শিশিরের আদ্র পর্ব ৪
Neel
অন্যদিকে আদ্র ড্রইয়রুমের জিনিস পত্র ভাংচুর শুরু করলো। ভাংচুর শুরুর শব্দে সবাই ড্রইংরুমে জড়ো হয়ে গেল।আদ্র আবারো সাইকোর মতো বিহেভ করছে। মিন্নাত আর মিন্নাহ ভয়ে কান্না করে দিল। ওদের কে নিয়ে আয়ানের স্ত্রী মীনা রুমে চলে গেল। এখন আয়ান আর শিশিরের বাবা বাসায় নেই, অফিসে গেছে। নাহিদ,নিজাম আর শান্ত বন্ধুদের বাড়ি ঘুরতে গেছে। তাই পরিস্থিতি ভয়াবহ। বাড়িতে শুধু মহিলারা আছে আর ২জন পুরুষ।
দাদি দৌড়ে এসে আদ্রকে ধরলো। কিন্তু আদ্রের চোখ দুটো টকটকে লাল, যেন কাউকে চোখ দিয়ে ই খুন করে ফেলল। আদ্রের মা আদ্রের দিকে আসতেই আদ্র হুংকার দিয়ে উঠলো – তুমি আমার কাছে আসবে না। একদমই আসবে না। তুমি আমার জন্মদাত্রী মা হতে পারো না। কোন মা, এরকম হতে পারে না। না না তুমি আমার জন্মদাত্রী মা নও।
আদ্রের মা ধাপ করে নিচে বসে পড়লো। কান্না করতে শুরু করলো। হাজার হোক,সে তো মা । আর তার ছেলে তার মাতৃত্বে সন্দেহ করছে, এটা কোন মা ই মেনে নিতে পারে না। শিশিরের মা আর নাহিদের মা দৌড়ে এলো। সম্পর্কে এরা তিনজন জাল।
আদ্রের বাবা- আদ্র। তুমি তো একজন ডা. তাই না? তুমি এরকম পাগলামো কেন করছো। আমরা তোমাকে ভালোবাসি, কিসের অভাব রাখছি? সবার শেষে আমাদের কলিজা শিশির কে ও তোমার হাতে তুলে দিব , তোমাকে তো বলছি ই তাই না। এখন আর কি চাও, কিসের জন্য এরকম ভাঙচুর করছো। ভালোবাসি তোমাকে ঠিক, তোমাকে সবাই ভয় পায়, তবুও আমি তোমার বাবা,আমাকে রাগী ও না।
নাহিদের বাবা (মেজ চাচা)- আহ্, আপনি থামেন তো ভাই। এতো বছর পর আমাদের ছেলে আমাদের বুকে ফিরে এসেছে। ওফ্, আদ্র বাবা বলতো কী হয়েছে। তুমি কেন রেগে আছো।
আদ্র – তোমরা সবাই আমাকে মিথ্যা কথা বলেছো। তোমরা শিশির কে বিয়ে দিয়ে ফেলেছো। ঐ মজিদ না না মহিদ নামের ছেলের সাথে, ওর নানু বাড়ি ওর শশুরবাড়ি, তাই তো। তবে শুনে রাখ, আমি যেমন ভালো, ঠিক অনেক খারাপ। সাইকো আমি, সাইকো। দি গ্রেট মাফিয়া এসি আদ্র। তোমাদের কলিজাকে রক্তের কান্না করাবো।(বলেই খাবার টেবিলে ঘুষি দিল, কাঁচ ভেঙ্গে চূরমার হয়ে গেল)
সবাই আদ্রের কথা শুনে উলু বনে গেলো। কারন সবাই জানে শিশিরের বিয়ে হয়নি। শিশির তো দুষ্ট। দুষ্টুমি করে বাড়িকে শশুর বাড়ী বলে।
আদ্রের মা – জানি না তুমি আমার ছেলে হয়েও কেন আমাকে পছন্দ করো না। তবে তুমি ভুল করেছো, শিশির বিবাহিত নয়।
আদ্র – আপনি চুপ করুন মিসেস চৌধুরী। আপনার কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দাদি – আচ্ছা , তুই বড় বউ এর কথা বিশ্বাস করিস না। আমাকে তো করিস। শোন, তোর আমানত আমি রক্ষা করেছি । তার বিয়ে হয় নি, শিশির অনিক পাজী , এববারেই দুষ্টের হাফেজ। তার নাকি মহিদ (মামাতো ভাই)কে ভালোলাগে । কিন্তু মহিদ তো বিবাহিত। ও আয়ানের স্ত্রী মিনার ভাই । মহিদ ও শিশির কে বাকিদের মতো বোনের চোখে দেখে।
(আদ্রের কানে ধরে) তুই এখন শিশির কে ফলো করতে পারিস, ১০ মিনিটের রাস্তা আধঘন্টা লাগাবে যেতে, দুষ্টুমি করতে করতে। যা, খোঁজ নিয়ে দেখ। তুই তো আবার মাফিয়া।
আদ্র মাথা নিচু করেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। সবাই অবাক ও চিন্তিত মাথায় আদ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
শিশিরের মা – ভাইসাহেব, আমি রাজি, শিশিরের ভাই,বাপ রাজি, আমরা সবাই রাজি, তাহলে ওদের বিয়ে টা ও দিয়ে দিলে ভালো হয়, আদ্র যদি আমার মেয়েকে খুশি আর ভালো হয় , তাহলে আমার আপত্তি নেই।
আদ্রের বাবা- হুম, আদ্র আর শিশিরকে এক করে দিতে হবে, ভাবছি বিষয়টা নিয়ে, তবে তার আগে নাহিদ আর নিজাম এর বিয়ে টা দিয়ে দেওয়া উচিত। আর শিশিরের ও তো ১৮ বছর হতে ১ বছর আছে।
পরিবারের বড়রা এতে রাজি হলো।
___
আদ্র শিশিরের নানি বাড়ির দিকে হাঁটছে। এক গলির পরের গলিতে ঢুকে ই শিশির কে দেখতে পেলো। শিশির একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে আর হাসছে।আদ্র অবাক হয়ে গেল, দাদির কথা মিললো কি করে। এতোক্ষণে শিশির এর নানু বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার কথা। শিশির বাড়ি থেকে কমপক্ষে আধা ঘন্টা আগে বের হয়েছে। আদ্র শিশিরের থেকে দূরে আড়ালে দাঁড়াল।
কথায় আছে না, কাজ কাম না থাকলে, রাজার মাথায় মন্ত্রী ফকির হওয়ার বুদ্ধি দেয়। আদ্রের মাথায় ও এখন একই অবস্থা।
এরে, মাহি(আমার বান্ধবী) কয়টা বাজে?তোর সাথে কথা বলতে বলতে অনেক লেইট হয়ে গেছে।
ঘড়ি দেখলাম, এরে আধা ঘন্টা হইয়া গেছে, ওহ্ থাক আধা ঘন্টা ই তো হইছে, আগে মজা নিয়ে নেই। আজ কলেজ মিস দিয়েছি আমি আর মাহি দুজন এ। ইশ্ মহিদ ভাইয়া কে দেখবো রে।
মাহি – কি রে? তুই এমন মুচকি হাসছোস কিল্লাই রে?
আরে শশুর বাড়ী যাচ্ছি। ইশ্ কথাটা বলতে ই মাহি একটা কিল দিল পিঠে।
এরে মাহি আমার পিঠ বেঁকে গেল রে। (চিল্লিয়ে)
মাহি – শয়তান ছেমরি। মহিদ ভাইয়া টা কে শান্তি দিলি না। এখন তো ও বিয়ে ও করে ফেললো, এবার তো পিছু ছাড়।
না ছাড়বো না। ওনি আমার ক্রাশ। ফাস্ট ক্রাশ। তবে আমি আরেকজন এর উপর ক্রাশ খাইছি ।
মাহি – শিশির ইইইই কা বাচ্চা। এ নিয়ে তোর ক্রাশ কয়টা হলো। ৩১নম্বর। তুই কবে ভালো হবি।
না দেখ বিশ্বাস কর এটা সত্যি কারের ক্রাশ।
(আর কিছু বলতে যাবো তার আগে একটা দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় এলো। ইশ্ চুরি করার মজাই আলাদা।) মাহি তুই দাঁড়া আমি আসছি।
মাহি -শিশির কী করবি বল না?
সামনে একটা বাড়িতে ঢুকে গেলাম। বাগানটাতে তিনটা গোলাপ ফুল ফোটে আছে। গোলাপ আমার প্রিয় ফুল। এই ফুল দেখলেই আমার ছিঁড়ে নিজের কাছে রাখতে হচ্ছে করে। বইয়ের ভেতর তিনটা গোলাপ, উফ্ কি সুন্দর। গোলাপ তিনটি ছিঁড়তে ই বাড়ির ভেতর থেকে একটা ছেলে দৌড়ে এলো, ছেলে টাকে দেখে আমি দৌড় দিলাম। মাহির কাছে এসে মাহির হাতে ফুল তিনটি দিয়ে বললাম- আমাকে কালকে দিবি , এখন দৌড়া ।বলেই মাহিকে রেখে দৌড় দিলাম।মাহি আমাকে দৌড়াতে দেখে দৌড় দিল, তারপর কি হলো জানিনা। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে নানু বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
____
মাহিকে ছেলেটি ধরে ফেলল। মাহি বারবার বলছে এটা আমি ছিঁড়ি নাই।ওটা আমার বান্ধবীর কাজ। ও গোলাপ দেখলে পাগল হয়ে যায়। ছিঁড়ে বইয়ের ভেতর রেখে দেওয়া ওর জন্মগত অভ্যাস। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন।
আদ্র দৌড়ে এলো মেয়েটি কে বাঁচাতে। মেয়েটি ভয়ে কান্না করে দিছে।আদ্র মনে মনে ভাবছে – তার প্রিয়তমা কত টা দুষ্টু।
আদ্র যেন আরেক বার শিশিরের দুষ্টুমির প্রেমে পড়লো। হঠাৎ ছেলেটা আর মেয়েটির…
চলবে…