আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ। সকাল থেকেই বৃষ্টি ঝরছে। ভাবি ভুনাখিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করছে। দারুণ সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে।
মা আমাকে জিজ্ঞেস করলো স্নেহা খিচুড়ি রান্না করছে নাকি রে তোর ভাবি?
আমি বললাম হ্যাঁ মা।মায়ের মুখটা খুশিতে ভরে উঠলো। বললো, এই বৃষ্টিতে ভুনা খিচুড়ি আর ভুনা মাংস তোর বাবার প্রিয় ছিলো।একটু বৃষ্টি নামলেই বলতো খিচুড়ি করো। ফ্রিজে গরুর মাংস নেই শুনে তক্ষুনি বেরিয়ে পড়তো বাজারে মাংস কিনতে।সেই বৃষ্টির মধ্যেই মাংস কিনে আনতো। তুই বড় হবার পর তো শুধু তোর বাবাকে বিছানায় দেখেছিস। তোর ভাগ্যটাই খারাপ।
মায়ের চেখে মুখে সেই সব স্মৃতি ঘুরে বেড়ায়। বৃষ্টির তোড় বেড়ে চলে।
বুকের ভেতর যে কান্না লুকিয়ে রাখি, বেরিয়ে আসতে চায়।
ঘরের কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি।আজ শুক্রবার বাসার সব সদস্য বৃষ্টির জন্য বাইরে বের হয়নি,বাসায় ছুটির দিনটি উপভোগ করছে।
গোসল করতে বাথরুমে ঢুকে আওয়াজ পেলাম সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে আর গল্প করছে।
ভাবি আমার সাথে পারতপক্ষে কথা বলে না, তার দরকার ছাড়া। আমি যেচে কথা বলতে গেলে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে, কথা আর এগুতে পারি না। তাড়াতাড়ি সরে পড়ি সেখান থেকে।
প্রচণ্ড ক্ষুধা নিয়ে টেবিলে গিয়ে দেখি খাবার নেই। রান্নাঘরের হাঁড়ি পাতিল ঘাটাঘাটি করে দেখলাম খাবার নেই। চুপ করে carpet এর উপর বসে রইলাম। মা ঘুমিয়ে আছেন খাটের উপর। মায়ের মুখটা কী সুন্দর! আমি কার মতো হয়েছি দেখতে !
বুকের ভিতর কান্নাগুলো বেরিয়ে এলো। আমি ওদের রুখতে চেষ্টা করেও পারলাম না।
হঠাৎ দেখি মা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন! জিজ্ঞেস করলেন খেয়েছিস?
আমি বললাম, হুম।
মা বললেন, তোর চোখে পানি কেন?
আমি বললাম, চোখ দেখাতে হবে।কেন যেন সব সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
আমি আর মা ভাইয়ের বাসায় থাকি। বাবা মারা যাবার পর একদম পুরুষ শূন্য বাড়িতে থাকাটা ঠিক হবে না ভেবে আমার বড়ভাই আমাকে আর মাকে তার নিজের সংসারে ঠাঁই দিয়েছেন।
আমার বড়আপা এই শহরেই থাকে। ওর একমেয়ে আর একছেলে।আপা দুলাভাই দুজনেই সরকারি চাকুরিজীবী। মাসের প্রথম তারিখে আপা বেতন পেয়ে এই বাসায় আসেন, মায়ের হাতে আমাদের থাকা খাওয়ার খরচ দিয়ে যান। মা পরে বড়ভাইয়ের হাতে সব টাকাগুলো দিয়ে দেন।
আমরা পাঁচ ভাইবোন। বড়আপার পর এই বড়ভাই আমার। আর একবোনের রাজশাহীতে বিয়ে হয়েছে।ওর শশুরবাড়িতে joint family। ওখান থেকে ও ছাড়া পায় না। অনেকদিন পর পর আমাদের সাথে দেখা করতে আসে।
আমার ছোটভাই বউ নিয়ে ইটালি থাকেন।আমি সবার ছোট। এখনো বিয়ে বা চাকরি কিছুই হয়নি, বয়স ত্রিশ। লেখাপড়া এম এ পাস। বিয়ে হতে যা যা লাগে তার কোন কিছুই নেই আমার। আমি দেখতে ভালো না।
চাকরি করবার প্রচন্ড ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ভাইবোনদের ইচ্ছার কাছে নিজেকে বলি দিয়েছি।ভাইবোনরা চান আগে বিয়ে তারপর স্বামী চাইলে চাকরি।
আমার ইদানীং মনে হয় এটা ওদের মনের কথা না।যতদিন বাবা বেঁচে ছিলো ততোদিনে বাবার সেবাযত্ন ডাক্তার সব আমিই দেখতাম, এখন মা অসুস্থ মায়ের সেবাযত্ন দেখাশোনার জন্যও তো একজনের দরকার তাই হয়তো ওরা আমার চাকরির ব্যাপারে interested না।
একদিন মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। মাকে রিকশায় উঠাতে খুব বেগ পেতে হয়, পায়ে ব্যথা উনার। এমন সময় দেখি সামনের বাসার ছেলেটি মাকে সালাম দিয়ে, খুব যত্ন করে রিকশায় উঠালো। মা জিজ্ঞেস করলো, রাব্বিকে পড়াতো সেই ছেলেটি না?
আমি বললাম, হ্যাঁ মা।
মা বললো, খুব ভালো ছেলেটি।কেন যেন সম্পা ছেলেটিকে বাদ দিয়ে দিল!
আমি বললাম, আমাদের দরকার কী, ওনার ছেলে উনি বুঝবে কাকে দিয়ে পড়াবে। আমি তো সব সময় পড়াই, তাতেও ওনার পছন্দ না।বলে আমি ভালো করে কিছুই শেখাতে পারি না।
হুম তাতো দেখি বলেই সম্পা। কী করবে মা আল্লাহর কাছে চাও তোমার যেন তাড়াতাড়ি একটা ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যায়।তখন দেখবে এই ভাবিই তোমাকে কত আদর করবে।এসব কথা তখন তুমিও ভুলে যাবে।
হুম তা জানি মা।
বারান্দায় বের হলেই দেখতে পাই সামনের বাসার সেই ছেলেটিকে।
মাঝারি লম্বা, ফর্সা, একমাথা কালো ঘন চুল।চোখের তারায় ঘোরে দুস্টমির অভাস। যখন তাকিয়ে থাকে আমি পাথর হয়ে যাই।
কেন যে ছেলেটি তাকিয়ে থাকে ! কী দেখে এত!
গতবছর একদিন মায়ের রিপোর্ট আনতে গিয়েছিলাম। রিকসা থেকে নামবো এমন সময় একটি ছোট্ট ছেলে একগোছা কদমফুল আমার হাতে দিয়ে ইশারা করে দেখালো সামনের বাসার দোতলার বারান্দার দিকে । বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সাদা সার্ট পড়া সেই ছেলেটি।বয়সে আমার চেয়ে দুই তিন বছরের ছোট হবে। ওর চাহনিতে যে ইঙ্গিত তা না বোঝার মতো অত বাচ্চা মেয়ে আমি না।
একদিন ভাইভাবি কথা বলছিলো, কথা কিছু কানে এলো।ভাবি বলছে, তোমার বোন তো সারাদিন বারান্দায় গিয়ে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। একটুও লজ্জা নেই, ওর চেয়ে বয়সে ছোট একটা ছেলে,তার সাথে প্রেম করবার জন্য মুখিয়ে আছে! এই জন্য সামিনকে আমি বাসায় আর ঢুকতে দেই না। আমার ছেলের লেখাপড়ার কত ক্ষতি হচ্ছে তুমি দেখো। বয়স বাড়ছে তোমার বোনের ভীমরতি ধরেছে।
আমি হতবাক হলাম, আমি কী করলাম।ছেলেটি কেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, বাসায় আসলে কেন কথা বলতে চায় সেটার জন্য আমার কী দোষ! বারান্দায় বসে আমি নানা রকম মানুষ দেখি, এ ছাড়া আমার আর কী করবার আছে।
আমার কোন বন্ধু বান্ধবী নেই। একা আমি বারান্দায় বসে বই পড়ি, গাছে পানি দেই তাতেও ভাবির এত জ্বলে কেন!
একদিন ভাইভাবি একটা বিয়েতে গিয়েছিলো।রাব্বির পরীক্ষা বলে ওকে বিয়ের অনুষ্ঠানে নেয়নি।তাছাড়া টিচার আসবে পড়াতে।
রাতে টিচার এল, চা নাস্তা নিয়ে রাব্বির রুমে ঢুকতেই দেখলাম সামিন তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
বললো, আপনার সাথে কথা আছে আমার, একটু বসবেন?
একটু দূরে খাটে বসলাম। বললাম, রাব্বির পড়ার ডিস্টার্ব হবে নাতো?
না ওর পড়া প্রায় শেষ।
তাহলে বলুন।
সামিন বললো, রাব্বি তুমি একটু ও ঘরে যাও আমি তোমার ফুপির সাথে জরুরি কথা বলবো।
আচ্ছা, বলে রাব্বি চলে গেলো ওদের বেডরুমে।
আমার অস্বস্তি লাগছিলো। কী বলবে এই ভেবে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, আমার চোখে চোখ রেখে বললো, আপনি কী কিছু বোঝেন না?
কী বুঝবো?
বোঝার কী কিছুই নেই বলছেন?
আমি বললাম, সত্যিই আমি বুঝতে পারছি না।
সামিন বললো,আপনার সেল ফোনের নম্বর দিন?
কেন? আমার নম্বর নিয়ে আপনি কী করবেন?
দরকার আছে দিন তো? আপনার ভাইভাবি আবার চলে আসবে।
আমি ওকে নম্বরটা দিয়ে দিলাম কিন্তু তারপরই মনে হলো ফোন নম্বরটা দেওয়া উচিৎ হয়নি।
অনেক রাতে সামিন ফোন দিলো।আমার শরীর কাঁপতে লাগলো।একবার রিং বেজে থেমে গেলো।আবার রিং হচ্ছে। আমি হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে অনুযোগের স্বরে বললো, এতক্ষণে ফোন ধরলেন? আপনি খুব নিষ্ঠুর।
আমি চুপ করে আছি।ওর কন্ঠস্বর আমার কানে কেমন যেন কাঁপুনি ওঠে। হৃদয় উথালপাতাল করে ।মনে হয় সবাই বুঝতে পারছে আমি ওকে পছন্দ করি!
ও বললো, আসলে বলুন তো আপনি কী আমাকে বুঝতে পারেন না? আমি যে আপনাকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই ভালোবেসেছি?
আমার কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছি।কী বলবো বুঝতে পারছি না ?
অনেকক্ষণ চুপ থাকতে দেখে বললো, কী হলো কিছু বলুন?
আমি কিছু বুঝতে চাই না। তাছাড়া আপনি আমার চেয়ে বয়সে ছোট হবেন। এমন কথা কেন বলেন? বাসার সবাই জানলে আমাকে খারাপ ভাববে।
কেন খারাপ ভাববে? ভালোবাসা কী খারাপ?
তা না, আপনি কেন বুঝছেন না, এটা একদম সম্ভব না।
আমি সম্ভব করবো।শোনো, আগামীকাল তুমি আমার সাথে দেখা করবে।কোথায় আমি টেক্সট করে জানাবো।না করতে পারবে না। ভালোবাসার এই টানকে তুমি উপেক্ষা করবে না।আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো, মুখে তুমি সেটা স্বীকার করো না।
স্নেহা তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি।
রাব্বির কাছে ভাবি কতটুকু শুনেছে জানি না। তবে পরের দিনই সামিনকে না করে দেওয়া হলো পড়াতে আসবার জন্য।
এরপর থেকে কথায় কথায় ভাবি খোঁটা দেন। বাজে কথা বলেন।
আমি বুঝতে পারলাম আমার এভাবেই চুপ করে থাকতে হবে।আমার ভেতরটা পুড়ে যায়, বুকের ভেতর তপ্ত দাহ। এভাবে চলতে পারে না।এর থেকে আমাকেই নিজের চেষ্টায় বের হয়ে আসতে হবে। পরিবারের কেউ আমাকে মুক্তির পথে আনবে না।তাই আমি ঠিক করলাম আমি জব করবো।তাতে কেউ রাগ বা অসন্তুষ্ট হলে হোক।
আমি মাকে বলে একটি জব নেই, প্রাইভেট ফার্মে। সামিনের পরিচিত বন্ধুর মামার অফিসে। ভালো salary , ভালো environment ।
ভাইবোনরা খুব রেগে যায়, বিশেষ করে ভাবি।উনার ধারণা ছিলো আমি বাসায় থাকবো ওনার ঘররের সমস্ত কাজ করবো। আমার চাকরির জন্য মাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।
আমি মায়ের সমস্ত কাজ করে তারপর অফিসে যাই।ফিরে রাব্বিকে পড়াই আর যা কাজ থাকে করি কিন্তু ভাবি আমাকে সহ্য করতে পারে না।
আমার বড়ভাইকে প্রতিদিন টর্চার করতে লাগলো।তোমার বোন যখন তোমাদের কথা না শুনে চাকরি নিলো।তাহলে এমন বোনকে তুমি কেন রাখবে বাসায়? ওকে বের করে দাও, তা না হলে আমিই বের হয়ে যাবো।আমার বড়ভাই নিরুপায় হয়ে মাকে বললো, ও যখন চাকরি করছে তাহলে ওকে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে বলেন।সম্পা ওকে রাখতে চাইছে না।
মা হায় হায় করে বললেন, না তুমি এমন কাজ করো না। আমার মেয়েটার বিয়ে হয়নি এখনো।একা একা বাসা ভাড়া করে থাকলে, কেউ ওকে আর বিয়ে করবে না।
সেটা আমি জানি না মা।আপনি আপনার আরো ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে ওর কী ব্যবস্থা করবেন খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলুন।সম্পা একবার যদি রাগ করে ওর বাবার বাসায় চলে যায় তাহলে আর ওকে ফেরানো যাবে না।
আমি সব আড়াল থেকে শুনলাম।মাকে বললাম মা আমাকে কেউ বিয়ে করবে না আর আমিও বিয়ে করবো না স্থির করেছি।আমি বাসা দেখে আগামী মাসের মধ্যেই চলে যাবো।
মা আমার আরো ভাইবোনদের সাথে কথা বললো, কেউ আমার দায়িত্ব নেবার জন্য রাজি হলো না।সব ভাইবোন আমার জন্য চিন্তিত।কেউ বললো, বাসা ভাড়া করে থাকতে, কেউ বললো, হোস্টেলে থাকতে।বড়আপা বললো, স্নেহা তুই আমার সাথে থাকতে পারতি কিন্তু তোর দুলাভাইয়ের বাবা মা আমাদের সাথে থাকে। কী করে আমি আমার ওখানে রাখি তোকে।
সামির ব্যাংকে জব পেয়েছে।খুশি হয়ে একদিন লাঞ্চ করালো।খুব সুন্দর একটা শাড়ি কিনে দিলো।
এত আনন্দের মাঝে আমি ওকে বলতে পারলাম না আমার এই crisis এর কথা।
আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়েছি বাসা খোঁজার জন্য।আমি একা থাকবো জেনে কোন বাড়িওয়ালাই বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না।খুব মুশকিলে পড়লাম।এদিকে ব্যাগে মোবাইল বেজেই চলেছে।
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে অস্থির হয়ে সামিন বললো, তুমি কোথায়? কতক্ষণ হয় ফোন করছি ধরছো না কেন?
আমি বললাম বাসা খুঁজতে বেরিয়েছি। ব্যাগে আমার মোবাইল তাই রিং শুনতে পাইনি।
সামিন বললো, বাসা কেন?
আমার জন্য।
তোমার জন্য কী বলছো তুমি?
একদম ঠিক বলছি।
তুমি এখন কোথায় বলো তো? আমি আসছি ওখানে।
কিছুক্ষণ পর সামিন এলো, আমার হাত ধরলো। আমার এতক্ষণের দম বন্ধ হয়ে আসা সময়গুলো এক নিমেষেই বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে গেলো। আমার হাত যেন এক ভালোবাসা আর পরমনির্ভরতা পরশ পেয়ে শান্তি পেলো।
সামিন কফি হাউজে নিয়ে গেলো আমাকে, কফির অর্ডার দিয়ে সব শুনলো, কেন বাসা ভাড়া খুঁজছি। সব শুনে বললো, আমার আম্মুকে পাঠাবো আগামীকাল বিয়ের proposal নিয়ে।
আমি বললাম, সত্যি!
সামিন বললো, hundred percent।
আমার চারিদিকে রঙধনুর সাতটি রঙ ঝলমল করতে লাগলো।আমার হৃদয় চঞ্চল হরিণীর মতো লাফাতে লাফাতে চারিদিকে আলো ছড়াতে লাগলো।
পরদিন ছিলো শুক্রবার। সামিনের মা আর মামা এলো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ভাবি ভেবেছিলো, উনারা বাসায় এসেছে আমার নামে কোন নালিশ করতে। তাই ভাবি খাতির করে বসিয়ে চা নাস্তা খাওয়ালো। তারপর যখন শুনলো সামিনের সাথে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, তখন তো ভাবি রেগে গেলো। বললো, আপনারা জানেন না ছেলে আর মেয়ের বয়স?
স্নেহা তো সামিনের বড় হবে। এই বিয়েতে আমাদের মত নেই। আমার বড়ভাই কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলো।
সামিনের আম্মা বললো, আমার ছেলের স্নেহাকে পছন্দ আর আমাদেরও। আমার মনে হয় ওরা সম বয়সী হবে।আমার সামিনকে আমি দেরি করে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম ।
আমার ভাবি বড়ভাইকে ভেতরে ডেকে নিলো। ভাইভাবি কী কথা হলো, তারপর আমার বড়ভাই এসে বললো, আমরা এই বিয়েতে রাজি না।আপনারা অন্য কোথাও ছেলের বিয়ে দিন।
আমি বুঝতে পারলাম, ভাইভাবি আমার বিয়ে হতে দেবে না।
পরদিন সামিন বললো, তোমার ভাইভাবি কী সৎ।
যা কী যে বলো না তুমি?
আম্মু বললো,তোমাকে নিয়ে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে।
আমি বললাম, তাহলে তাই হোক।
আষাঢ়ের প্রথম দিন, বৃষ্টি ঝরছে।আজ আমাদের বিয়ে।সামিন অনেকগুলো বৃষ্টিতে ভেজা কদমফুল আমার হাতে গুঁজে দিলো।
ছোটগল্প
“বৃষ্টি ভেজা কদমফুল”
ফারজানা আহমেদ
.