®রোজা রহমান
‘
ধরিত্রীতে সন্ধ্যা নেমে গেছে। চারিদেকে আজানের ধ্বনিতে মুখরিত। শিশির কুয়াশাকে নিয়ে কুষ্টিয়ার পুপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ এর লিফট থেকে বেরিয়ে নেমে বাহিরে এলো। সাথে নীহার, তুষার, তুহিন আছে। বাকিরা বাড়িতে চলে গেছে।
নীহার গিয়ে দু’টো সিএনজি ডাকল। একটাতে শিশির কুয়াশা উঠল শুধু, অন্যটাতে ওরা তিন ভাই।
কুয়াশাকে নিয়ে তারা তিনটার দিকে হসপিটালে আসে এরপর ডক্টরকে দেখালে কোমড় এক্স-রে সহ এমআরআই করতে দেয়। সে-সব করে ডক্টরের সাথে কথা বলে সকল ফর্মালিটি পূরণ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
কুয়াশা মেরুদণ্ডের কোমড়ের হাড়ে আঘাত পেয়েছে সাথে মাংসপেশির উপরিভাগে আঘাতটা পাশে থাকা শানের সাথে আঘাত পায় এর কারণে মাংস সহ হাড়ে আঘাত লাগে এছাড়া উপর থেকে নিচে শক্ত মাটিতে পড়ার কারণে মেরুদণ্ডের কোমড়ের হাড়ে ভালোমতোই আঘাতটা লেগেছে। শুধু মাংসে লাগলে এতটা সমস্যা হতো না যেহেতু মেরুদণ্ডের হাড়ে লেগেছে এজন্য ব্যথাটা মারাত্মক রূপ নিয়েছ। হাঁটা সহ বসাতেও সমস্যা করছে। হাড়ের ব্যথা সব থেকে বেশি যন্ত্রণাদায়ক। কুয়াশাকে টোটালি তিন সপ্তাহ বেড রেস্টে থাকতে বলা হয়েছে। সেখানে দুই সপ্তাহ তো মাস্ট থাকতেই হবে। প্রয়োজন ছাড়া হাঁটাহাঁটি করা যাবে না। এছাড়া বাড়িতে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসাও নিতে বলেছে৷ সেটা গরম পানি ঢালা বা গরম পানির সেঁক দেয়া৷
উপরক্ত কথাগুলোই সিএনজির মধ্যে শিশির কুয়াশাকে বলতে বলতে বাড়ি ফিরছে। কুয়াশা মুখ বুজে গিলছে৷ বসতে সমস্যা হচ্ছে বলে এক পাশ করে শিশিরের বুকে হেলান দিয়ে আছে। শিশির বকবক করছে। একসময় কুয়াশা বলে উঠল,
” একটা ইন্টারেস্টিং কথা শুনবা? “
শিশির বেজায় বিরক্ত হলো৷ সে বলছে গুরুত্বপূর্ণ কথা আর ফাজিল গোবর ঠাঁসাটা আছে ইন্টারেস্টিং কথা নিয়ে? এতক্ষণ সে যে বকবকগুলো করল সেগুলো কি আদৌ শুনেছে এ? ধমকে বলল,
” এ্যাই…! তোকে যে আমি এতগুলো ইম্পরট্যান্ট কথা বলছিলাম শুনেছিস একটাও? “
কুয়াশা চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
” শুনেছি, রাখো তো ওসব৷ বাড়ি গিয়ে শুনব আবার “
শিশিরের মনটা চাইল গোবর ঠাঁসাটাকে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে৷ বিরক্ত নিয়ে চুপ করে রইল। কুয়াশা আবছা আলোয় শিশিরের মুখটা দেখার চেষ্টা করল মাথা তুলে। গাড়ির ভেতর তারা দু’জনই শুধু৷ সামনে ড্রাইভার। শিশির সামনে তাকিয়ে আছে। কুয়াশা বলল,
” হসপিটালে একটা নার্স কী বলছিল শুনবে? “
শিশির প্রত্যুত্তর করল না। কিন্তু সামনে তাকিয়ে কুয়াশার বলতে চাওয়া কথাটা শোনার জন্য কান পেতে রাখল৷ কুয়াশা বুঝে উঠে বলল,
” আমি বসে ছিলাম তোমরা ছিলে না কেউ তখন। একটা নার্স এসে বলল, আপা আপনি একা বসে আছেন কেউ নেই সাথে? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে তো আমার ভাইয়ারা আছে। মেয়েটা বলল, ও তো কোথায় গেছেন উনারা? আমি উত্তরে বললাম, ডক্টরের সাথে কথা বলছে৷ মেয়েটা খুব চালাক ছিল বুঝেছ মেয়েটা তোমাদের দেখেছেও বুঝেছেও আমি একা নই তোমরা ছিলে। কিন্তু মেয়েটা মেবি ক্রাশ খেয়েছিল। তবে কার উপর বুঝি নি। তো মেয়েটা আমার সাথে কিছুক্ষণ খোঁস গল্প করে সব ভাই কী করে না করে জিজ্ঞেস করতে লাগল৷ এও জিজ্ঞেস করল সকলে সিঙ্গেল কিনা৷ আমি তো তখনি বুঝে গেলাম ঘাপলা আছে মেয়েটার মনে। এরপর তোমরা বেড়িয়ে অন্য সাইটে গেলে না? তখন সে আবার তাকিয়ে দেখে তোমার কথা বলল আপা আপনি একটা মাত্র মেয়ে সব ভাই কইটা কী সুন্দর যত্ন নেয় আপনার। আপনি খুব লাকি ইত্যাদি, ইত্যাদি। উত্তরে মাথা নাড়িয়ে হুঁ বললাম শুধু। ওমা পরক্ষুণে মেয়েটা তোমাকে দেখিয়ে বলে আপা আপনার ঐ ভাইটা কী সিঙ্গেল নাকি মিঙ্গেল? আমি শোনা মাত্র চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম। মেয়েটা বোধহয় ভয় পেয়েছিল৷ যায়হোক আমি কী উত্তর দিছি যানো? “
শিশির এতক্ষণ বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনছিল কুয়াশার ইন্টারেস্টিং গল্পটা৷ প্রশ্ন পেয়ে বুকের দিকে কুয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি? “
কুয়াশা উত্তর পেয়ে বেশ খুশি হলো বুঝল শিশির আগ্রহ নিয়ে শুনছে গল্পটা। তাই সে-ও আবার বলা শুরু করল,
” আমি বললাম, সেটা যেনে কী করবেন? মেয়েটা বলল, জানতে চাইলাম আরকি। আমি বললাম, ছেলেটা খুব বাজে বুঝলেন! আমাকে শুধু মা-রে আর প্রচুর ঝগড়াইট্টা মাইয়াগো মতো ঝগড়া করে শুধু৷ জীবন আমার তেজপাতা করে দিল। এটার জন্য জীবন আমার ফাটা বাঁশের চিপকায় চিপকাইয়া যাবার মতো হয়েছে৷ আফসোস আমার জীবনের প্রতি। ঐ বুনো ওল আই মিন ওটার থুক্কু ঐ ছেলেটার সাথে আমাকে ধরে বেঁধে চিপকায় দেয়া হয়েছে আই মিন বিয়ে দেয়া হয়েছে। ঐ তিনটা আমার ভাই হলেও ঐ ব্ল্যাক শার্ট পরা অতি সুদর্শন ছেলেটা না? ওটা আমার স্বামী। এখন বলেন সিঙ্গেল নাকি মিঙ্গেল? সব শুনে মেয়েটার মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল বুঝলে! কিন্তু আমি বুঝলাম না মেয়েটা ফাটা বেলুনের মতো ওমন চুপসে কেন গেল? আর তৎক্ষনাৎ উঠেই বা গেল কেন? কী সুন্দর কথা বলছিল আমার বেশ ভালোই লাগছিল। একা একা বোর ফিল করছিলাম। আচ্ছা যায়হোক সে ওমন এক্সপ্রেশন কেন দিল গো বলতে পারবা? “
শিশির এতক্ষণ ভ্রু ম্রু কুঁচকে কুয়াশার গল্প শুনছিল কিন্তু শেষ কথাগুলো শুনে কুয়াশার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে জোরে জোরে হেসে ফেলল। কিছুক্ষণ হেসে নিয়ে কুয়াশার দিকে তাকাল৷ কুয়াশাও মিটমিট করে হাসছে। সে বলল,
” তুই এত দুষ্টু কেন রে আহ্লাদী বউ?”
বলে কুয়াশার ডান গালে আলত কামড় বসিয়ে দিল। এরপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” কারণ তোর ব্ল্যাক শার্ট পরা অতি সুদর্শন স্বামীর উপর ক্রাশ খেয়েছে মেয়েটা বুঝলি? তোর স্বামীর পাওয়ার কী দেখেছিস? ”
বলে কুয়াশা সেই কানের লতিতে ছোট্ট কামড় দিল। আবার বলল,
” তবে বেচারিকে এভাবে ছ্যাঁকা না দিলেও পারতি। অন্যভাবে বলতি। ডোজটা গভীর হয়ে গেছে। “
” ঠিক করেছি। হুহ্ আইছে আমার স্বামীর উপর নজর দিতে। মেজাজ তো আমার তখনি চড়ে গেছিল তোমার কথা জিজ্ঞেস করাতে। মনডা চাইছিল চোখ দুটো তুইল্লা নিয়া মার্বেল খেলি। কতত বড় সাহস আমার স্বামীর উপর ক্রাশ খেয়ে আবার আমার কাছেই আসে!”
শিশির আবার হাসল৷
” তো বুঝে শুনে ডোজটা দিয়েছিস? “
” হ্যাঁ, কী ভাবো আমায়? আমি বোকা? “
” না তো, তুই গোবর ঠাঁসা “
কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল। শিশিরের কাঁধ বরাবর বাহুর উপর দাঁত বসিয়ে দিয়ে কামড় দিল৷ জোরে আর দেয় নি। স্বাভাবিক মতোই দিল। শিশির হাসল। বলল,
” তবে এতটাও ঠিক না। একটা মেয়ের ভালো লাগতেই পারে। এতে এত হিংসাত্মক হবার কিছু নেই। সে পছন্দ করলেই কী তোর স্বামী করছে? নাকি চলে যাচ্ছে? আর তোরও বলার ভুল প্রথমে ছিল। তুই ভাইয়ারা বলেছিলি। ফাজিল আমাকেও ভাইয়া বানিয়ে দিয়েছিলি! “
কুয়াশা দাঁত বের করে হি হি করে হাসল৷,
” ভাইয়া-ই তো তুমি। এখন না হয় ভাইয়া থেকে সাইয়া হয়েছ! “
শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলল কথাটা। শিশির চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইল। কুয়াশা এবার টুপ করে শিশিরের গালে চুমু খেল। শিশির সামনে তাকিয়ে দেখল ড্রাইভার দেখল কিনা। কারণ সে কামড় দেবার সময় অন্ধকারে দিয়েছিল। কিন্তু এখন আলোকিত। শিশির কুয়াশার দিকে তাকিয়ে মেকি রাগ নিয়ে বলল,
” ফাজিল হচ্ছিস দিন দিন। চল আগে বাড়ি যেয়ে নিই। এরপর কত চুমু দিতে পারিস দেখব “
কুয়াশা পাত্তা দিল না৷ বুকের সাথে লেপ্টে রইল। কিছুক্ষণের মাঝে ওরা পৌঁছেও গেল৷ গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির মধ্যে গেল। সকলে শিশিরদের অপেক্ষাতেই ছিল। ওরা আসতেই সকলে কুয়াশার অবস্থা জিজ্ঞেস করল৷ শিশির সবটা বলল। জাকিয়া শুনে বললেন,
” সিঁড়ি ভেঙে বারবার উঠা নামা করবি না। আজ উঠবি এরপর আর নামবি না। সব উপরেই করবি। মেনে চললে জলদি সেরে যাবে”
কুয়াশা সম্মতি দিল। বলল,
” আর বসতে পারছি না আম্মু, ঘরে যাব আমি “
সকলে সম্মতি দিলে সে চলে গেল। সিঁড়ির কাছে যেতেই শিশির অতি সাবধানে কোলে তুলে নিল। কুয়াশা চিল্লিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাল। পিছনে দেখল সব ওদের দিকেই চেয়ে আছে। কোলে করে নিয়ে যাবার বুদ্ধি জাকিয়া দিয়েছেন। এতগুলো সিঁড়ি ভেঙে উপরে গেলে ব্যথা বাড়বে বয় কমবে না।
শিশির গা ছাড়া ভাব নিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠছে। কুয়াশা বলল,
” এসব কী ধরণের ফাজলামি? ছিঃহ্ বাড়ির লোক কী ভাবছে? লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার “
” তো মরে যাহ্ ”
কুয়াশা চোখ বড় বড় করে আবার তাকাল। সে আবার বলল,
” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, তোকে কোলে নেবার কথা তোর শাশুড়ীই আমাকে বলেছে। নয়তো তোর মতো গোবর ঠাঁসা আলুর বস্তাকে নিয়ে এতগুলো সিঁড়ি ভেঙে ওঠার কোনো ইচ্ছে ছিল না আমার”
কুয়াশা বেজায় রাগল। কয়েকটা চ-ড় থা-প্পড়, কি-ল, ঘু-ষিও দিল। শিশির হেসে ঘরে গিয়ে বসিয়ে দিল। বলল,
” শুয়ে থাক। অকারণে বসে থাকিস না। ”
কুয়াশা শুনে বোরকা খুলে বিছানার উপর রেখেই শুয়ে পড়ল। শিশির কুয়াশার বোরকা তুলে নিয়ে কর্ণার আলনার উপর রেখে নিজেও চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে এলো। এসে বলল,
” ফ্রেশ হবি না? “
” একটু পর যাচ্ছি, ব্যথা করছে বসে থাকতে থাকতে “
শিশির কিছু বলল না। ঘর ছেড়ে চলে গেল।
‘
এদিকে নীহার এসে নিচে আর বেশিক্ষণ থাকল না৷ তার ভেতরে ঝড় শুরু হয়েছে। সেই ঝড় আগে থামাবে এরপর কথা। সে নিজের ঘরে জলদি গিয়ে চেঞ্জ টেঞ্জ না করেই আগে শশীকে সরাসরি ভিডিও কল দিল। শশী বোধহয় নীহারের কলের অপেক্ষাতেই ছিল। কিছু সেকেন্ড না পেরুতেই রিসিভ হলো। সাথে সাথে নীহার তার ইঁচড়েপাকা পাখির মুখটা দেখতে পেল আর ভেতরের সব ঠান্ডা হয়ে গেল। এতক্ষণ প্রলয় হচ্ছিল তা নিমেষে থেমে গেল৷
কিছুক্ষণ দেখল শশীকে। চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। দেখেই মুচকি হাসল৷ কী পাগলী মেয়েটা ভাবা যায়! এই বয়সে একে তো প্রেম করেছে তারউপর আবার এঙ্গেজও করেছে এখন আবার বরের বাড়ি আসার জন্য নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে। ভেবেই আবার হাসল। মেয়েটা বাচ্চা কিন্তু আবেগুলো খাঁটি। ভালোবাসা কতটা গভীর হলে এই সদ্য সতের বছরের মেয়ে এমন করতে পারে? ভাবতেই প্রশান্তিতে অন্তর, কায়াতে ছেয়ে গেল।
দু’জনেই দু’জনকে আগে কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে নীহার বলল,
” কেঁদেছ কেন এত? “
” কষ্ট হচ্ছে আমার “
নীহার কী বলবে? বুঝল না। তারও তো একই অবস্থা! সে এসব কথা রেখে বলল,
” খাওয়া দাওয়া করেছ? “
” কারেন্ট নেই, আসলে খাব। আপনি খেয়েছেন? “
” না মাত্রই বাড়িতে এলাম৷ তোমাদের ওখান থেকে কুয়াশাকে নিয়ে হসপিটালে গেছিলাম। একটু আগে আসলাম। না চেঞ্জ করেছি আর না ফ্রেশ হয়েছি “
কথাটা বলে নীহার নিজেও একটু অপ্রস্তত হলো। মেয়েটা এমনি কষ্ট পাচ্ছে তারউপর এমন কথা বলাটা ঠিক হলো না। সে-ও কী শশীর মতো আবেগে বাচ্চা হয়ে গেল? কথার খেই হারিয়ে ফেলছে কেন? কী সব পাগলামো করছে! নিজেকে সামলে নিল। কিন্তু ওদিকে ফোনের ওপাশে যা হবার তা হয়েই গেল। শশী নীহারের কথাটা শোনা মাত্রই কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ঝরঝর করে কেঁদে দিল আবার। নীহারের এবার নিজের গালে নিজেরই থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে। একেতো একটা বাচ্চার প্রেমে পড়ে জীবন তার ত্যানা ত্যানা তারউপর এখন আবেগে সে নিজেও হাবুডুবু খাচ্ছে।
তড়িঘড়ি করে শশীকে থামাতে লাগল। কিছুক্ষণ মিষ্টি মধু বাণী দিয়ে যখন কাজ হলো না তখন ধমক দিল। শশী ধমক খেয়ে থামল। নীহার নরম স্বরে বলল,
“এ্যাই পাখি কেঁদো না আর। আমরা এই দেখো এক সাথে আছি! আর এমন আবেগী হয়ে যদি পড়াশুনোর ক্ষতি করো তো বিয়ে কিন্তু ক্যান্সেল! সো পড়াশুনোয় মন দাও। কারেন্ট আসলে খেয়ে পড়তে বসবা ঠিক আছে? “
” হুঁ, কুয়াশা বুবুকে কী বলেছে ডক্টর? “
নীহার সবটা বলল। এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে নিজেদের মন শান্ত করে ফোন রাখল। ফোন রেখে নীহার ঢাস করে শুয়ে পড়ল। চোখ বুঝল৷ গত দুইদিন শশীর সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো চোখের সামনে একে একে ভেসে উঠতে লাগল।
ভালোবাসা বড়ই অদ্ভুত জিনিস। তার রঙ যে কেমন কেউ বলতে পারবে না৷ এক একটা মানুষের কাছে ভালোবাসার রঙের বর্ণনা এক এক রকম। সেই রঙ কখনো হাসি, খুশি, আনন্দ, সুখ দেয় তো কখনো ক্ষুদ্ধ রূপ নেই আবার কখনো বিষাদময় হয়। বিষাদময় রঙটা হয় কঠিন, গাঢ় ভারী যেটা হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়। কিন্তু নীহার আর শশীর ভালোবাসার রঙ এখনো আনন্দের তারা পূর্নতা পেতে চলেছে। তাদের ভালোবাসার একটা নাম হয়েছে। কথাটা হঠাৎই চোখ বুঁজে পড়ে থাকা নীহারের মস্তিষ্কে এসে হানা দিল। তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে তাকাল। বাম হাতের অনামিকা আঙুলে নজর দিল। সেখানে রূপোর সাথে পাথরের কাজ করা অসম্ভব সুন্দর একটা আঙটি শোভা পাচ্ছে। আঙুলে একটা চুমু দিল, গন্ধ নিল এখানে শশীর ছোয়া সহ গন্ধ আছে মনে হলো তার কাছে। পরক্ষণেই নিজের করা কাজে নিজেই অবাক হয়ে গেল। তার করা পাগলামির কথা ভেবে হেসে ফেলল শব্দ করে। হেসে উপর হয়ে শুয়ে বালিশ আঁকড়ে ধরল। চোখ বন্ধ করে আওড়াল,
” নীহার তুই তো একদম গেছিস! পাগল হয়ে গেছিস তুই। একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়ে তুই পাগল হয়ে গেছিস৷ ঐ ইঁচড়েপাকা বাচ্চা মেয়েটা তোকে ভালোবাসার অথৈ, অতল সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে আর ওঠার ক্ষমতা নেই তোর। এখন সারাজীবন তোর হাবুডুবু খেতে হবে আর সাঁতার কাঁটতে হবে। ডুবেডুবে বাঁচতে হবে তোর ভালোবাসা নামক ঐ অথৈ সাগরে “
_________
পরেরদিন কাক ডাকা ভোর। শিশির গত রাতেও কুয়াশাকে সেঁক দেয়া থেকে শুরু করে পেইন রিলিভার দিয়ে ম্যাসাজ করে দিয়েছে অনেকটা সময় নিয়ে। কুয়াশার ব্যথায় টনটন করছিল জায়গাটা। কোমড়ের ব্যথার জন্য দু’টো পাও ব্যথা হয়ে উঠেছে ভাবে লাগছে তার। পুরো অস্থিমজ্জায় ব্যথায় ছেয়ে গেছে। কী নিদারুণ কষ্ট, যন্ত্রণায় ভুগতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে দিন দিন ব্যথা বাড়ছে। কিন্তু বেশি কিছু বলতে পারছে না শিশিরের ভয়ে। এছাড়া আজমিরাও বেশ বকাবকি করে করে যাচ্ছেন। মেয়েটার হয়েছে যত জ্বালা। একটা ভুলের জন্য বকা শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল। গত রাতেও অনেকটা রাত কাতরিয়েছে সে। সব রোগ তো আর একদিনে যায় না! রোগ মানেই ভোগান্তি। ভুগতে তো হবেই একটু!
শিশিরের ঘুম ভাঙল। কুয়াশা ঘুমে। চোখ খুলেই ঘুমন্ত কুয়াশাকে দেখতে পেল৷ তারই বুকের কাছে গুটিশুটি মে-রে ঘুমচ্ছে। কিছুক্ষণ দেখে কুয়াশার গলার মাঝে মুখ ডুবিয়ে গাঢ় একটা চুমু দিল। নড়েচড়ে উঠল কুয়াশা। হাসল তা দেখে৷ উঠে পড়ল সে।
‘
সকাল আটটা। নিচে কুয়াশা বাদে সকলে খাবার খাচ্ছে। বৃষ্টি কনসিভ করার পর থেকে সকালেই খেয়ে নেয়। ঘণঘণ খিদে পায় তার কিন্তু অল্প খেতে পারে। এই জন্য শাশুড়ী ঘণঘণ খেতে বলেছে৷ বৃষ্টির দিকে জাকিয়া খুবই যত্নশীল। এছাড়া আজমিরা অনেক যত্ন নেন বৃষ্টির। সিঁড়ি ভেঙে বেশি ওঠা নামা করতে দেন না। আম্বিয়া স্কুলে থাকে বেশি কিছু করতে পারেন না। তবে এসে ফ্রিলি অনেক পরামর্শ দেন তিনি। প্রথম প্রেগন্যান্সিতে সব মেয়েরাই অজান্তা থাকে। সেগুলোই তিনি সুন্দর করে বুঝিয়ে দেন। কীভাবে চলতে হবে না হবে সব বলেন কাছে বসিয়ে। আম্বিয়া মানুষটা ব্যবহার অমায়িক কিন্তু একটু ইন্টোভার্ট স্বভাবের। তবে খুব বেশি না।
এই বাড়িতে জা’য়েদের মিল ভাইয়েদের মেল বন্ধন ধরে রাখার একমাত্র কৃতিত্ব জাকিয়ার। তিনি সর্বপ্রথম এ বাড়িতে এসে এই বাড়ির প্রতিটি মানুষকে নিজে হাতে গড়েছেন, বেঁধেছেন৷ দুই জা যখন বিয়ের পর এসেছিলেন তিনি নিজে সব বুঝাতেন। সংসারে সকলের সাথে মিলেমিশে থাকার উপদেশ দিতেন এছাড়া তিনি নিজেও অমায়িক ব্যবহার করতেন৷ যা আম্বিয়া, আজমিরা কেউই উপেক্ষা করতে পারেন নি৷ আসলে কথায় বলে না? বড়দের দেখেই ছোটরা শেখে! আর সেই জিনিসটায় এই বাড়িতে ঘটেছে৷ জাকিয়া বড় জা তার থেকে বাকি দুটো শিখেছে। তিনিই বাড়ির প্রতিটি কোণা, দেয়াল, সদস্য নিজের মতো করে বেঁধে রেখেছেন। কখনো জা’য়েদের সাথে হিংসা বিবাদ করেননি, কাউকে করার সুযোগও দেননি৷ এভাবেই বছরের পর বছর চলতে চলতে এখন এত ভালো মেলবন্ধনটা এই বাড়ির অভ্যাস হয়ে গেছে।
‘
জাহিদ মালিথা আজ চলে গেলেন৷ সকলে সকলের গন্তব্যে গেলেন। শিশির খেয়ে উপরে এলো। সে ক্যাম্পাসে যাবে। শনিবার থেকে পরীক্ষা তার৷ উপরে এসে দেখল আজমিরা খাওয়াচ্ছেন একমাত্র মেয়েকে। মেয়েটা অসুস্থ হলে এ ভাবেই তিনি মেয়ের যত্ন নেন আবার বকেন। মায়েদের মন কিনা! শিশির এসে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আজমিরার উদ্দেশ্যে বলল,
” ছোট আম্মু, তোমার মেয়ে যেন তিড়িং বিড়িং না করে বেড়ায়। আর নিচে যেন না যায়৷ প্রয়োজন ছাড়া নিচে নামতে দেবে না। ঘরেই যেন থাকে৷ ঔষধ গুলো ঠিকমতো খাইয়ে দিয়ো আর দুপুরে গরম পানির সেঁক সহ পেইন রিলিভার দিয়ো। আমার আসতে লেট হবে আজ৷ রাতও হতে পারে। “
বলে এবার কুয়াশার উদ্দেশ্যে বলল,
” যেগুলো বললাম একটাও এদিক ওদিক করবি তো না ভাঙা কোমর আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে ভাঙব “
বলে চলে যেতে যতে দু’জনেরই উদ্দেশ্যে বলে গেল৷ দাঁড়াল না আর। আজমিরা মিটমিট করে হাসছেন। আর কুয়াশা কাঁদো কাঁদো হয়ে বসে রইল৷ মানে সারাদিন এভাবে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে? এটা কী ভালো লাগে? বলল,
” হেসো না তো। ঐ বুনো ওলটার সাথে বিয়ে দিয়ে জীবন আমার তেজপাতা করে দিয়েছ। অন্য ছেলের সাথে বিয়ে হলে এত শাসন শুনতে হতো না। “
আজমিরা ধমকে বললেন,
” এ্যাই.. কথা ঠিক কর, স্বামী সে তোর! শাসন করার সে-ই করবে। ভালোবাসার মতো বাসবে শাসনও করবে৷ এটাই স্বামীদের অধিকার। বেশি এ্যাড়িত্যাড়ি করবি না৷ যা বলে গেল মানার চেষ্টা করবি৷ কতটা চিন্তা হয়েছে তোর প্রতি দেখেছিস? বলেছিলাম না ছেলে আমাদের লাখে একটা! মানতে পারলে সুখী হবি। মিলল তো! “
কুয়াশা প্রত্যুত্তর করল না। মায়ের কাঁধে মাথা রাখল৷ বড়দের কথায় ফলে গেছে৷ মেনে নেবার পর থেকে জীবনের প্রতিটি দিন রঙিন হয়। আজমিরা কিছুক্ষণ কথা বলে ঔষধ খাইয়ে রিলিভার দিয়ে ম্যাসাজ করে দিয়ে চলে গেলেন। বলে গেলেন বৃষ্টিদের পাঠিয়ে দিচ্ছে গল্প করার জন্য।
_________
রাত নয়টা বেজে পাড়। শিশির সেসময়ে বাড়ি এলো। এসে ঘরে ঢুকে দেখল কুয়াশা নেই। শিশিরের মেজাজটা গরম হয়ে গেল। ওকে বলা হয়েছে হাঁটাহাটি করবি না আর সেই কাজই বেশি করে করছে? চেঞ্জ না করেই ঘর থেকে বের হবার সময় দেখল কুয়াশা আসছে। শিশিরকে দেখে বলল,
” এত লেট হলো কেন আজ? “
” তোকে মানা করা হয়নি হাঁটাহাঁটি করবি না? এ্যাই কার ভালোর জন্য আমি বলছি? আমার ভালোর জন্য? তোর কী ইচ্ছে হয়না একটা কথাও মেনে চলতে? চল তুই তোর মতো। যা ইচ্ছে কর। চোখের সামনে থেকে দূর হ। ”
রেগে, ধমকে কথাগুলো বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। কুয়াশা বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল। সে তো হাঁটাহাঁটি সারাদিন করেই নি! সারাদিন শুয়ে থেকে পিঠ লেগে গেছিল বলে নিজের ঘরে গিয়ে উপন্যাস বই পড়তে ছিল সেটাও শুয়েই। এটুকু হাঁটাহাঁটি না করলে কীকরে হবে? মানা করেছে বলে কী পঙ্গু হয়ে বসে থাকতে হবে? আর কথা না শুনেই রাগ ঝেড়ে চলে গেল? তারও রাগ হলো। সে-ও গাল ফুলি বিছানায় শুয়ে পড়ল। থেকে থেকে ব্যথা ফিরছে শুধু। এখনো ব্যথা আসছে। তাই চোখ বন্ধ করে পড়ে রইল।
শিশির শাওয়ার নিয়ে বেরলো। কুয়াশাকে শুয়ে থাকতে দেখে আবার মেজাজ তুলল,
” এখন শুয়ে আছিস কেন? যাহ্ ধেই ধেই করে বেড়া! “
বলেই চলে গেল নিচে। রাতে এখনো খায়নি সে। কুয়াশা কোনো কথায় বলল না। শুয়ে রইল। খারাপ লাগছে অযথা বকা শুনে। দোষ যেখানে করেই নি সে! সুস্থ থাকলে বোধহয় এই না জেনে বকার শাস্তি দিয়ে দিত শিশিরকে। সবসময় বুনো ওলটাকে বলা হয় সঠিকটা জেনে রাগ দেখাতে। তবুও এরকম করবে।
কিছুক্ষণের মাঝে শিশির এলো। দশটা বেজে গেছে। খেয়ে এসে পড়তে বসল। অনেক কিছু বাদ পড়ে আছে এই তিন-চারটা দিনে অনেকটা পিছিয়ে গেছে। মাথাটা এমনিতে সারাদিন রোদে রোদে ঘুরতে ঘুরতে গরম হয়ে ছিল তারউপর কুয়াশাকে নেচে বেড়াতে দেখে আরো গরম হয়েছে৷ রাগ নিয়ে দরজা দিয়ে টেবিলে বসল৷ কুয়াশা সবই দেখল৷ কষ্ট পেল কেন জানি এমন ব্যবহারে। যেটা এই পর্যন্ত হয়নি। ভালোবাসে বলে কী এমন হচ্ছে?
রাত এগারটার দিকে শিশির পড়ছে এখনো। সেসময়ে গোঙানির আওয়াজ পাচ্ছে। পেছন ঘুরে দেখল কুয়াশা কোমড় ধরে কাতরাচ্ছে। ব্যথা নিশ্চয়ই বেড়েছে! বাড়বেই তো ধেই ধেই করে বেড়াল এমন তো হবেই! মেজাজটা আবার গেল চড়ে তার। এই বে-য়াদের জন্য সে খেটে খেটে ম-রছে আর সে তার একটু কথাও শুনবে না। সারাটাদিন পর বাড়িতে এসে এখন এগুলো সহ্য করতে হবে? এই বে-য়াদবটাকে বিয়ে করে পর্যন্ত তার নানান চিন্তার শেষ নেই। এর জন্য ক্যারিয়ার গড়ার তোড়জোড় করতে হচ্ছে, নানান চিন্তা করতে হচ্ছে যেটা সে তার এতগুলো বছরেও করেনি। বাপের হোটেলে শান্তিতে খেয়েছে আর লাইফটা এনজয় করেছে। আর এখন এটাকে বিয়ে করে তার চিন্তার তো শেষ নিকো-ই সাথে লাইফটাকে প্যারাময় করে তুলেছে। একে তো শনিবার থেকে পরীক্ষা সেসব চিন্তাও হচ্ছে। এখন আবার এর বসে বসে দায়িত্ব পালন করতে হবে? এসবই ভেবে শিশিরের মেজাজটা তরতরিয়ে বেড়ে উঠল।
এত আহ্লাদ কেন করতে হবে তার? কিসের এত আহ্লাদ তার? এত আহ্লাদ সহ্য হলো না। রাগের সাথে হাতের কলমটা টেবিলের উপর থাবা দিয়ে রেখে রাগে ফেটে পড়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ঝড়ের বেগে কুয়াশার কাছে গিয়ে এক ঝটকায় তুলে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। অনেকটা জোরে দিয়েছে৷ রাগে পুরো শরীরে রি-রি করছে তার। কুয়াশা ঝটকা দেয়াতে কোমড়ে ব্যথা তো পেলই সাথে থাপ্পড়ের রেশটাও সহ্য হলো না। টলমল চোখে চেয়ে রইল গালে হাত দিয়ে। শিশির চেঁচিয়ে বলল,
” এ্যাই, এখন এমন দাপাচ্ছিস কেন? সারাদিন যখন দাপাদাপি করেছিস তখন মনে ছিল না? গত দুইটা রাত আমাকে ঘুমাতে দিস নি। রাত জেগে তোর সেবা করেছি, অস্থিরতা দেখিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে চলেছি এসব কিছুই মনে হচ্ছে না তোর? কোনো মূল্য নেই? এত আহ্লাদ কীসের তোর? এতবড় মেয়ে হয়ে গেছিস তবুও তোর আহ্লাদ কেন গেল না? কীসের আহ্লাদ দেখাস তুই? “
বলে থেকে এবার নিজে নিজেই বলতে লাগল,
” জীবনটা আমার প্যারাময় করে তুলল এই আহ্লাদীকে ঘাড়ে গচিয়ে দিয়ে। এই বে’কুবের দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে আমার চিন্তার শেষ নেই। এক একটা দিন চিন্তা করতে করতে পাড় করতে হয়। লাইফটা আমার প্যারাময় করে দিয়েছে।”
রাগের মাথায় সে যে কীসের ভেতর কী বলে ফেলল সেটার হুশ নেই তার। রাগে, ক্ষোভে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সে৷ আর এইরকম বার কয়েক হয়েছেও তার সাথে।
এদিকে শিশিরের মারের থেকে তার বলা শেষ কথাগুলো একদম বুকে গিয়ে লাগল কুয়াশার৷ বুকের ভেতর সব ভেঙে আসতে চাইল৷ কেউ যেন বুকটা ভেঙে দিতে লাগল৷ সুঁইয়ের ন্যায় ফুটতে লাগল বুকে। ভারী হয়ে গেল খুব বুকটা। খুবই লাগল কথাগুলো। তাকে ঘাড়ে গচিয়ে দিয়েছে? হাজার ভালোবাসা হোক না কেন কথাটা কুয়াশার বুকে পাথর সমান ভারী যন্ত্রণা দিল। টপটপ করে পানি পড়তে লাগল চোখ থেকে কোপল বেয়ে৷ শিশিরের দিকে ছলছল করে তাকিয়ে রইল। শিশির অন্যদিকে ঘুরে আছে। রাগ তার এখনো পড়ে নি। এবার সে বেলকনিতে চলে গেল।
কুয়াশা কোনো কথা-ই বলল না। অশ্রুভরা নয়ন নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াল। ঝটকা দিয়ে তোলার কারণে টান লেগেছে আবার কোমড়ে সাথে কাঁধেও। এদিকে বুকের গভীর ব্যথা। বাবা বিহীন মেয়েটাকে দায়িত্ব দিয়েছে বাড়ির সকলে কিন্তু শিশির আজ তার সামনে বলল গচিয়ে দিয়েছে যেটা তার সহ্য হলো না ছোট মনে৷ সত্যি কী গচিয়ে দিয়েছে তাকে? চাইলে তো অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারত তাকে! আজ কেন জানি বাবার কথা খুব মনে পড়ল তার। আজ যদি তার বাবা থাকত! নিশ্চিয়ই দায়িত্ব নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিত? বাবার কথা ভাবতে ভাবতে তার বুক খসে পড়ে যেতে চাইল৷ গুমরে ভেতরে সব দলা পাকাতে লাগল। বার কয়েক তার মন, মস্তিষ্ক বাবা, বাবা ডাকটা আওরাল৷
কোমড় ব্যথা, কাঁধ ব্যথা, বুক ব্যথা সব মিলিয়ে সে ভেঙে যেতে চাইল৷ পা যেন আর তুলতে পারছে না। শরীরও উঠছে না ব্যথায়। চোখও টলমল কিছু চোখে দেখছে না৷ তবুও বহু কষ্টে ছোট ছোট পায়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল৷ বাবা নেই তো কী হয়েছে? তার মা তো আছে? সে এখনো এতিম হয়নি। কষ্টে, অভিমানে, ক্ষোভে বহু কষ্টে হেঁটে মায়ের ঘরের দিকে গেল সে।
| চলবে |
সকলে ওদের ঝগড়া দেখেছ, চুলোচুলি দেখেছ, ভালোবাসা দেখেছ এবার একটু মান-অভিমান দেখো৷ যেটা এতদিনেও হয়নি৷ স্বামী স্ত্রীর মাঝের মান-অভিমান।
বড় পর্ব সো বড় কমেন্ট চাই। নয়তো ছোট পর্ব দেব
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click