- কনে বদল
- আমার বিয়ের গল্প।
- রোমান্টিক বিয়ের গল্প।
- হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প।
- হঠাৎ করে বিয়ে করার গল্প।
- নতুন বিয়ের রোমান্টিক গল্প।
১.কনে বদল
(ধারাবাহিক গল্প)
বিয়ে করতে এসে শুনি কনে পালিয়ে গেছে! খবরটা শুনলাম আমাদের দুই পক্ষের কমন এক আত্মীয়র কাছে, উনার কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না।
মেয়ের সাথে আমার গতকাল কথা হয়েছে। চারু কে তো অখুশি মনে হয়নি। বরং বিয়ে নিয়ে ওর মধ্যে অনেক উচ্ছ্বাস ছিল। তাহলে এমন তো হওয়ার কথা না।
বিয়েটা অবশ্য পারিবারিকভাবে হচ্ছে। বড়ো মামার বন্ধু সম্পর্কটা এনেছেন। পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকুরি হাতিয়েও বিয়ে করব না করব না করে কাটিয়ে দিয়েছি পাঁচ বছর। তখন মামা উঠে পড়ে লাগল বিয়ে করাতে। নানা বাহানা করেও শেষ রক্ষা হলো না। মামার কাছে হার মানতে হলো।
মামাই একদিন একপ্রকার জোর করে চারুদের বাড়ি নিয়ে গেল। ডেমরার বক্সনগরে এক টুকরো জমির ওপর টিনসেড একটা বাড়ি চারুদের। চারুর বাবা আমজাদ সাহেব ব্যাংকে চাকুরি করতেন। তাই হয়ত জমি টুকু কিনতে পেরেছেন। বাড়ির ভিতরে ঢুকে বুঝলাম আসবাবপত্র খুব দামি না হলেও সব কিছু কী সুন্দর করে গোছান!
বেতের সোফাসেট বসে আছি আমি মামা আর আমার ছোটো বোন রুবিনা। আমাদের সামনে বাড়িতে বানান ছোটো ছোটো শিঙারা, কয়েকজাতের পিঠা রাখা। মামা শিঙারা দেখেই টুপ করে একটা মুখে পুরে দিয়েই বলল,” আঃ! কী স্বাদ!”
দেখতে খুবই ভালো লাগছিল শিঙারাগুলো ইচ্ছে হচ্ছিল একটা চেখে দেখি। লজ্জায় ইচ্ছেটা দমন করলাম। এ সময় আমজাদ সাহেব আসলেন উনার পিছনে আকাশী রংয়া শাড়ি পরা একটা মেয়ে। ছিমছাম চেহেরা, তেমন কোনো সাজগোছ করেনি! চোখে হালকা করে কাজল দিয়েছে শুধু। একনজর দেখেই চোখ কেমন সেঁটে গেল!
আমজাদ সাহেব বললেন, “কেমন আছ বাবা? আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
মামা বলল, “নানা কোনো সমস্যা হয়নি।”
“নেও বাবা, সব আমার মেয়ে নিজ হাতে বানিয়েছে।”
আমি একটা শিঙারা নিয়ে আলত করে কামড় দিলাম, সত্যি দারুণ!
“হ্যাঁ, মা আমার লক্ষী! কী নাম তোমার মা?”
লজ্জিত হয়ে বলল, “চারু।”
বাঃ! নামটা তো খুব মিষ্টি! চা—রু! মনে মনে কয়েকবার উচ্চারণ করলাম। চোরা চোখে চারুকে দেখলাম।
ছোটোবোন মনে হয় টের পেয়েছে আমার চোরা চোখে বারবার দেখাটা। আমার কাছে গেসে বলল, “ভাইয়া মেয়ে কেমন লাগছে? “
“তোর কেমন লাগছে? “
“সিম্পল হলেও খারাপ না! বাকিটা তুুমি বোঝ।”
মামা তো চারু বলতে পাগল। তেমন কিছু জিজ্ঞেস করল না। মামার কথায় আমি আর চারু আলাদাভাবে কথা বলতে এলাম চারুদের বাড়ির সামনে ছোটো একটা বাগান আছে। ছোটো বাগানটাতে নানা রকম ফুলের গাছ, মাঝে বসার মতো কয়েকটা চেয়ার আছে। দাঁড়িয়ে বাগানটা দেখছিলাম, একটু পরে দুটো কাপ হাতে চারু আসল।
কী কথা বলব! চারু কে দেখেই কেমন ভালো লাগা শুরু হয়েছে! মনে মনে আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি চারুকেই আমি বিয়ে করব। একটু চিন্তায় আছি চারু যদি আমায় অপছন্দ করে!
“কফি তো আপনার খুব প্রিয় তাই না?”
“জি, আপনি কী করে জানেন?”
“মেয়েরা অনেক কিছু বুঝে জানেন না বুঝি?” বলেই কী সুন্দর করে হাসল!
“তাই বুঝি! “
“তা কী জানতে চান বলুন?”
তোমাকে পুরোটা জানতে চাই চারু। মনে মনে বললাম। মুখে হালকা হাসি দিয়ে বললাম, “কী প্রশ্ন থাকবে বলেন তো?”
“বাঃ! কিছুই জানার নেই? “
“এতটুকু সময়ে কী বা জানা যাবে বলেন তো?”
“কত সময় লাগবে জানতে? ”
“মানুষের ওপর নির্ভর করে।”
আলাপের ইতি টানতে হলো ছোটো বোন হাজির হওয়ায়। চারু অসম্ভব রকমের মিশুক! রুবিনার সাথে কী খাতির হয়ে গেল অল্পতেই! রুবিনার কাছ থেকে আমার নাম্বার নিয়ে পরের দিন কল দিল চারু। এই কয়েকদিনে রাতে দুজনের কত শত আলাপ হলো। কখনো তো মনে হয়নি ওর অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে বা জোর করে বিয়ে দিচ্ছে। নাকি মেয়েটি নিখুঁত অভিনয় করল!
আত্মীয় স্বজন সবাইকে নিয়ে বর যাত্রী এসেছি! এখন যদি চারু পালিয়ে যায় কী হবে? না, ভাবতেই কেমন লাগছে! কথাটা আমার অবিশ্বাস হলেও বুকের মাঝে কেমন ধুকপুক করছে! কাউকে কিছু বললাম না। কী বা বলব? কনে পালিয়েছে চল বাড়ি ফিরে যাই! দেখি উনারা কী করেন?
চারুদের বাড়ির সামনে এসে দেখি গেটে চারুর বাবা আমজাদ সাহেব হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়েরা গেটের সামনে ফিতা বেঁধে রেখেছে বর যাত্রী স্বাগত জানাতে। দেখে তো সবকিছু স্বাভাবিক লাগছে।
কথাটি কি মিথ্যা? না কি চারুর মতো এরা সবাই নিখুঁত অভিনয় করছে! বা এরা জানেই না? তা কী করে হয়!
গেটে বাকবিতন্ডা হলো সব বিয়েতে যেমন হয়। আমার বন্ধু সব সামলাল। ভিতরে ঢুকলাম কোথাও কোনো অস্বাভাবিকতা দেখছি না। যে খবরটা দিয়েছে সে ভুয়া খবর দেয়ার মানুষ না। কেমন অস্থির লাগছে! কাউকে বলতেও পারছি না।
এমনিতেই আসতে একটু দেরি হয়েছে তাই প্রথমে আমাদের খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাকে আলাদা একটা রুমে বসাল। সেই আত্মীয় আবার এসে কানে কানে বলল, “ঘটনা কিন্তু সত্যি! ” বলেই চলে গেল। আমি কী করব বুঝতে পারছি না। বন্ধু আমায় চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করল, “কোনো সমস্যা?
“না, না কোনো সমস্যা নাই।”
“তোকে কেমন আনমনা লাগছে! “
আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করলাম। মুখে হালকা হাসি ধরে রাখলাম। চারপাশে ছোটো-ছোটো শালা-শালিরা বসেছে একসাথে খাবে বলে। আমার বন্ধু ওদের সাথে দুষ্টুমি করছে আমি অদিকে মন দিলাম।
চারদিকে দেখছি আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে! কেউ এসে বলবে এবিয়ে হবে না। কোনো একটা দুর্ঘনা ঘটিয়ে বিয়েটা ভেঙে দিবে। যাতে কেউ বুঝতে না পারে কনে নেই। এই জন্য মনে হয় এরা অভিনয় করে যাচ্ছে! আচমকা মনে হলো চারুকে একটা কল দিলেই তো বুঝা যাবে। চারুর নাম্বারে ডায়াল করলাম। নাম্বার বন্ধ!
চলবে–
কনে বদল
® নাবিল মাহমুদ
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক
https://kobitor.com/category/uponnaslink/kone/
২.আমার বিয়ের গল্প
“অমর সঙ্গী”
লাবনীকে যখন বিয়ে করি ও তখন ক্লাশ নাইনের ছাত্রী।পরীর মত দেখতে এতিম মেয়েটি আমার বউ হয়েই বুঝে গেছে, রায়হান নামের ইমোশনাল ও গুছানো মানুষটি খুব একটা ‘সুবিধার’ হবেনা।
এই ধরনের মানুষ নিজের আবেগ আর মতামতকে সব সময় বড় করে দেখে।
লাবনীর ধারনা সঠিক না বেঠিক সে
বিচারের ভার পাঠকের হাতেই ন্যস্ত রইল।
১৯৮৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিয়ে হয়।শীতের রাত।কাগজের ফুলে সাজানো বিয়ের গাড়ী করে আমি,লাবনী
ছোট বোন আর ভাগ্নি ফিরছি।
ওর গায়ের সাথে গা লাগছে আমার!
আমি চমকে উঠি;মেয়েদের গা এত গরম হয়?
বাসায় সাজানো খাটে ‘বউ দেখা’পর্ব হবে,সারা পাড়া ভেঙ্গে পড়েছে বউ দেখবে-রায়হানের বউ।
বেচারী লাবনীর গায়ে হলুদের দিন থেকেই জ্বর।বিয়ের দিন সারাদিন জ্বরে ও কিছুই মুখে দিতে পারেনি;তবু ওকে বউ সেজে থাকতে হয়েছে।
আমাদের আমলে বিয়ের কনেদের স্টেজে কোনঠাসা হয়ে বসে থাকতে হত।
ওই সময় ক্ষুধার্ত কনেটি বলতেও পারত না তার খিদে পেয়েছে।
-খিদে পেয়েছে?ওমা এ কেমন মেয়ে গো শুধু খাই খাই করে!এমন হাজারো কটু কথা মেয়েরাই মেয়েদের শোনাত।
দিন বদলেছে,এখনকার বিয়ের স্টেজে বর কনে কি সুন্দর হিন্দি গানের সুরে সুরে নাচে,গায়,ফটোসেশন করে!আমি অবাক হয়ে দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি।
লাবনীর কোন বড় ভাবি কিংবা দস্যি বোন ছিলনা যে এক ফাঁকে ওকে জোর করে খাওয়াবে।আমি বর,আমারও কনের কাছে যাওয়া বারন।সারাটা দিন আমার লাবনী না খেয়ে বউ সেজে বসে রইল।
আমাদের বাড়ি এসেও সেই বসে থাকা।
আমি যে একটু বলব-সারাটা দিন লাবনী কিছু খায়নি;ওকে একটু খেতে দেয়া হোক
বলতে পারছিনা।
কত টিপ্পনী শুনতে হয় কে জানে।
‘বউ দেখা’পর্ব শেষে গভীর রজনীতে ওকে যখন আমার ঘরে দেয়া হয়;জ্বরে তখন ওর গা পুড়ে যাচ্ছে।
আমি একটু জোর জোর করে ওকে কয়েক লোকমা পোলাও,আর সামান্য রোস্ট মাংস মুখে তুলে দিলাম।
দু’টো প্যারা পাইরল বড়ি খাইয়ে দিলাম।
মিনিট পনের পরেই লাবনী হড়হড় করে বমি করে বিছানা ভাসিয়ে দিল।
তেত্রিশ বছর আগের সে রাতে লাবনীর বমি কেচে দিয়ে বিছানা পরিষ্কার করেছি।
মাথায় জলপট্টি দিয়ে চিন্তিত মুখে বারান্দায় বসে বসে সিগারেট ফুঁকেছি।
কঠিন মমতায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।
শিকেয় তুলে রাখতে হল আমার
বাসর রাতের মিষ্টি মধুর আলাপন!
আজ এতগুলো বছর পর লাবনীর অভিযোগ-‘তুমি একটা পাষান!
বাসর রাতে আমারে একা ফেলে বারান্দায় বসে বসে তামাক খাইছ’!
যার জন্য করলাম চুরি সেই কয় চোর-হাঃহাঃহা!সাধে কি আর শাস্ত্র বলে ‘নারীর মন দেবা না জানন্তি’!
আমার বড় দুই খালাত ভাই রাশেদ আর
আবুসিদ্দিক ভাই তাদের ইয়াসিকা আর জেনিথ ক্যামেরায় আগফা কালার ফিল্ম ভরে বিয়ের ফটো শ্যুট করেছেন।
সেই থার্টি ফাইভ এমএম এর এক রোল ফিল্মে সাধারনত ছত্রিশ থেকে আটত্রিশটা ছবি উঠত।কপাল ভাল হলে চল্লিশটা।
ছোট্ট একটা সরকারি চাকরি করি;
মাস শেষে মাইনে দেড় হাজার টাকা!
নূন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।
দুই রোল ফিল্ম খালাত দুই ভাই ডেভেলপ করে দিলেন;টাকার অভাবে ছবি আর প্রিন্ট করাতে পারিনা।ফুজি কালার ল্যাব মাত্র দেশে এসেছে।থ্রি আর সাইজ এক কপি ছবি প্রিন্ট করাতে স্থান ভেদে পনের থেকে বিশ টাকা লাগে।
দুই রোল ছবি প্রিন্ট করাতে আমার এক মাসের মাইনেতেও কুলাবে না!এমনিতেই বিয়ে উপলক্ষে অনেক ঋন হয়ে গেছে-যা প্রায় সবটাই আমার কাঁধে চেপেছে।
আমি লাবনীকে বলি-
-প্রতি মাসে পাঁচ কপি করে প্রিন্ট করালে কেমন হয়?
-না বিয়ের ছবি একসাথে প্রিন্ট না করালে মজা থাকে না!
-তথাস্তু।
আমি আর ছবি প্রিন্ট করার কথা মুখেও আনিনা।শুধু শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ডেভেলপ করা ফিল্মগুলো রোদে শুকাই যেন ফাঙ্গাস পড়ে ফিল্মগুলো নষ্ট না হয়।
শুকানোর পর পলি কাভারে থাকা ফিল্মগুলোরে রোদের দিকে উঁচু করে ধরি আর চোখ সরু করে দেখি-এইটা আমি,এইটা লাবনী,ওইটা আব্বা,ওই যে ওইটা মামা!
অনেক মন খারাপ করে ফিল্মগুলো আবার সযতনে তুলে রাখি।
মনেরে প্রবোধ দেই-ভবে চিরকাল কারো সমান নাহি যায়।আমার দিনও ফিরবে ইনশাল্লাহ।
১৯৯৪ সাল!
মরার উপর খাঁড়ার ঘা আর কাকে বলে!
সম্ভবত নভেম্বরের শেষের দিকে এক সকালে বলা নেই কওয়া নেই আমার এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা উঠল।
ব্যথার তীব্রতায় বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছি।এদিকে বিভিন্ন দাবী দাওয়া নিয়ে ডাক্তার ধর্মঘট চলছে।সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই সরকার দাবী না মানলে ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিসও বন্ধ করে দেবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
মাসের এই সময় হাতে টাকা পয়সা নাই;
বেতনও হয়নি।আমার কোন সেভিংসও নাই!সংসার শুরুই তো করেছি ঋন মাথায় নিয়ে! বাড়ির কাছাকাছি একটা ক্লিনিক আছে ওরা বারো হাজার টাকা চাইল।
লাবনী আর আম্মা মিলে কিভাবে যেন টাকা জোগাড় করে আমাকে মাহফুজ ক্লিনিকে ভর্তি করে দিলেন।
অস্ত্রোপচার শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আমি আরো বারো হাজার টাকা ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে নিয়ে ঘুরি।
এমনি ঘুরাঘুরি করতে করতে একদিন বন্ধু মুস্তাকীমের সাথে দেখা।
-বন্ধু একি চেহারা হয়েছে তোমার?
-আর বলোনা বন্ধু অশেষ ঝামেলায় আছি।
মুস্তাকীম আমার বেশ বিশ্বস্ত বন্ধু।
সব কিছু শুনে ওর আলিকো এজেন্সির ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিল হাতে।
সন্ধ্যায় ওর অফিসে যাই,প্রতিদিনই যাই।
সংক্ষিপ্ত ট্রেনিং শেষে আমার চাকরির পাশাপাশি পার্টটাইম আলিকোতে বীমা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ শুরু করি।
প্রচুর কমিশন পাই আলিকোতে।
দিনরাত পরিশ্রম করি।পলিসির পিছনে হাঁটি,হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ‘কড়া’ পড়ে গেল।সেই কড়া অপারেশন করাই!
আবার হাঁটি…আবার।
কিচ্ছু করার নাই পায়ের উপরেই যে রুজী আমার।
অবস্থা এমন হয়েছে কিছু আত্মীয় আড়ালে আবডালে আর বন্ধুরা প্রকাশ্যে বীমার দালাল বলে বিদ্রুপ করতে লাগল।
এমনও পরিস্থিতিতে পড়েছি দীর্ঘ দিনের পরিচিত বন্ধু,ওর অফিসে গেছি-এক কাপ চা ও খেতে বলেনি!আমাকে দেখে মিটিং আছে বলে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।
সবাই ছেড়ে গেলেও আমার লাবনী,
আমার অমর সঙ্গী আমায় ছেড়ে যায়নি।
আমার হাতে এখন বেশ টাকা।
স্ত্রী লাবনীকে নিয়ে শপিংয়ে যাই,
এটা সেটা কিনি সবই সংসারের ব্যবহার্য জিনিস।আমার অপারেশনের সময় লাবনী তার সোনার চেইন বিক্রি করেছিল-একদিন ঠিক তেমনই একটা চেইন ওকে কিনে এনে দেই!
লাবনী বিস্ময়াভিভূত!আমি তৃপ্ত নয়নে ওকে দেখি…ও আমার অমর সঙ্গী।
১৯৯৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের ৬ষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকীর দিনে ওর জন্য একটা চমৎকার মিরপুরের সবুজ বেনারশী শাড়ি কিনে আনি!
-বউরে এটা পড়!আমি তোরে দেখি।
আর চোখ বন্ধ কর তোর জন্য আরো সারপ্রাইজ আছে।
লাবনী চোখ খুলে দেখে ঢাউস সাইজের একটা ফটো এলবাম বিছানায় পড়ে আছে।এলবামের ফ্রন্ট কভারের নিচে একটা চাবি…চাবি ঘুরিয়ে দিয়ে এলবাম দেখতে বললাম ওকে।
আমাদের বিয়ের ছবি প্রিন্ট করে এনেছি অবশেষে!অনেকদিন ফিল্ম ঘরে পড়ে থাকায় ছবির রঙ চটে গেছে……কেমন ঘোলাটে ঘোলাটে হয়ে গেছে।
লাবনী ছবি দেখে আর কাঁদে!
ছবিগুলো এমন ঝাপসা দেখাচ্ছে কেন?
নাকি ওর চোখই ঝাপসা হয়ে আছে?
লাবনী আর আমি দু’জন গলাগলি করে ছবির এলবাম দেখছি!এলবামের পিয়ানো মিউজিক টুংটাং করে বেজেই চলেছে…’চিরদিনই তুমি যে আমার…সুখে দুঃখে আমি তোমারি…আমরা অমর…সঙ্গী……’!
টপটপ করে এলবামের উপর দু’ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ল।এ জল আমার না লাবনীর তা বুঝা গেলনা!
শেষ
সাইফুল আলম
৩.রোমান্টিক বিয়ের গল্প
আমি বিয়ে করি ২০০১ সালে।
আমার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল, আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক, অসম্ভব একজন রুপবতী মেয়েকে তার ছেলের জন্য বউ করে আনবেন।
তিনি সে ইচ্ছে পূরণ করেছেন।
আমার মাও বেশ সুন্দরী ছিলেন। মা পৈত্রিক সূত্রে সুন্দরী। আমার নানীও বেশ রুপবতী ছিলেন।
মায়ের মুখে শুনেছি, আমার নানীকে দেখে নানাভাই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে অনেকটা জোর করে বিয়ে করেছিলেন!
আমার মা যখন আমার বউ পছন্দ করলেন, আমি প্রচন্ড রকম বেঁকে বসলাম। আমার শ্বশুর ছিলেন পুলিশ অফিসার। আমি পুলিশের সাথে আত্বীয়তা করতে চাইলাম না। কেননা আমি শুনেছিলাম,পুলিশরা কখনোই ভালো হয় না, এরা ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ হয়! অসৎ হয়!!
মায়ের জোড়াজুড়িতে একদিন শুধুমাত্র মাকে খুশি করার জন্যই মেয়ে দেখতে গেলাম। আগেই ডিসিশন নিয়ে রেখেছিলাম, মেয়ে যতোই সুন্দরী হউক, বাসায় এসে বলবো,মেয়ে পছন্দ হয় নাই!
একদিন ছোটবোন আর ওর স্বামীকে নিয়ে মেয়ে দেখতে গেলাম।
মধ্যবিত্ত পরিবার, তারপরও যথেষ্ট আপ্যায়ন করলো। মেয়ে দেখানোর সময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সাথে যেসব মেয়ে এসেছে,সবাই হিজাব পরা। এমনকি ছোট বাচ্চারা সহ!
পরে কথায় কথায় জানলাম, আমার শ্বশুর একজন পরহেজগার মানুষ। পুলিশে থেকেও তিনি নিয়মিত নামাজ রোজা করেন।
সবাই তার সম্পর্কে ভালো ধারণা দিল।
আমি বুঝলাম,পুলিশ সম্পর্কে আমার ধারনা ভুল ছিল। ওখানে চাকরি করলেই সবাই ঘুষখোর, দূর্নীতিবাজ হয় না। কেউ কেউ ভালোও হয়।
সততা এবং অসততা, দুটোই পারিবারিক শিক্ষা।
মেয়ে দেখে আমার পছন্দ হয়ে গেল। পণ করে গিয়েছিলাম, এই মেয়ে যতোই সুন্দরী হউক,এখানে আমি রাজি হবো না। কিন্তু সবার আগে আমিই রাজি হয়ে বসে আছি!
ছোটবোন বলল,ভাইয়া,মেয়ে পছন্দ হয়েছে?
আমি বললাম, তোর পছন্দ হয় নাই?
হয়েছে, কিন্ত ভাইয়া,তুই তো পুলিশের মেয়ে পছন্দ করবি না, মাকে বলি বাদ দিয়ে দিতে!
প্রচন্ড একটা ধমক দিয়ে বললাম, এই তোদের একটা সমস্যা। সবকিছুতেই জাজমেন্ট দিয়ে বসিস? কেন,পুলিশ কী মানুষ না? সব পুলিশ কী খারাপ হয়?
কথা শুনে বোন এবং তার স্বামী আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো!
মা কথা দিয়েছিলেন, বউকে স্বর্ণ দিয়ে মুড়িয়ে আনবেন।
আমি তখন সবেমাত্র একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। বিয়েতে তেমন খরচাপাতির বিপক্ষে আমি। ছোটখাটো আয়োজন করতে চাইলাম। মা আমাকে না জানিয়ে বিশাল আয়োজন করে ফেললেন!
আমাদের সংসারে মায়ের কথাই শেষ কথা। মহা ধুমধাম করে একদিন বিয়েটা সেরে ফেললাম।
বিয়ের কয়েকদিন পর একদিন মা আমাকে ডেকে আফসোস করে বললেন, বউকে সব গয়না বানিয়ে দিয়েছি,শুধু মাথার তাজটা দিতে পারি নাই। আমি তোর শ্বশুরকে কথা দিয়েছিলাম,বউমাকে তাজ পরিয়ে আনবো।
আমি বললাম, মা, বিয়ের দিন তো বউয়ের মাথায় তাজ দেখেছি!
ওটা আসমার বিয়ের তাজ। তোর ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেলে বউমাকে একটা তাজ বানিয়ে দিস তো, বাবা।
বলাবাহুল্য, আসমা আমার ছোটবোন।
আমি বললাম,আচ্ছা মা, বানিয়ে দেবো।
বিষয়টা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। মা ও আর এই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলেননি। বউও না।
এর তিন বছর পর।
আমরা পরিবারের সবাই একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। আমার ছোটবোন মাথায় তাজ পরেছে। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার বউ বারবার তাজের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। মাও বিষয়টা খেয়াল করলেন, তবে কোন মন্তব্য করলেন না।
আমি তখনও ব্যবসাটা ঠিকঠাক দাঁড় করাতে পারি নাই, আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি, এটা আমার মায়ের মাথায় ছিল।
কিন্তু বিষয়টা আমার কলিজায় গিয়ে লাগলো।
একদিন হঠাৎ মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, ওখান থেকে বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে। মা অবাক হয়ে বললেন, এখানে নিয়ে এলি কেন?
আমি বললাম, তুমি ওয়াদা করেছিলে, তোমার বউমাকে তাজ বানিয়ে দিবে,দাওনি। তোমার ওয়াদা রক্ষা করা উচিত না?
মা আমতা আমতা করে বললেন, ব্যবসাটা গুছিয়ে নে,তারপর না হয়,,,
আমি মায়ের হাত ধরে বললাম, এসব চিন্তা করলে আর কখনোই তাজ কেনা হবে না। তোমার বউমা তাজ পরবে কখন? তোমার মতো বুড়ি হয়ে গেলে?
ওয়াদা রক্ষা হচ্ছে বলে মা অসম্ভব খুশি হলেন। তিনি ধার্মিক মানুষ ছিলেন। বোরকা পরে চলাফেরা করতেন। বাসায়ও সব সময় ঘোমটা দিয়ে থাকতেন।
সারাদিন এই দোকান সেই দোকান ঘুরে অসম্ভব সুন্দর একটা তাজ পছন্দ করলেন। আমি যে বাজেট কল্পনা করেছিলাম, দাম তারচেয়ে বহুগুণ বেশি। তিনি তাজ পছন্দ করেই ইতস্ততভাবে আমার দিকে চাইলেন।
আমি বিসমিল্লাহ বলে কিনে ফেললাম।
মা বাসায় এসে নিজহাতে তার বউমাকে তাজ পরিয়ে দিয়েছিলেন। বউ আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলো। তাকে এতো খুশি হতে আর সারা জীবনেও দেখি নাই।
মা ও খুব খুশি, ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেছেন বলে।
সেদিনই বউ আমাকে প্রথম বলেছিল, ছোটবেলা থেকেই তার তাজ পরার অনেক শখ। সে ভেবেছিল, এই শখ কোনদিনই পূরন হবে না!
অনেক দাম দিয়ে কেনা সেই শখের তাজ বোধহয় তিন চারবারের বেশি পরে নাই। তারপরও মেয়েদের শখ বলে কথা!
এর দশ বছর পর ব্যবসা যখন মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে,আমার অতি ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু আমার সাথে বেঈমানি করে বসলো।
সে আমার ব্যবসায়িক পার্টনার ছিল। বেশকিছু টাকা মেরে দিয়ে ব্যবসায় লালবাতি ধরিয়ে দিল। আমি একা একা দুই বছর ব্যবসা টেনে নিতে গিয়ে আরও লসের পাল্লায় পরলাম।
কেউ আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো না!
আমি একটা জমি বিক্রি করে আবার ব্যবসা দাঁড় করালাম। ব্যবসা যখন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, পরিবেশের দোহাই দিয়ে সরকার আমাদের পুরো ব্যবসাই বন্ধ করে দিলো!
এইবার আমার অবস্থা কাহিল হয়ে গেলো। আমি চারিদিক অন্ধকার দেখতে শুরু করলাম। নতুন ব্যবসা শুরু করার মতো আর্থিক অবস্থা তখন আমার নাই।
এই অবস্থায় আমার পরহেজগার মা একদিন স্ট্রোক করলেন এবং এক সপ্তাহের মাথায় আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন!
মা চলে যাওয়ার পর আমি চোখে সর্ষেফুল দেখতে শুরু করলাম। অনেক ধনী আত্বীয় থাকার পরও কেউ আমার পাশে এসে দাঁড়ালো না।
একদিন হঠাৎ করে বেশ কিছু টাকা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বউ বলল, নতুন করে শুরু কর। পাশে আছি!
আমি বেশ অবাক হলাম, সে এতো টাকা পেল কই?
চাপাচাপি করার পর জানালো,সে তার বাবার মাধ্যমে সমস্ত গয়না বিক্রি করে দিয়েছে, তার এক আত্বীয়ের স্বর্নের দোকান আছে।
তার বাবার কাছ থেকেও বেশ কিছু টাকা ধার হিসেবে নিয়েছে।
আমি দোকানে গিয়ে তার গয়না ফেরত আনতে চাইলাম, সে রাজি হলো না। বউ আমার হাত ধরে বলল,তোমার যখন অনেক টাকা হবে,আবার নতুন করে বানিয়ে দিও!
আমি আনন্দে কেঁদে ফেললাম।
আমি আবার একটা নতুন ব্যবসা দাঁড় করালাম।
আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
যদি সেদিন বউ পাশে এসে না দাঁড়াতো,আমি অথৈ জলে ভেসে যেতাম।
একদিন আলমারি খুলে দেখি, গয়নার বাক্সে শুধু তাজটা পরে আছে। আর সব খালি!
বউ বলল,আমার শ্বাশুড়ি আমাকে অনেক পছন্দ করে এই তাজটা কিনে দিয়েছেন, এটা আমি নষ্ট করবো না। এটা আমি স্মৃতি হিসেবে আমার মেয়েকে দিয়ে যাবো!
আমার চোখে পানি এসে গেলো।
এখন আর সে স্বর্নের গয়নার প্রতি আগ্রহী নয়। আমি কিনে দিতে চাইলেও সে রাজি হয় না।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়,আমরা যতোখানি বউকে অবহেলা করি,ঠিক ততোখানি অবহেলাই ফেরত পাই।
কিন্ত বউকে যতোখানি ভালবাসা দেই, তার বহ গুন বেশি ফেরত পাই!
#হানিফ_ওয়াহিদ
৪.হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প।
লেখাপড়া শেষ করার পর মা বললেন, বাবা, এবার একটা বিয়ে থা কর।
মাকে বললাম, এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়,আগে কিছু একটা করি।
ব্যবসা করতে চাইলাম,বাবা বললেন তোমার মত হ্যাবলাকান্ত দিয়ে ব্যবসা হবে না, কারন তুমি ভীতুর ডিম। ব্যবসা করতে সাহস লাগে।
ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি আমার সাহস কম। আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, আমি একজন অপদার্থ।
আমার বন্ধু সংখ্যা কম,কারন আমি কম কথা বলি। সারাদিন বইয়ের ভিতর মুখ গুজে থাকি। আমাকে সবাই ঘর কুনো বলে।
আমার মধ্যে একটা সমস্যা আছে। আমি অনেক কিছু বুঝেও না বুঝার ভান করি। কেউ আমাকে ঠকাতে চাইল,আমি বুঝলাম,তারপরও কিছু বলিনা। এজন্য কেউ কেউ আমাকে বলদ বলে ডাকে।
বলদ দিয়ে ব্যবসা হবে না তাই চাকরিতে ঢুকলাম।
কিছুদিনের মধ্যে এই বলদটা চাকরিতে সুনাম অর্জন করে ফেললো। বসের গুড বুকে নাম উঠে গেল।
এবার মা বাবা উঠে পড়ে লাগলেন আমার বিয়ের জন্য।
একদিন মা ডেকে বললেন,বাবা, তোমার মামা খবর দিয়েছে, একটা মেয়ে দেখে এস, তোমার মামা পছন্দ করেছে।
যেহেতু আমি ঘরকুনো মানুষ,মামা বাড়ি তেমন যাওয়া হয়না। চার বৎসর পর মাকে সহ মামা বাড়ি গেলাম। মামা বাসায় নাই,মামী আর মামাতো বোন মিতু আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। মিতুকে দেখেই একটা ধাক্কা খেলাম,ওরে বাপ এত সুন্দর!
মনে মনে পন করলাম বিয়ে করলে মিতুকেই বিয়ে করব। কিন্তু কী করে বলি!
সন্ধ্যার পর আমি, মা, মামী আর মিতু মেয়ে দেখতে গেলাম। মেয়ে মিতুর বান্ধবী। রাস্তায় মিতু বলল, ভাইয়া আমার বান্ধবীকে দেখলে টাসকি খেয়ে যাবি।
আমি মনে মনে বললাম,টাসকি তো খেয়েই আছি!
মেয়ে দেখলাম, পছন্দ করার মত মেয়ে। মা বাপের একমাত্র মেয়ে। আর্থিক অবস্থাও ভালো। মা এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেললেন। মামা মামী তো আগেই পছন্দ করেছে।
আমি জানিয়ে দিলাম মেয়ে পছন্দ হয়নি। সবাই অবাক হলো। এমন মেয়ে অপছন্দ করে কোন গাধা!
রাতে সবাই বসলো আমাকে বুঝাতে। মামা বললেন, এমন মেয়ে লাখে একটা হয়। আমার কপাল ভাল মেয়েপক্ষ রাজী হয়েছে। এই মেয়ে বিয়ে করলে রাজত্ব এবং রাজকন্যা একসাথে পাওয়া যাবে।
আমি রাজত্ব এবং রাজকন্যা পেতে মোটেই আগ্রহ দেখালাম না।
রাতে একা পেয়ে মিতু আমাকে বলল,তুই একটা ছাগল,এমন মেয়ে কেউ অপছন্দ করে? ফুপা ফুপি যে তোকে হাবলু বলে,ঠিকই বলে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, আচ্ছা মিতু,আমি ছেলে হিসেবে কেমন?
মিতু ঘুরে ঘুরে আমাকে খানিকক্ষণ দেখে বলল,ভালোই তো!
সাহস বেড়ে গেল। বললাম, কী রকম ছেলে তোর পছন্দ? বিয়ে করলে কেমন ছেলে পছন্দ করবি?
মিতু একটু ভেবে বলল,তোর মতো লুতুপুতু টাইপ ছেলেই আমার পছন্দ। বিয়ে করলে তোর মতো ছেলে দেখেই বিয়ে করবো।
মিতুর কথা শুনে সাহসে বুকের ছাতি ফুলে গেল। আমি লাফিয়ে উঠে বললাম, সত্যি বলছিস?
মিতু বলল, হা। তোর মতো ছেলে দেখে কেন বিয়ে করবো জানিস?
আমি আনন্দিত গলায় বললাম, না তো, কেন করবি?
তুই তো হাবলু, হাবলুদের আমার খুব ভালো লাগে। এদেরকে কানে ধরে ঘুরাতে সুবিধা হয়!
এতক্ষণ ভিতরে ভিতরে বেশ আনন্দ পাচ্ছিলাম। মিতুর কথা শুনে ফোঁস করে বুকের সব বাতাস বেড়িয়ে গেল!
আমাকে পাত্তা না দিয়ে সবাই সেই মেয়ের সাথে বিয়ের আয়োজন করতে লাগল। আমি গোপনে নাকের জল চোখের জল এক করে ফেললাম।
কান্না দেখে মায়ের মন গলল। মা বুঝলেন আমি এই মেয়ে পছন্দ করি নাই। তিনি আমাকে অন্য মেয়ে দেখাতে নিয়ে গেলেন।
একে একে শ,খানেক মেয়ে দেখা হলো, পছন্দ হলো না।
মা একদিন বিরক্ত গলায় বললেন, ঘটনা কী? তুই কী মাধুরী দীক্ষিতকে বিয়ে করতে চাস? কোন মেয়েই তো তোর পছন্দ হয় না। তুই নিজে কী? শাহরুখ খান?
আমি বললাম, এখন বিয়ে করবো না। বিয়ের চিন্তা বাদ দাও। চাকরিতে উন্নতি হউক, তখন দেখা যাবে।
সবাই আমার বিয়ে নিয়ে একদিন মিটিংয়ে বসলেন। আমার মামা জোর গলায় ঘোষণা দিলেন, তিনি বিয়ে করাবেনই,এবং তার পছন্দের মেয়ের সাথে।
মিতুর বান্ধবীর সাথেই বিয়ের ডেট দেওয়া হলো।
আমি বিয়ের এক সপ্তাহ আগে পালিয়ে কুয়াকাটা চলে গেলাম। একা একা সমুদ্র সৈকতে ঘুরি আর মিতুর কথা চিন্তা করি।
বাইরে খাওয়ার অভ্যাস নাই, তিন দিনের মধ্যেই বাইরের খাবার খেয়ে লুজ মোশন হয়ে গেল। বাথরুম টু বেডরুম,বেডরুম টু বাথরুম করতে লাগলাম। উপায়ন্তর না পেয়ে পঞ্চম দিনে বাড়ি এসে হাজির!
বিয়ে প্রায় ভেঙ্গে যাচ্ছিল। সবাই জেনেছে ছেলে পালিয়েছে। অনেকেই বলল,নিশ্চয়ই কোন মেয়ের সাথে লটরপটর আছে। সেই মেয়ে নিয়েই পালিয়েছে!!
যখন দেখল ঘটনা তেমন কিছুই না,আবার আয়োজন চললো।
মিতু ডেকে বলল, কী রে বলদ পালিয়েছিলি কেন?
আমি উদাস গলায় বললাম,পালাবো কেন? সমুূ্দ্র দেখতে গিয়েছিলাম।
মিতু ব্যাঙ্গ করে বলল, বিয়ের তিন দিন আগে কেউ সমুদ্র দেখতে যায়? নাকি অন্য কিছু? কাউকে পছন্দ করিস? আমাকে বল। আমি ফুপা ফুপিকে বলি।
আরে নাহ,কী যে বলিস! আমি আবার কাকে পছন্দ করবো,,,
তাও ঠিক, তোর মতো বলদ অন্য কিছু করবে কীভাবে? যা ভীতু তুই!
বিয়ের আগের দিন গায়ে হলুদ হচ্ছে। আমার কান্নার মত হেঁচকি উঠছে।
মিতু হলুদ মাখাতে মাখাতে বলল, এই হাবলু, বিয়ের সময় মেয়েরা কাঁদে,তুই কাঁদছিস কেন?
আমি চোখ মুছে বললাম, না, আমার চোখে মনে হয় কিছু পড়েছে।
তুই সারাজীবন বলদই রয়ে গেলি,বিয়ের সময় এভাবে কেউ কাঁদে!
বিয়ের দিন জামাই সেজে ষ্টেজে বসে আছি। সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে।মেয়ে গেছে পার্লারে সাজতে, এখনও আসেনি। মেয়ে পার্লার থেকে আসলেই বিয়ে পড়ানো হবে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, মেয়ের দেখা নাই। অনেকক্ষন পরে খবর এল, মেয়ে পালিয়েছে। অন্য একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল,জোর করে এখানে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
সব আত্মীয়রা মামাকে ঘিরে ধরলো। সব দোষ গিয়ে পরলো মামার ঘাড়ে,মামা কেন জেনে শুনে এখানে সম্পর্ক করতে গেল!
আমি তখনো জামাই সাজে স্টেজে বসে আছি। আনন্দে আমার দু,চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মিতু এলো আমাকে সান্তনা দিতে। আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, এই বলদ, আবার কাঁদছিস কেন? ওই সময় তো পালিয়েছিলি, এখন আবার বউয়ের জন্য কাঁদছিস! কান্না থামা বলছি,থামা!
মিতুর ধমক শুনে সবাই আমার দিকে তাকাল। মিতু আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছে। আমার মনে হলো এক্ষুনি বলা দরকার,না হলে কখনোই বলা হবে না।
আমি শরীরে সমস্ত সাহস সঞ্চয় করে ডাকলাম, মিতু!
আমার গলায় কী ছিল জানি না, মিতু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি ষ্টেজ থেকে নামলাম, তার কাছে এগিয়ে গেলাম, তারপর শান্ত গলায় বললাম,মিতু্ তুই আমাকে বিয়ে করবি?
বাসর ঘরে মিতুর হাত ধরে বসে আছি। আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
মিতু বলল, এই ছাগল কাঁদছিস কেন?
আমি তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। কেঁদেই চলেছি। কী করে বুঝাই, এ যে সুখের কান্না!
#হানিফ_ওয়াহিদ