®রোজা রহমান
‘
“” রসিক দিলকা জ্বালা, ঐ লাল কুর্তা ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা “”
” ডা’ফার ওটা সবুজ পাঞ্জাবি নট লাল তোর রসিক লাল পড়েনি সবুজ পড়েছে”
” ও হ্যাঁ তাই তো! ”
স্মৃতির কথার উত্তর করে কুয়াশা আবার গাওয়া ধরল,
“” রসিক দিলকা জ্বালা, ঐ সবুজ কুর্তা ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবি ওয়ালা “”
এইটুকু বলে সে আবার রিজভীর দিকে তাকাল। লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মুচকি হাসল। শিশির পুরো হা হয়ে আছে৷ সে এখনো বাস্তবে ফেরে নি। এই থার্ড ক্লাস গান গোবর ঠাঁসা গাইছে? জাস্ট এই কথাটা মাথায় বার বার বাড়ি দিচ্ছে। শুধু শিশির না উপস্থিত সকলেই হা হয়ে গেছে। কুয়াশা একবার শিশিরের দিকে তাকাল। ওর রিয়াকশন কুয়াশা ঠিক ধরল। ভিতরে ভিতরে শিশিরের গোষ্ঠী উদ্ধার করে আবার গাইল,
“” বন্ধু যদি আমার ভ্রমর হইত,
—মনেরই বাগানে সে যে মধু খাইত
—বন্ধু যদি আমার ভ্রমর হইত,
—মনেরই বাগানে সে যে মধু খাইত
—এতো প্রেমের খেলা,
—ও লাল কুর্তা ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালারে পাঞ্জাবি ওয়ালা
—দিলি বড় জ্বালারে পাঞ্জাবি ওয়ালা “”
নাহ, এই থার্ড ক্লাস গান এই লোকসমাজে আর নেওয়া যাচ্ছে না। কি ফালতু গান এসব? ভাষা কিরকম! শিশির রেগেমেগে দিল এক রাম ধমক,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা..! ”
কুয়াশা গান বন্ধ করে দিল। তাকাল শিশিরের দিকে। শিশির বলল,
” এ্যাই… তুই এসব গান কোথায় পেলি রে? বে-য়াদব! ”
” তাতে তোর কি? আমার পছন্দের গান এটা ”
” তোর পছন্দের খেতাপুড়ি। আবার মুখে মুখে তর্ক করছিস? ”
বলে ঝড়ের বেগে এসে কুয়াশার হাতে খামচি দিয়ে ধরল। মেজাজটায় চড়িয়ে দিয়েছে এই বেয়াদবটা। এতগুলো ছেলের মাঝে এসে কি অভদ্রের মতো গান গাইছে? আবার তুই তুকারিও করছে? এত অধপতন! বলল,
” এবার বল কি বলছিলি? ”
” ছাড়..! লাগছে আমার ”
বলে হাত মুচড়াতে লাগল। নীহার উঠে এসে বলল,
” কুশু এসব কি? এ কোন ধরনে বেয়াদবি? এখানে এতগুলো ছেলে আছে তোর চোখে পড়ে নি? আর কি সব গান গাইছিস এগুলো? কি বাজে..! ”
শিশির বলল,
” দেখ কিছু না বলে কত বড় স্পর্ধা করেছিস এর! কতটা বিবাগী হয়েছে দেখ। একে উঠতে বসতে মে-রে শাসন করতে হবে ”
কুয়াশা এবার রাগ নিয়ে আস্তে করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” হ্যাঁ তোর তো শুধু আমাকে মা-রার ছুতো লাগবে। একটা সামান্য ছুতো পেলেই লাগতে আসিস ”
শিশির এবার হাত আরো জোরে ধরল। কুয়াশার বেয়াদবিতে নীহারও কিছু বলতে পারছে না। আজ এর কি হলো? এমন তো করে না! নীহারের ভাবনার মাঝে শিশির বলল,
” ভাষা ঠিক কর গোবর ঠাঁসা। এটা তোর বাড়ি না৷ আর ডেট ওভার গা-ঞ্জা খাইছিস নাকি? গা-ঞ্জাখুরি গান গাইছিস? ”
” দেখ বুনো ওল.. “
কুয়াশার কথার মাঝে শিশির নীহারকে বলল,
” এর পরেও একে না মে-রে থাকা যায়? তুই কিছু বলবি? নাকি এর ক্লাস আমি নিব? ”
” শিশির তুই… ”
আর বলতে দিল না নীহারকে। সে বুঝে গেছে তার ভাই এখনো এই গোবর ঠাঁসাকে কিছু না বলে ধুপ-সিঁদুর দিয়ে পুজো করবে।
(উপরক্ত বাক্যটি কথার কথা)
কুয়াশা বলল,
” আমার লাগছে, ছাড় বুনো ওল। তোর জন্য আমি গানও গাইতে পারব না? সব সময় কেন আমার কাজে বেগড়া দিতে হবে তোর? ”
” তুই রাস্তায় রাস্তায় বেয়াদবের মতো গান করে বেরাবি তোকে কিছু বলা যাবে না? শাসনবিহীন তুই বেয়াদব হচ্ছিস। তোর শাসনের অভাব। চল তোর রসিক কে জেনে আসি ”
বলে সবার মাঝে থেকে হাত ধরে হুরহুর করে টানতে টানতে প্যান্ডেল থেকে পেছন গেইট দিয়ে বেড়িয়ে গেল৷ কুয়াশা অন্য হাত দিয়ে শিশিরের হাতে খামচি দিতে দিতে বলল,
” তোকে কেন বলব? ”
” তুই বলবি তোর ঘাড় বলবে৷ আমিও দেখতে চাই কোন ভ্রমর জুটলো তোর মনের বাগানে মধু খাবার জন্য ”
” ছাড় আমি যাব না। বলব না তোকে। কে তুই সব তোকে বলে কয়ে করতে হবে আমার? ”
” তুই যেই বাড়ির মেয়ে আমি সেই বাড়ির ছেলে।
এবার বুঝে নে, কে আমি আর কে তোর!”
কুয়াশা শিশিরের কথায় উত্তর করতে পারল না। কিন্তু থেমে থাকল না৷ শিশিরের হাতে খামচি দিয়ে ধরে রেখেছে। শিশির কুয়াশাকে হুরহুর করে টানতে টানতে এনে পিছন সাইডে আম বাগানে নিয়ে এলো৷ এখানে বসার জন্য চড়াট (মাচা) পাতা আছে। এনে সেই চড়াটের উপর ধারাম দিয়ে ফেলল। কুয়াশা ব্যথা পেল। রাগে ফুঁসে উঠল। শিশিরের বুকের উপর দু’হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
” সর তো, বোন বলে মানিস না আবার আসছিস ভাইয়ের শাসন দেখাতে ”
” থা-প্পড় দিয়ে তোর গাল ফা-টিয়ে দেব বেয়াদব, আর একটা কথা বলবি তো! ”
বলে আবার বলল,
” এবার বল তোর দিলে কে আ-গুন জ্বালিয়ে জ্বালা দিল! ওখানে কে তোর রসিক? ঐ অয়ন নাকি?”
” তোকে বলব ক্যা? ”
” কারণ আমিও দেখতে চাই তোর দিল জ্বালানো রসিক হতভাগাকে। দেখে তোকে বিদায় করার ব্যবস্থা করব। বাবাকেও তো বলতে হবে তার আদরের মেয়ে রসিক জুটিয়ে রাস্তায় রাস্তায় গান করে বেরায় ”
এবার কুয়াশা একটু দমে গেল। বড় চাচুকে সত্যি বলতে পারে এই বুনো ওল৷ একে বিশ্বাস নেই৷ একটু নরম হলো কুয়াশা৷ ভালো করে বলতে হবে একে। তাহলে সব পাঁকা হলেও হতে পারে৷ কারণ রিজভী তো আর খারাপ ছেলে না! নরম স্বরে বলল,
” দেখো এমন করবা না। আমার কাউকে ভালো লাগতেই পারে। আর ছেলে সে খারাপ না। সব দিকে পার্ফেক্ট। ”
শিশির একটু মজা পেল। গোবর ঠাঁসা লাইনে এসেছে। তবে শেষ কথাটায় ভ্রু কুঁচকাল। প্রশ্ন করল,
” কে সে? “
“আগে বলো উল্টা পাল্টা কিছু করবা না?”
” আচ্ছা করব না, বল। ভালো হলে আমি নিজে বাবাকে বলব ”
কুয়াশা খুশি হয়ে গেল। দাঁত বের করে হেসে ফেলল। সে তো এটা ভেবে খুশি হচ্ছে যে শিশিরের ভালো লাগবেই আর সে কনফার্ম বড় চাচুকে বলবে তারপর সবকিছু ফাইনাল, আহা! কুয়াশাকে এতটা আনন্দ হতে দেখে আবার ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কুয়াশা বলল,
” রিজভী ভাইয়া ”
” কিহহ! ”
কুয়াশা এবার একটু ভড়কাল শিশিরের রিয়াকশনে। ভ্রু কু্ঁচকে বলল,
” হ্যাঁ, তো কি হয়েছে? রিজভী ভাইয়া দেখতে অনেক সুন্দর , ছেলে ভালো, পড়াশোনা করছে ল’ তে, ভালো পরিবারের ছেলে আর কি চাই? আমি আজ ক্রাশ খেয়েছি “
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে লজ্জা পেল কুয়াশা। শিশির তা শকুনী নজরে দেখল। দেখে নিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিল৷ তারপর বলল,
” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, তোর দিল জ্বালানো হবু রসিক অলরেডি তোর বান্ধবী স্মৃতির উপর পিছলিয়েছে। তাই তোর মন বাগানের মধু খাওয়ার ভ্রমর আর হইল না সে, আহারে.. “
ব্যঙ্গ করে শেষের কথাটা বলে সে আবার বাঁকা হাসল। এই গোবর ঠাঁসার মনে সদ্য প্রেমের বীজ জন্ম হবার আগেই তা ভেঙে যেতে দেখে তার কিযে আনন্দ হচ্ছে! কিভাবে প্রকাশ করবে সে বুঝে পাচ্ছে না৷ আহ.. রি’ভেঞ্জ তো একেই বলে!! তাকে খামচে র’ক্তা’ক্ত করার জন্য এভাবে রিভেঞ্জ টা নিতে পারবে ভাবনায় ছিল না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সে কুয়াশার দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি দিল।
” আহ, গোবর ঠাঁসার মুখটা দেখার মতো হয়েছে ”
মিটিমিটি হাসতে হাসতে হাঁটা ধরল শিশির। এদিকে কুয়াশা হা হয়ে তাকিয়েই আছে। তার ক্রাশ কিনা তারই বান্ধবীর উপর ক্রাশ খেয়েছে? কুয়াশা ভাবতে ভাবতে কপালে হাত দিয়ে ন্যাকা কান্নার মতো করে বলল,
” হায় ম্যা তো টুট গায়া, ম্যা বারবাত হো গায়া। ম্যারা দিল টুট গায়া, জুড়া লাগনে কি আগমেহি ম্যারা দিল টুট গায়া। হায়.. ম্যা আব কিয়া কারু! কিয়া কারু! “
এমন হিন্দি ভাষায় সে কপাল চাপড়াচ্ছে আর হা হুতাশা করছে। ঠিক সেই সময় সেখানে স্মৃতি, শশী এলো। এসে কুয়াশাকে ওমন প্রলাপ বকতে দেখে জিজ্ঞেস করল স্মৃতি,
” এ্যাই কুয়াশা! কি হয়েছে? এমন করছিস কেন? কে কি লুটে নিল তোর? ”
” হুর লুটে নেয় নি মোরে টুট দিয়া ”
বলে আবার ন্যাকা কান্না করছে। স্মৃতি ধমকে বলল,
” বা** থামবি? কি হয়েছে সেটা বল। শিশির ভাইয়া ঠিকই বলেছে তুই ডেট ওভার গা’ঞ্জা খাইছিস ”
” চুপ থাক। সব দোষ ঐ বুনো ওলের৷ ও একটা কু’ফা আমার জন্য। ওর জন্য আমার প্রেম শুরু হবার আগেই দ্যা এন্ড হয়ে গেল। ”
স্মৃতি আর শশী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। কুয়াশা আবার বলল,
” দোস্ত রিজভী ভাইয়া তোর উপর উল্টিয়েছে৷ তোকে পছন্দ করেছে সে৷ ”
” কিহহ? “
” হু ”
” কুচভি! “
” আরে সত্যি “
স্মৃতি এবার ওর উপর পূর্ণ দৃষ্টি দিল। এ মেয়ে যে মজা করছে না বুঝল সে। কিন্তু এটা কি সত্যি? রিজভী তাকে পছন্দ করে! কথাটা ভাবতেই স্মৃতি কেমন জানি লজ্জা পেল৷ সেটা বুঝল কুয়াশা৷ তা দেখে কুয়াশা বলল,
” ওলে বাবুতা লে…থাক আর লজ্জা পেতে হবে নাহ। যাহ, রিজভী ভাইয়াকে তোর জন্য ছেড়ে দিলাম। বান্ধবীর জন্য এইটুকু সেক্রিফাইজ করাই যায়৷ সে আমার ক্রাশ, ক্রাশের মতোই থাক। প্রেমে আর পড়লাম না তার। তাকে নিয়ে আর লাফালাফি করব না। ”
স্মৃতি কোনো কথা বলতে পারল না। তার এখানে কি বলা উচিত সে বুঝল না৷ সে তো মাত্রই জানল কেউ একজন তাকে পছন্দ করে তাও আবার তার উপর একটু আগে তার একমাত্র বান্ধবী ক্রাশ খেয়েছে। এখন সেই বান্ধবী তা যেনে তার জন্য সেক্রিফাইজ করছে। তাহলে এখানে তার কি বলা উচিত!!
______
ইয়াসমিনকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। কথাটা যে দেখছে সে ই বলছে। মেয়েদের নাকি বিয়ের পানি পড়লে সুন্দর লাগে! এটাই বলাবলি করছে সকলে। তা শুনে ইয়াসমিন লজ্জায় লাল হচ্ছে। গাল দুটোতে টান অনুভব হচ্ছে।
সে হলুদ পরী সেজে বসে আছে বসার ঘরে সোফায়। তার সামনে রঙ বেরঙের থালা। থালায় নানান জিনিস সাজানো। পায়েস থেকে শুরু করে নুডলস এবং বিভিন্ন ফল। এছাড়া সবজী দিয়ে বিভিন্ন নকশা তৈরি করে প্লেটের উপর সাজানো। হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য তুহিনদের ওখান থেকে একটা কেকের ত্বত্ত্ব এসেছে। যেটাতে সুন্দর করে তুহিন, ইয়াসমিনের নাম সহ হলুদ সন্ধ্যার জন্য ডিজাইন করে বানানো কেক। চার পাউন্ডের হবে কেকটা৷ এটা বৃষ্টি আর কুয়াশা মিলে পছন্দ করেছে।
‘
রাত নয়টা। শিশিরদের সকলকে খেতে দেওয়া হবে। সকলে প্যান্ডেলে গিয়ে একে একে বসছে। সেই সময় কুয়াশা, শশী, স্মৃতি, অনি এসে বসল এক টেবিলে। তার সামনের টেবিলে শিশির, রিজভী, নীহার, হিমেল বসেছে। এক টেবিলে চারজন করেই বসতে পারছে। বৃষ্টি ইয়াসমিনের সাথে খাবে বলেছে। শশী বসার আগে বলল,
” বুবু পানি পিপাসা লেগেছে ”
কুয়াশা তা শুনে টেবিলে দেখল এখনো পানি দেয় নি। সে বলল,
” একটু অপেক্ষা কর এক্ষণি পানি আনবে। “
” আচ্ছা ”
বলতে বলতে পানি আনল যারা খেতে দিবে। আমিনুল হক সব তদারকি করছেন। পানি এলে শশী গ্লাস নিয়ে পানি ঢালতে গিয়ে অসাবধানতায় গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে গেল। প্যান্ডেল করা উঠোনটা শান করা বলে পড়তে না পড়তেই ভেঙে গেল। শশী একটু ভড়কে গেল। তার একদম পায়ের কাছে পড়ে ভেঙেছে। সে তড়িঘড়ি করে নিচে বসে না বুঝেই ভাঙা কাঁচ তুলে সরাতে গিয়ে গেল খ্যাচ করে হাত কেটে। কাটল তো কাটল ডান হাতটায় কাটল। ব্যথায় শশী, ‘আহ’ করে উঠল। ওর আর্তনাদে সকলে তাকিয়ে দেখল হাতের বৃদ্ধা আঙুল এবং তর্জনী আঙুল কেটে রক্ত পড়ছে।
কুয়াশা তা দেখে মৃদু চেঁচিয়ে বলল,
” এ্যাই শশী হাত কাটল কিসে? আল্লাহ! তুই ভাঙ্গা কাঁচ কেন ধরতে গেলি? ”
বলে সেও নিচে বসে শশীর হাত চেপে ধরল। স্মৃতি, অনিও বলল একই কথা।
এদিকে সামনের টেবিল থেকে শিশির সহ নীহার, হিমেল তা দেখে তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এলো। পিছে রিজভী আর অন্য টেবিল থেকে মিহির সহ সাব্বির সাবিবও এলো। শশীর ভাবি এসে বলল,
” ইশশ কতখানি কেটে গেল। কিভাবে কাটল শশী? “
শশী বলল,
” কাঁচ সরাতে গিয়ে “
ব্যাথায় মেয়েটার মুখ লাল হয়ে গেছে। নীহার তা দেখে আর কিছু পরোয়া করল না সে শশীর সামনে হাঁটু মুড়িয়ে বসে কুয়াশার থেকে শশীর হাত নিয়ে চেপে ধরে বলল,
” দেখে ধরবা না? আর কাঁচ কেন ধরতে হলো তোমাকে? ভেঙেছে তা ভেঙেছেই সেটা ধরতে হবে কেন? ”
কথাগুলো নীহার কঠিন স্বরে বলল। শশী উত্তর করল না। পানি টলমল করছে চোখে। শশীর বড় ভাই আসে নি। শুধু ভাবি এসছে। মিহির বলল,
” অনেক রক্ত ঝরছে তো! বন্ধ করতে হবে ডক্টরের কাছে নিতে হবে ”
শিশির বলল,
” হ্যাঁ, তবে ডক্টর লাগবে না। শশী চল ভেতরে চল ”
বলে নীহারকে বলল,
” ভাই ভেতরে নিয়ে গিয়ে ড্রেসিং করে দে৷ তুই ভালো পারিস তো ”
শিশিরের কথা শুনে সম্মতি দিল নীহার। বলল,
” উঠো, কুয়াশা ওকে নিয়ে চল ”
কুয়াশা সম্মতি দিয়ে শশীকে উঠাল ধরে। শিশির সকলকে বিচলিত হতে মানা করে মিহিরকে বলল,
” আমরা দেখছি মিহির, তোরা খেতে বস।”
বলে শিশির সহ কুয়াশা, নীহার শশীকে নিয়ে ভেতরের উদ্দেশ্যে চলে গেল।
‘
ইয়াসমিনের ঘরে হাতে ব্যান্ডেজ করছে নীহার শশীর। ইয়াসমিন, ঈশা সেখানে উপস্থিত। ইয়াসমিন বলল,
” তোরা নয়তো এখানে খাওয়া দাওয়া করে নে। আমি ঈশাকে দিয়ে মাকে বলিয়ে খাবার পাঠাতে বলছি। “
ওরা ভেবে দেখল বিষয়টা এতেই ভালো হবে৷ বাইরে সকলের খাবার খাওয়া এমনিতেও হয়ে এসেছে। তারা চারজনে এখানে বসেই খেয়ে নিক। শিশির সম্মতি দিল। শিশিরের কথায় আর কিছু বলল না কেউ।
শশী চুপচাপ বসে ব্যথা সহ করছে। মেয়েটা ছোট হলে কি হবে? অনেক শক্ত। কাঁচে কাটা ব্যথা সহ্য করে যাচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে। নীহার সেটাই লক্ষ্য করছে আর ব্যান্ডেজ করছে৷
‘
খাবার এনে রাখল দুটো মেয়ে। পরিচয়ে জানতে পারল এরা একজন ইয়াসমিনের চাচতো ভাবি আর একজন বোন৷ বোনটা বিবাহিত। কুয়াশা আর শশী খেতে বসল বিছানার উপর৷ শিশির নীহার বসল ঘরে সোফা আছে সেই সোফার উপর। সামনে টি-টেবিলের উপর খাবার রাখা৷ শিশির নীহার এক জায়গায় বসল। পরিবেশন করল ভাবিরা।
কিন্তু কথা হচ্ছে এবার শশী খাবে কি করে? হাত তো কেটেছে তার খাবার খাওয়াটাই! আর ব্যথাও হয়ে গেছে চামচও ধরতে পারছে না৷
শশীর অবস্থা কুয়াশা টের পেল। বলল,
” আমি খাইয়ে দিচ্ছি, চিন্তা করিস না ”
শশীর ভালো লাগল খুব৷ কুয়াশাকে সে বড় বোনের মতোই দেখে৷ এদিকে কুয়াশার বলাটা নীহার শুনে দেখল শশী না খেয়ে বসে আছে। কুয়াশা খাওয়ানোর জন্য প্লেট নিচ্ছে। নীহার কি ভেবে যেন বলে উঠল,
” কুয়াশা রাখ, আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তুই পারবি না ”
কুয়াশা সহ শশীও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। শিশির মিটমিট করে হাসল নীহারের কথায়। কুয়াশা ভাবল সে খাওয়াতে পারবে না? এটা কি এমন কঠিন কাজ!! বলল,
” তুমি শশীকে খাইয়ে দেবে? ”
নীহার অপ্রস্তত হলো। শিশির দুটো মেয়েকে বলল তারা নিজেরা নিয়ে খাবে। তারা যেন চলে যায় দাঁড়িয়ে না থেকে। মেয়ে দুটো বোধহয় এটার আশায় ছিল তাই বলার পরপরই চলে গেল। নীহার বলল,
” হ্যাঁ, তুই পারবি না ”
” আমি পারব না? ”
কুয়াশা জহুরী নজরে তাকিয়ে। নীহার কুয়াশার হেয়ালিপনা কথায় বারবার ভড়কাচ্ছে। এদিকে শশীও হা হয়ে শুনছে সব। শিশির ধমকে বলল,
” গোবর ঠাঁসা, তোর এতকিছু শুনতে হবে কেন? জানতে হবে কেন? এত প্রশ্ন কিসের তোর? স্বাধে কি বলি গোবর ঠাঁসা!! ”
কুয়াশা শিশির কথা শুনে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করল। ধরতে কি সক্ষম হলো? হলো বোধহয়। সে তড়াক একবার শশীর দিকে তাকাল একবার নীহারের দিকে। ওমন করে দুই-তিনবার দেখল দু’জনকে। নীহার ভড়কে এখনো তাকিয়ে আছে। নজর তার লুকানোর চেষ্টা করছে৷ কুয়াশা এবার জোরে বলে উঠল,
” ভাইয়ায়ায়া…! ”
” এ্যাই..! চেঁচাচ্ছিস কেন? চুপচাপ গেল।”
শিশিরের বলা শেষ হতে না হতেই নীহার উঠে শশীর পাশে গিয়ে বসল। আলাদা আর প্লেট নিল না। সে যেই প্লেটে খাচ্ছিল সেই হাতে এবং সেই প্লেট থেকেই খাবার শশীর মুখে ধরার আগে বলল,
” সমস্যা আছে? “
শশী কি বলবে বুঝল না। তার তো হাতে চাঁদ পাবার মতো আনন্দ হবার কথা ছিল। কিন্তু এই লোক তো তাকে পছন্দ করে না! তাকে রিজেক্ট করেছে। শশীর ভাবনার মাঝেই নীহার খাবার তুলে ধরল। সে শশীর নিরবতাকে সম্মতি ভেবেছে। শশী টলমল চোখে চেয়ে আছে। নীহার তা দেখল এবং বুঝল সবই৷ বলল,
” নাও, হা করো “
অতিশয় নরম স্বর আর অতিশয় আদুরে বাক্য তা৷ শশী এবার ঝরঝর করে চোখে পানি ছেড়ে দিল। আর আঁটকে রাখল না। কেটে যাবার পরও সে চোখের পানি ফেলে নি৷ মেয়েটা ছোট হলেও খবুই আবেগী৷ অল্পতেই আবেগী হয়ে ওঠে৷ আর সব থেকে বড় কথা মেয়েরা পছন্দের মানুষটার কাছে একটু বেশিই আবেগী এবং আহ্লাদী হয়ে ওঠে।
নীহার চোখের পানি বাম হাতে মুছে দিয়ে খাবার নেবার জন্য ইশারা করল। শশী এবার নিল। সেই সময় কুয়াশা খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে এক লাফ দিয়ে চোখের পলকে গিয়ে শিশিরের পাশে গিয়ে ধারাম করে বসল। শিশির মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছিল। কুয়াশা বসায় ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল,
” এ্যাই এখানে কি তোর? ”
সে কথার উত্তর না করে শিশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কবে থেকে? ”
” কি কবে থেকে? ”
” ঐ যে ওদের মাঝে ”
” জানি না আমি ”
” বলো না, ওমন করো কেন? “
কথাটা বলতে বলতে বাম হাতে কুয়াশা শিশিরের বাহুর কাছে ধরে ঝাঁকাতে লাগল৷ শিশির বিরক্ত হয়ে বলল,
” পরে বলব, এখন খেতে দে ”
কুয়াশার অস্থির হয়ে বলল,
” আরেহ জোরে গিলো না! ”
শিশির খাবার মুখে নিয়ে বিস্ময়ে তাকাল ওর দিকে৷ কি রকম বেয়াদব! নিজে খাওয়া বাদ দিয়ে প্রেমকাহীনি শুনতে তাকে জলদি খেতে বলছে!!!
|| চলবে ||
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )