| প্রথমাংশ
®রোজা রহমান
‘
সকলের গভীর ভাবনায় ভাটা পরল জাকির মালিথার কথায়। বললেন,
” তোমরা কখনো এটা খেয়াল করে দেখেছ? যে ওরা নিজেরা ঝগড়া করে কিন্তু কখনো কথা বলা বন্ধ করেনা কিংবা রাগ করে থাকে না। যা-ই করুক না কেন কখনো একে অপরের সাথে একদিনের জন্যও কথা বলা বন্ধ রাখে না। তাহলে ভবিষ্যতে যে হাজার ঝড় এলে একসাথে থাকবে না সেটা বলতে পারবে কেউ? এই থেকেই বোঝা যায় ওরা কখনো নিজেদের ছাড়বে না। বিয়ের বন্ধনে আটকা পরলে সবই ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া কুয়াশা আমাদের মৃ’ত ছোট ভাইয়ের আমানত। ও নেই তাই কুয়াশা এখন আমাদের আমানত। ওর অসম্ভবে আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ওর আমনতকে সঠিক জীবন সঙ্গী বেছে দেয়ার৷ জাহিন থাকলে এমনটাই ভাবতো। তাই আমরা আমাদের আমানতকে সঠিক ভাবে সম্প্রদান করতে চাই। বড় ভাইয়ের এতে কোনো আপত্তি নেই। বরং বড় ভাই নাকি নিজেও এটা ভেবেছিলেন। আমি বলার পর বলেছে আমাকে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঐদিনই। কিন্তু বড় ভাইয়া নাকি অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন। সঠিক সময় এলে জানাতে চেয়েছিলেন৷ ”
তিনি থামতেই সকলে আবার ভাবনায় ব্যস্ত হলো। ভাবল সত্যি তো এটা তো কখনো ভাবেনি তারা। ওরা যা-ই করুক কখনো একে অপরের সাথে একদিনের জন্যেও কথা বলা বন্ধ করেনি৷ আর কুয়াশা বাড়ির মেয়ে বাড়িতে থাকবে এতে আরো ভালো। চোখের সামনে থাকবে। শিশির লাখে একটা ছেলে। ঘরে বাইরে এই বয়সেই দায়িত্ব নিতে জানে৷ ওর শুধু যত সমস্যা কুয়াশার উপর। সেটা মানাতে পারলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বড়দের কথা নিশ্চয়ই ফেলবে না!
আজমীরা ভাবলেন, এটা কোনো দিক দিয়েই খারাপ হবে না। তার মেয়েটা বাড়িতে থাকবে চোখের সামনে থাকবে আরো ভালো লাগবে। একমাত্র মেয়েটাকে কার কাছে, কীভাবে পাড় করবে দিকঠিকানা নেই তো সেটা যদি নিজে চোখে দেখে বড় হওয়া ছেলের সাথে হয় সমস্যা কি? শুধু জেদি ছেলে, মেয়েটাকে মানাতে পারলেই হবে৷ তার সমস্যা নেই৷ বড়রা যা করবে ভালোই করবে। এত বছর যখন করে আসছে। সবকিছু ভালোই হয়ে আসছে এখনও ভালোই হবে৷
জাকির মালিথা বললেন,
” আমি চেয়েছি ছোট ভাইয়ের একমাত্র মেয়েটাকে নিজের কাছেই রাখতে ছেলেবউ করে বাড়িতে রেখে দিতে। কথাটা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে কখনো বলিনি এটা কারণ, ওদের অবস্থা দেখে আগাতে পারিনি। কিন্তু কাল রাতে জাহিদ বলাতে সাপোর্ট পেয়েছি৷ এইজন্য আগাতে পারছি। এখন তোমরা তোমাদের মতামত দাও। ”
জাকিয়া বেশ অবাক হয়েছেন জাকির মালিথা ভাবনার কথাশুনে। তিনি তো ঘুনাক্ষরেও টের পান নি। জাকিয়ার ভাবনার মাঝে জাকির মালিথা তিন জায়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
” তোমাদের এতে কোনো আপত্তি আছে?”
তা শুনে জাকিয়া বললেনন,
” নাহ্ আমার আপত্তি নেই। আমার ছেলে যে দায়িত্ব এরিয়ে যাবে না এটা আমার জানা আছে। আর জাহিদ ভাই একটু আগে যেসব কথাগুলো বলল একটাও ফেলে দেবার মতো না বা অস্বীকার করার মতো না৷ কোনো মিথ্যা নেই। কথাগুলো সবই যুক্তিসম্পূন্ন। আমাদের পেটের মেয়ে নেই শুরু থেকেই কুয়াশাকে মেয়ে মেনে নিজেদের মতো করে বড় করে আসছি। আমার মেয়ে যদি আমার কাছেই থাকে আমার আরো আনন্দ লাগবে আমি খুশি হব৷ আমার ছেলের বউ করে রাখতে পারব এটা অতি আনন্দের৷ শুধু ওরা রাজি হলেই হবে৷ ”
জাকিয়া থামতেই আজমীরা বললেন,
” ভাইজান, ভাবি আপনাদের ভাই বেঁচে নেই। আজ পর্যন্ত আপনারা যা করেছেন আপনার ভাইয়ের জন্য, তার ছেলে মেয়ের জন্য, আমার জন্য সেসব ঋণ আমি হাজার বছর তপস্যা করলেও শোধ করতে পারব না৷ তার অসম্ভবে আমাদের যেমন সকলে মিলে আগলে রেখেছেনে আমাদের সকল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের নিজের সন্তানের মতো আদর, যত্ন করে মানুষ করছেন তেমনি আপনাদের সম্পূর্ণ হক আছে আপনাদের ভাইয়ের মেয়ের প্রতি। আপনাদের সম্পূর্ণ অধিকার দেখানোর অধিকারও আছে। আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন নিশ্চয়ই এবং এতে ভবিষ্যতেও ভালো হবে বলে নিয়েছেন। আমার মেয়ের সুখের কথা ভেবে নিয়েছেন। আমি সেটা মন, প্রাণ দিয়ে মানি। আপনারা আপনাদের মতো করে সবটা সামলান৷ শিশির আমার চোখের সামনে বেড়ে ওঠা একটুকরো হিরা৷ ছেলে আমাদের লাখে একটা। কখনো বাজে অভ্যাস আজো চোখে পড়েনি। আমার আপত্তি নেই কোনো “
আম্বিয়া বললেন,
” আমারও আপত্তি নেই। ছেলে মেয়ে দু’টো রাজি হলেই হবে। কিন্তু এটা অবশ্যই ওদের রাজি হবার উপর করিয়েন। কারন আজ কালকার ছেলে মেয়েদের পছন্দ থাকতেই পারে। ছেলে মেয়েদের সেই অধিকার আছে সেই দিক বিবেচনা করে ওদের মতামত অনুযায়ীই এগিয়েন। শিশির বা কুয়াশার আলাদা কোনো পছন্দ আছে কিনা জানা অতি আবশ্যক। ”
এই কথার উত্তর নীহার আর বৃষ্টি করল। নীহার বলল,
” না আম্মু শিশিরের আলাদা করে কোনো পছন্দ নেই। ও এসবে এখনো ফোকাস করেনি। ক্যারিয়ার গড়াতে ফোকাস করে”
বৃষ্টি বলল,
” কুয়াশারও নেই আমি এত মাস এসেছি কুয়াশার সাথে মিশে বুঝেছি ওরও কোনো প্রেম ঘটিত কোনো বিষয় নেই। থাকলে একটু হলেও বুঝতাম আমি “
শুনে সকলেই সন্তুষ্ট হলো। একে একে সকলেই বলল,
” ওরা রাজি হলে আমাদের আপত্তি নেই ”
এরপর আর কেউ এনিয়ে উচ্চবাচ্চ করল না। নিরবে সবকিছুতে সম্মতি দিল। জাহিদ মালিথা বললেন,
” তোমরা দেখো শিশিরই পারবে কুয়াশাকে আগলে রাখতে। ”
এরপর থেমে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
” আজই আকদ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভাই এটাই বলেছে৷ আমিও এমনটা ভেবেছি। কারণ মেয়ে আমাদের বড় হয়েছে ঘরে বাহিরে আগলে রাখার জন্য সঠিক হাত লাগবে৷ কিছুদিন আগে যে বড় বিপদটা গেল এমন বিপদ যে সামনে আবার আসবে না তার ইয়ত্তা নেই। এছাড়া সমাজ, প্রতিবেশী কটু নজরে দেখছে আমাদের মেয়েকে। সেসব বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত। আর যদি বলো পড়াশোনা সেটা ওরা যেমন চালিয়ে যাচ্ছে তেমনি যাবে। আজ আকদ করে ওদের সময় সুযোগ এবং ওরা চাইলে বড় করে অনুষ্ঠান করব৷ তোমাদের আপত্তি আছে?”
সকলেই সম্মতি দিল৷ তাদের কারোরি আপত্তি নেই। এখন শুধু মিঞা আর বিবি রাজি হলেই হয়ে হবে। জাকির মালিথা ও জাহিদ মালিথা শিশির কুয়াশাকে ডেকে সবটা জানাতে, বোঝাতে এবং রাজি করাতে বলে চলে গেলেন। এও বললেন সবার কথায় কাজ না হলে তারা দেখবেন।
এদিকে উনারা বলে তো গেলেন কিন্তু সকলে গভীর ভাবনায় পড়ল, এই অসম্ভবকে সম্ভব করবে তো করবে কীভাবে করবে!!
__________
সকাল দশটা। শিশির, কুয়াশা ঘন্টা খানেক আগে উঠে খাওয়া দাওয়া করে বসেছে৷ কারণ বাড়ির বড়দের আদেশ৷ কী জানি কথা বলবে তাদের জানা নেই৷ তাই বসে আছে। তখন একে একে সকলে এসে বসলেন তাদের সাথে। শুধু দু’কর্তা নেই সেখানে। শিশির কুয়াশার বোধগম্য হচ্ছে না সকলের অস্বাভিক ব্যবহার। কেমন জানি সকলের নজর। এত ভক্তিই বা কেন করছে হঠাৎ? দু’জনেই মনেমনে আওরাল,
” অতি ভক্তি চোরের লক্ষ্যণ ”
জাকিয়া বসে থাকা দুই প্রান্তের দুই হাম সেপাইকে দেখে নিলেন। দুইজনে কথাটা শুনে না আবার চুল ছিঁড়াছিঁড়ি করে। দু’জনে দুই প্রান্তের, দুই মেরুর এদের এক বন্ধন আটকানো কী করে সম্ভব? জানা নেই কারোর। তবে আল্লাহ ভাগ্যে লিখে দিলে সবই সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। এরপর সকলের দিকে নজর দিলেন৷ সকলেই ভয়ে ভয়ে আছে। তিনিও নিজেকে সামলে কথাগুলো সাজিয়ে শিশিরের কাছে বসে বললেন,
” আব্বু..! ”
” হ্যাঁ আম্মু বলো ”
” আমি এখন যা বলব মন দিয়ে শুনবি দু’জন হ্যাঁ? আগেই কোনো রিয়াকশন দিবি না ”
ভ্রু কুঁচকে গেল দু’জনের। শিশির বলল,
” কি বলবে আম্মু বলো তো? যে এমন ফর্মালিটি করছ?”
কুয়াশাও একই কথা বলল। কুয়াশার পাশে আজমীরা বসে আছেন। জাকিয়া বললেন,
” তোদের বিয়ে ”
কথাটা শিশির কুয়াশার কানে গেল কিন্তু আগা মাথা কিছুই বুঝল না। গভীর দৃষ্টি দিয়ে মায়ের পানে চেয়ে আছে শিশির৷ চোখমুখ কুঁচকে কুয়াশা বলল,
” কাদের বিয়ে? ”
” তোদের ”
শিশির বলল,
” কি তোদের, তোদের লাগিয়ে রাখলে? এই তোদের টা কাদের? ”
কিছুটা বিরক্ত ঝরা কথা তার৷ জাকিয়া ছেলের পানে চেয়ে থেকে ছেলের হাতের উপর হাত রাখলেন। বললেন,
” তোর আর কুয়াশার ”
তৎক্ষনাৎ আরো কুঁচকে গেল কুঁচকে যাওয়া ভ্রু৷ কুয়াশার কপালে ভাজ ফেলে বড় আম্মুর দিকে চেয়ে আছে। দু’জনের কেউই কথাটা তৎক্ষনাৎ মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারল না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করল ঠিক কী বলল জাকিয়া বেগম? এরপর যখনই দু’জনের মস্তিষ্ক কথাটা ধারণ করতে পারল তখন বি-স্ফো-র-ণ হলো। দু’জনে একে অপরের দিকে বিদ্যুৎ বেগে তাকাল। এরপর এমন একটা এক্সপ্রেশন দিল তাতে মালিথা ভিলা আর জায়গায় থাকতে চাইল না। কারণ এ দু’টোর জ্বালায় ঘর পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে। দু’জনে একসাথে বলে উঠল,
” কীহহহ…!! ”
সকলে চোখ মুখ কুঁচকে শব্দটা হজম করল। হিম, নীহার, বৃষ্টি, ইয়াসমিন কানে আঙুল দিয়েছিল৷ দুই জনে চিল্লিয়ে এক লাফে জায়গা থেকেই উঠে পড়েছে। আর কি শুনবে তারা? তাদের আর কিছুই শোনার প্রয়োজন নেই। জাকিয়া যে একটু আগে এত সুন্দর করে বলল সবটা শুনে তারপর কথা বলতে কিন্তু তারা কে শুনে কার কথা। ব্যস শুরু হয়ে গেছে তাদের সেই বিশ্ববিখ্যাত ঝগড়া। কুয়াশা বলল,
” তোমরা কি পাগল? এই বুনো ওলকে বিয়ে? তাও আবার আমি? আমি বিয়ে করব এর মতো বুনো ওলকে? লাইক সিরিয়াসলি? ”
শিশির কুয়াশার কথায় আরো দ্বিগুণ রেগে গেল। বলল,
” আম্মু তুমি ঠিক আছো তো? নাকি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে! বিয়ে? তাও আবার ঐ গোবর ঠাঁসাকে? আমি বিয়ে করব ওর মতো গোবর ঠাঁসাকে? লাইক সিরিয়াসলি? “
কুয়াশা বলল,
” এই বুনো ওলকে আমি বিয়ে করব? কখনো না। ওর মতো বুনো ওলকে বিয়ে করার চেয়ে আজীবন বুনো ওল খেয়ে মৃ’ত্যু বরণ করা ঢেড় গুণ ভালো ”
শিশির কুয়াশার এতবড় কথাটা মানতে পারল না উল্টো অপমান সে-ও করল,
” গোবর ঠাঁসাকে বিয়ে অসম্ভব!! ওর মতো গোবর ঠাঁসাকে বিয়ে করার থেকে রাস্তার পাগলকে বিয়ে করা শতেক গুণ ভালো ”
কুয়াশাও এই অপমান নিতে পারল না। তেড়েমেড়ে এগিয়ে এসে হাত তুলে মুখ ঝাঁকিয়ে চিল্লিয়ে উঠে বলল,
” এ্যাই বুনো ওল তোকে বিয়ে করার জন্য আমি কুয়াশা ম-রে যাচ্ছি? ”
” হাহ্, আমি যেন তোকে বিয়ে করার জন্য ম-রে যাচ্ছি?”
ব্যঙ্গ করে মুখ ঝামটিয়ে শিশিরেরও অনুরূপ উত্তর। দু’ জনের সমান তালে চলছে৷ বাড়ি সকলে হতভম্ব, হতবাক, বিস্ময় নিয়ে একবার শিশিরের দিকে দেখছে তো একবার কুয়াশার দিকে। কুয়াশা বলল,
” তোর মতো বুনো ওলের সাথে বিয়ে করার থেকে জঙ্গলে গিয়ে বুনো ওল খেয়ে জীবন দেব। তাও আফসোস হবে না বুঝলি?”
শিশির বাঘের ন্যায় গর্জণ করে উঠল। রাগে তার শরীর কাঁপছে। এক থাবায় কুয়াশাকে শিকার করবে ভাব। বলল,
” আজীবন তো আমার লেজ ধরে পাড় করলি। এমনকি দুনিয়াতেও আমার লেজ ধরেই এসেছিস। আবার আফসোস দেখাতে আসছিস? তোকে বিয়ে করা মানে যেচে কচুগাছে দড়ি দেয়া বুঝলি? ”
” আরেহ্ রাখ তো! তোর এক গীত আর গাইস না। কান পঁচে গেছে। তোরে বিয়ে করার জন্য নেচে খাড়া হয় নি আমি। তাই বড় বড় লেকচার মা-রা বন্ধ কর ”
শিশির রেগে এবার জাকিয়ার দিকে তাকাল। বলল,
” দেখো, নিজেদের চোখেই দেখে নাও। কতটা বেয়াদব এটা। আর তোমরা এই বেয়াদবটার সাথে বিয়ে দিতে চাইছ আমার? সেধে ষাঁড় পোয়াল পালায় আনতে চাইছ?”
কততবড় কথা!! তাকে ষাঁড় সম্মোধন করল? কুয়াশা আর শিশিরের দূরত্ব খুব একটা বেশি না। কারণ তারা ঝগড়া করতে করতে কাছাকাছি চলে গেছে এগুতে এগুতে। তর্জনী তুলে কুয়াশা বলল,
” এ্যাই বুনো ওল, ষাঁড় আমি না তুই? মূর্খ বুনো ওল! আজ পর্যন্ত জেন্ডারটাও ঠিক মতো শিখিস নাই? ”
শিশির এবার আরো গর্জে উঠল। দু’জনের চোখে রাগের শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে৷ নজর তাদের স্থির, শাণিত। কেউ কাউকে একচুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ। শিশিরের রাগের মাত্রার পাল্লা এবার ভর্তি হয়ে গেছে সে এই অপমানটা আর নিতে পারল না। শরীরের রগ গুলো ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে হাত মুঠো করে কুয়াশা চোয়াল চেপে ধরল। কুয়াশা মুখ উঁচু হয়ে গেল। ঠোঁট গোল হয়ে গেল। চোখ খিঁচিয়ে নিয়েছে। কারণ রাগত শিশির তো আর আস্তে ধরে নি? ধরলে লাগার মতো করেই ধরেছে। শিশির এক হাত নিচে মুঠো পাকানো আর অন্য হাতে চোয়াল ধরেছে৷ কুয়াশা কি থেমে থাকবে ওর শরীরে ব্যথা দিলে? কখনো না। সে-ও এবার দু’হাত উঁচু করে শিশিরের চুল ধরার চেষ্টা করল। কিন্তু শিশির তা হতে দিল না মাথা সরিয়ে পেছন দিকে নিয়ে নিল। কিন্তু কুয়াশা থেমে থাকল না। শিশিরের গলা চে-পে ধরল। ও যত জোর দিয়ে চোয়াল ধরছে তো কুয়াশা তত জোর দিয়ে গলা টি-পে ধরছে। ভাবটা এমন, আজ এখানেই খু-না খু-নি হয়ে যাবে তবুও বিয়ে হবে না।
বাড়ির প্রতিটি সদস্যর কথা আর কি বলব? তারা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। হতভম্ব, হতবাক, হতবুদ্ধি, বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। একের পর এক ডোজগুলো কেউ নিতে পারেনি৷ আসলে সেই সুযোগটায় ওরা দু’জন দেয়নি৷ সব কিছু এত জলদি ঘটছে কেউ কোনো কথা বা করার সুযোগই পাচ্ছে না। এতক্ষণ ঝগড়া চালিয়ে গেলেও এখন রীতিমতো, মা-রা মা-রি, হাতাহাতি শুরু হয়ে গেছে। তাও আবার যে সে হাতাহাতি না। এক্কেবারে খু-ন করে ফেলার মতো!
বিস্ময় কাটিয়ে আর কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। সকলে এ্যাই, এ্যাই দেখ, দেখ করতে করতে দু’জনকে ছাড়াল। তুষার, তুহিন, নীহার শিশিরকে টেনে নিল। বৃষ্টি, ইয়াসমিন কুয়াশাকে টেনে নিল। আর তিন জা কথাই বলতে ভুলে গেল৷
তারা কিনা এদের বিয়ে দেবার চিন্তা করছেন! এ কী সর্বনাশী সিদ্ধান্ত নিলেন তারা? এরা তো বিয়ের আগেই একে অপরকে মা— ডা র করে পটল তুলবে৷ এদের বিয়ে কী করে সম্ভব? অসম্ভব, এ অতিশয় অসম্ভব!!
তুষার রেগে গেল প্রচুর। শিশিরকে ধমকে বলল,
” ঠাটিয়ে থা-প্পড় দেব একটা। এমন মা-রা মা-রি আর করতে দেখলে। গায়ে হাত তুললি কেন ওর? ”
নীহার বলল,
” আর তোমরা এদের বিয়ে দিতে চাইছ? কি অবস্থা দেখো। এদের তো মনের মিলটায় নেই। এরা সংসার করবে বলে মনে হয়? আজ বিয়ে দেবে কাল বাসরঘর থেকে দু’জনের লা–শ বের করতে হবে। ”
সোরগোল শুনে জাকির মালিথা বেড়িয়ে এলেন৷ জাহিদ মালিথাও পেছনে এলেন। জাকির মালিথা এসে রাগত স্বরে বললেন,
” কি হচ্ছে কি এখানে? এত সোরগোল কেন? ”
জাকিয়া বললেন,
” বুঝছ না কেন? একটু আগের যেটা বললাম সেটাই হচ্ছে। এখনো সময় আছে ভেবে দেখো। ”
জাকির মালিথার গম্ভীর, ভারী, রূঢ় স্বরে কাটকাট জবাব,
” কোনো ভাবাভাবির নেই। বিয়ে আজ দুপুর পরেই হচ্ছে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। মানা আর না মানা ওদের বিষয়। কিন্তু বিয়ে হবেই ”
শিশির, কুয়াশা এতক্ষণ দু’জন দু’জনকে শিকারী নজরে দেখছিল। এবার জাকির মালিথার কথা শুনে এক্সপ্রেশন এমন দিল যে আকাশ থেকে দু’জনে মাত্রই ধাপাস দিয়ে জমিনে পড়ল। আজই বিয়ে? বলে কী!! কানে বেশি শুনল নাকি কম শুনল? ইয়া আল্লাহ!! দু’জনেরই অবস্থা এখন মাইনকার চিপায় পড়ার মতো। এরা যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন বিয়ে আজ হচ্ছেই। আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে বোঝা যাচ্ছে৷ গোল তারা দেবেই। হাজার ভালো গোলকিপার হয়েও কাজ হবে না। এই গোল আর ঠেকাতে পারছেনা তারা৷ বাঁচার কোনো উপায় নেই। রা করার মতো কোনো পরিস্থিতিই দেবে না। নিজেদের কালো ভবিষ্যত দু’জনেই চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পারছে। নিজেদের এমন করুন অবস্থা, ভবিষ্যত দেখে একসাথে আবার চিল্লিয়ে উঠল,
” নাহ্……”
| চলবে |
………………………………
‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’
পর্বঃ ৩০ | শেষাংশ
®রোজা রহমান
‘
” কি নাহ্? “
ওদের চিল্লানো শুনে জাকির মালিথা ওদের দিকে ঘুরে রাগত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন। শিশির বলল,
” এসব কি বলছ বাবা? তোমরা সবটা জানো তারপরেও এরকম একটা সিদ্ধান্ত কি করে নাও? সব থেকে বড় কথা আমাদের মতামত না নিয়ে তোমাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছ। এটা অনুচিত। আমি এই বিয়ে করব না। এছাড়া আমার পড়াশুনো শেষ হয়নি, ক্যারিয়ার গড়া হয়নি।”
কুয়াশাও একই ভাবে বলল,
” বড় চাচু, আমিও পড়াশুনো করতে চাই। আমিও এই বিয়েতে রাজি না। ওর মতো গলা চুলকানোর গোডাউনকে বিয়ে করার থেকে পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরতেও রাজি আছি তবুও আমি সারাজীবনের জন্য গলা চুলকানোর রুগী হয়ে চাই না”
কুয়শার কথা শুনে এতক্ষণ সব নিরবে দাঁড়িয়ে দেখা হিমেল বলল,
” তবে আর কী? শিশির ভাই একটু আগে বলল তোমায় বিয়ে করার থেকে রাস্তার পাগলকে বিয়ে করা শতেক গুণ ভালো আর তুমিও পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরতে চাও তবে তোমাদের ইচ্ছেই পূরণ করে ফেলো। তুমি পাগল হয়ে যাও আর ভাই তোমায় বিয়ে করুক ”
ছোট হিমের এমন উচিত কথা শুনে উপস্থিত অনেকেই ঠোঁট টিপে হাসল৷ আর শিশির কুয়াশা দু’জনেই রেগে বেচারা হিমকে দিল এক রাম ধমক৷ দু’জনেই একসাথে ধমকে বলল,
” তুই চুপ থাক..!”
এই লিলিপুটও ওদের বিরুদ্ধে? ভাবা যায়!! দু’জনের পালানোর পথ সব দিক দিয়ে বন্ধ বেশ ভালো ভাবে বুঝছে। কি করবে এখন দু’জন? ভাবনার মাঝে জাকির মালিথা বললেন,
” উচিত অনুচিত এখন, এই বয়সে এসে তোমাদের থেকে শিখতে হবে আমার? “
এই কথায় দু’জনেই মাথা নিচু করে ফেলল। কোনো কথা বলতে পারল না৷ তিনি আবার বললেন,
” আর রইল সিদ্ধান্ত চাপানোর কথা। এখানে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছি সেটা কে বলল তোমাদের? এত বছর তোমাদের যেসব ভালো মন্দ আমরা দেখে এসেছি সেগুলো কি তোমাদের সিদ্ধান্তের উপর সিদ্ধান্ত নিয়ে করে এসেছি? তোমাদের কোনটাতে ভালো হবে কোনটাতে মন্দ হবে সেসব কি তোমরা নিজেরা একাই ডিসাইড করে এত বড় হয়েছ? তোমাদের সকল দিকে যখন এত বছর সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষ করে এসেছি তখন এই বিয়ের সিদ্ধান্তও আমাদের এবং এটাও উচিত কিনা অনুচিত সেসবও দেখার সিদ্ধান্ত আমাদের। এই বিয়ে সঠিক কিনা বেঠিক সেসব আমরা ভেবে চিন্তেই নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছি? ”
কেউ কথা বলতে পারল না। দু’জন চুপ করে আছে৷ শিশির বুঝল বাবা-মা হিসেবে তাদের অধিকার আছে ছেলে-মেয়েদের জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার৷ সঠিক সিদ্ধান্ত তারা যে নেবে না এটা ভাবাও ভুল৷ কিন্তু তাদের মত আছে কিনা জানতে চাইবে না? তারা তো এখন আর ছোট নেই পছন্দ, অপছন্দ বলেও একটা জিনিস থাকে সেসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে না?
তিনি আবার বললেন,
” এবার বলি পড়াশুনো নিয়ে, ক্যারিয়ার গড়া নিয়ে। আমরা বিয়ে দিচ্ছি কোথাও হারিয়ে যেতে বলছি না। যেমন পড়াশুনো করছ তেমনি করবে। যেমন চলছে তেমনি চলবে। ক্যারিয়ার গড়ে নেবে আমি সাথে আছি। তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছে৷ এখন যখন পড়তে পারছো বিয়ের পরেও পারবে৷ তোমাদের সেসবে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না। “
মুখে কারোর কথা নেই। কুয়াশা এসব শুনে আর কথা বলতে পারল না। ভাবল, বাবা বিহীন এই বাড়ির প্রতিটা সদস্য তাদের ভাই-বোনের মায়ের দায়িত্ব নিয়েছে৷ এতগুলো বছর কোনটাতে ভালো হবে কোনটাতে খারাপ হবে সব সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে এবং সেসব সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে৷ একটা পরিবারের বাবা না থাকলে তারা পথে পথে ঘুরে বেরায় সমাজে, দুনিয়ায় বেঁচে থাকায় কঠিন হয়ে যায় আর সেখানে এই বাড়ির প্রতিটা সদস্য তাদের আপন করে ঢাল হয়ে সবসময় পাশে থেকেছে। সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেছে। সে একটা মেয়ে এই বাড়ির মেয়ে হিসেবে কখনো তাকে কিছু থেকে বঞ্চিত করা হয় নি৷ বাবা বিহীন মাথার ছাদ টুকুও থাকে না কিন্তু তাদের সবকিছু দিয়েছে এই মানুষগুলো। তার বটগাছ নামক ছায়াটা পৃথিবী ত্যাগ করলেও এখানে সেই বটগাছ নামক ছায়ার অভাব নেই। তার চাচু, ভাইরা তাকে যত্ন করে আগলে রাখে। সকল আবদার পূরণ করে৷ ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখেছে। কখনো বাবার কমতি বা বাবার ভালোবাসার কমতি বুঝতে দেই নি ভাইরা চাচুরা।
আর তাদের মুখের উপর কোনো কথা বলা কেন! এমন চিন্তাও করতে পারবে না সে। এতগুলো বছর যখন সবকিছুর সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে তবে বিয়ের সিদ্ধান্তও তাদের নেয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু এই সামনে থাকা ছেলেটাকে বিয়ে করবে কি করে সে? তার সাথে তো সেই মনের মিলটাই নেই! সব সময় ঝগড়া, মা-রা মা-রি করে দিন যায়। সবথেকে অপছন্দের তালিকায় যে ছেলে তাকে বিয়ে করে সে নিজের জীবন কি করে নষ্ট করবে? ভবিষ্যত কি হবে তার? আদৌ কি এতে ভালো কিছু হবে? নাকি ভালো কিছু আছে? বিয়ের মতো বন্ধনে জোড়া বাঁধার জন্য তো লাগে; মন, ভালোবাসা, মনের মিল। আর মনের মিলটা না হয় বাদই দিল ভালোবাসা কি আদৌও সম্ভব? সেই মন কি হবে কখনো? ভালোবাসা বিহীন সংসার করবে কি করে সারাজীবন? সেটা কি করে সম্ভব! তার জানা নেই।
কুয়াশা কথাগুলো ভেবে এবার ঝরঝর করে কেঁদে দিল। সেই কান্নায় কিছু একটা ছিল যেটাতে সকলকে নাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হলো। ফু্ঁপিয়ে দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্না করে দিয়েছে৷ সে এখন দোটানায় পড়েছে। একদিকে, যারা আপন করে নিজেদের সংসারে ঠাঁই দিয়েছে তাদের কথা ফেলতে পারবে না আর অন্যদিকে শিশিরকে তার অপছন্দ তাকেও বিয়ে করতে চায় না সে। এই দুইয়ের মাঝে চাপা পরে সে এখন অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে। তাকে এখন বাঁচাবে কে এই কঠিন সময় থেকে? তার পাশে কেউ নেই।
ঝরঝর করে কান্না করা দেখে সকলের সঠিক কারণটা বোঝা হয়ে গেছে। সকলে নির্বোধ না যে কান্নার কারণটা ধরতে পারবে না। কুয়াশা যে দোটানায় পড়ছে সকলের বোধগম্য হলো। উপস্থিত সকলে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। অসহায়, সরল সেই চাহনিগুলো।
এদিকে শিশিরও সকলের দিকে সরল, অসহায় চোখে চায়ল৷ তার চোখের ভাষাও দোটানা। আবার কুয়াশার কান্নার জেরটাও বুকে লাগার মতো।
আজমিরা বেগম জাকিয়া বেগমের দিকে টলমল চোখ নিয়ে তাকালেন। জাকিয়া তা দেখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে অনুরোধ চোখে সিদ্ধান্ত বাদ দিতে বললেন। কিন্তু তিনি আগের ন্যায় কঠিন চোখে চায়লেন। এগিয়ে গেলেন কুয়াশার দিকে। কুয়াশার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর মাথায় হাত রাখলেন। একহাতে কুয়াশার কান্নারত মুখ থেকে হাতটা সরালেন। সরিয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নিলেন। আদুরে বাণী ছুড়লেন,
” কুহেলি.. মা! ”
কুয়াশা কান্না থামিয়ে মুখ তুলে তাকাল। তিনি হাত দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিলেন৷ বুললেন,
” কাঁদছিস কেন মা? এই দেখ চাচুর হাত তোর মাথার উপর আছে। এটা সবসময় থাকবে। আর যেন আজীবন রাখতে পারি সেই ব্যবস্থায় করতে চাইছি। আমার মেয়ের মাথার উপর সদা সবসময় এই হাত থাকবে। আমি যতকাল বাঁচব ততকাল তোর মাথায় হাত রাখতে চাই৷ কোথাও দিতে চাই না তোকে৷ আমার ছেলের বউ করে তোকে এই বাড়িতেই রাখতে চাই। থাকবি না আমার কাছে? চাচুর হাত মাথার উপর চায় না তোর?”
আদুরে বানীতে কুয়াশাও এবার আদুরে হয়ে উঠল। চাচুর বলিষ্ঠ বুকে এবার মুখ গুঁজে দিল। দিয়ে আবারও ঝরঝর করে কেঁদে দিল৷ অস্পষ্ট স্বরে কান্নার শব্দ বের হতে লাগল৷ জোরে জোরে কান্না করছে। সকলে নিরব চোখে দেখছে তা৷
আজমিরার এখানে কিছুই বলার নেই শুধু দেখা ছাড়া৷ জাকির মালিথা মুচকি হেসে মেয়েকে বাহুবন্দী করে এগিয়ে এসে মেয়েকে নিয়ে সোফায় বসলেন৷ পাশে বসিয়ে বুক থেকে মুখ তুললেন৷ কাঁদতে মানা করে চোখ মুছিয়ে দিলেন। এবার কিছু কথা বললেন,
” দেখ মা, তোর বাবা, আমার ভাইটা আজ বেঁচে নেই। ও থাকলেও তোর বিয়ের কথা এই সময় ভাবত। মেয়ে বড় হলে সকল বাবাদেরই এই ভাবনা আপনাআপনি চলে আসে। মেয়ে সৎ পাত্রের হাতে সম্প্রদান করার চিন্তা মাথায় জেঁকে বসে৷ আমার ভাইয়ের আমানত তুই কখনো তা আমরা ফেলে দেই নি। ওর আনানতকে আমরা নিজেদের আমানত ভেবে আগলে রেখেছি। তোর সকল সিদ্ধান্ত আমরা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছি। কারণ আমরা চাইনি আমাদের মালিথা বাড়ির মেয়ে কখনো অবহেলায় বড় হোক। মালিথা বাড়ির পুরুষদের সাম্রাজ্য কম নেই যে তোদের দায়িত্ব নিতে পারবে না। সমান হকদার তোরাও। ভালোবাসা দিয়ে সেগুলোর অধিকার দিয়েছি কখনো বঞ্চিত করিনি৷ মাথার উপর ছাদ থাকলেও কোনো ভরসার হাত ছিল না তোদের। আমরা তোদের ভরসা হয়েছি। বড় করেছি। এখন তুই বড় হয়েছিস তোকে বিয়ে দিতেই হবে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। মেয়ে হয়ে জন্ম নিলে পরের ঘরে যেতেই হবে। সে আজ হোক বা কাল। কিন্তু তোকে কোথায়, কীভাবে, কোন ছেলের হাতে তুলে দেব ভেবে আমাদের বড্ড চিন্তা হয়। কারণ তুই-ই তো আমাদের একমাত্র চিন্তা! এখন আমরা এইজন্য সিদ্ধান্তটা নিয়েছি তোকে নিজেদের কাছেই রেখে দেব৷ আমার ছেলে বলে বলছি না। আমার ছেলে কি খারাপ বল? আমার ছেলের বউ করে আমার মেয়ে বানিয়ে আমার কাছে রেখে দেব। থাকবি না আমার কাছে আমার মেয়ে হয়ে?”
শেষ কথাগুলো শুনতেই উপস্থিত শিশিরের শরীরে বিদ্যুৎর সঞ্চার হলো। ছেলের বউ!! এই কথাটা মাথায় বার বার বাড়ি দিতে লাগল। এদিকে বাবার শুরু থেকে সকল কথা-ই সে শুনল এবং বুঝল৷ প্রতিটা কথা বুঝদারের মতো এবং যুক্তিসম্পন্ন। যেখানে তাদের কোনো যুক্তি খাটবে না।
কুয়াশা চাচুর সব কথা শুনল, বুঝল। প্রশ্নের উত্তর করল বাচ্চাদের মতো,
” ও শুধু মা-রে আমাকে। বিয়ের পর তো আমাকে মা-রতে মা-রতে মে-রেই ফেলবে”
কথাটা শুনে সকলে ঠোঁট টিপে হেসে ফেলল। শব্দ করল না কেউ৷ এদিকে শিশিরেরও প্রচুর হাসি পেল মনে মনে প্রচুর হাসলও৷ গোবর ঠাঁসা মা-র খাবারও ভয় পায়!! সকলের দৃষ্টি শিশিরের দিকে দিল এবার৷ শিশির নড়েচড়ে উঠল। অপ্রস্তত হলো। এবার জাহিদ মালিথা পাশে বসলেন৷ বললেন,
” আর আমরা কি হারিয়ে যাব? তোমায় মা-রবে আমি দেখব বসে বসে? সোজা হাজতে পুরে দেব!! ”
কুয়াশা ফিক করে হেসে ফেলল। হাসল সকলে কথাটা শুনে৷ আর শিশির আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইল। তাকে নিয়ে সকলে মজা উড়াচ্ছে! তুষারও বোনের আহ্লাদীপনাতে সায় দিল,
” হ্যাঁ আমিও সাথে থাকব৷ কঠিন শাস্তিও দেব। “
তুহিন মিটিমিটি হেসে বলল,
” আর আমিও সাক্ষী হব”
সকলে মিটিমিটি হাসছে। শিশির নির্বিকার মুখে আহাম্মক সেজে দাঁড়িয়ে।
কুয়াশা আঁড়চোখে তাকাল শিশিরের দিখে। দেখার মতো হয়েছে মুখটা। তা দেখে আনন্দ পেল সে৷
বুঝদার মেয়েটা এখন চাচু, ভাইদের আদরে আহ্লাদী হয়ে উঠেছে৷ সকলে কুয়াশার নিরবতাকে সম্মতি ধরে নিল৷ বুঝল মুখে, ‘হ্যাঁ’ এ কখনোই বলবে না৷ কিন্তু না-ও বলবে না৷ ‘হ্যাঁ’ না বললেও উচ্চবাচ্য আর করবে না।
মেয়েটা বুঝেছে সব কথায়৷ এরা ছাড়া তার গতি নেই। ভবিষ্যতের সব আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিল। এত সুন্দর পরিবার যখন দিয়েছেন নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের জীবনগুলো ভালোই ভেবে রেখেছেন? এসব ভেবে চুপ রইল সে। এই ভাগ্যকেই সে ভবিতব্য মেনে নিল।
এদিকে এবার সকলে শিশিরের দিকে তাকাল৷ তার এখানে আর কি বলার আছে? কি বা বলবে? সকলে একদিকে কুয়াশাও আর উচ্চবাচ্য করবে না কারণ বাবা যে কথাগুলো বুঝিয়ে বলল এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না৷ তার আর কোনো কথা বলা হলো না। মূলত কথা খুঁজে পেল না। কোনো যুক্তিই আর খাটবে না৷ অপছন্দের কথা তো আর বলতে পারবে না যদিও অপত্যার কথা বলত সেটাও মাটি হয়ে গেল। মুখ সব দিকদিয়েই বন্ধ করে দিয়েছে। এখন এই সামনে থাকা মেয়েটাকে বিয়ে করা ছাড়া আর উপায় নেই। বলল,
” আমাকে অন্তত দুইটা বছর সময় দাও। আমার পড়াশুনো শেষ করতে দেড় বছরের বেশি টাইম লাগবে। কিছু না করে এভাবে বিয়ে করতে পারি না আমি। কারো দায়িত্ব নিতে গেলে ক্যারিয়ার থাকা চায়। সেখানে আমার এখনো পড়াশুনোয় শেষ হয়নি। আমার ফাইনাল কোর্স সহ ইন্টার্ন, বিসিএস দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লাগবে দুই বছর মতো। ততদিন অন্তত অপেক্ষা করো। “
এবারের উত্তরও জাকির মালিথা করলেন। বললেন,
” আমি একটু আগেই বলেছি তুমি পড়াশুনো করো, ক্যারিয়ার গড়ো আমি সাথে আছি। আমি শুধু বিয়ে দিতে চেয়েছি ভরনপোষণের দায়িত্ব চাপিয়ে দিই নি। তোমার বাবার কিছুতে কমতি নেই যে তোমার বউকে খাওয়াতে পড়াতে পারবে না। এখন যখন পারছি ভবিষ্যতেও পারব। শুধু আমাদের মেয়েকে ঘরের বাইরে দেখে রাখার দায়িত্ব তোমার। সমাজের, দুনিয়ার নোংরা হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার। বাদবাকিটা আমি দেখব। আমাদের জ্ঞানবোধ আছে তোমার পড়াশুনো শেষ হয়নি। তোমার যত সময় লাগে তুমি নিতে পারো। তোমার বাবা এখনো বেঁচে আছি। এছাড়া তোমার এত চিন্তাও করতে হবে না। আমাদের যা আছে তোমাদের নামে করা। জাহিদ আর আমি মিলে সেসব অনেক আগেই করেছি এবং আমার ছোট ভাইয়ের যা অংশ সব হিম আর কুয়াশার নামে করে দিয়েছি। এছাড়া আমরা দুইভাই মিলে কুয়াশার জন্য আলাদা করে গুছিয়েও রেখেছি। হিম পড়াশুনো করে বড় হয়ে প্রতিষ্ঠত হলেই ওরটা ওকে বুঝিয়ে দেব তখনই চিন্তা মুক্ত। “
আজমিরা, কুয়াশা, হিম হা করে চেয়ে রইল মানুষটার দিকে। এসব আজমিরা নিজেও জানত না। তুষার বাবা থামলে বলল,
” তোকে এত চিন্তা কে করতে বলছে? আমি তোর বড় ভাই। হারিয়ে যায়নি। সব ভাবনা রেখে এখন যেটা বড়রা করতে বলছে সেটা ভাব। আমরা তোদের খারাপ চাই না বা চাইব না। ”
এইটুকু বলে শিশিরের কাছে গিয়ে কাঁধে হার রেখে পাশে টেনে নিয়ে বলল,
” বিশ্বাস কর এই সিদ্ধান্তে ভালো কিছুই হবে ”
শিশিরের আর কিছুই বলার থাকল না। সবদিকের পথ বন্ধ। ভেবে হন হন করে চলে গেল উপরে কাউকে কিছু না বলে। সকলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এরা হ্যাঁ কেউই বলবে না৷ সব নিরব সম্মতি৷ শিশির যেতেই পেছনে নীহারও গেল।
কুয়াশা সেদিকে তাকিয়ে বিষাদময় নিঃশ্বাস নিল। কী লেখা আছে নিয়তিতে!!
‘
শিশির ঘরে এসে দরজায় দিল একটা লা-থি এরপর খাটের পায়াতে দিল একটা। দিয়ে বসল ধারাম দিয়ে। রাগে শরীরটা খুব কাঁপছে। এভাবে সকলে জোর করে একা একাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল? কি করে নেবে এত বড় দায়িত্ব সে? ঐ অপছন্দের মেয়েটার সাথে কি কখনো বনিবনা হবে তার? শান্তি মতো সংসার কি করা হবে? তার থেকে বড় কথা একটা বিয়ের বন্ধনের জন্য লাগে ভালোবাসা সেটাই তো নেই? মনের মিল কি কখনো হবে? নাকি ভালোবাসাটাই কখনো সম্ভব হবে!! ওর সাথে তো সব সময়, সব কিছু নিয়েই ঝগড়া বাঁধে। এত ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে কি সংসার সম্ভব!! ভাবতে ভাবতে মাথা নিচু করে দুই হাতে চুল খামচে ধরল হাঁটুতে দুই হাত রেখে।
ওর এমন অসহায় অবস্থা দেখে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা নীহারের একটু খারাপই লাগল। তবে কিছু করার নেই। ভাই-বোন দুটোই তাদের। এগিয়ে এল। বসল নিঃশব্দে পাশে। কাঁধে হাত রাখল শিশিরের। তাকাল শিশির। রেগে গেল সে। দূরে সরে গিয়ে বলল,
” সর তো পিরিত দেখাতে আসিস না এখন। তোরা সকলে এক একটা রাজা’কা’র। তোর বাপ, চাচারা রাজা’কা’র আর তোরা তার বংশধর। আমার দিকটা কেউ ভাবলি না৷ “
” হ্যাঁ, আর তুই খাঁটি বাঙালী। দিনে নিয়ম করে তিনবেলা যু-দ্ধ করে উদ্ধার করিস। যু-দ্ধ করে খাঁটি বাঙালীর পরিচয় দিস! “
শিশির রাগত চোখে চেয়ে রইল। নীহার এবার ঢং ধরল একটু। আদুরে হলো ভাইয়ের সাথে। এগিয়ে গেল শিশিরের গায়ের কাছে। বলল,
” শোন না আমার ভাই!”
শিশির রাগে ফুঁসছে কথা বলল না। নীহার আরো একটু চেপে গেল। শরীরের সাথে শরীর লেগে বসল। ভাইয়ের কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে নিল। আবার আদুরে কন্ঠে বলল,
” শোন না ”
শিশির ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল। সে শুধু ভাইয়ের ঢং দেখছে৷ বলল,
” কি হয়েছে? মতিগতি কী তোর? আলাপ দেখাচ্ছিস কেন? ”
” এমন বলছিস কেন আলাপ কই দেখাচ্ছি? এটা ভালোবাসা দেখাচ্ছি ”
” হ্যাঁ, ভালোবাসা দেখিয়ে উদ্ধার করে ফেলেছিস না? সেই জন্য ঐ গোবর ঠাঁসার দায়িত্ব চাপিয়ে দিচ্ছেস ”
” চাপিয়ে কই দিলাম? দায়িত্ব দিলাম। নিয়ে নে না ভাই আমাদের বোনটার দায়িত্ব! ”
শিশির হতবাক চোখে চেয়ে রইল। কই ভাবল এ একটু সান্ত্বনাবাণী দিতে এসেছে। এখন এও বোনের হয়ে সাফাই গাইতে এসেছে? নীহার আবার বলল,
” দেখ ভাই সেদিন তুই আমাকে কত বুঝদারের মতো কথা বলেছিলি কিন্তু নিজের সময় এমন অবুঝ কেন হয়ে গেলি? আমার সেই বুঝদার ভাই কই গেল? নিজেকে স্বাভাবিক কর। এমন ভাব লাগছে যেন সত্যি ধরে বেঁধে বিয়ে দিচ্ছি। আর যদি সেটা দিয়েও থাকি তবে তোদের ভালোর জন্যই। বড়রা যা ভেবেছে এতে ভালোকিছুই আছে দেখিস৷ আমাদের বোন খারাপ না। হ্যাঁ, এটা ঠিক জেদি কিন্তু শুধু আর শুধু মাত্র তোর কাছে জেদি। ওর সব জেদ তোর কাছে সীমাবদ্ধ। মানিয়ে নিয়ে চলিস, যত্ন করিস দেখবি ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ তোদের ভবিতব্য নিশ্চয়ই ভালো কিছু রেখেছেন৷ ”
শিশির নির্বিকার। ওর আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নীহার আবার বলল,
” দেখ ভাই, কুশুর এখন একটা রক্ষা করার হাত লাগবে। বড় হয়েছে। সেদিন যতবড় বিপদটা এসেছিল আল্লাহ সহায় ছিল বলে আমরা ওকে অক্ষত পেয়েছি। কিন্তু সেদিনের পর থেকে ওর প্রতি সমাজের মানুষের দৃষ্টি পাল্টিয়েছে। এটা ও শক্ত মনে হজম করছে, কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। আমরা অবাক হয়েছি এটুকু মেয়ের বুঝপনা দেখে। কিন্তু ও তো একটা মেয়ে বল? ওর ভরসার হাত না পেলে ভেঙে পড়বে৷ আমরা কতই বা মন ছুঁয়ে দেখতে পারব? সেটা সম্ভব হবে ওর কোনো মনের মানুষের। এই জন্য ওকে বিয়ে দেবার তোড়জোড় করছে সকলে। সমাজের মুখ বন্ধ করার জন্য। তুই না থাকলে ওকে অন্য ছেলে হলেও বিয়ে দেয়া হতো। একটা ভালো পাত্রের সন্ধান করত। তারা চিন্তায় আছে। কিন্তু দেখ উনারা দু’জনেই সেই সঠিক পাত্র তোকে বিবেচনা করেছে। সেটার মান রাখ। বোনটা আমার কখন না ভেঙে পড়ে সমাজের কটুকথার রসাতলে পড়ে। আগলে নিস তখন। ”
শিশির রেগে বলল,
” এসব আমার দেখার বিষয় না। অন্যকাউকেই বাছাই করত ”
” শিশির..!”
ধমকে উঠল নীহার। এ এতটা অবুঝ কী করে হলো আজ? শিশির ধমক খেয়ে নিজের ভুল বুঝতে পারল। এবার খারাপ লাগল নিজেরই। রাগ ফেলে ভাইয়ের কাঁধে মাথা রাখল৷ অসহায়, সরল কন্ঠে বলল,
” ওভাবে বলতে চাই নি আমি। কিন্তু ওর সাথে আমার মনের মিল কি করে হবে? কখনো কি মনের মানুষ হতে পারব? “
” ইনশাআল্লাহ হতে পারবি ”
শিশির উত্তর করল না৷ নীহার ভাইয়ের মাথায় হাত রেখে বলল,
” আমাদের সকলের দোয়া তোদের উপর আছে, থাকবে সবসময়। এতগুলো মানুষের দোয়া বিফলে যাবে না। দেখিস সুখী হবি তোরা।”
শিশির চুপ করে শুধু শুনল। রা করল না।
_________
” বাবা..!”
ছেলের কথায় জাকির মালিথা তাকালেন দরজার দিকে। তিনি ছেলেকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। ডাকলেন,
” এসো, এসে বসো আমার পাশে ”
চুপচাপ গিয়ে বসল শিশির বাবার পাশে। জাকির মালিথা ছেলের কাছে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বসলেন। কাঁধে হাত রাখলেন। তা ভরসার। শিশির নির্বিকার। তিনি মুচকি হেসে বললেন,
” আমি জানি আমার ছেলে বুঝদার, দায়িত্ববান। দায়িত্ব নিতে যানে এবং তাতে কার্পণ্য করবে না। আমার মৃ-ত ভাইয়ের মেয়েটার দায়িত্ব দিচ্ছি আমার ছেলেকে, নিশ্চয়ই সেটা এড়িয়ে যাবে না! জানি সঠিক এবং শক্ত হাতে তা পালন করবে। আমি বড় মুখ করে মেয়েটার দায়িত্ব দিচ্ছি কখনো অবহেলা কোরো না। ভালোবেসে আগলে রেখো, যত্ন কোরো, সম্মান কোরো। আমি জানি তুমিই একমাত্র সঠিক মানুষ হবে। আমার গর্ব হবে। আর একান্তই যদি ভালোবাসতে না পারো তবে কখনো দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে অবহেলা, অযত্ন, অসম্মান করো না মেয়েটাকে৷ আমার মৃ’ত ছোট ভাইয়ের আমানত সে। সেই আমানত আমরা এতবছর আগলে রেখেছি এখন তোমার হাতে তুলে দিতে চাইছি। শক্ত হাতে বেঁধে রেখো আগলে রেখো। আমি জানি তুমি পারবে। বিয়ের জন্য এত জলদি তোড়জোড় করতাম না। সমাজ বড্ড অবুঝ জানো তো! আমাদের ছোট্ট মেয়েটাকে কখন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে। ও শক্ত হয়ে আছে বলে টের পাচ্ছি না কিন্তু ভেতরে ঠিকই মন ভাঙছে ওর। তুমিই ওর রক্ষাকবচ হবে৷ কটুবাক্য থেকে রক্ষা করবে৷ একটা মেয়ের স্বামীর জোর অনেক বড় একটা জোর। সেটা আমি বুঝি এখন৷ তুমিও বুঝবে। সময় নিয়ে সব ঠিক করে ফেলো৷ ইনশাআল্লাহ আমাদের পাশে পাবে, আমার বাবা ”
শিশির বাবার মুখের দিকে চেয়ে শুধু শুনেই গেল৷ এতগুলো মানুষের এত এত বুঝানো কথা তার মাথায় এলোমেলো করে দিয়েছে। সকলের ভরসা তার উপরই একমাত্র? সকলেই কুয়াশার জন্য তাকে সঠিক মনে করছে? সত্যি কী সঠিক সে মেয়েটার জন্য!!
| চলবে |
উফফ এই দুটোকে বোঝাতে গিয়ে আমি নিজেই রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি কি দিয়ে যে তৈরি করা এরা
আজও বিয়ে পর্যন্ত যেতে পারলাম না এদের রাজি করাতে গিয়ে জীবন শেষ
বিয়ের লিখা লিখতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে। কাল অপেক্ষার অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ এমনিতেই অনেক বড় পর্ব দিলাম। কাল সকলে ছোট ছোট করেছ, মন ভরে নি বলেছ আজ বড় পর্ব দিলাম। তেমন বড় বড় কমেন্ট না করলে খবর আছে
এক পর্বে গুছিয়ে লিখে শেষ করতে পারলাম না। বাকিটুকু পরে অংশে দেব কাল দেব।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click