কিছু জোড়া শালিকের গল্প পর্ব ১৩
#ভুল
লেখিকা : #Lucky_Nova
লজ্জায় লালভ বর্ণ ধারণ করে আছে ত্রয়ীর মুখটা। গুটিশুটি মেরে সবার থেকে মুখ ফিরিয়ে সেই কখন থেকেই বসে আছে বিছানার কোণে। সবাই চলে গেছে বেশ অনেকক্ষণ হয়েছে৷
এতক্ষণ পর্যন্ত ত্রয়ীর এমন কাঁচুমাচু ভাব দেখে তৃণা আর ওর কাজিনরা বারবার ভ্রুকুটি করছে।
একপর্যায়ে তিশা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলেই ফেললো, “কিরে! দুলাভাই তখন রুমে টেনে এনে আদরটাদর করেছিলো নাকি? এত লাল হচ্ছিস কেনো?”
বুকটা ধ্বক করে উঠলো ত্রয়ীর। চকিতে তাকালো তিশার দিকে।
হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তিশাসহ সবাই।
“কী কী করলি রে?”
তিশার এমন উদ্ভট প্রশ্নে “অসভ্য” শব্দটা বিড়বিড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে দাড়ালো ত্রয়ী।
তিশা দমলো না। অসংলগ্ন কথাবার্তা বাড়তে লাগলো ওদের।
কানে তাক গেলো গেলো ত্রয়ীর। এসব থেকে বাঁচতে তাড়াহুড়ো করে নিজের জামা কাপড় নিয়ে ঢুকে গেলো বাথরুমে।
দরজা আটকে ট্যাপের পানি ছেড়ে দিতেই রুমের মধ্যে চলা হাসাহাসির শব্দগুলো আর কানে এলো না। ত্রয়ী হাঁফ ছাড়লো স্বস্তিতে।
চোখ ঘুরিয়ে বেসিনের আয়নার দিকে তাকাতেই ঠোঁটের কোণের সুক্ষ্ম তিলের দিকে নজর গেঁথে গেলো ত্রয়ীর। তৎক্ষনাৎ কেমন অপ্রতিভ হয়ে উঠলো মুখখানি। হৃদকম্পন শুরু হয়ে গেলো যেন। হন্তদন্ত করে চোখ নামালো ত্রয়ী।
অসভ্য লোকটার জন্য কয়েকদিন অব্দি আয়নার দিকে তাকাতেও পারবে না ও।(লেখিকা লাকি নোভা)
ইশারা নীরবে বসে আছেন। কোনোদিকে তাকাচ্ছেন না। অতিরিক্ত রাগে মুখটা থমথমে হয়ে আছে তার।
ইভান যে ধারাণার বাহিরে গিয়ে এসব করছে ভাবতেই গা ঝিম মেরে যাচ্ছে তার।
জয়িতা চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে ইমন, ইভানের বড় ভাই। আর ইশারার মুখোমুখি আবীর মুখার্জি, ইভানের বাবা।
অল্প সময়ের মধ্যেই বাসার সবাইকে ইভানের এখানে এসে উপস্থিত হতে হয়েছে। ইশারা ফোন করে ডেকে এনেছে।
ইভান আর ক্যান্ডেল পাশাপাশি দূরত্ব রেখে দাঁড়ানো। এর মধ্যে ক্যান্ডেল পোষাক পালটানোর সুযোগ পেয়েছিল।
জয়িতা হাত ভাঁজ করে নখ কামড়ে ধরে একবার ইশারার দিকে তাকালো। ব্যাপারটা যে এতদূর গড়াবে তা ধারণার মধ্যেই ছিলো না তার।
ইশারা নীরাবতা ভাঙলেন। কাটাকাটা গলায় নিজের স্বামীকে বলে উঠলেন, “চুপ করে আছ কীজন্য? চুপ করে থাকার জন্য ডেকেছি তোমাদের?”
ইভান বিরক্তিতে কপাল কুচকালো। দারাজ কণ্ঠে বলল, “কিছু নেই মানে নেই। এখানে অস্বীকার করার কিছুই নেই।”
ইশারা ফুঁসে উঠলেন, “তোমার ছেলে এখনো অস্বীকার করছে ভাবতে পারো!”
আবীর গম্ভীর মুখে তাকালেন ইভানের দিকে। রাগে মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারলেন না। কোম্পানির নাম ডুবানোর জন্য এই ধরনের নিউজই যথেষ্ট। সাথে পরিবারের মান সম্মান তো আছেই।
“ওকে জিজ্ঞেস করো ও কেনো করলো এমন জঘন্যতম একটা কাজ! বাধলো না কেনো একবারো? ছিঃ।” চোখমুখ কুচকে নাক সিটকালেন ইশারা।
হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো ইভান। ধৈর্য আর সহ্যশক্তির বাহিরে চলে যাচ্ছে সবকিছু।(লেখিকা লাকি নোভা)
ইমন খেয়াল করলো। মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমার মনে হয় কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে মা।”
ইমনের কথায় রক্তচক্ষু করে তাকালেন ইশারা। বাজখাঁই গলায় বললেন, “আমি নিজের চোখে দেখেছি সব। তাই খবরদার এই বিষয় নিয়ে ভাইকে লাই দিবি না।”
“আচ্ছা লাই দিচ্ছি না। তুমিই বলো কী চাচ্ছো তুমি? তুমি যা চাও তাই হবে।”
ইশারা মুখ বাঁকালেন।
“আমার চাওয়া দিয়ে তোদের কোনো যায় আসে? যা ইচ্ছে হয় তাই করছিস তোরা। নিজেদের খেয়াল খুশি! অনুমতির প্রয়োজন মনে হয় কখনো? এতকিছু যখন করতে পেরেছে তখন ইচ্ছে হলে আরো যা ইচ্ছা করুক।”
ইমন বুদ্ধিশূন্য হয়ে তাকালো। সব যদি ইভান নিজের ইচ্ছেতেই করবে তাহলে মিটিং ডেকে কী হলো!
ইশারা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ক্যান্ডেলের দিকে তাকালেন। শক্ত গলায় বললেন, “তোমাকে যে ছেড়ে দেবো ভেবো না। বাসায় ঠিকানা না দিয়ে কোথাও যেতে পারবা না। তোমার পরিবারেরও তো জানা দরকার যে তুমি বিয়ে না করেই একটা ছেলের সাথে দিনের পর দিন থাকছো। বলো ঠিকানা বলো।”
চমকে তাকালো ক্যান্ডেল। মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেলো নিমিষেই।
“কী হলো বলো?”
“দয়া করে থামো এখন। না বুঝেশুনেই কী শুরু করেছো এসব?” বলে উঠলো ইভান।
স্তম্ভিত হলেন ইশারা। স্বামীর দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝানো গলায় বললেন, “দেখেছো? এখনো অব্দি লুকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে! আমি নাকি না বুঝেশুনে কথা বলছি!”
এতসময় পর মুখ খুললেন আবীর মুখার্জি। ইভানের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বললেন, “বেশি বাড়াবাড়ি করছো তুমি এখন। একে তো কাজটা মোটেও ঠিক করো নি। তার উপর একসাথে এভাবে দেখে ফেলার পরও কীভাবে বলতে পারছো যে তোমাদের মধ্যে কিছুই নেই।”
“কারণ আমাদের মধ্যে সত্যিই কিছু নেই।” দরাজ গলায় কথার পিঠে বলে উঠলো ইভান।
ভারি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠলেন আবীর মুখার্জি। চাপা ক্ষোভের সহিত বললেন, “কিছু নেই তাহলে এসব কী? তোমার মা ভূল দেখেছে?”
“ভূল বুঝেছে।”
ইভানের কথায় রাগের মাত্রা তরতর করে বেড়ে যেতে লাগলো তার। জোর গলায় বলে উঠলেন, “কী ভূল বুঝেছে? নাকি এসব এখন ফ্যাশন হয়ে গেছে এই যুগের? একটা কথা শুনে রাখো, আমার পরিবারে এসব চলবে না। যদি আমার পরিবারে থাকতে হয় তবে বিয়ে করে থাকতে হবে। এটাই আমার শেষ কথা।”
ইশারা অসন্তোষজনক চাহনিতে তাকালেন আবীরের দিকে। তার এই বিয়েতে ঘোর অমত আছে সেটা প্রকাশ করার আগেই ইভান বলে উঠল, “আমার সাথে ওর কিছুই নেই। তাই বিয়ের প্রসঙ্গ আসার প্রশ্নই ওঠে না।”
ইভানের নির্ভীক আচরণ দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন আবীর মুখার্জি। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে গেলো তার। এতকিছুর পরেও ছেলের সামান্য অনুশোচনা নেই। সমানে তর্ক করে যাচ্ছে! সবটা অস্বীকার করছে!(লেখিকা লাকি নোভা)
“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! লজ্জা করেনা তোমার?” রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালেন আবীর মুখার্জি।
“যেহেতু আমি বলেছি আমি কিছু করিনি মানে আমি করিনি।” স্বাভাবিক গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো ইভান।
অতিরিক্ত রাগে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন আবীর মুখার্জি। গুরুতরভাবে থমথমে হয়ে গেলো তার মুখখানা।
পরিস্থিতি প্রতিকূল বুঝে ইমন রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠে বলে উঠলো, “বাবা, এক মিনিট। শান্ত হও। আমি দেখছি। প্লিজ। ইভান তুই ভিতরে যা। প্লিজ। যা।”
ইভান ভ্রুকুচকে তাকালো ইমনের দিকে। ইমন চোখের অনুরোধসূচক ইশারায় জলদি রুমে যেতে বললো ওকে।
ইভান অগোচরে নিঃশ্বাস ফেলে চলে গেলো নিজের রুমে। সশব্দে বন্ধ করে দিলো দরজা।
সবাই সেদিন থেকে নজর ফিরিয়ে এবার ক্যান্ডেলের দিকে তাকালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে।
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ক্যান্ডেল। আলগোছে ঢোক গিললো একটা।
প্রয়াস রুমে ঢোকা মাত্রই ঘাবড়ানো চোখে তাকালো তিয়াসা। ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে ও এখনো। চোখ ভিজে আছে অশ্রুতে।
“এই তো আইসা পড়ছে স্যারে। শুধু শুধু ডরান কেন?” তিয়াসাকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করলো রেখা।
তিয়াসা কানে নিলো না। অধীর হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রয়াসের দিকে।
তিয়াসার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে রেখার দিকে তাকালো প্রয়াস। জিজ্ঞেস করলো, “জ্বর কমেছে এখন?”
রেখা তিয়াসার কপালে, গালে হাত ছোঁয়ালো।
“হ। অল্প আছে এখন।”
“দুপুরের পরে আরেকটা নাপা দিয়ে দিবেন। আমি একটু বাহিরে যাবো, কাজ আছে।”
তিয়াসার সিক্ত চোখের দৃষ্টিতে প্রয়াসের দিকে তাকিয়ে রইলো। একে তো প্রয়াস ওর সাথে কোনো কথা বলল না। তার উপর এখনি বাহিরে চলে যাবে শুনে মুখটা ম্লান হয়ে গেলো।
ওই লোকটা যদি আবার আসে তাহলে! ভেবেই আতঙ্কে মুখটা সাদা হয়ে উঠলো তিয়াসার। প্রয়াস বের হতে যাওয়ার মূহুর্তেই হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়লো বিছানা থেকে। এগিয়ে গিয়ে প্রয়াসের একবাহু শক্ত করে আঁকড়ে ধরতেই অবাক হয়ে তাকালো প্রয়াস।
তিয়াসা বিচলিত হয়ে নাসূচক মাথা নেড়ে মানা করে দিলো কোথাও যেতে।(লেখিকা লাকি নোভা)
প্রয়াসের যাওয়া হলো না। তিয়াসা কিছুতেই যেতে দিলো না। কান্নাকাটি জুড়ে শেষপর্যন্ত আটকে রাখলো প্রয়াসকে।
তিয়াসার কাছেই বসে থাকতে হলো ওকে।
আস্তে আস্তে শান্ত হলো তিয়াসা। কিন্তু হাত ছাড়লো না। হাত ছেড়ে দিলেই চলে যেতে পারে ভেবে ধরেই রইলো।
ভ্রুকুটি করে তাকালো প্রয়াস। বলল, “এত ভয় পাওয়ার কী আছে? ওই লোক আর আসবে না। রেখাকে রেখে যাচ্ছি। হাত ছাড়ো।”
তিয়াসা নীমিলিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাসূচক মাথা নেড়ে নাকচ করে দিলো।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো প্রয়াস।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো তিয়াসার দিকে। গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো, “বিয়ে হয়ে গেছে তোমার?”
তিয়াসা চোখ তুলে তাকালো প্রয়াসের দিকে।
“ওই লোকটা তোমার হাসবেন্ড?”
তিয়াসা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রয়াসের দিকে। ওর চোখমুখের ভঙ্গি দেখে মনে হলো না প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছে। অবাক হয়ে কপাল কুচকালো প্রয়াস।
কটাক্ষ করে বলল, “আদৌও বিয়ে মানে বোঝো?”
স্বাভাবিক, অপরিবর্তিত মুখোভাবের সাথে তাকিয়ে রইলো তিয়াসা।
প্রয়াস দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। বিড়বিড়িয়ে বলল, “অদ্ভুত!”
তারপর তিয়াসার দিকে তাকিয়ে বলল, “আজ থেকে রেখার সাথে ঘুমাবা। আমি ওনাকে রাতে থাকতে বলে দেবো।”
প্রয়াসের কথায় ভ্রুকুটি করে তাকালো তিয়াসা।
“একা ঘুমানো নিয়েই তো তোমার সমস্যা তাই না? এজন্যই আজ থেকে রেখা রাতেও থাকবে। আর তুমি তার সাথেই ঘুমাবা। বুঝেছো?”
মুখটা বাজেভাবে কুচকে ফেললো তিয়াসা।
“কী?”
না সূচক মাথা নাড়লো তিয়াসা।
“ওনার সাথেই ঘুমাতে হবে তোমার। নাহলে হোস্টেলে থাকবা।”
মুখটা চুপসে গেলো তিয়াসার।
প্রয়াস গুরুত্ব দিলো না। এভাবে একসাথে থাকাটা বেমানান। সেটা মেয়েটার বোঝা উচিত। তার উপর সে বিবাহিত। মেয়েটার কাছের কেউ আছে কিনা সেটা জানা দরকার এখন। তার কাছে ওকে দিয়ে দেওয়া যাবে। তাছাড়া এভাবে আর কতদিন থাকবে এখানে!
প্রয়াস আর কথা বাড়ালো না। রেখাকে ডেকে দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
তিয়াসা বাধা দিলো না। চাপা অভিমানে মুখটা গোমড়া করে বসে রইলো নীরবে।(লেখিকা লাকি নোভা)
“আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না!” অনিশ্চিত কণ্ঠে মিনমিন করলেন সমীর সাহেব। তার পাশে দাঁড়ানো মহিলাটাও তাকিয়ে রইলো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে।
“আমি প্রয়াস। তিয়াসা নামের কারো জন্য থানায় ডায়রী করেছিলেন সমীর নামের কেউ।”
প্রয়াসের কথায় মুখ হা করে বুঝতে পারার ভঙ্গিতে ‘ও’ বললো সমীর সাহেব।
“বসুন বসুন।” মেকি হেসে বসতে বলল লোকটা।
প্রয়াস বসলো না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলো, “আপনারা কি ওর কাকা কাকি?”
লোকটা একটু হোচট খেলো যেনো। বার কয়েক পলক ঝাপটিয়ে বলল, “আম…হ্যাঁ।”
প্রয়াস তুখোড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে নিলো দুজনকেই। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তটস্থ হয়ে আছে। হয়তো তিয়াসার ‘সো কল্ড হাসবেন্ড’ এসে বলেছে সবকিছু।
প্রয়াস বলল, “তিয়াসার বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আছে আমার।”
লোকটা একটু বিপাকে পড়ে গেলো হয়তো। রিনরিনে কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ, আমি শুনেছি সোহেলের কাছ থেকে।”
“সোহেল?”
“তিয়াসাকে আনতে গিয়েছিলো যে, ওই সোহেল।”
“তাহলে তো নিশ্চয়ই জানেন আমি কি প্রশ্ন করতে চাচ্ছি!”
সমীর সাহেব ঢোক গিললেন। আলগোছে একবার চোখাচোখি করে নিলেন নিজের স্ত্রীর সাথে। কী বলবেন গুছিয়ে উঠতে পারলেন না বলে আমতাআমতা করতে লাগলেন কিছুক্ষণ।
“আমার প্রশ্নের উত্তর ভালো ভাবে দিয়ে দিলে ভালো। নাহলে অন্য ব্যবস্থা দেখতে হবে আমাকে।”
উভয়েই ত্রস্ত ভঙ্গিতে তাকালো প্রয়াসের দিকে। তিয়াসার কারণে এমন ঝামেলা হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি তারা।
তাদের শুকনো, আতঙ্কিত চোখমুখ দেখে কিছু বুঝতে বাকি রইলো না প্রয়াসের। তারা যে সত্যিই দোষী সে বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই।
“মাইয়াডা কি তোমার কাছে আছে?” বয়স্ক কারো ভাঙাভাঙা কণ্ঠস্বর কানে আসতেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার কাছে তাকালো প্রয়াস।
এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মহিলা দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন খানিকটা। চোখমুখে তিয়াসার চেহারার একটা আভা পাওয়া যায়। ক্লান্ত, উৎসুক চাহনিতে চেয়ে উত্তর জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি।(লেখিকা লাকি নোভা)
প্রয়াস অনিশ্চিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো, “আপনি…?”
“আমি ওর ঠাম্মা হই।”
ধাতস্থ হলো প্রয়াস। হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়তেই তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
ভাঙা কণ্ঠটা কেঁপে গেলো খানিক। তিনি প্রশ্ন করলেন, “ও কি সুস্থ আছে বাবা? ভালো আছে?”
“জি, আছে।”
বৃদ্ধা আরো কিছু বলার আগেই চাপানো গলায় শাসিয়ে উঠলেন সমীর সাহেবের স্ত্রী। বললেন, “তুমি এখানে কেনো এসেছো? যাও এখান থেকে।”
ভ্রুকুটি করলো প্রয়াস।
বৃদ্ধা নড়লেন না। ভয় পেলেন বলেও মনে হলো না। আঁটসাঁট মুখোভঙ্গিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে প্রয়াসকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তিয়াসাকে এই জানোয়ারদের কাছে দিতে হবে না। এরা ওকে বাঁচতে দেবে না।”
চমকে তাকালো সমীর সাহেব আর তার স্ত্রী। চোখ গরম করে শাসাতে চাইলেন তিয়াসার ঠাম্মাকে। কিছুই চোখ এড়ালো না প্রয়াসের। শক্ত চোখে তাদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর সেই বৃদ্ধাকে বলল, “আপনার সাথে কথা বলতে চাই আমি।”
(চলবে…)