®রোজা রহমান
‘
মালিথা ভিলায় এমন সোরগোল পেয়ে তুষার সহ শিশির, নীহার, তুহিন,হিমেল ছুটে গেল। জাকির ও জাহিদ মালিথা অধির আগ্রহে মুখিয়ে রইলেন ঘটনা জানার জন্য। আগেই উনারা গেলেন না৷ তুষার, তুহিন বলে গেল তারা দেখছে বিষয়টা৷
রান্নাঘরের সামনে পাঁচভাই গিয়ে দেখল বৃষ্টিকে নিয়ে সকলের উত্তেজনা। তুষার দেখে তৎক্ষনাৎ ছুটে গেল। তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে আম্মু? ও এমন বমি করছে কেন? ”
তৎক্ষনাৎ কেউ উত্তর করতে পারল না। বাড়ির তিন গিন্নি বিষয়টা জহুরী নজরে দেখার চেষ্টা করছেন। বৃষ্টি বমি ছেড়ে এখন নেতিয়ে পড়ল৷ তৎক্ষনাৎ তুষার পেছনে গিয়ে ধরল দুই বাহু চেপে। এতক্ষণ কুয়াশা, ইয়াসমিন, আম্বিয়া ধরে রেখেছিল। তুষার ধরতেই ওরা ছেড়ে দিল। শিশির জাকিয়াকে জিজ্ঞেস করল,
” আম্মু সকালের খাবার তো সকলে খেয়েছি তেমন অসুবিধা তো হচ্ছে না। ভাবির কি হলো? গ্যাসট্রিকের সমস্যা হলো নাকি? ”
জাকিয়া বৃষ্টির দিকে তাকাল৷ গ্যাসট্রিক হলে ফ্রিজ খোলার পর এমন হবে না। তিনি যেটা ভাবছেন সেটা কি তবে? এদিকে তুষারের এবার কিছু একটা মনে পড়ল৷ তৎক্ষনাৎ বৃষ্টির মুখের দিকে নজর দিল। সে এতটায় নেতিয়ে পড়েছে যে কোনো উত্তর করতে পারছে না। তুষারের মনে পড়ল রাতে বৃষ্টি প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট আনতে বলেছিল। এখন বমি হচ্ছে বিষয়টা পরিষ্কার হচ্ছে। সে শিক্ষিত ছেলে হয়ে যে এই সামান্য জিনিস বুঝবে না সেটা অহেতুকী হবে। তুষার এবার মায়ের মুখের দিকে তাকাল। তিন জা বৃষ্টির দিকে একবার তাকাল একবার তুষারের দিকে তাকাল। এরপর একে-অপরের দিকে তাকাল।
শিশির, কুয়াশা, নীহার হা করে শুধু এদের ভাবভঙ্গি দেখছে। ওদিকে তুহিন, ইয়াসমিনও বিষয়টা বুঝে গেছে৷ নীহার বলল,
” আরেহ্ তোমরা এভাবে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছো কেন? বেশি সমস্যা হলে ডক্টরের কাছে নিতে হবে তো ভাবিকে! “
কুয়াশা এদের জহুরী নজরে দেখে চলেছে। বিষয়টা কি সে বুঝতে পারছে? নাকি বোঝার চেষ্টা করছে? শিশিরের দিকে তাকাল। তখন শিশিরও তাকাল। এবার তিন গিন্নি একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে একসাথে বলে উঠলেন,
” আমরা দাদী হতে চলেছি বৃষ্টি? ”
বৃষ্টি অসুস্থ শরীরেও চোখ খুলে তাকিয়ে দেখল শাশুড়ীদের। লজ্জা এসে গ্রাস করল। কিন্তু এটা লজ্জার না, সব থেকে আনন্দের অনুভূতি। কীরকম শিহরণ হচ্ছে! বুকের মাঝে উতালপাতাল আনন্দ হচ্ছে। কাল সকাল থেকে বমি হচ্ছিল। তুষার ছিল না। পিরিয়ডও মিস গেছে। এসব থেকে রাতে তুষারকে টেস্ট কিট আনতে বলেছিল। একবারে শিউর হয়ে জানাবে ভেবেছে। এখনো অবশ্য শিউর হতে পারছে না। তবুও নব্বই শতাংশ শিউর। এখন শুধু টেস্ট করা বাকি।
মায়েদের কথায় শিশির, কুয়াশা, নীহার,হিম আবারও হা করে তাকাল৷ ইয়াসমিন মুচকি হেসে বলল,
” বোধহয় কাকিমনি হতে চলেছি। ঠিক না ভাবি? ”
বৃষ্টি উত্তর করল না। তুষার মুচকি হাসল। জাকিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” আম্মু ঘরে নিয়ে যাব ও’কে? “
জাকিয়া ছেলের পানে তাকালেন। স্পষ্ট আনন্দ ছেলের মুখে। কেমন সুখের হাসি৷ এই অনুভূতির সাথে যে তিনি এই বড় মানিকটার আসার সময় পেয়েছিলেন। এখন উনার সেই বড় মানিক সে-আনন্দ পাচ্ছে। ভাবা যায়!! জাকিয়া ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
” আমার বড় মানিক অভিনন্দন। দুনিয়ায় সব আনন্দ, সুখ তোদের হোক “
তুষার শব্দহীন হাসল দাঁত বের করে৷ আনন্দে এখন উড়তে ইচ্ছে করছে তার। দুই হাতে বৃষ্টির দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরল। বৃষ্টি তুষারের উত্তেজনা টের পেল। তাকাল মুখের দিকে নির্জিব চোখে। একজন স্ট্রোং পারসোনালিটির পুলিশ অফিসারের এই মুহূর্তে বাবা হবার আনন্দ কতটা গ্রাস করেছে! তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কেমন সুখ সুখ লাগছে। এতটা সুখ লাগে এই অনুভূতিগুলোই!! শিশির, নীহার, কুয়াশা, হিম এবার চেঁচিয়ে উঠল,
” সত্যি..!! “
শিশির, নীহার, হিম একসাথে বলে উঠল,
” সিরিয়াসলি আমরা চাচু হব? ”
কুয়াশাও এবার চেঁচিয়ে বলে উঠল,
” সত্যি আমি ফুপু হচ্ছি বড় আম্মু? ”
তা শুনে শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। সকলেই এবার দৃষ্টি কুয়াশার পানে দিল৷ শিশির চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে কুয়াশার কথাটা ভাবল, সে যদি চাচু হয় তবে এই গোবর ঠাঁসা ফুপু কিকরে হয়? মাথার উপর চাটি মে-রে বলল,
” এ্যাই… গোবর ঠাঁসা! ফুপু হবি কেন তুই?”
কুয়াশাকে মা-রার জন্য সে রেগে গেল। মাথা ডলতে ডলতে রাগ তুলে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
” তো কি হব? তুষার ভাইয়া আমার ভাইয়া না? তবে ফুপু কেন হব না? আজব!!”
বাড়ির সকলে মনে মনে মাথা চাপড়াল। শুরু হয়ে গেছে এদের নিয়ম মাফিক যু-দ্ধ।
” আমি যদি চাচু হয় তো তুই ফুপু কেন হবি? নামটা সার্থক। সাধে তো আর বলি না গোবর ঠাঁসা! “
কুয়াশার এবার মনে পড়ল। সে আনন্দের চোটে এখনকার সম্পর্ক ভুলেই বসেছিল৷ তবে একটু বিরক্ত হলো এমন সম্পর্ক বদলের জন্য। কোথায় সে ফুপু ডাক শুনবে। একটা মাত্র ফুপু হবে এতগুলো ভাইয়ের ছানাপোনাদের৷ কিন্তু হায় আফসোস! সেটাও গো-ল্লায় গেল৷ তবুও সে নারাজ মানতে। সে ফুপুই হবে। তার সাধের ডাক সে শুনবে না? এটা হতেই পারে না। সে জোর গলায় বলল,
” ধুরর… রাখো তো তোমার চাচি টাচি। চাচি টাচি হতে পারব না আমি। আমি তো ফুপুই হব৷ ইভেন সব ছানাপোনাদের ফুপু হব। হায় আমার সাধের ডাক৷ সব ছানাপোনারা কিলবিল করেতে করতে এসে ফুপু ফুপু বলে ডাকবে ইশশ..! কী সুন্দর ডাক! আর আইছে চাচি বানাতে! আমি তো ফুপু ডাকই শুনব৷ ”
এবার হিম তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
” এই বুবু..! শিশির ভাইয়ের ছানাপোনারও ফুপু হবা নাকি তুমি? ”
ল্যাও ঠেলা, মো’র জ্বালা। কী কথার কী মানে হয়ে গেল? উফফ…!
সকলে এই কথা শুনে জোরে জোরে হেসে দিয়েছে। বৃষ্টিও অসুস্থতার মাঝে হাসছে। আর শিশির কুয়াশা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে রইল। কুয়াশা নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেছে৷ শিশির এবার রাগ নিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে তাকাল কুয়াশার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ওর ফুপু হবার শখ জেগেছে। ও’কে ফুপু বলেই ডাকাব। শখ না মিটিয়ে ছাড়ব না৷”
কুয়াশা লজ্জা পেয়ে গেল। আর সকলে আরেক দফা হেসে উঠল৷ নীহার এবার সুযোগ পেয়ে টিপ্পনী কেটে বলল,
” এক কাজ কর, কুশুর যখন ফুপু হবার শখ, তো তুই-ই না হয় ফুপা হয়ে যা। দোষ কি তাতে? ”
আবারও হাসির রোল পড়ল। কী একটা জ্বালা। নতুন অতিথি না-ই আসতে এত হাসি, আনন্দ না জানি আসলে কী হবে! শিশির এবার ভড়কে গেল৷ আর কুয়াশা বিশ্বজয়ের হাসি দিল দাঁত কেলিয়ে৷ শিশিরের দিকে দাঁত বের করে চোড়া চোখে তাকিয়ে নীহারে কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
” এ্যাই ভাইয়া…! এটা তো মাথাতেই আসেনি আমার! আমি তো এবার ফুপু-ই হচ্ছি। ঐ বুনো ওল প্রয়োজনে ফুপা হোক না হলে নাই। “
শিশির চোখ গরম করে তাকাল৷ তাতে সব মিটমিট করে হাসছে। ভালোই লাগছে এদের খুঁনসুটিগুলো। নীহার বলল,
” তবে তোদের ছানাপোনাদের সময় আমি মামা হচ্ছি এটা কনফার্ম। কারণ একটা মাত্র বোন আমার। ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছি বলে কী মামা ডাক শুনব না? আমারও মামা ডাক শোনা লাগবে। তোরা কি হবি না হবি সেটা তোদের বিষয়। ”
কুয়াশা এবার লজ্জায় পারে না দৌড়ে চলে যাক। শিশির হতভম্ব হয়ে গেছে৷ এরা ভেবেছে কতদূর? তাদের এখনো ফার্স্টনাইট এলো না তো মামা হবে কি করে? বাসর হলে তো ভাগ্নে-ভাগ্নি আসবে? আজব সব ভাবনা৷ জীবন তার ত্যানা ত্যানা আর এরা আছে মামা হওয়া নিয়ে। ভেবে নীহারের দিকে রাগ নিয়ে কটমট করে তাকাল সে। তুহিন এখানে নিরব দর্শক। কারণ সে আগে থেকেই শান্তশিষ্ট আর এখন এরা এমন খাপছাড়া কথা বলে মজা করছে বড়ও মানছে না তাই সে আরোই চুপ আছে৷ ইয়াসমিনও একটু টিপ্পনী কেটে বলল,
” শিশির আমরা কি আরো একটা সদস্য পেতে যাচ্ছি? না তোরা তো তেমন করেই মিন করছিস ”
এবার জাকিয়া শব্দ করে হেসে দিলেন৷ বললেন,
” এদের ছানাপোনার মুখে দাদা-দাদু ডাক শোনার আশা আর করছি না আমরা। এরা আগে নিজেরাই বড় হয়ে নিক। “
শুনে শিশির বেজায় লজ্জা পেল কেন যেন। আর কুয়াশা এবার একদৌড়ে ঘরে। তাকে আর পাই কে? এখানে আর থাকা যাবে না। এদের ভাবনা চিন্তা বহুদূর। অথচ তারা এদের ভাবনা পর্যন্ত-ই যেতে পারেনি। শিশিরও আর দাঁড়াল না৷ বেড়িয়ে এলো। ওরা দু’জন বেড়িয়ে আসতেই হাসল সকলে। তুষার বলল,
” ওরা মানতে শিখেছে আম্মু। সময়মতো স্বীকারও করবে। চাপ দিয়ো না “
” হু “
বলে থেমে আবার বললেন,
” আব্বু যা বৃষ্টিকে ঘরে নিয়ে যা। কাল সকালে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবি “
তুষার সম্মতি দিয়ে বৃষ্টিকে ধরে বেড়িয়ে এলো। ওরা বেড়িয়ে যেতে সকলে প্রশান্তির হাসলেন। এমন সুখময় পরিবারই যেন চিরন্তন থাকে৷ কোনো বদ নজর যেন না লাগতে পারে। আল্লাহ যেন সব সময় পরিবারের সহায় থাকেন৷ আজ এই আনন্দ অনেক বড় আনন্দের। বাড়িতে ছোট সদস্য আসতে চলেছে চারটেখানি কথা? সকলে প্রথম কোনো ডাক, অনুভূতির সাথে পরিচয় হবে। জাকিয়া তৎক্ষনাৎ বেড়িয়ে গেলেন। কর্তাকে খবর না দিলে আনন্দ বাড়বে না৷ ইয়াসমিন, তুহিন বেড়িয়ে গেছে তখন৷
নীহার গিয়ে শশীকে আগে জানাবে। মেয়েটা জানলে নেচে উঠবে। কতশত পাগলামীর কথা বলবে। সেগুলো সে আনন্দে শুনবে আর মিটিমিটি হাসবে। কখনো আবার অট্টহাসিও দেবে। মেয়েটার সাথে কথা বলতে গেলে কখন যেন দুই-তিন ঘন্টা হয়ে যায় টেরই পাই না। এতটা আপন হয়ে যাবে এত অল্প সময়ে কখনো বুঝেনি। তার ইঁচড়েপাকাটা সে বলতে পাগল। তার ইঁচড়েপাকা শুধু পাকনা পাকনা কথা বলে। এই বয়সে এতটা না পাকলেও পারত। অনুভূতি আরো বাড়িয়ে দেয়। কবে যে নিজের করে নিজের কাছে আনতে পারবে!!
ভাবতে ভাবতে ঘরে গিয়ে শশীর কাছে কল দিল। শশী আজ শুক্রবার হওয়াতে ফ্রি ছিল। তৎক্ষনাৎ ওপাশ থেকে মায়াবী, মোহময়, নেশাময় চিকন সুরেলা কন্ঠে সালাম দিয়ে উঠল৷ নীহারের ঠোঁটে হাসি ফুটল। মেয়েটার কন্ঠ শোনা মাত্রই হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে। নীহার সালাম বিনিময় করে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করল৷ এরপর কাঙ্ক্ষিত কথাটা জানিয়ে দিল। এই নিয়ে বহু কথা চলল তাদের মাঝে।
‘
কুয়াশা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে এসেছে। সে নিজের ঘরেই বেশি থাকে। এখনো কোনো জিনিস শিশিরের ঘরে নেই নি। শিশির ঘরে এসে দেখল কুয়াশা নেই। চূড়ান্ত বিরক্ত হলো। একে কখনো এখানে পাওয়া যায় না৷ বেড়িয়ে কুয়াশার ঘরের সামনে গেল। দেখল এসে ঢাঁস করে শুয়েছে৷ রাগ নিয়ে বলল,
” এ্যাই… গোবর ঠাঁসা, ঘরে আয়! তোর এখানে কিরে সবসময়? ”
কুয়াশা তা শুনে উঠে বসল। উত্তর করল,
” তো তোমার কি? আমার ঘরে আমি থাকি। এখানেই আমার সব ”
শিশির রাগল আরেকটু। কিড়মিড় করে বলল,
” আসবি তুই? ”
কুয়াশা দেখল রেগে গেছে। তাই কথা বাড়াল না। উঠে শিশিরের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেল। শিশির ওর আসা দেখে দরজার মুখ থেকে চলে গেল নিজের ঘরে।
কুয়াশা গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে? “
শিশির এবার কুয়াশাকে খপ করে ধরল। হাত ধরে কাছে টেনে নিল। কুয়াশা ভয় পেয়ে গেল৷ এটাকে তখন খেপিয়েছে৷ না জানি কী করে এখন! শিশির বলল,
” তা, তোর খুব শখ না ফুপু ডাক শোনার?”
” হ্যাঁ, তো এতে দোষের কি আছে? “
” নাহ্ দোষের কিছু নেই৷ তোহ্ আমার ছেলে-মেয়ের ফুপু ডাক শুনবি না আম্মু ডাক শুনবি? ”
কুয়াশার ভেতরে সব ঝঙ্কার তুলল। শিরশির করে শরীরের লোমগুলো কাঁটার ন্যায় খাড়া হলো৷ শিশিরের চোখে কেমন ভাব। দুষ্টুভাব তো আছেই সাথে৷ কুয়াশা ঢোক গিলল। এখন কী উত্তর দেবে ভাবছে। উল্টা পাল্টা উত্তর দিলে নির্ঘাত মা-ইর।
” কী হলো বল? “
” তুমি মামা হতে পারলে আমিও ফুপু হতে পারব ”
শিশির কথাটা শুনে ভড়কে গেল। হতভম্ব হয়ে গেল। বিস্ময় নিয়ে তাকাল৷ এ কি জবাব? সে কী জিজ্ঞেস করল আর এই গোবর ঠাঁসা কী জবাব দিল? তারই ছেলে-মেয়ের সে কিনা হবে মামা? মানে যা তা? কী সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার! এটা শুনতেই তো কেমন লাগছে। ডাকলে কেমন হবে? ছিঃহ্ ছিঃহ্ নিজের ছানাপোনাদের মামা সে কখনো হবে না। হলে বাবাই হবে। নয়তো কী একটা বিশ্রী ব্যাপার স্যাপার হবে! মামা মামা বলে ডাকবে ফিলিংস বউয়ের দুঃসম্পর্কের ভাই। এ হতে দেয়া যাবে না। না মানে না, কখনো না! সে বাবা ডাক-ই শুনবে, ইট’স কনফার্ম।
এদিকে কুয়াশা কথাটা বলে সেই আনন্দ পেয়েছে। তাকে যদি ফুপু ডাকাতে পারে সে কেন মামা ডাকাতে পারবে না? এটা একটা লজিক্যাল কথা৷ সম্পূর্ণ যুক্তি আছে৷ লয়ার হবে দু’দিন পর যুক্তি দিয়ে কথা না বললে কিকরে হবে? হাসি হাসি মুখে দুষ্টুমি করে আবার বলল,
” কিহ্ হবে তো মামা? দেখো মামা ডাকের ফিলিংস কিন্তু সেই হবে৷ “
মজা লাগছে খুব উল্টো জবাব দিতে পেরে। আবার বলল,
” তবে একটা মজার বিষয় হবে, ছানাপোনারা তোমাকে মামা ডাকবে আমাকে ফুপু বিষয়টা কত ইউনিক নাহ্? আমরাই পৃথিবীর বেস্ট মাতা-পিতা হব যারা কিনা ছেলে-মেয়েকে মামা, ফুপু ডাক ডাকাবে।”
বলে ঠোঁট টিপে হাসছে সে। শিশির বিস্ময় কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মানে এই গোবর ঠাঁসা কি সত্যি ডাকাবে? এর দাঁড়ায় সম্ভব হবে। বলা যায় না ছানাপোনা হবার পর প্রথম ডাক তাকে মামা-ই ডাকল? ভেবে নিজেকে সামলে নিল। কুয়াশাকে এবার একটু শিক্ষা দেয়া যাক। টেনে একদম মিশিয়ে নিল। বলল,
” তাই নাহ্?”
কুয়াশা শক্ত, বলিষ্ঠ হাতের চাপে মনে হচ্ছে গুঁড়িয়ে যাবে৷ আজ বোধহয় হাড়গোড় ভেঙ্গেই বিছানাগত করে ছাড়বে এই বুনো ওল। ভালো মতো চেতিয়েছে বুনো ওলটাকে। সে এবার নিজেকে বাঁচাতে অস্বাভাবিক একটা কাজ করে বসল।
শিশির ও’কে দু’হাতে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে রেখেছে আর ও নিজের ডান হাতটা তুলে শিশিরের ঘাড়ের পেছনে দিয়ে চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে মাথার পেছনের ছোট ছোট চুলগুলো শক্তকরে মুঠে চেপে ধরল। শিশির তৎক্ষনাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে বল প্রয়োগ করে শিশিরের মাথাটা ঝুঁকিয়ে নিল নিজের সামনে। কারণ তার পা উঁচু করার মতো কায়দা নেয়। শিশিরকে ছোঁয়া পেতে হলে ঝুঁকাতে হবে। আর সেটাই করল। শিশিরের মাথা ঝুঁকিয়ে সাথে সাথে ডান গালে কামড় বসিয়ে দিল। বোধহয় জোরেই দিল। তার কোমড় ভাঙার প্ল্যান করেছে আর সে কি আস্তে কামড় দেবে? কখনো না৷ কামড় দেবার সাথে সাথে শিশির হতভম্ব হয়ে গেল। কুয়াশা কামড় দিয়ে যখন মুখ তুলে নিল তখন শিশির কুয়াশার কোমড় ছেড়ে নিজের কামড় দেয়া গালে হাত দিয়ে,
” ইশশশ….! “
বলে উঠল। ডলতে লাগল৷ চেঁতে উঠে বলল,
” গোবর ঠাঁসার বাচ্চা! ”
এটা বলার পরপরই কুয়াশা আবার আরেক কান্ড করল। শিশিরের বুকের লোম টেনে দিল। টিশার্টের উপর থেকেই। দিয়ে দিল ভোঁদৌড়। কিন্তু বেচারা বেশিদূর যেতে পারল না। শিশির এত অত্যাচার মেনে নেবে? সে কুয়াশা দৌড়ে চলে যাওয়া দেখে খপ করে হাত ধরতে গিয়ে ভুলবশত কুয়াশার ওড়না টেনে ধরে ফেলেছে। আর কুয়াশাও দৌড়ে চলে যাবার ফলে ওড়না একদম বুক থেকে খুলেই গেছে। এখন সেটা শিশিরের হাতে। কুয়াশা দরজার সামনে চলে গেছে।
দু’জনেই হতভম্ব হয়ে গেল। মানে বিষয়টা একদম অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটে গেল। উদ্দেশ্য ছিল এক হয়ে গেল আরেক। কুয়াশা তো থেমেছে তখনি যখনি শরীর থেকে ওড়না ছুটে গেছে। আর শিশির হাত না পেয়ে ওড়না পেয়ে বিষয়টাতে বাকরূদ্ধ হয়ে গেছে। খুবই খারাপ একটা পরিস্থিতি হলো। যদিও স্বামীস্ত্রী তবুও দু’জনেরই কেমন যেন বাজে ফিল আসছে। দু’জনে একসাথে থাকুক, জড়িয়ে ধরুক কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতিতে ফিল অন্যরকম হচ্ছে৷ এছাড়া শরীরে ওড়না বাদে কুয়াশার লজ্জায় সেখানেই ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। সে এখনো শিশিরের দিকে ঘুরেনি। শিশিরের সামনে ওড়না বাদে থাকতে আর পারছে না। ভেতরে তোলপাড় হচ্ছে।
এদিকে শিশির পরিস্থিতিটাকে কিভাবে নেবে সেটা ভাবছে৷ নিজেকে সামলে নিল। জড়িয়ে ধরে শুতে পারলে ওড়না বাদে দেখতে কি সমস্যা। বউ সে তার৷ নিজেরা সময় নিয়েছে তাই বলে, এসব নিয়ে ন্যাকামো করার কি আছে? নিজেকে বুঝ দিয়ে কুয়াশার কাছে এগিয়ে গেল। কুয়াশা আরো লজ্জায় মরি মরি হয়ে গেল। দুরুদুরু করছে বুক। কুয়াশার একদম কাছে পেছনে গিয়ে লো ভয়েজে শিশির দুষ্টুমি করে ঠোঁট কামড়ে বলল,
” যাহ্ এবার.. “
কুয়াশার লজ্জা আরো বাড়ল। মাথা নিচু করে আছে। সে আবার বলল,
” দাঁড়িয়ে থাকলি কেন? ছুট। হাওয়া শেষ? ”
কুয়াশা এবার না পেরে নিজের লজ্জা নিবাররের জন্য ঘুরে শিশিরকেই জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,
” প্লিজ..! “
আর এদিকে শিশির তো চমকে উঠেছে। নিজে থেকে এমন আবেদনময়ী হয়ে জড়িয়ে ধরেছে কখনো কুয়াশা? মনে করার চেষ্টা করল। কিন্তু মনে পড়ছে না। এ মেয়ে তাকে এভাবেই ডুবিয়ে দেবে। তবে এ জড়িয়ে ধরল কিজন্য? লজ্জায়? নাকি ভয়ে? শিশির বিষয়টা ধরতে সক্ষম হলো না। সে কুয়াশাকে বুকে নিয়েই সামনে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা খোলা ছিল। শিশির এবার কুয়াশাকে বলল,
” বি নরমাল… বউ তুই আমার। আমি কোনো পরপুরুষ না। “
কুয়াশার কাঁপন একটু থামল তা শুনে। সত্যি তো! শিশির চাইলে তারউপর সম্পূর্ণ অধিকার ফলাতে পারে। শিশির এবার টিপ্পনী কেটে বলল,
” আমার ভয়ে আমার বুকেই এসে লুকালি? বাহ্ ভালো উন্নতি হয়েছে তো তোর! “
থেমে আবার বলল,
” তা এখন কী করব তোর সেটা বল? আমাকে কামড় দিলি, বুকের লোম টানলি এগুলো কিভাবে ফিরাব তাই বল। তোর বলা অনুযায়ী শাস্তি হবে। কিন্তু মাফ আমি করছি না। শাস্তি পেতেই হবে৷ তুই আমাকে মে-রে চলে যাবি আমি সেটা কোনো কালে হতে দিয়েছি? তবে এখন কেন দেব? অত সস্তা আমি না। বল জলদি বল.. ”
কুয়াশা হতভম্ব হয়ে গেল। কতবড় বে-য়াদব? বুনো ওল একটা। মনে মনে আচ্ছামতো বকে নিল। এরপর মাথা তুলে জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কী আর করবা? বেঁধে যে ফেলেছ আমায়! যাবার পথ নেই। দাও কামড় দাও। কামড় ফিরিয়ে দাও”
এই বলে সত্যি সত্যি শিশিরের দিকে গাল বাড়িয়ে দিল। শিশির হাসবে নাকি কিছু বলবে বুঝছে না। কুয়াশা কথাটা একদম বাচ্চাদের মতো করে বলল। সে কুয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ। নাহ্ এই মেয়ে বউ হিসেবে ততটাও খারাপ না৷ মানতে শিখেছে সবকিছু। তা ক্ষণে ক্ষণে কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায় বুঝিয়ে দেয়৷ মেয়েটা তার মনের ঘরেও ঢুকে গেছে৷ আগে শুধু ঝগড়ুটে ভাবত তেমনটা নয়৷ এতদিনে বোঝা হয়ে গেছে এর সাথে সংসার ভালোই সুখময় হবে৷ আজকাল ততটাও বিবাগী হয় না৷
ভাবতে ভাবতে তুলল কুয়াশাকে বুক থেকে। তুলে সোজা করে দাঁড় করাল। কুয়াশা আবার লজ্জায় উনিয়ে গেল। দেখল তা মন দিয়ে। এ মেয়ে যে এতটা লজ্জাবতী আগে কখনো টের পায়নি। শিশির এবার হাতের ওড়না পরিয়ে দিল নিজেই। কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েজে বলল,
” ওড়না আমি নিজেই খুলব নিজেই পরাব। সেই দিন খুব জলদি আসছে৷ রেডি হ ঝগড়ুটে গোবর ঠাঁসা “
কুয়াশার শরীর, অন্তর অবস হয়ে এলো। সামনে থাকা তার স্বামীর কথা শুনে। এ কী ভয়ংকর অনুভূতি! আগে এমন কিছু তো কখনো হয়নি!!
| চলবে |
খুব জলদি সকলের অপেক্ষার অবসান হবে।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click