®রোজা রহমান
‘
কেটে গেছে আরো এক সপ্তাহ। এই এক সপ্তাহে সবাই বেশ জম-জমাটভাবে বিয়ে এবং ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। শপিং করা নিজেদের শারীরিক চর্চা, রূপ চর্চা, ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যনিং শ্ল্যানিং সব একদম কনফার্ম করে বসে আছে বাড়ির ছোটরা। মালিথা বাড়িতে যেন দুই সপ্তাহ আগে থেকে ঈদ, বিয়ের আমেজ লেগে গেছে৷ কাজিনরা সকলে মিলে হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা, মাস্তি সকলকে নিয়ে ঘুরাঘুরি এক্কেবারে এলাহিকাণ্ড। ছোটদের এমন আনন্দে মালিথা ভিলার প্রতিটি কোণায় কোণায় প্রাণ সঞ্চার হচ্ছে।
সবকিছুর মাঝে শিশির, কুয়াশার ঝগড়া, মা-রা মা-রি চুলোচুলি কেউ মিস করে নি। ওদের ঝগড়া সবাই চিপস সহ পপকর্ন নিয়ে এনজয় করেছে। করেছে বললে ভুল হবে করে চলেছে। সবসময় সেটা সকলে ফ্রি ডেটা এবং ফ্রি টিকিটে দেখতে পারে। ফ্রি জিনিসটায় সকলকে আনন্দ দেয়। ফ্রিতে বিনোদন পেলে কি আর কেউ মিস করতে চাই? একদম না! কখনো মিস করতে চাই না। তাই শিশির কুয়াশার ঝগড়া, চুলোচুলিও কেউ মিস করে না। বিনা পয়সায় সকলে এনজয় করে।
এই কয়দিনে অনি আর অয়ন শিশির, কুয়াশাকে বেশ ভালোই নাজেহাল করে চলেছে। শিশিরের সেদিনের বলা কথাটা ধরতে পেরে অয়ন অবশ্য এখন জায়গা মেপে কুয়াশার সাথে ফ্লার্ট করে। কুয়াশার ভাইদের সামনে বেশি সুবিধা করতে পারে না। কুয়াশারও অয়নকে পছন্দ না বিধায় পাত্তা দিচ্ছে না। যাকে পছন্দ না তাকে পাত্তা কি করে দেবে? ওমন পছন্দ তো রনিও করে। সবাইকেই কি তাহলে সে পাত্তা দেবে? তার কথা,
“যে রাজকুমার আমার মনের রাজ্যের জায়গা নিতে পারবে এই রাজকন্যা তার রাজ্যর রাজরাণী হবে ”
তো সে জায়গা হয়তো এখনো করতে পারছে না কেউ তাই, রাণীর মনের দখলদারিও কেউ করতে পারছে না।
‘
এদিকে এই সপ্তাহে আত্নীয় স্বজনদের ইনভাইট করা শুরু করেছে সকলে। যাদের বাসায় গিয়ে দাওয়াত করা প্রয়োজন তাদের বাসায় গিয়ে দিচ্ছে আর যেখানে কার্ড পাঠানোর প্রয়োজন সেখানে কার্ড পাঠাচ্ছে।
শিশির, কুয়াশা, তুষার, তুহিন, নীহার, হিমেলের বন্ধু বান্ধব সহ বৃষ্টির মায়ের বাড়ি, শিশিরের নানার কুলের লোক সহ জাকিয়ার ভাই, বোনদেরও দাওয়াত করেছে৷ টুকটাক ভালো, কাছের আত্মীয়দের মধ্যে পড়ে এমন সকল আত্মীয়দেরই দাওয়াত করছে। তুষারের বিয়েতেও এমন বড় আয়োজন করা হয়েছিল। জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথা মিলেই করেছিলেন। সেই হিসেবে তুহিনের বিয়েতেও দুই ভাই মিলে আয়োজন করছেন।
এদের বাড়ির এই জিনিসটা খুবই মনোমুগ্ধকর। তিন ভাইয়ে চূড়ান্ত মেলবন্ধন। ভালোবাসার অভাব নেই পরিবারের মাঝে৷ ভাইদের মাঝে, জা’দের মাঝে অপার ভালোবাসা এবং দরদ। এটা জালাল মালিথা-ই তৈরি করে গেছিলেন। তিনিই শিখিয়েছিলেন যেকোনো পরিস্থিতিতে একে অন্যের সঙ্গ না ছাড়তে সারাজীবন একে ওপরের পাশে থেকে সাপোর্ট করতে, ভালোবাসতে। ভাইদের থেকে ভাইয়ের ছেলে-মেয়েগুলো শিখেছে৷ এজন্যই তো সকলের মাঝে ভালোবাসাটা সর্ব প্রথম কথা বলে।
_______
‘আইজ চাঁদরাইত, কাইল ঈদ’
গ্রাম্য আঞ্চিলক ভাষায় এটি একটি প্রচলিত কথা। এই চাঁদরাতে যে কতবড় আনন্দ এসে হাতছানি দেয় গ্রামের ছোট বড় ছেলে-মেয়েদের কাছে, সেটা শুধু যারা গ্রামে বাস করে তারাই উপভোগ করতে পারে৷ চাঁদ রাতে এবাড়ি থেকে ও বাড়ি বড় বড় বোন কিংবা পাড়া ঘরে বোন কিংবা অন্যদের থেকে মেহেদী দিয়ে আনন্দ করে ছোটরা, বড়রা। একজোট হয়ে পিকনিক করে ছোট, বড় সকল প্রকার মানুষ। ঈদের আগের দিনে রাত জেগে মেহেদী পড়ে, পিকনিক করে রাত কাবার করে পরেরদিন ঈদ উৎযাপন করে।
‘
তো আজ সেই চাঁদরাত, কাল ঈদ। ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। সেই অনুযায়ী মালিথা ভিলার সকলে প্ল্যান করেছে পিকনিক করবে। আয়োজন ছাদে করা হবে। ছোট বড় সকলে করবে কিন্তু আয়োজনে, আনন্দে ছোটরা দায়িত্ব নেবে।
সকাল থেকে এখন দুপুর পর্যন্ত একজোট হয়ে এই প্ল্যান নিয়েই সকলে পড়ে আছে। পিকনিক কি দিয়ে হবে? কিভাবে আয়োজন হবে? সবকিছুর নোট করছে। বৃষ্টি লিখছে বাকিরা হুকুম জারি করছে। একের পর এক লিস্টে নাম লিখছে খাবার তালিকার এবং উপকরণের।
পিকনিকে খাবার আয়োজনে হবে, বিরিয়ানির সাথে নাকি আবার রোস্টও করতে হবে। এটা কুয়াশার কথা। এই কথা বলাতে শিশির এবং তার মাঝে একচালান যু-দ্ধ হয়েছে। শেষে কুয়াশায় জিতেছে। কুয়াশার কথা অনুযায়ী বিরিয়ানি, রোস্ট, শাহী বোরহানি। ঠান্ডা কোল্ড ড্রিংক’সর মধ্যে, কোকাকোলা ও সেভেনআপ আরো অন্যান্য কিছু পদ থাকছে। সেসব ঠিকঠাক করে বাজারের দায়িত্ব ছেলেদের ঘাড়ে পড়েছে।
যদিও সব বাড়িতেই আছে। কিন্তু তারা চাইছে পিকনিকের জন্য আলাদাভাবে কিনতে। এতেকরে নাকি আনন্দ দ্বিগুণ হবে।
সেটা শুনে শিশির নীহারকে বলল,
” তুই কর গিয়ে এই গরমে আমি বাজার করতে যেতে পারব না। পারলে তোরা যা আমি নেই এসবে। খাবার টাইমে ডাকবি চলে আসব। এখন গেলাম আমি ”
শিশিরের কথা শুনে কুয়াশা চটে গেল। রাগ নিয়ে বলল,
” কি শখ দেখ রাজপুত্তুরের, লাগে যেন তোলা কোনো শোপিচ। হ্যাঁ গো, তোমারে কি তুলে রাখব? আমরা সকলে খেটে খেটে ম-রব আর তোমাকে শুইয়ে রেখে তয়ের করে গিলাব? কোন মুখ নিয়ে খাবার সময় গিলতে আসবা শুনি?”
কুয়াশার কথায় শিশির চটে বো-ম হয়ে গেল। কি মুখের ভাষা? থার্ডক্লাস একটা মেয়ে হচ্ছে দিন দিন। শিশির রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা..! তোর মুখের ভাষা ঠিক করবি নাকি আমি উঠব? বে-য়াদব কত প্রকার হচ্ছিস সেটা কিন্তু দেখিয়ে ছাড়ব সাথে সোজা করেও ছাড়ব। ”
তারপর একটু থেকে বলল,
” আর হ্যাঁ, আমি এমনি গিলব নাকি কাজ করে গিলব সেটা তোকে কে দেখতে বলছে? তুই কাজ কর না গিয়ে, কাজের বেটি রহিমা। ”
কতবড় সাহস!! কাজের বেটি রহিমা বলল! ফুরফুরে মেজাজটা দিল নষ্ট করে এই বুনো ওল। শিশির অন্যপাশে সোফায় বসে ছিল ওর দিকে তর্জনী আঙুল তাক করে বলল,
” এ্যাই বুনো ওল..!.. “
আর বলতে পারল না। তুহিন থামিয়ে দিল৷ বলল,
” আহহ, করছিস কি তোরা? থাম! তোদের কাউকে কোথাও যেতে হবে না। আমি আর ভাই গিয়ে সব কিনে এনে দেব। রান্নাও করতে হবে না। “
‘
তুহিন, তুষার এতক্ষণ ছিল না বসার ঘরে। ওদের ঝগড়ার মাঝেই উপর থেকে এসেছিল। এসেই নিত্যদিনের ধারা দেখছিল আরকি।
‘
তুহিনের কথায় সকলে বাঁধ সাধল। সকলে বলল রান্নারা নিজেরাই করবে। কেননা পিকনিকে নিজেরা রান্না না করতে পারলে পিকনিকের মজা কিসের?? তাই সকলে বলল বাজার যেন তুহিনরা করে দেয় আর রান্না তারা মেয়েরা করবে। সেকথা অনুযায়ীই সবকিছু গোছানো হলো।
‘
বিকেলে ইয়াসমিন আর ঈশা আসল। এদের আসতে দিচ্ছিল না মা-বাবা। আমিনুল হকের কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। বিয়ের আর মাত্র সপ্তাহখানেক আছে সেখানে ওবাড়িতে কিসের যাওয়া? একবারে বিয়ের দিন যাবে তারআগে না। ইয়াসমিনেরও ইচ্ছে ছিল না। সে অনেক করে মানা করেছিল কুয়াশাদের। কিন্তু কুয়াশা সহ বৃষ্টি, অনি আম্বিয়াকে ধরে রাজি করিয়েছে। তারা সকলে আনন্দ করবে আর ওরা দু’জন বাদ থাকবে!!
আম্বিয়া ফোন করে বলেছেন,
” আমাদের বাড়ি বউ হয়ে আসবি তো হয়েছে? বিয়ের সপ্তাহ রয়েছে তো কি হয়েছে? সব সময়ই এক তোদের জন্য। এখানে সবাই ঈদ উপলক্ষে আনন্দ করছে সেটাতে সামিল হো এসে। তোরা শুধু দু’জন বাড়িতে একা থেকে কি করবি? বিয়ের অনুষ্ঠান পড়ে এখন ঈদ আনন্দ কর। “
এমন আরো অনেক কথায় বলে ইয়াসমিনকে এনেছেন। সাথে আমিনুল হককেও বলেছেন৷ ওরা দুই বোনও আর মানা করেনি। সকলে যখন আনন্দ করছে তারাও করুক। তুহিন গিয়ে দু’জনকে এনেছে। ঈশা’রা আসতেই যেন আরো আনন্দ বেরে গেল।
‘
সন্ধ্যার সময় আসতেই রান্নার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আগেই গোছগাছ করা হয়েছিল। এখন শুধু রান্না করতে হবে। ছাদের উপর রান্নার আয়োজন করা হয়েছে। মিলেমিশে সবাই কাজ করছে। ছেলেরাও হাত লাগিয়েছে। ছাদের খোলামেলা জায়গা বেশ সুবিধা হচ্ছে। যে গরম পড়ছে! এই গরমে ছাদ-ই ব্যাটার। ছাদে লাইট আছে সেটা সহ লাইটিং করেছে হিমেল আর নীহার। এরা দু’টো এই কাজ খুব ভালো পারে। হিমেল তো আরো পটু।
গানের আয়োজনও আছে ছাদের এককোনে। মৃদু শব্দে গানও হচ্ছে। তাদের ছাদ ছাড়াও অন্যান্য ছাদেও লাইটিং করে গান বাজিয়ে পিকনিক করছে অনেকে।
‘
সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত নেমেছে ধরণীর বুকে। পূর্ণিমার রাত সহ চারিদিকের কৃত্রিম আলোয় ছেয়ে গেছে। মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। উৎসবমুখর পরিবেশ। ছোটারা মনদিয়ে কাজ করছে। বাড়ির তিন জা দেখিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। তাদের কাউকে হাত দিতে দিচ্ছে না।
একসময় বৃষ্টি বলল,
” কুয়াশা শসা আনা হয়নি এখানে। তুমি গিয়ে নিয়ে আসো রান্নাঘরে আছে। ঝুড়িতে রেখে এসেছি দেখো, গিয়ে আনো। ”
কুয়াশা সম্মতি দিয়ে নিচে হাঁটা ধরল। কুয়াশা যেতেই একটু পর অয়ন ও নামল। কারণ তার ফোনে কল এসেছে। এখানে গানের শব্দ শোনা যাবে না বলে নিচে নেমে গেল। এটা শিশির লক্ষ্য করল। শিশির দেখল না যে অয়নের ফোনে কল এসেছে৷ ও শুধু দেখল অয়ন নেমে গেল, আর কিছুক্ষণ আগে কুয়াশা গেছে বাড়ির মধ্যে। এখন আর কোনো সদস্য নেই বাড়ির মধ্যে। ছোট, বড় সবাই ছাদে। চাচুরা নেই অবশ্য কিন্তু তারা বাড়ির মধ্যেও নেই বাহিরে গেছেন।
শিশিরের মেজাজটা গেল চড়ে। অয়নের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। আর মাথার মধ্যে কিছু কথা বারি খাচ্ছে, অয়নের কোনো খারাপ মতলব নেই তো? যে কোনো খারাপ কিছু করতে চাইছে নাকি কুয়াশার সাথে? যতই হোক বোন তার৷ নাকি সেই ভুল দেখছে। অয়নকে অতটা খারাপও মনে হয় না। কিন্তু যদি হয়? যদি খারাপ কিছু করে? এসব ভেবে শিশির উঠে দাঁড়াল। উদ্দেশ্য অয়ন কি করে দেখার। শিশির যখনি নামতে যাবে তখন গেল কারেন্ট চলে। সবাই হা হুতাশা করতে লাগল। কারেন্টের চোদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগল। সময় পেল না যাওয়ার।
এবার শিশির একটু বিচলিত হলো। বাড়ির মধ্যে শুনশান নীরবতা। কেউ নেই, আলোও নেই। পুরো অন্ধকার। কুয়াশা তো একাই আছে বোধহয়। অন্ধকারে ভয় টয় পায় কিনা গোবর ঠাঁসাটা। যদিও সেসব দেখার বিষয় তার না তবুও অয়নও নিচে শুধু এটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাবতে ভাবতে নিচের উদ্দেশ্যে গেল সে।
‘
এদিকে কুয়াশা কেবলই রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বসার ঘর পর্যন্ত এসেছিল৷ তখনি কারেন্টটা গেছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে সে এক পাও ফেলতে পারছে না। চোখে হঠাৎ অন্ধকারও সইছে না। ভয় পেল অনেকটা৷ এতবড় বাড়িতে এখানে কেউ নেই। সে একা৷ অন্ধকারে এমনই ভয় হয়। তবুও সাহস যুগিয়ে অন্ধকারে আন্দাজ মতো পা ফেলে সোফার টি-টেবিল অবধি এসে হাতের ঝুড়িটা রাখল। তার কাছে ফোন নেই যে ফোনের ফ্লাস জ্বালাবে। ফোন ছাদে সাথে আনে নি। আনবে কি করে? সে কি জানত কারেন্ট যাবে? আর কারেন্ট ছিল এবং সবখানে আলো ছিল বলে ফোন আনার প্রয়োজনও পড়ে নি৷
কি আর করবে! এখন কাউকে ডাকলেও শুনতে পাবে কি পাবেনা কেউ তাই অন্ধকারে হাতরে হাতরে আবার রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে যেতে লাগল। উদ্দেশ্য ওখান থেকে আগে আলো জ্বালাবে। যদিও ভয় করছে তবুও নিজের বাড়ি বলে একটু দমে আছে। এমন সময় অয়ন উপর থেকে আসছে। সে রুমে এসেছিল৷ কারেন্ট যাওয়াতে ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে আসছে। উপর থেকে আলো আসতে দেখে কুয়াশা তাকিয়ে দেখল অয়ন। কুয়াশা অয়নকে ডাকল,
” অয়ন ভাইয়া..! লাইট দাও ”
অয়ন কিছুটা অপ্রস্তত হয়ে গেল। অন্ধকারে কোনো মেয়ে কন্ঠ পেয়ে। পরক্ষণে কুয়াশার দিকে লাইট ধরে তাকে দেখতে পেল। জিজ্ঞেস করল,
” কুয়াশা! অন্ধকারে তুমি কি করছ এখানে? ”
বলতে বলতে নামতে লাগল অয়ন৷ কুয়াশা পুরো ঘটনাটা বলল। অয়ন নেমে আসতে আসতে কুয়াশার দিকে যখনই তাকাল তখনই অসাবধানতায় এক সিঁড়ি বেশি অতিক্রম করে ফেলার কারণে নিচে পড়েই যাচ্ছিল কিন্তু নিজেকে সামলে নিল। পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে। নিজেকে সামলাতে পারলেও ফোনটা সামলাতে পারল না। মাঝ বরাবর সিঁড়ি থেকে একদম নিচে গিয়ে ছুঁটে পড়ল ফোন। যার দরুন ফোন ফেটে তো গেলই সাথে বন্ধও হয়ে গেল। ইন্না-লিল্লাহ হয়ে গেছে বোধহয় ফোনটা। কুয়াশা এবার চেঁচিয়ে উঠল। আরো অন্ধকার হয়ে গেল। অয়ন বিচলিত হলো। সে বলল,
” আরেহ কুয়াশা ভয় পেয়ো না। ওয়েট আমি আসছি। ওখানেই থাকো। ভয় নেই। ভয় পেয়ো না ”
এমনসব কথা বলতে বলতে সিঁড়ির রেলিং ধরে এক পা এক পা করে নেমে আসল অন্ধকারেই। তারপর আস্তে আস্তে কুয়াশার কাছে আসতে লাগল। দু’জনই কথা বলছে৷ যাতে কেউ অপ্রস্তত না হয় বা ভয় না পায়৷
মাত্রই অয়ন কুয়াশার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ঠিক সেসময় শিশির আসল। তার হাতে ফোনের আলো জ্বলছে। কিছুটা দূরে সে দাঁড়িয়ে। আলো কুয়াশা আর অয়নের দিকে ধরা একদম।
ওদের অন্ধকারে এতটা কাছাকাছি দেখে রণমুর্তি ধারন করল শিশির। চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে। হাতের পেশি এবং রগগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছে। কুয়াশার চোখে আলো পড়াতে চোখে হাত দিয়েছে সে। অয়নও একইভাবে হাত দিয়েছে। ওদের ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হবে যেন ওরা কোনো অকাম-কুকাম করছিল। কিন্তু আসল ঘটনাতো তা না!!
এদিকে শিশির তেমন কিছুই ভেবে বসে আছে। কুয়াশার দিকে এজন্য ওমন নজরে তাকিয়েছে। তাকিয়ে থেকে বাজখাঁই কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল,
” কুয়াশায়ায়া…! ”
কন্ঠে এমন তেজ শুনে কুয়াশার বুক ধুক করে উঠল। হৎপিণ্ড জোরে জোরে লাফাতে লাগল। অয়নও কিছুটা ভড়কে গেল। অয়ন বুঝল শিশিরের ভাবনার ব্যাপারটা৷ তাই সে বলতে গেল,
” শিশির তুমি….”
কিছু বলতে পারল না। একদম ঝড়ের বেগে এসে কুয়াশার গাল লাল করে দিল। এতটা জোরে থা-প্পড় টা দিয়েছে যে গালটা টনটন করছে। সাথে সাথে চোখ থেকে পানি ঝড়তে লাগল। গালে হাত দিয়ে শিশিরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আজ অবধি বোধহয় এতটা জোরো কারো কাছে মা-র খাইনি সে। এমনকি শিশিরের হাতেও না। শিশির এতদিনেও এমন মা-র দেয়নি। এই মা-রে যেন সাক্ষাৎ শাসন ছিল। এটা কোনো অপছন্দ করার জন্য মা-র ছিল না।
কুয়াশাকে মা-রতে দেখে অয়ন চমকে উঠল। বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। মা-রটা যে কি পরিমাণ জোরে ছিল তা সে কাছে থেকেই বুঝতে পেরেছে। অয়নের অনেক খারাপ লাগল। কিছু বলতে যাবে শিশির কিছু শোনার প্রয়োজন মনে করল না। হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল৷
কুয়াশা শব্দহীন চোখের পানি ফেলছে৷ অয়ন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে৷ কি বলবে? আর কি করবে? মাথায় আসছে না। শিশির যে সম্পূর্ণ বিষয়টা ভুল বুঝেছে তা বেশ বুঝতে পারছে। অয়ন বলল,
” আ’ম রিয়েলি স্যরি কুয়াশা৷ আমার জন্য এসব হলো। আমি যদি এমন বেবুঝের মতো কাজ না করতাম। প্লিজ কান্না করো না৷ আমি শিশিরকে বোঝাব ”
” সে আপনার কথা না শুনবে আর না মানবে। আপনি তাকে কিছু বলতে গেলেই সে আরো দ্বিগুণ ভুল বুঝবে। ঐ মানুষটা এমনই ”
কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলল। অয়ন বলল,
” তাই বলে এমন ভুল বুঝার উপর থাকবে? ”
” আপনি যান, আমি বলব সবটা৷ ”
অয়ন বুঝল কুয়াশার নিজের মুখের থেকে শুনলে বিষয়টা বিশ্বাস করলেও করতে পারে৷ তাই কথা না বাড়িয়ে বলল,
” মোমবাতি কোথায় আছে? আমাকে বলো আমি খুঁজে আনছি ”
” আপাতত রান্নাঘরে র্যাকের তাকে পাবেন। ঘরে আছে কিন্তু এখন অন্ধকারে ঘরে যেতে পারবেন না। ”
এরই মাঝে হিমেল এলো। তাকে বৃষ্টি পাঠিয়েছে। যেতে লেট হচ্ছিল বলে, ভেবেছে অন্ধকারে আঁটকা পড়েছে তাই ওকে পাঠিয়েছে। হিমেল ফোনের আলো আনলে সেই আলো নিয়ে মোম খুঁজে তা ধরাল। কুয়াশাকে কাঁদতে দেখে নানান কথা জিজ্ঞেস করতে লাগল। সে বলল,
” অন্ধকারে ভয় পেয়েছি। তুই শসার ঝুড়ি নিয়ে যা আমি আসছি। ”
বলে অয়নের থেকে মোম নিয়ে উপরে চলে গেল। উদ্দেশ্য শিশিরের ঘর।
|| চলবে ||
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )
আগামী পর্বে কি হবে? যু-দ্ধ নাকি কু’রু’ক্ষেত্র? বাঘা তেঁতুল যতটা সহজে অয়নের কাছে বলল বোঝাবে, ততটা সহজে কি করবে?
আগামী পর্বে কি কুয়াশার প্রতি শিশিরে দরদ দেখতে চাও তোমরা??
বাই দ্যা ওয়ে আমি ভয়ে আছি কিন্তু ওদের লাগি