®রোজা রহমান
‘
সন্ধ্যা শেষ হয়ে বেশ অনেকটায় রাত হয়ে গেছে। রাতের খাবার খাওয়া দাওয়ার পার্ট সবেই শেষ হয়েছে। এখানে কারোরি তেমন কাজ নেই এক বসে থাকা ছাড়া আর গল্প করা ছাড়া। তো সকলের এখন ব্যস্ততাও নেই তাই গল্প করছে। এরই মাঝে নয়টার দিকে কারন্ট চলে গেল। অতিরিক্ত গরম তারউপর কারেন্ট গেলে কি আর ঘরে থাকা যায়? তাই কেউ আর ঘরে থাকল না৷ উঠান সহ ছাদে চলে গেল৷
ছোটরা ছাদেই এসেছে। রিজভী স্মৃতিকে নিয়ে দূরে একপাশে টেনে এনেছে। এই পর্যন্ত এখানে এসে বেচারা রিজভী তার প্রেয়সীটার সাথে একা কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না৷ সকলে ওদের কথা যানে তাই কেউ সেসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করল না। অন্যরা অন্যদিকে আড্ডাতে মগ্ন। এদিকে স্মৃতি, রিজভী প্রেম করতে মগ্ন।
” এটা কি হলো? “
” কি হলো?”
স্মৃতির কথার গা ছাড়া জবাব রিজভীর৷ স্মৃতি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল। এ যে পাক্কা শিশিরের মতো স্বভাবা সেটা বুঝে গেছে এতদিনে। বলল,
” সকলের মাঝে থেকে টেনে আনলেন, কী ভাবল ওরা? “
” কি ভাববে? আমি আমার রসমালাইকে এনেছি এতে কে কি ভাববে?”
স্মৃতি জমে গেল। এই একটা ডাক সে প্রথমদিন শুনেছিল যেদিন রিজভী ও’কে প্রেম নিবেদন করেছিল। এখনো মনে পড়লে হাসি আসে স্মৃতির সাথে লজ্জা তো আছে! শিশির কুয়াশার বিয়ের রাতে ছাদের ডেকেছিল রিজভী। সেখানে গেলে রিজভী অকপটে বলে দিয়েছিল,
” এ্যাই রসমালাই শুনো! তোমাকে আমার ভালো লাগে। ভালোবাসতে চাই তোমাকে। এটার সুযোগ করে দাও। এত জলদি দিতে হবে না। আগে নিজের মনের ঘরে আমার জন্য জায়গা করো এরপর সুযোগ দাও। আমি অপেক্ষা করব প্রবেশ করার জন্য। কিন্তু জায়গা তোমার করতেই হবে, বারণ, মানা শুনব না৷”
স্মৃতি যদিও পছন্দ করার কথা শুনেছিল কিন্তু সেদিন এমন কথা শুনে সে লজ্জায় মরি মরি হয়েছিল। মেয়েটা শান্ত প্রকৃতির৷ কুয়াশার মতো দূরন্তপনা নেই৷ স্মৃতি সেদিন সবটা জানিয়েছিল রিজভীকে৷ কুয়াশার ক্রাশ খাওয়া থেকে শিশিরের কথা সব বলেছিল। সব শুনে রিজভী দম ফাটা হাসিতে মত্ত হয়েছিল। এরপর স্মৃতি সময় চেয়েছিল। সময় রিজভী দিয়েছিল। কিন্তু খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি রিজভীর। ওদের রিলেশনে আসাও প্রায় দেড় মাস হয়ে এসেছে। স্মৃতি বলল,
” হুঁ, আপনার তো শুধু এক ডায়লগ, ‘আমার রসমালাই’ কবে না সুগার হয়ে যায় আপনার “
রিজভী শুনে জোরে জোরে হেসে দিল। বলল,
” তুমিও এটা বললে? এমনটা শিশিরও বলেছিল। “
একটু থেমে স্মৃতিকে কাছে টেনে নিল। কেঁপে উঠল স্মৃতি। এই পর্যন্ত রিজভী তার হাতটাও ধরেনি। শুধু বাইকে উঠলে যতটুকু কাছে যাওয়ায়াওয়ি হয়। রিজভী স্মৃতির কোমড়ে হাত রাখল৷ আরেকটু টেনে নিল। যেটাতে স্মৃতি আরো জমে গেল। ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলল,
” কি করছেন? “
” হুঁশশ, সুগার হবে না আমার। কারণ এখনো রসমালাই টেস্টই করেই দেখিনি আমি। রসমালাই খেলে তো সুগার হবে আমার? “
স্মৃতি আরো বরফ হয়ে গেল।রিজভীর এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে৷ নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেল। মাঝে মাঝে এমন লাগাম ছাড়া কথা ফোনে বলে রিজভী৷ রিজভী স্মৃতির অবস্থা টের পেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে ঠোঁট টিপে। আবছা আলোয় দু’জন দু’জনের অনেক কাছাকাছি। স্মৃতি নজর ঝুঁকিয়ে রেখেছে। দুই হাত রিজভীর বুকে। সে আবার বলল,
” তবে বিয়ের পর হলেও হতে পারে। সুগাররর.. “
শেষ শব্দটা টেনে বলল সে। তা শুনে আরো নূয়ে গেল স্মৃতি। রিজভী মিটমিট করে হাসছে। সে আগের ন্যায় আবার বলল,
” তবে এখন টেস্ট করে দেখল কী সমস্যা হবে? নাকি একটু ছুঁয়ে দেখব? “
স্মৃতি কথার মর্মার্থ ধরে ফেলেছে৷ আর সেটা বুঝেই নূয়ে গেল আরো। কেঁপে উঠল সর্ব শরীর৷ স্মৃতি কিছু বলতে যাবে রিজভী আবার বলল,
” তুমি যেটা বলবে সেটা করব। বলো কোনটা করব! টেস্ট করব নাকি ছুঁয়ে দেখব? “
স্মৃতি এবার হতভম্ব হয়ে তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
” নাহ্… এখন কিছুই করতে হবে না৷ ছাড়েন৷ কী লাগাম ছাড়া সব কথা বার্তা বলেন আপনি! “
রিজভী ফিসফিস করে হেসে ফেলল। তার রসমালাই সত্যি রসমালাই। মন চায় টুপ করে ধরে গিলে খেয়ে ফেলতে। সে এবার দুষ্টুমি করে বলল,
” কিন্তু আমি তো যে কোনো একটা কিছু করবই! টেস্ট না করি ছুঁয়ে তো দেখবই আমার স্বাধের রসমালাই”
বলে স্মৃতির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু আঁকল। আবার কেঁপে উঠল স্মৃতি। তবে মনে আনন্দ অনুভূতির সঞ্চার ঘটল। লজ্জাময় হাসি ফুটল ঠোঁট। রিজভীর বুকের উপরের শার্টটা মুঠো পাকিয়ে ধরল। রিজভী চুমু দিয়ে তাকাল তার রসমালাইয়ের দিকে। লজ্জায় নূয়ে পড়েছে একেবারে। হাসল রিজভী। মেয়েটা অতিরিক্ত লজ্জাবতী, নরম সরম। স্মৃতি এবার নিজে থেকে রিজভীর বুকে মাথা রাখল, পিঠে হাত রাখল। আলত হাতে জড়িয়ে ধরল। রিজভী বুঝে খুশি হলো। সে-ও স্মৃতিকে আরেকটুখানি আগলে নিল।
‘
রাত প্রায় এগারোটা। কারেন্ট চলে এসেছে৷ নীহার জানাল নিচে যাবে। ক্লান্ত লাগছে শুবে সে। কথা শুনে শিশির কুয়াশার দিকে তাকাল। কুয়াশা ভেঙচি কাটল। সে নিচে যেতে প্রস্তুত৷ বলল,
” ভাইয়া আমার ঘুম লাগছে। আমি গেলাম তোমরা থাকো ”
বলে যেই হাঁটা ধরবে ওমনি শিশির খপ করে হাত পেড়ে ধরে। শক্ত করে ধরেছে। মনে হচ্ছে হাতটা আজ ভেঙে দেবে৷ কুয়াশা ব্যথা পেল৷ শিশিরের দিকে তাকাল সে কটমট নজরে তাকাল৷ বলল,
” এ্যাই বুনো ওল..! এভাবে হাত ভাঙতে চাইছ কেন আমার? ছাড়ো..!”
এদিকে সবই দেখল সকলে বুঝলও। হেসে ফেলল সব৷ লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে কুয়াশার। এই বুনো ওলটার না হয় হায়া ,লজ্জা কিছুই নেই, তাই বলে কী তারও নেই! বৃষ্টি বলল,
” কুশু, তোমার বউ পাগল বরমশাইর ঘুম হবে না তোমাকে ছাড়া৷ তাকে সঙ্গ দাও। আমরা গেলাম। “
কুয়াশা এবার লজ্জা তো পেলই আবার বেজায় রেগেও গেল। শিশিরের হাতে খামচি দিয়ে ধরল এবার কটমট করতে করতে বলল,
” ছাড়ো…!
” চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক বেয়াদব গোবর ঠাঁসা “
দাঁতে দাঁত চেপে বলল শিশির। ছাড়ল না সে। নীহার বলল,
” হুঁ ভাবি, কে জানি বিয়ে না করতে চেয়ে ধর্মঘট করেছিল। আর এখন দেখো, রাতে আবার একাও থাকতে চায় না। নাটকবাজ একটা! “
শেষ কথাটা কিড়মিড় করে বলল নীহার। শিশির শুনে বলল,
” এ্যাই.. রাজ-কারের বংশধর! বেশি না বুঝে যা তোহ্। থাকব না আমি বউ ছাড়া শুনেছিস? যাহ্ এবার সব কয়টা দূর হ তোহ্! ”
সকলে শুনে দম ফাটা হাসি হাসল। কুয়াশা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। কতটা নির্লজ্জ চিন্তা করা যায়? ভাগ্যিস তুষার ভাই, তুহিন ভাই নেই৷ তা না হলে এখানে লজ্জায় ঢুকে যেতে ইচ্ছে করত৷
শিশির এবার শশীর উদ্দেশ্যে বলল,
” শশী কালকের মতো বালিশ আর, কয়েল দিয়ে যাবি। আর তার আগে তোর এই ফাজিলটাকে নিয়ে বিদেয় হ, যাহ্! ঈগলটা জ্বালিয়ে খেল জীবনডা আমার। “
সকলে আবার হাসল। নীহার দুষ্টুমি করে বলল,
” ঈগল উপাধি যখন দিয়েই দিলি তবে কাল সকালের জন্য আবার অপেক্ষায় রইলাম। আমার চোক্ষু জোড়া তোমারো প্রতীক্ষাতে রহিবে… “
কতটা ঠোঁটকাটা চিন্তা করা যায়! নীহার সুর ধরে শেষ কথাটা বলল। শিশির কটমট করে তাকাল। কুয়াশা কিছু অবশ্য বুঝল না। কিন্তু যারা বুঝল তারা জোরে হেসে দিল। এরপর আর কী করার? সকলে নেমে গেল একে একে। ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে। এবার যেই না ছাদ ফাঁকা হয়ে গেল ওমনি কুয়াশা শিশিরের উপর হামলে পড়ল৷ শিশির যেই হাতটা ধরে রেখেছে সেটা ধরা-ই আছে অন্য হাতে এলোপাতাড়ি চাপ্পড় সহ চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার পণ করল শিশিরের। আর একেরপর এক বলতে লাগল,
” বেয়াদব বুনো ওল, অসভ্য বুনো ওল, ফাজিল বুনো ওল। এ্যাই তোর লজ্জা করল না? এতগুলো মানুষের সামনে বউকে নিয়ে থাকবি বলে হাত ধরে রাখতে? ছিঃহ্ আমার তো লজ্জায় জীবন যাচ্ছে। ফাজিল বুনো ওল। তুই বউ পাগল হয়ে গেছিস বুনো ওল “
বলতে বলতে শিশিরের চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলছে৷ শিশির কিছু বলল না৷ শুধু হেসে গেল দাঁত বের করে। কুয়াশা এবার হাসি দেখে আরো ক্ষেপে উঠল। ঝটকা দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে শিশিরের শার্টের কলার টেনে ধরল। ঝুঁকিয়ে নিল শিশিরকে৷ চোখে চোখ রাখল আগুণ ঝড়া। অ’গ্নি শিখার মতো চোখ করেছে। রাগে ফুঁসছে সে৷ শিশির মিটমিট করে হাসছে৷ কুয়াশা বলল,
” খুব মজা লাগছে নাহ্? বুনো ওল একটা৷ ইশশ কাল সকলের সামনে যেতেই পারব না আমি। এমনি আজ সকলে টের পেয়ে গেছিল বলে সকলের থেকে আমি দূরে দূরে ছিলাম। “
শিশির এবার কুয়াশার কোমড় ধরে উঁচু করে রেলিঙের উপর বসিয়ে দিল৷ নিজে একদম কাছে ঘেঁষে দাঁড়াল৷ দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরল। এরপর হাসি হাসি মুখ করেই বলল,
” তুই কি জানিস আমার এই কাজে তোর বাড়ির লোক কতটা খুশি হয়েছে? তারা চায় আমরা সব জলদি মেনে নিই। জলদি সব ঠিক করে ফেলি। হ্যাঁ লজ্জা তোর লাগতেই পারে, কিন্তু এতে অনেক খুশি হয়েছে ওরা। আমরা একে ওপরকে মানতে শিখে গেছি, একে ওপরের প্রতি দরদ দেখাতে শিখে গেছি, একে অপরকে ভালো বাসতে শিখে গেছি৷ এসব দেখে আর শুনে ওরাও খুশি। তোকে নিয়ে, তোর ভাগ্য নিয়ে অনেক চিন্তা করত সকলে। ভাবত হয়তো আমি মানতে পারব না তোর লাইফটা সকলে মিলে নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু এমন কিছু হয়নি। আমি মেনে নিয়েছি। এখন এই ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো ওদের নজরে পড়লে ওরা খুশি হবে। বুঝলি গোবর ঠাঁসা? ”
শিশিরের কথা শুনে কুয়াশা ঠান্ডা হয়ে গেল। রাগ পড়ে গেল। মুগ্ধ হলো শিশিরের কথায়। কথা তো মন্দ বলে নি! সত্যি তো! পরিবারের লোক খুবই চিন্তা করে তাদের নিয়ে। এখন এসব জানলে খুশি ছাড়া আর কিছু হবে না৷ কুয়াশাকে শান্ত হতে দেখে শিশির এবার বলল,
” গোবর ঠাঁসা না বুঝে যে এতগুলো মা-রলি এবার আমি কি করব? “
কুয়াশা শুনে বাচ্চাদের মতো করে আহ্লাদ করে বলল,
” আদর করো। মে-রো না “
শিশির শুনে শব্দ করে হেসে ফেলল। এই আহ্লাদী বউটাকে নিয়ে কি করবে সে? বলল,
” তাই! আদর চায় তোর?”
” মা-রের থেকে আদর ভালো”
লজ্জা মাখা কথা কুয়াশার৷ শিশির আবার হেসে ফেলল। কুয়াশা শিশিরের কাঁধে মাথা রাখল৷ সে তার আহ্লাদী বউকে আলত হাতে জড়িয়ে ধরল।
__________
কাক ডাকা ভোর। শিশিরের বুকে ঘুমচ্ছে কুয়াশা আসমানের নিচে। খোলা আসমানের নিচে তাদের জীবনের দুই রাত কেটে গেল। আজ শিশিরের আগে ঘুম ভাঙল৷ তাকাল বউয়ের দিকে। কী সুন্দর লাগছে সকালের পবিত্র ফুটফুটে আলোয় বউটাকে। পবিত্র পুষ্প তার৷ ভেবে হাসল। চুমু আঁকল ললাটে। দু’হাতে বাহুবন্দী করে রেখেছে।
‘
সকাল আটটা। সকলে খাবার খেয়ে গল্পে মেতেছে। এমন সময় হিম বলল,
” মিহির ভাই মাছ ধরব, চলো”
” আচ্ছা চল। দাঁড়া বর্শি নিয়ে আসি বড় আব্বাদের বাড়ি থেকে। আমাদের চারটা আছে। সকলের হবে না”
সম্মতি পেয়ে মিহির বর্শি আনতে চলে গেল৷ শিশিররা সকলে উঠে বের হলো৷ ছেলেরা যেতেই মেয়েরা মাছ ধরা দেখবে বলে বের হলো।
যেতে যেতে বৃষ্টি আর ইয়াসমিন কুয়াশাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে করতে হাঁটতে লাগল। বৃষ্টি ডাকল,
” কুশু? ”
” হুঁ ভাবি! “
” তোমরা সম্পর্কে এগিয়েছ? “
কুয়াশা থেমে গেল৷ তাকাল বৃষ্টির দিকে৷ ইয়াসমিন জিজ্ঞেস করল,
” কতটুকু এগুতে পেরেছিস? “
কুয়াশা মাথা নিচু করে নিল৷ লজ্জা নাকি পরিবারের এত এত চিন্তা করা নিয়ে ভেবে আনন্দ পেয়ে বোঝা গেল না৷ আর ভাবিরা সেই চিন্তা থেকেই কী জানতে চাচ্ছে সেটাও বুঝল। বলল,
” ভালোবাসা বাসি পর্যন্ত হয়েছে৷ এর বেশি না৷ তবে জড়তা কাজ করত এতদিন৷ সেটাও কেটে যাচ্ছে “
মুচকি হাসল বৃষ্টি সহ উপস্থিত সকলে৷ এরা যে এতটা বুদ্ধিবান ধারণা ছিল না। যে হারে একে অপরকে অপছন্দ করত কখনো ভাবেই নি ধরে বেঁধে বিয়ে দিলে এরা এত জলদি মানতে পারবে৷ বৃষ্টি ইয়াসমিন জড়িয়ে ধরল কুয়াশাকে৷ ইয়াসমিন বলল,
” আমরা তোকে অনেক ভালোবাসি কুশু৷ তোর লাইফ নিয়ে অনেক চিন্তা হতো৷ একমাত্র মেয়ের সুখের চিন্তা করে। যদিও শিশির লাখে একটা তবুও তোরা হিংসা, অপছন্দ কাটিয়ে ভালোবাসা দিয়ে সংসার করতে পারবি কি না সেটা নিয়ে অনেক ভাবতাম৷ তোর ভাইয়া তোদের বিয়ের দিন থেকে তোকে নিয়ে অনেক চিন্তা করে৷ তোর সুখের কথা ভাবে৷ তুই মানতে পারবি কি না শিশিরকে এসব। কিন্তু আল্লাহর শুকরিয়া। তোরা অনেক বুঝবান। “
কুয়াশা মুচকি হাসল৷ বলল,
” তোমাদের দেবর স্বামী হিসেবে একজন পারফেক্ট পার্সোন৷ ভালো না বেসে কেউ থাকতে পারবে না৷ দায়িত্ববান, যত্নবান, ভালোবাসতেও মন দিয়ে পারে৷ আর সব থেকে বড় কথা পরিবার আমাদের খারাপ চায় নি৷ আমরা ভেবেছি চেষ্টা করলেই সব হবে৷ চেষ্টা করলেই হিংসাকে দূরে ঠেলতে পারব৷ সেটায় করেছি। কারণ আমরা দু’জন দু’জনের ভবিতব্য। মানতেই হতো৷”
আপ্লূত হলো বৃষ্টিরা৷ ছেলে মেয়েটা স্বভাব দোষে ঝগড়া করত। বড় দু’জনই হয়েছিল আর বুদ্ধিমানও৷ ভেবে বৃষ্টি, ইয়াসমিন কুয়াশার মাথা হাত রাখল। বৃষ্টি বলল,
” দোয়া করি জীবনে আরো এগিয়ে যাও। তোমাদের সংসারে ভালোবাসা কানায় কানায় পূর্ণতা পাক। “
মুচকি হাসল কুয়াশা। এমন পরিবার কী খারাপ চাইতে পারে? যেখানে ভাবিরাই এত ভালো! এবার ইয়াসমিন একটু মজা নিল। বলল,
” কিন্তু কাল যে দেখলাম তোর ভালোবাসার চিহ্ন শিশিরের ঠোঁটে? “
এই কথায় কুয়াশা এবার নূয়ে পড়ল৷ বৃষ্টি, স্মৃতি, ঈশা, শশী জোরে জোরে হেসে দিল। কুয়াশা লজ্জা পেয়ে বলল,
” ধেৎ….”
বলেই দৌড় দিল পুকুর পাড়ের দিকে৷ এখানে আর থাকা যাবে না৷ এখন সব মজা উড়াবে বোঝা হয়ে গেছে৷ ভাবিরা খুবই পাঁজি হয়৷ লাগামহীন সব৷ কুয়াশা যেতেই সকলে হাসতে হাসতে পুকুর পাড়ের দিকে এগুলো
‘
পুকুর পাড়ে আম গাছের নিচে সব সারিবদ্ধ করে মাছ ধরছে। কিন্তু এত গুলো বর্শি এক সাথে এক জায়গায় ফেললে কি আর চতুর মাছ বাবাজীবন ধরা দিতে চাই? তাই মিহির বলল,
” এত গুলো মানুষ এক জায়গায় না বসে ভাগ ভাগ করে বসো শিশির ভাই”
বলে সে দেখিয়ে দিল পুকুর পাড়ে দক্ষিণ সাইটে বড় একটা কড়ই গাছ আছে সেখানে দুজনকে যেতে বলল। উত্তর দিকে একটা ছোট খাটো কাঁঠাল গাছ আছে সেদিকে দু’জনকে বসতে বলল। আর দূরে দূরে বসতে বলল কয়েকজনকে। কথা অনুযায়ী শিশির আর রিজভী কড়ই গাছের নিচে গেল। তুষার, তুহিন দূরে সরে বসল। হিম, মিহির সেখানেই থাকল। নীহার, শান্ত কাঁঠাল গাছের নিচে গেল।
আহ্ বর্শি দিয়ে মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা৷ যারা ধরেছে তারাই এই আনন্দটা উপভোগ করতে পেরেছে৷ এই আনন্দে একটা শৈশব শৈশব ফিল আসে। মাছ ধরতে মিহির পটু৷ সে অলরেডি চার-পাঁচটা মাছ ধরে ফেলেছে৷ হিম তা দেখে হা হুতাশা করতে করতে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলার মতো করে ফেলেছে৷ তা দেখে ও শুনে সকলে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
এরই মাঝে শিশিরের বর্শিতে একটা বড় মাছ ধরা খেল। মাছটা বোধহয় রুই৷ এখনো তুলে নি৷ তা দেখে সকলে চেঁচিয়ে উঠল। শিশির তো একদম দাম্ভিকতার সাথে চেঁচিয়ে বলল,
” কিহ্ শা-লাবাবু দেখলি তো? তোর দুলাভাই কিন্তু সব দিক দিয়ে এক্সপার্ট। শুধু বোনটায় তোরা দিলি মাথা সহ পুরোটাই গোবর ঠাঁসা। তোর বোনের কাছেই বুনো ওল রয়ে গেলাম শুধু।”
তা শুনে সকলে হেসে উঠল৷ কুয়াশা কটমট করে তাকাল। এগিয়ে গেল মিহিরদের কাছে থেকে। হিমও চেঁচিয়ে বলল,
” তোমার বাঘা তেঁতুল যাচ্ছে। ঠ্যালা সামলাও এবার “
বলে হে হে করে হেসে উঠল৷ সকলে হাসল। শিশির মাছটা তুলে নিল। অনেকটায় বড় মাছ। মিহির গিয়ে ছাড়াতে লাগল। কুয়াশা গিয়ে মাছটা দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে গেল৷ বড় বড় মাছ ধরা দেখলে কার না আনন্দ লাগে? সবারই লাগে। তাই কুয়াশারও লাগল সে শিশিরের একটু আগের খোঁটা দেয়া টা ভুলে লাফিয়ে মাছের কাছে বসে পড়ল। মিহির, শিশির, রিজভী হেসে ফেলল৷ স্মৃতিও গেল সেদিকে। কুয়াশা মাছটা হাতে ধরে উপরে তুলে বলল,
” আরেহ্ বাহ্ কত্ত বড় বড় মাছগো মিহির ভাই তোমাদের পুকুরে? “
” এর থেকেও বড় বড়তা আছে৷ “
মাছটা দেখতে হিম ও দৌড়ে গেল৷ গিয়ে সে মাছটার সাথে শেলফি সহ কয়েকটা ছবি উঠাল৷ ওর দেখাদেখি কুয়াশাও তুলল। শিশির বলল,
” কুয়াশা…! মাছ নিয়ে দাঁড়া “
কুয়াশা শিশিরের কথামতো দাঁড়াতেই শিশির নিজের ফোনে কয়েকটা ছবি তুলে নিল৷ কুয়াশা খুশিতে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। এরই মাঝে নীহার, তুষার, তুহিন তিন জনেরই বর্শিতে এক সাথে বড় বড় মাছ ধরা দিল। সকলে তো আনন্দে এবার নেচেই উঠল। এক সাথে এতগুলো মাছ একবারে ধরা দেখে। এরপর একে একে রিজভী, শান্তও পেল। হিমও পেল বেশ বড়তা-ই সেটা ধরতে পেরে সেও শিশিরকে উল্টো খোঁটা দিতেও ভুলল না। অনেক মাছ হয়ে গেল বলে আর ধরল না কেউ। এত মাছ ধরে কি বা করবে! বড় বড় মাছই অনেক হয়ে গেল। তাই বাদ দিল সব মাছ ধরা। শিশির উঠে কুয়াশার কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ দিয়ে বলল,
” তোর স্বামী সব দিকে এক্সপার্ট ঘরে এবং বাইরে। মানতে শেখ গোবর ঠাঁসা “
বলে চোখ টিপল। কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে কিড়মিড় করে উঠল। বলল,
” নিজের ঢোল নিজেই পেটাচ্ছ? “
” আমার ঢোল পেটানো লাগে না। কাজেই সকলে বুঝে নেয়। “
” বুনো ওল একটা তুমি। আর আমার কাছে তুমি আজীবন তাই ই থাকবে। “
বলেই শিশিরকে দিল একটা ধাক্কা। শিশির পুকুরের কিনারাই ছিল৷ ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে পানিতে গেল ধপাস দিয়ে পড়ে। সকলে হতভম্ব হয়ে গেল। শিশির পুকুরের পানি থেকে মাথা তুলে বলে উঠল,
” গোবর ঠাঁসার বাচ্চা..! কি করলি এটা? খুব বাড় বেড়েছিস নাহ্? থাম তোর ডানা ছাটার ব্যবস্থা করছি। উঠি আগে আমি “
কুয়াশা হাতের ময়লা ঝাড়ার মতো করে দু’হাত বাড়ি দিল। বলল,
” কিচ্ছু করতে পারবা না তুমি “
বলে হাঁটা ধরল স্মৃতিকে নিয়ে। আর সকলে কপাল চাপড়ে বসে রইল৷ এরা জীবনেও শুধরাবে না৷ শিশির বলল,
” দেখা যাবে “
বলে সে সাঁতার কেটে এই পাশে ঘাটে চলে এলো। দুুপুরই হয়ে গেছে মাছ ধরতে ধরতে তাই একবারে গোসলই করে নেয়া যাক! শিশিরের দেখা দেখি নীহার, হিম, রিজভী, শান্ত, মিহিরও নেমে পড়ল। তুষার, তুহিন ও নামল। তবে ওরা গোসল করেই উঠে গেল শিশিররা রয়ে গেল। তারা সারা পুকুর এক করে বেড়াচ্ছে।
| চলবে |
এই পর্বটা লিখলাম গ্রামে মাছ ধরার আনন্দটা উপভোগ করানোর জন্য৷ আমার পরীক্ষা ছিল আজ৷ এসে লিখলাম। তেমন মন পেলাম না। কাল রোমান্টিক, খুঁনসুটির পর্ব দেবার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click