নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ২৭
(ক)
#WriterঃMousumi_Akter
বিয়ের প্রথম সকাল। ডায়নিং এ সবাই নতুন বউ এর জন্য অপেক্ষা করছে। প্রিয়তা রজনীকে একটা হলুদ রঙের জরজেট শাড়ি পরিয়ে বাইরে নিয়ে এল। সকালের গোসলের পর রজনীকে আরো স্নিগ্ধ লাগছে। গায়ের হলুদ রঙের শাড়ির জন্য গায়ের রং ও যেন হলুদ দেখাচ্ছে। প্রান্তিক সাওয়ার নিয়ে কোমরে টাওয়াল পেচিয়ে হাত দিয়ে মাথার পানি ঝাড়ছে আর রজনীর দিকে তাকিয়ে আছে। হলুদ রং তার কখনো পছন্দ ছিলনা। কিন্তু রজনীর পরণে হলুদ শাড়ি দেখে প্রান্তিক মুগ্ধ। সে হলুদ রঙের প্রেমে গেল। একটা হলুদ রঙের শাড়িতে একটা মেয়েকে এতটা সুন্দর লাগে তার জানা ছিলনা। প্রান্তিক নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মনে মনে বলল,
“পৃথিবীর সব রং বুঝি তোমার জন্যই সৃষ্টি রজনীগন্ধ্যা। এই বাজে হলুদ রং টাও আজ নিজের সৌন্দর্য্য খুজে পেল তোমার ছোঁয়ায়। তোমার ছোঁয়ায় সব কিছুই সুন্দর। তুমি পরশ পাথরের মত। আজ নিঃসন্দেহে বলতে পারি নিজেই নিজেকে প্রান্তিক চৌধুরী তুমি জিতেছো। তুমি অনেক বড় ভাগ্যবান।”
রজনি মাথা নিচু করে বসে আছে। ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা। শাড়ি পরার অভ্যাস নেই। তার উপর জরজেট শাড়ি সামলাতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। বার বার মাথার কাপড় পড়ে যাচ্ছে।অন্তু বলল,
“ভাবির মনে হয় শাড়িতে অসুবিধা আছে।”
শ্রাবন বলল, “ভাবির শাড়ি সামলানোর জন্য ভাই আছে। তুই দেখিস কেনো? ভাই জানলে তোর খবর আছে।”
“প্রান্তিক চৌধুরীর বোনের সাথে যার ভাব আছে তার ও খবর আছে। রাত বারোটা নাকি একটার খবর ভাল একটা বোঝা যাচ্ছেনা।”
” আমার প্রিয়তার জন্য যদি আমার গ’র্দা’ন যায়, তবে তাই সই।”
কথাটা প্রিয়তার কানে যেতেই শ্রাবণের দিকে তাকাল।শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন তার কাঁন্না পাচ্ছে। মানুষ ভালবাসা কম পেলেও কাদে,বেশী পেলেও কাদে।একটা সুখের কাঁন্না,আরেকটা দুঃখের কাঁন্না।শ্রাবণের এত গভীর ভালবাসা দেখে প্রিয়তার কাঁন্না পাচ্ছে।অন্তু খেয়াল করল প্রিয়তার অশ্রুভেজা চোখ। অন্তু গভীর দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়তার দিকে। প্রিয়তা শ্রাবণ কে টেক্সট করল,
” আমাকে এত ভালবাসো কেনো শ্রাবণ তুমি? আমি তো দুঃখ ছাড়া সুখ দিতে পারিনা তোমাকে।”
” তুমি সুখ না হও দুঃখ হয়েই থেকে যেও আমার সাথে প্রিয়তা। তবুও আমার সাথেই থেকো। তুমি ছাড়া ভালবাসার মত কেউ নেই আমার
“
অন্তু হালকা কাশি দিয়ে শ্রাবণকে বলল, ” যতই চ্যাটিং করো সেটিং উপরওয়ালার হাতে।”
” আমার উপরওয়ালাই আমার সেটিং করাবে।”
আঞ্জুমান রান্নাঘর থেকে দেখছে তার ছেলের নতুন বউ এর মাথায় কাপড় নেই। আঞ্জুমান লতিফাকে ইশারা করে কিছু একটা বলল।
লতিফা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল।এসে রজনিকে বলল,
” বউমা রান্নাঘরে চলো। আত্মীয়রা সবাই নতুন বউ এর রান্না খেয়ে যাক। আর কে কবে আসবে তার ঠিক নেই।”
রজনী উঠে দাঁড়াল। লতিফার পেছনে পেছনে হাঁটা শুরু করল।ডায়নিং এ বেশ কয়েকজন মানুষ। প্রান্তিকের মামা বাড়ির লোকজন আছে। মামাতো ভাইয়েরা আছে শ্রাবণ,অন্ত সবাই আছে। এরই মাঝে কেউ একজন রজনীর শাড়ির কুচি হালকা টান দিল। সাথে সাথে জরজেট শাড়ির কুচি সব খুলে গেল। রজনী দ্রুত খুলে যাওয়া কুচি এক জায়গা করে ধরে নিজের ইজ্জত রক্ষা করার চেষ্টা করল। কিন্তু সাথে সাথে ভয়ংকর এক দৃষ্টিতে তাকাল। রজনীর সরল চোখের এমন ভয়ংকর রুপ আগে দেখেনি শ্রাবণ বা অন্ত কেউ ই। দৃষ্টিতে এমন ই ভয়াবহতা অপরাধীর আত্মা কেঁপে উঠার কথা। প্রান্তিকের মামাতো ভাইয়েরা ছিল বাগানে কাজ করা ছেলে ও ছিল সেখানে। সবাই রজনীর এমন দৃষ্টিতে অবাক হল। সেই সাথে অন্ত আর শ্রাবণ ও অবাক হল।ডায়নিং এ বসে থাকা মহিলারা কেউ বুঝতে পারেনি কি ঘটনা ঘটেছে।
শ্রাবণ প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, ” ভাবিকে সাহায্য করো। “
প্রিয়তা দ্রুত উঠে এসে বলল, ” শাড়ি খুলল কীভাবে রজনী।”
রজনি মানুষের মাঝে ব্যাপার টা এড়িয়ে গিয়ে বলল, ” আমিতো শাড়ি সামলাতে পারিনা।”
আঞ্জুমান রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে রজনীর হাত ধরে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে রাগি কন্ঠে বলল, ” শাড়ি সামলাতে পারোনা আবার আমার তেজি ছেলেকে ঠিক ই সামলে রেখেছো।”
( খ অংশ আগামিকাল দিতে চেষ্টা করব।)
#নয়নে_লাগিল_নেশা
২৭(খ)
#WriterঃMousumi_Akter
“বেড়ে উঠেছো তো গ্রামে। সামান্য শাড়িটুকুও পরতে জানোনা। তোমার মা-বাবা কি শিখিয়েছে। নিজের মাকে দেখেও কি কিছু শিখোনি।নতুন বউ তুমি মাথার কাপড় ফেলে বসে আছো ওখানে অতগুলো মানুষের মাঝে।তুমি জানোনা নতুন বউদের মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে থাকতে হয়।গ্রামের মেয়েদের তো কিছু না থাকলেও লজ্জা থাকে। তোমার কি সামান্য লজ্জাটুকুও নেই। নাকি তোমার মা ও এইভাবে চলাফেরা করে। কথায় আছে যার মা ভাল তার ঝি ভাল।”
শ্রাবণ ইশারা দিয়ে প্রান্তিক কে ডেকে নিয়ে এল। শ্রাবণ আর প্রান্তিক দু’জন দু’জনার চোখের ইশারা বুঝতে পারে। চোখের ইশারায় কি বোঝাতে চাইছে চোখ দেখেই দু’জন বুঝতে পারে। দু’জনের চোখের ইশারা এতই চেনা দু’জনের।প্রান্তিক কিচেনের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।আস্তে করে প্রিয়তাও পাশে এসে দাঁড়াল।
আঞ্জুমানের এমন দাঁত কিড়মিড় করা কঠিন মেজাজের কথাগুলো শুনে
রজনীর চোখ ছলছল করে উঠল। তার মায়ের মত সহজ সরল মানুষ কে আজ তার জন্য খারাপ কথা শুনতে হল। তার মায়ের মাথার কাপড় কোনদিন সে পড়তে দেখেনি।কিন্তু আজ তার জন্য তার মাকে নিয়ে আঙুল তুলল। এই ভুল কেবল ই তার। এইখানে তার মায়ের কোনো দোষ নেই। রজনির এখনি বলতে ইচ্ছা হল, ” আমার জন্য আমার মাকে দায়ী করবেন না।” কিন্তু এই বাড়িতে তার আপণ বলে কেউ নেই। এখানে কারো বিরুদ্ধে কিছু বলে সে পার পাবেনা। কারো মুখে মুখে কথা বলার সাহস ও তার নেই। রজনীর হাউমাউ করে কাঁন্না পাচ্ছে। একেই বুঝি নিজের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি বলে। আঞ্জুমান রজনীর ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” শাড়ি ঠিক করে নাও। কথায় কথায় চোখে পানি আসলে সংসার করবে কীভাবে? আমাদের শ্বাশুড়িরা কি আমাদের কিছু বলেনি। আমরা কি গাল ফুলিয়েছি।সব গুছিয়ে দিয়েছি রান্না করো। দেখি কি রান্না শিখেছো বাবার বাড়ি থেকে। কি দেখে আমার ছেলের মাথা নষ্ট হল।”
আঞ্জুমান কেনো যেন রজনীকে সহ্য করতে পারছেনা। রজনীকে দেখলেই রা’গে তার সমস্ত শরীর রি’রি করে উঠছে।সে কোনো ভাবেই তার ছেলের গালে মারা থা’ প্প’ ড় ভুলতে পারছেনা। হঠাৎ কারো সম্পর্কে মনে বি’ষ ঢুকে গেলে সেটা আর বের হওয়া মুশকিল।রজনী চোখের পানি মুছে শাড়ি ঠিক করে নিল। কিন্তু রান্না করবে কীভাবে বুঝতে পারছেনা। এখানে গ্যাসের চুলা। সে কোনদিন গ্যাস চালায় নি। বাড়িতে চুলায় রান্নার অভ্যাস আছে তার। গ্যাস নিয়ে মারাত্মক চিন্তায় পড়ে গেল। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। গ্যাসের চুলার সামনে গিয়ে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। কীভাবে কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না।কীভাবে চুলা জ্বালাবে? কোথায় কি করবে। বিচক্ষণ ভাবে দেখেও বুঝল না।রজনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঞ্জুমান আবার ও দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“কি হল? কখন রান্না করবে। মানুষ জন খাবে কখন। ওভাবে সং এর মত দাঁড়িয়ে থাকলে কি রান্না হবে আদেও।”
রজনী মাথা নিচু করে মিহি কন্ঠে বলল,
“এই চুলা আমি জ্বালাতে জানিনা। একটু দেখিয়ে দিন।”
“সামান্য গ্যাসের চুলাও জ্বালাতে পারোনা?তাহলে পারো কি তুমি? শাড়ি পরতে পারোনা, গ্যাস চালাতে পারোনা তাহলে কি যোগ্যতা আছে তোমার আমার ছেলের বউ হওয়ার। পাশের বাসার অদ্রি ৫ বছর বয়স। তাকে বললেও সে পারবে। আমি জানিনা তুমি কীভাবে কি করবে। এখনি চুলা জ্বালাবে তুমি।”
এরই মাঝে গম্ভীর থমথমে মেজাজে প্রান্তিক রান্নাঘরে প্রবেশ করল। আঞ্জুমানের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকাল। লতিফা বুঝতে পারল প্রান্তিক রেগে আছে। আঞ্জুমানের সমস্ত কথা প্রান্তিক শুনেছে।এতক্ষণ দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে ছিল সে।আঞ্জুমান প্রান্তিক কে রান্নাঘরে প্রবেশ করতে দেখে বলল,
” রান্নাঘরে তোমার কি? তুমি কি রান্নাঘর চিনো? তোমার বয়সে এসেছো কখনো?”
প্রান্তিক সে কথার উত্তর না দিয়ে সোজা রজনির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। রজনির ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে তার বুক ফেঁটে যাচ্ছে। সে রজনীকে বিয়ে করেছে কাদাতে নয়। রজনীকে ভাল রাখতে, সুখি করতে। প্রান্তিক রজনীর চোখের পানি মুছে দিয়ে রজনির ডান হাতের আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল রেখে অন্য হাত দিয়ে চুলা জ্বালিয়ে বলল,
” এইভাবে চুলা জ্বালাতে হয় রজনীগন্ধা।”
প্রান্তিক এমনভাবে রজনীর হাত ধরে রজনীর চোখের দিকে তাকাল।রজনী প্রান্তিকের সেই স্পর্শ আর চোখের চাহনিতে স্পষ্ট বুঝল,
“আমি আছি রজনীগন্ধ্যা। সব পরিস্থিতিতে তোমার পাশে আছি। তুমি একা নও। ভ’য় পেওনা। আমি থাকতে কোনো চিন্তা নেই তোমার।”
আঞ্জুমান ছেলের এমন নির্লজ্জ কাজ দেখে বলল,
” তোমার কি লজ্জা একেবারেই চলে গিয়েছে। এখন থেকে কি বউ সাথে রান্না করাও শুরু করবা?”
প্রান্তিক চুলা অফ করে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ” আমি বিয়ে করে তোমার জন্য আরেকটা মেয়ে এনেছি আম্মু। কাজের মেয়ে আনিনি। তোমার যদি কাজের মেয়ে লাগে বলো আমি আরো দশটা কাজের মেয়ে রেখে দিবো। কিন্তু বাড়ির বউকে অসম্মান করে বুঝিয়ে দিওনা এ বাড়িতে তার কোনো মূল্য নেই। ও তাহলে কোন ভরসায় থাকবে এ বাড়িতে। মেয়েদের বিয়ে হয় কি শুধু শ্বশুর বাড়িতে কাজ করার জন্য?এর চেয়ে তো মেয়েরা মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করলেই পারে। এতে তাদের নিজস্ব ইনকাম ও হবে। এর জন্য অন্য কারো উপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। ও প্রান্তিক চৌধুরীর বউ, কোনো কাজের মহিলা নয়। আর শাড়ি পরা নিয়ে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে এত প্রেশার দিচ্ছো ক্যানো? ও শাড়িই পরবেনা আজ থেকে। ওয়েস্টার্ন পরবে। তোমার পাড়ার মানুষ কি বলবে তাই ভেবে আমার বউ যা পারেনা তা জোর করে করতে যাবে ক্যানো?
তাকিয়ে দেখো বাইরে। যারা বসে আছে কারো মাথায় কাপড় নেই এমন কি প্রিয়তার ও নেই। শুধু নতুন বউ বলে মাথায় কাপড় দেওয়ার নিয়ম আর ওদের বেলায় নেই। মাথায় কাপড় যদি দিতেই হয় তাহলে প্রত্যোক কেই দিতে হবে।”
আঞ্জুমান ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখল তার ছেলে নিজের মধ্য নেই।রাগে থরথর করে কাঁপছে। তার ছেলের এই রাগ খুব ভয়াবহ। আঞ্জুমান রজনীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আরো রেগে গেল রজনীর প্রতি। এই মেয়ের মাঝে কি আছে। তার ছেলে এই মেয়ের জন্য এমন হয়ে গেল কেনো? এই মেয়ের জন্য তার ছেলে তার সাথে এলোমেলো কিছু বলতেও দু’বার ভাবছে না।প্রান্তিক আর কোনো কথা না বলে রজনীর হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে গিয়ে জোরে দরজা লাগিয়ে দিল। হঠাৎ দরজা দেওয়ার বিকট শব্দে সবাই তাকাল।লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে কেউ যে এভাবে সবার মাঝে বউ এর হাত ধরে টেনে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে পারে তা বোধ হয় আগে কেউ দেখেনি।
প্রিয়তা আঞ্জুমানের দিকে তাকিয়ে বলল, ” এসব কি শুরু করেছো আম্মু?তুমি কি সজ্ঞানে এসব করছো।নাকি অজ্ঞানে এসব করছো।এইভাবে কিন্তু ভাইয়ার সাথে তোমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। আর মাঝ খানে দোষ হবে বেচারি রজনীর যে বিয়ের পরে কানপড়া দিয়ে তোমার ছেলেকে তোমার থেকে আলাদা করেছে।”
ঘরের দরজা লাগিয়ে প্রান্তিক এসি ছেড়ে দিয়ে রজনীকে বলল,
” শাড়ি খুলে ফেলো।”
রজনি ড্যাবড্যাব চোখে প্রান্তিকের দিকে তাকাল।
প্রান্তিক নিজের শার্ট খুলতে খুলতে রজনীর দিকে তাকিয়ে বলল, ” ওভাবে তাকিয়ে কি ভাবছো? শাড়ি খুলতে বলেছি। মানুষ খু’ন করতে বলিনি। শাড়ি পরে কষ্ট পাচ্ছো তুমি।তোমার এই সামান্য কষ্ট ও আমি সহ্য করতে পারিনা রজনীগন্ধ্যা তুমি কি জানো চোখ দিয়ে পানি ঝরাও তুমি র/ ক্তা/ক্ত হয় আমার হৃদয়। “
এইতো কিছুক্ষণ আগেও রজনীর মনে হচ্ছিলো তাকে ভালবাসার মত কেউ নেই এ বাড়িতে। কিন্তু না। তার এই ধারণা ভুল। তাকে তার চেয়েও বেশি ভালবাসার মত মানুষ এই দুনিয়াতে আছে। সে হল প্রান্তিক চৌধুরী। এউটুকু উপলব্ধি করেই রজনীর চোখে আবার ও পানি এল।কোনো ভাবেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারল না। রজনি টলমলে চোখে কেদে দিল।প্রান্তিক শার্টের বোতাম খোলা বন্ধ করে রজনীর দুই বাহু ধরে বলল,
“আমার মায়ের জন্য সরি। রিয়েলি সরি। দেখবে সে তোমাকে ভালবাসবে। খুব ভালবাসবে।”
রজনী এইবার শব্দ করে কেদে উঠে প্রান্তিক কে জড়িয়ে ধরল। এই প্রথম সে কোনো জড়তা ছাড়াই প্রান্তিকের বুকে নিজের আশ্রয়স্থল খুজে নিল। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রান্তিক কে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বলল,
“আপনি আমাকে এত ভালবাসেন ক্যানো? বলুন না ক্যানো ভালবাসেন? “
প্রান্তিক নিজের দু’হাতে রজনীকে আগলে ধরে রজনীর মাথায় নিজেএ থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
“তুমি বুঝো আমি তোমাকে ভালবাসি?”
“হ্যাঁ বুঝি।”
“তাহলে ভালবাসো ক্যানো আমায়?”
“বাসি। আমিও আপনাকে ভালবাসি। অনেক বেশী ভালবাসি।”
প্রান্তিকের কর্ণকুহরে এই কথা প্রবেশ করতেই আরো একটু গভীরভাবে রজনীকে জড়িয়ে ধরল। রজনীর মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
“আজ থেকে আমার বেঁচে থাকার জন্য এই একটা কারণ ই যথেষ্ট রজনীগন্ধা। পৃথিবীর হাজারো বিতৃষ্ণা ঠেলে আমি বেঁচে থাকব। তৃষ্ণা বলতে আমি বুঝি তোমাকে। নেশা বলতে আমি বুঝি তোমাকে। তুমি আমার সেই সুখ রজনীগন্ধা যাকে অনুভব করেই অদ্ভুত এক শান্তি খুজে পাই।”
“আপনিও আমার সেই মানসিক শান্তি যার বুকে মাথা রেখে অনুভব করতে পেরেছি এই পৃথিবীতে সব সুখের বিপরিতে আপনি।”
“উফফ এইভাবে বলোনা। এমনিই নিজেকে সামলাতে পারিনা।তার উপর তুমি যদি এইভাবে বলো। এখনি অনর্থ হয়ে যাবে। কেউ আটকাতে পারবে না।”
“কিসের অনর্থ।”
“প্রেমের মহা প্রলয় ঘটবে। সেই প্রলয়ে বাঁধা ভেঙে গভীর প্রেম নামবে। সেখান থেকে এক অনর্থর সৃষ্টি হবে।সেই অনর্থে আমাদের দূরত্ব কেটে যাবে।”
এমন কঠিন কথার মানে কি রজনী কিছুই বুঝল। নাকি না বুঝেই বলল,
“আমি সেই প্রলয় চাই।”
প্রান্তিক উ/ন্মা/দ প্রেমিকের মত নেশাক্ত চোখে রজনির দিকে তাকাল।চোখ ভরা নেশা। রজনীকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
“বউ তুমি এত পাতলা আমার কোলে নিতে একটুও কষ্ট হয়না।”
“আপনি আমাকে এখন নামিয়ে দিন। বাইরে অনেক মানুষ তারা ছিঃ ছি করবে।বলবে নির্লজ্জ।”
“আমি সাহসী পুরুষ। ক’জনের সাহস আছে সবার মাঝে বউকে ঘরে এনে দরজা লাগানোর।”
প্রান্তিক রজনীকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রজনীর দিকে এগিয়ে যেতেই ফোন বেজে উঠল। প্রান্তিক বিরক্ত হয়ে বলল,
“উফফ ডিস্টার্ব। “
রজনী ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল তার বাবার নাম্বার এর ফোন।রজনী খুশিতে লাফিয়ে উঠে ফোনটা কানে নিতেই মুখটা কেমন চুপসে গেল।
চলবে?…