®রোজা রহমান
‘
তাল পাকা ভাদ্র মাস। কথায় আছে, ভাদ্র মাসের তাল পাকা গরম পড়ে। তাল পাকা ভাদ্র মাসের ভেঁপসা গরমে মানব জীবন অতিষ্ঠ৷
ভাদ্র মাস শেষের দিকে। সেদিনের পরে কেটে গেছে একটা মাস। এই এক মাসে অনেক কিছুই পাল্টেছে শিশির কুয়াশার বিবাহিত জীবনে। শিশির কুয়াশার মাঝে এখন অনেকটা ভালোবাসা এসে হাতছানি দিয়েছে। একে অপরের মাঝে সুন্দর একটা খুঁনসুটিময় বন্ডিং তৈরি হয়েছে। ভালোবাসা মুখে না বলেও কাজে প্রকাশ করে দেয় তারা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছে। গভীর কাছে আসাআসি অবশ্য এখনো হয়নি। কারন তেমন প্রস্তুতি এখনো মানসিক ভাবে দু’জনের একজনও প্রস্তুত হয়নি। হয়তো জড়তা কাজ করে দু’জনের। শারীরিক সম্পর্কের জন্য তাদের আগের সম্পর্ক কেন যেন মনে পড়ে যায়। জড়তা এসে ভিড় জমায়। এই জন্য কেউই ওদিকে আগাতে পারে না৷ মুখ ফুটে একে অপরের চাহিদার কথা বলতে পারে না। শিশিরের মাঝে যদিও কাজ করে কিন্তু নিজের ব্যস্ততার জন্য সেদিকে মানসিক প্রস্ততি নিতে পারে না। তার আর কিছুদিন পর নির্বাচনী পরীক্ষা। সেই নিয়ে সে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সব কিছু গুছিয়ে উঠলেও আবার ব্যস্ততা এসে হানা দেয়।
কুয়াশাও অধির আগ্রহে বসে আছে শিশিরের নিজে মুখে চাহিদা প্রকাশ করার দিনটিতে। জড়তা তারও কাজ করে। আগে কিরকম চলত আর এখন সম্পর্কের একটা গভীর নামের জন্য শারীরিকভাবে গভীরে কাছে যেতেও যথেষ্ট জড়তা কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খুব একটা দেরিও হয়নি যে এত তাড়াতাড়ি প্রয়োজন হবে। সে-সবও হবে৷ সময় হলে। আগে ভালোবাসাটা না হয় প্রকাশ করে নিক! গভীরে যাবার জন্য দিন আপনাআপনি চলে আসবে।
ভাদ্র মাস প্রায় শেষের দিকে। সেপ্টেম্বর মাসের আজ ছয় তারিখ। বুধ বার। সকাল আটটার সময় খাবার টেবিলে মালিথা ভিলার সদস্য গুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা নিয়ে আলোচনা করছে৷ সেই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা মূল টপিক হলো নীহার আর শশীর আঙটি বদল৷ মালিথা ভিলার সকলে আগামীকাল শশীদের বাড়িতে যাবেন। সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে। গোছগাছও চলছে। তারা বৃহস্পতিবারে যাবে শুক্রবার, শনিবার সেখানে থেকে রবিবারে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। তেমনটা জানিয়েছেন হানিফ সাহেব। মূলত তিনিই এভাবে আসার কথা বলেছেন। এতে করে ঘুরাঘুরি একটু আধটু হয়ে যাবে সকলের। শশীদের গ্রামে তেমনভাবে কারোরি যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
সকলেই চারদিনের ছুটি নেবে জব থেকে। জাহিদ মালিথা এখনো আসেন নি৷ তবে আজ চলে আসবেন বলেছেন। শিশিরের পরীক্ষার জন্য ডেট পাল্টাতে চেয়েছিল নীহার কিন্তু সে মানা করেছে। জানিয়েছে তার সমস্যা হবে না৷
সকালে খাবার খেয়ে সকলে চলে গেল। কুয়াশাও আজ কলেজে গেল৷ শিশিরের বাইকেই গেল। ওরা যেতেই আবার সকলে আগামীকালের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করল।
‘
দুপুর তিনটা। শিশির এলো মাত্র। এসে নিজের ঘরে মাত্রই শরীর থেকে শার্টটা খুলে বসেছে বিছানায় আর তৎক্ষনাৎ কুয়াশা ঝড়ের বেগে এসে শিশিরকে এলোপাতাড়ি মা-রা শুরু করে দিল। তার সেই বিখ্যাত মা-র চুল টেনে ধরে, কি-ল, ঘু-ষি, চ-ড় থা-প্পড়, খামচি সব। কোনো কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ গোবর ঠাঁসার কি হলো? এভাবে হামলে পড়ল কেন? এটা ভাবতে ভাবতে সে অনেকগুলো মা-র খেয়ে ফেলল। এবার জিজ্ঞেস করতে লাগল,
” আরে গোবর ঠাঁসা, করছিস কি? কি হয়েছে এভাবে মারছিস কেন? কি করলাম আমি? “
বলতে বলতে কুয়াশাকে দেখার চেষ্টা করল আর থামানোর চেষ্টা করল। দেখল কুয়াশার চোখ থেকে টপাটপ পানি পড়ছে। আশ্চর্য!! নিজেই মা-রছে আবার নিজেই কাঁদছে? ভাবতে ভাবতে কুয়াশা এবার বালিশ তুলে নিল। মা-রতে মা-রতে বলল,
” বুনো ওলের বাচ্চা! জানিস না তুই কেন মা-রছি? বাইরে মেয়ে নিয়ে ঘুরিস, অথচ আমাকে নিয়ে আসার তোর সময় হয় না? মেয়েরা তোর গায়ের উপর কেলাতে কেলাতে পরে তুইও সেসব কেলাতে কেলাতে গ্রহণ করিস? রাস্তার ভেতর এত কিসের কেলানো মেয়ে নিয়ে তোর? ফাজিল মেয়ে তোর গায়ে পড়ে পড়ে হাসে আর তুই কিছু বলিস না? এ্যাই তোর বউ নেই ঘরে? ওমন তো কখনো আমার সাথে হাসিস না? রাস্তায় রাস্তায় কেন তোর ফস্টিনস্টি করে বেড়াতে হবে? এই জন্য তুই আমাকে ভালোবাসিস না? আজ বুঝেছি আমি। তোর আমার জন্য কোনো সময় নেই কিন্তু ওসব গায়ে পড়া, ফাজিল মেয়েদের জন্য সময় ঠিকই আছে! বুনো ওল তুই একটা। “
বলে এবার জোরে কান্না শুরু করে দিল।
‘
আসলে বিষয়টা হয়েছে কী, আজকে শিশির কুয়াশাকে নিয়ে আসতে পারেনি। দু’টোর দিকে কল দিয়ে জানিয়েছিল একা একটু ম্যানেজ করে চলে যেতে। সে খুব ব্যস্ত। আর একটু স্টেশনের দিকে লাইব্রেরীতে যাবে কিছু বই কিনতে। কুয়াশা মেনে নিয়ে সেই সুযোগটা লুফে নিয়েছিল। সে শিশির না আসাতে অনেকদিন পর কলেজ থেকে গলি দিয়ে স্মৃতি, ঈশা আর রনি, রনির বন্ধু মিলে হেটে রেস্টুরেন্টে যাবার প্ল্যান করেছিল। রনির সাথে এখন পুরো বন্ধর মতো সম্পর্ক কুয়াশার। রনি নিজেকে সামলে শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে চেয়েছে। কুয়াশাও আর মানা করেনি একটা সুযোগ দেয়াই যায়!
যায়হোক, সেই হিসেবে তারা কিছুক্ষণ কলেজে আড্ডা দিয়ে এরপর হেঁটে রেস্টুরেন্টে যাবে বলে বেড়িয়ে পড়ে৷ হেঁটে স্টেশনের রোডে আসতেই শিশিরকে দেখতে পাই। সেখানে রিজভী সহ দুটো মেয়ে আর দুটো ছেলে ছিল। মূলত ওরা শিশিরে বন্ধু। খুব বেশি ক্লোজ না কিন্তু ক্লাসে ক্লোজ ভাবেই চলে। একসাথে সকলে মিলে আড্ডা দেয়া পড়াশুনো করা এগুলো চলে। তবে শিশির ঐ দুটো মেয়ে ফ্রেন্ড ছাড়া কারো সাথে বেশি মেশে না। ওরা অনেক মিশুক আর বিবাহিত। সেই জন্য আরো জোর পায় মিশতে। রিজভী ছাড়া এমনিতেও তেমন ফ্রেন্ড সার্কেল বানতে নারাজ সে।
তো সেই হিসেবে সকলেই একে একে ক্লাস শেষে স্টেশনের লাইব্রেরীতে যাবার প্রয়োজনের কথা জানায়। সকলের যখন যাবার আছে একসাথে গেলে কি সমস্যা? এই ভেবে সকলে হাঁটতে হাঁটতেই গেছিল। কিন্তু কুয়াশা রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে শিশিরকে দেখে বন্ধুদের সাথে। দূর থেকেই দেখে কিন্তু শিশির বন্ধুুদের সাথে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেনি। এটা আরো গা জ্বালিয়ে দিয়েছে কুয়াশার। একটা মেয়ে কিছু কথা নিয়ে হাসতে হাসতে শিশিরের বাহু জড়িয়ে ধরে ওর বাহুতে কপাল ঠেকিয়ে হাসিতে মত্ত হচ্ছিল সেই ভঙ্গিমা কুয়াশা দেখে। দেখেই ওর মাথা রক্ত চাপে। তাকে দিয়ে আসতে পারবে না বলে মেয়েদের বাহু ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা যে কোনো বউ দেখলেই তো ফা—য়ার হয়ে উঠবে!! তবে শিশির মেয়েটাকে অতি কৌশলে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরেছিল কিন্তু সেটা কুয়াশার চোখে পড়েনি। ওর তো শুধু চোখে পড়েছে অন্য একটা মেয়ে তার স্বামীর বাহুতে। মেজাজটা তখনি চড়েছে। স্মৃতিরাও দেখেছিল সব। স্মৃতিদের তৎক্ষনাৎ কিছু বলতে না দিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সিএনজি নিয়ে বাড়ি চলে আসে৷ এসে ধাপধুপ পা ফেলে ঐ যে ঘরে ঢুকে শিশির জন্য অপেক্ষা করছিল আর বেড় হয়নি। না খেয়েছে আর না গোসল করেছে৷ আসলে আজ বিহিত হবে। কতত বড় সাহস ঐ বুনো ওলের! বাড়িতে আস্ত একটা বউ আছে তার!
আসলে মেয়েরা এমনি। ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য নারীর সাথে কখনো সহ্য করতে পারে না৷ আর সে যদি হয় কুয়াশার মতো আহ্লাদী বউ।
‘
শিশির এবার বিষয়টা বুঝল৷ তার মানে গোবর ঠাঁসা এই জন্য ক্ষেপেছে? ভাবতে ভাবতে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। বালিশ দিয়ে আনলিমিটেড মে-রেই চলেছে কুয়াশা। শিশির এবার না পেরে উঠে কুয়াশাকে দুই হাতে কোমড় চেপে ধরে কোলের উপর নিয়ে বসে পড়ল। তৎক্ষনাৎ কুয়াশা কিছু বুঝে ওঠার আগে কুয়াশার গ্রিবাদেশে মুখ ডুবিয়ে কামড় বসিয়ে দিল৷ দাঁত বসিয়ে অনেকটা জোরেই৷ যেটা আজ অবধি করেনি শিশির সেটা আজ করল। কুয়াশা বিষয়টা যখন বুঝল তখন, শান্ত তো হয়েছেই আবার কেঁপেও উঠেছে। এদিকে ব্যথায় গুঙিয়ে উঠেছে৷ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে শিশিরের নগ্ন পিঠে নখ বসিয়ে চেপে ধরল৷
শিশির কামড়টা দিয়েছে কাঁধ ও গলার হাড়ের মাঝামাঝি। এই প্রথম এরকম ভাবে কুয়াশাকে ছুঁলো সে৷ এটা দ্বারা কি ভালোবাসার পরিমাণ বুঝিয়ে দিল? কুয়াশাকে এই কামড়ের মাঝে বুঝিয়ে দিতে চাইল, তার বুনো ওল শুধু তারই? নাকি কুয়াশার আক্রমন আঁটকাতে, শান্ত করতে? নাকি কুয়াশাকে তার মা-র দেয়াটা ফিরিয়ে দিতে কামড় দিল কোনটা? সঠিক কারণটা বোঝা গেল না৷ কুয়াশা চোখ মুখ খিঁচিয়ে পড়ে রইল। কিন্তু কিছু বলল না। নড়াচড়া করল না। শুধু ব্যথা সহ্য করতে শিশিরের পিঠে নখ দাবিয়ে রাখল। সে এই গভীর ছোঁয়াটা অনুভব করতে চাইল বোধহয়। কিছু পল পাড় হয়ে গেল তবুও ছাড়ল না শিশির। কুয়াশা এবার না পেরে অন্য হাত শিশিরের ঘাড় গলিয়ে পেছনের চুলের মধ্যে দিয়ে মুঠো পাঁকিয়ে চুল টেনে ধরল শক্ত করে৷
শিশির তা টের পেল৷ বুঝল সে ব্যথা পাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। আশ্চর্য হলো খুব। কতটা পরিবর্তন! ভাবা যায়!! শিশির এবার কামড়ের জায়গায় দাঁত বাদে দু’ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরল৷ অতিশয় গভীর সেই ঠোঁটের ছোঁয়া। কুয়াশা বুঝল তা। এবার তার শরীর অবাস হলো। শিহরণ হলো৷ জড়িয়ে আসতে চাইল। নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবে বুঝছে না৷ শিশিরের কোলের মাঝে নেতিয়ে পড়তে চাইল। এরকম ভাবে আজ প্রথম শিশির তাকে ছুঁয়েছে৷ সে এখন না পাড়ছে সায় দিতে আবার না পাড়ছে কিছু বলতে।
কিছুক্ষণ পর শিশির মুখ তুলল। কুয়াশা ওর কাঁধের উপর মাথা দিয়ে পড়ে আছে। তাকাল কুয়াশার মুখের দিকে। চোখ বন্ধ। শিশির ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসল। উচিত জবাব দিতে পেরেছে। সে এবার কুয়াশার এলোমেলো চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
” গোবর ঠাঁসা..! আর ইউ জেলাস? “
কুয়াশা চোখ খুলে তাকাল। অতিশয় কাছে শিশিরের মুখ৷ শিশিরের মুখ, ঠোঁট কিয়ৎক্ষণ অবলোকন করল। এরপর চোখের দিকে নজর রাখল৷ প্রগাঢ় সেই দৃষ্টি। শিশির তাকিয়ে রইল তার আহ্লাদী বউয়ের দিকে। কুয়াশার উত্তর,
” হুঁ, বহুত “
শিশির হাসল দুষ্টু চোখে মু্চকি মুচকি৷ বলল,
” ভাবা যায়? বাঘা তেঁতুল নামে কুয়াশা গোবর ঠাঁসা তার বুনো ওলের উপর পজেসিভ!! তাও আবার অন্য মেয়েকে তার সাথে দেখেছে বলে? বাহ্ কী পরিবর্তন!! “
শিশির যে পুরোটা মজা নিচ্ছে সে ভালোভাবেই বুঝল। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। রাগের ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” ফাজলামো করো? “
” নাহ্ তো! আমার বউ যে অন্য মেয়ের উপর জেলাস সেটা বললাম৷ তাও আবার ট্রিপিক্যাল বউদের মতো “
” মটেও ট্রিপিক্যাল না। স্বামী সকল মেয়ের জন্য পজেসিভ পার্সোন। অন্য মেয়ের সাথে দেখলে সব বউই ট্রিপিক্যাল হবে। সেটা তুমি বুঝবে না। “
” আচ্ছা? “
” হুঁ “
” ওটা সারথি ছিল। ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে। বিবাহিত। অনেক মিশুক আর অনেক মজার একটা মেয়ে। সিঁথি আর সারথি ছাড়া কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড নেই। সিঁথিও বিবাহিত। বই কেনার প্রয়োজন ছিল তাই একসাথেই গেছিলাম৷ ওখানে ওরা একটা টপিক নিয়ে হাসাহাসি করছিল। কিন্তু ওর স্বভাবগত কারণে ওরকম ভাবে ধরেছিল। আমি পরে ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম৷ সেটা দেখিস নি? শুধু ও ধরেছে সেটা দেখেছিস! বাই দ্যা ওয়ে তুই ওখানে কোথায় ছিলি? “
” রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলাম৷ অনেকদিন যাওয়া হয় না বলে প্ল্যান করেছিলাম “
শিশির এবার কুয়াশাকে কামড় দেবার জায়গায় নজর দিল। দাঁত বসে আছে স্পষ্ট। হাত তুলে স্লাইড করতে থাকল বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে। কুয়াশা আবার ব্যথা পেল। কারণ কামড়ানোতে ব্যথা জমে গেছে সাথে সাথে৷
” এটা কি বাইট দিলাম জানতে চাস? “
কুয়াশা তাকিয়ে রইল। বলল,
” কি? “
সে এবার কুয়াশার কানের কাছে মুখ দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” লাভ ”
কেঁপে উঠল কুয়াশা৷ শিশির কথাটা বলে আবার চোখের দিকে নজর দিল। চোখজোড়ার গভীরে যেতে চাইল। কুয়াশা কী চাই! বুঝার চেষ্টা করল। কিন্তু ধরতে পারল না কুয়াশার ইচ্ছেটাকে৷ উল্টো জিজ্ঞেসও করল না। তাকিয়ে রইল৷ তাকিয়ে থেকে বলল,
” তুই একটা জাদুকরিণী জানিস? “
” করতে পেরেছি জাদুটোনা “
” হু ”
ছোট্ট উত্তর তার। কুয়াশা এবার একটা অদ্ভুত কাজ করল। শিশিরের কন্ঠমণিতে গাঢ়, গভীর একটা চুমু খেল। শিশির চমকে উঠল। পুরো শরীরে ঝাঁকানি দিল। বিদ্যুৎের সঞ্চার হলো৷ ভালোবাসা কতটা গভীর হয়েছে বুঝিয়ে দিল। দুই মাস হতে চলল বিয়ের। বুঝে গেছে গভীরতা৷ অনায়সে গ্রহণ করা যাবে। চাইবে কি সেই অধিকার? নাকি আরো সময়ের প্রয়োজন পড়বে?
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা, মা-রবি নাকি? “
” এ্যাই বুনো ওল ম-রলে কি সমস্যা? “
” বলছিস তো? “
শিশিরের কন্ঠে অদ্ভুত নেশা। কুয়াশা লজ্জা পেল। কুয়াশা চোখ নামিয়ে শিশিরের লোমশ বুকে আঁকিবুঁকি করতে লাগল। শিশির এবার কুয়াশাকে আউড়িয়ে ফেলার মতো করে বিছানায় ফেলল। কুয়াশার শরীরে ভর ছেড়ে বুকের নিচে পিষে ফেলার পণ করল। কুয়াশা এসব এত জলদি হলো হজম করতে সময় নিল। ভয় পেয়ে গেল৷ ধুকপুক করছে৷ চোখ বড় বড় করে বলল,
” কি করছ?”
তা শুনে শিশির কুয়াশার কানে কানে কিছু একটা বলল। যা শুনে কুয়াশা বেজায় রেগে উঠল৷ এক ধাক্কা দিয়ে শিশিরকে ফেলে দিল নিজের উপর থেকে৷ বালিশ তুলে জোর একটা বাড়ি দিয়ে বলল,
” অসভ্য বুনো ওল…!”
বলে হাঁটা ধরল বাইরে। কুয়াশা যেতেই শিশির জোরে জোরে হেসে দিল।
__________
পরেরদিন সকাল থেকে সকলে রেডি হলো। বারটার মাঝেই রওনা দেবে। আম্বিয়া তার ভাই বোনদের জানিয়েছে। সেখান থেকে আসতে চেয়েছেন আমিনুল হক আর ঈশা। আর বোনেরা কেউ রাজি হয়নি। একবারে বিয়ে খেতে আসবে জানিয়েছেন। ঈশা আর কুয়াশা মিলে স্মৃতিকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে শিশির রিজভীকে নিয়েছে৷ নীহারের বন্ধুদের বেশি বলে নি৷ সবথেকে ক্লোজ দুইটা বন্ধুকে বলেছিল কিন্তু একজন রাজি হয়েছে৷
‘
সকাল এগারটা৷ কুয়াশা রেডি হচ্ছে তার ঘরে। সে আজ শাড়ি পড়ার প্ল্যান করেছিল। কিন্তু শিশির মানা করেছে। শাড়ি পড়ে জার্নি করতে দিতে নারাজ। যেমন চলে তেমনই যেন যায়। বোরকা, হিজাব৷ প্রয়োজনের ওখানে গিয়ে শাড়ি পড়বে। এই কথায় রাগ উঠছে তার। মার্জিত ভাবে শাড়ি পড়ে গেলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো? এই ভেবে তার ভেতরে একটু রাগ।
শিশির রেডি হয়ে এলো কুয়াশার ঘরে। দেখল কথা অনুযায়ী বোরকা-ই পড়েছে। হাসল সে। অধিকার দেখালে আজকাল মানে গোবর ঠাঁসাটা। শিশির এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। কুয়াশা আরো ছ্যানছ্যান করে জ্বলে উঠল। আইছে আগলা পিরিত দেখাতে। বলল,
” ছাড়ো তোহ্, আগলা পিরিত দেখাতে এসো না ”
” আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউকে রাস্তার লোক শাড়িতে দেখে মুগ্ধ হবে আমি তা মেনে নিই কী করে? “
কুয়াশা শান্ত হয়ে গেল। জমে গেল৷ তাকাল মিররের প্রতিবিম্বতে। শিশির হাসল অমায়িক। মুগ্ধ হলো তা দেখে।বলল,
” সুদর্শন পুরুষ “
” কে?”
” আমার স্বামী “
শিশির তাকাল অদ্ভুত নজরে। আমার স্বামী কথাটা ভেতর নাড়িয়ে দিল৷ প্রেমে সে হাবুডুবু খাচ্ছে। এত সবের পরেও কি ‘ভালোবাসি’ নামক বাক্যটি বলার প্রয়োজন পড়বে? আছে কি প্রয়োজন? উহু নেই। কোনো প্রয়োজন নেই তারা প্রেমে পড়ে গেছে৷ ভালোবেসে ফেলেছে৷ ভালোবাসা নামক সুখ পাখি এসে ধরা দিয়েছে তাদের জীবনে৷ কি অদ্ভুত নাহ্? কেউ কি ঘুনাক্ষরেও টের পেয়েছিল এই দু’টো হাম সেপাইরা একে অপরের প্রেমে পড়বে? যে হারে চুলোচুলি করত বাবাহ্ রে বাবাহ্!! যারা বিয়ে করতে পর্যন্ত নারাজ ছিল তারা আজ একে অপরের অনুভূতি প্রগাঢ়ভাবে অনুভব করার চেষ্টা করে। চেষ্টা করে কি? অনুভব করে। সময় নিয়ে তারা ভালোবাসতে শিখে গেছে। কে বলে, বিয়ের পর প্রেম হয় না? প্রেমে পড়া হয় না? এটা কি প্রেম না? প্রেমে পড়া না? চলুক না এই খুনসুঁটিময় প্রেম কিছুদিন। ক্ষতি কি তাতে!!
| চলবে |
তোমাদের শিশির কিন্তু অতিরিক্ত রোমান্টিক আর অসভ্য। দেখলে তো?
কুয়াশাকে কী বলল সে!!
জানতে চেয়ে তা, লজ্জা দিয়ো না
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click