- আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকার
- আত্মহত্যা নিয়ে গল্প
- ডিপ্রেশন আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস
- ডিপ্রেশন নিয়ে আর্টিকেল
- suicide status bangla
- সুইসাইড স্ট্যাটাস বাংলা
১.আত্মহত্যার কারণ ও প্রতিকার
বাসাবোতে ক্লাস সিক্সে পড়ুয়া একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেন করেছে পরে বলছি। তার আগে বলেনতো ক্লাস সিক্সে পড়া একটা মেয়ে আত্মহত্যার কী বুঝে?
ভূতের ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর বয়সে একটা মেয়ে আত্মহত্যার মতন ভয়ানক কাজ করতে কী করে সাহস করে বলতে পারবেন?
মেয়েটা আসলে আত্মহত্যা করে নাই, সে লুকিয়েছে! তার মনেহয়েছে আমাকে লুকাতে হবে সমাজ থেকে বাবা মা থেকে, পরিবার থেকে! আলমারির পেছনে লুকালেও কেউ না কেউ বের করে আনবে তাকে তাই সে এমন এক জায়গায় লুকিয়েছে যেন কেউ তাকে খুঁজে বের করতে না পারে!
মেয়েটির ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করে তা টিকটক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় মেয়েটির এলাকার দুই ছেলে আর পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে সে আত্মহত্যার পথটাই বেছে নেয় যদিওবা এটা আত্মহত্যা না, এটা খুন, এটা হত্যা!
“সেক্স”! আমার মনেহয় আমাদের দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত শব্দ “সেক্স” আবার গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা শব্দ এই “সেক্স”। আবার এই দেশের জনসংখ্যা বিশ কোটির উপরে! মাঝেমাঝে চিন্তা করি এই সেক্স বাদ দিয়ে এই দেশের জনসংখ্যা বিশ কোটি হয় কী করে? বাতাসে না জ্বীন দিয়ে?
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়ে উভয়ের মধ্যেই পরিবর্তন আসে। মানসিক, শারীরিক সব দিক দিয়েই আসে। আচ্ছা কয়জন বাবা মা এই সময়টা সন্তানকে নিয়ে তার শারীরিক মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন? এই বয়সটা থেকেই একটা ছেলে বা মেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে তো কখনো এই আকর্ষণ নিয়ে কথা বলেছেন নিজের ছেলে মেয়ের সাথে? কখনো বলেছেন সন্তানের সাথে কোন ভালো লাগাটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা লাগে? আবার কোনটা অন্যায় চাহিদা?
লজ্জা লাগে? লজ্জা শরম বিসর্জন দিয়েইতো সন্তান উৎপাদনে নেমেছিলেন তো সেই সন্তান রেপিস্ট হয় কেন? কারণ আপনি আপনার ছেলে বা মেয়েকে কখনো শেখান নাই সেক্স কী, দেন নাই কোনো যৌন শিক্ষা। আপনি আপনার ছেলে বা মেয়েকে শেখান নাই কেউ বললেই তুমি তোমার শরীর প্রদর্শন করবা না যেন সে তোমার ভিডিও ধারণ করবে!
আপনি জানেনও না আপনার কত আপন আত্মীয় স্বজন দিয়ে আপনার সন্তান এবিউজ হচ্ছে কারণ আপনি তাকে শেখানই নাই কোনটা ব্যাড টাচ! আপনি তাকে শেখান নাই তার প্রাইভেট পার্ট কেউ ধরতে পারবে না। কেউ তাকে সেক্সুয়াল এবিউজ করলেও সে ভাববে এটা খেলা!
টিভিতে নায়ক নায়িকা চুমো দিলেই টিভির চ্যানেল ঘুরিয়েছেন আর তখনই সে বুঝে নিয়েছে চুমো নিষিদ্ধ জিনিস! অথচ কখনো তাকে শেখান নাই চুমো পবিত্র ব্যাপার! বাবা মা সন্তানকে দেয়, সন্তান বাবা মাকে দেয় তেমনি প্রেমিক প্রেমিকাও চুমো দেয় এমনকি বন্ধু বান্ধবরাও চুমোর আদানপ্রদান করে! কিন্তু তার জন্যে বয়স হতে হবে, সম্পর্ক পোক্ত হতে হবে তার আগে না। আবার দুইটা মানুষ তাদের দুজনের মধ্যে ইচ্ছা ভালোবাসার সম্পর্ক হলেই কেবল চুমো দেয়া যাবে নাহয় জোর করে কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে চুমো দিলে চুমোর মতন পবিত্র জিনিসও অন্যায় এবং অপরাধ হবে! এখন টিভির চ্যানেলে এই যৌনতার দৃশ্য আসলে চ্যানেল ঘুরিয়ে এই ম্যাসেজ দিবেন না এটা নিষিদ্ধ বরং ম্যাসেজ হোক এটা প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষের একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ক!
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের কৌতূহল সৃষ্টির শুরু থেকেই! কিন্তু সেক্সতো নিষিদ্ধ কিছু না! সেক্স মানুষের জৈবিক চাহিদা অধিকার কিন্তু তা সংযম করার উপায় একটা মানুষ জানবে নৈতিকতা থেকে ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে!
আমরা একটা সময় ব্যস্ত থাকতাম পড়ালেখার পাশাপাশি গল্পের বই নিয়ে খেলাধুলা নিয়ে এমনকি পারিবারিক আড্ডা দিয়ে! সামাজিক পরিবর্তন এগুলার অনেককিছু আমাদের থেকে কেড়ে নিয়েছে এখন বাচ্চাদের হাতে হাতে মোবাইল আর নেট। এখন ছুরি আপনি কাউকে খুন করতেও ব্যবহার করতে পারেন আবার কারো জীবন বাঁচাতেও পারবেন ছুরি দিয়ে!
এখন মোবাইলের গুগল থেকে ইউটিউব থেকে শিক্ষা যেমন একটা ছেলে বা মেয়ে নিবে তেমনি পর্ণ সাইট বা যৌন উত্তেজক বিষয়াদিও সে পাবে! আপনি একটা ছুরি সন্তানের হাতে দিয়ে আপেল কাটতে দিয়েও নজর রাখেন সে যেন হাত না কাটে তেমনি একটা মোবাইল দিয়েও নজর রাখা উচিত সে কোন সাইট গুলা ঘুরে মোবাইলে!
আপনার সন্তানের ফ্রেন্ড সার্কেল কেমন কাদের সাথে উঠবস তার খবর বাবা মা হয়ে আপনি রাখবেন না? তাহলে কে রাখবে?
দেখেন আপনার সন্তান নারী পুরুষের ব্যাপার গুলো কোনো না কোনো ভাবেই জানবে! আমাদের বাবা মা কোনোদিন আমাদের নারী পুরুষের ব্যাপার গুলো নিয়ে বলে নাই, জানায় নাই! তবুও আমরা শিখেছি, কিভাবে? বন্ধু, বাড়ির কাজের ছেলে মেয়ের থেকে বা কোনো এক গোপন উপায়ে! এখন আমাদের সময় এই গোপন বিষয় গুলো অনেক ভাবেই গোপন ছিলো আমরা চাইলেই সেক্সুয়াল কোনো কন্টেন্ট হাতের কাছে পেতাম না, এখন খুব সহজেই পাচ্ছে! তাই এর সম্পর্কে সঠিক শিক্ষাটাই সন্তান পাক!
বন্ধু বান্ধব কিংবা ভুল জায়গা থেকে আপনার সন্তান যৌনতা নিয়ে ভুল কিছু না জানুক!
বলছি না বাবা মাকেই সন্তানকে সঠিক যৌন শিক্ষা দিতে হবে কিন্তু আসলেই কি আমাদের দেশে সঠিক যৌন শিক্ষা জানার মাধ্যম আছে? শেখানো হয় স্কুল কলেজ গুলোতে এই বিষয়ে?
আপনি লজ্জিত হয়ে সন্তানকে সঠিক শিক্ষা না দিলে লজ্জা থেকে বাঁচতে আপনার সন্তান আত্মহত্যা না করুক।
কারো সাথে অন্যায় হলে সেটা লজ্জার নয় বরং যে অন্যায় করেছে সে লজ্জিত হোক সবার কাছে!
২.আত্মহত্যা নিয়ে গল্প
আত্মহত্যা
-এই যে আপু, এত রাতে এখানে কি করছেন?
-আত্মহত্যা করতে আসছি। আপনার কোনো সমস্যা?
-হ্যাঁ
-কি সমস্যা?
-এখানে বসে আমি গাঁজা খাই
-তো?
-তো এখানে আপনার লাশ পাওয়া গেলে কাল থেকে পুলিশ আসবে। গাঁজা খাব কোথায়?
-অদ্ভুত লোক আপনি! একজন মানুষ আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। আর আপনি গাঁজা নিয়ে পড়ে আছেন?
-এটাকে বলে নিজের চরকায় তেল দেওয়া
-আপনার চরকায় তেল দেওয়া হয়ে গেলে এখান থেকে ফুটেন
-তা চলে যাব। তার আগে একটা প্রশ্ন আছে
-কি?
-আত্মহত্যা কি দিয়ে করবেন?
-বিষ খাব
-সেই পুরোনো টেকনিক। ট্রাই সামথিং নিউ, উইম্যান
-আমাকে উইম্যান বললেন কেন?
-ওমা, ট্রান্সজেন্ডার না কি আপনি?
-ট্রান্সজেন্ডার কেন হব?
-তাহলে? দেখে তো মনে হয় না আপনি মেইল
-আরে মেইল কেন হব?
-তাহলে আপনি কি? ভুত না কি? এই রে, আজকে মাল খাওয়ার আগেই পিনিক হলো!
-অসহ্য লোক আপনি। আমার বয়স ২৩, তেইশ বছরে মেয়েকে কেউ উইম্যান বলে?
-এবার বুঝছি
-বুঝলে যান
-যাচ্ছি, আরেকটা প্রশ্ন
-বলুন?
-কেন করবেন?
-কি কেন করব?
-আত্মহত্যা?
-তা জেনে আপনি কি করবেন?
-না মানে গল্পটা জেনে রাখলাম। বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় বলতাম। একটু বাচাল স্বভাবের কি না!
-শচীনটা ধোঁকা দিছে
-শচীন কে?
-আমার বিএফ
-বিএফ মানে?
-বয়ফ্রেন্ড
-ধোঁকা দিলো বুঝলেন কি করে?
-হি হ্যাড সেক্স উইথ মাই বেস্টি। আই হ্যাভ দ্যাট ভিডিয়ো
-বেস্টি মানে কি?
-বেস্টফ্রেন্ড
-ওহ, মজা নিলো তারা, আর আপনি আত্মহত্যা করবেন?
-আমি শচীনকে অসম্ভব ভালোবাসি
-তো?
-তো কি? ধোঁকা খেয়েছেন কোনোদিন? খেলে বুঝবেন কতটা কষ্ট হয়
-না তা খাইনি। তবে জয়েন্ট খেয়েছি। এত ভালো লাগে। ট্রাই করবেন না কি একবার?
-জয়েন্ট কি?
-গাঁজা গাঁজা
-আমি কোনোদিন সিগারেটও খাইনি। আর আপনি আমাকে গাঁজা সাধছেন?
-আপনি তো কোনোদিন আত্মহত্যাও করেন নি। তবুও ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে আসছেন। তাও আবার ওল্ড টেকনিক!
-অসহ্য লোক তো আপনি
-মন্দ বলেন নি, হাতে ওটা কিসের টিউব?
-বিষের
-অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট না কি?
-হ্যাঁ
-নিজেকে ছাড়পোকা মনে হয়?
-না তো
-তাহলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট কিনেছেন কেন?
-এটাই পেয়েছি। আর আমি বিষ সম্পর্কে অত বেশি জানি না
-খুব স্বাভাবিক, জানলে বিষ খেয়ে মরতেন না। আচ্ছা এর ভেতর ৩০ টা ট্যাবলেট আছে। সব মনে হয় না দরকার হবে আপনার। বাকিগুলো আমাকে দিয়ে দিন। রুমে আজকাল ছাড়পোকা ভালোই ডিস্টার্ব করে।
-আচ্ছা আপনি কি রক্তে মাংসের মানুষ?
-কেন বলুন তো!
আমি আত্মহত্যার কথা বলছি অথচ আপনি একটু বিচলিত নন?
-আমি মানুষ তবে বিচলিত নই!
-কেন?
-আপনার জীবনের গুরুত্ব আপনার কাছেই বেশি থাকা উচিত। সেই আপনিই সেটা ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছেন। এখানে আমি বিচলিত হয়ে কি করব?
-উফফ
-তবে আপনি আমার সাথে জয়েন্ট খেতে পারেন। হান্নানকে দিয়ে গত সপ্তাহেই কুষ্টিয়া থেকে আনিয়েছি। একের জিনিস!
-গড
-আবার গডকে টেনে আনছেন কেন?
-জীবনে কখনো বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়েছেন?
-অসংখ্যবার
-কি করেছেন তখন?
-জীবনকে উপভোগ
-কিভাবে?
-মদ খেয়েছি, গাঁ
-গাঁজা খেয়েছেন তাই তো?
-আরে আরে, আপনি বুঝলেন কি করে?
-আপনাকে দেখেলেই বোঝা যায়
-বলেন কি!
-আপনি আগাগোড়া একটা মাদকাসক্ত
-আর আপনি মরনাসক্ত
-আই হ্যাভ আ রিজন এটলিস্ট
-নট ইনাফ টু ডাই
-কথায় তো মনে হয় পড়াশোনা জানেন
-তা জানি বৈকি! দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর
-ক্যাম্পাসেই তো খেতে পারেন, এই ভাগাড়ে কেন আসছেন?
-আপনাকে ফলো করতে করতে
-মানে?
-আপনার মোবাইল আর হল কার্ড কোথায়?
-ব্যাগেই আছে
-চেক করে দেখুন
-এ কি, পাচ্ছি না তো
-এগুলো তো?
-আপনার কাছে কি করে গেলো?
-মুদি দোকানের ওখানে ফেলে এসেছিলেন। ডাক দেওয়ার আগেই রিকশায় ওঠে এখানে চলে আসলেন। ফলো করতে করতে আমিও চলে এসেছি
-তাহলে আপনি এখানে গাঁজা খেতে আসেননি
-আমি গাঁজা খাই না। শুধু আপনার সাথে কথা বলা শুরু করতে চেছিলাম।
-কেন?
-লাল টুকটুকে একটা মেয়ে এত রাতে এই ভাগাড়ে কি করে তা জানতে কার না ইচ্ছে করবে?
-ওহ
-একটা কথা বলি আপনাকে
-বলুন
-জীবন কোনো তুচ্ছ ব্যাপার না
-জানি
-জেনেও তাচ্ছিল্য করাটা অন্যায়
-আই যাস্ট লস্ট মাই মাইন্ড
-দেন ফাইন্ড ইট। হোয়াট ইজ লস্ট ক্যান বি ফাউন্ড!
-এটা কি আপনার কথা
-না, মুভির ডায়লগ!
-একটা উপকার করবেন?
-মাইন্ড খুঁজে দিতে হবে?
-না, আমাকে হলে পৌঁছে দেবেন?
-হল গেট তো এখন বন্ধ থাকার কথা
-তাও ঠিক
-রাতে মেডিকেল মোড়ে আড্ডা দিয়েছেন কখনো?
-না
-আমার সাথে যেতে পারেন
-গিয়ে কি করব?
-জীবন দেখবেন
-কিভাবে?
-সেটা চায়ের দোকানে বসলেই দেখতে পারবেন।
-কি দেখা যায় ওখানে?
-এক মুহুর্ত বেঁচে থাকতে মানুষের আহাজারি। কাছের মানুষদের ক্লান্তিহীন দৌড়ঝাঁপ। দিনের পর দিন অনিদ্রা। টিকে থাকার লড়াই!
-চলুন তবে
-এতক্ষণে আপনার নামটাই তো জানা হলো না
-আইডিকার্ডে নাম দেখেন নি?
-খেয়াল করিনি
-সাবা
-সুবাসী বাতাস
-মানে?
-আপনার নামের অর্থ
-এতকিছু কি করে জানেন?
-ঐ যে বললাম, একটু বাচাল স্বভাবের কি না! জানতে হয়!
৩. ডিপ্রেশন আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস
ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছি প্রায় আধঘন্টা পার হয়ে গেছে, এখন অব্দি কেউ বন্ধ ঘরের দরজায় এসে কড়া নাড়েনি।
অথচ সবকিছু সুন্দর আর সহজ থাকলে, এই মুহূর্তে আমার অফিস থেকে ফিরে বিকেলের চা খেতে খেতে পত্রিকা পড়ার কথা ছিলো! স্ত্রী সন্তান নিয়ে হাসিখুশি বিকেলের আড্ডা খুব একটা হয়নি।
রুমকির সাথে আমার যখন বিয়ে হয়, তখন অফিস থেকে ফেরার পর মাঝেমধ্যেই দুজনে মিলে বেশ সময় কাটাতাম।
—————–
ছাপোষা কেরানীর চাকুরীতে তখন সবে সবে জয়েন করেছি, যেটুকু বেতন পেতাম তার কিছু নিজের হাতখরচ রেখে, বাকিটা অসুস্থ মা কে পাঠাতাম। সেবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার পর মা’র ভীষণ পীড়াপীড়িতে, দুঃসম্পর্কের চাচাতো বোনের সাথে খুব ছিমছাম ভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো।
গুনে গুনে বিয়ের ঠিক তিনদিন পর মা ওপারে চলে গেলেন। নতুন বিয়ে করা বউকে তো আর একলা বাড়িতে রাখতে পারিনা, নিয়ে আসলাম শহরে আমার এক কামড়ার ভাড়া বাড়িতে।
একা থাকা যেমন তেমন, কিন্তু সংসার সামলানো বিরাট ব্যাপার! আজ এটা লাগে তো কাল ওটা! তবুও দুজনের নতুন নতুন সংসার টেনেটুনে ভালোই চলে যাচ্ছিলো। এক কামড়ার বাসায় ঠিক সংসার টা গোছানো হয়ে ওঠেনা, তাই নতুন বাসা নিতে হলো। সবসময় সাধ্যমতো রুমকি কে খুশী রেখার চেষ্টা করেছি। তবু অভিযোগের শেষ ছিলোনা। ধীরে ধীরে দুজনে দুই সন্তানের বাবা মা হলাম।
আজকালকার দিনে সন্তান মানুষ করা ভীষণ কষ্ট। এতো খরচ সামলাতে আমার মতো ছা-পোষা কেরানীর হিমশিম খেতে হয়। খরচ বাড়ে, কিন্তু পকেটের টাকা বাড়েনা৷ দুটো টাকা বেশী কামানোর আশায় দু’তিন ঘন্টা বেশী সময় কাজ করি। ক্লান্ত এই নিজেকে টেনে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রোজ নটা কি দশটা বেজেই যায়।
সেদিনও বাসে ঝুলে, ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে আলুথালু হয়ে বাসায় ঢুকেই দেখি মা মেয়েতে অসম্ভব চেঁচামেচি হচ্ছে! এ নিত্যনতুন কিছু নয়৷ প্রতিনিয়ত ছেলে মেয়ে দুটো হাড় চিবিয়ে খায়! ওদের কোনও সাধ ই তাদের বাবার সাধ্য বুঝে হয়না।
আমাকে দেখেও মা মেয়ে কেউই থামলোনা। আমি পাশ কাটিয়ে শোবার ঘরে এসে হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে বসতে না বসতেই, রুমকি শশব্যস্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো৷ ওর চোখে মুখে প্রচণ্ড রাগ আর বিরক্তির ছাপ।
– হ্যাঁ গো, আমাকে না হয় চাকরানির মতে রাখসো,আমি কিছু বলিনা। ছেলে মেয়ে দুটোকেও কি ওরকম রাখবে নাকি? ওরাও তো বড় হইসে, ওদের ও তো অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। খেয়াল রাখো এগুলো কিছুর?
– কি হইসে, আমাকে একটু খুলে বলো তো। না বললে কিভাবে বুঝবো বলো?
– হ্যাঁ তোমাকে তো সব গিলে খাওয়াতে হয়! মেয়ের একটা ল্যাপটপ দরকার, ওদের কীসব কাজ করতে হয়, ওকে কাল পরশুর মধ্যেই কিনে দিবে। পিছিয়ে যাচ্ছে সবার থেকে।
-এখন কীভাবে কি? মাসের শেষ, টাকাও নাই হাতে, গত মাসেই তো অর্নব ফোন কিনলো ওটার ধার ই তো শোধ হয়নি। বোঝনা কেনো?
– এতো বুঝিনা বাপু, টাকা পয়সা না থাকলে, দুটো শখ আবদার মেটাতে না পারলে জন্ম দিসিলা কেনো ওদের?
– আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
খেতে যাওয়ার কথা বলে রুমকি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে খেতে গেলাম। আমার মেয়ে শশী চুপচাপ বসে আছে খাবার প্লেট নিয়ে। আমার দেখেই ভীষণ মায়া লাগলো। আসলেই কতো ছোট হতে হয় ওদের বন্ধুদের সামনে।
– কিরে মা খাচ্ছিস না কেনো?
– বাবা, খাওয়া গলা দিয়ে নামবেনা। মা নিশ্চয়ই তোমাকে বলেছে। আমার জিনিস টা প্রয়োজন দিবে মানে দিবেই। সবসময়ই কিছু দেওয়ার সময় দাওনা, তোমার টাকা থাকেনা। পরশুর মধ্যেই লাগবে আমার।
সাতপাঁচ না ভেবেই মেয়ে কে বললাম আচ্ছা মা দিবো।
পরদিন অফিস শেষে বিজয় সাহেবের কাছে গেলাম, উনার বেশ বড়ো এসবের দোকান। বেশ কিছুদিন আগেই অর্ণবের ফোন উনার কাছ থেকে কিনেছিলাম। কমদামের কিছু ল্যাপটপ দেখাতে বললে, উনি আমাকে কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ দেখান। কিছু টাকা উনাকে দিয়ে বাকিটা বাকিতে রেখে, শেষমেশ সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ ই কিনে বাড়িতে আসি।
বারবার মনে হচ্ছিলো আহারে মেয়েটা আমার কতো খুশি হবে!
বাড়ি ফিরতেই শশী খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে ব্যাগটা খুলে। কিন্তু সাথে সাথেই মন খারাপ হয়ে যায় ওর!
-এটা কি এনেছো বাবা?? পারবেনা বললেই পারতে, এসব ব্যবহার করা জিনিস কেনো আনবে? এরকম ছোটলোকি করার কোনও মানে হয়না!
মেয়ের এরকম হতবুদ্ধি হয়ে বেয়াদবি করাটা আমি ঠিক নিতে পারিনি। ঠাস করে মেয়েকে সজোরে চড় বসিয়ে দেই।
রুমকি দৌড়ে এসে এ অবস্থা দেখে প্রচন্ড রেগে গেলো!
– নিজে না হয় ফকির এর মতো জীবন কাটাইসো!আমার বাচ্চাগুলাকেও ফকির বানায়ে রাখসো! লাগবেনা তোমার দুই পয়সার জিনিস। চুরি করে হলেও বাপ সন্তানের আশা মেটায়, আর তুমি? আরেক মানুষের ব্যবহার করা জিনিস নিয়ে আসলা? লাগবেনা। শখ পূরন করতে না পারলে মরে যাওনা কেনো?
বলেই সদ্য কিনে আনা ল্যাপটপটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো রুমকি!
চোখের সামনেই ভেঙে ফেললো, এখনো শোধ না হওয়া জিনিসখানা! শাপ শাপান্ত করতে করতে মেয়েকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রুমকি।
জানিনা কেনো, অসম্ভব অপমান বোধে আমি চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলাম না!
বার বার মনে হচ্ছিলো কেনো করছি এতসব? কিসের জন্য দু’দন্ড আমি নিজেকে বিশ্রাম দেই না! কেনো এতো পরিশ্রম! সবার কাছে ছোট হয়ে এর ওর থেকে ঋণ করে সংসার চালাই! কাদের জন্য? যাদের কাছে আমার ছিটেফোঁটা সম্মান নেই? শুধু কি দেয়া নেয়ার সম্পর্ক?!
দরজা বন্ধ করে দিই। ফ্যানে ঝুলে আছি আধঘন্টা পার হয়ে গেছে। কেউ আসেনি এখনো! আচ্ছা দেখার পর কি শশী অনেক কাঁদবে? রুমকি কি আছড়ে পড়বে আমার ওপর?!
পরুক, তবু আমি জানবো, এখানে কোন ভালোবাসা ছিলোনা, শুধু দেয়া নেয়া ছিলো!
#ছোটগল্প
লেনাদেনা!
৪.ডিপ্রেশন নিয়ে আর্টিকেল
কাকলি মারা যাওয়ার মাস খানেক পরও আমি তার মেসেজ চেক করি নি। যেদিন সে আত্মহত্যা করেছিল সেদিনও সে আমাকে মেসেজ দেয়। যা আমি “তার মেসেজ কোনো দিন পড়ব না” বলে ইগ্নোর করে ফেলে রেখেছিলাম।
চাইলে মেসেজটি এখন পড়ে ফেলতে পারি। জানতে পারি মৃত্যুর আগে সে আমাকে কী জানাতে চেয়েছিল? কিন্তু আমি এখনো মেসেজটি পড়ছি না।
এখনও যে অভিমানের বশে পড়ছি না তা নয়। এখন পড়ছি না কারণ এক ধরণের বিষণ্ণতা আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাকে। মনে হচ্ছে এটাই কাকলির দেওয়া শেষ কিছু আমার জন্য। যা একবার পড়ে ফেললেই হারিয়ে যাবে। এটা এমনই শেষ যার পর আমি দেয়ালে মাথা আছড়ে মরে গেলেও আর কিছুই ফেরত পাব না।
দীর্ঘ ১৩ বছর পর সে আমার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আমার জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিল। আমি শুনি নি।অবহেলা করেছি। যে অবহেলা সে আমাকে করেছিল একদিন। প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম হয়ত।
কিন্তু হায়! সে বরাবরই এসব ক্ষেত্রে জয়ী। এবারো আমাকে হারিয়ে নিজে জয়ী হয়ে গেলো ।
কাকলি, আমার কাকলি! যে ছিল আমার বাল্য প্রেম, আমার একমাত্র সুতীব্র ভালোবাসা, আমার জীবনের সবচেয়ে পরম পাওয়া যে আমাকে বিনা কোন অপরাধে , কিছু না জানিয়ে, না বলে আরেকজনের বউ হয়ে গিয়েছিল।
এখনো সেই দিনের তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা অনুভব করতে পারি। এখনো চোখের সামনে দেখতে পাই কাকলিকে বিয়ের সাজে, লাল জামদানিতে , গাঢ় কাজলে, লাল টিপে, হাতভর্তি লাল চুড়িতে, কপাল ঢাকা সোনালি ঘোমটাতে, আর পাশে বসা একজন অচেনাকে।
আমি স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে তার বিয়ের যাবতীয় সকল কার্যক্রম দেখেছি। দেখেছি তার একটা নীল কাগজে সই করা, তার মাথা নিচু করে কবুল বলা, দেখেছি তার দুহাত দিয়ে মালা পরিয়ে দেওয়া সেই অচেনাকে। যে হাত নিয়ে আমি সারাক্ষণ খেলা করতাম, যখনই যে কাছে আসত। যে হাত মুখের কাছে নিয়ে আমি গন্ধ শুকতাম। মনে হত লেবু পাতার গন্ধ পাচ্ছি। তাকে একদিন জিজ্ঞেসও করেছিলাম “তোমার হাত থেকে লেবু পাতার গন্ধ করে কেন সব সময়?”
“তোমার কাছে আসার আগে লেবু পাতা ধরে আসি তাই”
“কেন, লেবু পাতা ধরে আস কেন?”
“কারণ আমার বারান্দায় লেবু গাছ আছে। তুমি যখন বাসার সামনের গলি দিয়ে আস, আমি বারান্দা দিয়ে দেখতে পাই। তোমার সেই আসার দৃশ্য দেখার সময় নিজের অজান্তেই একটা লেবু পাতা ছিঁড়ে ফেলি গাছ থেকে”
শুনে আমি আবারও দু হাত মুঠো করে কাকলির হাত নেই, আবারো গন্ধ শুকি।
এখন মনে হয়, কতশত বার আমি গিয়েছি কাকলির কাছে। কতশত বার সে লেবু পাতা ছিঁড়েছে।
কতশত বার ঐ লেবু গাছ আমাদের অভিশাপ দিয়েছে।
সেই অভিশাপের জন্যই কি কাকলি আমার হয় নি?
আমাকে কাকলির পরিবার মেনে নেয় নি কোনো অবস্থাতেই।
কাকলি ছিল তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। সেই একমাত্র সন্তানকে তারা তাদের ইচ্ছে মত কাউকে দিতে চেয়েছিল। তখন আমি ছিলাম মাত্র কলেজ পাশ বেকার। আমার কাছে কারো মেয়ে দেওয়ার কথাও না।
চাকরি খুঁজতে আমি ঢাকা আসি। মাসে মাসে বাড়ি যাই, বাড়ি গিয়েই ছুটে যাই কাকলির কাছে। দেখতে পাই কাকলি মলিন থেকে মলিনতর হচ্ছে। চোখের নিচে কাজলের জায়গায় দুশ্চিন্তার কালি জায়গা করে নিয়েছে।
এবং একদিন কথা মত দেখা করতে গিয়ে দেখি সে আসে নি। সেই কলেজের পেছনে পুকুরপাড়ে যেখানে সে এসে আমাকে উজ্জীবিত করে তুলত তার উপস্থিতে সেখানে সে নেই।
বুকটা যে আমার সেদিন থেকেই খালি হয়ে যাবে সে ভাবতেও পারি নি।
সেদিন আসে নি তার পরের দিন আসবে ভেবে আমি ফিরে আসি।
রাতে নির্ঘুম জেগে থেকে ভাবতে থাকি, মানে নিজেকে বুঝাতে থাকি সে আসবে কালকে। না এসে কি পারবে থাকতে?
সে আসে নি তার পরের দিনও। আমি তার বাড়ির আশেপাশে ঘুর ঘুর করতে থাকি যদি তাকে দেখতে পাই এই আশায়।
সারাদিন বাড়ির আশেপাশে ঘুরেও কাকলির দেখা পাই নি। পাই নি তার লেবু পাতা মাখা হাতের স্পর্শ।
আমি চোখে অন্ধকার দেখতে থাকি। কাকলির হাতের লেবু পাতার গন্ধ নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হতে থাকি। ভেতরে ভেতরে ভাঙতে থাকি। তীব্র দহনে শরীর মন পুড়তে থাকে।
একদিন খবর আসে কাকলির বিয়ে।
শুনেই ভেতরটা আমার জড়পদার্থ হয়ে যায়। কোনো কিছু অনুভব করার ক্ষমতাও আমি হারিয়ে ফেলি।
আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরতে থাকে , একটা চিঠিও কি সে দিতে পারে নি? একবার বলতেও পারে নি তার বিয়ের কথা?
খবরটি আমাকে তার বান্ধবীই দেয়। তাকে জিজ্ঞেস করি “কাকলি কি আমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করে নি? কিছু বলে নি আমাকে বলার জন্য?”
বান্ধবী নত মাথায় জবাব দেয় “না”
আমি যেন মাটির সাথে মিশে যাই।
সেদিন সারারাত রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি। ভেতরটা আমার চিৎকারে ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু মুখে আমি নির্বাক ছিলাম।
শূন্যতা কাকে বলে তার অস্তিত্ব টের পেয়েছিলাম সেদিন। বুকের হাহাকারে আমি বিধ্বস্ত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ি।
না, কাকলিকে আর ফিরে পাবার কোনো আগ্রহ ইচ্ছে চাহিদা জাগে নি।
শুধু একবার তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করেছিল,
“একটা বার আমাকে জানান গেলো না? একটা বার আমাকে বলতে পারলে না “চল ,পালিয়ে যাই এখান থেকে। দীর্ঘ ২ মাসে কি একবারও সুযোগ হয় নি আমাকে একটু জানানোর ? এও কি বিশ্বাসযোগ্য কাকলি?”
সবকিছু মলিন হয়। ভালোবাসাও মলিন হয়ে যায়। নক্ষত্র অবশ্যই মরে যায়।
১৩ বছরে আমার বিয়ে হয়, দুটো দেবশিশু জন্ম নেয়। অফিসের উচ্চপদে আসীন হই। বাড়ি হয়, সম্পত্তি হয় যা যা কাকলির বাবার চাহিদা ছিল সবই হয়।
সুখী মানুষ বলতে যা বুঝায় তা আমি ছিলাম নিঃসন্দেহে। আমার স্ত্রীকে আমি ভালবাসি, আমার সন্তান দুটো আমার জীবন। আমার কোনো ইচ্ছে অপূরণীয় ছিল না।তবে অতৃপ্তি ছিল। ছিল বলেই সেই প্রশ্নটা বুকের ভেতর কোথাও নীরবে বড় হতে থাকে। বড় হয়ে প্রকাশ্যে আসে যখন আমি মেসেঞ্জারে অজানা কারো প্রোফাইল থেকে মেসেজ পাই ।
“কেমন আছো ?আমাকে চিনতে পেরেছো? আমি কাকলি।”
নামটা পড়েই আমার সর্বাঙ্গ যেন জ্বলে গেল। তীব্র আক্রোশে মোবাইলটা ছুড়ে মারতে চাইলাম। অদৃশ্য কারো প্রতি সমস্ত ক্রোধ, রাগ, হিংসা উথলে ফেলতে চাইলাম।
অকল্পনীয় রাগে আমি থরথর করে কাঁপতে থাকি। কাকলির প্রতি যে আমার এত রাগ জমে আছে সেটা সেদিনই বুঝতে পারি।
কখনই সিন করি নি ওই প্রোফাইলের মেসেজ। শুধু দেখতে পেতাম প্রতিদিন মেসেজ আসছে।
জমতে থাকে। যেভাবে আগে তার চিঠি জমত আমার পড়ার টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর।
মেসেজ দেওয়ার পর্ব চলতে থাকে প্রায় এক মাস ধরে।
এই এক মাস আমি এক অমানবিক আনন্দে ভাসতে থাকি। কাউকে অবজ্ঞা করার মধ্যেও আনন্দ আছে সুখ আছে তৃপ্তি আছে সে আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি। সেই সুখকে পৈশাচিক সুখ বলে সেটি বুঝতে আমার দেরি হয়ে যায়।
এরপর মেসেজ আসে না। আমার ঠোটের কোণে একটা বক্র হাসি উঁকি দেয় । বাহ! এত অল্পেই হেরে গেলে কাকলি?
অদৃশ্য রাগ জমতে জমতে কবে যে দানবের আকার ধারণ করেছে সেও বুঝতে পারি নি।
দানবটির মৃত্যু ঘটে যখন আমি বাড়ি যাই পরিবার নিয়ে। বেড়াতে, শীতের ছুটিতে।
গিয়ে যখন আমি বাজারে যাই আড্ডা দিতে, তখন কেউ একজন আমাকে বলে “কাকলি তো মরি গেছে বদ্দা”
আমি কথাটি আক্ষরিক অর্থেই শুনতে পারি নি। জিজ্ঞেস করি “কে মারা গেছে?”
“কাকলি, মনে নাই? তোঁর লগে স্কুলে আছিল”
আমি বুঝতে পারি কিছুটা। কিন্তু তখনও পুরোটা নয়।
“গেল হপ্তায় গলায় হাস দি মরি গেছে”
গলায় কী দিয়েছে? যেন আমি বুঝতে পারি নি। যেন আমি বুঝেও না বুঝার ভান করছি। যেন আমি এসব শব্দের মানে বুঝি না। যেন আমি এসব শব্দ শোনার জন্য জন্ম নেই নি।
“হাস, হাস। আরে গলাত দড়ি দিছে দড়ি”
আরও স্পষ্ট করে বলতে যাচ্ছিল লোকটা। আমি উঠে দাঁড়াই তড়িৎ বেগে। সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায় আমার দিকে।
আমি সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করেই হাঁটা দেই। সন্ধ্যা হয়ে আসে ধীরে ধীরে। গ্রামের শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন অগ্রিম সন্ধ্যা।
সেই সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে আমি কাকলিদের বাড়ির পেছনে চলে আসি। আমাকে কেউ বলে দেয় নি। কিন্তু মনে হয় কেউ যেন বলেছে যে এখানেই কাকলি থাকতে পারে।
এবং সে ছিল সেখানে। মাটির অনেক আস্তরণের ভেতরে। লাশ হয়ে ।
সন্ধ্যার আলোতে তার কবর দেখা যাচ্ছিলনা স্পষ্ট। কিন্তু আমি স্পষ্ট তার নাম পড়তে পারছিলাম,
“কাকলি আক্তার। জন্ম ৫ নভেম্বর ১৯৭৬। মৃত্যু ২৯ ডিসেম্বর ২০১২”
বুকটা ধক করে উঠে। ২৯ ডিসেম্বর থেকেই সে আমাকে মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে।
আমি কম্পিত হাতে মোবাইল বের করি। তার মেসেজ পড়তে চাই। তার শেষ মেসেজ।
কিন্তু আমি পারি না পড়তে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ি কাকলির কবরের পাশে।
বুকে তীব্র যন্ত্রণা আর মাথায় তীক্ষ্ণ ব্যথা নিয়ে আমি ফিরে আসি চিরচেনা জগতে। দিন যায় কিন্তু কাকলির মেসেজ পড়া হয় না। পড়তে আমার ভয় লাগে। এটাই শেষ অংশ কাকলির। এটা একবার পড়া হয়ে গেলে আর কিছুই নতুন থাকবে না তার। আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
কিন্তু এই অবশিষ্ট অংশকে বহন করতে করতে একসময় আমি ক্লান্ত হই। এবং সেই ক্ষণ আসে যখন আমি তার শেষ অংশ পড়তে শুরু করি ।
– হাই, আমি কাকলি। চিনতে পারছ?
– চিনতে পারার কথা না অবশ্য। বহু বছর আগের আমি।
– মেসেজ দেখছ না মনে হয়। ইচ্ছে করে দেখছ না নাকি আসলেই খেয়াল করছ না?
– শোনো তোমাকে কিছু বলতে চাই আমি। একবার মেসেজ দেখবে?
– মামুন, একবার মেসেজ দেখো। আমি জানি তোমার বউ বাচ্চা আছে। আমারও আছে জানো তো। দুটো মেয়ে। তোমারও শুনেছি দুইটি ছেলেমেয়ে।
– মামুন প্লিজ,একবার কিছু বলো। মেসেজ দেখো। তোমাকে মেসেঞ্জারে কলও দিয়েছি। সত্যি অবহেলা করছো?
– রেগে আছো আমার উপর? রাগ করাই স্বাভাবিক। তোমাকে না বলে তোমার থেকে দূরে সরে গেছি। তোমাকে না বলে বিয়েও করে ফেলেছি। একবার কি আমার কথা শুনবে?
– শুধু একবার শুনো আমার কথা। এরপর আর কোনোদিন তোমাকে বিরক্ত করব না।
– তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি অনেক। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমার কোনো উপায় ছিল না তোমাকে জানানোর যে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা আমার সাথে কেউ না কেউ থাকত যাতে আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারি। তোমাকে চিঠিও লিখতে না পারি।
– মামুন,আমি ক্লান্ত। ১৩ বছর আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে থাকতে ক্লান্ত। ভাবছ, এতবছর পর কেন আবার পুরাতন স্মৃতি নিয়ে টানছি? তোমার কাছে হয়ত পুরাতন কিন্তু আমার কাছে এখনো সেই লেবু পাতার ঘ্রাণের মত তরতাজা।
আমি এখনো তোমাকে ভালবাসি। এই ভালোবাসা আমাকে সুখী হতে দিলোনা মামুন। আমার স্বামীটি আমাকে ভালই বাসে। কিন্তু আমি শুধু সংসার করে গেছি। ভাল তাকে বাসতে পারি নি। শুরুতে অনেক কষ্ট হলেও মনে করেছি ধীরে ধীরে ভুলে যাব তোমাকে। কিন্তু যত দিন গড়াচ্ছিল তত তুমি আমার মননে স্বপনে অস্তিত্বে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছিলে। এই জড়িয়ে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারছি না আর। প্রতিদিন আমি আমার স্বামী সন্তানকে ঠকাচ্ছি। আমি ঘর করছি তার সাথে কিন্তু ভাল বাসছি তোমাকে। আমি থাকছি তার সাথে কিন্তু অপেক্ষা করি তোমার।
এই দ্বৈত জীবন বাঁচতে বাঁচতে আমি ক্লান্ত মামুন। ভীষণ ক্লান্ত। আর পারছি না।
এই অসীম জ্বালা আমাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু যাওয়ার আগে আমি তোমাকে শেষবারের মতো দেখতে চাই। শেষবারের মত একবার তোমাকে বলতে চাই, আমি তোমাকেই ভালবাসি। ভীষণ ভালোবাসি।
আমার এই অপারগতার জন্য আমায় ক্ষমা করো মামুন। আমায় ক্ষমা করো।
আমি যাচ্ছি। ভাল থেকো। মনে রেখো।
—————–
#লেবু_পাতার_অভিশাপ
ফারজানা নীলা
৫.suicide status bangla
আত্মহত্যা
-এই যে আপু, এত রাতে এখানে কি করছেন?
-আত্মহত্যা করতে আসছি। আপনার কোনো সমস্যা?
-হ্যাঁ
-কি সমস্যা?
-এখানে বসে আমি গাঁজা খাই
-তো?
-তো এখানে আপনার লাশ পাওয়া গেলে কাল থেকে পুলিশ আসবে। গাঁজা খাব কোথায়?
-অদ্ভুত লোক আপনি! একজন মানুষ আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। আর আপনি গাঁজা নিয়ে পড়ে আছেন?
-এটাকে বলে নিজের চরকায় তেল দেওয়া
-আপনার চরকায় তেল দেওয়া হয়ে গেলে এখান থেকে ফুটেন
-তা চলে যাব। তার আগে একটা প্রশ্ন আছে
-কি?
-আত্মহত্যা কি দিয়ে করবেন?
-বিষ খাব
-সেই পুরোনো টেকনিক। ট্রাই সামথিং নিউ, উইম্যান
-আমাকে উইম্যান বললেন কেন?
-ওমা, ট্রান্সজেন্ডার না কি আপনি?
-ট্রান্সজেন্ডার কেন হব?
-তাহলে? দেখে তো মনে হয় না আপনি মেইল
-আরে মেইল কেন হব?
-তাহলে আপনি কি? ভুত না কি? এই রে, আজকে মাল খাওয়ার আগেই পিনিক হলো!
-অসহ্য লোক আপনি। আমার বয়স ২৩, তেইশ বছরে মেয়েকে কেউ উইম্যান বলে?
-এবার বুঝছি
-বুঝলে যান
-যাচ্ছি, আরেকটা প্রশ্ন
-বলুন?
-কেন করবেন?
-কি কেন করব?
-আত্মহত্যা?
-তা জেনে আপনি কি করবেন?
-না মানে গল্পটা জেনে রাখলাম। বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় বলতাম। একটু বাচাল স্বভাবের কি না!
-শচীনটা ধোঁকা দিছে
-শচীন কে?
-আমার বিএফ
-বিএফ মানে?
-বয়ফ্রেন্ড
-ধোঁকা দিলো বুঝলেন কি করে?
-হি হ্যাড সেক্স উইথ মাই বেস্টি। আই হ্যাভ দ্যাট ভিডিয়ো
-বেস্টি মানে কি?
-বেস্টফ্রেন্ড
-ওহ, মজা নিলো তারা, আর আপনি আত্মহত্যা করবেন?
-আমি শচীনকে অসম্ভব ভালোবাসি
-তো?
-তো কি? ধোঁকা খেয়েছেন কোনোদিন? খেলে বুঝবেন কতটা কষ্ট হয়
-না তা খাইনি। তবে জয়েন্ট খেয়েছি। এত ভালো লাগে। ট্রাই করবেন না কি একবার?
-জয়েন্ট কি?
-গাঁজা গাঁজা
-আমি কোনোদিন সিগারেটও খাইনি। আর আপনি আমাকে গাঁজা সাধছেন?
-আপনি তো কোনোদিন আত্মহত্যাও করেন নি। তবুও ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে আসছেন। তাও আবার ওল্ড টেকনিক!
-অসহ্য লোক তো আপনি
-মন্দ বলেন নি, হাতে ওটা কিসের টিউব?
-বিষের
-অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট না কি?
-হ্যাঁ
-নিজেকে ছাড়পোকা মনে হয়?
-না তো
-তাহলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট কিনেছেন কেন?
-এটাই পেয়েছি। আর আমি বিষ সম্পর্কে অত বেশি জানি না
-খুব স্বাভাবিক, জানলে বিষ খেয়ে মরতেন না। আচ্ছা এর ভেতর ৩০ টা ট্যাবলেট আছে। সব মনে হয় না দরকার হবে আপনার। বাকিগুলো আমাকে দিয়ে দিন। রুমে আজকাল ছাড়পোকা ভালোই ডিস্টার্ব করে।
-আচ্ছা আপনি কি রক্তে মাংসের মানুষ?
-কেন বলুন তো!
আমি আত্মহত্যার কথা বলছি অথচ আপনি একটু বিচলিত নন?
-আমি মানুষ তবে বিচলিত নই!
-কেন?
-আপনার জীবনের গুরুত্ব আপনার কাছেই বেশি থাকা উচিত। সেই আপনিই সেটা ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছেন। এখানে আমি বিচলিত হয়ে কি করব?
-উফফ
-তবে আপনি আমার সাথে জয়েন্ট খেতে পারেন। হান্নানকে দিয়ে গত সপ্তাহেই কুষ্টিয়া থেকে আনিয়েছি। একের জিনিস!
-গড
-আবার গডকে টেনে আনছেন কেন?
-জীবনে কখনো বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়েছেন?
-অসংখ্যবার
-কি করেছেন তখন?
-জীবনকে উপভোগ
-কিভাবে?
-মদ খেয়েছি, গাঁ
-গাঁজা খেয়েছেন তাই তো?
-আরে আরে, আপনি বুঝলেন কি করে?
-আপনাকে দেখেলেই বোঝা যায়
-বলেন কি!
-আপনি আগাগোড়া একটা মাদকাসক্ত
-আর আপনি মরনাসক্ত
-আই হ্যাভ আ রিজন এটলিস্ট
-নট ইনাফ টু ডাই
-কথায় তো মনে হয় পড়াশোনা জানেন
-তা জানি বৈকি! দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর
-ক্যাম্পাসেই তো খেতে পারেন, এই ভাগাড়ে কেন আসছেন?
-আপনাকে ফলো করতে করতে
-মানে?
-আপনার মোবাইল আর হল কার্ড কোথায়?
-ব্যাগেই আছে
-চেক করে দেখুন
-এ কি, পাচ্ছি না তো
-এগুলো তো?
-আপনার কাছে কি করে গেলো?
-মুদি দোকানের ওখানে ফেলে এসেছিলেন। ডাক দেওয়ার আগেই রিকশায় ওঠে এখানে চলে আসলেন। ফলো করতে করতে আমিও চলে এসেছি
-তাহলে আপনি এখানে গাঁজা খেতে আসেননি
-আমি গাঁজা খাই না। শুধু আপনার সাথে কথা বলা শুরু করতে চেছিলাম।
-কেন?
-লাল টুকটুকে একটা মেয়ে এত রাতে এই ভাগাড়ে কি করে তা জানতে কার না ইচ্ছে করবে?
-ওহ
-একটা কথা বলি আপনাকে
-বলুন
-জীবন কোনো তুচ্ছ ব্যাপার না
-জানি
-জেনেও তাচ্ছিল্য করাটা অন্যায়
-আই যাস্ট লস্ট মাই মাইন্ড
-দেন ফাইন্ড ইট। হোয়াট ইজ লস্ট ক্যান বি ফাউন্ড!
-এটা কি আপনার কথা
-না, মুভির ডায়লগ!
-একটা উপকার করবেন?
-মাইন্ড খুঁজে দিতে হবে?
-না, আমাকে হলে পৌঁছে দেবেন?
-হল গেট তো এখন বন্ধ থাকার কথা
-তাও ঠিক
-রাতে মেডিকেল মোড়ে আড্ডা দিয়েছেন কখনো?
-না
-আমার সাথে যেতে পারেন
-গিয়ে কি করব?
-জীবন দেখবেন
-কিভাবে?
-সেটা চায়ের দোকানে বসলেই দেখতে পারবেন।
-কি দেখা যায় ওখানে?
-এক মুহুর্ত বেঁচে থাকতে মানুষের আহাজারি। কাছের মানুষদের ক্লান্তিহীন দৌড়ঝাঁপ। দিনের পর দিন অনিদ্রা। টিকে থাকার লড়াই!
-চলুন তবে
-এতক্ষণে আপনার নামটাই তো জানা হলো না
-আইডিকার্ডে নাম দেখেন নি?
-খেয়াল করিনি
-সাবা
-সুবাসী বাতাস
-মানে?
-আপনার নামের অর্থ
-এতকিছু কি করে জানেন?
-ঐ যে বললাম, একটু বাচাল স্বভাবের কি না! জানতে হয়!
৬.সুইসাইড স্ট্যাটাস বাংলা
#একটি লুঙ্গির আত্মহত্যা
ভার্সিটি বাদে সারাক্ষণ আমার রুমমেট লুঙ্গি পড়ে ঘুরে।লুঙ্গি যে তার খুব প্রিয় তাও না।বাধ্য হয়েই সে লুঙ্গি পড়ে তার নাকি জ্বালাপোড়া রোগ আছে। সারাদিন নাকি কোমরের নিচ থেকে টাখনু পর্যন্ত তার গরম লাগে।তাই খুশিমনে সে আরাম করে সারাদিন লুঙ্গি পড়ে থাকে।
সারাদিন লুঙ্গি পড়ে থাকে সেটা নিয়ে আমার আপত্তি না। আমারও লুঙ্গি পড়তে ভালো লাগে।আমার আপত্তি হচ্ছে সে লুঙ্গি সামলে রাখতে পারে না। জায়গায় অজায়গায় তার লুঙ্গি খুলে পড়ার রেকর্ড আছে। একদিন মেসের বাজার করতে গিয়েছিলাম দুইজনে তার দুই হাতে ব্যাগ আমারও সেম।সে সামনে আর আমি পিছনে। কিভাবে যেনো তার ঝুলঝুলা লুঙ্গিতে আমার পাড়া লেগে কোমড় থেকে ধপাস করে খুলে নিচে পড়ে যায়।বাজারের ব্যাগ ফেলে সে লুঙ্গি রেখেই দৌড়ে একটা ভবনের সিড়ির তলায় আশ্রয় নেয়।ভাগ্যিস নিচে জাঙ্গিয়া ছিলো।
আমি রাতে দেরীতে ঘুমাই। মাঝেমধ্যে কোনো কাজে মাঝরাতে লাইট জ্বালালে দেখা যায় লুঙ্গি তার মুখে উঠে আছে আর নিচে অপেক্ষমান ডিঙ্গি নৌকা সহ সদরঘাট দেখা যাচ্ছে
কি বিভৎস দৃশ্য।লজ্জায় তাকে বলতেও পারি না। বেশ কয়েকবার তাকে বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেখা যায় আমিই লজ্জায় বলতে পারিনা, আবার আমার লজ্জা সামলে বলতে চেষ্টা করি কিন্তু ও লজ্জা পাবে সে জন্য আর বলতে পারি না।
তো সেদিন সব লজ্জা ভেঙ্গে বলা শুরু করলাম
“বন্ধু রাতে তুমি লুঙ্গি পড়ে ঘুমাবানা” হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুমাবা,লুঙ্গি পড়ে ঘুমালে রাতে তোমার মঙ্গল গ্রহ দেখা যায়”
পাশ থেকে আরেক রুমমেট বলা শুরু করলো
“শুধু কি মঙ্গল গ্রহ?সাথে মঙ্গল গ্রহের দুইটা উপগ্রহ ও দেখা যায়”
বন্ধু তো এগুলো শুনে আমাদের খুব গালাগালি করলো।তার দাবী এগুলো সব মিথ্যা কথা।তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আমরা সব বানোয়াট কথা বলছি। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।পারলে যেনো আমরা প্রমান করে দেখাই।এবার আমার প্রচুর রাগ হলো।মনে মনে ভাবলাম দাড়া দেখাচ্ছি প্রমান।
সাত -আট রাতের মধ্যেই প্রমান পেয়ে গেলাম।ওয়াইফাই ডিস্টার্ব করছিলো। কি হয়েছে তা দেখার জন্য লাইট জ্বালিয়ে দেখি বন্ধু একপাশে ঘুমাচ্ছে আর তার লুঙ্গি বাবাজি কোমড় থেকে খুলে আরেক পাশে ঘুমাচ্ছে।আমি লুঙ্গিটা আস্তে করে নিয়ে ফ্যানের ডান্ডার সাথে ঝুলিয়ে দিলাম।
সকালে বন্ধুর “আমার লুঙ্গি কই লুঙ্গি কই” চিৎকারে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে দেখি সে বিছানার চাদর দিয়ে সদরঘাট ঢেকে দাড়িয়ে আছে। চোখের মধ্যে নাইট কোচের ড্রাইভারদের মত হালকা ঘুম নিয়ে বল্লাম “তোমার লুঙ্গি আর তোমার সাথে থাকতে চায় না, ওপরের দিকে তাকাও, সে রাগে -দুঃখে, ক্ষোভে- অপমানে ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
লিখাঃ দরজী নাঈম