®রোজা রহমান
‘
কাক ডাকা ভোর। এখনো প্রকৃতি আলো-আঁধারিতে ঘেরা। কিচিরমিচির শব্দ করে নানা প্রজাতির পাখি ডাকছে। ভোরের মিষ্টি সমীরণ বইছে। এই সময়ে ইয়াসমিনদের বাড়িতে সকলে উঠে নামাজ আদায় করে বিয়ের কাজে লেগে পড়েছে। অন্যান্য দিনের মতো আজ নিঃস্তব্ধ রাত পাড় করে নি। সকালও সোরগোলে পরিপূর্ণ। আত্নীয় স্বজনদের সোরগোলে পরিবেশ মুখরিত। বাসন-কুশনের শব্দ, বাবুর্চিদের সোরসার। রান্নার কাজ শুরু হয়ে গেছে। বরযাত্রী আসবে জুম্মার নামাজ বাদ। বিভিন্ন প্রকার খাবার পদ রান্না হবে। ভোর থেকে না লাগলে হয়?
________
মালিথা ভিলাতেও সকলে উঠে পড়ছে। নামাজ আদায় করে সকলেই গোছানো শুরু করে দিয়েছে। আজ বিয়ে তাই অনেক আত্নীয় স্বজনও চলে এসেছে। সেসকল আত্নীয় এবং বাড়ির লোকেদের জন্য মালিথা বাড়তেও বাবুর্চি দিয়ে সকালের খাবার রান্না করা হচ্ছে। সকালের খাবার খেয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে বরযাত্রী বের হবে।
‘
কাল রাতে ও বাড়ি থেকে আসতে আসতে রাত এগারটা পাড় হয়ে গেছিল। এরপর শুতেও অনেক রাত হওয়াতে ছোটরা কেউই ঠিক মতো এখনো উঠে নি। সব পড়ে পড়ে ঘুমচ্ছে।
আজমিরা এসে কুয়াশাদের ডেকে গেছেন। কিন্তু বান্দারা ওঠার নাম নিচ্ছি না৷
তুষার, তুহিন উঠে বাবা, চাচুদের সাথে কিছু কথা সারছেন। বড় ছেলে দুটো অনেক দায়িত্ব পালন করে এ বাড়িতে।
বাবুর্চি রান্না করলেও মহিলারা সকলে খুবই ব্যস্ত৷
‘
সকাল নয়টার সময় কুয়াশারা সকলে উঠে একসাথে খেতে বসেছে৷ শশীর হাত কে-টে গেছে বলে তার মা খাইয়ে দিচ্ছে। নীহার খাবার মাঝে শশীর অবস্থা অবলোকন করছে। ডাগর ডাগর ভাসা চোখগুলো ফুলে আছে। মেয়েটা একটু বেশিই চিকন বাচ্চা সুলভ চেহারাটা সদ্য ঘুম থেকে ওঠার জন্য ফুলে ফুলে আছে৷
নীহার খাবার মাঝে বলল,
” শশী হাতের কি অবস্থা তোমার? ব্যথার ঔষধ নিয়েছিলে এসে? “
শশী তাকাল গভীর দৃষ্টি দিয়ে৷ শশীর মা উত্তর দিল,
” হ্যাঁ খাইয়েছিলাম৷ তবে বাড়িতে গিয়ে একটা ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে৷ নয়তো সমস্যা হতে পারে ”
” হ্যাঁ খালামনি ইনজেকশন দিয়ে নিয়েন। আমি এটাই বলতে যাচ্ছিলাম মাত্র ”
ওদের কথপোকথন সকলে শুনছে আর খাচ্ছে। শশী নিচু মুখো তাকিয়ে নিশ্চুপে খাচ্ছে। কুয়াশা জহুরী নজরে ভাইকে দেখছে। কাল সে সব শুনেছে শিশিরের থেকে। শুনে তবেই ভাত খেয়েছে৷
_______
বেলা বারটা ত্রিশ বেজে পাড় হলো৷ মসজিদে মসজিদে আজান দিয়ে জানান দিল আজ শুক্রবার এবং পবিত্র জুম্মার দিন৷ মুয়াজ্জিন আজান দেবার পর সকল মুসল্লীগণ পুরুষদের নামাজ আদায়ের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন।
আজানের সুমধুর ধ্বনি কানে আসতেই এক একজন মুসলমান ব্যক্তি জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিল। ছোট থেকে বড়রা গোসলের কাজ শুরু করল।
‘
তুহিন সহ শিশিররা সকলে গোসল করে একবারে তৈরি হচ্ছে। তুহিনকে তৈরি করতে সকলে তুহিনের ঘরে এসেছে। তুষার সহ শিশির, নীহার, হিমেল, অয়ন,অভি সাহায্য করছে। বরের জন্য কেনা মেরুন এবং হোয়াইট কালারের কম্বিনেশনে গর্জিয়াস শেরওয়ানি সাথে হোয়াইট চুড়িদার পাজামা পড়ানো হলো তুহিনকে। তুষার সাহায্য করল তাতে। অভি বোতাম লাগিয়ে দিল শেরওয়ানির। শেরওয়ানির সাথে ওড়না আছে সেটা কাঁধের দু’পাশে আপাতত দেয়া হলো নামাজ পড়ে ঠিক করে দেওয়া হবে। সেটা দিল অয়ন। শিশির হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিল। নীহার মাথায় টোপর দিয়ে দিল। হিমেল নাগড়াই জুতা এনে ভাইকে পড়িয়ে দিল। সব শেষে সব ভাইগুলো একসাথে বলে উঠল,
” মাশাআল্লাহ ”
তুহিন মুচকি হাসল। একে একে সকলকে বুকে নিয়ে কোলাকুলি করল। সকলে অভি’নন্দন জানাল নতুন জীবন শুরুর জন্য।
‘
ছেলেরা নামাজ থেকে ফেরার আগে আগে সব মেয়েদের তৈরি হতে হবে। সেই জন্য সকলে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে। সাজগোছের তোড়জোড় চলছে সকলের। আজকে কুয়াশাদের সাজের জন্য পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান আনা হয়েছে। যারা যারা সাজবে সকলকে সাজানো হচ্ছে। অধিকাংশ মেয়েই বিউটিশিয়ানের থেকে সাজছে৷ বরযাত্রী যাবে গর্জিয়াস দেখা না গেলে চলে!!
‘
কুয়াশা, বৃষ্টি, শশী, স্মৃতি, অনির আজকের ড্রেসাপ লেহেঙ্গা৷ রঙ বেরঙের লেহেঙ্গা পড়ে সেজেছে৷ লেহেঙ্গা যখন পড়েছে তাহলে সাজও তো গর্জিয়াসই হবে? তেমনি গর্জিয়াস সাজ সকলের। বিউটিশিয়ান মেয়েটা বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছে৷ এক একজনকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
কুয়াশার লেহেঙ্গাটা পুরোটা কালো। কালো লেহেঙ্গাতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ভারী জুয়েলার্স, বাম হাতে চুড়ি ডান হাতে ব্রেসলেট ঠোঁটে লাল-খয়েরী লিপস্টিক। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া এক পাশে এনে। অন্যপাশে ওড়না।
বসার ঘরে সকলে নামাজ পড়ে এসে দাঁড়িয়েছে৷ এখন বিয়ের জন্য বের হবে সেটার আয়োজন চলছে৷ এদিকে সোফায় বসে অয়ন হা করে তাকিয়ে দেখছে কুয়াশাকে। শিশির সেটা লক্ষ্য করল৷ বিরক্ত হলো প্রচুর৷ তারই বাড়িতে তারই বোনকে এই ছেলে এমন করে দেখে! মন তো চাই চোখ দু’টো তুলে নিতে।
শিশির সহ অধিকাংশ ছেলেরা শেরওয়ানি পড়েছে। শিশিরের পরনে কালো সিম্পল শেরওয়ানি। উজ্জ্বল হলুদ ফর্সা শরীরে কালো রঙ নজর কেঁড়ে নিচ্ছে। হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। চুলগুলো উপর দিয়ে চুরুনি করা তবুও কয়েকটা চুল ছড়িয়ে আছে কপালে। মুখে হালকা দৃশ্যমান চাপদাড়ি এই ছেলেটার সবকিছুই পারফেক্ট। মেয়েরা আজ আরো দ্বিগুণ ফিদা হবে৷ তারউপর বরযাত্রীতে যাচ্ছে আরো গিলে খাবে মেয়েরা।
‘
সব কিছু ঠিকঠাক করে সকলে বের হবার উদ্দেশ্য বাহিরে বের হলো। আম্বিয়া সকল নিয়ম পালন করে ছেলেকে কার গাড়ির কাছে নিয়ে এলো সাথে জাহিদ মালিথা আছেন৷ জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথা, জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা সকলে তুহিনকে গাড়িতে বসাল৷ বরের গাড়ির সাথে যাবে তুষার, বৃষ্টি, কুয়াশা। ওরা গিয়ে তুহিনের সাথে বসে পড়ল। তুষার সামনে কুশায়া আর বৃষ্টি তুহিনের সাথে ভেতরে। জাকির মালিথা সহ আরো কিছু মুরুব্বী এক কারে উঠলেন৷ শিশির হিমেলকে বাইকে নিল, নীহার শশীকে নিল, রিজভী স্মৃতিকে নিল, অয়ন অনিকে নিল আর বাকিরা যার যার বাইক আছে সে সে বাইক নিয়েছে এবং বাকিয়া তিনটা মাইক্রোতে উঠল।
বাইক থাকতে কেউ মাইক্রো কিংবা কারে ওঠার জন্য পারাপারি করে না।
সবশেষে বিদায় নিয়ে বরযাত্রীরা কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
______
ইয়াসমিনকে সাজানোর জন্য ওবাড়ি থেকে পার্লারের লোক পাঠিয়েছে। সাথে ঈশা সহ আরো কিছু মেয়ে সাজলো। ইয়াসমিনকে বউবেশে অপূর্ব অপ্সরা লাগছে। পরনে খয়েরী এবং গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনে ভারী কাতান শাড়ি। ভারী পাথরের জুয়েলার্স, ভারী মেকাপ। বিয়ের সাজ ঠিক যেমন ভাবে গর্জিয়াস লাগে তেমনি সাজানো হয়েছে।
এরই মাঝে বরযত্রী চলে এলো। কার, মাইক্রো, বাইক গুলো সাঁই সাঁই করে এসে হর্ন বাজিয়ে থামল কনেবাড়ির সামনে। গাড়ি থামতেই সকলের মুখে এক বাণী উঠল,
” বর এসেছে গেছে, বরযাত্রী চলে এসেছে”
সকলে বর দেখার জন্য দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। এই নতুন বর দেখা আর বউ দেখা রিচুয়ালটা শহর হোক বা গ্রাম সবখানেই যেন একরকম আমেজ এবং আনন্দ দেয়।
বর এসে গেছে শুনে ইয়াসমিনের ঘর এতক্ষণ ভর্তি ছিল এখন পুরো ফাঁকা হয়ে গেল। বেচারি বিয়ের কনেকে একা রেখে সকলে বর দেখতে ছুটল। এদিকে ইয়াসমিন লজ্জায় রঙিন হচ্ছে। যে ছেলেটা এতদিন ফুপুত ভাই ছিল আজ থেকে তার স্বামী হবে। লজ্জা তো লাগবেই! যতই আগে থেকে বিয়ে ঠিক থাকুক তারা কখনো একসাথে নিজেদের মতো করে ঘুরতে যাওয়া বা সময় কাটানো কখনো করে নি। কারণ আমিনুল হকের কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল এসবে৷ আমিনুল হক যতই শহরের বাসিন্দা হোক না কেন এসব দিক দিয়ে খুবই কঠিন। মেয়েদের তিনি সম্পূর্ণ সুশীল ভাবে বড় করার চেষ্টা করেছেন৷
‘
বর নামানোর জন্য ইয়াসমিনের নানা এলেন৷ তিনি নাতজামাই কে নামানোর জন্য গাড়ির কাছে গেলে তার হাতে স্বর্নের চেইন, আঙটি দেওয়া হলো৷ আমিনুল হক আগে থেকে সব বলে রেখেছিলেন তাই তুহিনকে আপাতত গলায় এবং হাতে চেইন, আঙটি পড়ানো হলো কিন্তু এটা পড়ে খুলে রাখবে৷
কারণ ছেলেদের সোনা পড়তে নেই এটা জাকির মালিথা সহ তুহিন নিজেও মানে৷ এরপর হাতে ঘড়ি পড়িয়ে দিল। সবশেষে মিষ্টি মুখ করিয়ে বের করলেন নাতজামাইকে৷
তুহিন বের হতেই সকলে একে একে নেমে পড়ল। এরপর তুহিনকে নিয়ে বর বসানোর আসনের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো।
এদিকে গেইটের কাছে এসে বাঁধল বিপদ। কারণ গেইট ধরা হয়েছে। আর তা ধরেছে কুয়াশারা৷ কুয়াশাদের সাথে ঈশা এবং আরো কিছু কাজিন আছে৷ বৃষ্টি ইয়াসমিনের কাছে চলে গেছে। কুয়াশাকে গেইট ধরতে দেখে শিশির ভ্রু কুঁচকে তাকাল। প্রশ্ন করল,
” তুই নামলি কখন? আর এখানে এলি কখন? সব থেকে বড় কথা তুই গেইট ধরেছিস কেন? ”
” কারণ আমি এখন থেকে বরযাত্রী ফেরত যাবার আগ পর্যন্ত মেয়েপক্ষ তাই গেইট ধরেছি৷ শুধু গেইট না মেয়েপক্ষের সব কাজেই এখন আমাকে পাবে ”
বলে ভাব নিয়ে চুল এবং মাথা ঝাকাল কুয়াশা৷ শিশিরের ভ্রু আরো কুঞ্চিত হলো৷ বলল,
” ফকিন্নি, সব তোর টাকা নেবার ধান্দা৷ সর গেইট ছাড় ভেতরে যেতে দে। এক টাকাও পাবি না ”
” দেখো তুমি মুখ বন্ধ রাখো এখানে কথা হবে আমার আর ভাইয়ার। আর গেইট তো টাকা না দিলে ছাড়া হবে না। সো তুমি চুপ থাকো”
ঈশা সামনে টেবিলে ইশারা করে তুহিনকে বলল,
” ভাইয়া এখান থেকে যে কোনো একটা শরবত নিয়ে খান। ”
তা শুনে নীহার বলল,
” এই শরবতে কি মিশিয়েছিস? ”
” কি মেশাব? কিছু মিশায় নি খেয়ে চেক করে দেখো ”
শিশির বলল,
” আমরা পাগল না তোদের মতো এক একটা বদের হাড্ডির কথা বিশ্বাস করব ”
এবার কুয়াশা বলল,
” তোমাকে বিশ্বাস করতে বলছে না লোকে৷ তুমি বর না তাই চুপ থাকো৷ “
বলে তুহিনকে বলল,
” ভাইয়া এটা নিয়ম, এখান থেকে একটা গ্লাস নিয়ে খাও”
তুহিন তা শুনে একটা গ্লাস তুলে নিল। তুহিন গ্লাস হাতে নেবার সাথে সাথে শিশির সেই গ্লাসে তর্জনী আঙুল ডুবিয়ে আবার তৎক্ষনাৎ সেটা মুখে পুরে জিহ্বাতে নিয়ে টেস্ট করল। টেস্ট করে দেখল ওটার স্বাদ তেতো। সাথে সাথে ইয়াক থু করে ফেলে দিল। মেয়েরা সবাই হেসে ফেলল জোরে করে। শিশির রেগে বো-ম। ধমকে বলল,
” এ্যাই বে-য়াদবগুলা নিমপাতার রস এনেছিস? ”
তুহিন শুনে বলল,
” এটা আমাকে খাওয়াচ্ছিলি তোরা? ”
কুয়াশা বলল,
” আরে ভাইয়া কুল। এটা ঐ বুনো ওল যে আগে খাবে এটা আমরা সকলে জানতাম। ওর তো সব কিছুতে ব্যাগড়া দেবার অভ্যাস। সব কিছুতে আগে থাকে। দেখো আমাদের অনুমান ঠিক হলো। ”
শিশির বেজায় চটে গেল। সবার সামনে টেবিলের ওপাশে থাকা কুয়াশার খুলে রাখা চুল হাত বাড়িয়ে ধরতে গেল তার আগেই নীহার আঁটকে দিল। ফিসফিস করে বলল,
” আরে কি করছিস? সান্ত্ব হো। লোক আছে অনেক দেখ ”
নীহারের কথায় চুল আর ধরল না সে। কিন্তু নজর তার দা-বানলের ন্যায় যেন সেই নজরেই ঝলসে দেবে কুয়াশাকে৷ কুয়াশা এক কানাকড়িও পাত্তা দিল না সেটা৷ বলল,
” ভাইয়া, টাকা দাও বিশ হাজার ”
” কততহহ..! ”
শিশিরের অতি আশ্চর্যায়িত শব্দ। নীহার সহ প্রায়জনই হা হয়ে গেছে কুয়াশা বিরক্ত হয়ে বলল,
” কানে কম শুনো? বললাম তো বিশ হাজার ”
” জীবনে একসাথে বিশ হাজার টাকা দেখেছিস? ”
শিশিরের কথায় ছেলেরা সবাই হেসে ফেলল শব্দ করে। কুয়াশা অপমানে ফুঁসে উঠল,
” তুই ফকিন্নি দেখিস নি বলেই তো চমকালি নাম শুনেই”
এবার মেয়েরা হেসে ফেলল৷ শিশির বলল,
” দেখ এখানে দাঁড়িয়ে থেকে তোর ফেদা পাঁচালী শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না, পথ ছাড় ”
” ধরে রাখতে চাইছে কে তোমাদের? টাকা দাও প্রবেশ করো সোজা হিসেব ”
ওদের দু’জনের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে এবার তুষার বলল,
” আরেহ থাম তো! অনেক হয়েছে আর ঝগড়া করতে হবে না। কুশু দশ হাজারে আয়। অতটাকা দিতে পারব না”
” আচ্ছা দাও ”
শিশির বলল,
” ভাইয়া এক টাকাও দেবে না বলে দিলাম। এরা বরযাত্রী আপ্যায়ন না করে নিমপাতার শরবত খাইয়েছে ”
” তুমি ইচ্ছে করে খেয়েছ ”
তুহিন বলল,
” থাম হয়েছে। আর শিশির এটা ওদের হক৷ না নেয় ”
শিশির তা শুনে বেজায় চটে গেল কিন্তু কথা বলল না৷
টাকা পেয়ে মেয়েরা হৈহৈ করে আনন্দ করল। তারপর কুয়াশা শিশিরকে একটা মুখ ঝামটা দিয়ে চলে গেল।
‘
বরযাত্রী সকলে বসে নাস্তাপানি করল। এমন সময়ে জাকির মালিথা বিয়ে পড়ানোর কথা বললেন। সকলে সম্মতি দিয়ে বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করলেন।
কিছুক্ষণের মাঝে বর, কনের বিয়ে পড়ানো সম্পূর্ণ হলে সকলে আলহামদুলিল্লাহ পড়ল। বিয়ে পড়ানোর পড় খাবার আয়োজন শুরু হলো। বরযাত্রীদের সকলকে খেতে দেওয়া হলো। তুহিনের সাথে বসল শিশির, নীহার, হিমেল, অয়ন, রিজভী। এরা বরকে ঘিরে বসল।
বরের প্লেট হয় অনেক বড় এবং অনেক স্পেশাল ভাবে সাজানো হয়। বিভিন্ন পদ দিয়ে থালা সাজিয়ে কুয়াশারা নিয়ে এলো।
থালাতে ইয়া বড় রুই মাছের মাথা, গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, খাসির মাংস, ইলিশ মাছ, ডিম, রোস্ট, চিংড়ি মাছের মালাইকারী, পোলাও, সহ আরো ছয়-সাত রকমের ভাজি কয় কয়েক রকমের ভর্তা এবং আরো ছোট মাছ বড় মাছ ভুনা করা সহ অনেক রকম ভাবে রান্না করা। যেগুলোর রান্না করার আইটেম শিশিররা চিনলই না৷ সকলে একবার করে নজর দিয়ে নিল৷
থালাতে থাকা এক প্রকার ভর্তার দিকে নজর গেল শিশিরের৷ দেখতে বেশ মজাদার এবং ইন্টারেস্টিং লাগছে। দেখতে যদি এত সুন্দর হয় খেতেও নিশ্চিয় সুন্দর হবে? শিশির ঈশাকে জিজ্ঞেস করল,
” ঈশা এটা কি রান্নারে? ”
” আমি চিনি না৷ ভাবিরা রান্না করেছে। আমরা শুধু সাজিয়েছি ”
আসলে কথাটা মিথ্যা। ওটা রান্না করার সম্পূর্ণ আইডিয়া কুয়াশার৷ সকলেই বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু ভাবছে ভর্তাটা দেখে। আসলে ভর্তা করাই হয়েছে অনেক স্পেশাল ভাবে যেন ইন্টারেসটিং লাগে। শিশির প্রথমে ভর্তাটার বাটি তুলে নিজের প্লেটে অল্প পরিমাণ নিল। শিশিরের দেখাদেখি একে সকলেই ভর্তাটা নিল মাছ, মাংস বাদ রেখে।
এরপর শিশির ওই ভর্তাটা দিয়ে আগে খাওয়া শুরু করল। খেয়ে বেশ স্বাদ পেল। একদম নতুন কিছু মনে হচ্ছে। হিমেল মুখে নিয়ে মজা পেয়ে বলল,
” আরেহ বাহ, সেই স্বাদ তো! ”
অয়ন বলল,
” এত স্বাদ ক্যান? সত্যি সেই স্বাদ”
একে একে সকলেই বলে উঠল,
” সেই স্বাদ “
তুহিন আর ওটা নিল না। এরাই খাক।
এভাবে দুই-তিনবার মুখে নেবার পর একে একে সকলে টের পেল জিনিসটার,
‘সেই স্বাদের’ মর্ম। সকলে খাওয়া থামিয়ে দিল। কুয়াশারা এবার বুঝল কাজ হয়েছে৷ বিশ্ব জয়ের হাসি দিল সে। একে ওপরের দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে হেসে উঠল কিন্তু মুখে প্রকাশ করল না। মিটমিটিয়ে হাসছে সব।
এদিকে সেই স্বাদটা টের পাবার পর শিশির কুয়াশার দিকে অগ্নিমূর্তির ন্যায় তাকাল। আজ কুয়াশাকে ঐ নজরেই ঝলসে দেবে। আস্থ আর রাখবে না আজ। কুয়াশার শেষদিন ঘনিয়ে এসেছে।
সে শিশিরের নজর বুঝল। কিছুটা দমে গেল বোধহয়। কিন্তু বুঝতে দিল না৷ আসুক না সেও ইটের বদলে পাটকেল দিতে জানে। স্মৃতি আর ঈশা শিশিরের লা’ভার ন্যায় চোখ মুখের অবস্থা দেখে একসাথে বিড়বিড়াল,
” কুয়াশা তু তো আজ গায়া ”
| চলবে |
ওদের খাওয়া খাবার টা কি? কমেন্ট বক্সে বলিয়ো কিন্তু সবাই
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )