মায়াবতী
পর্ব: ৪৫
তানিশা সুলতানা
সাগরের সুস্থ হতে সময় লাগে এক মাস। অথৈদের বাড়িতে ছিলো পাঁচ দিন। তারপরই বাড়ি চলে গেছে। অথৈকে সাথে আনে নি। সাগরের পড়ালেখা শেষ হলে ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করে নিয়ে যাবে বাড়িতে। ততদিন তাদের আলাদা থাকতে হবে। অথৈয়ের মানতে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু সাগর কিছুই বলে নি।
দুই মাস হয়ে গেছে তারা আলাদা। সাগর কখনো নিজে থেকে অথৈকে কলও করে নি। অথৈ মাঝেমধ্যে কল করে তখন সাগর কল কেটে ব্যাক করে। এভাবেই এগোচ্ছে জীবন। মাঝেমধ্যে অথৈয়ের ভীষণ খারাপ লাগে। একটু তো খোঁজ নিতে পারে। একটু তো কথা বলতে পারে অথৈয়ের সাথে।
কাল অথৈয়ের জন্মদিন। অথৈয়ের খুব ইচ্ছে সাগর তাকে সবার আগে Wish করুক। কিন্তু অথৈ জানে সাগর করবে না। যে ঠিকমতো খবরটাই নেয় না সে আবার বার্থডে উইস করবে। জীবনে সব থেকে বড় ভুলটা মনে হয় অথৈ করেছে। সম্পর্কে ভালোবাসা না থাকলে সেই সম্পর্ক কেমন একটা স্বাদহীন লাগে। আগে মনে হতো সাগরের থেকে ভালোবাসা না পেলো সারাক্ষণ সাথে থাকতে পারলেই হলো। কিন্তু এখন মনে হয় জীবনে ভালোবাসাটাই ইমপটেন্ট। সাথে না থাকলেও চলে।
এই ভুল এক জীবনে আর শুধরানো যাবে না। অথৈ কখনোই ভালো থাকতে পারবে না। জীবনের সুখটা হারিয়ে গেছে। এখন অথৈ হাসতেও ভুলে গেছে। ডিপ্রেশন, মন খারাপ এসব চারদিক থেকে আকড়ে ধরেছে।
আর কতোটা ছোট হলে একটা মানুষের মন পাওয়া যায়?
কতোটা অপমানিত হলে একটা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করা যায়?
কতোটা বেহায়াপনা করলে একটা মানুষের একটুখানি ভালোবাসা পাওয়া যায়?
অথৈ ইদানীং আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করে যাতে সাগরের মনে তার জন্য একটুখানি ভালোবাসা জন্ম নেয়।
অথৈ জানালার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে গোধুলি দেখছিলো। আর ভাবছিলো সাগরের কথা। গতকাল আর্থি বললো অথৈকে।
“সবটা তন্নির জন্য। কি আছে তন্নির মধ্যে? তন্নি মেলামেশা করেছে তাই এখনো ভুলতে পারছে না। তুই তন্নিকে সাফ সাফ বলে দিবি সাগরের আশেপাশে যেনো না আসে।
আরও অনেক কিছুই বলেছে। অথৈ আর্থিকে তার পাল্টা জবাব দিয়েছিলো
” আমার তন্নিকে কিছু বলিস না। আমার তন্নি খুব সহজ শরল। তার কোনো দোষ নেই। সে প্রতিবাদ করতে জানে না।
আর্থি অবাক হয়েছিলো। সে নিজেও তন্নিকে খুব ভালোবাসে। কথাগুলো বলেছিলো শুধুমাত্র অথৈয়ের মন দেখতে। কি বলে সে। কিন্তু অথৈ খাঁটি সোনা। অথৈয়ের ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নাই। সে মন প্রাণ উড়ার করে ভালোবাসে তন্নিকে। তন্নি ভীষণ লাকী। তিনটা মানুষ তাকে এতোটা ভালোবাসে।
অথৈয়ের ফোন বেজে ওঠে। জানে তন্নি কল করেছে। অথৈ ফোনে স্কিনে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তারপর কল রিসিভ করে
“হ্যাঁ জান বল
” সাগর ভাই ঠিক রাত বারোটায় তোকে কল করে উইস করবে।
অথৈ মুচকি হাসে। এই মেয়েটা তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনলেও বলে দিতে পারবে কি হয়েছে৷
“তুই মিলিয়ে নিস অথৈ। সাগর ভাই তোকে সারপ্রাইজ দিবেই দিবে।
” আমার মন ঠিক আছে।
“তোর থেকেও বেশি আমি তোকে চিনি৷ মন খারাপ করিস না। অথৈ ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়।
” হুমম
“হুমম কি?
” উনি কল করবে।
“হ্যাঁ
” তুই আসবি তো আমাদের বাড়িতে?
তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সে
“না
” কেক কাটবো না আমি।
“কেনো অথৈ?
” তোকে ছাড়া আমি কখনোই কেক কাটতে পারবো না।
বলেই অথৈ কল কেটে দেয়। তন্নির খারাপ লাগে। কিন্তু সে কি করবে?
সে যে নিরুপায়।
তখনই আবার অথৈয়ের ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় অথৈ। হাত পা কাঁপতে থাকে। সাগর কল করেছে৷ অথৈ কতো ভেবেছে সাগর বুঝি এখন কল করবে কিন্তু করে নাই৷ বিয়ের পর এই প্রথমবার কল করলো। অথৈয়ের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা-কাঁপি হাতে কল রিসিভ করে।
“কেমন আছো অথৈ?
অথৈয়ের হার্টবিট বাড়ানোর জন্য এইটুকুই ছিলো যথেষ্ট। তার সাগর তার খোঁজ নিচ্ছে?
শুকনো ঢোক গিলে অথৈ বলে
” ভালো আছি
আপনি
“এখন আর কল করো না যে?
” আপনি বিরক্ত হন কি না এটা ভেবে।
সাগর হাসে। সেই হাসির শব্দ অথৈয়ের কান পর্যন্ত পৌছায়।
মানুষ সৌন্দর্যের কথা বলে অথৈয়ের তো সাগরের ভয়েস শুনলেই কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়”
সাগর আবার বলে ওঠে
“আমি তোমার কলের অপেক্ষায় থাকি।
খুশিতে অথৈয়ের চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে। সে একটু জোরেই বলে ওঠে
” সত্যি?
সাগর জবাব দেয় না। অথৈ বলে ওঠে
“কাল আমার বার্থডে। আপনি আমাকে সবার আগে উইস করবেন প্লিজ?
” কাল তোমার বার্থডে?
“হ্যাঁ করবেন তো?
” তাই না কি?
“তাই না কি আবার কি? করবেন বলেন।
” দেখা যাক।
পড়তে বসো।
বলেই সাগর কল কেটে দেয়। অথৈ ফোনটা বুকে জড়িয়ে মুচকি হাসে।
_
অফিস থেকে ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ফেরে অর্ণব। ঘেমে নেয়ে একাকার। গাড়িতে এসি আছে। কিন্তু গাড়িটা মাঝরাস্তায় নষ্ট হওয়াতে বাসে করে বাসায় ফিরতে হয়েছে তাকে। অথৈয়ের জন্য দুই হাত ভর্তি গিফট এনেছে।
দুই মাস হবে তার অফিসে জয়েনের। নিজে পরিশ্রম করার পর থেকে তার চঞ্চলতা কমে গেছে। এতো খাটনি? সারাজীবন বাবা এতো কষ্ট করেছে?
তন্নির সাথে শেষ দেখা হয়েছিলো অথৈয়ের বিয়ের দিন। তারপর থেকে আর দেখা করা হয় নি। কথাও হয় না তেমন। সারাদিনের এতো খাটনির পর আর এনার্জি থাকে না কথা বলার। তবুও দিনে কয়েকবার কল করে কেমন আছো কি করছো খবর নিতে ভুলে না।
আশা ছেলের জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসে। অর্ণব ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো মা কে দেখে উঠে বসে।
আশা চুপচাপ শরবত হাতে দিয়ে চলে যায়। ইদানীং আশা অর্ণবের সাথে ভালো করে কথা বলে না। অর্ণবও বেশি বিরক্ত করে না।
আশা চলে যেতেই তন্নি কল করে। অর্ণব মুচকি হেসে কল রিসিভ করে।
তন্নি বলে ওঠে
“আমি কলেজের রাস্তায় অপেক্ষা করছি। চলে আসুন।
বলেই কল কেটে দেয়।
অর্ণবের ভীষণ খিধে পেয়েছে। লান্স করা হয় নি। ভেবেছিলো বাসায় ফিরে খাবে। মহারানীর জরুরি তলব যেতেই হবে। এক চুমুকে শরবত শেষ করে যেমন ছিলো তেমন ভাবেই আবার ছুটে তন্নির কাছে। গাড়ি নষ্ট থাকায় রিকশা নিয়েই চলে যায়। আজকের গরমটা অনেকটা বেশি। গাছের একটা পাতা পর্যন্ত নরছে না।
তন্নি দাঁড়িয়ে ছিলো। আজকে মেয়েটা শাড়ি পড়েছে। সেই শাড়িটা যেটা অর্ণব তাকে কিনে দিয়েছিলো। এবং সেই শাড়িতে দেখে প্রেমে পড়েছিলো। কিন্তু তন্নির মুখটা ফ্যাকাশে। কি হয়েছে তার? কেউ কিছু বলেছে?
এসব ভাবতে ভাবতে রিকশা থেকে নামতে যায় অর্ণব। আর তখনই
চলবে……