গল্প অফসাইড
ঠিক পৌনে বারোটায় মেয়ের বয়ফ্রেন্ড এসে হাজির। আজ পরনে স্কুলড্রেস নয় থ্রী কোর্য়াটার প্যান্ট, লেমন কালার টিশার্ট। মুদি দোকানের সামনে এসে সিগারেট ধরাল। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। কতই বা বয়স হবে পনের-ষোলো এবয়সে সিগারেটের নেশা ধরেছে৷ টিফিনের ঘণ্টা বাজল। ছেলেটা সিগারেট ফেলে কিছুটা এগিয়ে এল। একদল মেয়ের সাথে কলকল করতে করতে অরু বেরিয়ে এল। বান্ধুবীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল৷ দীপ্ত ওর উদ্দেশ্যে হাত নাড়তেই দৌঁড়ে রোড ক্রস করে এপাড় এল। ইশ! মেয়েটাকে কতবার বারণ এভাবে রাস্তা পাড় হবি না। এখন যদি অ্যাক্সিডেন্ট হত। হাইস্কুলে উঠে গেছে এখনও অবুঝের মত আচরণ করে।
অধিক মাতৃস্নেহ অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকে।একজন মা জানে মা হবার কত জ্বালা৷ যে মেয়ে ফিগার ঠিক রাখার জন্যে না খেয়ে ডায়েট করে, মুখে একটা ব্রণ উঠলে চিন্তায় রাতে ঘুমায় না, রাতদিন পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্টের জন্যে। সেই মেয়ে নির্দ্বিধায় নিজের রুপ-লাবণ্য, ক্যারিয়ার বিসর্জন দেয় একটা সন্তানের জন্যে। মাতৃত্ব একজন নারীকে যতটা সুখ দেয় তারচেয়ে অনেক বেশি কেড়ে নেয় তারপরও সন্তানের মুখে মা ডাক মায়েদের হৃদয় জুড়ায়৷
দেখলাম, দৃপ্ত আর অরু খুব হাসছে৷ হাতে আইসক্রীম। অরু দৃপ্তর পেটে খোঁচা মেরে কি যেন বলল দৃপ্ত হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। দুজনের এত কম বয়স, ওদের কাপল ভাবতে আমারই লজ্জা করছে। এটা যদি ভাই-বোন বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হত কত সুন্দর একটা দৃশ্য হত। জীবনের সরলতা আছে, জটিলতা আছে। আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি কোন মাধ্যম চান।
আধাঘণ্টার টিফিন শেষে অরু স্কুল গেটে ঢুকে দীপ্তর উদ্দেশ্যে হাত নাড়ে৷ দীপ্ত ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। আমার কেমন যেন ক্লান্তি এসে ভর করে। হাঁটতে হাঁটতে একটা কফিশপে এসে বসি৷ চারপাশে কপোত-কপোতী, একা আমি বড্ড বেমানান৷ একটা টেবিল দখল করে কফির অর্ডার দেই৷ জানি না কতক্ষণ বসে ছিলাম।যখন উঠলাম টেবিলে পাঁচটা কফির মগ৷ এক চুমুক গিলতে পারি নি৷
অরু আমি রিকশায়। ওকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরছি।
-অরু, টিফিনে কি খেয়েছ?
-আইসক্রীম।
-ব্যাগে আপেল দিয়েছিলাম।
-সরি, আম্মু। খেতে মনে নাই।
কিছুক্ষণ নীরবতা।
-তোমাকে নানুর বোরকা পরাতে নানুর মত লাগছে। অরু হাসছে।
-অরু,
-হুম।
-দীপ্ত ছেলেটাকে কতদিন ধরে চলো?
-দীপ্ত কে আম্মু?
-মায়ের কাছে বেশি স্মার্ট হবার চেষ্টা করো না। তোমরা দুজন আজ টিফিনে একসাথে ছিলে।
-কে বলল তোমাকে?
হাসলাম।
-তোমার পিঠের ডানপাশে একটা তিল আছে।
মেয়ে অবাক ।
-তুমি কি করে জানলে?
-মায়েরা সব জানতে পায়। দীপ্ত কীসে পড়ে?
-ক্লাস টেন।
-কতদিনের পরিচয় তোমাদের?
-তিন মাস।
-ঠিক আছে৷ বাড়ি চলো।
-আম্মু, বাবাকে কিছু বলবে নাতো? প্লিজ।
মেয়ের কণ্ঠে অনুনয়।
-বলব না।
বাড়ি ফিরে মেয়ে চুপচাপ৷ সামান্য কিছু খেয়ে পড়তে বসে গেল। রুমী বলল,
-কোনো সাড়াশব্দ নেই। বকছ নাকি?
-না। ও পড়ছে৷ বিরক্ত করো না।
রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে মেয়ের রুমে এলাম। অরু কমিকস পড়ছে৷
-আজ নানু আমার সাথে ঘুমাবে না?
-না। আমি তোমার সাথে ঘুমালে আপত্তি আছে?
-অরু একটু সরে জায়গা করে দিল।
অরুর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।
-অরু,
-বলো আম্মু।
-আমরা যখন নাইনে পড়ি আমাদের সাথে এক মেয়ে পড়ত, মিতু। খুব সুন্দর দেখতে। এলাকার অনেক ছেলে ওকে চিঠি দিত। ক্লাস টেনে পড়ে কর্মাসের একটা ছেলে ওকে ভীষণ পছন্দ করত। ছেলেটা ভালো স্টুডেন্ট। মিতু ওর সাথে জড়িয়ে যায়।
-তারপর,
-ওদের কথা জানাজানির পর মিতুকে বাড়ি থেকে বিয়ে দেবার চেষ্টা করে।ওরা পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে বিয়ে করে।ছেলেটা একটা গার্মেন্টসে চাকরি নেয়, অল্প টাকার মাইনেতে ওদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়৷ শেষে ছেলেটা ওকে রেখে চলে যায়। মিতু তখন প্রেগন্যান্ট।
-তারপর-
-মিতুকে ওর পরিবার বাড়ি নিয়ে এসে৷ ওর একটা ছেলে হয়।ছেলেটাকে রেখে ওকে একজন বয়স্ক লোকের সাথে আবার বিয়ে দেয়।
অরু কিছু বলে না।
-অরু, তুমি কি এখন বিয়ে করতে চাও?
-না, না আম্মু।
-তাহলে তুমি কেন এসব করছ?
অরু মাথা নীচু করে বলে,
-দীপ্ত খুব ভালো ছেলে। ও বলেছে বড় হয়ে আমরা বিয়ে করব।
অনেক কষ্টে হাসি চাপালাম।
-অরু,তুমি মাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ো। কলেজে উঠবে, ভার্সিটিতে। ততদিনে তোমার অন্য কাউকে ভালো লাগতে ও পারে । দীপ্তরও তাই৷ বলো সত্যি না?
অরু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
– আমি তোমাকে কিছুই বলব না কিন্তু আমি খুব কষ্ট পেয়েছি তোমার আচরণে। তোমার আব্বু শুনলে ..
-আব্বুকে বলবে না তুমি।
মেয়ে ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলে।
-আমি আর কখনও এমন করব না আম্মু । সরি আম্মু। ও বলল আর আমি…
-ঠিক আছে। এবার ঘুমাও।অনেক রাত হয়েছে।
মেয়ে পাশ ফিরে উশখুশ করে একটু পর আবার বলে,
-দীপ্ত আমার সাথে কথা বলতে চাইলে কি বলব?
-বলবে আমাদের এখন এসব ভাবার বয়স হয় নাই৷ তোমরা বন্ধু হিসেবে কথা বলতে পারো। কিন্তু কি জানো মামনি?
-কি?
-যাকে তুমি অন্যভাবে পছন্দ করো সে কখনও তোমার বন্ধু হয়ে উঠবে না। তাই ওর সাথে কথা বলা কমিয়ে দিও কেমন?
অরু কিছু না বলে আমার বুকে মুখ লুকায় ।
মেয়ে ঘুমালে রুমীর কাছে এলাম।
-অনেকদিন ঘুরতে যাই না। আমাদের দূরে কোথাও নিয়ে যাবে?
রুমী অবাক হয়।
-জ্বরটর করে নি তো। তুমি ঘুরতে যেতে চাইছ!
-ইর্য়াকি ভালো লাগছে৷ কোথায় নিয়ে যাবে বলো,
দক্ষিণবঙ্গ থেকে সাতদিনের লম্বা সফর করে তিনজন নিগ্রো হয়ে ফিরলাম।মেয়ের মুখে হাসি৷
-সামনের বছর আবার যাব । তাই না আম্মু?
-তুমি ভালো রেজাল্ট করলে নিশ্চয়ই যাব।
অরু জেএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করে। নাইনে সায়েন্স পড়তে নিল। একরাতে ঘুম ভাঙার পর পাশের রুমে মেয়ে চাপা স্বরে কথা বলছে। টেবিল হাতড়ে দেখলাম আমার ফোনটা নেই। এক পা, দু’পা করে এগিয়ে গেলাম। মেয়ে বলছে,
-পিয়াস, আমাকে সত্যি ভালোবাসো?
-শেষ
#হাবিবা সরকার হিলা
আমার ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া মেয়ে প্রেম করছে জানার পর বিরক্ত নয় বরং ভীষণ অবাক হয়েছিলাম।খাবার টেবিলে নতুন করে মেয়েকে দেখছিলাম। নীল-সাদা স্কুল ড্রেস আর দুই বেনীতে অরুকে বয়সের তুলনায় আরো বেশি বাচ্চা লাগছে।প্লে,নার্সারি,কেজি কিন্ডারগার্টেনের ঝকমারি শেষ করে সিক্সে উঠতে বাচ্চাদের বয়স বারোতে গিয়ে ঠেকে। অরুর তেরো চলছে৷ বাবার মত লম্বাটে নাক, পাতলা ঠোঁট, মায়াময় চোখ৷ লোকে বলে অরু আমার রঙ পেয়েছে৷ সে হিসেবে অরোরাকে মিষ্টি কিশোরী বলা যায়৷ মেয়ের বাবা মেয়েকে ভাত নলা পাকিয়ে খাওয়াচ্ছিলেন৷ মেয়ে হাতে কমিকস খুলে বাবাকে কিছু একটা দেখাচ্ছে আর দুজনে খুব হাসছে। কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে মায়ের ফোন থেকে লুকিয়ে বয়ফ্রেন্ডকে কল করছিল,
-কোচিং শেষ হবার পর চলে যেও না।অপেক্ষা করো।
মেয়ের ফিসফিসানি কণ্ঠ আর চোখমুখে আড়ষ্ট চাহনি দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় নি ফোনের ওপাশে মানুষটি কে।
-আরেক চামচ ডাল দাও। অন্যমনস্ক হয়ে কি ভাবছ?
রুমীর কথায় হুশ হল। মেয়ের প্লেটে ডাল তুলে দিলাম সাথে আরেক চামচ সবজি৷মেয়ে আদুরে ভঙ্গীতে বলল,
-মা, এতটা কেউ খেতে পারে?
-আরে, আমিও তো সাথে খাচ্
রুমী ছোট এক নলা মুখে নিয়ে মেয়েকে বুঝ দিল।
জিজ্ঞেস করলাম,
-অরু কোচিং শেষ হবে কয়টায়?
-পাঁচটায়।
-ঠিক আছে।আমি নিয়ে আসব।
-কেন? রোজ তো আমি একাই বাড়ি ফিরি।
-নিউমার্কেটে যাব কিছু কেনাকাটা করতে আসার সময় তোকে নিয়ে আসব।
অরু আর কিছু বলল না। বাবা-মেয়ের খাওয়া হল। রুমী মেয়েকে স্কুলে ছেড়ে অফিসে যাবে। দুজনে একসাথে বের হল। অরু ধপাধপ সিড়ি ভেঙে নামছে। রুমী আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-কিছু হয়েছে তোমার?
-কই কিছু নাতো।
-সকাল থেকে আনমনা লাগছে। ঠিক আছে। দরজা ভালো করে বন্ধ করে দাও৷ আসি।
দুজনে চলে যাবার পর আমার অফুরন্ত অবসর। এক মগ কফি করে বেলকুনিতে এসে বসলাম। এসময় সবাইকে সবাইকে কল করি। মা, ছোটবোন অথবা ননদ-জা৷ আজ কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। অরু যার ভালো নাম অরোরা আহসান আমাদের একমাত্র সন্তান। বিয়ের দু’বছর পর কনসিভ করি৷প্রথম সন্তান তাই দুজনের আনন্দ ছিল ভীষণ। মেয়ে হবে না ছেলে হবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, কোথায় ডেলিভারি করলে সুবিধে হয় এইসব ভেবে আলোচনা।আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি গত হয়েছেন পনের বছর আগে।তাই আলাদা টেককেয়ার নেবার জন্যে প্রেগন্যান্সির সময়ে আত্মীয়-স্বজনদের আসা-যাওয়া থাকত রোজ। একদিন অফিস থেকে রুমী ফোন করল,
-মিলি, আমাদের মেয়ের নাম ঠিক করেছি।
-অফিসে বসে মহাশয়ের এসব ভাবা হয়!
-জ্বী হয়। মেয়ে হলে নাম রাখব অরোরা।
-অরোরা মানে কি?
-সকাল বেলার আলো।
অরোরা সত্যি আলো হয়ে এসেছিল। আমি ছোট্ট করে অরু ডাকি এতে সাহেবের ভীষণ আপত্তি। মেয়েকে মিষ্টি করে ডাকতে হবে। রাত আটটায় উনি বাড়ি ফিরেন অরু পড়ার টেবিল থেকে উঠে ডাইনিং রুমে ঘুরঘুর করে। কলিংবেল বাজার শব্দ হলেই লাফ দিয়ে দরজা খুলে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে৷ দূর থেকে এদৃশ্য দেখে মনে হয়, আমার চেয়ে সুখী এপৃথিবীতে আর কেউ নেই।
অরুদের গার্লস স্কুল। গার্লস স্কুলে পড়ানোর ইচ্ছা আমার ছিল না। কোএডুকেশন সিস্টেমের উপর আমার যথেষ্ট আস্থা আছে৷ ছেলে-মেয়ে পাশাপাশি বসে ক্লাস করে তাদের মাঝে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের তৈরি হয়৷ একজন ছেলে আর একজন মেয়ে শরীরী ব্যাপারটা বোঝার আগেই যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তা পৃথিবীর শুদ্ধতম সম্পর্ক । একসাথে অনেকটা সময় কাটানোর ফলে ওরা নিজেদের ব্যাপারে সহজ হয়। বয়ঃসন্ধিকালে প্রাকৃতিক ভাবেই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ আসে। এসময়
লবঙ্গলতা না সেজে থেকে এই মেয়েগুলি বরং সহজ হয়৷
এই মেয়েগুলি ভুল করে কম। কারো স্ত্রী বা প্রেমিকা হবার চেয়ে সে নিজেকে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। রুমী আমার ধারনার সাথে একমত নয়৷ ওর মতে মেয়েদের কিছু আড়ালে থাকা ভালো৷ ওর কথা শুনে হেসেছিলাম। আমি জানি ঘোমটার আড়ালে থাকা মেয়েগুলিই পর্দার ফাঁক দিয়ে আড়চোখে পুরুষের দিকে তাকায়৷ যাদের কাছে পুরুষ মানে আলাদা জাত তাদের বাড়তি কৌতুহল থাকবেই। দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি এক হবে এরকম কোনো যুক্তি নেই। তারপরও আমি রুমীর সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম৷ পুরুষ মানুষ তাদের পুরুষজাত ইগোর কারণে যেকোন সিদ্ধান্ত বহাল থাকতে পছন্দ করে। স্ত্রীর কথা শোনা মানে তাদের পুরুষত্বে আঘাত হানা অতএব এই ব্যাপারে তারা সদা সচেতন।
নিজের ফোন তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোনো মেসেজ বা অচেনা নাম্বার পেলাম না। মেয়ে আমার কথা বলে ঠিকই নাম্বার ডিলিট করে ফেলেছে। ওর টেবিলের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে গল্পের বই কিছুই বাদ দিলাম না। শেষে সোনালী-দুঃখ নামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা রোমান্টিক উপন্যাস পেলাম।উৎসর্গপত্রে লেখা,
প্রিয় অরুকে -D
এই D টা কে ভেবে পেলাম না। ওর কোনো বান্ধবী হলে সরাসরি নাম লিখত, অক্ষর লেখার ঝামেলা করত না।
মেয়েকে সেদিন কোচিং থেকে বাড়ি আনার সময় সন্দেহজনক কিছু দেখলাম না৷দুটো বান্ধবীর সাথে রাস্তায় গল্প করছে৷ আমায় দেখে আম্মু বলে চিৎকার করে উঠল।মেয়েকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে রিকশা করে বাড়ি ফিরছি। জিজ্ঞেস করলাম,
-অরু, তোর কোচিং এর ছেলেদের সাথে কথা হয় না?
-হয় তো মা, সাদিফ,আরমান আমার খুব ভালো বন্ধু৷
সাদিফ অবশ্য খুব দুষ্ট আমাকে ঝাসির রানী বলে খেপায়।
হাসলাম।
-দীপু নামে কেউ পড়ে?
-দীপু! কই দীপু নামে তো কাউকে চিনি না । কেন মা?
উত্তর দিলাম না। গলির মোড়ে কিছু বখাটে ছেলে মা-মেয়ে দুজনকে রিকশায় দেখে ফিসফিস করে কি যেন বলল, আর হাসছে৷ অরু এইরকম কারো সাথে মিশছে নাতো আমার বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাত করে উঠল ।
-বাকিটা কাল অথবা পরশু
গল্পঃ অফসাইড
হাবিবা সরকার হিলা
সেকেন্ড পর্ব
#গল্পঃঅফসাইড (২)
আমার বারো বছরের মেয়ে প্রেম করছে একথা বরকে বললে বিশ্বাস করবে না। বলবে, আমার মাথা খারাপ নয়ত বাচ্চা মেয়েকে অযথা সন্দেহ করছি। এই মেয়ে যখন বড় কোনো ভুল করবে তখন সব দোষ তার মায়ের ঘাড়ে চাপবে।কেমন মা তুমি! মেয়েকে শাসন করতে পারো না। স্বামী ছাড়া আর কারো সাথে শেয়ার করব এমন মানুষ খুঁজে পেলাম না। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের সাথে বললে তারা কিছু উপদেশ দিবে ঠিকই পরবর্তীতে এই তারাই গসিপ ছড়াবে। আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে নিজের পছন্দের কথা বাড়িতে বলতে সঙ্কোচ বোধ করে। প্রেম ব্যাপারটা এতটাই ট্যাবু।
অরু বাবার সাথে যতটা ফ্রী অামার সাথে নয়৷ স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে মেয়ের চুলে বেনী করে দিচ্ছিলাম। আর গল্প করছিলাম।
-আম্মু তুমি আজকে পৃথিবীর সেরা আম্মুর মত বিহেভ করছ কেন বলো তো?
-কেন?
-একদম বকা দিচ্ছ না৷ আবার পড়তেও বসতে বলছ না।
-অরু তুই দাবা খেলতে পারিস?
-না৷ কেন?
-তুই বস । আসছি আমি ।
কলেজে ভালো দাবাড়ু হিসেবে নাম ছিল৷ আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতায় একবার রানার্সআপ হয়েছিলাম। সঙ্গী আর সময়ের অভাবে দাবা খেলার শখ মিটে গেছে৷ কিন্তু কাঠের একটা চমৎকার দাবাবোর্ড সংগ্রহে ছিল৷ তা বের করে অরুকে নিয়ে বসলাম৷ অরুর চোখে কৌতুহল।এইপ্রথম ওকে পড়াশোনার বাইরে অন্যকিছু শেখাচ্ছি।নিয়মকানুন কিছুটা শিখিয়ে মেয়ের সাথে খেলতে বসে গেলাম। প্রথম তিনবার অরু দ্রূত হেরে গিয়ে চাল দেওয়া রপ্ত করে ফেলল। সমানে সমানে নয় কিন্তু ও বেশ বুদ্ধি খাটিয়ে চাল দিচ্ছে। খেলা প্রায় জমে উঠেছে দরজায় নক করার শব্দ হল। অরু বলল,
-আম্মু, তুমি যাও।
দরজা খুলে সাহেব অবাক । ডাইনিং টেবিলে সাজানো দাবা বোর্ড দেখে ঠাট্টা করল,
-আমি ভুলে অন্য কারো বাড়ি চলে এলাম নাকি!
যতটা পারছি চেষ্টা করছি অরুর কাছাকাছি যেতে। পরদিন শুক্রবার।অরুর মাথায় তেল দিচ্ছি আর কথা বলছি।
-অরু, তোর একা স্কুল থেকে আসতে ভয় করে?
-ভয় পাব কেন?
-রাস্তায় কত বখাটে ছেলে বসে থাকে। তোকে বিরক্ত করে?
-একদিন ফোন নাম্বার জিজ্ঞেস করেছিল।
-সেকি! তুই আমাকে কেন বলিস নি।
-এগুলা কোনো বলার মত কথা । কতই তো এমন হয়।।
অরু হেসে উড়িয়ে দিল।
মেয়ে সত্যি বড় হয়ে যাচ্ছে।
-তারপর তুই কি বললি?
-বললাম ফোন কিনলে নাম্বার বিলবোর্ডে লিখে রাখব।
আসলেই এখনকার প্রজন্ম ভীষণ স্মার্ট। একে ঠিক বেপরোয়া বলা যায় না বলতে হবে দুঃসাহস।
এরপর থেকে অরুকে রোজ স্কুল থেকে নিয়ে আসি।ও
তর্ক করে। ঘুষ হিসেবে আইসক্রীম, চকোলেট কিনে দিতে হয়। একদিন রিকশা পেলাম না। হেঁটে বাড়ি ফিরছি। লক্ষ্য করলাম স্কুল ড্রেস পরিহিত লম্বামতন একটা ছেলে আমাদের পাশাপাশি হাঁটছে। বয়স ১৫-১৬।লাজুক মুখ,নাকের নীচে চিক্কন গোফের রেখা৷ অরু খুব স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতে লাগল। আমার চেয়ে জোর কদমে হাঁটছে। ছেলেটার দিকে আরেকবার তাকাতে খুশখুশ করে কেশে উঠল।
মা হয়ে মেয়ের পিছনে গোয়েন্দাগিরিতে লাগলাম৷ ছেলেটার পরনে স্কুলড্রেস দেখে আন্দাজ করেছি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র। মেয়েকে কিছু জিজ্ঞেস করাও যাবে না৷আবার ছেলেটা কে তা জানা ভীষণ প্রয়োজন।এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার পর পথ দেখাল ফেসবুক। সার্চলাইনের ফার্স্ট লিস্টে একটা নাম তন্ময় কবির দীপ্ত৷ প্রোফাইলের ছবি দেখে নিশ্চিন্ত হলাম।এটাই সে৷ এক বন্ধু্র সাহায্যে ছেলেটার বাড়ির ঠিকানা যোগ করলাম। একবার ভাবলাম, ছেলেটার মায়ের সাথে কথা বলি৷ কিন্তু আমার মেয়েকে শাসন না করে পরের ছেলের উপর মাতব্বরি করা দৃষ্টিকটু৷ দোষটা দুই পক্ষের। একে ঠিক দোষ বলতে রাজি নই আমি। বয়ঃসন্ধিতে আবেগের স্রোত আসবেই৷ কেউ ভুল করে সংশোধিত হয় কেউবা অতলে হারায়।
ফোন ওর নাগালের বাইরে রাখি। রান্নাঘর থেকে বার বার এসে দেখে যাই পড়ছে কী না। এরমাঝে আমার মা এলেন। মা আসার পর শান্তি লাগছিল। অরু নানুর সাথে টুকটুক করে কথা বলে। নানুর গলা জড়িয়ে রাতে ঘুমায়৷টানা অনেকদিন অরুর উপর নজরদারি করতে করতে আমিও ক্লান্ত। মায়ের উপর ভরসা করা যায়।
মা আসার পাঁচদিন পর বাড়িতে যেন বোমা ফুটল।অরুকে নিয়ে ওর বাবা স্কুলে চলে গেছে।রান্নাঘরে রুটি বেলছিলাম।মা এসে বলল,
-তোর মাইয়া লাইন করে।
-কিহ?
-হ। আমি রাইতে ঘুমানোর পর আমার ফোন দিয়া কোন ছেড়ার লগে কথা কয়৷ কালকা শুনছি আমি।
-ভুল শুনছ।
-তুই আমারে বুঝাইস না। আজকা টিফিন পিরিয়ডে দুইডায় দেখা করব৷ আমি নিজ কানে শুনছি৷ ছি! ছি! এতডু বিছকুটি মাইয়া প্রেম করে।
-এভাষায় কথা বলছ কেন মা?
-তোরা এই বয়সে মাটির লগে গড়াগড়ি খাইতি৷আর আমরা তো বিয়ার পরও স্বামীর লগে রঙ্গ তামাশা করতে ডরাইতাম। এযুগের পোলাপান পাকনা তালের আডি।
রুটি রেখে ঘুরে দাঁড়ালাম,
-মা তোমার বিয়ে হয়েছে ১৪ বছরে৷ বাবার বয়স ছিল তখন ৩১। দ্বিগুণ বয়সী স্বামীকে আপনি-আজ্ঞে করবে এটাই স্বাভাবিক৷ সংসার কি বোঝার আগেই সংসার শুরু করেছ, যখন বুঝতে শিখেছ তখন দুই বাচ্চার মা। শখ-আহ্লাদের সুযোগ পাও নি। আর আমাদের কথা বলছ? নাইন -টেনে উঠলে মেয়েরা ছেলেদের কাছ থেকে লাভ লেটার পেত।কলেজে আমার অনেক বান্ধবী প্রেম করত।৷ পনের বছর পর এই ইন্টারনেটের যুগে ছেলেমেয়েরা আরো অ্যাডভান্স নিশ্চয়ই হয়েছে। তুমি ৭২ বছরে টেলিভিশনে কিভাবে ছবি আসে তা বুঝো না আমার মেয়ে তা বুঝে৷ শিক্ষাবিজ্ঞানে এগিয়ে যাবে আর আবেগের প্রকাশ ঘটবে ধীর গতিতে এটা ভাবা অন্যায়। যুগের ধর্ম পালন করা মানুষের স্বভাব।
-বড় বড় লেকচার ছাড়িস না। মেয়েকে শাসন কর।
মা রাগ করে ঘরে চলে গেলেন।
মাকে বোঝালেও নিজের মনকে বোঝাতে পারলাম না। মেয়ের স্কুলে টিফিন দেয় বারোটায়। আধাঘণ্টার জন্যে স্কুল গেট খোলা থাকে। মেয়েরা আশেপাশের ফুডশপ থেকে এটাসেটা খায়।ঠিক সাড়ে এগারোটায় গেটের খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম।পরনে মায়ের বোরকা। জানি না আজ কি দৃশ্যের সম্মুখীন হব।
-চলবে
গল্প অফসাইড শেষ পর্ব
ঠিক পৌনে বারোটায় মেয়ের বয়ফ্রেন্ড এসে হাজির। আজ পরনে স্কুলড্রেস নয় থ্রী কোর্য়াটার প্যান্ট, লেমন কালার টিশার্ট। মুদি দোকানের সামনে এসে সিগারেট ধরাল। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। কতই বা বয়স হবে পনের-ষোলো এবয়সে সিগারেটের নেশা ধরেছে৷ টিফিনের ঘণ্টা বাজল। ছেলেটা সিগারেট ফেলে কিছুটা এগিয়ে এল। একদল মেয়ের সাথে কলকল করতে করতে অরু বেরিয়ে এল। বান্ধুবীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল৷ দীপ্ত ওর উদ্দেশ্যে হাত নাড়তেই দৌঁড়ে রোড ক্রস করে এপাড় এল। ইশ! মেয়েটাকে কতবার বারণ এভাবে রাস্তা পাড় হবি না। এখন যদি অ্যাক্সিডেন্ট হত। হাইস্কুলে উঠে গেছে এখনও অবুঝের মত আচরণ করে।
অধিক মাতৃস্নেহ অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু ঠেকে।একজন মা জানে মা হবার কত জ্বালা৷ যে মেয়ে ফিগার ঠিক রাখার জন্যে না খেয়ে ডায়েট করে, মুখে একটা ব্রণ উঠলে চিন্তায় রাতে ঘুমায় না, রাতদিন পরিশ্রম করে ভালো রেজাল্টের জন্যে। সেই মেয়ে নির্দ্বিধায় নিজের রুপ-লাবণ্য, ক্যারিয়ার বিসর্জন দেয় একটা সন্তানের জন্যে। মাতৃত্ব একজন নারীকে যতটা সুখ দেয় তারচেয়ে অনেক বেশি কেড়ে নেয় তারপরও সন্তানের মুখে মা ডাক মায়েদের হৃদয় জুড়ায়৷
দেখলাম, দৃপ্ত আর অরু খুব হাসছে৷ হাতে আইসক্রীম। অরু দৃপ্তর পেটে খোঁচা মেরে কি যেন বলল দৃপ্ত হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। দুজনের এত কম বয়স, ওদের কাপল ভাবতে আমারই লজ্জা করছে। এটা যদি ভাই-বোন বা বন্ধুত্বের সম্পর্ক হত কত সুন্দর একটা দৃশ্য হত। জীবনের সরলতা আছে, জটিলতা আছে। আপনাকে বেছে নিতে হবে আপনি কোন মাধ্যম চান।
আধাঘণ্টার টিফিন শেষে অরু স্কুল গেটে ঢুকে দীপ্তর উদ্দেশ্যে হাত নাড়ে৷ দীপ্ত ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। আমার কেমন যেন ক্লান্তি এসে ভর করে। হাঁটতে হাঁটতে একটা কফিশপে এসে বসি৷ চারপাশে কপোত-কপোতী, একা আমি বড্ড বেমানান৷ একটা টেবিল দখল করে কফির অর্ডার দেই৷ জানি না কতক্ষণ বসে ছিলাম।যখন উঠলাম টেবিলে পাঁচটা কফির মগ৷ এক চুমুক গিলতে পারি নি৷
অরু আমি রিকশায়। ওকে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরছি।
-অরু, টিফিনে কি খেয়েছ?
-আইসক্রীম।
-ব্যাগে আপেল দিয়েছিলাম।
-সরি, আম্মু। খেতে মনে নাই।
কিছুক্ষণ নীরবতা।
-তোমাকে নানুর বোরকা পরাতে নানুর মত লাগছে। অরু হাসছে।
-অরু,
-হুম।
-দীপ্ত ছেলেটাকে কতদিন ধরে চলো?
-দীপ্ত কে আম্মু?
-মায়ের কাছে বেশি স্মার্ট হবার চেষ্টা করো না। তোমরা দুজন আজ টিফিনে একসাথে ছিলে।
-কে বলল তোমাকে?
হাসলাম।
-তোমার পিঠের ডানপাশে একটা তিল আছে।
মেয়ে অবাক ।
-তুমি কি করে জানলে?
-মায়েরা সব জানতে পায়। দীপ্ত কীসে পড়ে?
-ক্লাস টেন।
-কতদিনের পরিচয় তোমাদের?
-তিন মাস।
-ঠিক আছে৷ বাড়ি চলো।
-আম্মু, বাবাকে কিছু বলবে নাতো? প্লিজ।
মেয়ের কণ্ঠে অনুনয়।
-বলব না।
বাড়ি ফিরে মেয়ে চুপচাপ৷ সামান্য কিছু খেয়ে পড়তে বসে গেল। রুমী বলল,
-কোনো সাড়াশব্দ নেই। বকছ নাকি?
-না। ও পড়ছে৷ বিরক্ত করো না।
রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে মেয়ের রুমে এলাম। অরু কমিকস পড়ছে৷
-আজ নানু আমার সাথে ঘুমাবে না?
-না। আমি তোমার সাথে ঘুমালে আপত্তি আছে?
-অরু একটু সরে জায়গা করে দিল।
অরুর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি।
-অরু,
-বলো আম্মু।
-আমরা যখন নাইনে পড়ি আমাদের সাথে এক মেয়ে পড়ত, মিতু। খুব সুন্দর দেখতে। এলাকার অনেক ছেলে ওকে চিঠি দিত। ক্লাস টেনে পড়ে কর্মাসের একটা ছেলে ওকে ভীষণ পছন্দ করত। ছেলেটা ভালো স্টুডেন্ট। মিতু ওর সাথে জড়িয়ে যায়।
-তারপর,
-ওদের কথা জানাজানির পর মিতুকে বাড়ি থেকে বিয়ে দেবার চেষ্টা করে।ওরা পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ গিয়ে বিয়ে করে।ছেলেটা একটা গার্মেন্টসে চাকরি নেয়, অল্প টাকার মাইনেতে ওদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়৷ শেষে ছেলেটা ওকে রেখে চলে যায়। মিতু তখন প্রেগন্যান্ট।
-তারপর-
-মিতুকে ওর পরিবার বাড়ি নিয়ে এসে৷ ওর একটা ছেলে হয়।ছেলেটাকে রেখে ওকে একজন বয়স্ক লোকের সাথে আবার বিয়ে দেয়।
অরু কিছু বলে না।
-অরু, তুমি কি এখন বিয়ে করতে চাও?
-না, না আম্মু।
-তাহলে তুমি কেন এসব করছ?
অরু মাথা নীচু করে বলে,
-দীপ্ত খুব ভালো ছেলে। ও বলেছে বড় হয়ে আমরা বিয়ে করব।
অনেক কষ্টে হাসি চাপালাম।
-অরু,তুমি মাত্র ক্লাস সেভেনে পড়ো। কলেজে উঠবে, ভার্সিটিতে। ততদিনে তোমার অন্য কাউকে ভালো লাগতে ও পারে । দীপ্তরও তাই৷ বলো সত্যি না?
অরু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
– আমি তোমাকে কিছুই বলব না কিন্তু আমি খুব কষ্ট পেয়েছি তোমার আচরণে। তোমার আব্বু শুনলে ..
-আব্বুকে বলবে না তুমি।
মেয়ে ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলে।
-আমি আর কখনও এমন করব না আম্মু । সরি আম্মু। ও বলল আর আমি…
-ঠিক আছে। এবার ঘুমাও।অনেক রাত হয়েছে।
মেয়ে পাশ ফিরে উশখুশ করে একটু পর আবার বলে,
-দীপ্ত আমার সাথে কথা বলতে চাইলে কি বলব?
-বলবে আমাদের এখন এসব ভাবার বয়স হয় নাই৷ তোমরা বন্ধু হিসেবে কথা বলতে পারো। কিন্তু কি জানো মামনি?
-কি?
-যাকে তুমি অন্যভাবে পছন্দ করো সে কখনও তোমার বন্ধু হয়ে উঠবে না। তাই ওর সাথে কথা বলা কমিয়ে দিও কেমন?
অরু কিছু না বলে আমার বুকে মুখ লুকায় ।
মেয়ে ঘুমালে রুমীর কাছে এলাম।
-অনেকদিন ঘুরতে যাই না। আমাদের দূরে কোথাও নিয়ে যাবে?
রুমী অবাক হয়।
-জ্বরটর করে নি তো। তুমি ঘুরতে যেতে চাইছ!
-ইর্য়াকি ভালো লাগছে৷ কোথায় নিয়ে যাবে বলো,
দক্ষিণবঙ্গ থেকে সাতদিনের লম্বা সফর করে তিনজন নিগ্রো হয়ে ফিরলাম।মেয়ের মুখে হাসি৷
-সামনের বছর আবার যাব । তাই না আম্মু?
-তুমি ভালো রেজাল্ট করলে নিশ্চয়ই যাব।
অরু জেএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করে। নাইনে সায়েন্স পড়তে নিল। একরাতে ঘুম ভাঙার পর পাশের রুমে মেয়ে চাপা স্বরে কথা বলছে। টেবিল হাতড়ে দেখলাম আমার ফোনটা নেই। এক পা, দু’পা করে এগিয়ে গেলাম। মেয়ে বলছে,
-পিয়াস, আমাকে সত্যি ভালোবাসো?
-শেষ
#হাবিবা সরকার হিলা