১৮+ এলার্ট
®রোজা রহমান
‘
শিশির কুয়াশাকে শশীর পাশের ঘরটা দেয়া হয়েছে। সেখানে কুয়াশাকে কোলে করে নিয়ে শুয়ে দিল। ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। গরম পানি করতে দেয়া হয়েছে। একটু গরম সেঁক দিলে ব্যথা কমবে। কুয়াশা দাঁত মুখ শক্ত করে এক পাশ হয়ে শুয়ে রইল৷ শিশির বকেই যাচ্ছে থেকে থেকে। সেগুলো গিলছে৷ এখন কী আর করার? দোষ যে করেছে সে!
ঘরে আপাতত কেউ নেই। কেউ আর এ ঘরে আসেনি। কাল সকাল সকাল চলে যাবার চিন্তা করেছেন সকলে। রাত দশটা পাড় হয়ে গেছে। শিশির শার্ট খুলে একটা ঢিলাঢালা সাদা শার্ট পরে নিল আর প্যান্ট পাল্টে টাউজার পরল। গিয়ে কুয়াশার পাশে আধশোয়া হয়ে বসল বিছানায়। কুয়াশা চোখ মুখ খিঁচিয়ে রেখেছে৷ নরম স্বরে বলল,
” সবসময় যে পণ্ডিতি করিস, উড়নচণ্ডী হয়ে বেড়াস এখন এই যে কষ্টটা পাচ্ছিস কে নিচ্ছে এটার ভাগ? সেই তো নিজেই কষ্ট পাচ্ছিস! সবসময় বলা হয় সাবধানে থাকবি তবুও শুনিস না। আর হয়ে গেছে অসাবধানতায় সেটা মানলাম বিকেলে কেন জেদ ধরে গেলি ঘুরতে? তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তবুও বললি না কেন?”
কুয়াশা টলমল চোখ খুলে তাকাল৷ ভাঙা কন্ঠে বলল,
” বিকেলে কম মনে হচ্ছিল৷ ভেবেছিলাম সেরে যাবে৷ কিন্তু এখন এমন হবে বুঝি নি”
বলে সে এবার স্বামীর কাছে আদুরে ভোল ধরল। একটু আহ্লাদী হলো আহ্লাদ পাবার জন্য। মাথা তুলে আধশোয়া হয়ে বসে থাকা শিশিরের বুকের উপর গিয়ে মাথা সমেত শরীর এলিয়ে দিল৷ শিশিরও আদুরে, আহ্লাদী বউকে বুকের সাথে আগলে নিল৷ এক হাত পিঠে রাখল অন্য হাত মাথায়। চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল স্বামীর বুকে। শিশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কুয়াশা এবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল,
” ব্যথা করছে খুব “
শিশিরের বুকটা ভারী হয়ে এলো এমন ভাবে বলতে শুনে৷ মেয়েটাকে কত করে মানা করে তবুও শুনবে না। বড় হয়ে গেল তবুও উগ্রস্বভাব গেল না৷ বউয়ের মাথার উপরিভাগ চাঁদিতে চুমু এঁকে হাত বুলানো অবস্থায় বলল,
” ঠিক হয়ে যাবে। ঘুমোনোর চেষ্টা কর। কাল শহরে গিয়ে আগে ডক্টরের কাছে নেব। এখানে ভালো ডক্টর পাব না।”
কুয়াশা প্রত্যুত্তর করল না। শিশিরের পেট জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজে পড়ে রইল৷ রাতটা কষ্ট করে চলে যাক।
এরই মাঝে জাকিয়া এলেন। বাইরে থেকে ডাকলেন,
” শিশির, আব্বু..! “
” আম্মু আসো “
দরজা ভিড়ানো ছিল। জাকিয়া ভেতরে গিয়ে এত সুন্দর একটা দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ালেন৷ তাদের ছেলে মেয়ে দু’টোর সুখ দেখলেন। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা দেখলেন। কে বলবে? এরা দুই মাস আগেও একে অপরের জনম শত্রু ছিল!! এখন দেখো দিব্ব্য একে অপরের ঢাল হয়েছে। একজন ব্যথায় কাতরাচ্ছে তো একজন ঢাল হয়ে পাশে আছে। হৃদয়ের কোথাও একটা শান্তিময় আনন্দ টের পেলেন জাকিয়া৷ ভালোবাসতে শিখে গেছে এরা এখন শুধু দু’চোখ ভরে দেখবেন এদের পরিপূর্ণ সংসার সাজানো।
জাকিয়া গরম পানি আর তোয়ালে নিয়ে এসেছেন। আজ জাকিয়াকে দেখেও কুয়াশা প্রতিক্রিয়া করল না৷ শিশিরের সাথেই লেপ্টে রইল। মূলত শিশিরের গতকাল রাতে বলা কথাটা সে-ও পরিবারের লোকের কাছে উপস্থাপন করতে চাইছে। জড়তা কাটিয়ে তুলুক আস্তে আস্তে। কতকালই বা লুকোচুরি করবে? জাকিয়া মুচকি হেসে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কিছু বলছে আর? “
” বলল তো ব্যথা করছে। কিন্তু দেখো চোখ মুখ খিঁচিয়ে শান্ত হয়ে আছে৷ এখন শান্ত হয়ে কি হবে? এই শান্তটা আগে থেকে হলে এখন কষ্ট করতে হতো?”
শেষ কথাটা একটু গরম নিয়ে বলল শিশির৷ কুয়াশা কিছু বলল না৷ চোখ বন্ধ করেই রইল। জাকিয়া শব্দহীন হেসে বললেন,
” থাক আর বকিস না। ভুল করে ফেলেছে। অনেক সময় না বুঝেই ভুল হয়ে যায়। দূর্ঘটনায় হাত থাকে না কারো। “
শিশির কিছু বলল না৷ কাছে এগিয়ে কুয়াশাকে জিজ্ঞেস করল,
” মা’রে যন্ত্রণা হচ্ছে? “
” হ্যাঁ আম্মু। কটকট করছে৷ হাড়ের মাঝে টনটন করছে। “
শিশির ‘আম্মু’ ডাক শুনে অবাক হলো৷ তাকাল কুয়াশার দিকে। কিন্তু পুরো মুখ দেখতে পেল না৷ জাকিয়ার দিকে তাকাল। জাকিয়া বললেন,
” কোমড়টা মাটির সাথে অনেকটা জোরে আঘাত পেয়েছে৷ যার জন্য এমন হচ্ছে। কাল সকাল সকাল চলে যাব। রাতটা কষ্ট করে একটু কাটিয়ে দে “
বলে শিশিরকে বলল,
” সেঁক তুই দিবি নাকি আমি দিয়ে দেব?”
” রাখো আমি করছি। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। রাত হয়েছে অনেক। “
জাকিয়া দ্বিরুক্তি করলেন না। বললেন,
” কখনো তো তাকিয়েও দেখিস নি তোর এই আহ্লাদীর অসুখ হলে কী করে! এখন দেখে নে। সকলের অবস্থা কীরকম নাজেহাল করে। “
বলে মুচকি হাসলেন৷ শিশির বলল,
” হ্যাঁ, হারে হারে টের পাচ্ছি “
কুয়াশা চোখ খুলে মাথা উঁচু করে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল শিশিরের দিকে৷ শিশির পাত্তা দিল না তা৷ জাকিয়া হাসলেন। বললেন,
” এখনো ছোট আছে, মানুষ করে নে আগে এটাকে “
জাকিয়া সময় বুঝে ভালোই মজা করেন ছেলের সাথে৷ মা হিসেবে অমায়িক। শিশির হাসল ঠোঁট প্রশারিত করে শব্দহীন তা। তার মা বেস্ট৷
এরকম কয়টা মা ফ্রিলি কথা বলে ছেলে আর ছেলেবউয়ের সাথে? আমার মনে হয়, শাশুড়ীরা এমন নমনীয়তা দেখালে সমাজে বউ, শাশুড়ীতে কোনো বিবাদ সৃষ্টি হতো না। আর সকল বউদেরও একটু বুঝ থাকলেও শাশুড়ীরা কখনো খারাপ ব্যবহার করে না। নিজের মায়ের মতো ভাবতে পারলে ক্ষতি কি? মা তো তারাও হয়! দু’জন সামান্য বুঝ নিয়ে চললেই সংসার মধুর মিষ্টি হয়৷
জাকিয়া সব ঠিক ঠাক করে দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। শিশির বলল,
” ওঠ, সেঁক দিই৷ ভালো লাগবে “
বলে কুয়াশাকে তুলে শুয়ে দিয়ে সে দরজা বন্ধ করে এলো৷ এরপর বলল,
” উপর হয়ে শো “
কুয়াশা প্রত্যুত্তর ছাড়া উপর হয়ে শুলো। শিশির বিছানায় কুয়াশার পাশে গিয়ে বসল৷ এরপর কুয়াশার কোমড়ের কাছে থেকে জামা সরাল অনেকটা৷ কোমড় সহ একটু পিঠও আলগা করল। লাইটের আলোই হলুদাভ কোমড় সহ মসৃণ পিঠ শিশির দেখল৷ কুয়াশা উপর হয়ে শুয়েই শিশিরের দিকে তাকিয়ে গভীর দৃষ্টি দিয়ে। শিশির তাকালে সে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল। শিশির ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলল নিঃশব্দে। কুয়াশার কানের কাছে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
” আর কত পরীক্ষা নিবি আমার? বড্ড জ্বালাচ্ছিস। সুযোগ হোক একবার সোধ না নিয়ে ছাড়ব না কিন্তু!”
কুয়াশা কিছু বলল না৷ ঢিপঢিপ বুক নিয়ে মুখ ঢেকে রাখল৷ শিশির পাত্রটা থেকে গরম সেঁক নিয়ে নিয়ে কুয়াশার কোমড়ে ধরতে থাকল। গরম ভাঁপটা আরামদায়ক মনে হলো কোমরে। কুয়াশা একটু উষ্ণ আরাম পেয়ে বলল,
” ভালো লাগছে “
” লাগবেই তো! পতি তার পত্নী সেবা করছে যে! জলদি সুস্থ হ গোবর ঠাঁসা, এবার তোর পতি সেবা করতে হবে।”
কুয়াশা আরো লজ্জায় মিয়েই পড়ল। বিছানার চাদর খামচে ধরে শুয়ে রইল৷ শিশির টের পেল। হাসল নিঃশব্দে। একই ভাবে অনেকটা সময় নিয়ে সেঁক দেবার পর কুয়াশা বলল,
” শুনো…! শুয়ে পড়ো৷ “
” যন্ত্রণা করছে আর? “
” কমেছে “
শিশির আর কিছু বলল না৷ এটা সারবে না। বিধায় বাদ রাখল। কাল এখান থেকে যেতে পারলে ভালো ডক্টরের কাছে নেবে আগে। ভেবে সেঁক দেয়া বন্ধ করে দিল। ঝুঁকে কুয়াশা কোমড় ও পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে চুমু আঁকল দুটো। নরম পিঠে দাঁড়ি সমেত ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠল সে৷ ঘুরে তাকাল শিশিরের দিকে। শিশির কুয়শার দিকে তাকাল৷ কুয়াশা উপর হয়ে শোয়া অবস্থাতে ঘুরার ফলে পেটের উপর থেকে জামা সরে গেল। পেট আলগা হয়ে গেল কিঞ্চিৎ। হলুদ ফর্সা পেটটা নজর এড়াল না শিশিরের। কুয়াশার পেটের সৌন্দর্যতা দেখে মাথা ঝিমঝিম করে উঠল তার। নিজেকে দমাল না একচুল পরিমাণ। বাসনা পূরণ করে নিল৷ ছুঁয়ে দিল ঠোঁট কুয়াশার মসৃণ, নরম তুলোর মতো পেটে৷ ঠোঁট দাবিয়ে দিয়ে চুমু আঁকল কুয়াশার পেটে। আবার ভেঙে এলো কুয়াশার শরীর। শিরশির করে কেঁপে উঠল পুরো কায়া, অন্তর৷ কাঁটার ন্যায় বিঁধল লোম। ব্যথাময় শরীরে স্বামীর একটু ভালোবাসাময় আদর পেয়ে শরীর জড়িয়ে এলো তার৷ এত ভালোবাসা কই রাখবে সে?
শিশির মুখ তুলতেই সে লজ্জায় ভেঙে পড়ল। শিশির মুচকি হেসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল। কুয়াশাকে কাছে টেনে নিতে নিতে ফিসফিসিয়ে বলল,
” আহ্লাদী বউ! জলদি সুস্থ হয়ে যাহ্ “
কুয়াশা স্বামীর বুকের মাঝে জড়োসড়ো হয়ে শুলো। মুখ গুঁজে রাখল গলার মাঝে। শিশির দু’হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখল। ভালোবাসার পরশ দিয়ে ব্যথা ভুলাতে চাইল বউয়ের। কয়টা স্বামী এমন করে আগলে রাখে? বউয়ের ব্যথার ঢাল হয়? ভালোবাসায় তা নিরাময় করতে চায়? সকল স্বামী করে কি এমন? জানা নেই তা কুয়াশার। সে শুধু আর শুধু মাত্র তার ভাষায় বুনো ওল নামক স্বামীর ভালোবাসা চিনেছে।
“আম্মুকে, আম্মু ডাকা কবে থেকে ধরলি?”
” আজ থেকে, পুকুরে গোসল করার জন্য আমার আম্মু রাজি হচ্ছিল না তাই তোমার আম্মুকে আম্মু ডেকে রাজি করিয়েছি “
গলায় মুখ গুঁজে রেখেই উত্তর করল সে। শিশির মেকি বিস্মিত হয়ে বলল,
” কতত বড় চালাক চিন্তা করা যায়! এ্যাই গোবর ঠাঁসা তুই আমার আম্মুকে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আম্মু বলে পটিয়েছিস? এই জন্য বলি গোবর ঠাঁসাকে গোসল করার অনুমতি কে দিল! “
কুয়াশা ফিসফিস করে হেসে দিল। বলল,
” স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ডাকি নি। মন থেকেই ডেকেছি আম্মু বলে। বড় আম্মুই আমাকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন৷ মেজো আম্মুও অনেক ভালোবাসেন কিন্তু মেজো আম্মুর স্কুলের জন্য বেশি বাড়িতে থাকতে পারত না দেখতাম সেটা। “
” তোর বড় হওয়া চোখের সামনে দেখলাম। সকলের এত আদরের ছিলি বলে দু চক্ষেও সহ্য করতে পারতাম না আর সেই তুই এখন আমার কোলের মধ্যে, বুকে শুয়ে রাজ করে এক একটা রাত পাড় করিস। কী দিন এলো আমার জীবনে চিন্তা কর তাহলে! “
” আল্লাহ তোমার হিংসাকে ভালোবাসায় পরিণত করবে বলে আমাদের ভবিষ্যত, ভবিতব্য এটা করেছিলেন “
শিশির কিছু বলল না। এখন এই মেয়েটায় তার আপন। ভেবে বুকে চেপে ধরল তার আহ্লাদী বউকে।
_________
রাত এগারটা বেজে পাড় হয়ে গেছে। বারটার কাঁটা ছুঁই ছুঁই। শশী নীহারকে এখনো ছাড়েনি। তারা ছাদে নিজেদের মতো সময় কাটিয়েই চলেছে। কাল চলে যাবে এটায় দু’জনের বুক ভারী করে তুলেছে। আবার শুরু হবে দূরত্ব। এই দূরত্ব কতদিনের জানা নেই। আবার কবে দেখা করতে পারবে দু’জন জানা নেই। অনুভূতিরা বিষাদময় হয়ে নিঃশ্বাসের সাথে বের হচ্ছে। ভালোবাসা জিনিসটা খুবই অদ্ভুত! দূরে থাকলে ব্যথা দেয় কাছে থাকলে মন ক্ষুদ্ধ হয়৷ এই যে নীহার আর শশীর ভালোবাসায় মাঝে দূরত্বটাই বেশি শোভা পায়। এভাবে কী ভালোবাসা বাসিতে মন ভরে? তাদের ভরে না।
নীহার এগারটার দিকে শশীকে ডেকে আনে ছাদে৷ শশী এসে আবেগঘন হয়ে নীহারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়৷ বাচ্চাদের মতো আবদার করে, তাকেও যেন কালই নিয়ে যায় সাথে করে। তাকে ছাড়া ভালোলাগে না তার। সে চলে গেলে থাকতে পারবে না। নীহার শুনে আলতো হেসেছে সেটা মন থেকে হাসি না। বিষাদময় সেই হাসি। কষ্ট তারও হচ্ছে। এই মেয়েটাকে ছেড়ে থাকতে এখন তারও কষ্ট হয়৷ রোজ যদি চোখের সামনে দেখতে পেত? কাছে পেত? নিজের কষ্টময় আবেগগুলো দমিয়ে শশীকে শান্ত করেছে। অনেক রকম করে বুঝিয়েছে। এও বলেছে পড়াশুনোর পাশাপাশি পরীক্ষা টরীক্ষার চাপ না থাকলে যেয়ে ঘুরে ঘুরে আসতে। শশী তা শুনে শুনে একটু শান্ত হয়েছে। কিন্তু নীহারকে সে ছাড়ে নি। নীহার না পেরে শশীকে নিয়ে ছাদের রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বসেছে। শশী একদম আবেগী হয়ে উঠেছে। বাচ্চামো মন কী আর এত কিছু ভাবে? না মানে? শশীও মানে নি,ভাবে নি। সে নীহারের বুকে মাথা রেখে পড়ে আছে। নীহারও নিজের কষ্ট দমিয়ে তার হবুবউকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে। মাথায় হাত রেখে বুলিয়ে দিচ্ছে। আজ আকাশের চাঁদটা বড়। তাই আলোকিত হয়েছে বেশ প্রকৃতি। নীহার বলল,
” শশী!”
” হুঁ “
” চলো নিচে, গিয়ে শুবে। এভাবে আমরা একসাথে এত রাতে আছি জানলে সকলে খারাপ ভাববে। আমরা নিজেদের ভালোবাসার জোরে এতটা কাছে এসেছি৷ কিন্তু আমাদের সম্পর্কে এখনো কোনো পবিত্রতা আসেনি শশী। যেদিন পবিত্রতা আসবে সেদিন সবটা উজার করে দিয়ে তোমাকে কাছে টানব, ভালোবাসব। ততদিন অপেক্ষা করো, আর কষ্ট সহ্য করো। আমি আছি তো তোমার সাথে পাখি। যখন মন চাইবে কল দেবে, ভিডিও কল দেবে কথা বলব৷ পাখি আমরা দূরত্ব বজায় রেখেও নিকটে থাকব একে অপরের৷ “
শশী বুক থেকে মাথা তুলে নীহারের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো বলল,
” ডাকটা ভালো লাগছে আমার “
” কোন ডাক? “
” পাখি “
নীহার হেসে ফেলল। কপালে চুমু আঁকল। বলল,
” তুই তো আমার পাখিই রে “
” এটায় ডাকবেন, ওসব ইঁচড়েপাকা টাকা বলবেন না “
” উহু, তুমি আমার ইঁচড়েপাকা পাখি। ছোট্ট পাখির ছানা। “
বলে মুচকি হেসে নাক নাক ঘষে দিল শশীর৷ আবার বলল,
” এই পাখির ছানাটাকে একবার শুধু কাছে পায়, তারপর আর উড়তে দেব না। একদম আমার বক্ষখাঁচায় বন্দি করে রাখব। “
শশী লজ্জা পেল। আবছা অর্ধচাঁদের আলোয় তা দেখল নীহার। সে-ও আলতো হাসল। আরো কিছুক্ষণ গল্প করে তারা নিচে চলে গেল।
__________
ভোর ছয়টা। সকলে উঠে পড়েছে। মালিথা ভিলার সকলে বাড়ি ফিরবে সেটারই তোড়জোড় চলছে। জিনিয়া, সীমি উঠে রান্না বান্নার কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। জাকিয়া, আজমিরা, আম্বিয়া সাহায্য করছেন। জাকির মালিথারা হানিফ সাহেবের সাথে কিছু দরকারী কথা সারছেন।
‘
শিশিরের মাত্র ঘুম ভাঙল। অনেকটা রাত জেগে ছিল দু’জন। কুয়াশার ব্যথা নিয়ে ঘুম হচ্ছিল না সেই সাথে শিশিরও ঘুমতে পারেনি। কুয়াশা ঘুমে এখনো৷ গুটিশুটি মে-রে কোলের মধ্যে ঘুমচ্ছে সে। শিশির রোজকার মতো করে কিছুক্ষণ দেখে কপালে চুমু খেয়ে কুয়াশাকে ছেড়ে উঠে পরল। এই ঘরের সাথে লাগোয়া বাথরুম আছে৷ শিশির গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। যেহেতু সময় ছিল তাই নামাজও পড়ে নিল৷ কুয়াশাকে ডাকল না। সে বাহিরে চলে গেল।
‘
সব ভাইরা উঠে গেছে। শিশির যেতেই কুয়াশার কথা জিজ্ঞেস করল সকলে৷ উত্তরে সে জানাল অনেকটা রাত ব্যথায় ককিয়েছে৷ গিয়ে আগে ডক্টর দেখাতে হবে।
তুহিন তা শুনে সাথে সাথে ওর একটা অর্থোপেডিস্টও বন্ধুকে ইনফর্ম করে দিল। তার পরিচিত একটা বন্ধু অর্থোপেডিক সার্জন অর্থাৎ মানবদেহের অস্থি বা হাড়, অস্থি সন্ধি, লিগামেন্ট এবং মাংসপেশীর বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসা দেবার কাজটি অর্থোপেডিক সার্জন করে থাকেন।
কথা বলে ফোন রাখলে তুহিন জানাল বিকেল চারটার মধ্যে যেতে বলেছে। শিশির বলল এখান থেকে গিয়ে আগে হসপিটালেই যাবে এরপর বাসায় উঠবে৷ সকলে সম্মতি দিল৷
‘
সকালের নাস্তা খেয়ে জিনিয়া কিছুতেই বেরতে দিলেন না। দুপুর পর্যন্ত আঁটকে রাখলেন৷ জানালেন খুব বেশি দূরের পথ না এত তাড়াতাড়ি করার দরকার নেই। তিনি আয়োজন করলেন দুপুরের জন্য। সকলে মানা আর করল না। এত সকালে যাওয়াটাও ভালো লাগছিল না কারো।
কুয়াশাকে হাঁটা হাঁটি করতে দিচ্ছে না কেউ। নিজের প্রয়োজন ছাড়া বিছানা থেকে নামেনি সে। ঘরেই খাওয়া দাওয়া করেছে৷ আজমিরা মেয়েকে খাইয়ে দিয়ে গেছে। স্মৃতিরা তার পাশে বসে গল্প করছিল। সকাল দশটার দিকে শিশির ঘরে এলে সকলে বেড়িয়ে গেল। শিশির বউয়ের হালচাল জিজ্ঞেস করে পাশে বসল। সেসময়ে জাকিয়া এলেন। সকাল থেকে আসার সময় হয়নি। বাহিরে বোনের সাথে একটু বেশিই ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এসে কুয়াশার হালচাল জিজ্ঞেস করলেন তিনিও। এরপর হাতে থাকা পিঠার প্লেট শিশিরের কাছে দিয়ে বললেন,
” কাল তোদের পিঠা দেয়া হয়নি৷ ভুলে গেছিলাম কুয়াশার চিন্তায়৷ এখন খেলে খাইস৷ তাল পিঠা “
শিশির শুনে প্লেট নিয়ে মা’কে বসতে বলল। জাকিয়া কাজের চাপ দেখি আর বসলেন না। এখনো অনেক কিছু গোছগাছ করতে হবে৷ শিশির একটা পাকান তুলে নিয়ে বলল,
” খাবি তুই এগুলো? “
” একটা পাকান দাও। বেশি খাব না “
শুনে শিশির একটা পাকান দিল হাতে। শিশির হেলান দিয়ে বসে কুয়াশা পাশে শিশিরের মুখোমুখি উঠে বসল। বসতে কষ্ট হচ্ছে শুয়েই বেশি থাকছে সে৷ শিশির খাচ্ছিল কুয়াশা খেতে খেতে শিশিরের দিকে তাকাল দেখল শিশিরের ঠোঁটে পাকানের তেল লেগে ঠোঁটজোড়া ভিজে উঠেছে চিকচিক করছে। হায় কী সুন্দর লাগছে তার বরটাকে! ভেবে মিটমিট করে হাসতে লাগল। শিশির প্রথমে টের না পেলেও এবার টের পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। বলল,
” আজাইরা হাসছিস কেন পাগলের মতো? “
” তোমার ঠোঁটজোড়া যা লাগছে না!! খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে “
কুয়াশার অকপটে বলা লাগামহীন কথা শোনা মাত্র-ই শিশির ভ্যাবাচ্যাকা তো খেলো-ই সাথে কাশি উঠে গেল বেচারার৷ কাশতে কাশতে শহিদ হয়ে যাবার যোগার হলো বেচারার। তার বউয়ের এমন ধারা কথা শুনে। চোখে পানি এসে গেল। এদিকে কুয়াশা হেসে কুটিকুটি হচ্ছে৷ খুঁনসুটিতে এ দু’জনকে কী যে মিষ্টি লাগে! তা যদি তারা জানত!
শিশির কিছুক্ষণ কেশে চোখ বড় বড় করে কুয়াশার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকাল। কুয়াশা যে এমন ধারার কথা বলতে পারে তার ধারনা ছিল না। অবশ্য সে ভুলে কেন যায় এটা গোবর ঠাঁসা? এর দ্বারা সব সম্ভব। কুয়াশা হেসেই চলল। শিশির তা দেখে কুয়াশার মাথায় একটা চাটি মা-রল। বলল,
” এতটা ফাজিল কবে কবে হলি তুই? “
” হয়নি, আগে থেকেই ছিলাম। তুমি বুঝতে লেট করে ফেলেছ “
” আচ্ছা তাই নাহ্?”
” হ্যাঁ “
বলে ঠোঁট টিপে হাসল। শিশির এবার নিজেও একটু দুষ্টুমি করা শুরু করল। হাতের পিঠা রেখে কুয়াশার কোমড়ের উপরিভাগে পেট বরাবর দুইহাতে দুই পাশে সাবধানে ধরে উঁচু করে নিজের কোলের উপর বসিয়ে নিল। হেলান দিয়ে বসা অবস্থাতেই আছে সে। কুয়াশা চমকে তড়িঘড়ি করে বলল,
” আরে কি করছ? কেউ এসে যাবে!”
” আসবে না৷ দরজা ভিড়ানো। আর সকলে যানে আমরা স্বামী স্ত্রী এক ঘরে আছি আসলেও নক করে আসবে “
কুয়াশা কিছু বলল না আর। সে পিঠায় কামড় দিল। শিশির তা দেখে কুয়াশার পিঠাটা কেঁড়ে নিল। বলল,
” হ্যাঁ এবার বল কী ইচ্ছের কথা যেন বললি? আমার ঠোঁট কামড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে? “
কুয়াশা শিশিরের বলা ধরণ দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। কারণ শিশিরের বলাটা কেমন আবেদনময় লাগল। শিশির তাকিয়ে থেকে এবার কুয়াশার অর্ধ খাওয়া পিঠাটা নিজের মুখের সামনে ধরে বলল,
” নেহ্ শুরু কর! পিঠা থেকে শুরু কর৷ ইচ্ছে কখনো জমিয়ে রাখতে নেই৷ ইচ্ছে করলেই তা সুযোগ পেলে পূরণ করে ফেলতে হয়৷ আমি নিজেই সেই সুযোগ করে দিলাম৷ আফটার অল আ’ম ইউর হাজব্যান্ড! বউদের সকল ইচ্ছে পূরণ করা স্বামীদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য৷ সো, সোনা কাম ফাস্ট। “
বলা শেষ করে সাথে সাথে পিঠার টুকরোটা মুখে ভরে ঠোঁট দ্বারা চেপে ধরল।
কুয়াশা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। মানে এ ছেলে সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছে? সে তো জাস্ট ফান করল! কে জানত এই বুনো ওল তার ইচ্ছের উপর মাত দেবে? হায় রে! নিজের বেকুবি কথায় নিজেই ফেঁসে গেল। সে বলল,
” আরেহ্, আমি তো জাস্ট মজা করেছি৷ ঠোঁট আবার কামড়ে খাওয়া যায় নাকি? “
পিঠা মুখে রেখেই আধো আধো ভাবে উত্তর করল শিশির,
” কেন যাবে না? সেদিন না কামড় দিলি?”
” কী নির্লজ্জ মার্কা কথা বার্তা বলো? দাও পিঠা দাও “
বলে হাত দিয়ে পিঠা নিতে গেল সে মুখ সরিয়ে নিল৷ বলল,
” উহু, তোর ইচ্ছে পূরণ না করিয়ে আমি ছাড়ছি না। শুরু কর! “
কুয়াশার এবার নিজের গালে নিজেরই চাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে। কেন যে এমন একটা কথা এই নির্লজ্জা মার্কা বুনো ওলের কাছে পেশ করতে গেল!! এখন বুঝো ঠ্যালা কেমন লাগে! শিক্ষা হয়ে গেছে আর জীবনেও বলবে না। নাক কান মলে উঠল সে। শিশির কুয়াশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার ইশারা করল। কুয়াশা বলল,
“এমন খেতে পারব না আমি “
” খেতে হবে তোর!”
পুরো অধিকারমূলক কথা তার। কুয়াশা উপায় না পেয়ে মাথা এগিয়ে ঝুঁকে শিশিরের ঠোঁট দিয়ে ধরে রাখা পাকানে এক কামড় দিল৷ শিউরে উঠল শরীর। অনুভূতিরা প্রজাপতির ন্যায় উড়ছে৷ শিশির মিটমিট করে হাসছে। এই গোবর ঠাঁসাকে আজ শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে। পাকনামি বের করবে আজ। দু’জন দু’জনের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টিতে অবলোকন করছে। কুয়াশা মুখের টুকু চিবিয়ে খেয়ে আবার পূনরায় কামড় দিল পিঠায়৷ শিশির ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” পিঁপড়ার মতো খাচ্ছিস কেন? জোরে খা!”
কুয়াশা কয়েক কামড় খেয়ে এবার শেষ কামড় আছে কারণ পিঠা ফুরিয়ে গেছে৷ তাকে থেমে যেতে দেখে শিশির বলল,
” হা করে কি দেখছিস? এই টুকু আমি খাইয়ে দেব? “
কুয়াশা তড়িঘড়ি করে দুই পাশে বার কয়েক মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর করল,
” না না আমিই খাচ্ছি “
শিশিরের ভেতরে দম ফাটা হাসি আসছে। জব্দ যাহ্ করতে পারছে নাহ্! ভেবেই আনন্দ লাগছে তার। কুয়াশা শেষ কামড়টা নিতে গিয়ে একদম ঠোঁটের কাছে গিয়ে থামল। একবার শিশিরের ঠোঁটের দিকে তাকাল তো একবার চোখের দিকে। নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে। শিশির হাসছে। কুয়াশা শিশিরের ঠোঁট সাথে ঠোঁট দিয়ে পিঠার টুকরো টা কেঁড়ে নিল নিজের মুখের মাঝে কিন্তু মুখ না উঠিয়ে জোরে সোরে একটা কামড় দিল শিশিরের ঠোঁটে। আজ কামড়টা উপরিভাগে দিল না। কামড় দিয়ে ভেবেছিল মুখ তুলে নেবে কিন্তু তার চালাকিতে মাত দেবার জন্য তো স্বয়ং বুনো ওল আছেই? সে কি কম যায়? এরা কেউ কারো থেকে কম না৷ তাই কুয়াশা যখনই কামড় দিয়ে উঠে আসতে নিল ঠিক তখনই শিশির কুয়াশার মাথার পেছনে খপ করে পেড়ে ধরল। এরপর কুয়াশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে একটা গভীর, গাঢ় চুমু খেল। খেয়ে তৎক্ষনাৎ একটা জোরে সোরে কামড় বসিয়ে দিল৷ কামড়টা সে দিল একদম পারফেক্ট জায়গায় যেটা ঠোঁটের ভেতরের অংশ যা বাহির থেকে বোঝা যাবে না৷
কুয়াশা গুঙিয়ে উঠল। কেটে গেল বোধহয়। ছেড়ে দিল কুয়াশাকে। মুখ উঠিয়ে দুই ঠোঁট দ্বারা তেল মুছতে মুছতে মিটমিট কারে হাসল। এরপর নিজের দুই হাত থেকে ধুলো ঝাড়ার মতো করে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
” আইছে, আমার সাথে পাঙ্গা নিতে “
কুয়াশা নিজের মুখের মধ্যেকার পাকান টুকু চিবিয়ে খেতে খেতে বলল,
” ওরে আমার বাহাদুর রেহ্! ”
” দেখিয়েই তো দিলাম আমার বাহাদুরি! “
” হাহ্ “
বলে মুখ ঝামটিয়ে কুয়াশা গাল ফুলিয়ে বসে থাকল৷ শিশির হাসল তা দেখে। কুয়াশাকে টেনে বুকের উপর ফেলল। বলল,
” তা ডাবল মিষ্টিতে টেস্ট কেমন পেলি পিঠায়? “
তা শুনে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কী নির্লজ্জ মার্কা লোক গো তুমি? “
শিশির এবার জোরে জোরে হেসে দিল। কুয়াশা শিশিরের ডান পাশে বুকে মাথা রেখে বাম মুখো মুখ করে দুই হাতে শিশির কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে রাখল আর মিটমিট করে সে-ও হাসতে লাগল৷
_________
দুপুর একটা। খাওয়া দাওয়া করে প্রায় রেডি হয়ে গেছে সকলে৷ সেদিনের গাড়ি দুটোকে তুষার কল করে আবার আনিয়েছে সকালের দিকে।
‘
এদিকে মিহির ঈশাকে নিয়ে পুকুর পাড়ে এসেছে। ঈশা কিছুটা বিরক্ত। এখন সকলে চলে যাবে এই সময় এমন টেনে আনার মানে আছে? যা বলার ফোনেও তো বলা যেত? বলল,
” সকলে বের হয়ে গেছে, খুঁজবে আমাকে যা বলার জলদি বলো”
” এ্যাই ধানিলঙ্কা! তোর এত দেমাগ কেন রে? অনুভূতি বুঝিস না? আজ এতদিন ধরে বলে যাচ্ছি পাত্তায় দিচ্ছিস না। সমস্যা কী তোর? “
” তুমি জানো না? আমাদের এ্যজ ডিফারেন্স মাত্র ওয়ান ইয়ার। এত কম এ্যজ ডিফারেন্সে সম্পর্কের ভবিষ্যত কী হবে? তোমার সেটেল্ড হতে হতে আমার অন্য ঘরে সংসার করার বয়স হয়ে যাবে “
” মানুষ সেম ইয়ারে রিলেশন করে না?”
” করে কিন্তু সেসব আমার কাছে ভিত্তিহীন লাগে। বিয়ে করে বউ খাওয়াতে পারে না আর পারলেও বাপের টাকায় নয়তো সেটেল্ড হয়ে বিয়ে করতে করতে বয়স হয়ে যায়। তোমার কী মনে হয় আমার বাবা এত দিন বিয়ে না দিয়ে আমাকে রেখে দেবে? বুবুকে রাখার কারণ ফুপুর জন্য। আমাকে এতদিন রাখবে না বলেছে”
” একটা সুযোগ তো দিতে পারিস নাকি? আমার জন্য একটু সেক্রিফাইজ করতে পারবি না রে ধানিলঙ্কা?”
এমন ভাবে বলল মিহির ঈশার মায়া হলো অনেক৷ তাছাড়া এতদিন কথা বলতে বলতে সুপ্ত একটা অনুভূতিও কাজ করে কিন্তু সেটাকে দমিয়ে রেখেছে ঈশা৷ সে আবার বলল,
” তোর বিয়ে দিতে চাইলে বলবি, তুই অনার্স কমপ্লিট করে বিয়ে করতে চাস। ততদিনে আমি একটা কিছু করে ফেলতে পারব ইনশাআল্লাহ। বিএসসি টা করেই বিসিএস দেবার চেষ্টা করব। ততদিন একটু অপেক্ষা করে নে না! প্রয়োজনের দু এক বছর পর বাড়িতে জানিয়ে দেব আমি। তোদের বাড়িতেও কথা বলাব৷ শুধু শশীর বিয়েটা হয়ে গেলে সব করতে পারব৷ বোন পাড় না করে কিছু বলতে পারব না বাড়িতে! একটা সুযোগ দে ধানিলঙ্কা! “
ঈশা গভীর নজরে চেয়ে রইল মিহিরের দিকে। মিহির আবার বলল,
” সত্যি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি। আগে অনেক মেয়ের সাথে কথা বলতাম এখন সেটাও বলি না। বিলিভ মি! “
ঈশা এবার মিহিরের কাছে এগিয়ে গেল৷ এরপর মেকি রাগ নিয়ে মিহিরের টিশার্টের কলারের সামনে বাম হাতে মুঠো পাকিয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে ডান হাতের তর্জনী তুলে শাসানি ভঙ্গিতে বলল,
” এরপর থেকে আর কারো সাথে কথা বললে খু–ন করে রেখে যাব বলে দিলাম!”
বলা শেষ করে মিহিরের পাতলা চিকন শশীরটা ধাক্কা দিল। মিহির হাসল। ঈশা বলেই হাঁটা ধরল। মিহির হাসতে হাসতে বলল,
” এ্যাই ধানিলঙ্কা..! ভালোবাসি রে “
ঈশা শুনেও না শোনার মতো করে নিঃশব্দে হাসতে হাসতে চলে গেল।
‘
সকলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। কুয়াশা আস্তে আস্তে বৃষ্টিদের সাথে এগিয়ে গেল। নীহার শশীর সাথে কথা বলছে। সকলে এ নিয়ে কিছু বলেনি। বিদায় বেলায় একটু কথা বলে নিক। তারা এখনো বাড়ির মধ্যে। শিশির গাড়ির কাছে এসে তুষারকে বলল,
” ভাইয়া এক ঘন্টার বেশি রাস্তা কুয়াশা বসে থাকতে পারবে এতক্ষণ? “
” বুঝছি না৷ এছাড়া কোনো উপায়ও নেই একটু কষ্ট করে যেতেই হবে “
শিশির আর কিছু বলল না৷ সকলে সকলের থেকে বিদায় নিল। আজমিরা, আম্বিয়া জিনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলেন। জাকির মালিথারা হানিফ সাহেবের কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিলেন। সৌরজ, সিমী, মিহিরের থেকে সকলে বিদায় নিল৷ এরই মাঝে শশী কান্না মুখ করে নীহারের সাথে বেরিয়ে এলো। শশী আসতেই আম্বিয়া, আজমিরা, জাকিয়া, কুয়াশারা সকলে জড়িয়ে ধরে ধরে সান্ত্বনা দিল৷ এ-ও বলল খুব জলদি নিয়ে যাবে তাদের কাছে। শশী এবার আর নিজেকে দমাল না কেঁদে দিল ঝরঝর করে বৃষ্টিদের জড়িয়ে ধরে। বৃষ্টিরা মুচকি হেসে সান্ত্বনা দিল। নীহারের মন ভার। সে কিছু বলল না। এরপর সকলে একে একে গাড়িতে উঠে বসল। নীহার শশীর দিকে তাকিয়ে মলিন মুখে মুচকি হাসির রেখা টেনে গাড়িতে উঠে পড়ল। আর দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না৷ অনুভূতিরা বিষাদময় হয়ে উঠেছে। অন্তর জ্বলে যাচ্ছে। ভালোবাসার প্রিয় মানুষের থেকে দূরে থাকা যে কতটা কঠিন যারা থাকে তারাই একমাত্র এর জ্বালা বুঝে।
শিশির আজ কুয়াশার পাশে বসল। বৃষ্টি শ্বশুরদের গাড়িতে উঠল। আজ আর ঠাসাঠাসি করে বসতে ইচ্ছে করল না৷ সকলে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল। সকলে গাড়ির ভেতর থেকে বিদায় নিল আরো একবার। এ যাত্রাটা সকলের জন্য কষ্টের মনে হচ্ছে। দুইদিন থেকে অনেক স্মৃতি তৈরি হয়ে গেছে। রিজভী মিহির, সৌরজকে আরো একবার বলল। তারপর চলে গেল গাড়ি তার গন্তব্যে আপন গতিতে। রেখে গেল গাড়ির মধ্যে থাকা এক একটা মানুষের এই গ্রামের প্রকৃতিতে নানান রকম ভালোলাগা ছোট বড় অনুভূতি ও স্মৃতি। আবার সুযোগ হলে আল্লাহ চাইলে দেখা হবে এই অপূর্ব গ্রামটাকে। শশী টলমল চোখে চেয়ে রইল যতদূর দেখা গেল৷ নীহার গাড়ির ভেতর থেকে মুখ বের করে তাকিয়ে ছিল। গাড়ি অদৃশ্য হতেই শশী আর দাঁড়াল না। তার ছোট্ট হৃদয়টা বড্ড পাগলামি করছে। কষ্ট হচ্ছে অনেক।
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click