®রোজা রহমান
[ সম্পূর্ণ গল্পটা প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্কদের জন্য। ]
এর পরে কোনো পর্বে এলার্ট না থাকলেও কোনো কথা হবে না৷ যারা পড়বেন প্রাপ্তমনস্ক নিয়ে পড়তে আসবেন। কঠোর ভাবে এলার্ট করা হলো। ভেতরের ১৮+ শব্দ নিয়ে কোনো কথা হবে না ]
‘
“আম্মুউউউউ “
উচ্চ শব্দে ডাকতে ডাকতে বাথরুম থেকে অর্ধভেজা শরীরের বেরিয়ে এলো কুয়াশা। কারণ সে শ্যাম্পু করতে গিয়ে তার শ্যাম্পুর বোতল না পেয়ে মেজাজ তার সপ্তম আসমানে। গত সপ্তাহে শ্যাম্পু কিনেছে সে। তার দিব্ব্য মনে আছে। আর এখন সেই শ্যাম্পুর বোতল নেই! এটা যে কে নিতে পারে তার বেশ ভালো করে জানা আছে সেটা। কুয়াশার আম্মু আজমিরা বেগম মেজাজ দ্বিগুণ চড়িয়ে রান্না ঘর থেকে খুন্তা হাতে করে বেরিয়ে এলেন৷ এসে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলেন৷ দুই জা মানা করা স্বত্তেও থামলেন না৷ এর মাঝে কুয়াশা আবার ডাকতে লাগল,
” আম্মু আমার শ্যাম্পুর বোতল নিয়েছে কে? “
তার বলার মাঝে আজমিরা বেগম মেয়ের দিকে তেড়ে এলেন৷ রাগের সাথে বললেন,
” এই তোকে এভাবে চেঁচাতে মানা করি নি আমি? এ ভাবে গলা উঁচু করে কথা বলতে বারণ করেছি কিনা বল? ”
বলতে বলতে মেয়েকে মা-রতে যাচ্ছেন৷ এর মাঝে সেখানে তুষার ছুঁটে এলো। এসে ছোট আম্মুকে আটকাল। জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে? ছোট আম্মু কুশুকে কেন মা-রছ? “
” তুই দেখছিস না কিভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে। মেয়ে মানুষের গলায় এত জোর কেন হবে? সব সময় চেঁচাবে। ফাজিল কোথাকার “
” কিন্তু চেঁচাচ্ছে কি নিয়ে? “
এই বলে সে কুয়াশার দিকে তাকাল। তুষার আদুরী কন্ঠে বলল,
” কুশু কি হয়েছে? আমাকে বল! “
তুষারের কথা শুনে সে ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিল৷ নালিশ করল ভাইয়ের কাছে। বলল,
” আমার নতুন শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে গেছে ওই বুনো ওল। আমি গত সপ্তাহে কিনেছি মাত্র। এখন শ্যাম্পু করতে গিয়ে পাচ্ছি না। আমি কি দিয়ে শ্যাম্পু করব এখন? ”
তুষার বোনের কাছে এসে সান্ত্বনা দিতে দিতে বলল,
” আচ্ছা কাঁদিস না৷ আমি বকে দেব৷ আর এখন আমার বা তোর ভাবির শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নে। আমি বিকেলে তোকে এনে দেব। “
কুয়াশা বলল,
” না তুমি ওকে আমার সামনে মা-রবে। তবেই আমি শান্তি পাব। “
” আচ্ছা মা-রব। যা এখন গোসল করে নে৷ আমি তোর ভাবি কে দিয়ে শ্যাম্পু পাঠিয়ে দিচ্ছি। “
কুয়াশা সম্মতি দিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে বলল,
” তোমার ছোট আম্মুকে নিয়ে যাও। এই মন্ডলের মেয়ে আমাকে শুধু মা-রে৷ আমায় ষাঁড় বলল! আমার দোষ খোঁজে সবসময়। ডাকব না আমি তাকে আম্মু বলে। ”
বলতে বলতে ধারাম করে দরজা বন্ধ করল বাথরুমের। আজমিরা বেগম কটমট নজরে তাকিয়ে আছে। আর তুষার হাসছে মিটমিট করে।
‘
কুয়াশা এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে। পুরো নাম কুহেলিকা কুয়াশা। বাবা নেই৷ ছয় বছর আগে এক্সি-ডেন্ট করে গত হয়েছেন। সবাই এই জন্য আরো আদর করে। এই বাড়ির ছোট ছেলের মেয়ে কুয়াশা।
এই বাড়ির নাম মালিথা ভিলা। কুয়াশার বাবার নাম ছিল জাহিন মালিথা। বড় চাচুর জাকির মালিথা আর মেজো চাচু জাহিদ মালিথা।
জাকির মালিথার দুই ছেলে। জাহিদ মালিথারও দুই ছেলে। আর জাহিন মালিথার এক মেয়ে এক ছেলে। কুয়াশার দাদুরও কোনো মেয়ে ছিল না৷ তিনটাই ছেলে৷ বলতে গেলে মেয়েই নেই এই বংশে। এই জন্য ছোট ভাইয়ের একমাত্র মেয়েকে সবাই চোখের মনি করে রাখে। এই জন্য অতিরিক্ত জেদও বটে। আদরে আদরে বাদর হয়েছে আরকি।
__________
এদিকে দুপুরে বাইরে থেকে এসে আরামে ঘুমচ্ছে কুয়াশার ভাষায় যাকে বলে বুনো ওল তার নাম শিশির মালিথা। ল’ নিয়ে পড়াশোনা করছে সে। আজ শুক্রবারে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আরামে ঘুমচ্ছে।
ঘুমের মাঝে শরীরের উপর কিছু পড়ছে সে অনুভব করছে। কিন্তু ঘুমের ঘোরে সেটা ঠাওর করতে পারছে না ঠিক কি পড়ছে? আস্তে আস্তে শরীর থেকে উপরে উঠতে উঠতে মুখের উপর আসছে৷ যখন মুখের উপর পড়া শুরু করল তখন সে ধরফর করে এক লাফে উঠে পড়ল। সে উপর হয়ে ঘুমাচ্ছিল। তার আরামের ঘুম হারাম। উঠে মাথা এপাশ ওপাশ ঝাঁকিয়ে বুঝতে পারল পানি। পানির উৎস খুঁজতে সামনে তাকাল৷ দেখল এক জগ পানি পুরোটাই ওর গায়ের উপর ঢেলে দিয়েছে কুয়াশা৷ বিছানা সহ সে ভিজে জুবুথুবু। মেজাজ সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেল। শরীরের সম্পূর্ণ রাগ নিয়ে রাম ধমক দিয়ে উঠল,
” এই কুয়াশার বাচ্চা!! “
কুয়াশা কিছুটা দমে গেল ধমকে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করল না৷ সেও রাগের সাথে বলল,
” এই বুনো ওল, চোরের মায়ের বড় গলা দেখাবি না একদম! ”
এরই মাঝে বাড়ির প্রায় সদস্যই হাজির হলো শিশিরের বাজখাঁই কন্ঠে। আর শিশির এদিকে আরো রেগে গেল ওকে তুই তুকারি করতে শুনে৷ তার চার বছরের বড় আর তাকে তুই তুকারি করে? এটা সে কখনো মানতে পারে না। সে এক লাফ দিয়ে নেমে যেই না কুয়াশার চুল ধরতে যাবে ওমনি দৌড়ে বড়আম্মুর আঁচলের নিচে লুকিয়ে পড়ল। শিশিরের আম্মু জাকিয়া বেগম রাগ নিয়ে বললেন,
” কি হয়েছে এখানে? এভাবে তেড়ে আসছিস কেন ওর দিকে? “
” তুমি দেখছ না আম্মু এই বে-য়াদবটা আমাকে ভিজিয়ে কি করল? “
” হ্যাঁ ঠিক করেছে। তুই ওর শ্যাম্পুর বোতল চুরি করেছিস কেন? ”
” আম্মু!! তোমার ছেলেকে তুমি চোর বলছো? “
” হ্যাঁ বলছি। কারণ তুই নিয়েছিস “
” আচ্ছা!! আর ও যে আমার নতুন টি-শার্ট টা নিয়ে নিয়েছে তার বেলাই? “
” ওর পছন্দ হয়েছে তাই নিয়েছে৷ “
শিশির মুখটা অসহায় করে দাঁড়িয়ে রইল। সে আর কি বলবে মাকে? ওর এমন লুক দেখে সেখানে থাকা তুষারের বউ বৃষ্টি, আর কুয়াশা জোরে শব্দ করে হেসে দিল। শিশির মৃদু রাগ নিয়ে বলল,
” ভাবি!! “
” দেবরজী তোমার অবস্থা দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে। দাঁড়াও একটু হেসে নিই। “
সবাই মিটিমিটি হাসছে শুধু বৃষ্টি আর কুয়াশা উচ্চ শব্দে হাসছে। সে রাগ নিয়ে কটমট করতে করতে কুয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” আসছি আমি। তারপর তোর ক্লাস নিচ্ছি। ”
কুয়াশা শাড়ির আঁচলের মাঝে থেকেই মুখ ভেঙচাল। আজমিরা বেগম এখানে থাকলে কুয়াশার খবর করে ছাড়ত। নেই বলে সাহসটা পেল। কুয়াশার ছোট ভাই হিমেল বলল,
” বুবু, ভাইকে এমন ভিজালে কেন? “
” বেশ করেছি। দূর হ এখান থেকে ভাই কি চামচি”
বলে মুখ ঝামটাল। কুয়াশার মেজো আম্মু আম্বিয়া কুয়াশার কান চেপে ধরে বললেন,
” খুব পাজি হচ্ছিস দিন দিন দু’টো”
“মেজো আম্মু তোমাদের ছেলে দিন দিন চোর হচ্ছে “
হেসে ফেলল সবাই।
জাকিয়া বেগম বললেন,
” আজ আর এই মুখো হোস না “
” জিন্দেগীতেও না ”
‘
এরা দুটো এরকমি প্রায় সারাদিন রাত একে অন্যকে নাজেহাল করতেই থাকে৷ কেউ কাউকে দু’চোক্ষেও দেখতে পারে না। চোখের বিষ একে ওপরের। সম্পর্কে যে তারা চাচাত ভাই বোন সেটা মানে না৷ এ বলে, ‘ তুই আমার কেউ না তো ও বলে তুই আমার কেউ না ‘ সারাদিন চুলোচুলি। এমনকি চুল ধরে মা-রা-মা-রিও করে। ঝগড়া লাগলেই শিশির কুয়াশার চুল ধরে। এই জন্য সে ঝগড়া করতে আসে চুল বেঁধে। আর এগুলো সেই ছোট থেকে হয়ে আসছে৷ বাড়ির প্রতিটা সদস্য বিরক্ত হতে হতে এখন সয়ে নিয়েছে৷ কারণ এদের এই যুদ্ধ ইহজীবনেও বোধহয় শেষ হবে না। সেই জন্য বাড়িতে সবাই ওদের নাম দিয়েছে,
‘বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল’ কেউ কারো থেকে কম না৷ দুজনেই সমান তালে চলে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে। পারে না মানে একদমই পারে না। মানে যাচ্ছে তাই এক্টা অবস্থা। শত্রুরাও বোধহয় এমন করে না।
‘
শিশির কুয়াশাকে সহ্য করতে না পারার কারণ হচ্ছে এই বাড়িতে সকলের কাছে সে অতিরিক্ত আদরের আর তার জিনিসে সব সময় ভাগ বসায় বলে। সেটাও একদম ছোট থেকে। কুয়াশা ছোট থেকে সবার আদরের। কুয়াশার আগে শিশির ছিল সবার আদরের সবার ছোট ভাই এবং ছেলে হবার কারণে। যদিও এখনো কমেনি আদর। আর শিশির এটাই সহ্য করতে পারে না তার আদরের ভাগ বসিয়েছে বলে। ছোট থেকে হিংসে করতে করতে সেটা বড় হয়ে কমে তো নি-ই বরং তা বড় রূপ নিয়েছে।
আর এসবের মাঝে আশ্চর্যের একটা ব্যাপার হলো শিশিরের থেকে একদম কাঁটায় কাঁটায় চার বছরের ছোট কুয়াশা। মানে তারা একই মাস ও একই তারিখে হয়েছিল। আর সেটা ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে। থার্টি ফার্স্ট নাইট যাকে বলে। তুষার, শিশিরে বড় ভাই সে শীতের মধ্যে হয়েছিল বলে তুষার রেখেছিল। তারপর তুষারের সাথে মিলিয়ে সবার নামকরণ করেছিলেন বাবা মায়েরা। পরিবারের বড় ছেলে তুষার।
যায়হোক শিশির, কুয়াশার শুধু জন্ম তারিখ, মাসেরই মিল নেই প্রায় সব কিছুতেই মিল আছে যেমন, খাবার, রঙ, জায়গা এমন প্রায় জিনিসই। শুধু দু’জনের মনের মিলটাই নেই এটাতেই যত দুনিয়ার অনিহা তাদের।
শিশির ল’ তে পড়ে বলে কুয়াশাও ল’ নিয়ে পড়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে এখন ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে উঠেছে। তার কথা সে বিরোধী পক্ষে লড়বে শিশিরের সাথে লইয়ার হয়ে এবং প্রতি পদে পদে শিশিরকে হারাবে। সেই আশা, স্বপ্ন, জেদ নিয়ে নাকে মুখে পড়াশোনা করে সে।
| চলবে |
এই লিংকে গিয়ে পুরো পোস্ট পড়ে আসবেন