#আমার তুমি
পর্ব ১৬
#তানিশা সুলতানা
ফুল সাজানো রুমে পায়চারি করছে তুলতুল। এটা সেই রুম যেখানে ও ঢাকায় আসার পরে থেকে ছিলো। রুমটা একদম পাল্টে ফেলেছে। রুমের ফার্নিচার কালার সবই পাল্টে গেছে।
আগের তুলনায় রুমটা অনেক বড়ও করেছে। শুধু রুম না পুরো দুই তালার সব কিছুই পাল্টে গেছে। মনে হচ্ছে ভেঙে আবার গড়া হয়েছে।
এই রুমে আগে তুলতুল থাকতো এটা আন্দাজ করেছে জানালা দেখে।
সাহেদা বেগম বাড়ি ওয়ালার মেয়ে নিশাকে বলেছিলো ফুলসজ্জা খাট সাজাতে।
মেয়েটা খুব সুন্দর সাজিয়েছে।
তুলতুলের খুব ইচ্ছে করে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলতে। কিন্তু মন মানছে না। যদি সায়ান দেখে ফেলে তো কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
কিন্তু বিয়ে তো একবারই আর ফুলসজ্জাও তো একবারই হবে। খাটটাও একবারই সাজানো হবে। এরকম সাজ আর জীবনেও সাজতে পারবে না। বাড়ি থেকে একটাও ছবি তুলতে পারে নি। বর পাল্টে গেছে এটা নিয়ে তো কান্নাকাটিই চলেছে সারাক্ষণ।
চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে ফটাফট কয়েকটা সেলফি তুলে নেয়। এক চিলতে হাসে তুলতুল। দীর্ঘ আট মাস পড়ে হাসলো। সায়ানকে বিয়ে করার জন্য এই হাসিটা না। এই হাসিটা হলো এই বিয়ে বিয়ে খেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার হাসি।
এই রুমে সোফা নেই। শুধু একটা খাট ড্রেসিং টেবিল আলমারি আর টেবিল। সায়ান যে তুলতুলকে খাটে জায়গা দেবে না এটা তুলতুল জানে। তুলতুল সায়ানের সাথে বেড শেয়ার করতেও চায় না।
ওই বাড়ি থেকে আসার সময় একটা সুতোও আনে নি। সাহেদা বেগম আনতে দেয় নি। কিন্তু তুলতুল এখন পড়বে কি? বিয়ের ভাড়ি লেহেঙ্গা পড়ে কতখন থাকব?
কিন্তু থাকতেই হবে। কারণ এই মুহুর্তে কোথাও জামাকাপড় পাবে না।
হাই তুলে তুলতুল। অনেক দিন শান্তিতে ঘুমতে পারে নি। এখন লম্বা একটা ঘুম দরকার।
কিন্তু কোথায় ঘুমাবে? আশেপাশে দেখতে থাকে।
খাটের পেছনের দিকটায় ঘুমনো যায়। ওই খানে কেউ দেখবে না।
তুলতুল খাটের পেছনে একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে। যাতে সায়ান এসে ওকে না দেখতে পায়। দেখলে নিশ্চয় গলা টিপে মেরে ফেলবে? নয়ত ছাদ থেকে ফেলে দেবে। যেভাবেই হোক মার্ডার করবেই তুলতুলকে। কিন্তু তুলতুল মরতে চায় না। বাঁচতে চায়।
আর বাঁচতে হলে সায়ানের সামনে যাওয়া যাবে না।
গলা শুকিয়ে আসে তুলতুলের। ঢোক গিলে খাটের পেছনে বসে থাকে।
রাত দুইটা ছুঁই ছুঁই। সায়ান এখনো বাসায় ফেরে নি। সাহেদা বেগম চিন্তিত মনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে৷
এক ঘন্টা হলো এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আর কতোখন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে?
শান সুমু সোহেল মিয়া কেউ খান নি রাতে। সায়ানকে ছাড়া ওরা কেউ খাবে না।
সাহেদা বেগম কল করে সায়ানকে।
বাড়ির কাছেই গাড়িতে বসে ছিলো সায়ান। সায়ানের পাশেই পাখি বসে আছে।
ফোন বেজে ওঠে সায়ানের।
বিরক্ত হয় সায়ান। স্কিনে মা নামটা দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“কে কল করেছে?
পাখি সায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে
সায়ান পাখির দিকে এক পলক তাকায়।
” মা
ছোট করে বলে।
“ধরো
ফোনের দিকে ইশারা করে বলে পাখি।
সায়ান ফোন রিসিভ করে।
” কোথায় তুই আব্বা? তুই জানিস আমারা কেউ খাই নি? তোর বাবার ঔষধ আছে রাতে সে ঔষধও খায় নি।
কি শুরু করেছিস তুই? আমি চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছি।
এক নাগারে কথা গুলো বলে সাহেদা বেগম।
“মা রিলাক্স। আমি বাড়ি আসছি।
” পাঁচ মিনিট দিলাম তার মধ্যে তোকে বাড়ি দেখতে চাই আমি।
বলেই খট করে ফোন কেটে দেয়।
সায়ান দুই হাতে মাথা চেপে বসে।
“এনি পবলেম?
পাখি জিজ্ঞেস করে। তারপর আবার নিজেই নিজের মাথায় চাটি মারে।
” আমিও বোকার মতো জিজ্ঞেস করছি। জানিই তো পবলেম। যার জন্য এই রাত দুপুরে আমাকে এখানে বসিয়ে রেখেছো। তুমি চাইলে বিয়েটা আটকাতে পারতে। কিন্তু নাহহহ
মা যা বলবে তাই শুনবে। ওকে শুনেছো। ভালো করেছো। একসময় যাকে ভালোবাসতে তাকেই লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছো। শুকরিয়া আদায় করো।
তা না এখন আবার আমার কাছে হেল্প চাইছো কি করে তাকে দুরে সরাবে। বাসা থেকে বের করবে।
তুমি এক্সজেকলি কি চাও?
সায়ান চোখ বন্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“তুমি আমাকে বলেছো আমি অন্যায় করেছি ওই মেয়েটার সাথে মেনে নিয়েছি।
আমি ওই মেয়েটাকে কন্টিনিউ টর্চার করেছি। মেনেছিয়েছি।
এখন আমি চাইছি না ওই লোভী মেয়েটাকে খুন করে নিজের রেপুটেশন নষ্ট করতে।
তাই তোমার থেকে হেল্প চাইছি ওই মেয়েটাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর জন্য। ভালোই ভালোই যদি মেয়েটাকে বের করতে না পারি না
তাহলে চাপকে বাসা থেকে বের করবো বলে দিলাম।
জাস্ট নিতে পারছি না আমি।
চোয়াল শক্ত করে বলে সায়ান।
পাখি গাড়ির ছিটে মাথা রাখে।
” চলো আমার সাথে। দুরে কোথাও পালিয়ে যাই। কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকি। আর এখানে রটিয়ে দেই আমি আর তুমি পালিয়েছি।
মেয়েটা এমনিতেই চলে যাবে। পরে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিও।
সায়ান চোখ পাকিয়ে তাকায় পাখির দিকে। ঢোক গিলে পাখি। একটু হাসার চেষ্টা করে।
“মজা করছি ইয়ার,
সিরিয়াসলি কেনো নিচ্ছো?
সায়ান কিছু বলে না। পাখি কাচুমাচু হয়ে বসে।
” আমি তো একটা মেয়ে সায়ান। এতো রাত ওবদি বাইরে আছি বাবা মা টেনশন করছে। আমাকে যেতো হবে।
শান্ত গলায় বলে পাখি।
“ওকে যাও
শক্ত গলায় বলে সায়ান।
পাখি দমে যায়। বুঝতে পারে সায়ান রেগে যাচ্ছে।
” সায়ান আমি
“যেতে বলেছি আমি
ধমক দিয়ে বলে পাখিকে।
তুমি তো কোনো সাজেশন দিতে পারবে না। তো তোমাকে আমার দরকার নেই।
যাও
সায়ানের ধমকে কেঁপে ওঠে পাখি। তরিঘরি করে গাড়ি থেকে নামে। পাখি নামতেই সায়ান গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে পাখির। মাঝরাতে মাঝ রাস্তায় ছেড়ে গেলো ওকে। একবার ভাবলোও না মেয়েটা একা যাবে কিভাবে? এতোটা কেয়ারলেস সায়ান?
শার্ট ফ্রকটা টেনে টেনে হাঁটুর ঢাকতে চেষ্টা করে পাখি। ফলাফল শূন্য। উঁচু জুতোটা খুলো হাতে নেয়। যখন তখন বখাটে ছেলেদের পাল্লায় পড়তে পারে।
বাবাকে কল করে গাড়ি পাঠাতে বলে।
….
বাড়ি ফিরে ভাই বোনকে ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে তারপর রুমে এসেছে। এই মুহুর্তে সায়ানের প্রচন্ড ঘুম প্রয়োজন।
রুমের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয় সায়ান। ফুল একদম পছন্দ না ওর।
রুমের চারদিকে চোখ বুলায় সায়ান। তুলতুলকে দেখতে পায় না। ভ্রু কুচকে ফেলে সায়ান।গেলো কোথায় স্টুপিটটা?
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। হাত থেকে ঘড়ি খুলে ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখে। আয়নায় নিজেকে একবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সায়ান।
” ওই মেয়েটার সাথে রুম শোয়ার করা সম্ভব না। আবার মায়ের কথা অমান্য করে অন্য রুমে শিফট হওয়াও সম্ভব না।
ঠান্ডা মাথায় কিছু একটা করতে হবে। যাতে শাপও মরে লাঠিও না ভাঙে।
খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি গুলো একটু বড় হয়েছে। আগের তুলনায় অনেকটা ফর্সা হয়ে গেছে। ইদানীং জীম করা হয়। তাই একদম ফিট দেখায়।
“এই রুমে কেউ থাকলে তাকে বলছি। আমি দশ মিনিটের জন্য ওয়াশরুমে যাবো। তো দশ পরে এসে যেনো এখানে কাউকে না দেখি।
গলা উঁচু করে বলে সায়ান।
সায়ানের কথা তুলতুলের কান ওবদি পৌছায় না। কারণ তুলতুল অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে। মাথার কাছে একটা কয়েল আর পায়ের কাছে একটা কয়েল জ্বালিয়ে শুয়েছে। খাটের পাশে চিপা জায়গা পেয়ে মশারা ওখানে বাসা বেঁধেছে।
খাটের পয়া জড়িয়ে আরামসে ঘুমিয়ে আছে তুলতুল
সায়ান ফ্রেশ হয়ে রুমে আসে। এখনো রুমে কেউ নেই।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সায়ান। যাক আপদটা ঘাড় থেকে নেমেছে।
নিশ্চয় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে।
ভালোই হয়েছে।
সায়ান লাইট বন্ধ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে শুয়ে পড়ে।
দু চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কয়েলের ধোঁয়ার গন্ধে ঘুমতে পারছে না। ধোঁয়া একদম সায়ানের নাক এসে লাগছে।
কিন্তু সায়ান তো কয়েল জ্বালায় নি। তাহলে?
এক লাফে উঠে বসে সায়ান।
লাইট জ্বালায়। খাটের বাম সাইড থেকো ধোঁয়া আসছে। সায়ান উঁকি দেয়।
মুহুর্তেই সায়ানের মাথা গরম হয়ে যায়। দাঁত কটমট করে।
কয়েলের ধোঁয়া তুলতুলের নাকেও লাগছে। তাই তুলতুলের ঘুম ভেঙে যায়।
চোখ খুলেই একজোড়া লাল চোখের সম্মুখীন হয় তুলতুল। ভয় পেয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠে বসতে যায় আর ওই লালা চোখ ওয়ালা মানুষটা মাথার সাথে গুতা খায়।
এবার তুলতুল তুই শেষ।
ভয়ে ভয়ে তুলতুল একটু একটু করে সরে এসে প্রাণপনে এক দৌড় দিতে যায়। লেহেঙ্গারে বেঁধে পড়ে যায়।
যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়।
মনে মনে আওড়াতে থাকে কথাটা তুলতুল।
সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ানের চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে।
তুলতুল দুই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
“প্লিজ আমাকে মার্ডার করবে না। আমি বাঁচতে চাই। এখনো নাতিনাতনির মুখ দেখা বাকি।
দুই কাঁদো কাঁদো গলায় বলে।
” মার্ডার করবো না। খুন করবো এখন।
আশেপাশে কিছু খোঁজে সায়ান।
“এইবার বেঁচে গেলে আর কখনোই এই রুমে ঢুকবো না। কিন্তু আমাকে বাঁচাবে কে?
চলবে
.