#শারমিন আঁচল নিপা
পর্ব ৮
[Note: সবার আগে গল্প পেতে প্লিজ নীল লেখায় চাপ দিয়ে আমার দুটো পেইজে যারা লাইক দেন, নি দিয়ে দিন। Story with Achol, শারমিন আঁচল নিপা । Sharmin Achol Nipa ]
আনহারিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ফিয়না বিষয়টা জানার পর পরই হাসপাতালে ছুটে যায়। অফিসার আনামও সেখানেই ছিল তখন৷ ফিয়না সরাসরি অফিসার আনামকে জিজ্ঞেস করল
“আপনি কি অফিসার আনাম?”
ফিয়নার তাকে চিনতে সুবিধা হয়েছে কারণ সে আসার আগে অফিসার আনামের ডিটেইলস এবং ছবি দেখেই এসেছিল। তাই আনামকে চিনতে তার অসুবিধা হয়নি। অফিসার আনাম হালকা গলায় বলল
“আনহারি একদম স্বাভাবিক ছিল। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছিলাম। এমন সময় সে হয়তো সিসি টিভিতে কিছু একটা দেখে ভয় পেয়েছে তাই এমনটা হয়েছে। ডাক্তার এমনটাই বলেছে। এখনও জ্ঞান ফিরে নি। তবে ডাক্তার বলেছে সে এখন বিপদমুক্ত।”
ফিয়না বুঝতে পারছে না কী হয়েছে বা কী দেখেছে আনহারি। সে অফিসার আনামকে বলল
“ভিডিও ফুটেজটা কী সাথে আছে? আমি কি দেখতে পারি?”
অফিসার আনাম সম্মতিসূচক ইশারা দিয়ে মোবাইলটা বের করে ভিডিওটা দেখালো। ফিয়না বেশ মনোযোগ দিয়ে পুরো ভিডিওটা দেখে শেষ করল। তারপর মোলায়েম গলায় বলল
“আনহারির অনন্যার হাতের পুড়া দাগটা দেখে প্যানিক এটাক হয়েছে। সে পুড়া দাগ নিতে পারে না বিষয়টা এমন না। তবে লাভ শেপে পুড়া দাগ দেখেই এমন হয়েছে তার। তার মেয়ে টুলটুল ১ বছর আগে হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজেও তাকে আর পাওয়া যায়নি। যেদিন সে হারিয়ে যায় সেদিন টুলটুলের আয়ার হাতে কিডন্যাপার এমন পোড়া দাগ করে দিয়েছিল। সে টুলটুলকে হন্তদন্ত হয়ে খুঁজার পর টুলটুলের আয়ার কাছে কাহিনি জানতে চায়। তখন টুলটুলের আয়া নিরা বলে সে এবং টুলটুল মাঠেই খেলছিল। এর মধ্যে একজন এসে টুলটুলকে নিয়ে যেতে চায়। সে সময় বাঁধা দিলে তাকে এমন দাগ করে দেয়। এবং সে কিডন্যাপার নাকি টুলটুলের হাতেও এমন দাগ করে দেয়। টুলটুলের হাতে এমন দাগ করে দেয় শুনার পর সে নিরার হাতের দিকে তাকিয়ে দাগটা ভালো করে খেয়াল করে। খুব বাজেভাবে পুরা দাগ ছিল। আপার মাথায় চলে যায়, না জানি এ দাগ করার সময় তার মেয়ে কতটা কষ্ট পেয়েছে। এ বিষয়টা ভেবেই কষ্টে তার প্যানিক এটাক হয় সে সময়। কারণ টুলটুল বেশ আদরে বড়ো হয়েছিল। আর আপার মধ্যমনি ছিল। আজকে আপার এ কাটা দাগ দেখেই প্যানিক এটাক হয়েছে আমি নিশ্চিত। এখন তো মনে হচ্ছে অনন্যার সাথে আরও অনেক রহস্য জড়িয়ে আছে। আপার বাচ্চা হারানোর রহস্যও জড়িয়ে আছে। আর সবচেয়ে বড়ো বিষয় আমার ধারণা মেয়েটি অনন্যা না। এ নিশ্চয় কোনো আর্টিফিশিয়াল কিছুর মাধ্যমে চেহারা পরিবর্তন করে অনন্যার মতো হয়েছে আর আনহারির অভ্যাস গুলো রপ্ত করেছে। যেমন ভিডিওতে দেখাচ্ছে সে বারবার নাকে হাত দিচ্ছে। কানের কাছের চুলগুলো টেনে যাচ্ছে। এ কাজ গুলো আনহারির দিকে লক্ষ্য করলেও আপনি দেখবেন। তবে এ কাজ গুলো অনন্যা করত না। এ মেয়ে অনন্যা না এটা আমার ধারণা। কারণ অনন্যাকে আনহারির পালিত বাবা ওয়াজেদ চৌধুরি আনহারি ভেবে এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলে। সুতরাং অনন্যা মৃত। এরপর যে এ কাজ করতেছে সে কেবল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার লোভে করছে।”
অফিসার আনাম যেন গোলক ধাঁধায় তলিয়ে যাচ্ছে। কী হচ্ছে মিলানোর আগেই ডাক্তার এসে জানল আনহারির জ্ঞান ফিরেছে। অফিসার আনাম এ কথা শুনে ফিয়নাকে যেতে বলল আনহারির সাথে দেখা করার জন্য। তার কাছে মনে হয়েছে ফিয়নাকে দেখলে আনহারি একটু কমফোর্ট ফিল করবে। কারণ কাছের মানুষ পাশে থাকলে একটা শক্তি কাজ করে মনে।
ফিয়না অফিসার আনামের সায় পেয়ে আনহারির সাথে দেখা করতে গেল কেবিনে। আনহারি ফিয়নাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বসে রইল কিছুক্ষণ । তারপর হালকা গলায় বলল
“আমি মনে হয় আমার মেয়ের অপরাধীকে খুঁজে পেয়েছি। যেকোনো মূল্যে হলেও আমি অনন্যাকে খুঁজে বের করব৷ আমার মেয়ের খোঁজ পেতে হলেও আমি তাকে খুঁজে বের করব। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার মেয়ে অনন্যার কাছেই আছে। কোনো কিছু নিয়ে হয়তো অনন্যার রাগ আমার উপর আছে। আর সেই রাগ মিটাতেই সে এমনটা করছে। এখন লড়াইটা হবে একটা মায়ের। নিজের মেয়ের জন্য একটা মা কতটা শক্তিশালী হতে পারে এবার সেটা পুরো দুনিয়া দেখবে।”
ফিয়না কথাগুলো শুনে আনহারিকে জোরে জড়িয়ে ধরে বলল
“এমন কেন হয়ে যায় জীবন টা? যখনই ভালো থাকতে শুরু করি তখনই কালো এসে ঢেকে যায়। যেমনটা রৌদ্রময় নীল আকাশকে মেঘ ঢেকে ফেলে।”
ফিয়নার কথার প্রতিউত্তরে আনহারি বলে উঠে
“এরপর কালো মেঘ কেটে ঠিকই রৌদ্রময় নীল আকাশ ভেসে আসে। বরং আরও উজ্জ্বল হয়ে ভেসে উঠে।”
আনহারি নিজেকে সামলে নেয়। এখন আগের থেকে সে নিজেকে বেশি সুস্থবোধ করছে। মানসিক ট্রমা গুলো সে একদিকে সরিয়ে ফেলেছে। নিজের মধ্যেই যখন সুস্থ থাকার লাড়াই জেগে উঠে তখন কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না। সে চায় তার মেয়েকে ফিরে পেতে। এতদিন তার মনে হত তার মেয়ে বেঁচে আছে। তবে এখন সে নিশ্চিত তার মেয়ে বেঁচে আছে।
ফিয়না আনহারির হাতটা ধরে বলল
“আমি বের হলে অফিসার আনাম এখানে আসবে।”
কথাটা বলেই ফিয়না কেবিন থেকে বের হলো। সে বের হওয়ার পর অফিসার আনাম আনহারির সাথে দেখা করতে কেবিনে প্রবেশ করল। তারপর স্থির হয়ে বসে জিজ্ঞেস করল
“এখন শরীর কেমন?”
আনহারি বেশ কনফিডেন্স নিয়ে উত্তর দিল
“শরীর ভালো আপনার?”
আনহারির কনফিডেন্স দেখে আনাম খুশি হয়ে উত্তর দিল
“আমারও ভালো। আর ফিয়নার মুখে আপনার মেয়ের ব্যাপার টা শুনলাম। বিষয়টা বেশ খারাপ লেগেছে৷ আমি আপনার সাথে দুটো বিষয় নিয়েই কথা বলতে চাই। দুটো বিষয়েই আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আমি চাই যদি আপনার মেয়ে বেঁচে থাকে আপনার কাছে ফিরে আসুক। আবার চাই অনন্যা বেঁচে থাকলেও সে আপনাদের কাছে ফিরে আসুক।”
আনহারি কেবল হালকা হাসি দিয়ে সম্মতি দিল।
আনহারি একটু সুস্থ হওয়ায় বাসায় ফিরল। এদিকে রাতে যুক্তি তার রুমে বসে চুপচাপ হয়ে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই তার অনন্যার কথা মনে পড়ল। চেম্বারে বসে তার মুখ অভয়ব, কথা বলার ভঙ্গি ভাবতে লাগল। কীভাবে সে কথা বলেছিল কীভাবে তার মুখের এক্সপ্রেশনগুলো পরিবর্তিত হচ্ছিল সেগুলোই সে ভেবে ভেবে পর্যবেক্ষণ করছিল৷ একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার একটা সময় তার অদ্ভুত একটা বিষয় মনে হলো। সে সাথে সাথে ফিয়নাকে কল দিল। ফিয়না তখন কলটা ধরছিল না। যুক্তি ভেবে নিয়েছে হয়তো আনহারিকে নিয়ে ব্যস্ত তাই ফোনটা ধরছে না। কিন্তু বিষয়গুলো কেন তার আগে মনে হলো না? কেন মনে হলো না এরকম কিছু ঘটতে পারে। এমন সময় আচমকা চিৎকারে যুক্তি নড়ে উঠে। সে দ্রূত পায়ে ড্রইং রুমের দিকে এগিয়ে যায়। কারণ যুক্তি রুদিতাকে রুমে ঘুম পাড়িয়ে আসলেও রুদিতার চিৎকারটা ড্রইং রুম থেকে আসছিল। যুক্তি দৌড়ে গিয়ে চমকে উঠল। রুদিতা হাত চেপে ড্রইং রুমে পড়ে, ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে কাঁদতেছে। রুদিতার আয়াও ভয়ে নড়ে উঠেছে।
যু্ক্তি তাড়াহুড়ো করে রুদিতার কাছে গেল। রুদিতাকে জড়িয়ে ধরে রুদিতার হাতটা পর্যবেক্ষণ করে চমকে গেল। হাতটা লাভ শেপ হয়ে পুড়ে গেছে। সে দ্রূত আয়াকে বলল পানি আনতে আর বরফ আনতে। আয়া এক বালতি ভরে পানি আনল। রুদিতার হাতটা সেখানে ডুবিয়ে রাখল যুক্তি। তারপর হালকা বরফ দিতে লাগল। এতে করে রুদিতার যন্ত্রণা একটু কমেছে। তবে ফোসকা পড়ে গেছে। রুদিতার হাতটা বেশ কিছুক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর তুলা হলো। তারপর হাতে পুড়ার মলম লাগিয়ে রুদিতাকে কিছু ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিল যুক্তি। রুদিতার যন্ত্রণা একটু কমায় সে ঘুমিয়ে গেছে।
রুদিতা ঘুমানোর পর। যুক্তি রুদিতার আয়াকে জিজ্ঞেস করল
“কি হয়েছিল?”
রুদিতার আয়া বেশ ভয়ে ভয়ে বলল
“মুখোশ পরা একজন এসে রুদিতাকে রুম থেকে তুলে নিয়ে ড্রইং রুমে আসে। তারপর হাতে কী যেন দিয়ে চাপ দিয়ে চলে গেছে। দরজার লক লাগানো ছিল। তারপরও লক খুলে কীভাবে ঢুকেছে আমি জানি না।”
যুক্তি রুদিতার হাত ডুবানোর সময়ও লক্ষ্য করেছিল লকটা ভেতর থেকেই লাগানো। তাহলে কীভাবে একজন মানুষ ভেতরে ঢুকে আবার লক ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে বাইরে বের হবে! সে আয়াকে হালকা গলায় আবার জিজ্ঞেস করল
“লক কী তুমি পরে লাগিয়েছিলে?”
আয়া মাথা নেড়ে না বলল। কথাটা শুনে যুক্তির মাথায় অনেক কিছুই ঘুরছে। কিছুটা রহস্য জমাট বেঁধেছে আবার কিছুটা রহস্যের উন্মোচন হয়েছে। সে আয়াকে বলল
“তুমি যাও। আমি রুদিতার সাথে আছি।”
এর মধ্যেই ফিয়নার কল আসলো। সে সাথে উন্মোচিত হলো এক নতুন রহস্যের।
কপি করা নিষেধ