কনে বদল পর্ব ৩
জিজ্ঞেস করলাম, “কে আপনি?”
আমার কন্ঠের তেজ দেখে হতবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,” আমি নীরু।”
“আপনি নীরু বুঝলাম, এখানে কেন?”
হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। “অমন করে তাকিয়ে না থেকে বলেন চারু কোথায়? আর এসবের মানে কী!”
“চারু তো নাই!” বলেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে! মনে হচ্ছে কেঁদে দিবে!
আমার মাথা ঘুরছে! প্রচনড রাগ হচ্ছে! ইচ্ছে হচ্ছে একে খুন করে ফেলি। রাগ উঠলে আমার হাত পা কাঁপে, মানুষের সাথে আমি খারাপ ব্যাবহার করতে পারি না। কেমন নিষ্পাপ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে কোনো অন্যায় করেছে! নাকি এরা সবাই ভালো অভিনয় জানে!
রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে আসলাম। এর সাথে এখন রাগারাগি করা ঠিক হবে না। যাই ঘটুক আজ আমাদের বাসর রাত। বাড়ি ভর্তি মেহমান। যা করার পরে করতে হবে।
আমাদের ছাদটা খুব সুন্দর! রুবিনা বাহারি ফুলের গাছ লাগিয়েছে ছাদে। ফুলের গাছের মাঝে একটা বড়ো দোলনা আছে। দোলনায় ধপাস করে বসে পড়লাম। আকাশে কোনো তাঁরা নেই, কেমন একটা গোমট ভাব। মনে হয় বৃষ্টি হবে। মনটা ভীষণ খারাপ!
এমনা না মেয়েটি দেখতে অনেক খারাপ!
গায়ের রং কালো কিনা বুঝা যায় না। আজ তো ম্যাকাপ করা। গায়ের রং নিয়ে আমার খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। চারুদের পরিবারকে তো এমন মনে হয়নি!
কত সুন্দর ফ্যামেলি! এরা এমন কেন করল? ঠিক হিসাব মিলাতে পারছি না! মোবাইলটা বের করে চারুর নাম্বারে ডায়াল করলাম এখন মোবাইল খোলা রিং হচ্ছে। কল ধরল চারু কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল, “কল দিয়েছেন যে?”
“তুমি এমন করলে কেন!”
“বা রে কী করলাম? আর আপনি কল না দিয়ে সামনে এসেই তো কথা বলতে পারেন।”
বুঝলাম মোবাইলটা এই মেয়ের কাছে।
কিছু না বলে কলটা কেটে দিলাম। বুকের মধ্যে কেমন জানি লাগছে! মনে হচ্ছে ভিতরটা শুন্য হয়ে গেছে! দোলনায় হেলেন দিয়ে বসে আছি চোখ বন্ধ করে। আর ভাবছি কী এমন হলো যে এরা এমন করল! নীরুর কোনো খুঁত আছে যার জন্য চারুকে দেখিয়ে নীরুকে বিয়ে দিলো। কাল যদি আমি ওকে তালাক দিই? তাহলে কী করবে আমজাদ সাহেব? কী সুন্দর হাসিমাখা মুখের আড়ালে এমন শয়তানি! না ভাবতেই পারছি না!
হঠাৎ মাথায় একটা হাতের ছুঁয়া! চোখ খুলে উপরে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে! “আপনাকে বুঝি কিছুই বলা হয়নি!”
রাগটা এখন অনেকটা মিইয়ে গেছে। রাগ করেই বা কী হবে? “কীসের কথা বলছেন? “
আপনি ওইদিন চারুকে দেখেছিলেন ও আমার ফুফাতো বোন। বয়সে আমার চেয়ে বছরখানিক বড়ো। পাঁচ বছরের চারুকে রেখে ফুফা-ফুফি পারি দিলেন না ফেরার দেশে তারপর থেকে ও আমাদের বাড়িতে থাকে। আমরা একসাথে আপন বোনের মতো বড়ো হয়েছি। বলতে পারেন আমরা খুব ভালো বন্ধু।
জানেন বাবা না সবসময় আমার চেয়ে চারুকে বেশি আদর করতেন। খুব হিংসা হতো ওকে বাবা বেশি আদর করেন বলে।
ছোটবেলা থেকে সবচেয়ে ভালো জিনিসটা বাবা চারুকে দিতেন। কিন্তু চারু খুব ভালো মেয়ে আমাকে খুব ভালোবাসে।
এর গল্প শুনতে ভালো লাগছে না। মানুষ বাসর রাতে কত কী করে? আমার কী কপাল! নীরু বলল, “আপনার আমাকে খারাপ লাগছে তাই না?”
কিছু না বলে চুপ থাকলাম। এর কথা শুনতে ভালো লাগছে না।
“সত্যি, আমি মোটেই জানতাম না। এমন কিছু হবে। চারুটা যে কেন এমন করল!”
এর কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারছি না। চারু কী করেছে? কেনই বা করেছ?
নীরু উঠে দাঁড়াল। “আপনি বসেন আমি এক্ষুনি আসছি। ” পায়ে পায়ে রুমে চলে গেল।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি। পুরো বাড়িটা লতার মতো লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে। বাতিগুলো নানা ধরনের ঢেউ তৈরি করছে। আশেপাশের সব বাড়ির মানুষ এখন গভীর ঘুমে। এ সময় মোবাইলে রিং হচ্ছে, মোবাইলটা বের করে দেখি বন্ধু রাকিব কল দিয়েছে! রিসিভ করলাম।
হ্যালো
“কী রে দোস্ত বিড়াল মারছিস?” বলেই হাসছে।
ফোন রাখ।
আঃ! ক্ষেপে যাচ্ছিস কেন?
সকালে কথা হবে, বলে কল কেটে দিয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে দিলাম।
নীরু ফিরে এসেছে হাতে দুটোকাপ ধরা। “নিন আপনার কফি। আপনি মনে হয় কফি খেতে খুব ভালোবাসেন?”
একটু হালকা হাসি দিল। এর হাসি দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে! “কে বলল এ সব?”
“কেউ বলেনি। দেখলাম রুমে ফ্লাক্সে কফি রাখা। সাথে খাবার দেয়া আছে।”
এসব রুবিনার কাজ। বোনটা আমার এ বয়সে কত দিকে খেয়াল রাখে! ভাগ্যিস ছাদে বাসর ঘরের ব্যবস্থা করেছিল। না হলে এত মজার বাসর ঘরে হলে করতে পারতাম!
“আপনি খুব রাগ করেছেন! তাই না? আপনি চাইলে, আমি কাল সকালেই চলে যাব। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।”
কী বুদ্ধি! কাল যদি এ মেয়ে চলে যায়। মানসম্মান থাকবে? মানুষ কত কী যে ছড়াবে তার ইয়াত্তা আছে। মেয়ে বদল হয়েছে এটাও কি খুব সম্মানজনক নাকি? শুনে হি হি করে হাসবে।
“সে পরে দেখা যাবে। আপনি আমাকে বলুন তো কী হয়েছে? “
আমি আর চারু একসাথে পড়তাম। বাবা আমাদের দুজনকে একই ক্লাসে ভর্তি করাল। যাতে পড়তে সুবিদা হয়। আমরা একসাথে ক্লাসে যেতাম। কলেজ পাশ করে দুইজনে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলা। আমি ইতিহাসে আর চারু ইংরেজিতে। দুজনেই হলে থাকতে চাইলাম বাবা চারুকে হলে থাকার অনুমতি দিলো। আমাকে ডেকে বলল, “দুইজন বাহিরে থাকলে ঘরটা ফাঁকা লাগে রে মা। তুই বাড়ি থেকে ক্লাস কর।”
“জানতাম বাবা চারুর আবদার রাখবে।”
আমি বাসা থেকেই ক্লাস করেছি, চারু হলে থেকেছে। ক্যাম্পাসে দেখা হতো মাঝে মাঝে। প্রতি শুক্রবার চারু বাসায় আসত। সারা সপ্তাহের হলে কী কী করল সে বস গল্প করত।
আমাদের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসত। বাবার ইচ্ছে প্রথমে চারুর বিয়ে হবে তারপর আমার। একটার পর একটা প্রস্তাব বাদ পড়তে থাকল বাবার পছন্দ হয় না। কত সমস্যা যে বাবা দেখে! সব কিছু দেখে চারুকে বিয়ে দিবে।
আপনার মামা আসলেন একদিন প্রস্তাব নিয়ে। বাবা আপনাদের সম্পর্কে সব ধরনের খবর নিলেন। আপনাকে তার খুব পছন্দ হলো। সব পরীক্ষায় আপনি পাশ করলেন।
চারুকে বলার পর ও অমত করেনি। আপনাদের দেখে হলো। আপনারাও ওকে পছন্দ করলেন। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। বিয়ের আগেরদিন হঠাৎ করে চারু বাসা থেকে চলে গেল! একটা চিরকুট লেখা ও এবিয়ে করতে চায় না। বাবা কী যে কষ্ট পেয়েছে! ওকে কতবার জিজ্ঞেস করা হয়েছে ওর কোনো পছন্দ আছে কি না? বলেছে,” নাই।”
ও যাকে পছন্দ করত বাবা তার সাথে বিয়ে দিত। ওর আবদার এক কথায় রাখত বাবা তারপর কেন যে এমন করল!
আমার সাথে তো সব কথা বলত। কাউকে ওর ভালো লাগে এমন কথা কখনো বলেনি জানেন? বাবা ওকে কী পরিমান ভালোবাসে! ওর জন্য সবসময় আমাকে বাবা ঠকিয়েছে। ছোটবেলা থেকে ও কোনো অন্যায় করলে সাজা পেতাম আমি! যার জন্য বাবা এত কিছু করল সেই মেয়ে এমন একটা কাজ করল। বাবার কথা একবার চিনতা করল না!
“বিয়ের আগেরদিন আমার সাথে কথা হলো এমন কিছুই তো বুঝলাম না। ও রাজি না এমন মনে হয়নি?”
“আসলে চারু কখনি আপনার সাথে মোবাইলে কথা বলেনি।”
চলবে–
® নাবিল মাহমুদ