আসলে ছেলেমেয়েদের তাদের পছন্দের বাইরে জোর করে কখনোই বিয়ে দেয়া ঠিক না। আমি এটা ঠিক সেদিন রিয়ালাইজ করেছি যেদিন সোহাগের সাথে আমার বিয়ে হলো। বিয়ের আসর পর্যন্ত সব স্বাভাবিকই ছিলো কিন্তু বাসরঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে ও যখন দরজার কাছেই লুটিয়ে পড়লো আমি রীতিমত আঁতকে উঠে ঘোমটা খুলে বললাম,কি হয়েছে?
সোহাগ কান্নার ঠেলায় কিছু বলতে পারতেছিলো না। অনেকক্ষণ বাদে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো, তুশিকে এখন আমি কি জবাব দেবো?
আমি অবাক হয়ে বললাম,তুশি কে?
-আমার গার্লফ্রেন্ড।
আমি অনেকক্ষন কোনো কথা বলতে পারলাম না। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
সোহাগ রাগী গলায় বললো,কেন থাকবে না? আমি দেখতে সুন্দর,কোয়ালিফায়েড.. আমার কি কোনো সমস্যা আছে যে গার্লফ্রেন্ড থাকবে না?
আমি বললাম,কথা তো সেটা না। কথা হচ্ছে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন গার্লফ্রেন্ড থাকলে?
সোহাগ বললো, আম্মুর জন্য করেছি। আম্মুর তুশিকে পছন্দ না। তোমাকে পছন্দ।
আমি বললাম,আমি তো আপনার আম্মুকে বিয়ে করিনাই! আপনাকে করেছি। আর একটা কথা বুঝতে পারলাম না আমি যে, একটা ছেলের পছন্দ না হলে বাসা থেকে কেমনে বিয়ে দেয়? জীবনটা কি সিনেমা?
সোহাগ বললো,তুশির সাথে একটু রাগারাগী হয়েছিলো, ভাবলাম শায়েস্তা করি.. কিন্তু এখন তো আমি নিজেই শায়েস্তা হয়ে গেলাম….ওকে ছাড়া আমি কিভাবে……
আবার কান্নার দমক তোলবার চেষ্টা করার আগেই ধমক দিলাম,অ্যাই চোপ! ছোটোলোক কোথাকার। গফের সাথে রাগারাগী করে উনি বিয়ে করে ফেলেছেন! আমার কি হবে হ্যাঁ? আমার তো এটা প্রথম বিয়েই.. ইনফ্যাক্ট একটা প্রেম পর্যন্ত করতে পারি নাই! ভেবেছিলাম বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে করবো..
সোহাগ অবাক গলায় বললো,তুমি কেন প্রেম করো নাই? দেখতে সুন্দর,কোয়ালিফায়েড..
আমি জবাব দিলাম না। ওর সাথে কথা বলা বৃথা। ওর ধারনায় দেখতে সুন্দর আর কোয়ালিফায়েড হলে সবাই প্রেম করবে। না করলেই বরং ও অবাক হবে। কিন্তু এখন কি হবে আমার? এ আবার কোন মুসিবত!
বিয়ের আগে দুইদিন দেখা করেছি,ঘোরাঘুরি করেছি আমরা। তখনও সোহাগ একটা কথাও বলেনাই নিজের গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে। সম্ভবত তখন রাগারাগী চলছিলো। কিন্তু এটা তো ধোঁকা তাই না? এভাবে কাউকে বিয়ে করা মানে তাকে ঠকানো। আমি এখন কি করবো?
চিন্তায় ছেদ পড়লো সোহাগের কথায়। বললো,তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি ডিভানে শুয়ে পড়বো।
বাহ! আমার জীবনটা তো পুরাই সিনেমার মতো করেই শুরু হয়েছে! হুবহু সিনেমা। ইচ্ছা করতেছে থাপড়ায়ে ওর সুন্দর চেহারার এমন অবস্থা করি….
জবাব না দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারাদিন অনেক ধকল গেছে,চেষ্টা করছি ঘুমানোর। কিন্তু সোহাগের ফ্যাঁচফ্যাঁচ কান্নার ঠেলায় ঘুমানোর কায়দা আছে? একবার ধমক দিলাম, এই! চুপ করবেন আপনি?
সোহাগ চুপ করলো না। বালিশে মাথা গুঁজে কাঁদতে লাগলো। ছেলেটাকে অবিলম্বে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার ইচ্ছা অনেক কষ্টে দমন করলাম।
মাঝরাতে সোহাগের কথাবার্তায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাকিয়ে দেখি ভিডিও কলে গার্লফ্রেন্ডকে বোঝাচ্ছে, “বিশ্বাস করো তুশি! আমি আলাদা ঘুমাইছি,এই দেখো। ওই দেখো।”
আমি ধমক দিয়ে বললাম, খবরদার আমার দিকে ক্যামেরা তাক করলে খবর আছে। লাইসেন্স করা পিস্তল আছে আমার আব্বুর।
সোহাগ ভয়ে ক্যামেরা নিয়ে সরে গেলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম। কাঁদার কথা তো আমার,তাই না? কিন্তু অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছি আমি। গতকাল পর্যন্ত কত স্বপ্ন ছিলো,আজ কি থেকে কি হয়ে গেলো!
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে সোহাগের চেহারা দেখে ওর বাবা বললো,সব ঠিক আছে? এমন লাগতেছে কেন তোরে? চোখ লাল!
সোহাগ সরল মনে বললো, সারারাত ঘুম হয়নি তাই আর কি!
সবাই হেসে ফেললো। ওর মা রাগী গলায় বাবাকে বললো, তুমি যে কি!
তারচেয়ে বেশী রাগে আমার পিত্তি জ্বলে গেলো।
ঘরে আসার পর সোহাগ বললো, তুমি কি প্লিজ একবার,জাস্ট একটাবার তুশির সাথে কথা বলবা? বলবা যে আমি তোমাকে টাচও করি নাই এ পর্যন্ত.. প্লিজ ও খুব রাগ করে আছে…
আমি খুব স্বাভাবিকভাবে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলাম ওর নাকে। ঘুষি খেয়ে নাকে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সোহাগ। তারপর বললো, এখন বুঝেছি কেন তোমার প্রেম হয়নি…
আমি আরো কিছু বলতে চাইছিলাম কিন্তু সোহাগ তার আগেই ঘর থেকে পালিয়ে গেলো। সারাদিন আর আসলো না।
আমি সারাদিন ধরে নানান কথা ভাবছি। কত স্বপ্ন ছিলো আমার! জামাইয়ের সাথে এই জামাইয়ের সাথে ওই। জীবনে প্রেমই করিনি যে বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে করবো….. কিন্তু এ কি হয়ে গেলো?
সোহাগ আর আমি হানিমুনে এলাম কক্সবাজার। আমি আমার মতো দূরে দূরে ঘুরি আর সোহাগ ভিডিও করে তার গার্লফ্রেন্ডরে সমুদ্র দেখায়। বলে, “ইস তুমি থাকলে কি ভালো যে হতো!” অর্থাৎ,আমি না থাকলে…
একদিন বললাম,এভাবে আমার পক্ষে চলা সম্ভব না। তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও।
সোহাগ অবাক গলায় বললো,কি বলো তুমি! আমাদের বংশে কেউ কোনোদিন কাউরে ডিভোর্স দেয় নাই!
আমি রাগী গলায় বললাম, তোমার বংশে তোমার মতো ছাগলও তো আরেকটা ছিলো না! এভাবে মানুষ বাঁচতে পারে?
সোহাগ বললো,কি করতে চাও তুমি?
আমি বললাম,ডিভোর্স দাও।
সোহাগ বললো, সম্ভব না।
– তাইলে তোমার ঐ গার্লফ্রেন্ডকে ছাড়ো।
সোহাগ আঁতকে উঠে বললো,কি বলো! তুশিরে ছাড়া আমি বাঁচবো?
আমি রেগে আগুন হয়ে বললাম, তাইলে ওরেও বিয়ে করো! আমিও থাকি সেও থাক।
সোহাগ জবাব দিলো না। তবে তার হাবেভাবে মনে হতে লাগলো এতক্ষণে একটা মনের মতো অপশন পেয়েছে।
আমি ওর গলা টিপে ধরে বললাম, তোর সাথে আমি থাকবো না। কিছুতেই না!
সোহাগ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবার কয়েক সেকেন্ড আগে ওকে ছেড়ে দিয়ে নিজে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে গেলাম। ডুবে মরবো। সোহাগ দৌড়ে গিয়ে আমাকে ধরে ফেলে বললো, কি করো! পাগলামি করছো কেন? সব তো ঠিকই আছে খামাখা ঝামেলা করছো!
আমি অবাক গলায় জিজ্ঞেস করলাম, সব ঠিক আছে?
সোহাগ বললো, ঠিক নাই তো কি? তুশি তো আর রেগে নেই! সে বুঝেছে তোমার আমার মধ্যে তেমন কিছু নাই।
অর্থাৎ তুশি রেগে নেই কাজেই সব ঠিক আছে। এরপর আর কি বলার থাকতে পারে?
সোহাগ বললো,একা একা যদি তোমার সময় না কাটে তুমিও একটা প্রেম করো,আমরা বন্ধুর মতো থাকি।
আমি জুতো খুলে ওকে মারতে গিয়ে দেখি জুতা নাই। সাগরের ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এদিকে আমাকে পায়ে হাত দিতে দেখে সোহাগ বোঁ বোঁ করে দৌড়াতে দৌড়াতে আরেক মাথায় চলে গেছে।
একদিন তুশির সাথে কথা বললাম। বললাম, আপনি যেটা করছেন এটা যে পরকীয়া তা বুঝেন?
তুশি অবাক গলায় বললো, পরকীয়া হয় কিভাবে? ডিম আগে না মুরগী আগে? কে আগে এসেছে ওর জীবনে?
আমি ফোন রেখে দিলাম।
ভাবলাম বাবা-মাকে সব খুলে বলি। কিন্তু আমার আব্বু হার্ট পেশেন্ট, আম্মুর হাই প্রেশার। এদেরকে কিছু বলা আরেক দিগদারি।
ভাবলাম শ্বশুর বা এটলিস্ট শ্বাশুড়িকে বলি। এই মহিলা আবার আরেক। ছেলেকে চড়-থাপ্পড় কিল ঘুষি দিয়ে শেষ করে দিবেন,কাজের কাজ এতে কিছুই হবে না। তারপরেও একদিন বলতে গেলাম। বললাম, আম্মা! আমার আর সোহাগের মধ্যে একটা সমস্যা…
আম্মা আমারে হাত তুলে থামিয়ে দিয়ে বললেন, এটা তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কখনো ভাববা না জয়েন ফ্যামিলিতে আছো মানেই আমরা তোমাদের সব ব্যাপারে নাক গলাবো। কখনোই তা করবো না। নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিটাবা। আমি জানি এসব ব্যাপারে দখলকারী করতে নেই,এইটুকু বিবেচনা আমার আছে…
শ্বাশুড়ির বিবেচনাবোধ দেখে মুগ্ধ হয়ে চলে আসলাম। কিন্তু এই সমস্যার কোন সমাধান আমি বের করতে পারলাম না। চোখের সামনে আমার বর প্রেম করবে আরেকজনের সাথে, রাতে ভিডিও কল দিয়ে দেখাবে আমরা আলাদা থাকি আবার তাকে কিছু বলতে গেলে সে আমাকে উল্টা প্রশ্ন করবে, ডিম আগে না মুরগি আগে…? এমন সমস্যা নাটক/সিনেমাতেও নাই। সেখানে এরকম কিছু হলে অন্তত নায়ক-নায়িকা দুজনই বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে একটা সমাধানে আসে, কিন্তু সোহাগের মতো একটা মাথায় গোবর ভরা ছেলের থেকে এই ধরনের সাপোর্ট আশা করতেও আমি পারি না।
একদিন আমি আর আমার বান্ধবী বের হয়েছি সোহাগ আর তুশির সাথে দেখা। হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাকে দেখে হাত তুলে হাই জানালো সোহাগ। আমার বান্ধবী অবাক হয়ে বললো, এইটা দুলাভাই না?
আমি জবাব না দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে চলে এলাম। রাতে রাগী গলায় সোহাগকে বললাম, তুমি আমাকে হাই দিলা কেন?
সোহাগ অবাক হয়ে বললো, হাই দিবো না কেন? আমাদের মধ্যে তো কোন গন্ডগোল হয়নি যে হাই হ্যালো করা যাবে না রাস্তায়,তাই না?
আমি জিজ্ঞেস করলাম,গন্ডগোলের ডেফিনেশন কি?
সোহাগ মাথা চুলকে বললো,ওয়েল! তুমি খুবই জটিল একটা প্রশ্ন করে ফেলেছো। ব্যাপারটা আপেক্ষিক তবে….
আমি বললাম,আজ রাতে তুমি বিছানায় ঘুমাবা।
সোহাগ আঁতকে উঠে বললো, অসম্ভব! তুশি…..
আমি একটানে দরজা খুলে টানাহেঁচড়া করে ডিভান বের করতে লাগলাম। শ্বাশুড়ি উঠে এসে অবাক হয়ে বললেন, কি ব্যাপার এত রাতে!
আমি বললাম,ইন্টার্নাল ব্যাপার আম্মা। আপনি পারলে এইটা সরাতে একটু হেল্প করেন।
আম্মা আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে ডিভান টেনে সরিয়ে দিয়ে ঘুমাতে গেলেন। আর যাইহোক,তার বিবেচনা আছে!
সোহাগ অনেক রাত পর্যন্ত মেঝেতে বসে রইলো। আমি বললাম, উঠে আসো। সেদিনই মেঝেতে বমি করেছিলাম,ঐ জায়গাটাতেই।
সোহাগ লাফ মেরে বিছানায় উঠে এলো। বললো, আমাকে তুমি টাচ করবা না,প্লিজ।
আমি উদাস গলায় বললাম, আমার সে ইচ্ছাও নাই।
সেই রাতে ভয়ে তুশির ফোন ধরতে পারলো না সোহাগ। পরদিন থেকে তুশি আর ফোন ধরে না।
সোহাগ মাথায় হাত দিয়ে বললো, না জানি কি ভাবছে! কিন্তু আমি তো তেমন কিছু করিনি! লাবণ্য তুমি কি একবার….
আমার কঠিন দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বিয়ের পরের দিনের ঘুষির কথা মনে পড়ে গেলো ওর। আর কথা না বাড়িয়ে চুপ হয়ে গেলো সে।
আরেকদিন বাইরে থেকে এসে দেখলাম সোহাগ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আমার শ্বাশুড়ি ওর সামনে দিয়েই বারবার রান্নাঘরে যাচ্ছেন, আসছেন কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করছেন না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আম্মা কি ব্যাপার? আম্মা উদাস গলায় বললেন,আমি কি জানি! স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপারে আমি নাক গলাই না। এইটুকু বিবেচনা যে আমার আছে তুমি তো জানোই!
হ্যাঁ আমি জানি। দরজা লাগিয়ে সোহাগের পাশে বসে বললাম, কি ব্যাপার? লজ্জা করে না এভাবে কয়দিন পরপর ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে?
সোহাগ বললো, তুশি বিয়ে করে ফেলেছে। আমাকে ছবি পাঠিয়েছে।
আমি বললাম, অতি উত্তম! তুমিও তো বিয়ে করেছিলে তাতে সমস্যা কি? ডিম আগে না মুরগী আগে?
সোহাগ বুঝতে না পেরে বললো, কি বললে?
আমি জবাব দিলাম না।
মাসখানেক পরের কথা, একদিন রান্না করছি সোহাগ পাশে এসে দাঁড়ালো। লাজুক গলায় বললো,কি রাঁধো?
আমি বললাম,চোখ নাই তোমার?
সোহাগ সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললো,ওয়াও! ভুনা মাংস আমার খুব ফেভারিট!
আমি মাংসের মধ্যে পানি ঢেলে দিলাম। ঝোল করবো।
আরেকদিন ছাদে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছি সোহাগ পাশে এসে দাঁড়ালো। কাঁধে হাত রেখে বললো, চাঁদ নিয়ে একটা গান শুনবে?
আমি ওর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,গায়ে হাত দিবানা। হাত কেটে যমুনায় ভাসিয়ে দেবো!
সোহাগ অন্তত এটুকু জানে আমি এটা করতেই পারি,ভয়ে হাত সরিয়ে নিলো সে। কিন্তু গান থামালো না, অনেক কষ্টে মুখস্থ করেছে নিশ্চয়ই,
“ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়, চাঁদনি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়…”
বললাম, তোমার চাওয়াটা কি এখনই পূরন করে দেবো তাই চাও?
ভয় পেয়ে দুইপা পিছিয়ে গেলো সোহাগ।
Jannatul Firdous