কি করবে, বাবা মায়ের কাছে চাইতে…(নাহিদ ভাইয়া হাতের ইশারায় থামতে বলল)
নাহিদ – অহনা, এটা আমাদের ভাই বোনের ব্যাপার । আমরা জানি আমাদের অশি কি রকম। আর টাকা কেন চাইছে জানি। তুমি নাক গলাতে এসো না। এই নে অশি (নাহিদ আর নিজাম ভাইয়া চেক দিয়ে) যা। এবার খুশি।
আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম। নাহিদ আর নিজাম ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে বললাম – থাঙ্কু।থাঙ্কু।
এর মধ্যেই আদ্র ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনে হচকচিয়ে উঠলাম। বলল- কিরে শিশির। এতো টাকা দিয়ে সত্যি ই কি করবি?
মুখ ফসকে বলে ফেললাম, বয়ফ্রেন্ড কে রিক্সা গিফট করবো। কেন, আপনি ও কিছু দিবেন না কি?দেন দেন, আমি আবার কেউ দিলে না করি না।(একটা বেকুব মার্কা হাসি দিয়ে )
আদ্র শিশিরের কথায় ক্ষেপে গেল। বলল- তুই দাড়া আমি আসছি। (বলেই শিশিরের পিছনে দৌড়)
আদ্র ভাইয়া কে আমার পিছু তেড়ে আসতে দেখে আমি দৌড়। আদ্র ভাইয়া পিছু থেকে বলছে – আজ তোকে হাতে পেয়ে নেই শিশির, বয়ফ্রেন্ড তাই না, তোকে স্ট্রেবেরির মতো গিলে খাব।
কি করি , কি করি, আইডিয়া। ইউরেকা,ইউরেকা। দৌড়ে বড় বাবা আর মাই এর রুমে ঢুকে গেলাম। দরজা খোলা ই ছিল,ভাগ্যিস। দুজন বসে গল্প করছে। আমাকে দেখে চমকে উঠলো। দ্রুত খাটে উঠে দুজনের মাঝে বসলাম। বসে হাপাচ্ছি। বাব্বাহ্!!কি দৌড় টা না দিলাম। হাতে পেলে আজ আমার কিমা বানাতো। শালা পাদ্র, খালি আমার পিছনে পড়ে থাকে।খচ্চর।
মাই – কিরে অশি, এই রাতে তুই কোথায় থেকে দৌড়ে এলি।(মাই তার আঁচল দিয়ে, আমার মুখটা মুছে দিল)দেখছো কান্ড, শীতের মধ্যে ঘেমে গেছে আর কেমন হাপাচ্ছে।
বড় বাবা – কিরে অশিমনি, সত্যি কথা বল, আবার…(এর আগেই আদ্র ভাইয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিল)
মাই আর বড় বাবা দরজার দিকে তাকালো। আমি মাই এর আঁচলের তলে মুখ লুকালাম। এখন একমাত্র তাঁরাই আমার ভরসা। আজ যা ই হয়ে যাক, আদ্র ভাইয়ের হাতে ধরা পড়ছি না ।
মাই – কি হয়েছে বাবাই। ভিতরে আয়। আমার পাশে বস।
আদ্র ভাইয়া ভিতরে এলো ।মাই এর পাশেই বসল। আমি মাই এর আঁচল থেকে বেরিয়ে এসে বড় বাবার সাথে ঘেসে বসলাম।
আদ্র – কিছু হয় নাই। এভাবেই তোমাকে দেখতে এলাম। ঐ শিশির এখানে কি করছিস (এমন ভাব করলো, যেন একটু আগে কিছু ই হয় নাই) রাত অনেক হয়েছে, ঘুমোতে দে ,আব্বা আম্মা কে। চল আমার সাথে। তাদের ঘুম নষ্ট করছিস।
মাগো, কি অভিনয়। আল্লাহ তুমি কোথায়। মাটিটা ফাঁক করে দাও আমি ঢুকে যাই। ব্যাটা আদ্র পাদ্র ঘোরার ডিম।(মনে মনে আদ্র ভাইয়া কে বকে ডিম সিদ্ধ বানাচ্ছি, সামনে থেকে তো কিছু ই ভয়ে বলতে পারি না )
বড় বাবা – না ঘুম নষ্ট করে নাই। আমরা জেগে ই ছিলাম।তা তুই কিছু বলবি?(আদ্র ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে)
আদ্র ভাইয়া না বলল। কিন্তু আমি বললাম – বড় বাবাইইই (জড়িয়ে ধরে) আমার কিছু লাগবে।শীত এসে গেছে, ঝমঝমিয়ে ও পড়া শুরু হয়ে গেছে। দাও না।
বড় বাবা মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল – খুব বড় হ। আর সবসময় মন এমন ই স্বচ্ছ রাখিস। আমি তখন ই বুঝতে পেরেছি, আপনি আমার কাছে আসবেন ই। এই নেন , আমি আপনাকে দিলাম।
বড় বাবা একটা চেক দিল। খুশি হয়ে গেলাম। মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া করলাম,এমন একটা পরিবারে আমাকে পাঠানোর জন্য।
অন্যদিকে আদ্রের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সবাই কেন শিশির কে এতো গুলো টাকার চেক দিচ্ছে। ও এই টাকা দিয়ে কি করবে?
আদ্র মনে মনে ঠিক করলো, যেকোন মূল্যে হোক তাকে জানতে হবে।
আদ্র ভাইয়া চুপচাপ উঠে চলে গেল। আদ্র ভাইয়া যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পর আমি ও চলে গেলাম।
____
সকাল বেলা, ছেলেরা সবাই খেতে বসেছে সাথে দাদি ও। মেয়েরা পরে বসবে। অহনা আপু ও মুখ কুঁচকে সোফায় বসে আসে। ডায়িং টেবিল এ একটা চেয়ার এখনো ফাঁকা আছে। কিন্তু ওটা আদ্র ভাইয়ার পাশের টা।
খুব খিদা পেয়েছে। দৌড়ে গিয়ে ঐ খালি চেয়ারটায় বসে পড়লাম।
মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল – ঐ বেশরম মাইয়া, উঠ ওখান থেকে । লজ্জা সরম, আক্কল কিছু ই হয় নাই। ঐ ওখানে মহিলারা বসছে, তুই খেতে বসেছিস?
দাদি – আমি কি মহিলা না? ছোড বউ। আমার নাতনি টা রে খাইতে দে।
মা আর কিছু বলল না। এমনিতেই আমাদের পরিবারে দাদির উপর এ কেউ কথা বলে না।
খাচ্ছি সবার সাথে। কিছু ক্ষন পর পর আদ্র ভাইয়া আড় চোখে তাকাচ্ছে। ধেৎ।
খাবার টেবিল এ ফিসফিস করে বললাম – আমার কিছু কথা ছিল। বলবো?
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। বড় বাবা বলল – বলে ফেল।
বললাম – আমার চকলেট গুলো শেষ হয়ে গেছে। আমার খুবই মন খারাপ। আমার জন্য চকলেট আইনো।( মুখটা দুঃখী মানুষের মতো করে)
শিশির এর অভিনয় এ খাবার টেবিলের সবাই একসাথে জোরে হাসতে শুরু করলো।
আদ্র- এতো গুলো চকলেট আনলাম, তুই সব খেয়ে ফেলেসিছ?(আমি মাথা উপর নিচ করমাম)।আদ্র ভাইয়া চোখ বড় বড় করে আবার ও বলল – শিশির তুই তো একটা চকলেটখোর। ওয়াল্ড গিনিস বুকে তোর নাম লেখানো যাবে রেএএ।
আবার সবাই হেসে উঠল। এভাবেই হাসা হাসির মাঝেই খাওয়া শেষ করলাম। মেয়েরা খেতে বসলো।
সবাই সোফায় বসে কথা বলছে। সুযোগ এ আমি রুমে গেলাম। আমার হেল্পিং বক্স টা আনলাম। শিড়িতে দাঁড়িয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলাম – আবার শীতকাল এসে পড়েছে।সবাই টাকা বের করো। আর আমাকে সাহায্য করো। দৌড়ে বাবা, মেজ বাবা, দাদি , শান্ত ভাইয়া একে একে সবার কাছে গেলাম। যে যার যার মতো সাহায্য করলো। আই মিন টাকা দিল।
আমি মেয়েদের কাছে গিয়ে বললাম – আপনারা কি কেউ দিবেন?
তারা ও যার যার মতো দিলো ।তবে আদ্র ভাইয়া, অহনা আপু আর তার মা বাদে সবাই কম বেশি সাহায্য করলো।
আমি হেল্পিং বক্স টা নিয়ে দৌড়ে নিজের রুম এ চলে গেলাম। আমি আমার জমানো ব্যাংক টা ভাঙলাম। এগুলো আমার পকেট মানি। আমার কাজে লেগে যা থেকে যেত তা আমি ব্যাংকে জমা রাখতাম। গুনতে শুরু করলাম।
__
অন্যদিকে আদ্র , অহনা, অহনার আম্মু সহ নতুন বউ রা সবাই প্রশ্ন করলো – শিশির এতো গুলো টাকা নিয়ে কি করবে? কেন কেউ প্রশ্ন না করে কেন টাকা চুপ চাপ দিয়ে দিলো।
আদ্রের বাবা বলল – যারা এ সম্পর্কে জানো ভালো কথা। তোমরা চুপ কর।আর তারা যারা এ সম্পর্কে জানতে চাও, চলো আমার সাথে।
সবাই শিশিরের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। শিশিররের অগোচরে।
আমি মনের সুখে টাকা গুনছি। কত হলো আমার জমানো টাকা। হঠাৎ আদ্র ভাইয়া কে দেখে চমকে উঠলাম। আমার মতো ফ্লোরে বসে পড়লো।গনা টাকা আবার এলোমেলো হয়ে গেল।টাকা গুলো একটা একটা করে হাতে নিচ্ছে।
আদ্র – শিশির আমাকে বলবি, তুই এ টাকা দিয়ে কি করবি? আর এতোক্ষণ অন্যের টাকা নিচ্ছিলি, এখন তো নিজের টাকা ও দিয়ে দিচ্ছিস। সত্যি করে বল (আমার হাত ধরে) , বলনা আমায়।
আদ্র ভাইয়ের মলিন কন্ঠে আমি দুষ্টুমির কথা ভুলে গেলাম। মুচকি হেসে বললাম – আমি এই টাকা দিয়ে সাহায্য করবো। যাদের শীত নিবারণের বস্ত্র নেই, তাদের বস্ত্র কিনে দিব। আমাদের শহরেই অনেক আনাচে কানাচে গরীব মানুষ আছে, তাদের জন্য না হয় কিছু করি। সমস্যা কি? কিছু করলে। আমাদের যাদের আছে, তারা আলহামদুলিল্লাহ বলি।আর যাদের নেই, আমাদের প্রত্যেকের উচিত তাদের সাহায্য করা। আমি জানি, আমার এই অল্প টাকায় কয় জনকে ই বা সাহায্য করতে পারবো। তবে আমরা বন্ধুরা একত্র হবো, যার যার মতো, আমরা সবাইকে সাহায্য করব।
(এই শীতে আমাদের আশেপাশে , রাস্তায় কত মানুষ শীতে, ঠান্ডায় মারা ও যায়। অনেক এ এই শীতটা ঠান্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপে। যে যা পারি, যেভাবে ই পারি, সাহায্য করতে পারি কিন্তু। আজ আমি সাহায্য করব, কাল অন্যকেউ, এভাবে আমরাই কিন্তু তাদের পাশে এগিয়ে এসে সাহায্য করতে পারি।যারা আমরা স্বচ্ছল পরিবারের, তারা কিন্তু সত্যি ই পারি গরীব মানুষ দের সাহায্য করতে। যাই হোক এটা আমার নিজস্ব ওপিনিওন। বাকিরা ভেবে দেখবেন।
**ধর্ম_বর্ণ_নির্বিশেষে_সকল_মানুষ_গুলো_হোক_মানুষের_জন্য**)
দেখতে দেখতে কেটে গেল একটা সপ্তাহ। সেদিনের পর অনেক কিছু পাল্টিয়েছে। আদ্র ভাইয়া ও আমাদের সাহায্য করেছিল। অনেক মানুষ কে আমরা সাহায্য করেছি। বিয়ের ২দিন পর, মির্জা আব্বাস এর লাস পাওয়া গেছে।কি বিভৎস ভাবে খুন করা হয়েছে তাকে। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। সবাই সবার কাজে লেগে পরেছে। আমি ও পড়ায় মনোযোগ দিয়েছি। এই তো সেদিন, নিজাম ভাইয়া আমার জন্য কতগুলো চকলেট এনেছে। কিন্তু সুমাইয়া ভাবি যেন কিরকম। একটু অদ্ভুত। তার কথা বার্তা, কিছু ই আমার বোধগম্য হয় না। তবে আমার মনে হয় সে আমাকে দেখতে পারে না। হয়তো!!ধেৎ কী যে ভাবছি?
আদ্র ভাইয়া আর আমার বন্ডিংটা সেই আগের মতই আছে। তবে কিছুটা পাল্টিয়েছে। ইদানিং আদ্র ভাইয়া হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। বাসায় সময় কম দেন।কাজে ব্যস্ত থাকে। তাকে মিস করি। মনে হয় আমি আদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসি।
দেখতে দেখতে কেটে গেল একমাস। আজ আমার লাস্ট এক্সাম। এবার আমি সেকেন্ড ইয়ারে উঠবো।এই একমাস যে খুব বেশি আনন্দে কাটিয়েছি তা নয়। পরীক্ষার চিন্তা আর আদ্র ভাইয়ের ভালোবাসার কথা মাথায় ঘুরপাক খায়। আজ বাসায় যেতে ই আদ্র ভাইয়াকে আমার মনের কথা বলে দেব । বলে দেব তাকে আমি ভালোবাসি।
পরীক্ষা শেষ, কলেজ থেকে বের হলাম। ড্রাইবার গাড়ি চালাচ্ছে। এই একমাস একটি জিনিস একটু অদ্ভুত লাগতো । রোজ একটি গাড়ি আমার পিছু করতো। কিন্তু কখনো ডিস্ট্রাব করে নাই।তাই বাসায় এ সম্পর্কে কিছু বলিনি। হয়তো এটাই আমার ভুল।
হঠাৎ করেই আমাদের গাড়ির সামনে সেই গাড়িটা থেমে গেল। বাধ্য হয়ে ড্রাইবার গাড়ি থামিয়ে দিল।ড্রাইবার গাড়ি থামাতেই, একদল লোক আমাদের গাড়িকে ঘিরে ফেলল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ড্রাইবার কে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিল। তার মাথা বরাবর আঘাত করলো। সাথে সাথে ড্রাইবার ঢলে পড়লো নিচে। রক্ত আর রক্ত। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার মুখে রুমাল চেপে ধরল। তারপর আর কিছু মনে নেই।
_____
একটু আগে আদ্রের কাছে ফোন কল এসেছে। শিশির কে কেউ তুলে নিয়ে গেছে। আদ্র দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের হয়ে তার আস্তানায় গেল। শান্ত, রোহান আড্ডা দিচ্ছিল তাদের দলবল নিয়ে। হঠাৎ আদ্র কে দেখে চমকে উঠে।আদ্র সবকিছু বলতে ই শান্ত ও অস্থির হয়ে গেল। একটা বোন, কলিজার টুকরো।
রোহান থামালো দুজন কে । বোঝাচ্ছে। আদ্র খোঁজ শুরু করলো।
___
হুঁশ ফিরে আসতেই নিজেকে একটা ফ্লোরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পাই। কতক্ষন যাবত এখানে আছি জানি না। চিৎকার করে বললাম – কেউ কি আছ? আমাকে সাহায্য কর। আমি এখানে কিভাবে আসলাম। কে আমাকে এখানে এনেছো। আমার হাত পা এর বাঁধন খুলে দাও।
হঠাৎ দরজা খুলে গেল। দরজা খুলে লোকটি প্রবেশ করতেই চমকে গেলাম।আরে ওনি তো সে লোকটি। মানে বিয়েতে মাক্স পড়া ছেলেটি। আমার দিকে এগিয়ে এলো, আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো, বাঁকা হাসি দিয়ে একটা পেপার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল – একটা সিগনেচার দাও।
আমি চমকে উঠলাম, বললাম – আপনি, আপনি তো সেই, যে বিয়ের সময় ও ছিলেন। কে আপনি?
লোকটি অট্ট হাসি দিয়ে বলল, তাহলে আমাকে খেয়াল রেখেছো ,ডার্লিং।মাক্স টা খুলে ফেলল। আমি জীবনে কল্পনা করতে পারি নাই , এই লোকটি হবে।
অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম – আপনি, মন্ত্রী রাহাত সরকার এর ছেলে!!
ছেলেটি জোরে হাসতে শুরু করলো। উফ্ জানু, তুমি ও আমাকে খেয়াল এ রাখতে না কি? হ্যা, আমি মন্ত্রীর ছেলে, মন্ত্রী রাহাত সরকার এর ছোট ছেলে রাফায়াত সরকার।
নে অনেক হয়েছে পরিচয় পর্ব।এখন সিগনেচার কর।
আমি বললাম – কিসের পেপার এটা?
রাফায়াত – জানু কি তোরে এমনিতেই বলি। এটা আমাদের বিয়ের পেপার। সিগনেচার কর। সিগনেচার করার পর কাজি ডেকে বিয়ে করবো।(আমার হাত খুলে দিল)
আমার খুব রাগ হচ্ছে। আমি রেগে পেপারটা ছিঁড়ে ফেললাম। বললাম – তোর মতো অভদ্র, মেয়েদের সম্মান করতে জানেনা, এরকম ছেলেকে আমি অনামিকা শিশির চৌধুরী বিয়ে করবো না। মরে গেলে ও না। আমার ভাই , আদ্র আর পরিবারের লোক জানতে পারলে তোকে তোর ফুফার মতো শেষ করে দিবে। আদ্র…
কিছু বলার আগেই আমার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরল। বলল-আদ্র আদ্র আর আদ্র। এই মুখে কেন এতো আদ্রের বুলি ফুটে। প্রথম থেকেই এই আদ্র তোর আর আমার মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেস্টুরেন্টে সেদিন আমি গিফট দিলাম, চিঠি, ফুল কত কি? কিন্তু সব কিছু আদ্র ভেস্তে দিয়ে উল্টে তোর সাথে লেপ্টে থাকতো। আরে ও তো একটা খুনি।
আমি মুখ থেকে হাত সরিয়ে ধাক্কা দিলাম। চিৎকার করে বললাম – হা,আদ্র। আদ্র। আমি যাকে ভালোবাসি তার নাম ঝপবো না তো কি তোর নাম ঝপবো।
রাফায়াত রেগে গিয়ে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়ে নিজের বেল্ট টা খুলে ইচ্ছে মতো শিশির কে পিটাচ্ছে। আদ্র খুনি, খুনি কে ভালবাসবে , অচথ আমাকে না। আমার না হলে তোকে কাউকে হতে দিব না।মেরে ফেলবো।শিশির আচমকা আক্রমণ এ ভয় পেয়ে গেল। কখনো যে মেয়ে মাইর খায় নি, যার শরীরে ফুলের টোকা ও পরে নি , এরকম আঘাতে সহজেই নেতিয়ে পড়ল।
এই সময় দরজা ভেঙে আদ্র ভেতরে এলো।আদ্র রাফায়াত কে পিছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দিল। দৌড়ে শিশিরের কাছে গেল। শিশির একবার আদ্রকে চোখ মেলে দেখে হুঁশ হারিয়ে ফেলল।
___
১ দিন পর আমার জ্ঞান ফিরে। আমি নিজেকে আদ্র ভাইয়ের রুমে পাই। পাশে সবাই বসে আছে। কেউ ঐ ঘটনা নিয়ে কোন প্রশ্ন করে নাই। হয়তো আদ্র ভাইয়া সবাইকে সব কিছু খুলে বলেছে তাই!!
সপ্তাহ পর, সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছে। শরীরের আঘাত গুলো শুকিয়ে গেছে। সুস্থ্য আছি। আদ্র ভাইয়া সেদিনের পর থেকে আমার অনেক খেয়াল রাখছে। ইদানিং আদ্র ভাইয়া আমার রায় জানার জন্য সবসময় আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থাকে।আজ আদ্র ভাইয়াকে বলব আমি ও তাকে ভালোবাসি।
সোফায় বসে টিভি দেখছি। নিউজ চ্যানেল এ প্রেস করতেই একটা খবর শুনে চমকে উঠলাম। হেডলাইন জুরে একটা কথা, মন্ত্রী রাহাত সরকার এর ছোট ছেলে রাফায়াত সরকার খুন। কি বিভৎস। সেই একই রকম। যেমনটা মির্জা আব্বাস কে করা হয়েছিল। হ্যা তাই তো!! প্রথমে মির্জা আব্বাস আর তারপর রাফায়াত, আর দুজন ই সবার শেষে আদ্র ভাইয়ার সাথে। না না,এসব কী ভাবছি। হঠাৎ রাফায়াত এর একটা কথা মনে পড়লো, ও বলেছিল আদ্র ভাইয়া খুনী।
দৌড়ে উপরে গেলাম। আদ্র ভাইয়া বাসায় নেই। এখন ই সুযোগ। আদ্র ভাইয়ের রুম তছনছ করে ফেললাম। কিছু তো প্রমান পাবো। মনে মনে দোয়া করছি,আদ্র ভাইয়া যেন খুনি না হয়। তাহলে আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাব।
অবশেষে কাবার্ড এ একটা বক্স পেলাম। বক্সটা খুললাম। সেই ডায়েরিটা আবার দেখে চমকে উঠলাম। সিউর হওয়ার জন্য প্রথম পৃষ্ঠা টা খুললাম। হ্যা এটা সেই ডায়েরি।যেটার কথা মাই ও সেদিন বলেছিল। আর আমি প্রথম পৃষ্ঠা টা পড়েছিলাম। তার মানে আদ্র ভাইয়া আমাকে মিথ্যা কথা বলছে?
খুলে সেদিনের লেখাটা আজ ও দেখতে পেলাম তবে নিচে নতুন করে লেখা,
চোখের দেখা , কানের শোনা ভুল হয়। আমি সরি মা । মাফ করে দিও।
পুরো ডায়েরিটা পড়লাম। ৯ টা বেজে গেল। বুঝলাম আদ্র ভাইয়ের আসার সময় হয়ে গেছে। ডায়েরিটা ঠিক মতো রেখে দিলাম। আমি সব ই পড়েছি। আদ্র ভাইয়া মাফিয়া। মানে সে ই মাফিয়া এএসি। সে একটা খুনি। আদ্র ভাইয়া খুনি।কত মানুষ কে সে হত্যা করেছে। আমার আদ্র খুনি। মির্জা আব্বাস আর রাফায়াত এর খুন ও সে করেছে।
মূহুর্তে ই চোখের কোনায় থেকে অশ্রু ঝরে পড়লো।
এমন সময় আদ্র ভাইয়া ভেতরে প্রবেশ করল। আমাকে রুমে দেখে একটু চমকে উঠে। হাসি মুখে বলল – শিশির তুই। আমাকে কি কিছু বলবি? বল না। তোর বলার অপেক্ষায় ই তো আছি। আর কত দিন আমাকে অপেক্ষা করাবি?
আদ্র ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম। একজন খুনির সামনে। বুক ফেটে যাচ্ছে। আমি কাকে ভালোবাসে ফেললাম। আমার প্রথম প্রনয়ে ভুল মানুষ কে জড়িয়ে ফেলেছি। আদ্র ভাইয়ের চোখের দিকে তাকালাম। অশ্রু থামাতে পারলাম না, তার সামনে ই ঝরে পড়লো।আদ্র ভাইয়া বিচলিত হয়ে গেল। আমার কপালে একটা পরশ দিয়ে, চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল – কি হয়েছে প্রিয়তমা।বল আমাকে। তোর অভিযোগ গুলো আমাকে বল। আমি তোর এই নিরব কান্না সহ্য করতে পারছি না।
আদ্র ভাইয়ের থেকে একপা এক পা করে পিছনে সরে গেলাম। চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।আদ্র ভাইয়া পিছন থেকে ডাকছে। কিন্তু আমি তো ঘোরের মধ্যে আছি। হয়তো আমি আদ্র ভাইয়াকে কখনো মেনে নিতে পারবো না, যতই ভালোবেসে থাকি।।
চোখের অশ্রু মুছে মুচকি হেসে বললাম –
শিশিরের_আদ্র….
…ভুল সময়ে প্রনয় তুই কেন আমায় জরিয়ে ধরলি?
…. শিশির তুই আদ্রের হয়েও কেন দূরে সরে গেলি?
সমাপ্ত….
(আবার ও নতুন ধারার ফিরে আসব)