| প্রথমাংশ
®রোজা রহমান
‘
মধ্যে রাত কারো চোখে ঘুম নেই। নিশাচরের মতো মালিথা ভিলার এক একটা সদস্য জেগে। চোখের পাতা কেউ এক করতে পারছে না। আজমীরা অতিরিক্ত কান্না করে অজ্ঞান হয়ে গেছিল রাত বারটার দিকে। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছে। জেগে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। জাকির মালিথা ও আজমীরাই শুধু ঘুমে। তাছাড়া সকল সদস্য জেগে। এমনকি হিমও।
‘
রাত একটা বেজে গেছে। কতক্ষণই আর থানায় থাকবে তারা? আজ বৃষ্টি যেন আটঘাট বেঁধে এসেছে। তুষাররা সকলে বাড়ি চলে এসেছে। বোনের খোঁজ কিছুতেই পাচ্ছে না। তুষার নিজের তুখোড় বুদ্ধি দ্বারা বুঝে গেছে তাদের বোনকে পাচারকারীরাই অ’পহ’রণ করেছে। এখন সেই অনুযায়ীই স্টেপ নিচ্ছে৷ সাড়ে বারটা পর্যন্ত তারা বিভিন্ন থাকার হোটেল, গোডাউন খুঁজেছে। কিছুতেই কোনো ক্লু মিলছে না। কি-ডন্যাপ করে তারা ঠিক কোথায় রাখে এটায় জানা নেই। ভাবনা অনুযায়ী হোটেল, গোডাউন, পুরোতন বাড়ি এসব জায়গায় ফোর্স লাগিয়ে খোঁজা হচ্ছে। এবার অন্যভাবে খুঁজতে হবে শুধু সকালের অপেক্ষা। বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সার্ভার প্রবলেমও প্রচুর দেখা দিচ্ছে। কোনো প্রকার তথ্য পেতেও খুবই সমস্যা হচ্ছে।
শিশির বাড়িতে এসেস্তক লেপটপ নিয়ে বসেছে। সে কুয়াশা কোথায় থাকতে পারে সেটা ট্রেকিং করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তুষার তার মতো করে খুঁজছে এবং শিশির নিজের মতো করে খুঁজছে আর আল্লাহকে ডাকছে। একবার হলেও যেন কুয়াশা ফোনটা খোলে। নয়তো সে যেন বুদ্ধি করে ফোন করে। সমানে হাত চালাচ্ছে। নীহার এখনো কুয়াশার ফোনে ট্রায় করে চলেছে। সব ভাইয়েরা উঠে পড়ে লেগেছে। দুশ্চিন্তা, ঘুমহীন চোখে সকলের মুখের বেহাল দোষা। রাতে কোনো রকম মুখে কিছু ঢুকিয়েছে। বুকের মাঝে ঢিপঢিপ করছে।
বৃষ্টি, ইয়াসমিনও বসে আছে। দুই জা আজমীরার কাছে। ইশাদের বাড়ির লোক, স্মৃতি, রিজভী সমানে ফোন দিয়ে আপডেট নিচ্ছে। এরা ছাড়া আর কাউকে জানানো হয়নি। কারণ সম্মান বলেও একটা জিনিস আছে৷ এসব জানাজানি হলে সকলে নিন্দা করবে, কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত করবে। আর দিন শেষে আপনজনেরাই পিঠ পিছে ছু’ড়ি মা-রে।
______
কুয়াশা ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছে। এই ঘরে তাকে একা রাখা হয়েছে। হাঁটুতে মুখ গুঁজে ভাবছে আর ফুঁপিয়ে কান্না করছে। এখান থেকে বের হবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ সে। হাত খোলা পেয়ে সে নিজেই পা খুলে ফেলেছিল। ফোন খুঁজেছিল। কিন্তু না পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কোনো উপায়ে বের হতে পারেনি এখান থেকে। তার মেয়েলি শরীরে এতটা জোরও নেই যে একা দরজা কিংবা বেড়া ভেঙে পালাবে। আর সেটা করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। তাই কোনো বুদ্ধি পায় কিনা সেটাও ভাবতে ভাবতে কান্না করছে। হঠাৎ মনে হলো আরো মেয়েরা আছে বলল তারা কই?
যত রাত যাচ্ছে তত অশ্লীলতা বাড়ছে এই জায়গার। ঘৃণায় সে বমি করে দেবার যোগাড়। আল্লাহ তাকে কোন পাপের শাস্তি দিল? আদৌ কী আর সে বাড়ি ফিরতে পারবে? বাড়ি ফিরলে সমাজের লোক তাকে কোন চোখে দেখবে? তাকে পাওয়া যাচ্ছে না এসব কী সকলে জেনে গেছে? সকলে জেনে কী ভাবছে তার বিষয়ে? আদৌ কী জানে তাকে অ’পহ’রণ করা হয়েছে?
বাড়ির জন্য মনটা কুঁড়ে খাচ্ছে। সকলের মুখ মনে পড়ছে। রাতের পর অন্ধকার কেটে গিয়ে সকাল আসবে। তার জীবনেও কী অন্ধকার কেটে গিয়ে সকাল আসবে? নাকি এভাবেই সারাজীন অন্ধকারে তলিয়ে থাকবে? এটা তো জীবনের নরক নামক জায়গা। তার জীবনও কী নরকে পরিণত হবে? হঠাৎই শিশিরের কথা মনে উঠল।
” ভাইয়া.. ”
বলে ডেকে উঠে গুমরে আবার কেঁদে দিল। মনে মনে বলল,
“দেখ ভাইয়া আমাকে সহ্য করতে পারো না আজ আমি আর নেই তোমার কাছে। তোমার আদরে আর কেউ ভাগ বসাবে না। কেউ তোমার সাথে হিংসে করবে না। কেউ তোমার সাথে ঝগড়া, মা-রা মা-রি করবে না। তুমি এবার শান্তিতে থাকতে পারবে। খুশি হচ্ছ নিশ্চয়ই আমি নেই বলে! নিশ্চয়ই আমাকে না পেলে তোমার ভালো হবে! আমাকে আর পাবে না তোমরা। এরা আমাকে বিক্রি করে দেবে। আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাবে সেখান থেকে কোথায় আমার জীবনের গতিপথ হবে জানা নেই। তুমি আনন্দে, সুখে, হাসিখুশি থেকো। এই গোবর ঠাঁসা আর তোমাকে জ্বালাবে না বিশ্বাস করো, আর তুমি দেখতে পারবে না। সবকিছু মন ভরে করো। তোমার সব পছন্দে আর ভাগ বসাবে না এই কুয়াশা। “
ভাবতে ভাবতে দম আটকানো কান্না করল।
বাড়ির কারোরই আদর আর পাওয়া হবে না তার? তাদের আর দেখা হবে না?
” মা, আমার মা কেমন আছে? নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে? ”
ভেবেই আবার কাঁদল৷ হাঁটু থেকে মুখ তুলে আকাশ মুখো মুখ নিয়ে গুমরে উঠে ডেকে উঠল,
” বাবা…! ”
আবার হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল৷ জীবন এ কী মোড় নিল তার? পাশে খাবার প্লেট পড়েই আছে। খাওয়া হয়নি কিছু দুপুর থেকে। দাঁত মুখ ধরে আসছে খিদেতে। এদিকে কান্নার জন্য মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যথায়। ওভাবে হাঁটুতে মুখ গুঁজে পড়ে রইল।
_______
” ছাড় গোবর ঠাঁসার বাচ্চা ”
মৃদু চেঁচিয়ে বলে উঠল শিশির। কাজ করতে করতে কুয়াশার কথা ভাবতে ভাবতে সোফায় মাথা এলিয়ে দিয়েছিল৷ কখন হালকা চোখ লেগে এসেছিল বুঝে নি। সেই হালকা ঘুমের মাঝেই স্বপ্ন চলে এসেছে। মানুষ সারাক্ষণ যেটা নিয়ে ভাবে, চিন্তায় থাকে মূলত সেটাই স্বপ্নে ধরা দেয়।
রাত তিনটা। শিশিরের চেঁচিয়ে ওঠাতে সকলে ওর দিকে তাকাল। ছেলেটা নিজেকে প্রকাশ করতে চাইছে না শক্ত খোলসে রেখেছে। পাশে নীহার এসে বসল। সে তাকিয়ে দেখল অস্থির শিশিরকে। সন্ধ্যায় কথাটা বলা উচিত হয়নি। আর কেউ জানুক আর না জানুক সে জানে এই ছেলেটা বোনের সাথে যতই ঝগড়া করুক, সহ্য করতে না পারুক বোনের দুঃসময়ে কখনো ফেলে দেয় না। আবার অগ্রাহ করে না।
কাঁধে হাত রাখতে ঘুরে তাকাল। চোখ লাল হয়ে গেছে। কিন্তু নজর তার অসহায়, সরল। নীহারেরও এক অবস্থা। শিশির বলল,
” বিশ্বাস কর ভাই একবার শুধু ওর খোঁজ পাই। ঐ জা*** গুলোকে আমি নিজে হাতে পু-তে রাখব ”
নীহার শুধু শুনল। প্রত্যুত্তর করল না। সে তো নিজেও ছাড়বে না কু** গুলোকে তাদের বোনের কোনো প্রকার ক্ষতি হলে। শিশির এবার আর সহ্য করতে পারল না। নীহারের কাঁধে মুখ গুঁজে দিল। কিছুক্ষণ পর তরল কিছু অনুভব করল। নীহার খুবই অবাক হলো। আর যায়হোক শিশিরের থেকে এটা আশা করেনি।
রাত বারটা পাড় হয়ে গেছিল তাও বোনকে না পেয়ে তুষার, তুহিন, সে নিজেও চোখের পানি ফেলেছে কিন্তু এই ছেলেটা একদম শক্ত হয়ে ছিল। এখন সে নিজেকে শক্ত খোলস থেকে বের করে দিল? প্রকাশ করছে তার কষ্ট, দুশ্চিন্তা, দরদ, ভালোবাসা, তাও আবার সেই বোনের জন্য যে কিনা তার চক্ষুশূল!! আসলে এটাই স্বাভাবিক ঝগড়ার পেছনে, মায়া, ভালোবাসা, দরদ সব লুকানো থাকে। আর এই ছেলেটাতো সব ভাইয়েদের থেকে কুয়াশার সাথে বেশি সময় কাটায়। যেটুকু সময় ফ্রি থাকে, বাড়িতে থাকে তাদের ঝগড়া মা-রা মা-রি করতেই সময় পাড় হয়ে যায়।
নীহার ভাইকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল। কানে এলো তখন,
” ভাই কুশুর কোনো ক্ষতি করে ফেলেনিতো ওরা? ”
ধক করে উঠল বুকে এটা শুনে। এসব চিন্তায় তো আরো মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে তাদের। বোনটা আদৌ জীবিত আছে নাকি কিছু হলো, সুস্থ, স্বাভাবিক পাবে তো!!
কী করে খোঁজ পাবে তারা? তুষার তো আজ দুইদিন ধরে সবরকম খোঁজ চালাচ্ছে! কিছুতেই তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের হাত অনেক পাকাপোক্ত। খুবই চালাক আর নিখুঁত ভাবে কাজ করে। অনেক বছরের ব্যবসায়ী কিনা!! সব রকম প্রটেকশন দিয়ে কাজ করে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রকার ক্লু রাখছে না৷
‘
রাত চারটা। চারিদিকে আজানের ধ্বনি কানে ভেষে এলো সবার। বৃষ্টি, ইয়াসমিন সোফায় বসেই ঘুমিয়ে গেছিল কখন৷ আজান শুনে সকলের বুক ধুক করে উঠেছে। আর কিছুক্ষণ পর সকাল নামবে অন্ধকার কেটে গিয়ে। তাদের পরিবারের অন্ধকার কি কাটবে?
সকলে নামাজ পড়তে গেল। আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে সকলে চোখের পানি ফেলে তাদের মেয়ে, বোনকে সহি সালামত পাবার দোয়া করল৷
একটু পর সকাল হতে শুরু করল। বৃষ্টি থেমে গেছে। তখনি শিশির, নীহার বেড়িয়ে গেল। তুষার নিজের মতো কাজ চালাতে লাগল।
_______
সকাল দশটা৷ কুয়াশা চোখ খুলল। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছিল। চারিদিকে তাকিয়ে আবছা আলো ঘরে পেল। হয়তো সকাল হয়ে গেছে। সেই আলোতে ঘরের প্রতিটা জিনিসই নজরে এলো। জানালা নেই এই ঘরে শুধু একটাই দরজা। দরজা ধাক্কিয়ে কাউকে পায়নি রাতে। কেউ শুনেনি তার কথা। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। উঠে বসল। মাথা, শরীর ঝিমঝিম করছে। কিচ্ছু নেই পেটে। বল হারিয়ে যাচ্ছে। কটা বাজে এখন?
চারদিকে তাকিয়ে কোনো উপায় খুঁজল। হঠাৎই কিছুটা দূরে তার ব্যাগ দেখতে পেল। মুখে হাসি ফুটে উঠল। বিদ্যুৎ বেগে গিয়ে ব্যাগ খুঁজল। ফোন পেয়েও গেল। আনন্দে তার হাত পা কাপছে। ঝটপট ফোন বের করে নিয়ে অন করে দেখল ফোন থেকে সিম বের করে নিয়েছে তারা। সব উত্তেজনায় ভাটা পড়ল তার। এইজন্যই রেখে গেছে!! কান্না পেল আবার। খিদেতে মরে যাচ্ছে সে।
‘
দুপুর বারটা। ক্যাচ ক্যাচ করে দরজা খুলে আবার সেই মহিলাটা এলো খাবার হাতে করে। এসেই গালি দিয়ে বলল,
” মা* গতরে তোর এত জোর ? সারারাইত না খাইয়ে কাটায়ছিস আবার দরজা ধাক্কায়ছিস। এখেন থিক বাইর কুনুদিনই হতি পারবি না শুনে নে। আর এখন খাইয়ে নে। রাইতি আর থাকতি হবিনানে তোর। দুপুর একটার পরে বস আসবিনে রাইতি তোদের গাড়িতে তুলা হবি। এখেন থিক ভালো জাগা পাবি লো”
কাটা দিয়ে উঠল কুয়াশার শরীরে। এই ব্য** মহিলার সাথে সে আর কোনো কথা বলতে চাইল না। মহিলাটা হেলেদুলে কুয়াশার কাছে এসে খাবার রাখল। তৎক্ষনাৎ কুয়াশা একটা অস্বাভাবিক কাজ করে বসল। শরীরের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে মহিলাটার বুকের উপর ঘু-ষি দিল দুই হাত দিয়ে। লাগল একদম বুকের নরম স্থানে তখনি মহিলাটা গুঙিয়ে উঠল। ভাগ্যিস শব্দ বেশি হলো না গুঙানির। আল্লাহ সহায় হচ্ছেন তার। এবার আরো একটা অস্বাভাবিক কাজ করল। মহিলাটার শরীর থেকে শাড়ির আচল নিয়ে মুখে পুড়ে দিয়ে তখনি আবার নিজের শরীর থেকে ওড়না খুলে মহিলাটার মুখে বেঁধে ফেলল কোনো শব্দ করার আগেই। এবার মুখ বাঁধার ফলে মহিলাটা আরোই কথা বলতে পারল না শুধু উম উম করল। এরপর ঝটপট রাতে তাকে যেই দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল সেটা দিয়ে দুই হাত বেঁধে ফেলল তৎক্ষনাৎ। মহিলাটা কিছু বুঝার আগেই সব হয়ে গেল। তাই কিছুই করতে পারল না। শুধু চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে। ভাবছে একে যতটা দূর্বল মনে হয়েছিল ততটা না!!
হাত বেঁধে এবার মহিলাটাকে ল্যাং মে-রে নিচে ফেলে দিল। মহিলাটার কোমড় বোধহয় গেছে। ব্যথায় শব্দ করল কিন্তু শব্দ বের হলো না। কারণ মুখ বাঁধা। কুয়শা পা জোড়া বাঁধতে বাঁধতে বলল,
” দূর্বল ভাবিস আমায়? ছোট থেকে মা-রা মা-রি করে আসছি। তাই এসব টেকনিক আমার জানা আছে। শুধু সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম৷ এবার চেঁচা কেমন পারিস। “
বাঁধা হয়ে গেলে সে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু বাঁধল আরেক বিপত্তি। দরজা খোলার আগে উঁকি দিয়ে দেখল বাইরে অনেক মেয়ে, মহিলা। বের হবে কি করে? পরক্ষণেই ভাবল এখানে অনেক মেয়ে আছে বলেছিল। তাদেরও তো বাড়ি ঘর আছে মা-বাবা আছে। তার চাচা, ভাই পুলিশ সেখানে সে কী করে এমন একটা সার্থপরের মতো কাজ করবে? তাই ফিরে এসে মহিলার ব্লাউজের নিচে বুকের ভেতর থেকে বাটন ফোন বের করে নিল। সে দেখেছিল কাল এখান থেকে ফোন বের করতে। বলল,
” হ্যাঁ রে কী বাজে জায়গায় এসব রাখিস তোরা? লজ্জা করে না তোদের? ছিঃহ আমার তো ঘিনঘিন করছে এই ফোনে হাত দিতেই। কিন্তু উপায় নেই তবুও দিতে হবে ”
বলে সে আগে সময় দেখল। বারটা পনের বাজে। একটা বাজতে পয়তাল্লিশ মিনিট সময় আছে। ভেবে ঝটপট তুষারের ফোনে কল করল। নাম্বার মুখস্থ আছে। অধৈর্য হয়ে উঠল৷ উত্তেজনায় হাত পা কাপছে তার। আল্লাহকে ডাকছে। সব যেন ঠিক ভাবে হয়। বাইরে থেকে কেউ টের পেয়ে গেলে আর জীবনেও বেরোতে পারবে না সে। তাই সব কথা ফিসফিস করে বলছে সে। কল ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই রিসিভ হলো।
ওপাশ থেকে অধৈর্যের বাক্য এলো। বুঝল ভাইয়েরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে গেছে। মুখে একটুকরো হাসি ফুটিয়ে সব ঘটনা তুষারকে বলল। তুষার শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠল। তৎক্ষনাৎ কুয়াশার দেয়া ফোন ট্রেস করল এবং তার ফোর্স সহ সকলকে জানিয়ে দিল।
কুয়াশা ফোন রেখে বলল,
” আমার কাজ হয়ে গেছে। এবার বাকিটা আমার ভাইয়েরা করবে বুঝলি?”
মহিলাটা হাত পা মুচড়াচ্ছে আর উম উম করছে। কুয়াশা বলল,
” বাকি মেয়েদের কোথায় রেখেছিস বলতো? আমি তো এখানে কারো কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আদৌ কি আছে আরো মেয়ে নাকি আমাকে মিথ্যা বলেছিস? ”
বলে আরো একটা অস্বাভাবিক কাজ করল। মহিলাটার গালে একটা শব্দহীন কি-ল বসিয়ে দিল। বলল,
” এই মুখে আমাকে বাজে কথা বলেছিস না সেটার সোধ নিলাম ”
মহিলাটার ব্যথায় চোখে পানি এসে গেল। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল শুধু।
| চলবে |
‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’
পর্বঃ ২৮ | শেষাংশ
®রোজা রহমান
‘
দুপুর বারটা বেজে পাড়। চব্বিশ ঘণ্টা পাড় হয়ে যাচ্ছিল তবুও বোনকে তুষাররা পাচ্ছিল না। অবস্থা তাদের বেহাল। জাহিদ মালিথাও চলে এসেছেন দশটার দিকে। তিনি কয়েকটা পুলিশ ফোর্স নিয়ে পুলিশের গাড়িতে এসেছেন৷
তুষার সব বলাতে আর একমিনিটও কেউ অপেক্ষা করল না। লোকেশন যেখানে দেখাচ্ছে খোকসার গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত জানিপুর পুরাতন বাজার!! যেখানে পতিতালয়। বাজার ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে পতিতালয়টি। সেটা শহর থেকে পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ। এই লোকেশন পেয়ে সকলের ভয় আরো ঢুকে গেছে মনে। কিডন্যাপ করে পতিতালয়ে নিয়ে রাখবে এটা মাথাতেই আসেনি কারোর। কতটা চালাক হলে পতিতালয়ে রেখে সেখান থেকে পাচার করতে পারে? পতিতালয়ে যে পুলিশের আনাগোনা নেই এটা তারা বুঝেশুনেই এইভাবে কাজ চালায়!
________
এদিকে আরেক বিপদ এসে হানা দিয়েছে। আধাঘন্টা পর তিনটা পুরুষ এসে ঘর ধাক্কিয়ে ভেঙে ফেলেছে। একটা মহিলাও এতক্ষণে এখানে পা রাখেনি কিন্তু পুরুষ!! কুয়াশার হাত পা কাঁপা শুরু করল। ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। বিদঘুটে দেখতে লোকগুলো। আল্লাহ কে ডাকতে ডাকতে বলল,
” ভাইয়ারা এখনো এলো না কেন! আর কতক্ষণ?”
কুয়াশা ভয়ে অজ্ঞান হবার যোগাড়। সব দেখে মাথায় রক্ত চেপে উঠেছে লোক তিনটার। এগিয়ে গিয়ে কুয়াশাকে একজন বিশ্রি ভাষায় গালি দিয়ে থা-প্পড় দিল। ঠোঁট কেটে গেল। ব্যথায় কেঁদে দিল মেয়েটা৷ এনে পর্যন্ত কোনো শারিরীক তর্চার করেনি।
মহিলাটাকে খুলে দেয়া হলো। মহিলা মুখ খোলা পেয়ে সব কাহীনি গড় গড় করে বলে দিল। সব শুনে আরো মা-রল কুয়াশাকে লোকগুলো। তৎক্ষনাৎ মহিলাটার ফোন থেকে সিম খুলে ফেলল একজন৷ তারা চিন্তায় পড়ল এখন কী করা উচিত? এতক্ষণে এখানের ঠিকানা পেয়ে গেছে। বলাবলি করল এখন আপাতত এখান থেকে বের হতে হবে। রাত পর্যন্ত এখানে থাকা যাবে না। অন্য জায়গা থেকে ঢাকায় রওনা দেবে।
বলে নিয়ে একজন বলল,
” এ্যাই অজ্ঞান কর সব কইডারে৷ করে সব কয়ডারে গাড়িত তোল “
শুনে কুয়াশার মন চাইল মাটির মধ্যে ঢুকে নিজেকে রক্ষা করতে। আশার ক্ষীণ আলো দিয়েও সেটা নিভে গেল!! কিন্তু এদিকে লোকগুলোর বলতে দেরি হলো তৎক্ষনাৎ পুলিশের গাড়ির হর্ণ কানে আসতে দেরি হলো না৷ সর্বনাশ!!
মিনিটের মাঝে পুলিশ ভরে গেল। খুঁজে কুয়াশকে বের করল। কারণ এটা গোলকধাঁধার মতো বস্তুি। কিসের মধ্যে কী দিয়ে বানানো বুঝা বড় মুশকিল। তুষার সকলকে ধরে বের করে আনার নির্দেশ দিল এবং সেখানের লোক তিনটাকে ধরে নিয়ে তুষারদের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো।
জিজ্ঞেসাবাদ করে জানতে পারল তাদের বস ঢাকায় আছে আজই বিদেশে চলে যেতে চেয়েছিল। বছরে বিভিন্ন জেলা থেকে দশজন করে মেয়ে নিয়ে যায়। কুয়াশাকে ধরার কারণ এই জেলা থেকে দশটা মেয়ে নিতে চেয়েছিল যেগুলো দেখতে সুন্দরী আর শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে আকর্ষণীয়। ষোল বছর থেকে বিশ বছরের মেয়ে নিয়ে থাকে। তাদের বিদেশে দেয়৷ ঢলঢলা বা চিকন শরীরের মেয়ে তারা নেয় না৷ ফিগার ফিটনেস না হলে বাছায় করে না। স্মৃতিকে না নেবার কারণ তাদের মনে ধরে নি তারউপর এক জায়গা থেকে একসাথে দুইটা মেয়ে তারা নেয় না। আবার এক ঘরে না রাখার কারণ তারা যেন সবাই মিলে কোনো প্রকার শক্তি প্রয়োগ করতে না পারে এবং একে অপরের বুদ্ধি কাজে না লাগাতে পারে। একা থাকলে তো বেশি কিছু করতে পারবে না!!
সব কাহিনী শুনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশির লোক কয়টার নাক বরাবর দিল ঘু’ষি কয়েকটা। নীহারও একই কাজ করল। তুষাররা আটকাল। না আটকালে এখানেই মে-রে দিবে। তুষার তো নিজে হাতে এদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
‘
এরপর শিশির আর অপেক্ষা করল না। ঘরের মধ্যে হুরমুড়িয়ে ঢুকল। কুয়াশাকে যখন দেখতে পেল জানে পানি এলো তার৷ কুয়াশা শিশিরকে দেখে কেঁদে দিল ঝরঝর করে। গালে আঙুলের দাগ, ঠোঁট কাটা, চোখমুখ শুকিয়ে গেছে সবই দেখল একে একে। চোখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল শিশিরের। তৃষ্ণার্থ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। চোখ অসহায়, সরল, নির্বিকার মুখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। পুরো পঁচিশ ঘন্টা পর এই মুখ, এই মেয়েটাকে দেখতে পেল! হাত পা কাঁপা কাঁপি শরু হয়েছে।
কুয়াশা কাঁদতে কাঁদতে সরল, নিবিড়, নরম স্বরে ডাকল,
” ভাইয়া..! “
তার সেই অন্তরে বাড়ি দেয়া ভাইয়া ডাক!!
শিশিরের বুকে বাড়ি দিল। মেয়েটা তাকে ভাইয়া বলে ডাকে না কিন্তু যখন ডাকে তখন ডাকটা বুকে এসে বাড়ি দেয়। ভেতর থেকে নাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়। চেয়েও তখন উপেক্ষা করতে পারে না ডাকটা। চোখে পানি এসে ধরা দিল। একে খুঁজে পেয়েছে ভাবতেই পারছে না৷ আল্লাহ ডাক শুনেছেন।
কুয়াশা ভাইয়া ডাকার সাথে সাথে উঠে দৌড়ে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শিশিরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গলা জড়িয়ে ধরল। শিশির যেন এটার জন্য প্রস্ততই ছিল ভাবটা এমন ছিল। কুয়াশাকে দৌড়ে আসতে দেখে সে নিজেও দিকবিদিক ভুলে হালকা ঝুকে দুহাতে কুয়াশার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে উপরে তুলে নিয়েছে। দাঁড়ানো অবস্থারত কুয়াশাকে। শিশির কুয়াশার কোমড় ধরে আর কুয়াশা শিশিরের সাপের ন্যায় গলা পেঁচিয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছে।
সে যে আবার বাড়ির কাউকে দেখতে পাবে ভাবনায় ছিল না। ধরেই নিয়েছিল তার জীবন, জীবনের রঙ, ক্ষন, দিন, মাস, বছর সব পাল্টে যাবে। সামনে এই ছেলেটা কী তার জানা নেই কিন্তু সব থেকে মনে একেই পড়েছে। কেন পড়েছে জানা নেই। এখন সামনে দেখে তার আর দাঁড়িয়ে থাকা হলো না। এত মা-র মা-রি ঝগড়া করে কিন্তু অন্তুর ঠিকিই তাদের পুড়েছে। এইযে যেমন দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল এটা যে কেউ দেখলে ভাববে ফিল্মি বা ড্রামা কিন্তু এটা তাদের কাছে আবেগ, দরদ, মায়া, অন্তর পুড়ার জ্বালা। এসব একমাত্র ওরাই বুঝছে আর কেউ বুঝছে না। কারণ অন্তর তো শুধু তাদেরই পুড়ছে অন্যরা বুঝবে কী করে?
কুয়াশা হাউমাউ করে কেঁদেই যাচ্ছে। আর শিশির ওকে শক্ত করে বুকের সাথে ধরে রেখেছে। মিশিয়ে নেবার চেষ্টা করছে যেন ছেড়ে দিলেই আবার বদ লোকগুলো নিয়ে নেবে কুয়াশাকে। আর পাবে না এই শান্তিটাকে। এই যে এখন মেয়েটাকে পাবার পর যেই শান্তি লাগছে এটা কিছুক্ষণ আগে জ্বলুনি রূপে ছিল। অন্তর জ্বলে খাঁক হয়ে যাচ্ছিল। আল্লাহকে কতবার ডেকেছে মেয়েটাকে সুস্থ সবল পাবার জন্য। শুকরিয়া আদায় করতে ভুলল না।
পেছন থেকে জাহিদ মালিথা সহ সকল ভাই এই দৃশ্য অবাক নয়নে দেখছে। তারা সারাবছর যে ভালোবাসা দেখায় তার থেকে দ্বিগুণ ভালোবাসা এই মুহূর্তে কুয়াশার প্রতি শিশিরের? কে বলবে এরা এক একজন বুনো ওল বাঘা তেঁতুল? ঠিক যেন টম অ্যান্ড জেরীর ভালোবাসা।
‘
ওভাবে কেঁদেই যাচ্ছে কুয়াশা তখন শিশির এক হাতে কুয়াশা কোমড় জড়িয়ে রাখল অন্যহাতে তার গলার মাঝে থেকে কুয়াশার দম আটকানো কান্নারত মুখটা তুলল। তুলে কী হলো কে জানে! নিজের সকল আবেগ ঢেলে দিয়ে আদর দিল কুয়াশা সারা মুখে। দিকবিদিক ভুলে গেছে। কাল, ক্ষণ, জায়গা সব ভুলে গেছে। এখানে আরো লোক আছে কী না আছে দুজনের দেখার নেই। তারা একে অপরকে ভরসা ভাবছে। একে অপরকে পেয়েই আনন্দিত।
শিশির এলোপাতাড়ি কুয়াশার চোখে, মুখে, ছোট ছোট চুমু দিল। দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” সোনা ঠিক আছিস তুই? “
কুয়াশা আদর এবং আদরবাণী পেয়ে আরো আহ্লাদী হয়ে উঠল। আরো শক্ত করে ধরে আটকে আটকে কান্না করতে করতে বলল,
” নাহ্, ওরা আমাকে খুব মে-রেছে, বাজে ভাষায় গালি দিয়েছে, বাজে কথা বলেছে, আমাকে নোংরা খাবার খেতে দিয়েছে। কাল থেকে কিচ্ছু খাইনি আমি। আরো জানো আমাকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। তোমরা আর দশ মিনিট লেট করলে আমাদের অজ্ঞান করে নিয়ে চলে যেত এখান থেকে ”
ফুঁপিয়ে আটকানো কন্ঠে সবটা বলল। বলে আবার শিশিরের কাঁধের উপর মাথা রেখে কেঁদে দিল৷ কিছুক্ষণ আগের সেই সাহসী কুয়াশা ভাইদের পেয়ে আবার আদুরী হয়ে উঠেছে। তার সকল আহ্লাদ শুধু আর শুধু মাত্র ভায়েদের কাছে। বাহিরে এক কথার মেয়ে সে। সব শুনে শিশিরের বুক আরো ভারী হয়ে এলো সাথে রাগ উঠল প্রচুর মাথায়। কপালের রগ দপদপ করছে। কঠিন শাস্তি দেবার ব্যবস্থা করবে কু** গুলোকে ভেবে নিয়ে শিশির আবার কুয়াশার গালের উপর গভীর, গাঢ় চুমু দিল। দিয়ে বুকের সাথে আগলে নিল ছোট বাচ্চাদের মতো করে।
পেছনে থাকা সকলে সবটাই দেখল। জাহিদ মালিথা সব থেকে বেশি অবাক হয়েছেন। তিনি এবার এগিয়ে গেলেন। কুয়াশাকে ডাকল,
” কুয়াশা! মা আমার ”
চাচুকে দেখে শিশিরকে ছেরে চাচুর কাছে গেল। চাচুর বুকে মাথা রেখে ঝরঝর করে কেঁদে দিল। অভিযোগ করল,
” ওরা আমাকে খুব মে-রেছে চাচু।”
জাহিদ মালিথা মেয়েকে আগলে নিয়ে কপালে চুমু দিলেন৷ কিছু মূহুর্ত আগে মনে হয়েছিল আর এই কলিজাটাকে দেখা হবে না। সহি সালামত পাবে কিনা ভাবতেও পারছিল না৷ পঁচিশ ঘন্টা একটা যুবতী মেয়ে নিখোঁজ থাকলে কেমন লাগে সেটা যারা এই পরিস্থিতিতে পড়ে তারাই জানে৷ কতরকম চিন্তা মাথায় আসে৷ সমাজের চিন্তাও তখন মাথায় জেঁকে বসে। বললেন,
” মা, আমরা ওদের শাস্তি দেব৷ তুমি ঠিক আছো? ”
” হ্যাঁ “
একে একে সব ভাইয়েরা একমাত্র বোনকে আগলে নিল। আদর দিল অসংখ্য। জানে পানি পেয়েছে যেন। ঠিক যেমন চাতক পাখি এক ফোঁটা পানির জন্য তৃষ্ণার্থ হয়ে থাকে তেমন অবস্থা হয়েছিল সকলের। তুহিন বোনকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দিয়েছে। তাদের নিজেদের বোন নেই। এই মেয়েটাকে রক্ত, আত্নার, মায়ের পেটের বোন বলে মেনে আসে। সকল আবদার তো তারাই পূরণ করে। পেলে পুষে বড় করলে তো একটা গৃহপালিত পশুও আপন হয়ে যায় আর সেখানে রক্তের জিনিস কী করে তারা ভালো না বেসে থাকবে!! আগলে না রেখে থাকবে? আসলে বোনের প্রতি সকল ভাইদের ভালোবাসাটাই এমন। বাবার পরে ভাইরাই হয় মেয়েদের বটগাছের ছায়া।
_______
ঘড়ির কাটা যখন দুপুর তিনটা তখন কুয়াশাকে নিয়ে সকলে বাড়ি ফিরল৷ বাড়ির প্রতিটা সদস্য মুখিয়ে আছে কলিজাকে দেখার জন্য। প্রতিবেশীরা জেনে গিয়ে বাড়িতে সকালে ভিড় জমিয়েছিল। সকলকে ম্যানেজ করেছে বৃষ্টিরা। ঘটনা খুলে বলেনি। শহরের মাঝে এই জন্য ঘটনাটা চাপা উত্তেজনায় আছে গ্রাম হলে বোধহয় এই ঘটনা দা-বানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ত আর সমালোচনার ভিড়ে পিশিয়ে মা-রত। ঘটনার শিরনাম হতো তাদের নিজেদের মতো।
স্মৃতি, রিজভী, ঈশারা এখানেই আছে। কুয়াশাকে নিয়ে সকলে বসার ঘরে প্রবেশ করলে হিম গিয়ে সকলের আগে বোনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল। কুয়াশাও কেঁদে দিল। আজমীরা মেয়েকে পেয়ে আসমান পেলেন। আম্বিয়া, জাকিয়া কুয়াশাকে ধরে অসংখ্য আদর দিলেন।
শুধু কি পেটে ধরলেই মা হওয়া যায়?? উহু, মা হতে মায়ের মতো হৃদয়ে মমতাবোধ থাকা চায়। নীতি, জ্ঞানবোধ থাকা চায় তাহলেই যে কোনো সন্তানের মা হওয়া যায়৷ সে ভাসুর, দেবরের সন্তান হোক আর সতিনের সন্তান হোক না কেন৷
সকলে কুয়াশাকে নিয়ে ব্যস্ত হলো। মেয়ে তাদের ফিরেছে। তাদের মেয়েকে আবার সুস্থ, সবল ভাবে যেন পায় এটা শুধু আল্লাহর কাছে চেয়েছেন। এখন সুস্থ পেয়ে হাজার শুকরিয়া আদায় করলেন৷
| চলবে |
রাতে আরেকটা পর্ব দেবার কথা থাকলেও দিতে পারি নি। লিখে উঠে অনেক রাত হয়ে গেছিল।
এই পর্বের বাকি অংশ রাত আটটার মধ্যে পোস্ট করে দিব৷ বাকিটুকু দিলে অনেক বড় হয়ে যাবে।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click