#আমার তুমি পর্ব ৭
#তানিশা সুলতানা
“এই যে খাট ছুঁয়ে বলছি আমি ওসব আপনাকে বলি নি।
তুলতুল ভয়ে ঢোক গিলে খাট ছুঁয়ে বলে।
সায়ান এক পা এক পা করে এগোচ্ছে।
” আচ্ছা তাহলে কাকে বলছিলি?
কপাল কুচকে দুই ভ্রুর মাঝে আড়াআড়ি ভাজ ফেলে বলে সায়ান।
এবার কি বলবে তুলতুল? কাকে বলছিলো?
“বল কাকে বলছিলি? তুলতুলের পাশে বসে বলে সায়ান।
কেঁপে ওঠে তুলতুল। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। হাতে থাকা নুডলসের বাটি কাঁপা কাঁপা হাতে খাটের পাশে রাখে।
” কাঁপা-কাঁপি শেষ হলে বল?
বিরক্ত হয়ে ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে বলে সায়ান।
“ওওওওই তত
তুলতুল তুতলিয়ল কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার মধ্যে সায়ান এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে। তুলতুলের কোলে মাথা রেখে কোমর জড়িয়ে ধরে।
চমকে ওঠে তুলতুল। সারা শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে যায়। জমে শক্ত হয়ে বসে। চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
” আমি যেমনই হই না কেনো, আমি কিন্তু শুধুই তোর। তুই শুধু আমার। আর আমি তোর।
কিছু একটা ছিলো সায়ানের কন্ঠে। কানে মনে হলো ঠান্ডা কিছু ঢুকে গেলো। মনের মাঝে ধুকবুক করছে। চোখ খোলার সাহস নেই। আমি তোর কথাটা একদম বুকের পা পাশে গিয়ে বিঁধেছে তুলতুলের।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
কোমরে থাকা সায়ানের হাতের ওপর হাত রাখে তুলতুল।
“কিহহহহ
সায়ান চোখ বন্ধ করে ছিলো। তুলতুল হাতের ওপর হাত দেওয়াতে চোখ খুলে জিজ্ঞেস করে।
তুলতুল বলতে চাইছে হাত দুটো সরান কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে পারছে না।
তা দেখে সায়ান মৃদু হাসে। হাত দুটো আরও একটু শক্ত ধরে। মাথাটা আরও একটু কাছে নিয়ে আসে।
এবার সায়ানের শ্বাস একদম তুলতুলের পেটের ওপর পড়ছে। অস্বস্তি বেরে যাচ্ছে তুলতুলের।
” মাথায় হাত বুলিয়ে দে
সায়ান আবার চোখ বন্ধ করে বলে।
“হাতটা সরান প্লিজ
মিনমিনিয়ে বলে তুলতুল। কথাটা শেষ করেই জোরে শ্বাস টানে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ করে ফিরলো।
” কেনো?
সায়ানের এরকম প্রশ্নে চোখ খুলে তুলতুল। সায়ান ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয় তুলতুল। অদ্ভুত লাগছে সায়ানকে। এই সায়ানকে চেনে না তুলতুল। না কি আগে কখনো এভাবে তাকানো হয় নি লোকটার দিকে। লোকটার চাহনিটা বুকে গিয়ে লেগেছে তুলতুলের। বেহায়ার মতো আবারও তাকাতে ইচ্ছে করছে সেই গভীর নীল মনিওয়ালা চোখদুটো দিকে। কিন্তু এভাবে তাকালে লোকটা কি ভাববে?
ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে চোখ দুটো নামিয়ে রাখে। বাম হাতটা সায়ানের চুলে ডুবিয়ে দেয়।
এই লোকটাকে তো ও সয্য করতে পারে না। তাহলে কেনো হাত ডুবিয়ে দিলো লোকটার চুলে? সাথে সাথে হাত সরিয়ে নেয় তুলতুল।
“উঠুন আমি পায়ে ব্যাথা পাচ্ছি।
স্পষ্ট গলায় বলে তুলতুল।
সায়ান বিরক্ত হয়।
” আমি তোর পায়ে একটুও ভয় দেই নি। এটা তুই তো জানিস আর আমিও জানি। অযথা ডিস্টার্ব করছিস কেনো আমাকে।
কপাল কুচকে বলে সায়ান।
তুলতুলের রাগ হয়। ওর কোলে শুয়ে আবার ওকেই কথা শোনানো হচ্ছে। ইচ্ছে করছে চুলগুলো টেনে দেই। ইচ্ছেকেই কেনো বেঁধে রাখবে তুলতুল? একদম রাখবে না।
তুই হাত দিয়ে জোরে টান দেয় সায়ানের চুলে। তারপর তৃপ্তির হাসি হাসে। নিশ্চয় লোকটা ব্যাথা পেয়েছে।
তুলতুলকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সায়ান এক গাল হাসে।
“ভালোই লাগছিলো। আবার টেনে দে।
হাসি মুখটা চুপসে যায় তুলতুলের। এই লোকটাকে কিছুতেই জব্দ করা যাচ্ছে না।
” একটা কথা বলি তুলতুল?
তুলতুলের পেটে মুখ গুঁজে বলে সায়ান। অস্বস্তি এসে ভর করে। ভীষণ অস্বস্তি। এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় তুলতুল। অদ্ভুত অনুভূতি। দমকটা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
তুলতুল সায়ানের চুল ধরে একটু সরানোর চেষ্টা করে। এক চুলও সরাতে পারলো না। সায়ান মৃদু হাসে।
“আমি না চাইলে তুই সারাজীবন চেষ্টা করলেও আমাকে এক চুলও সরাতে পারবি না।
তুলতুল কিছু বলে না এই কথার বিপরীতে কি বলা উচিত জানা নেই তুলতুলের। তাই চুপ থাকাই শ্রেয়।
” খাবার লাগছে?
সায়ান নেশাতুল গলায় প্রশ্ন করে। চমকে ওঠে তুলতুল।
দ্রুত মাথা নারায়। মানে হ্যাঁ
সায়ান মুখটা সরায়।
“কিছু বলতে চাইছিলাম বলি?
মুখটা ঘুরিয়ে তুলতুলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
তুলতুল সায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলে। এটা দেখে মৃদু হাসে সায়ান।
” হুমম বলেন
তুলতুল মুখ ঘুরিয়ে বলে
“তোমাকে ভালো রাখতে নয়,
আমি নিজেকে ভালো রাখতে তোমাকে চাই…
একটু ভালো থাকতে দে আমায় প্লিজ।
সায়ানের কন্ঠে আজকে আকুতি ছিলো যেটা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে তুলতুল।
কিন্তু সায়ানের কথার অর্থ বুঝে উঠতে পারছে না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সায়ানের মুখের দিকে।
“আই প্রমিজ আর কখনো তোর গায়ে হাত তুলবো না। ভুল করতে শুধু বকে দেবো। একটুও কষ্ট দেবো না তোকে। প্রমিজ।
প্লিজ এই বাড়ি ছেড়ে যাস না।
সায়ান এক লাফে উঠে বসে। তুলতুল আবার চমকে ওঠে। সায়ান তুলতুলের দুই গালে হাত দেয়।
” দেখ তুই যদি চলে যাস তাহলে ট্রাস্ট মি তোকে আমি হোস্টেল থেকে তুলে এনে দুরে কোথাও নিয়ে আটকে রাখবো। আর কখনো আমার মুখটা ছাড়া আর কারো মুখ দেখতে পারবি না।
এটা কি ভালো হবে বল?
আতঙ্কে ওঠে তুলতুল।
সায়ান মুখে যা বলে তাই করে এটা জানা আছে তুলতুলের। যদি সত্যিই এমন কোথাও নিয়ে যায় তখন?
“বল না যাবি না।
মুখের ওপর পড়ে থাকা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয় সায়ান। তুলতুল এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
” যাবো না।
ছোট করে বলে।
সায়ান এক গাল হাসে।
তুলতুলের গলা টেনে দেয়।
“আমার তুলা পাখি
বলে চলে যায়।
তুলতুল গালে হাত দিয়ে চোখ বড়বড় করে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হয়ে গেলো বোঝার চেষ্টা করছে।
শান আর সুমু খাটের তলায় থেকে বের হয়। ওরাও তুলতুলের মতো অবাক।
” এটা কি হলো?
সুমু তুলতুলের কাঁধে হাত রেখে বলে।
ছিটকে ওঠে তুলতুল। ওর জানা মনে এখানে ও একাই ছিলো তাহলে।
তাকিয়ে দেখে শান আর সুমু হা করে তাকিয়ে আছে। তুলতুল নরেচরে বসে।
“তোরা তিন ভাই বোনই সুবিধা বাদি মানুষ। নিজেদের প্রয়োজনে নরম আর বাকি সবার প্রয়োজনে গরম। ভীষণ রেগে আছি আমি।
পা ভালো থাকলে এখান থেকে চলে যেতাম। কিন্তু অফসোস।
গাল ফুলিয়ে বলে তুলতুল।
” বোইন পা ভালো থাকলে তুই আর কি কি করতি একটু বল তো?
সুমু জিজ্ঞেস করে।
শান এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।
“যাবি তোরা এখান থেকে।
তুলতুল চিল্লিয়ে বলে।
” কি হচ্ছে এখানে? তুলতুলকে জ্বালাচ্ছিস কেনো?
সাহেদা বেগম রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
নরেচরে বসে শান আর সুমু।
“মা ওদের স্বভাবই তো বিরক্ত করা।
বলতে বলতে সাহেদা বেগমের পেছনে সায়ান ঢোকে।
” তুই তো খুব ভালো তাই না?
সুমু মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“অবশ্যই ভালো আমি। তাই না তুলতুল?
সুর টেনে জিজ্ঞেস করে তুলতুলকে।
তুলতুল বাঁকা চোখে তাকায় সায়ানের দিকে। একদম ভালো ঠেকছে না লোকটার হাবভাব।
” তোকে মাতব্বরি করতে হবে না। চল সবাই খেতে দেবো।
“সে নাহয় যাবো। কিন্তু তুলতুল যাবো কিভাবে?
মিটমিট করে হেসে বলে সায়ান।
ঢেড় বুঝতে পারছে এখন সায়ানেরই ওকে কোলে করে নিতে হবে। আর এটাই তো সায়ান চায়। তবে সায়ান খুব ভালো ছেলে। তাই মা বলবে তার পরই কোলে নেবে।
” সেটা তোকে ভাবতে হবে। তুই যা তো এখান থেকে।
সাহেদা বেগম কর্কশ গলার বলে।
সায়ানের হাসিমাখা মুখটা চুপসে যায়। কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
শান আর সুমু মুখ চেপে হাসছে।
“তাহলে কি তুলতুল খাবে না মা?
আবারও প্রশ্ন করে সায়ান।
” বললাম তো তোকে ভাবতে হবে না।
“আহা মা বুঝতে পারছো না। তুলতুল তো ভাইয়ার বোন হয়। আর বোনের চিন্তা ভাই করবে না বলো?
চোখ পাকিয়ে তাকায় সায়ান শানের দিকে।
” তুলতুল আম্মা আমি হাত ধরলে তুই যেতে পারবি?
ওদের কথায় কান না দিয়ে বলেন সাহেদা বেগম।
“হ্যাঁ ফু
সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় তুলতুল। সায়ান চোখ পাকিয়ে না বলতে বলছে। আর চোখ দিয়েই বোঝাচ্ছে না না বললে খবর আছে।
তুলতুল এবার কি করবে?
” কি আম্মা বল
সাহেদা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
“তুলতুল একটা ঢোক গিলে।
” পায়ে বব্যাথা পারবো না।
থেমে থেমে বলে তুলতুল।
অতোটাও ব্যাথা না কেউ হাত ধরলে অনায়াসে যেতে পারবে।
সায়ান এক গাল হাসে।
“বললাম না ও হাঁটতে পারবে না। মন খারাপ করিস না তুলতুল। আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।
বলে সায়ান তুলতুলের দিকে এগিয়ে যায়।
” তুলতুল কোথাও যাবে না। আমি আর সুমু তুলতুলের সাথে খাবো এখানেই।
মায়ের কথায় সুমু আর শান হো হো হেসে ওঠে। সায়ান চুপসে যায়।
এরকম মা থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হয় না।
“আজকে রাতে আমি আর সুমু ঘুমাবো তুলতুলের সাথে।
এই কথা শুনে সায়ান ঠাস করে বসে পড়ে।
মা যে ওকে আর কিছুতেই তুলতুলের আশেপাশে ঘেসতে দেবে না সেটা সায়ান বেশ বুঝতে পারছে।
ফোঁস করে শ্বাস নেয় সায়ান।
সায়ান আর রাতে খায় না। না খেয়েই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।
খাওয়ার মাঝে সুমুর ফোনটা বেজে ওঠে। চোখ ঘুরিয়ে ফোনের স্কিনে তাকায়। ” আশিক” নামটা ভেসে ওঠে।
ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে সুমুর।
“মা আমার খাওয়া শেষ।
বলেই প্লেট নিয়ে চলে যায় সুমু।
সাহেদা বেগম সন্দেহিন চোখে তাকায় মেয়ের দিকে। তুলতুলও বেশ অবাক হয়।
চলবে
কোন চরিত্রটা আপনাদের বেশি ভালো লেগেছে?