®রোজা রহমান
‘
শিশির কুয়াশাকে নিয়ে নিজের ঘরে এসে বসিয়ে দিয়ে বাথরুমে ঢুকেছে। শাওয়ার নিচ্ছে বোধহয়। তাই সে শুয়ে পড়ল। ভালো লাগছেনা বসে থাকতে আর। টনটন করছে নাক। কুয়াশা সারাদিনের মাঝে এখন আবার এলো শিশিরের ঘরে৷ সেই সকালের পর আর আসেনি। আসলে আসার প্রয়োজনও পড়েনি। তার দরকারী, অ-দরকারী সবকিছুই নিজের ঘরে। এখানে শিশিরের ঘরে সে কিছুই আনে নি। কাল ভাবিরা শুধু দু’সেট ড্রেস রেখে গেছিল এই যা। নিজে থেকে কিছুই আনেনি সে৷
এনেই বা কি করবে? পাশাপাশি দু’জনের ঘর। সবার প্রথমে কুয়াশার ঘর তারপর শিশিরের এরপর নীহারের এভাবে পর্যায়ক্রমে ছোট থেকে বড়দের ঘর। সেই হিসেবে শিশির, কুয়াশার ঘরটা পাশাপাশি পড়েছে৷
তাই এ ঘরে কিছু আনার প্রয়োজনবোধও মনে করেনি। তার শুধু রাতে এই ঘরে থাকলেই হয়ে যাবে ভেবে আনেনি। কী দিন এলো, নিজের ঘরেও আর রাতকাটানো যাবেনা৷ ভেবে দীর্ঘ শ্বাস নিল।
কিছুক্ষণ পর শিশির বেড়িয়ে এলো। পরনে শুধু নেভি ব্লু রঙের জিন্স প্যান্ট। শরীরে কিছু নেই। চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এলো। এসে দেখল কুয়াশা শুয়ে আছে। কুয়াশা এতক্ষণ শুয়ে ভাবনায় ব্যস্ত ছিল। শিশিরকে বেরোতে দেখে সেদিকে তাকাল৷ তাকিয়ে কেন জানি শরীরে ঝাঁকানি দিল। বিদ্যুৎ গতিতে কিছু একটা বাড়ি দিল শরীরে। হার্টবিট ধরাস করে উঠল। এমনভাবে কখনো কোনো ছেলেকে সে আজ অবধি বাস্তবে দেখেনি। এই প্রথম তার ভাষায় বুনো ওল নামক স্বামীকে দেখল। স্বামী বলেই কি এমন হলো?
এখন থেকে সব নতুন নতুন কিছুর সাথে পরিচয় হতে হবে৷ তাই পরক্ষণে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিল। লজ্জা গ্রাস করেছে তাকে। তবুও কেন জানি শিশিরের উপর থেকে চোখ সরাল না। দেখতে আকর্ষনীয় লাগছে বেশ। ভেজা চুল, গোসল করে আসাই বুকের লোম সহ পুরো শরীরের লোমগুলো পড়ে আছে বেশিরভাগই। মুখটা স্নিগ্ধ লাগছে। ছোট ছোট খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ভাজের হলুদাভ মুখটা ঘায়েল করার মতোই। বাঁকা ঘণ ভ্রু যুগলের উপরিভাগের কপালটা বেশ সুন্দর। হালকা ভাজ পড়া দৃশ্যমান তবে সেটাই সুন্দর বেশি৷ হেয়ার স্টাইলটাও বুনো ওলটা বেশ সুন্দর করে করে। কখনো এভাবে এই বুনো ওলটাকে দেখা হয়নি। দেখতে দেখতে আপনমনে আওরাল,
” নাহ্, বুনো ওলটা একটু না অনেকটাই সুদর্শন। এমনি তো আর ঐ হা করা অনিটা হা করে চেয়ে চেয়ে দেখত না ”
অনির কথা মনে উঠতে বিরক্তবোধ হলো কেন জানি। তাই ভাজ পড়ল তার নিজের ললাটেও। শিশির চুল মুছে ঘুরে তাকিয়ে দেখল কুয়াশা তাকেই হা করে তাকিয়ে দেখছে। কিছুটা অপ্রস্তত হলো। তবে পরক্ষণেই সামলে উঠে বিষয়টা স্বাভাবিক ধরে নিল। কারণ এসব নিয়ে আদিক্ষেতা করার টাইম নেই তার। বউ সে এখন৷ ঘরে বাইরে সবদিকের অধিকার দিতে হবে। শুধু মনটা মানার অপেক্ষায় আছে এখন। সে মানলে পুরোপুরি বউ হবে৷
তবে একটু মজা করা যাক। জ্বালিয়ে নেয়া যাক গোবর ঠাঁসাটাকে। সারাদিন সময় হয়নি। সুযোগটা মিস করার কি দরকার? ভেবে দুষ্টু হেসে এক লাফে যাবার মতো করে কুয়াশার সামনে চলে গেল৷ গিয়ে ঝুঁকে পড়ল মুখের সামনে। আচানক এভাবে সামনে এসে এতটা কাছে শিশিরকে ঝুঁকতে দেখে ভয় পেয়ে কেঁপে উঠল৷ ভাবনার মাঝে এভাবে আসলে যে কেউই ভয় পাবে। তাই রাগ তুলে বলল,
” এ্যাই… বুনো ওল! এভাবে আসার কি হলো? ভয় পেলাম তো আমি!”
” তা তো পাবি-ই যেভাবে গিলছিস! ”
” কি গিলছি? ”
” আমাকে ”
কেঁপে উঠল কুয়াশা। কাল থেকে অনুভূতিগুলো কেন জানি বেঈমানী করছে৷ হঠাৎ হঠাৎ কাঁপিয়ে তুলছে। কী অসহ্য ব্যাপার স্যাপার! বুঝতে না দিয়ে রাগ নিয়ে বলল,
” যে না আবার চেহারা তার নাম পেয়ারা৷’ এই চেহারা নিয়ে এখন আবার বড়াই করতে এসো না। জানা আছে তোমার চেহারার সুরত ”
শিশির ঝুঁকে থেকেই ভ্রু কুঁচকাল৷ বলল,
” গোবর ঠাঁসা, মানতে কষ্ট হচ্ছে? তোর স্বামী হ্যান্ডসাম!”
” হুহ, হ্যান্ডসামের জ্বালায় খসে খসে পড়ছ না? সরো তো এবার ”
বলে ডান হাত দিয়ে শিশিরের খোলা বুকে ধাক্কা দিল। কিন্তু সরাতে ব্যর্থ হলো। শিশির এবার কুয়াশার মুখে পূর্ণ দৃষ্টি দিল। কখনো এই মেয়েটাকে চোখ দিয়ে তাকিয়েও দেখতে ইচ্ছে হতো না। আর এখন না চাইতেও দেখল। উজ্জ্বল ফর্সা মুখটা গোলগাল বেশ। উচু্ঁ টিকালো নাকে সুতো দেয়ার জন্য মুখের চেঞ্জ এসেছে। মিষ্টি লাগছে বেশ সুতোতেই। আচ্ছা নাকফুল পড়লে কেমন লাগবে একে? মেয়েদের তো নাকফুলে বউ বউ লাগে একেও লাগবে? কেন জানি নাকফুলে কুয়াশাকে দেখার ইচ্ছে জাগল। এবার হাঠাৎ কুয়াশার ঠোঁটের উপর দৃষ্টি চলে গেল। মসৃণ, পাতলা আঁকানো ঠোঁট জোড়া মনে হলো কমলার কোয়া। ঠোঁটের রঙটাও তেমনই। ঠোঁটের দুই কোণার দু’পাশে সুক্ষ্ম ডিম্পল বসে মেয়েটার। কথা বলতে গেলে এমনকি হাসলেও আসে। ভাবতেই শরীর অবাস হলো তার। বিদ্যুৎের সঞ্চার হলো। ডুবে যাবার দিন কী তার এলো তবে!!
” গোবর ঠাঁসা, মানতে শিখে নে তোর স্বামী একটু না অনেকটাই সুদর্শন ”
শিশির কথাটা বলেই উঠে সরে এলো।কথাটার সুর কেমন জানি ছিল যেটা কুয়াশার ভেতরে নাড়া দিল।৷ কুয়াশা নিজেকে সামলে মুখ ঝামটাল। শিশির নিঃশব্দে হাসল।
এরপর পাতলা একটা সাদা টিশার্ট পড়ে নিল। পড়ে বিছানার কাছে এসে ফাস্ট এইড বক্স বের করে একটা পেইন ক্লিলার নিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে কুয়াশার সামনে ধরল। বলল,
” দুপুরে খেয়েছিলি? ”
” হু ”
” এটা খেয়ে নে। ব্যথা আসবে না। ”
কুয়াশা অবাক চোখে চেয়ে রইল। দায়িত্ব পালন করা শুরু করেছে কী!! করেছে বোধহয়। এই তো এটাই তো দায়িত্ব পালন তার। বউয়ের ভালোমন্দ খেয়াল রাখছে। ও’কে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারা করল আবার। কথা না বলে হাতে তুলে নিয়ে খেল। তারপর নিজেও কী মনে করে যেন আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি খেয়েছিলে দুপুরে? ”
শিশির শুনে ঘুরে কেমন করে যেন তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। অপ্রস্তত হলো কুয়াশা। উত্তরে শিশির বলল,
” হু, রেস্টুরেন্টে গেছিলাম৷ ট্রিট নিয়েছে ফ্রেন্ডরা ”
” কেন? ”
ভ্রু কুঁচকে তৎক্ষনাৎ আবার প্রশ্ন করল সে। প্রশ্নটা কেমন বউদের বউদারির মতো করল না? তেমনই তো লাগল। কথাটা মাথায় আপনাআপনি চলে এলো শিশিরের। উত্তর করল,
” বিয়ের কথা রিজভী গিয়ে ঢোল পিটিয়েছে৷ সেইজন্য সব ধরেছিল। “
কুয়াশা কোনো কথা বলল না৷ শুয়ে রইল৷ শিশির আর কথা বলল না। কুয়াশাকে শুয়ে থাকতে দেখে সে চুলে চিরুনী করে বলল,
” শুয়ে থাক। বাইরে যাচ্ছি আমি ”
বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেড়িয়ে গেল। শিশির যেতেই দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলল সে। সবকিছু কেমন পাল্টে যাচ্ছে। এলোমেলো লাগছে। ব্যবহার-আচার, কথা-বার্তা নতুন নতুন লাগছে। এভাবেই ঠিক হোক সব তবে৷ ভেবে চোখ বুজল সে।
_______
রাতে খাবার খেয়ে কুয়াশা নিজের ঘরে এসে পড়তে বসেছে। রাত বেশ অনেকটাই হয়েছে পড়তে পড়তে। এগারটা বেজে পাড় হয়ে গেছে৷ আরো কিছুক্ষণ পড়ল। একটানা পড়ে মন উঠে গেছে। তাই বই রেখে ফোন হাতে নিল৷ দেখল অয়ন আজ দুইদিন যাবত কল মেসেজ করে ভরে ফেলেছে। নাম্বার কোথা থেকে পেল কে জানে! বিরক্ত নিয়ে আবার ফোন রেখে দিল।
ঘুম এসে গেল৷ তাই উঠে চলে গেল শুতে। গিয়ে দেখল শিশির কী সব করছে যেন৷ অনেক পেপার’স আউলিয়ে নিয়েছে সাথে নোটও করছে৷ তাই সেদিকে নজর না দিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল৷ কিছুক্ষণের মাঝে ঘুম ধরা দিল চোখের পাতায়। শিশির একবার সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। তারও আর পড়তে ইচ্ছে করল না৷ সে-ও বই রেখে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল৷ আস্তে করে বলল,
” ঘুমিয়ে গেছিস? ”
উত্তর এলো না কোনো। বুঝল গোবর ঠাঁসা ঘুমে কাঁদা। আবারও দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। এর থেকে নিঠুর, নিষ্ঠুরতম যন্ত্রণা আর দু’টো হয়? উহু, হয় না। এটা যে কী বড় যন্ত্রণা সেটা এই মূহুর্তে হারে হারে টের পাচ্ছে। পাশে বউ নামক আস্ত একটা মেয়ে শুয়ে আছে অথচ সে নিস্তব্ধতার রাত পাড় করছে। বিষাদময় দীর্ঘশ্বাসের রাত পাড় করছে। এ জ্বালার শেষ কবে? আর কতরাত এমন পাড় করবে!! ভেবে ভালোবাসা নামক শব্দটার উপর খুবই রাগ উঠল সাথে আফসোসের নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে আবার ছেড়ে দিল। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল।
ভালোবাসা আসুক খুব জলদিই আসুক। পাশে থাকা মেয়েটা’কে সে ভালোবাসতে শিখুক।
_________
সকালে উঠে খাবার টেবিলে সকলে বসে খাচ্ছে। কুয়াশা কলেজে যাবে তাই সে-ও খেতে বসেছে। এমন সময়ে জাকির মালিথা বললেন,
” আজ থেকে আর সিএনজি করে যেতে হবে না। শিশিরের বাইকে যেয়ো ”
কথাটা যে কুয়াশাকে বলল সকলে বুঝল।
থেমে শিশিরের উদ্দেশ্য করে বললেন,
” তোমার সম্ভব হলে কুহেলিকে নিয়ে ফিরবে। “
শুনে তড়াক দু’জন দু’জনের দিকে তাকাল। আজ পাশাপাশি বসেছে কিন্তু প্লেট আলাদায় আছে। দু’জন দু’জনকে দেখে নিয়ে আবার খাওয়াতে মন দিল। এটাও মেনে চলতে হবে।
‘
খাওয়া হয়ে গেলে শিশির বলে গেল,
” অপেক্ষা করছি আমি বাইরে ”
কুয়াশা শুনে প্রত্যুত্তর করল না। খেয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে গেল। সকলেই দেখল সব। তারাও দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ভাবল সকলে মেনে নিয়ে মানিয়ে চলুক এভাবেই।
‘
সরকারি কলেজের মেইন গেইট দিয়ে বাইক সমেত ভেতরে ঢুকে গেল। মেইন গেইট ছেড়ে কুয়াশার ক্লাসে যেতে প্রথম গেইটের সামনে বাইক থামাল শিশির৷ অনেকে তাকিয়ে দেখল। যারা কুয়াশার ক্লাসের কুয়াশাকে চিনে তারা হা হয়ে গেল। তাকিয়েও রইল হা করে। কুয়াশাকে কখনো এভাবে বাইকে আসতে দেখেনি কোনো ছেলের৷ হয়তো সকলের মনে প্রশ্ন জাগল,
“ছেলেটা কে?”
স্মৃতিকে কুয়াশা মেসেজ করে দিয়েছিল। তাই সে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাথে ঈশা। ওরা আসতেই মুচকি হাসল স্মৃতিরা৷ কুয়াশা নেমে এগিয়ে যেতে নিলে শিশির বলল,
” কল করবি ক্লাস শেষে। এসে নিয়ে যাব ”
কুয়াশা ঘুরে তাকাল। কেমন যেন সেই নজরটা। শিশিরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” আসছি ”
কুয়াশা কিছু বলল না। শিশির চলে গেল। শিশির যেতেই সেখানে ওদের দুইটা ক্লাসমেট এলো। জিজ্ঞেস করল,
” ছেলেটা কে রে কুয়াশা? কখনো তো তোর সাথে দেখেনি? “
উত্তর স্মৃতি, ঈশা করল,
” ওর হাসবেন্ড, শিশির মালিথা ”
শুনে হা হয়ে গেল মেয়ে দু’টো। আশ্চর্য হয়ে বলে উঠল,
” তোর বিয়ে হয়ে গেছে কুয়াশা! ”
ঈশা বলল,
” হ্যাঁ শুক্রবারে “
সেই সময়ে রনি আর ওর বন্ধু প্রবেশ করল গেইট দিয়ে৷ সামনেই কুয়াশাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল। সে এতদিন ঢাকায় ছিল। তার খালাতো বোনের বিয়ে এটেন্ড করতে গেছিল ঈদের পরপরই। এসে সকলকে জিজ্ঞেস করল কেমন আছে সকলে উত্তর করল। রনি এবার কুয়াশার দিকে তাকাল। বলল,
” কেমন আছিস কুশু? ”
” আলহামদুলিল্লাহ, তুই ”
” আলহামদুলিল্লাহ ”
” তোর নাকে এমন সুতো কেন? ”
” ফুটিয়েছে দেখছিস না? ”
স্মৃতির জবাব। রনি বলল,
” তোকে জিজ্ঞেস করেছি আমি?”
স্মৃতি বিরক্ত হলো। কুয়াশা এবার একটা শ্বাস ফেলল দীর্ঘ। উত্তর করল রনির,
” আমার পিছু নেয়া ছেড়ে দে দোস্ত। আ’ম মেরিড নাউ। ওয়াইফ অফ শিশির মালিথা। আমি এখন শিশির মালিথার বউ।”
রনির কথাটা কানে ঢুকলেও মাথায় ঢুকল না যেন। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে নরমালি বলল,
” কি?? “
” যা শুনলি তাই। আমি বিবাহিত। বিয়ে হয়েছে আমার পরশু। ”
রনির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল ভাবটা এমন মনে হলো। বুকের মাঝে টনটন করে উঠল। শরীর ভারী হয়ে এলো। ছলছল করে উঠল চোখজোড়া তৎক্ষনাৎ। সবই তাকিয়ে দেখল কুয়াশারা। আবারও দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো। কিছুই করার নেই। সব নিয়তি। কুয়াশা আবার বলল,
” দেখ দোস্ত, তোর অনুভূতি ছিল একপাক্ষিক। আমার তরফ থেকে কিছুই ছিল না। আমি তোকে অনেক মানা করেছি। আমাদের কখনো কিছু হবে না। এসব বলছি বলে ভাবিস না আমার রিলেশন ছিল বা রিলেশন করে বিয়ে করেছি৷ সম্পূর্ণ পরিবার থেকে হয়েছে আর সেটাও আমার কাজিনের সাথে। এই কয়েকদিনের মাঝে অনেককিছু ঘটে গেছে। স্মৃতির থেকে শুনে নিস সব৷ আমার উপর আর অনুভূতি আনিস না প্লিজ। দুনিয়া উল্টে গেলেও সত্যি এটাই আমি অন্যকারো বউ। শিশির মালিথা আমার হাসবেন্ড। শুধু বলব নিজেকে সামলে নিস। আমার উপর অভিযোগ রাখিস না। ”
বলে চলে যাচ্ছিল কুয়াশা। রনির চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে৷ চোখে যে পানি তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে সবাই-ই। রনি ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলল,
” কোথাও তুই আমাকে ইগনোর করার জন্য এসব বানিয়ে বলছিস না তো? ”
” উহু, একদম না। ঐ মহাশূন্যে যেমন চন্দ্র, সূর্য চিরন্তন সত্য তেমনি এই ধরণীতে শিশির, কুয়াশার বিয়েও চিরন্তন সত্য। “
বলে আর কিছুই কাউকে বলার সুযোগ দিল না। বড় বড় পা ফেলে চলে গেল ক্লাসের উদ্দেশ্যে। রেখে গেল পাথর চাপা সমান একজনের বুক ভাঙা কষ্ট। অন্তর জ্বালানো দেহ। অন্তরের জ্বালা যে বড় জ্বালা! সেটায় এখন টের পাচ্ছে রনি। এমনটা তো হবারই ছিল৷ সে তো মরিচিকার পেছনে ছুটতো। যার কোনো ভিত্তি ছিল না৷ পুরোটা ভিত্তিহীন, একপাক্ষিক সম্পর্কের পেছনে দৌড়াত সে৷ এখন এই ভাঙা হৃদয় নিয়ে থাকতে হবে।
________
দুপুর দু’টোর দিকে শিশির এলো কুয়াশাকে নিতে। ক্লাস শেষে কুয়াশা কল করেছিল। স্মৃতিরা সব দাঁড়িয়ে ছিল ওর সাথে। শিশির আসতেই ওদের থেকে বিদায় নিয়ে বাইকে উঠে বসল৷ সেসময়ে রনি এলো সামনে। কুয়াশা কিছুটা ভড়কে গেল। তৎক্ষনাৎ শিশিরের কাঁধ খামচে শক্ত করে ধরল। এ আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলবে না তো? সারা ক্লাস তো চুপই ছিল! রনি এসে সালাম দিল শিশিরকে। শিশির সালাম নিতেই জিজ্ঞেস করল কেমন আছে। সেসব কথা বলার পর রনি বলল,
” কংগ্রেস ভাইয়া। নতুন দাম্পত্যজীবনে সুখী হোন আপনারা দু’জন। ”
শিশির ভ্রু কুঁচকে তাকাল। এরপর কুয়াশার দিকে নজর দিল বাইকের মিরর থেকে। শিশির নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” ধন্যবাদ ”
উত্তরে মলিন হাসল রনি। ব্যথাতুর হৃদয় মনে হলো। শিশির কি বুঝল কিছু? হয়তো বুঝল। এরপর বিদায় নিয়ে চলে এলো। বাইক চালাতে চালাতে জিজ্ঞেস করল,
” ছেলেটা তোকে পছন্দ করতো? ”
” হ্যাঁ, কিন্তু আমার পছন্দ ছিল না। সেম ইয়ার পছন্দ ছিল না আমার তাই কখনো পাত্তা দিই নি ”
মুচকি হাসল কথাটা শুনে৷ টিপ্পনী কেটে বলল,
” সেই জন্য সরাসরি দিলটাই ভেঙে দিয়েছিস বিয়ের কথা বলে! ”
কুয়াশা ভড়কে গেল। সত্যি যে স্বীকার করেছে সে। কুয়াশাও কম না। সে বলল,
” হ্যাঁ, আর নিজে যে ক্যাম্পাসে গিয়ে বন্ধুদের গিলিয়ে এসেছে! ”
শিশির আবার হাসল নিঃশব্দে। প্রশান্তির শ্বাস এলো কেন জানি৷ এই ঝগড়ুটে গোবর ঠাঁসার মাথায় যে ঝগড়া ছাড়া অন্য বুদ্ধিও আছে সেটা ভেবে আনন্দ লাগল৷ মানতে পারলে জীবন এতটাও খারাপ হবে না বোধহয়!! রঙ পাল্টালেও পাল্টাতে পারে।
| চলবে |
জলদিই সব হবে। গল্পটা জলদিই শেষ করার চিন্তাভাবনা। টেনে বড় করার কোনো ইচ্ছে নেই।
বিঃদ্র | আজকে অনেক ঝামেলার মধ্যে লিখেছি অনেকটা এলোমেলো পর্ব এবং ছোট মানিয়ে নিয়ো একটু। আগামীকাল গল্প আসতেও পারে নাও পারে। বাসায় থাকব না কাল৷ দিতে না পারলে জানিয়ে দেব।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click