#শারমিন আঁচল নিপা
[নোট- ওয়েদার চেন্জে প্রচুর জ্বর + ঠান্ডা নিয়ে গল্প দিয়েছি। পর্ব একটু ছোটো হওয়ায় দুঃখিত। সারাদিন অফিস করে শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে]
ফিয়না কল দিয়ে জানাল আনহারি আগের থেকে সুস্থ। সে এখন বিপদমুক্ত। এদিকে যুক্তি ফিয়নাকে হালকা গলায় বলল
“টুলটুল কিডন্যাপের সময় টুলটুলের আয়া কে ছিল? সে এখন কোথায়? সে কি এখনও আনহারির সাথে আছে? তার নাম কী?”
ফিয়না হালকা গলায় বলল
“টুলটুলের আয়াকে টুলটুল হারানোর পরেই ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন কোথায় আছে জানা নেই। তার আয়ার নাম ছিল সায়েবা খাতুন নিরা। খুব বেশি বয়সী মেয়ে ছিল না। অল্প বয়সীই ছিল। হঠাৎ এ প্রশ্ন?”
যুক্তির মাথাটা ঘুরছে। তার মানে তার বাসার আয়া আর টুলটুলের আয়া একই। এতে মনে হচ্ছে এ নিরা মেয়েটার সাথে কিছু না কিছু সম্পৃক্ততা আছে। তাহলে এসবের পেছনে নিরার হাত আছে। ফিয়নার কথার ভাঁজে যুক্তির ভাবনা কাটে। সে আবার বলে উঠে
“কিছু কী হয়েছে? চুপ কেন?”
যুক্তির মনে হচ্ছে এখন এসব কথা বলা একদম উচিত না। যুক্তির বাসায় সে আর নিরায় আছে কেবল। এখন এগুলো নিয়ে আলোচনা করলে যদি নিরা শুনে তাহলে হিতে বিপরীত কিছু হতে পারে। সে নিজেকে সামলে হালকা গলায় বলল
“তেমন কিছু না। কালকে আনহারিকে দেখতে আসব রুদিতাকে নিয়ে। বেশ রাত হয়েছে। তুমি ও একটু বিশ্রাম করে নাও। অনেকটা ধকল গেছে তোমার উপর।”
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে নিরাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। যদিও নিরা স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে ছিল। যুক্তি কিছুটা কাঁপা গলায় বলল
“কিছু বলবে?”
নিরা হালকা গলায় বলল
“রাতে খাবেন না?”
যদিও যুক্তির পেটে ক্ষুধা অনেক তবে এ মুহুর্তে খাবার খাওয়াটাও তার সেইফ মনে হচ্ছে না৷ সে হালকা গলায় উত্তর দিল
“আমি খাব না। তুমি খেয়ে নাও। আর ঘরের লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও ঘুমিয়ে পড়ছি।”
কথাটা শুনেই নিরা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর যুক্তি তার ঘরের লাইটটা অফ করে, দরজাটা লক করে এবং ওয়ার্ম লাইটটা অন করে রাখে। রুদিতাকে সে নিজের কাছে রেখেছে এবং রুদিতা ঘুমাচ্ছেও। কিন্তু যুক্তির ঘুম আসছে না। এর মধ্যে সে লক্ষ্য করল নিরা বারবার পা টিপে টিপে তার দরজার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার চলে যাচ্ছে। তার ভীষণ ভয় লাগছে বিষয়টি। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে শুয়ে রইল। দুই চোখে একদম ঘুম নেই। আতঙ্কে শরীর কাঁপছে তার। নিজেকে একদম সামলাতে চেয়েও পারছে না৷ ঘড়ির কাটা যেন নড়ছে না। সময় একদম পার হচ্ছে না। মনে হচ্ছে প্রতিটা সেকেন্ড ঘন্টার মতো পার হচ্ছে।
দীর্ঘ অপেক্ষা এবং আতঙ্কের শেষ সীমানা পার হয়ে সকালে সূর্য উদিত হলো। সে আগে ঘর থেকে বের হলো না। সে ফিয়নাকে টেক্সট দিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। ঘর থেকে বের হওয়া তার কাছে ভীষণ রিস্ক মনে হচ্ছে এবং সে খুব আতঙ্গিত হয়ে আছে। তাই সে ফিয়নাকে পুলিশ ফোর্স সহ আসতে বলল।
ফিয়নাও যুক্তির কথা শুনে ভীত হয়ে গেল। সে দ্রূত অফিসারের আনামের কাছে গেল। অফিসার আনামকে সে সবটা খুলে বলল। অফিসার আনামও বিষয়টি হালকা ভাবে নেয় নি। বরং দ্রূত ব্যবস্থা নিয়ে যুক্তির বাসায় পৌঁছায়। যুক্তির বাসায় কলিং বেল চাপে ফিয়না। অফিসার আনাম এবং তার ফোর্স পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল সিভিল ড্রেসে। নিরা কলিং বেল বাজতেই যুক্তির দরজায় জোরে নক করে বলতে লাগল
“কে জানি এসেছে আমি কি দরজা খুলব?”
ফিয়না মাস্ক পরে থাকায় নিরা চিনতে পারে নি। যুক্তি অবশ্য বুঝতে পারছিল এটা ফিয়না। তাই সে উত্তর দিল
“দরজা খুলো আমি আসতেছি।”
নিরা স্বাভাবিক ভাবেই দরজা খুললো। দরজা খুলতেই দুজন লেডি কনস্টেবল তাকে ধরে ফেলল। নিরা তো বেশ ভয় পেয়ে গেল। যে ভয়ে আতঙ্গিত হয়ে বলতে লাগল
“আমি তো কিছু করিনি। আমাকে এভাবে ধরা হলো কেন? আমার দোষ কী? আমি কী এমন করেছি?”
বাইরের আওয়াজ শুনে যুক্তি একটু সাহস পেল। সে রুদিতাকে ঘরে রেখে বের হলো। রুদিতা জড়োসড়ো হয়ে রুমে বসে আছে। যুক্তি বের হতেই নিরা বলে উঠল
“আমি কী করেছি ম্যাডাম? আমাকে এভাবে ধরা কেন হলো?”
যুক্তি এবার বলে উঠল
“আগে বলো তুমি কে? তোমাকে আমি একটা এজেন্সির মাধ্যমে এনেছি ১ বছর আগে। আর ঠিক এক বছর আগেই আনহারির বাসা থেকে তোমাকে ছাড়িয়ে দিয়েছিল। আনহারির মেয়ে টুলটুলের সাথে একই ঘটনা ঘটে এবং সে নিঁখোজ। তাকেও রুদিতার মতো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দাগ করে দেওয়া হয়। আর তোমার হাতেও একই দাগ। তার মানে তোমাকে কেন্দ্র করেই এসব হচ্ছে। আমাকে বলো তুমি কে? কেন আমার বাসায় এসেছো? কী মতলব তোমার? কিডন্যাপারদের সাথে তোমার সম্পর্ক কী?”
নিরা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল
“আমি এসবের কিছু জানি না। দুটো জায়গাতেই আমি গিয়েছিলাম এজেন্সির মাধ্যমে আর দুটো জায়গাতেই এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটল। আমি এসবের সাথে একদম জড়িত না ম্যাডাম। আমাকে ছেড়ে দিন।”
নিরার আকুতি মিনতি বলে দিচ্ছে সে নির্দোষ। তবুও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। যদিও সন্দেহের বশে কাউকে এভাবে ধরে নেওয়া বেআইনি। তবুও আনহারিদের জটিল কেইসের রহস্য সমাধানে এতটুকু করতে বাধ্য হয়েছে অফিসার আনাম।
নিরাকে নিয়ে যাওয়ার পর যুক্তি ফিয়নাকে নিয়ে আনহারিকে দেখতে গেল। যুক্তির স্বামী এখনও দেশের বাইরে। একটা কাজে আটকে গেছে সে। আসতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। একা একা এ বাড়িতে থাকতেও তার ভীষণ ভয় হচ্ছে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হয় সে তার ননদের বাড়ি গিয়ে থাকবে নাহয় আনহারিদের বাসায়। তবে যুক্তি তার হাসবেন্ড কে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি। চিন্তা করে কাজের মনোযোগ ব্রেক করবে তাই। সেজন্য এখন হুট করে এতদিন ননদের বাড়ি থাকতে গেলে তার হাসবেন্ড সবটা জেনে যাবে। আর ননদেরও স্বামী আছে সে ও বিষয়টি ভালো চোখে দেখবে না। তাই সকল কিছু ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিল আনহারিদের বাসায় থাকবে। তাই যাওয়ার সময় সে তার প্রয়োজনীয় সকল কিছু সাথে নিয়ে নিল।
যুক্তি আর ফিয়না ফিরে আসলো আনহারি ভবনে। এখন তাদের সবার মাথায় একটায় প্রশ্ন আসলে মেয়েটা কী সত্যিই অনন্যা? এটা আগে নিশ্চিত হতে হবে সে অনন্যা কি’না। তারপর একটা পরিকল্পনা করে এগুতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়।
এসবেই তিনজন বসে বসে ভাবছে। হঠাৎ আনহারি শুয়া থেকে বসে উঠল। সে হালকা পায়ে হেঁটে আলমারির কাছে যায়। একটা গ্লভস পড়ে আলমালির ড্রয়ারটা ঘেটে চেক বইটা বের করে। দেখা যায় অনন্যা কেবল চেকবইয়ের কয়েকটা পৃষ্ঠা নিয়েছে। বাকি বইটা ফেলে রেখেছে। তার মাথায় এবার বুদ্ধি আসলো। তার কাছে আগেই অনন্যার আঙ্গুলের ছাপ দিল। তাই সে অনন্যার আঙ্গুলের ছাপ আর চেক বইয়ের হাতের স্পর্শ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে চায় এটা কী সত্যিই অনন্যা কি’না।
যে ভাবনা সে কাজ। চেক বইটা ল্যাবে পাঠানো হয়৷ আর অনন্যার আঙ্গুলের ছাপ। দুদিন পর রিপোর্ট আসে আর জানা যায় এটা অনন্যার আঙ্গুলের ছাপ। তার মানে সেই মেয়েটা অনন্যায় আর কেউ না। এবার সবার মাথায় একটায় প্রশ্ন কেন অনন্যা এমন করছে। ঠিক এ সময়ে আনহারির মাথায় চলে আসলো একটি বিষয়। যা এ রহস্য উদঘাটনকে আরও সহজ করে দিল।
কপি করা নিষেধ।