®রোজা রহমান
‘
বিকেলের দিকে। আজ গুমোট গরম পড়ছে। রোদের জোর নেই তবুও সারাদিন প্রচন্ড গরম পড়ছে। গাছের পাতা গুলো স্থিরভাবে পড়ে আছে। এই গরমে কুয়াশারা তিন জা মিলে বসার ঘরে বসে গল্প করছে আর আগের মতো করে কিছু মুখরোচক খাবার নিয়ে বসেছে। গল্পতে বেশি শোভা পাচ্ছে কুয়াশা আর শিশিরের বিবাহিত জীবন। কুয়াশা খুবই অস্বস্তিতে পড়েছে। প্রশ্নগুলো ভাবিরা গভীরে গিয়ে করছে সে না পাড়ছে উঠে যে আর না পারছে উত্তর করতে। অনেক করে মানা করেও লাভ হয়নি৷ তারা পণ করেছে আজ লজ্জা দিয়ে দিয়ে তাকে মে-রে ফেলবে। কুয়াশা বারকয়েক উঠে যেতে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি আবারও সেই টেনে হিঁচড়ে বসিয়ে দিয়েছে বৃষ্টি আর ইয়াসমিন।
শিশির কুয়াশাকে রেখে আবার চলে গেছিল। বাসা থেকে খুব বেশি দূর না তাই এমন সমস্যাও হবে না। ওদের গল্পের মাঝে শিশির এলো। এসে তিনজনকে গল্প করতে দেখে চলে গেল। গরমে তার জীবন শেষ। আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবে তারপর কথা৷
শিশিরকে এসেই উপরে হনহনিয়ে চলে যেতে দেখল তিনজন। ইয়াসমিন টিপ্পনী কেটে বলল,
” কুশু তোর বর এসেছে। যাহ্ বেচারা গরমে হট হয়ে আছে কুল করে দিয়ে আয়”
বৃষ্টি শুনে হা হা করে জোরে হেসে দিয়েছে। হাসিটা জোরে হয়ে গেছে। তাই পরক্ষনেই সামলে নিল। শাশুড়ীরা শুনলে কি ভাববে? তারা এখন রেস্ট করছে যার যার ঘরে। কুয়াশা কথাটা শুনে লজ্জায় মরি মরি হয়ে উঠল। আজকাল কি লজ্জাও তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরার পণ করেছে নাকি! নাকি ভাবিরা অসংযত কথাবার্তা একটু বেশিই বলা শুরু করেছে? কুয়াশা রাগার মতো করে বলল,
” বুবু..! ”
আবার হেসে দিল দু’জন। বৃষ্টি বলল,
” আচ্ছা ছাড়ো এবার এসব। এখন একটা কথা বলো তো কুশু! “
” হু? “
” দু’জন দু’জনকে মানার চেষ্টা করছ তো? নাকি আগের মতোই চলো? “
কুয়াশা শুনে একটু চুপ রইল। এরপর বলল,
” চেষ্টা করছি ভাবি। তোমাদের দেবরও করছে ”
দু’জনে শুনে মিষ্টি হাসল। কুয়াশার মাথায় হাত রেখে বৃষ্টি বলল,
” যখন এসেছি তোমাকে একা পেয়েছি। এতগুলো ভাইদের একটা মাত্র বোন তুমি। এসে দেখলামও অনেক আদরের। চাচু নাকি অনেক আগেই মারা গেছিলেন। তোমার ভাই ছোট থেকে পুরো গল্প আমার কাছে করেছিল বিয়ের পরে৷ আগে অবশ্য তোমার কথা বলতো কিন্তু সংসারের পুরো গল্প কখনো করতো না। শুধু সকল সদস্য কে কেমন সেটা বলতো। আর সব গল্পের প্রায় গল্পই তোমাকে নিয়ে করতো। তার বোন এমন, তার বোন ওমন, এমন করে, তেমন করে নানান কথা। তুষার তোমাকে চোখে হারায়। অনেক ভালোবাসে। আর বিয়ের পর এসে দেখলাম এই বাড়ির প্রতিটা সদস্যকে তোমাকে চোখে হারাতে। তুহিন ভাই, নীহার দেবরজী সকলেই ভালোবাসে অনেক। তুষার আমাকে বিয়ের রাতে বলেছিল বাবা ম-রা মেয়েটার সাথে নিজের বোনের মতো আচরণ করতে। আমিও মেনেছিলাম কারণ আমার মা মা-রা যাবার পর বোন টোন পাইনি৷ তোমাকে পেয়ে বেশ খুশি হলাম৷ তুমি মেয়েটাও অমায়িক৷ অহংকারের লেশ মাত্র নেই৷ এমন মেয়েকে ভালো না বেসে থাকা যায়? আদরের সকলের।
কুয়াশা এবার কিছু কথা বলি! এ বাড়ির প্রতিটা সদস্য তোমার ভালো চায়, ভালোবাসে বলে শিশিরের সাথে বিয়ে দিয়েছে। তোমাদের বনিবনা নেই জানা সত্বেও। এটার কারণ হয়তো বড়রা ভালো বুঝেছে৷ শিশির সত্যি ভালো ছেলে। এতদিন এসেছি কখনো খারাপ কিছু পাইনি৷ এমন পার্সোনালিটির ছেলেকে স্বামীরূপে পাওয়া বড়ই ভাগ্যের বিষয় গো। এ বাড়ির প্রতিটা ছেলেই অনেক আদর্শবান৷ দায়-দায়িত্ব খুব সুন্দরভাবে পালন করে। শিশিরও করবে সবার বিশ্বাস। মেনে নিতে থাকো দেখবা জীবনের রঙ পাল্টাবে। মেয়েদের স্বামীর ভালোবাসা অতি ভাগ্যর বিষয়। আমাদের সকলের বিশ্বাস শিশির তোমাকে যখন ভালোবেসে ফেলবে তখন চোখে হারাবে দেখে নিয়ো৷ মন দিয়ে ভালোবাসবে৷ তোমাকে চোখে হারাবে। ওর পার্সোনালিটিটায় এমন। সময় নিয়ে সব ঠিক করে নাও সোনা৷ আমাদের সকলের দোয়া তোমাদের সাথে খুব জলদিই ঠিক হয়ে যাবে সব। ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হবে তোমাদের সংসার। সেই ভালোবাসার পরিপূর্ণ সংসার দেখার জন্য আমরা অধির আগ্রহে আছি৷ আনাচে-কানাচে ভালোবাসায় ভরে যাবে৷ সোনা মেয়েদের স্বামীর সংসারই মূল ধর্ম। এটাকেই চিরন্তন সত্য এবং কোহিনূর ভেবে লালন-পালন করতে হয়।
বলে থামল বৃষ্টি। কুয়াশা সব শুনল, বুঝল। প্রত্যুত্তর করল না। সে-ও তো চেষ্টা করছে৷ এছাড়া উপায় নেই৷ এই দুইদিনে শিশিরের ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন পেয়েছে৷ মেনে নিয়ে জীবন সাজাতে পারলে ততটাও খারাপ হবে না বোধহয়!!
ভাবনার মাঝে শিশির নেমে এলো। গোসল করে। ভেজা চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। ছেলেটা সত্যি অমায়িক সুদর্শন। এতদিন তেমনভাবে দেখাই হয়নি। ভাবতেই বুকের মাঝে কেমন যেন ঢিপঢিপ করতে শুরু করল। শিরশির করে উঠল শরীর মানুষটাকে দেখে৷ এই ছেলেটা এখন তার স্বামী? জীবনসঙ্গী? মুখটা লাজুক হয়ে উঠল৷
শিশির এসে ওদের সাথে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর নীহার এলো। এসে ওদের বসতে দেখে বলে গেল ফ্রেশ হয়ে আসছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদের সাথেই কাটাবে। শিশির শুনে আর বাহিরে যাবার প্ল্যান করল না।
” শিশির..! “
ইয়াসমিনের ডাকে তাকাল সে। উত্তর নিল,
” হু ভাবি..! ”
শিশির আগে থেকেই ইয়াসমিনকে ভাবি বলে ডাকত৷ ইয়াসমিন বলল,
” কোথাও ঘুরতে গেলেও তো পারিস৷ মনটাও ভালো হয়৷ তাছাড়া একসাথে সময় কাটালে নতুন ভাবে জানাশোনা হয় ”
শিশির কথাটা বোঝার চেষ্টা করল প্রথমে। এরপর বুঝে কুয়াশার দিকে তাকাল৷ কুয়াশাও তাকাল। বলল,
” সময় করে যাব। এখন ইচ্ছে নেই। ”
শুনে এ নিয়ে আর কথা বাড়াল না। প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল। এরই মাঝে ইয়াসমিনের ফোন বেজে উঠল। দেখল অয়ন ফোন দিয়েছে। সে রিসিভ করল৷ ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে ভালোমন্দ কথা বলল। এরপর হঠাৎ অয়ন কুয়াশার সাথে একটু কথা বলিয়ে দিতে বলল। ইয়াসমিন তৎক্ষনাৎ কুয়াশা আর শিশিরের দিকে তাকাল৷ ইয়াসমিন তেমন কিছু জানে না অয়নের বিষয়ে। আবার অয়নও এখনো শুনে নি কুয়াশার বিয়ে হয়েছে। তবুও স্বামীর সামনে অন্য পুরুষের সাথে কথা বলতে দিতে সে নারাজ। অনেক কিছু বললেও অয়ন খুব করে হাতে, পায়ে ধরে রিকুয়েষ্ট করল। একসময় ইয়াসমিন কুয়াশাকে বলে উঠল,
” কুশু, তোর সাথে অয়ন কী যেন কথা বলবে৷ বলল খুবই ইম্পরট্যান্ট। শুনে দেখ তো কী বলে ”
তৎক্ষনাৎ কুয়াশা সামনে থাকা শিশিরের দিকে তাকাল। শিশিরও ভ্রু কুঁচকে তাকাল। রাগ উঠল একটু একটু করে। ঐ হা করা এখনো পিছু ছাড়ে নি? আবার কতবড় সাহস ফোন করে তার বউয়ের সাথে কথা বলতে চায়? মেজাজ আপনাআপনি চড়ে গেল ঐ ফেবিকলের উপর৷ চিপকানো স্বভাব দূরে গিয়েও যায় নি তাহলে? সে তড়াক উঠে ইয়াসমিনের থেকে ফোন কেঁড়ে নিল কুয়াশা নেবার আগেই। নিয়ে মেজাজ তুলে বলল,
” হ্যালো..! ”
ওপাশ থেকে অবাকের কন্ঠ পাওয়া গেল,
“কে? “
বলতেই উত্তর দিল শিশির,
” শিশির মালিথা। হাসব্যান্ড অফ কুয়াশা মালিথা৷ আমার বউয়ের সাথে কিসের কথা তোমার? এতটা ইম্পরট্যান্ট যে অন্যের ফোনে কল করে আমার বউয়ের সাথে কথা বলা লাগবে তোমার..! ”
উপস্থিত সকলে হা হয়ে গেল। কুয়াশা নিজেও হা হয়ে আছে। আসলে সবটা চোখের পলকে হয়ে গেল। শিশিরও চোখের পলকে ফোন কেঁড়ে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলল৷ সেসময়ে উপর থেকে জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা এলেন। উনারাও কথাগুলো শুনলেন। নীহারও শুনল। সব অদ্ভুত নজরে চেয়ে আছে। যেন শিশির আস্ত একটা এলিয়েন। শিশিরের সেসব দিকে খেয়াল নেই। সে এখন রেগে। রাগ স্পষ্ট মুখে প্রকাশ পাচ্ছে। ওপাশ থেকে কিছু বলতে যাবে সেসময়ে শিশির কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল।
আবারও ইয়াসমিনের হাতে ফোন দিয়ে তাকাল রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে কুয়াশার দিকে। কুয়াশা ভয় পেল সেই তাকানো দেখে। সকলে শুধু হতভম্ব হয়ে দেখেই যাচ্ছে কোনো কথা আর বলতে পারছে না স্বামী স্ত্রীর মাঝে। কুয়াশা শিশিরের রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে পুরোটা অধিকারের সাথে বউ বলা শুনে অথব্য। শিশির ইয়াসমিনের হাতে ফোন দিয়ে কুয়াশার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে কুয়াশার চোয়াল শক্ত হাতে চেপে ধরল। বলল,
” এখনো ওর সাথে কথা বলিস? ভালোমতো জানিস ওর ফিলিংস কিরকম তোর প্রতি! তারপরেও কেন কথা বলবি তুই? ফারদার কথা বলা দেখলে এখানেই মে–রে পুঁ|তে রাখব। ”
শক্ত হাতে ধরায় অনেক ব্যথা পেল কুয়াশা। শিশির এখন রাগে একটা জ’ন্তুতে পরিণত হয়েছে। তার মাথায় নেই যে সে পরিবারের সামনে আর কথা বলার জন্য ইয়াসমিনের ফোনে ফোন দিয়েছে। কুয়াশা যদি কথা বলতোই তবে ইয়াসমিনের ফোনে কল দিয়ে কথা বলতে চেতো না৷ কিংবা সেদিনের কুয়াশার বলা যে সে অয়নকে পছন্দ করে না৷ এই বোধগুলো সে হারিয়ে ফেলেছে। তার মাথায় এখন শুধু ঘুরছে অয়নের নজর কুয়াশার প্রতি। কেউ না দেখলে সে তো দেখেছে অয়নের নজর কেমন ছিল কুয়াশার প্রতি!! সেসবই মনে উঠে মেজাজ চড়ে গেছে। আগে যদিও এসবে মাথা ঘামায়নি। কারণ কুয়াশার কী করে বেড়ালো না বেড়ালো তার দেখার ছিল না। কিন্তু এখন সে তার অধিকার। তিন কবুল বলা বউ। অন্য পর-পুরুষ তার বউয়ের সাথে কথা বলতে চাইবে এটাই তার শরীরে রাগে কাটা দিচ্ছে।
শিশির কুয়াশাকে কথাগুলো বলে চোয়াল ছেড়ে দিয়ে চলেই যাচ্ছিল। কিন্তু তৎক্ষনাৎ আবার ফোন বেজে উঠল অয়নের। মূলত সে এতবড় কথাটা হজম করতে পারেনি। তাই আবার কল করেছে। ইয়াসমিন বিরক্ত হলো। এ ছেলে তবে কুয়াশাকে পছন্দ করত? কল রিসিভ করে রাগ নিয়ে বলল,
” শুনলি না শিশির কী বলল?”
তৎক্ষনাৎ কুয়াশা ইয়াসমিনের থেকে ফোন কেঁড়ে নিল। শিশিরের দিকে সে-ও রক্তবর্ণ চোখে চেয়ে রাগ নিয়ে বলল,
” আপনার ফোন ধরি না, মেসেজের রিপ্লাই করিনা সেটা দেখেন না, বুঝেন না? নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে এর মানে? আপনাকে পছন্দ আমি আগে থেকেই করতাম না, বুঝেন নি? তবুও অন্যের কাছে কেন কল করতে হবে আপনার? একটু আগে আমার হাসব্যান্ড কথা বলল তবুও বুঝেন নি আমি বিবাহিত? ফারদার কল করবেন না আমাকে। ”
বলে ফোন দ্বিগুন রাগে কেটে ইয়াসমিনের হাতে ধরিয়ে দিল। দিয়ে শিশিরকে বাজপাখির ন্যায় নজরে দেখে হনহন করে ধাপধুপ করে পা ফেলে উপরে চলে গেল। সকলে মুখটা হা করে ফেলেছে। কিছুক্ষণ আগে থেকে এই মূহুর্ত পর্যন্ত কী হলো! কারোরি বোধগম্য হলো না। কিসের ভেতর কি? কিছুই বুঝল না। কিন্তু ওদিকে বেচারা অয়ন সকলের রাগের শিকার হলো। ডিটারজেন্ট ছাড়া দু’জনই ধুয়ে দিল। নীহার একবার কুয়াশাকে দেখল তো একবার শিশিরকে। শুধু নীহার না সকলেই একই ভাবে দেখল৷ এরা কী দিয়ে তৈরি?
শিশির এবার নিজের ভুল বুঝতে পারল৷ রাগ পড়ে গেল তৎক্ষনাৎ। এবার নিজেরই নিজেকে বকতে ইচ্ছে করছে৷ এই আচানক রাগ কেন যে এত ওঠে!! তার তো এগুলো একটু মাথায় আসার দরকার ছিল। ভেবে কপাল চাপড়াল। এখন ঘরে গেলে টর্নেড বইয়ে যাবে নিজের উপর দিয়ে সেটা সে ভালোভাবেই বুঝছে। কিন্তু কিছু করার নেই তবুও যেতে হবে। বউ তার রাগ করেছে হাজার ঘুর্ণিঝড় এলেও রাগ ভাঙাতে হবে। নিজেকে প্রস্তত করে সে-ও উপরের পথ ধরল। সেসময়ে নীহার বলে উঠল,
” এ ভাই ব্যাপারটা কি বলত? কিছুই তো বুঝলাম না। অয়ন যে কুয়াশাকে পছন্দ করত তা বুঝলাম। কিন্তু এসব কি? ”
” কিছুই না। যেটুকু বুঝেছিস সেটুকু বুঝেই আপাতত বসে থাক। আমি যাই আপাতত বউয়ের রাগ ভাঙিয়ে আসি। ঘুর্ণিঝড় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। না জানি, কী কী নামে এসে হানা দেয় শরীরের উপর। “
বলে উপরে হাঁটা ধরল। আর সকলে? হতবাক, হতবুদ্ধি, হতভম্ব হয়ে বিস্ময় নজরে চেয়ে রইল। এরা দু’টোর মধ্যে কী চলে!!! প্রশ্নটা সকলের মনে এসে হানা দিল। এরপর একে-অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসল। সব ঠিক হবার দিন আসছে তবে।
________
নিজের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল তার বউ নেই তার ঘরে। রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে থুক্কু বাপের ঘরে চলে গেছে। কথাটা ভেবে মুচকি হাসল সে। তাই উপাই না পেয়ে শ্বশুর বাড়ি হাঁটা ধরল। এই না ভুল হলো শ্বশুর ঘরে হাঁটা ধরল। গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখল বসে রাগে ফুঁসছেন তিনি। করাটা স্বাভাবিক। তার রাগ কাল হবে সে বুঝেছিল অনেক আগেই। কথাটা দিন দিন ফলে যাচ্ছে। নিরব পায়ে ভিতরে ঢুকল। কুয়াশা ঠিক পেল। তাকাল না। শিশির দুরুদুরু বুকে পাশে গিয়ে বসল। নিজেকে প্রস্তত করেই রেখেছে। কখন হামলে পড়বে। এবং তাই-ই হলো। বলতে না বলতেই হামলে পড়ল।
কুয়াশা রাগে শিশিরের চুল ধরে টেনে দিতে দিতে বলল,
” এ্যাই..! বুনো ওলের বাচ্চা তোকে বলি নি না জেনে কখনো দোষারোপ করবি না বল? সেদিন তোকে আমি বলেছিলাম না আমি ঐ ফেবিকলটাকে পছন্দ করি না? বল বলেছিলাম না? আর তোর এতটুকু জ্ঞান এলো না যে আমি কথা বললে লোকের ফোনে কল দিত না? বল বোধে আসে নি? শুধু মা-রতে পারিস আমাকে। মজা লাগে না খুব? আজ তোকে সেই মজা দেখিয়ে ছাড়ছি আমি।”
বিছানার উপর উঠে দুই হাঁটু মুড়িয়ে বসে চুল টেনে ধরে শিশিরের মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কথাগুলো বলে তৎক্ষনাৎ আবার বালিশ তুলে পি-টাতে লাগল। শিশির এতক্ষণ মাথা ছাড়াতে চাইলেও এখন আবার অন্য আক্রমন পেল। তাই কুয়াশা থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
” আরেহ্ থাম গোবর ঠাঁসা, আমার রাগের মাথায় খেয়াল ছিল না। ঐ হা করাটার কথা শুনে রাগ উঠে গেছিল। ওর স্বভাব কেমন ছিল তুই দেখিস নি? এখনো ওমন স্বভাব রয়ে গেছে। তাই রাগ উঠে গেছে। আরেহ্ বাবা থাম, লাগছে তো। কুশু, ”
বলে মা-র ঠেকাচ্ছে সে। কুয়াশা একের পর এক মে-রেই চলেছে বালিশ দিয়ে। শিশির থামতেই কুয়াশা বলল,
” তা কেন থাকবে? পারিস তো শুধু ছুতো খুঁজতে আমাকে মা-রার জন্য। তোর আমাকে মা-রতে পারলেই শান্তি। কোনোদিন ভালোবেসেছিস যে মা-রতে আসিস আমাকে? বুনো ওল তুই একটা। তোকে এমনি কারণে সহ্য করি না আমি? ছোট থেকে তোর হেয়ো দেখে আসছি আমি। কখনো ভালো করে দুইটা কথাও বলিস নি। সকলে ভালোবাসে আমাকে। আর তুই আমাকে মা-রের উপর রাখিস।”
কথাগুলো মা-রতে মা-রতে বলল। শিশির পুরো কথা শুনল। সে এবার অতি কৌশলে কুয়াশার কোমড় পেঁচিয়ে ধরল দু’হাতে। ধরে সে চিৎ হয়ে শুয়ে কুয়াশাকে সহ শরীরের উপর শুইয়ে নিল। কুয়াশা এখন শিশিরের পুরো শরীরের উপর শুয়ে৷ কুয়াশার খেয়াল নেই। সে আবার বালিশ তুলে মা-রতে গেলে সেটাও কেঁড়ে নিয়ে ছুঁড়ে দিল অন্যদিকে। একহাতে কুয়াশার কোমড় ধরে অন্যহাতে কুয়াশার চুলগুলো কানে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
” শান্ত হ “
তৎক্ষনাৎ থেমে গেল কুয়াশা। কন্ঠটা অতি নরম ছিল এবং আদুরে ছিল৷ শান্ত হয়ে কুয়াশা শিশিরের চোখের দিকে তাকাল৷ এ চোখে এখন কোনো ঘৃণা নেই। আছে শুধু নমনীয়তা৷ শিশির আবার বলল,
” তুই চাস আমি তোকে ভালোবাসি? না মে-রে আদর করি? “
কুয়াশা শিশিরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। অতি কাছ থেকে শিশিরের মুখটা দেখছে সে। আর এখন বুঝল সে কোথায় আছে। পুরোটা শিশিরের উপর। ভেবে লজ্জা পেল অনেক৷ লজ্জারা এসে ভীর জমাল৷ মুখ লাল আভায় পূর্ণ হলো৷ শিশির আবার প্রশ্ন করল,
” কী হলো.. বল? ”
” হু ”
কুয়াশার ছোট্টো লাজুক উত্তর৷ উত্তর করে সে শিশিরের বুকে কপাল ঠেকিয়ে দিল। তার দুই হাত শিশিরে বুক বরাবর গলার কাছে৷ উত্তর শুনে মুচকি হাসল শিশির। কুয়াশাকে আরেকটু টেনে নিল উপরে নিজের শরীরের উপর থেকে ছেঁচড়িয়ে দুই বাহু ধরে৷ কুয়াশার মুখ এবার শিশিরের মুখের সমান সমান৷ দু’জনের নিঃশ্বাস একে ওপরের মুখে পড়ছে। গভীর দৃষ্টি দু’জনের। এদের এভাবে যে কেউ দেখলে ভাববে, বেস্ট রোমান্টিক কাপল অ্যান্ড বেস্ট লাভবার্ড’স। শিশির এবার চুল গুঁজে দেয়া হাতটা কুয়াশা কপোলের বরাবর দিয়ে চুলের মধ্যে গলিয়ে দিল। আদুরে, শিরশিরানো, হৃদয় জ্বালানো স্পর্শ পেয়ে কুয়াশা চোখ বন্ধ করল আবেশে। এরপর আবার খুলেও ফেলল। শিশির অতি নেশাময় কন্ঠে বলল,
” তোকে আগে কখনো এভাবে এমন চোখে দেখি নি। তুই অনেক মায়বী, ঘায়েল করা সুন্দরী। ”
কেঁপে উঠল কুয়াশা। ভেতরের সব জমে যেতে লাগল। স্বামীর থেকে পাওয়া আবেগঘণ প্রশংসা বুকে তীরের ন্যায় বিঁধল। কুয়াশা কোনো কথা বলল না। সে আবার বলল,
” জানিস তো একবারে সব কিছু সম্ভব হয় না! ”
কুয়াশা তাকিয়েই রইল৷ সে আবার বলল,
” তোকে আমার সহ্য করতে না পাড়ার কারণ বুঝি না আমি। কিন্তু শুধু বুঝি ছোট বেলার অভ্যাস রয়ে গেছে৷ আমি মাথা পেতে নিলাম তোর অভিযোগ। হ্যাঁ ছোটবেলা থেকে তোকে কখনো কাছে টানিনি আমি। হয়তো সেই জন্যই তুই আমার উপর ক্ষুদ্ধ। নমনীয়তা দেখালে হয়তো এমন হতো না। আম্মু সেদিন ঠিকই বলেছিল৷ তোর রাগ, জেদ, অবাধ্যতা, উগ্রস্বভাব, অভদ্রতা সমষ্টি জিনিস শুধু আর শুধু মাত্র আমার কাছে আঁটকা পড়ে আছে। এমনিতে কারো সাথে এমন করিস না। আর এখন দেখ তুই পুরোটাই আমার কাছে আঁটকা পড়েছিস। ভাগ্যে বোধহয় তোকে লিখেছিলেন উপরওয়ালা। তাইতো এত অপত্যা থাকা সত্বেও জুড়ে গেলি আমার সাথে৷ তুই আমার ভবিতব্য। আমি সেটাই মানার চেষ্টা করছি। “
কুয়াশা বিমূঢ় চোখে চেয়ে রইল। শিশির এবার কুয়াশার গাল বরাবর রাখা হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে কুয়াশার গালের উপর স্লাইড করতে লাগল৷ স্লাইড করতে করতে বলল,
” ভালোবাসার চেষ্টা করছি। সময় কবে কথা বলে দেখি। ততদিন অপেক্ষা করতে পারবি না? ”
কুয়াশা ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ হচ্ছে। বসার ঘরে বৃষ্টির বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল৷ এটাও মনে পড়ল ছেলেটার ব্যক্তিত্বের কথা বলেছিল৷ সেটাই এখন মেলাবার চেষ্টা করল। আর মিলেও গেল৷ হ্যাঁ মিলে গেল বৃষ্টির কথার সাথে৷ শিশিরকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কুয়াশা বলল,
” হু পারব। অপেক্ষা করব স্বামীর ভালোবাসার। তুমি আমার নিয়তিতে ছিলে মানতে শিখেছি। “
বলে থামল। এরপর কী মনে করে যেন শিশির বুকে আলতোভাবে মাথা রাখল৷ ডান মুখো মুখ করে মাথা ঠেকিয়েছে। শিশির এখন আর মুখ দেখতে পারছে না কুয়াশার। তাই শূন্যে তাকাল। তার একহাত এখনো কুয়াশার কোমড়ে। কুয়াশা আবার বলল,
“বাবা নেই, চাচুরা ভালোবেসে তাদেরই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছেন৷ নিশ্চয়ই উপযুক্ত মনে করেছেন বলেই দিয়েছেন৷ সেটাই মানার চেষ্টা করব৷”
শিশির শুনলো সবটা৷ শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তুলল৷ কুয়াশাকে আরেকটু গভীরভাবে ধরল। এই মেয়েটাই তার নিয়তি৷ ভালোবাসলে একেই বাসতে হবে৷ পাল্টে ফেলতে হবে অভ্যাস। তবে জ্বালানো ছাড়া যাবে না। সেটা আমরণ সঙ্গী হবে। ভেবে আরেকটু হাসল৷ ফিসফিস করে বললও সেটা,
” ভালোবাসলেও কিন্তু মা-রা বন্ধ হবে না! ওটা চলবেই৷ মা-রার পর আদরও আমিই দেব। সেই অধিকারও আমার ”
আবার কেঁপে উঠল কুয়াশা৷ লজ্জা পেয়ে মুখ গুঁজে রাখল বুকে। প্রত্যুত্তর করল না।
অকপটে দু’জন দু’জনের মনের কথা বলে দিল। এখন শুধু মানার অপেক্ষা। যেদিন মনে হবে ভালোবাসা এসে হাতছানি দিয়েছে, সেদিনই মিলবে বুনো ওল বাঘা তেঁতুল। ততদিন চলতে থাকুক ওদের অভ্যাসগত চুলোচুলি। এখন শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।
| চলবে |
দেখলে তো তারা কিন্তু মেনে নিয়েছে নিয়তি। এখন শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা
এরা যেমন ঝগড়া, চুলোচুলিতে ফার্স্ট তেমনই রোমান্টিক কাপলেও পরিণত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। সকলে শিশির কুয়াশাকে যাতে মনে রাখতে পারো
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click