®রোজা রহমান
‘
আজ শনিবার। মালিথা বাড়ির সকলে বিয়ে এবং ঈদের কেনাকাটা করতে যাবে। আর আত্মীদের ইনভাইট পরের শুক্রবার থেকে দেওয়া শুরু করবে। এ সপ্তাহে কেনাকাটা হবে। সেসবেরই তোড়জোড় চলছে।
সময় এখন বিকেল পাঁচটা। কথা হয়েছে তুহিন অফিস থেকে এলে সবাই একসাথে যাবে। সবাই বলতে দুই পরিবারের ছোটরা। ইয়াসমিনরাও তুহিনদের সাথে যাবে। সকলে ডিসাইড করেছে বর, কনে নিজস্ব পছন্দ মতো জিনিস কিনে নিক।
‘
তুহিন কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। বাড়ির সকলের প্রায় তৈরি হওয়া হয়ে এসেছে।
কুয়াশা তৈরি হয়ে বসে আছে সোফায়। সে বোরকা পড়ে হিজাব করেছে। বাইরে বোরকা হিজাব-ই ইউজ করে। কুয়াশার পাশে এসে তখন অয়ন বসল।
অয়ন আর অনি রয়ে গেছে খালার বাড়ি৷ এখানেই থাকবে এ কয়দিন। তাদের সিদ্ধান্ত ঈদ এবার খালার বাড়ি খালাতো ভাই-বোনদের সাথে করবে। যদিও তাদের মা রাখতে চান নি কিন্তু আম্বিয়ার কথায় রেখে গেছেন। এমনিতেও তো ঈদের পরেই আবার আসা লাগত।
অয়ন পাশে বসতেই কুয়াশা তাকিয়ে একটু হাসল। অয়ন বলল,
” কি করো কুয়াশা একা বসে? “
” তেমন কিছু না ভাইয়া। ফোন টিপছি “
” হু তা তো দেখতেই পারছি। কিন্তু বিশেষ কোনো মানুষের সাথে কথা বলছো নাকি? আছে এমন কেউ?”
” আরে না না ভাইয়া, তেমন কিছু না৷ আর তেমন কেউ নেই-ও আমার। এমনিই নিউজফিড স্ক্রোল করছিলাম “
কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে বোধহয় অয়ন খুশি হলো। ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা গেল। কথার মাঝে কথা দিয়ে আসল কথাটা বেড় করে আনল। উত্তর পেয়ে গেছে সে। এবার এগুনো যাবে। মনে মনে কথাগুলো ভেবে বলল,
” আচ্ছা..!! “
” হু ”
” আচ্ছা বুঝলাম তবে তোমার কেউ নেই। আর এখন হলেও সমস্যা হবে না, তাই তো? “
কথাটার সারমর্ম বোধে আসল না কুয়াশার। তাই বুঝতে অয়নের দিকে তাকাল কিছুটা ভ্রু কুঁচকে। কুয়াশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অয়ন বলল,
” না মানে বলতে চাচ্ছি বিশেষ মানুষ নেই। হলে তো সমস্যা হবে না! “
কুয়াশা কিছু বলল না। অয়ন যে কি বোঝাতে চাইছে সে বুঝেছে। এমনকি অনেক আগেই ওর ভাব ভঙ্গি টের পেয়েছে। কিন্তু যত যায়ই বলুক এ ছেলেকে তার পছন্দ না। কেমন গায়ে পড়া টাইপ স্বভাব। বিরক্তিকর!
অদের কথার মাঝে শিশির এসে অপর পাশের সোফায় বসল। ফোন হাতে তার ফোন টিপছে৷ ভাবটা এমন যেন সামনে, আশেপাশে কে আছে তার দেখার নেই বা দেখেই নি৷ কুয়াশা সেদিকে তাকাল আর সাথে সাথে কোমড় সহ পেট ব্যথা জানান দিল। গতকাল সকালে অরকম ধরাতে আজ রাতের পর প্রচুর ব্যথা হয়েছে। একটু চাপ লাগলেই ব্যথা অনুভব হচ্ছে। গতকাল সারাদিন৷ বেশি কিছু মনে না হলেও রাতের মধ্যে ব্যথায় টনটন করছে। যদিও ঔষধ আর ব্যথা নিরাময়ের জন্য মলম দিয়েছে তবুও একদিনে কমে নি। এখন শিশিরকে দেখেই ব্যথার কথা মনে হলো। ও’কে দেখলেই ব্যথার অংশটুকু আপনাআপনি জানান দিচ্ছে এই ছেলেটা তোকে কাল ব্যথা দিয়েছে।
কুয়াশা শিশিরের দিকে তাকিয়ে ওর চোদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করল দাঁতে দাঁত চেপে। যদিও শিশিরের চোদ্দ গোষ্ঠী ওর নিজেরও গোষ্ঠী তবুও একচুল পরিমাণ-ও ছাড় দিল না।
এমনই সময় শিশিরের পাশে ধাপ করে এসে বসে পরল অনি। শিশির পাশ ঘুরে একবার তাকাল অনির দিকে। অনি হেসে জিজ্ঞেস করল,
” কি করছো শিশির ভাইয়া ”
” কিছু না অনি। “
” ও “
” হু ”
এরপর আর কথা পেল না মেয়েটা। এই ছেলেটার সাথে কখনো কথা এগুনো যায় না। যদিও অনি গায়ে পড়া টাইপ মেয়ে না। ওর লজ্জা করে তবুও পছন্দ করে ছেলেটাকে তাই টুকটাক কথা বলতে আসে যেচে। কিন্তু এ ছেলে বরাবরই গা ছাড়া ভাব নিয়ে থাকে। প্রশ্নের উত্তের চেয়ে এক অংশ কথাও বেশি বলে না।
অনি লক্ষ্য করল শিশির হালকা আকাশী কালার শার্ট পড়েছে হাতাগুলো ফোল্ড করা৷ ডান হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। উজ্জ্বল হলুদ ফর্সা লোমশ হাতগুলো অতি আকর্ষণীয় লাগছে। একটু একটু ঘাম জমে আছে এজন্য লোম গুলো লেপ্টে আছে হাতে। আকাশী কালার শার্টের সাথে নেভি ব্লু জিন্স প্যান্ট, বেশ মানিয়েছে দারুণ। একটু বেশি কাছে বসার দরুণ শিশির শরীর থেকে দারুণ একটা স্মেইল আসছে। অবশ্যই সেটা পারফিউমের তবে ঠাঁওর করতে পারল না পারফিউমটা কোন ব্র্যান্ডের। গন্ধটা মাতাল করা। কখনো মনে হচ্ছে রজনীগন্ধার মতো সুবাস আবার কখনো মনে হচ্ছে অন্যরকম কিছু।
বুকের উপরের দু’টা বোতাম খোলা৷ এবার অনি শিশিরের মুখের আদলে নজর দিল৷ ছোট ছোট দাড়িযুক্ত গোলগাল মুখ সাথে উঁচু নাক। হালকা গোলাপি ঠোঁট। শিশিরের ঠোঁট দু’টো একটু দাবানো যেটা ওর মুখের সাথে অতি সৌন্দর্য। কালো ঘণ বাঁকা ভ্রুযুগল, কপালে স্বাভাব সুলভ একটু ভাজ পরে থাকে। এ ছেলের কপালটাও নজর কাড়া। উঁচু-লম্বা মানুষটার মেদহীন সুঠাম শরীরে যে কোনো মেয়ে পাগল হতে বাধ্য। অনি এই কিছুক্ষণের মধ্য শিশিরকে চোখ দিয়ে গিলে খেতে লাগল। শিশির বুঝল এক জোড়া চোখ তাকে অতি নিপুণভাবে পর্যবেক্ষণ করছে৷ তবে শিশির বেশি পাত্তা দিল না৷ মেয়েটা ছোট। এ বয়সে কাউকে ভালো লাগতেই পারে এতে দোষের কিছু নেই!
তাকিয়ে থেকে অনি মনে মনে বলল,
” মাশাআল্লাহ, এ ছেলে এত সুদর্শন কেন! আল্লাহ শুধু মেয়েদের না ছেলেদেরও অতি যত্ন করে নিপুণ কারিগরে বানান। যার প্রমাণ এই ছেলেটা। অতিশয় সুন্দর সে ”
অনির ভাবনার মাঝেই ইয়াসমিন আর ঈশা চলে এলো ওদের বাড়ি থেকে। ঈশার মা-বাবা আসেনি। শুধু ওরা দুই বোন এসেছে। এসে ওরা কুয়াশার পাশে বসল। বসে টুকটাক গল্প করতে লাগল। আস্তে আস্তে বৃষ্টি, হিমেল, নীহার চলে এলো। বাড়ির বড়রা আজ যাবে না। কথা হয়েছে ছোটরা আসলে বড়রা কেনাকাটা করবে। তুষার এখনো আসে নি।
এরই মাঝে তুহিনও চলে এলো। তুহিন এসে সবাইকে বলল,
” দশ মিনিট বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
সকলে সম্মতি দিতে সে চলে গেল।
‘
দশ মিনিট পরে তুহিন এলে সবাই বাইরে চলে এলো। এখন কথা হচ্ছে, সকলে তো চলে এসেছে কিন্তু কে কিভাবে যাবে? আজ তুষার নেই ওর গাড়িও নেই৷ বৃষ্টি আছে তারউপর অয়ন, অনি আছে। তাই ঠিক করল দুটো রিকশা ডাকবে। ভাবনা অনুযায়ী দুটো রিকশা আসলে একটাতে অনি আর বৃষ্টি উঠল আর একটাতে ইশা, কুয়াশাকে উঠতে বলল। ইয়াসমিনকে তুহিন বাইকে নিল। নীহার নিল অয়নকে আর হিমেল শিশিরের সাথে উঠল। সবশেষে সবাই রওনা হলো৷
______
তারা সকলে কুষ্টিয়া লাভলী টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স মলে গিয়ে পৌঁছাল। এখান থেকেই কেনাকাটা করবে। প্রথমে ভেবেছিল পরিমল টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্সে যাবে সিদ্ধান্ত বদলে লাভলী টাওয়ারে এলো। ভিতরে ঢুকে প্রথমে শাড়ির দোকানের সাইডে গেল। ইয়াসমিনের জন্য শাড়ি নেওয়া হবে আগে। এরপর তুহিনের জন্য শেরওয়ানী। এরপর সবাই কেনাকাটা করবে৷ কথা অনুযায়ী সবাই কেনাকাটা শুরু করল।
এদিকে অনি প্রথম এই শপিংমলে এলো বলে ঘুরে দেখার বায়না করল৷ প্রথমে কুয়াশা, ইশাকে বলল কিন্তু ওরা তো ইয়াসমিনের সাথে তাই এই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে শিশিরকে ধরল। কিন্তু সুবিধা করতে পারল না। এ ছেলে জব্বর ঘাড়ত্যারা৷ উপায় না পেয়ে নিজেই ঘুরে ঘুরে দেখছে।
কুয়াশার গরম সহ্য হচ্ছিল না বলে বেড়িয়ে এলো যদিও এসি আছে তবুও অতিরিক্ত গ্যানজাম সহ্য হলো না। তাই বেড়িয়ে এলো। এসে হাতঘড়ির দোকানের সাইডে গেল। ওর আবার এই একটা অভ্যাস শপিংমলে গেলে আগে ঘড়ির দোকানে যাবে তাও আবার ছেলেদের। ওর নাকি মেয়েদের ঘড়ির ডিজাইনের থেকে ছেলেদের ঘড়ির ডিজাইন ভালো লাগে। কেনেও ছেলেদের গুলোই। ভাবনা অনুযায়ী ঘড়ি দেখছিল সেসময় অয়ন এসে পিছন থেকে বেশ কাছে দাঁড়িয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” পছন্দ হয়? ”
কিছুটা চমকে উঠল কুয়াশা। আচানক এতকাছ থেকে কথা পেয়ে। ঘুরে দেখল অয়ন। বিরক্ত হলো একটু তবে কিছু বলল না সেটা নিয়ে। অয়নের কথার উত্তর করতে বলল,
” হু দেখছি। দেখা যাক কোনটা পছন্দ হয়৷ “
” আচ্ছা পছন্দ করো, আমি গিফট করব তোমাকে ”
কুয়াশা তাকাল অয়নের দিকে। অনেক কাছে দাঁড়িয়ে বলে একটু সরে গেল সে। বিষয়টা শিশিরের চোখে পড়ল। সেও ঘড়ির দোকানে আসছিল। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। এ দুটো সব সময় ফেবিকলের মতো চিপকায় থাকে। ভেতরে ঢুকে গম্ভীর কন্ঠে কুয়াশাকে বলল,
” এখানে কি করছিস? ”
কুয়াশা শিশিরের কন্ঠ পেয়ে ঘুরে তাকাল৷ তারপর শিশিরের উপর বিরক্ত নিয়ে বলল,
” ঘড়ি দেখছি। অয়ন ভাইয়া নাকি আমাকে গিফট করবে ”
শিশির বিড়বিড়াল,
” যত্তসব আদিক্ষেতা ”
বলতে বলতে সে-ও ঘড়ি দেখা ধরল। দেখতে দেখতে একটা ঘড়ি পছন্দ হলো যেটা কুয়াশারও হলো।
ব্যস হয়ে গেল, আর কি লাগে??
এদের ঝগড়া করার উছিলা হিসেবে? এইটুকুই যথেষ্ট। জায়গা, ক্ষণও আর মানবেনা এখন এরা।
দু’জনেই ঘড়িটা একসাথে একই সময় ধরল। শিশির ভ্রু কুঁচকে তাকাল। তার থেকে দ্বিগুণ ভ্রু কুঁচকে কুয়াশা তাকাল। শিশির দাঁত চেপে বলল,
” কি? সমস্যা কি তোর? ”
একই ভাবে কুয়াশা বলল,
” তোমার সমস্যা কি? ”
” আমার সমস্যা, ঘড়িটা আমি আগে ধরেছি আর সেটা এখন তুইও ধরেছিস ”
” আগ্গে না, আমি আগে ধরেছি এবং পছন্দ করেছি। তুমি আমার পছন্দ করা ঘড়ি ধরেছ ”
শিশির আরো চটে গেল বলল,
” থাপ-ড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব, গোবর ঠাঁসা একটা। এখানে তর্ক, ঝগড়া করতে চাচ্ছি না। ভালো মেয়ের মতো ছাড় এটা ”
” পারব না ”
বলে এবার কন্ঠ খাদে নামিয়ে কিছুটা শিশিরের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
” তুই আমাকে থা-প্পড় দিলে আমি ছেড়ে দেব? তোর চুলও একটাও রাখব না বুনো ওল। তাই বলছি ছাড় ”
ল্যাহ হয়ে গেল!! শিশির এবার রাগে দা-উ-দা-উ জ্বলে উঠল ওর মুখে তুই শুনে। অতিরিক্ত বে-য়াদব হচ্ছে দিন দিন৷ কুয়াশাকে এত মানুষের সামনে মা-রতে না পেরে কুয়াশা যে হাত দিয়ে ঘড়িটা ধরে রেখেছে সে হাতে অতি কৌশলে খা’মচি দিয়ে ধরল। কুয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকাল। মাংস বোধহয় তুলে নিল এই বুনো ওল। ইশশ জ্বলে যাচ্ছে। ভাবতে ভাবতে সে-ও একই ভাবে শিশিরের হাতে খা’মচি ধরল। শপিংমল তো কি হয়েছে? ছাড় দেবে? কখনো না। একাংশও ছাড় দেবে না। শিশিরও ব্যথা পেল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” গোবর ঠাঁসার বাচ্চা ছাড় নয়তো খবর করব তোর। পাবলিক প্লেসে সিনক্রিয়েট করবি না বলে দিলাম৷ এটা আমার আগে পছন্দ হয়েছে। ”
” এ্যাই বুনো ওলের বাচ্চা এটা আমার আগে পছন্দ হয়েছে৷ ”
শিশির চোখ গরম করে তাকালে কুয়াশা আবার বলল,
” আমি আগে ধরেছি তুমি ছাড়ো ”
ওদের এমন ফিসফিস করে ঝগড়া করতে দেখে অবাক চোখে দোকানদার সহ অয়ন তাকিয়ে আছে। অয়ন মনে মনে বলছে,
” এরা না আবার এখানেই একে অপরকে পি-টাতে শুরু করে। মাইন ই-জ্জত সব যাবে তখন”
কথাটা আপনমনে ভেবে অয়ন দোকানে থাকা একটা ছেলের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,
” ভাইয়া ঐ সেম কোয়ালিটির ঘড়ি আর আছে? ”
ছেলেটা বলল,
” দেখে জানাচ্ছি ভাইয়া, ওয়েট প্লিজ ”
” ওকে ”
কিছুক্ষণ পর দোকানের ছেলেটা জানাল ঘড়ি আছে কিন্তু কালার ভিন্ন। ওরা যেটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে সেটা কফি কালার বেল্টের আর অন্যটা ব্ল্যাক। সেটা গিয়ে দোকানদার শিশিরকে বলল,
” এক্সকিউজ মি ভাইয়া.! সেম কোয়ালিটি আছে এটার। আপনারা চাইলে দেখতে পারেন ”
শিশির তা শুনে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওটা একে দেখান ”
কুয়াশা বলল,
” না একে দেখান। আমার এটাই পছন্দ হয়েছে “
‘মেয়ে মানুষ মানেই ঝামেলা’ কথাটা বিড়বিড়াল শিশির। তারপর আর তর্ক করতে চাইল না বলে ছেলেটাকে বলল,
” দেখান ওটা ”
ছেলেটা ঘড়িটা দেখাতেই রাগ হলো। এটা তো ব্ল্যাক বেল্ট! শিশির বলল,
” এটা তো ব্ল্যাক বেল্ট। আমার কফি বেল্ট লাগবে। ওটার সেম দেখান ”
” স্যরি ভাইয়া কফি কালার একটাই আছে”
কুয়াশা তা শুনে আনন্দে আটখানা হয়ে গেল। এটা বাড়ি হলে একটু নেচে নিত এতক্ষণ। দাঁত বের করে হেসে ছেলেটাকে বলল,
” এক্সকিউজ মি ভাইয়া..! এটা প্যাকেট করে দিন আমাকে। আর হ্যাঁ টাকা’টা এই ভাইয়ার থেকে নিবেন ”
শেষ কথাটা শিশিরের উদ্দেশ্যে বলল। শিশির তো গেল আরো রেগে।
কত বড় বেহায়া! তার পছন্দের ঘড়িটা নিয়ে আবার তাকেই পেমেন্ট করতে বলছে? বে’য়াদব কত প্রকার হলে এমন করতে পারে! চিবিয়ে চিবিয়ে আস্তে করে বলল,
” আমার ঠেঁকা পড়েনি তোকে ঘড়ি কিনে দেব আমি। ”
” তুমি দেবে আরো তোমার ঘাড় দেবে। তোমারই ঠেঁকা পরবে দেখো। “
শিশির কুয়াশার কথায় পাত্তা দিল না। সে ছেলেটাকে বলল,
” এই ঘড়িটা আমাকে প্যাকেট করে দিন। আমার এটা লাগবে। ও’কে অন্যটা দেন ”
” জীবনেও না ”
অয়ন এবার না পেরে বলল,
” আহ, শিশির কি করছো? এটা শপিংমল। ওর পছন্দ হয়েছে নিক না। তুমি অন্যটা নাও। ”
শিশির এমনিতেই ফেবিকল টাইপের জন্য অতিশয় বিরক্ত এই অয়নের উপর এখন কুয়াশার হয়ে ছাফায় গাইতে দেখে আরো বিরক্ত হলো। শেষমেশ না পেরে শিশির অন্য আরেকটা দেখল। যেটার বেল্ট কফি কালার। কুয়াশা বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে এলো ঘড়ি নিয়ে।
এদিকে অয়ন ঘড়ির পেমেন্ট করতে গেলে শিশির থামিয়ে দিল। বলল,
” আমি পেমেন্ট করছি দু’টোর-ই। তোমার দিতে হবে না।”
” আরে নাহ আমি করছি। এমনিতেই আমি ও’কে ওটা গিফট করতে চেয়েছি ”
শিশির বিরক্ত হয়ে বলল,
” অয়ন! অন্যকিছু গিফট কোরো সেটা আমার অপ্রকাশ্যে। আমার সামনে আমার বোনের জন্য অন্য কেউ পেমেন্ট করুক এটা ভালো লাগবে না। আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি তুমি নিশ্চয়ই বুঝেছ? যথেষ্ট বুদ্ধিমান তুমি। ”
অয়ন আর কি বলবে? কিছু বলতে পারল না। আসলে এটা ঠিক যে, কোনো ভাই-ই নিজের চোখের সামনে অন্য একটা ছেলেকে বোনের সাথে ফ্লার্ট করতে দেখলে কোনো ভাই মেনে নেবে না। যেখানে অয়ন শিশিরের সামনেও একদম চিপকায়ে থাকছে। আর অয়ন অদের আত্নীয় বলে অতি কৌশলে কথাগুলো বলে বুঝিয়ে দিল। যতই কুয়াশাকে অপছন্দ করুক বাবাবিহীন মেয়েটা ঘরের বাহিরে তাদের-ই দায়িত্ব। শিশির নিজে ঘরে যা করার করুক, যা বলার বলুক মেয়েটার সাথে কিন্তু ঘরের বাহিরে নিজের চোখের সামনে এসব মানবে না।
অবশেষে কি আর করার! অয়ন চুপ রইল আর শিশির ওর ঘড়ির দাম সহ কুয়াশার ঘড়ির দামও দিল। জীবনের এই প্রথম ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সব থেকে অপছন্দের মেয়েটাকে ঘড়ি কিনে দিতে হলো। কখনো কোনো জিনিস সে কেনে না কুয়াশার জন্য। এই প্রথম। যেখানে কুয়াশাকে সহ্য করতে পারে না সেখানে কিছু কিনে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না! তুষার কিনে দেয়। কথায় আছে,
“ঠেঁলায় পড়লে বিড়ালও গাছে ওঠে ”
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part )
সবাই দেখলে তো ঘড়ি কিনে দিল কিন্তু আজ!!