®রোজা রহমান
‘
কিছু মেয়েরা হয় জেদি, উগ্র স্বভাবের৷ নিজের মতামত নিজেরা জোর করে দেয়। পরিবার না নিতে চাইলেও তারা জোর, জবরদস্তি, জেদ ধরে বাধ্য করে। তারা তাদের নিজের মত দেবার জন্য নিজের জেদটাকে আগে প্রধান্য দেয়৷
আবার কিছু মেয়েরা হয় শান্ত-শিষ্ট, নরম সরম স্বভাবের৷ পরিবার যা বলবে তাই মুখ বুজে মেনে নেবে৷ কোনো উচ্চবাচ্য করবে না। তারা তাদের সকল দায়িত্ব পরিবারের উপর ছেড়ে দেয়। ভাবে পরিবার যা করবে সেটাই ভালো। নিজের মত বলে যে কিছু থাকে সেটা তাদের কাছে শোভা পায়না।
আর কিছু মেয়েরা এমন হয় যে, নিজেদের মতামত থাকে, ভালো মন্দ মতামত দেবার চেষ্টা করে কিন্তু পরিবারের শাসনের গেঁড়াকলে পড়ে নিজের মতামতগুলো প্রকাশ করতে পারে না। মুখ বুজে সহ্য করে নেয়। নিজের ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা মনমর্জি মতো মতামতগুলো জলাঞ্জলী দিয়ে দেয়। পরিবার নামক শব্দটার জন্য এমন অহরহ ছেলে-মেয়েরা তাদের ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারে না মতামত দিতে পারেনা৷ তাদের কাছে যেন ছেলে মেয়েরা বড়-ই হয়না। সন্তান বড় হলে যে নিজেদের মত প্রকাশের একটা অধিকার হয় সেটা তাদের বোধে আসে না। তারা নিজেরা যা ভালো মনে করে সেটা করতে পারলেই যেন রাজা। হ্যাঁ অভিভাবক হিসেকে একটা সন্তানের ভালো মন্দের দায়িত্ব তাদেরই থাকে তবুও অনেক সময় যে তারা সন্তানের ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেলে সেটার খোঁজ রাখেন না। পরিবার ভালো চায় সেটা ঠিক আছে কিন্তু সব পরিবারেরও উচিত সেই ভালোটা চাইতে গিয়ে সন্তানের খারাপ হবে কিনা ভালো হবে সেটার মতটাও একটা এডাল্ট সন্তানের থেকে নেবার। পরিবারও ভুল করে, তারা যে সব সময় সঠিক করে তা না। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ ভুল থাকে ঐ সন্তানের জন্য। পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে না নিজের মনের কথা বলতে পারে আর না মত দিতে পারে তখন হয়ে দ্বারাই পরিবারের চাপে পরে কাজটা করেছে বা করেছি।
আর এই তিন কাতারের মেয়েদের মধ্যে স্মৃতি হচ্ছে তিন নাম্বারে। সে পরিবারের শাসনের একটা মেয়ে। তাদের পরিবারে খুবই কাঠিন্যতা বজায় রাখে৷ সন্তানদের ভালো খারাপ তারাই দেখেন৷ তবে অভদ্রতা নেই স্মৃতির পরিবারে। যথেষ্ট ভদ্রতা আছে। থাকে না এরকম কিছু পরিবার? ঠিক তেমনই স্মৃতির পরিবার। স্মৃতির বাবারা শহরের মাঝে থাকলেও তাদের জ্ঞানবোধ একটু আলাদা৷ উনারা এক কথার মানুষ। শহরে থাকলেই যে খোলামেলা স্বভাব বা খোলামেলা ভাবে চলতে হবে সেগুলি স্মৃতির পরিবারে নেই। তারা সন্তানদের যথেষ্ট শাসনে রাখেন আর ভালো মন্দও তারাই দেখেন।
তেমনি স্মৃতির আজ ভালো করতে গিয়ে উনারা নিজের মতামত চাপিয়ে দিচ্ছেন। তার যে একটা মত আছে সেসব দেখার বা শোনার প্রয়োজন মনে করেননি।
স্মৃতির জন্য পাত্র দেখা হচ্ছিল আজ বছর যাবত ধরেই সেটা একদমই আড়ালে অর্থাৎ স্মৃতিকে না জানিয়ে। জানাবেই বা কেন? তারা তো সন্তানের মতের আশা করেন না! এই জন্য জানাননি। আর আজ সপ্তাহ খানেক আগে থেকে যে বিয়ের কথা বার্তা, দেখাশোনা চলছে সেটা স্মৃতি জানতই না। পাত্রপক্ষ ওকে দেখেছে ফটোতে। আর আজ আসছে বিকেল পাঁচটার দিকে পাকা দেখতে মানে আজ দেখতে এসে ভালো লাগলে আকদ করে ফেলবেন এমনই কথা হয়েছে। বিয়ে উঠানো হবে স্মৃতির ইন্টার পরীক্ষার পর৷ তো সকাল থেকে সেসব তোড়জোড় চলছিল স্মৃতি পরীক্ষা দিতে চলে গেলে। তাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি কেউ। পরীক্ষা দিয়ে দুটোর সময় এসে দেখে, আর শুনে তার মাথায় হাত উঠে যায়। বজ্রাহত হয়ে ভেঙে পড়ে। বাবাকে প্রচুর ভয় পায়। এছাড়া স্মৃতির দাদি এবং বড় চাচা মানে রনির বাবা খুবই রাগী মানুষ। ওর দাদি এখনো সংসারের কর্তী। আলাদা বাড়িতে আলাদা থাকেন ওর চাচারা কিন্তু মায়ের মতামতে চলে। স্মৃতির দাদি দুই ছেলের দিকেই থাকেন। বাবার বড় বয়সের দুইটা ফুপু আছে ওর।
স্মৃতি জন্য পাত্র দেখা হয়েছে ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। ভালো কোম্পানিতে জব করে। ভালো পরিবার ছেলে দেখতে শুনতেও সুদর্শন। সব দিকে মিলে গেছে বিধায় বাড়ির লোক দেরি করেতে চাইছেন না আজই বিয়ে পড়িয়ে দেবেন। ছেলে পক্ষের আসার সময় হয়ে এসেছে। এলো বলে। এদিকে স্মৃতি গুমরে কাঁদতে কাঁদতে শেষ। বাড়িতে সে কিছুতেই বলতে পারছে না তার অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে। এটা শুনলে হয়তো আজই মে-রে কেটে নদীতে দেবে চাচুরা। আর দাদি তো সাথে তাল মেলানোর জন্য আছেনই! যে মেয়ে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে পারে সে মেয়েকে রেখে কী হবে? স্মৃতির দাদি গ্রামের সেকেলে মানুষ। চিন্তা ভাবনা আগের যুগের মতো। মেয়েদের, বউদের ট্রিটও করেন তেমন।
যায়হোক স্মৃতি সেই দুপুর থেকে রিজভীকে হাজারটা কল দিয়ে চলেছে সাথে ভুরিভুরি মেসেজ। স্মৃতি এসে জানতে পেরে কুয়াশাকে বলে এরপর দু’জন মিলে সমানে শিশির, রিজভীকে কল, মেসেজ দেয়। স্মৃতি রিজভীকে সমানে কল দিয়েছে। কুয়াশা শিশিরকে দিয়েছে৷ কুয়াশা নিজে প্রথমে ট্রাই করে না পেরে নীহারের সাহায্য নিয়েছে। রিজভীকে ছাড়া কিছুই সম্ভব হবে না। স্মৃতি চায় রিজভী কিছু একটা করুক। তার নিজের দ্বারাই সম্ভব হবে না।
‘
স্মৃতিকে তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কেঁদেছে ভেবেছে বিয়ের জন্য কেঁদেছে তবুও জিজ্ঞেস করেননি কেউ। আর মা’কে যদিও একটু ভরসা করে তিনিও কাছে আসেন নি।
ছেলে পক্ষ আসার আগেই শিশির আর রিজভী এলো। রিজভী ওর বাবা মা’কে জানিয়ে দিয়েছে। উনারা বিষয়টা জানতেন। স্মৃতির বাবা আর মা সম্মন্ধ নিয়ে আসবেন বলেছেন। কিছুক্ষণের মাঝে কুয়াশাকে নিয়ে নীহার এলো। ওরা এক সাথে বাড়ির মধ্যে ঢুকল না। নীহার আর রিজভী নিচে থাকল কারণ আগেই ওরা গেলে ঘেটে ঘ হয়ে যাবে বিষয়টা। কুয়াশাকে সকলে চেনে। এছাড়া শিশিরের কথাও টুকটাক জানে স্মৃতির বাবারা। এক তালা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট স্মৃতিদের। বসার ঘরে বসে আছে বাবারা৷ শিশির গেলে দেখে তার সাথে কথা বলে। শিশির সালাম দিয়ে পরিচয় দেয়। ঈশা এখনো আসে নি। সে আসছে।
শিশির সালাম দিয়ে পরিচয় করল প্রথমে। উনারা ভদ্রতা দেখিয়ে বসতে দিয়ে নাস্তা পানির আয়োজন করলেন। শিশির ভাবছে কীভাবে শুরু করবে! কুয়াশা স্মৃতির কাছে চলে গেছে। কিছুক্ষণ ভাবার পর শিশির স্মৃতির বাবার উদ্দেশ্য করে ডাকল। বলল,
” আঙ্কেল! আপনার সাথে একটু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে পারি একা? “
স্মৃতির বাবা বিষয়টা প্রথমে বুঝে নিলেন। তারপর তিনিও ভদ্রতা রেখে বললেন,
” অবশ্যই, দ্বিধা ছাড়া বলো “
পাশে স্মৃতির চাচু ছিল। শিশির অবশ্য ইচ্ছে করলে চাচুর সামনেও বলতে পারত৷ কিন্তু সে ভেবে নিল আগে যাদের মেয়ে তাদের বলবে। ওনারা বিষয়টা বুঝতে পারলে আর কোনো টেনশন থাকবে না। বিষয়টা আসলেই জটিল হয়ে গেছে। যেখানে পাত্রপক্ষ আসবে আর সব ঠিকঠাক সেখানে কোনো জারিজুরি খাটবে কিনা জানা নেই। তবুও সর্বশেষ চেষ্টা করতে হবে।
শিশিরের ভাব ভঙ্গিতে ওনারা বুঝলেন একান্তই একা কথা বলবে। তাই স্মৃতি দুইটা চাচতো ভাই, স্মৃতির বড় ভাই আর চাচা চলে গেলেন। শিশির নিজেকে সামলে নিল। এরপর সবটা খুলে বলল। শিশির রিজভী আর স্মৃতির রিলেশনের কথা হাইড করেছে শুধু পছন্দ করে রিজভী একমনটা জানিয়েছে। সবটা শুনে স্মৃতির বাবা হতবাক হলেন। এও ভাবলেন এখন এসব বলে কী হবে? ঐ ছেলেও ভালো। তার থেকে বড় কথা তারা আসছে। পাকা কথাও হয়েছে। শিশির এসব শুনে এবার সবটাই বলে দিল উপায় না পেয়ে৷ তা নাহলে বুঝবেন না বুঝেছে সে। এবার স্মৃতির বাবা একটু রাগল। মেয়ে তার শাসনের বাহিরে ভেতরে ভেতরে এত দূর? শিশির বুঝল বোধহয় বিষয়টা৷ সে আবার বলল,
” দেখেন আঙ্কেল, একটা ছেলে মেয়েরা বড় হলে তাদের পছন্দ অপছন্দ বলে একটা জিনিস তৈরি হয়। আর সেই পছন্দ অপছন্দকে প্রাধাণ্য দেওয়া উচিত পরিবারের অভিভাবকদের। আমরা ছেলে মেয়েরা এখন এডাল্ট। এটা বলছি না যে এডাল্ট হয়ে গেলে পরিবারের অধিকার থাকে না ছেলে মেয়েদের উপর। থাকে অবশ্যই থাকে। বাবা মা তাদের সন্তানকে কষ্ট করে মানুষ করেন তাদেরই অধিকার থাকে ভালো মন্দ দেখার৷ কিন্তু আঙ্কেল, অনেক সময় পরিবারের দ্বারা কিন্তু ভুল হয়! পরিবারের চাপে পরে সন্তানেরা মুখ বুজে মেনে নেয় সব। তাদের মতামত দিতে পারে না। আঙ্কেল এমন বিয়েও এই সমাজে অহরহ আছে যেগুলো পরিবারের দ্বারাই হয় কিন্তু মেয়েরা সুখী হয় না। কত শত ডিভোর্স হচ্ছে। তাহলে কী পরিবারের দ্বারা ভুল হয় না বলেন? আবার এমন বিয়েও কত শত আছে মেয়ের পছন্দ থাকা সত্বেও অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় এমন হয় না বলেন? এখন যদি বলেন বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে মেনে নিয়ে মানিয়ে নিয়ে চললে সব ঠিক হয়ে যাবে। তো আমি বলব, হ্যাঁ হবে হয়তো ঠিক হবে কিন্তু স্মৃতি যে মেনে নিয়ে মানিয়ে চলে কতটুকু সুখী হবে সেটা বলতে পারবেন? আঙ্কেল মনের উপর জোর খাটে না৷ হয়তো স্মৃতি মানবে, কয়েকবছর সংসার করার পর সবটা নিয়ন্ত্রণে আসবে, সংসারের চাপে পরে সবটা মানতে শিখে যাবে। কিন্তু এটা বলতে পারবেন আপনার মেয়ে ভালোবাসা দিয়ে সংসার করতে পারবে? ভালোবেসে মন থেকে মেনে নিয়ে সব কিছু মানতে পারবে? আঙ্কেল স্মৃতি রিজভীকে ভালোবাসে ওদের বিয়ে হলে ওরা ভালোবাসা দিয়ে সংসার করতে পারবে। আপনার মেয়ের বিয়ে হলে আমার বন্ধুরও বিয়ে হবে। সেও সংসার করবে। অন্য কোনো মেয়ের সাথে। কিন্তু এই যে তার সুপ্ত চাওয়াটা স্মৃতি এটা কিন্তু থেকে যাবে এবং একই ঘটনা আপনার মেয়ের সাথেও হবে। এই সুপ্ত চাওয়াটা ওদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। ভাববে একটা বার যদি পরিবার বুঝত! জোর করে বিয়ে দিলে সমস্যা নেই কিন্তু তারা একে অপরকে পছন্দ করে। এই পছন্দটা না থাকলে কোনো সমস্যা হতো না। জোর করে বিয়ে দেবার পর মেনে নিয়ে সংসার করতে করতে ঠিক হতো। আঙ্কেল আপনি বাবা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার মেয়ে এমন কোনো আফসোস নিয়ে সারাজীবন থাকুক? ক্ষতি কী আঙ্কেল ওদের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে হলে? এখনো তো কিছুই হয়নি। শুধু দেখাশোনা চলছে। আপনি চাইলে সব সম্ভব হবে। বাবা হিসেবে একটু তো সেক্রিফাইজ করতেই পারেন না? আঙ্কেল ছেলে মেয়েরা পছন্দ করলে কোনো পাপের কাজ হয়না যদি না পরিবার বাঁধা হয়। তারা পছন্দ করেছে এখন আপনারা মেনে নিয়ে যদি সবটা সুন্দর ভাবে এটার শেষ করেন তো এটা একটা মহৎ কাজ হবে আর যদিনা না মানেন এটার ওদের অবৈধতা হবে। আপনি কী নিশ্চয়তা দিতে পারবেন ভবিষ্যতে ওরা একে অপরকে ছাড়তে পারবে? যদি বিয়ের পরেও ওরা সম্পর্ক চালিয়ে যায় বা সব ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে চায়? আমি কথার কথা বলছি, যদিও আমরা বন্ধু আর স্মৃতি কেউই এমন না আর করবেও না এমন কিছু। তবুও আঙ্কেল হয়তো এরকম অহরহ! আবার দুঃখে কষ্টে যদি নিজের ক্ষতি করারও চেষ্টা করে তখন কী সেটার সমাধান পাবেন? আঙ্কেল ভালোবাসা মানুষকে সব করাতে বাধ্য করে। আমাদের এই আপডেট যুগে এখন এগুলোই অহরহ চলছে। যদিও এগুলো বলা ঠিক হচ্ছে না আপনি গুরুজন আমার তবুও বলছি দুটো সুন্দর জীবনের জন্য। আঙ্কেল আপনারা এই আপডেট যুগের বাবা মা, বিষয়টা একটু বুঝে সিদ্ধান্ত পাল্টালে দুটো জীবন সুন্দর একটা নাম পাবে। “
অনেকক্ষণ একনাগাড়ে কথা বলে হাঁপিয়ে উঠল শিশির। থামল সে। ওদিকে স্মৃতির বাবা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থেকে কথাগুলো শুধু শুনে গেলেন। গভীর ভাবনায় মগ্ন তিনি। শিশিরের প্রতিটা কথা মনে ধরেছে উনার। তাই ভাবনাতে ব্যস্ত। ভাবনার মাঝে শিশির আবার বলল,
” আঙ্কেল রিজভী আমার সাথে আইন নিয়ে পড়াশুনো করছে৷ আমাদের দু’জনের ভবিষ্যত কল্পনা একরকম। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ সহায় হলে আমরা ভবিষ্যত কিছু করতে পারব। এছাড়া আমার বন্ধুর ফেমিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভালো। যথেষ্ঠ সচ্ছলতা। তবে সমস্যা কী? আপনাদের মতামত পেলে আমার বন্ধুর অভিভাবক আসবেন।”
” কিন্তু ছেলে পক্ষ চলে এসেছে প্রায়। এখন আমি কী করতে পারব? এখানে মান-অপমানের ব্যাপার স্যাপার আছে। আমি এমন কিছু করতে পারি না। উনারা অপমানিত হবেন। “
” আঙ্কেল সেটা না হয় সুন্দর ভাবে হ্যান্ডেল করা যাবে? আপনি শুধু এদিকের মতটা দিয়ে দেন। ওদিক আমরা সামলাব। একটু ভরসা করেন প্লিজ! আপনার বড় ভাই ও মায়ের সাথে আপনি কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন প্রয়োজনে৷ শুধু মতামতটা দেন বাকিটা আমার দায়িত্ব। “
স্মৃতির বাবা খুবই গভীর চিন্তায় পড়লেন। শিশির যে এত সুন্দর করে ব্রেনটা ওয়াশ করল এখন তিনি দ্বিধায় পড়েছেন। তিনি সম্পূর্ণ কথা শুনে মনে মনে শিশিরের তারিফ করতেও ভুললেন না৷ এও ভাবলেন শিশিরের বন্ধুও ঠিক একই প্রকৃতির হবে? কিন্তু তিনি পড়লেন দোটানায়। বাবা মা হিসেবে মেয়ের সুখের কথাটাও ভাবা উচিত এদিকে কথা দিয়েছেন সেটা কীকরে কী করবেন ভাবছেন। রিজভীর বিষয়ে শিশির যা যা বলল তা থেকে বোঝা যায় রিজভী যথেষ্ট সুপাত্র এবং ঐ ছেলের থেকে সুপাত্র। তিনি শিশিরকে বলল আমি ওদিক থেকে আসছি৷ শিশির সম্মতি দিলে তিনি উঠে গেলেন। শিশির একা একা বসে থাকল। টেক্সট করে সবটা রিজভীকে বলল। তারা নিচে একটা দোকানে বসে আছে।
‘
এদিকে কিছুক্ষণ পরে স্মৃতির বাবা সহ চাচু, দাদি এবং ভাইরা এলো। সবটা বুঝিয়ে বলেছেন। সুপাত্র রিজভীকে এক কথায় বলা চলে। ব্যাটারের থেকে ব্যাটার পেলে কী আর কেউ ছাড়তে চায়? কিন্তু সকলের চিন্তার কারণ হলো পাত্রপক্ষকে নিয়ে। শিশির আশ্বাস দিল সেটাও সে হ্যান্ডেল করবে না পারলে তার ভাই তুষার হ্যান্ডেল করবে। শিশিরের কথাতেই থাকল সকলে।
‘
পাত্রপক্ষের সাথে ইচ্ছে করলে শিশির ফোনে কথা বলত কিন্তু সেটার থেকে সামনাসামনি বলাটা ভালো হবে বলে মনে করল শিশির।
পাঁচটার পর পাত্রপক্ষ এলো। স্বাভাবিক ভাবেই সকলকে আপ্যায়ন করা হলো। এরই মাঝে স্মৃতির বাবা পাত্রের বাবাকে সবটা জানালেন। সব শুনে বেজায় রাগলেন তিনি। কারণ তারা এসেছে বিয়ের মতো করে। মেয়ে তাদের পছন্দ। এতদিন কেন জানায় নি? মেয়ের মত না নিয়ে বিয়ের কথা বলে এ কেমন বাবা মা? আর এতদিন মত নিতে চায়নি তবে আজ কেন আদিক্ষেতা? এসব ভেবেই রাগলেন। বিষয়টা দুপুরেও জানালে তারা আসত না৷ শিশির এবার না পেরে স্মৃতির বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে পাত্রের সাথে আলাদা কথা বলতে চাইল। ছেলেটা নেহাত ভদ্র, শিক্ষিত তাই চুপচাপ মানল৷ শিশিরের সাথে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরেও এলো। এসে বাবা, মায়ের সামনে বলল,
” বাবা, উনারা সব থেকে বড় ভুল করেছেন বিয়ের মতো একটা জিনিসে মেয়ের মত না নিয়ে৷ এটা উনাদের উচিত হয়নি। যে সংসার করবে তার থেকে মত নেয়াটা একান্তই প্রয়োজন ছিল। তবে সেটা ভুল যখন করেছেন সেই একই ভুল আমি করতে চাই না৷ আমি এই যুগের ছেলে হয়ে বিষয়টাকে হেলাফেলা মনে করতে পারিনা৷ এছাড়া তোমরা এসেছ মেয়ে দেখার মতো করে। এখানে আয়োজন করে বিয়ে করতে আসিনি আমি। মেয়ে দেখে পছন্দ না হলেও বিয়ে হতো না সেখানে বিষয়টা একই দ্বারাই। এখানে জোরজবরদস্তির কিছু নেই। আঙ্কেলরা ভুল করে ফেলেছেন সেটাকে আমাদের মেনে নিয়ে বুঝা উচিত। আমি জানি আমার বাবা মা শিক্ষিত এসব বুঝবে। আমরা উঠি তবে?”
ছেলের কথা পাত্রের মা, বাবা খুশি হলেন। এটাও বুঝলেন তারা রাগবাগ করে কিছুই হবে না৷ সংসার যারা করবে একান্তই তাদের বিষয় এসব৷ যথেষ্ট বড় ছেলে মেয়েরা। বিদায় নিয়ে উনারা চলে গেলেন৷ যাবার আগে শিশিরের সাথে পাত্র হাসি মুখে কথা বলে গেল। শিশির ধন্যবাদ জানাতে বলল না৷ ছেলেটাও উল্টো ধন্যবাদ জানাতে ভুলল না। কারণ বিষয়টা আগে থেকে বলে ভালো করেছে আর শিশির খুব সুন্দর ভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়েছে।
‘
উনারা চলে যেতেই সব কিছু স্মৃতিদের জানানো হলো। রনি তো শুনে কুয়াশাদের কাছে গিয়ে স্মৃতিকে বলল,
” তুই তলে তলে ট্যাম্পু চালাতি? “
এই কথাটা শুনে স্মৃতি রনিকে মা-রে। ঈশাও চলে এসেছে। তারা হাসাহাসি করছে। সেখানে স্মৃতির কাজিন সহ ভাবিরা আছে। স্মৃতির আনন্দ দেখে কে! কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে শিশিরের নামে গুনগান করেই চলল। কুয়াশা শুধু হাসল। তার বরটা বুঝদার বলেই তো এতটা অপত্যা থাকা সত্বেও আজ তারা সংসার করতে পারছে।
‘
এদিকে শিশির স্মৃতির বাবা মায়ের কাছে শুকরিয়া আদায় করে রিজভীকে সব জানাল। তার বাবা মাকে আসতে বলে দিল। শিশিরের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট স্মৃতির বাবারা৷ বুঝদার ছেলে এত সুন্দর করে সবটা হ্যান্ডেল করল যে কেউ কোনো দ্বিরুক্তি করার সুযোগটুকু পেল না। এমনকি স্মৃতির রাগী চাচা আর দাদিও না। বুড়িটার বেশ লোভ আছে৷ ভালো পাত্রের কথা শুনে মুখে কুলো পেতেছেন৷ চাচাটাও মানলেন কারণ যাদের মেয়ে তারা যদি নাকচ করেন তো কী আর করার? শিশির এই জন্যই আগে স্মৃতির বাবার সাথে কথা বলেছিল যেন সবটা সুন্দর ভাবে হ্যান্ডেল হয়৷
‘
ছয়টা বেজে গেছে৷ রিজভীর কথা বলে নীহার আর রিজভীকে বাড়ির মধ্য এনেছে শিশির৷ রিজভীকে দেখে সত্যি মুগ্ধ হয়েছেন স্মৃতির বাবারা৷ একদম শিশিরের মতো করেই কথা বলে। কার্বন কপি বলা যায়৷ মুগ্ধ না হয়ে পারলেন না উনারা। ছেলে সেই লেভেলের পছন্দ হলো সকলের৷ এখন রিজভীর বাবা, মা আসলে কথা বলবেন৷ শিশিররা বসার ঘরে বসে নিজেদের মতো করে কথা বলছে৷ রিজভী তো পারলে এখানে ধরেই শিশিরকে জড়িয়ে ধরে চুমুর বর্ষণ শুরু করত৷ সেটা বলাতে তিনজন হাসাহাসি করছে। সেসময়ে দৌড়ে কুয়াশা এসে ধারাম দিয়ে শিশিরের পাশে সোফায় বসে পড়ল। শিশির টের পেয়ে মৃদু ধমকে উঠল,
” এ্যাই..! দৌড়াচ্ছিস কেন? আর এটা অন্যর বাড়ি দেখছিস না? “
কুয়াশা শিশিরের কথায় পাত্তা দিল না৷ সে তো আনন্দে আটখানা। ফিসফিস করে শিশিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” চুমু খেতে ইচ্ছে করছে “
শিশির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভড়কে তাকাল৷ বলে কী এ মেয়ে! শিশির কিড়মিড় করে সেও ফিসফিস করে বলল,
” গোবর ঠাঁসা, যাবি এখান থেকে? “
” আরেহ্ সত্যি, এখন ভাইয়ারা না থাকলে সত্যি আগে চুমুর বর্ষণ ঘটাতাম। ইশশ আমার বরটা এত সুন্দর কেন!! “
ফিসফিস করে বলে মুখ ঢাকল৷ ওদিকে রিজভীরা কথায় ব্যস্ত এদিকের কথা শুনতে পারছে না অতি আস্তে একে অপরের কানের কাছে বলাতে। ভ্রু কুঁচকে শিশির একই ভাবে বলল,
” রাতে দেখব তোর চুমুর বর্ষণ। কত প্রকার বর্ষণ ঘটাতে পারিস! বর্ষণ ঘটিয়ে যদি প্লাবন না বানাতে পারিস তবে তোর উপর আমি তুষারপাত ঘটাব।”
কুায়াশা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল৷ সে কী তেমন কিছু বলেছে নাকি? এ ছেলে যখন বলেছে তখন করিয়ে ছাড়বে। কথার কথা বলতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেল৷
” ধুরর…!”
বলে কুয়াশা উঠে ধেই ধেই করে আবার স্মৃতির ঘরের দিকে গেল। শিশির ওর যাবার পানে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে মিটমিট করে হাসছে।
‘
রিজভীর মা-বাবা আসলেন সন্ধ্যার পর। এসে স্মৃতিকে দেখলেন৷ তাদের পছন্দ হয়েছে স্মৃতিকে। বিয়ের কথা বলাতে স্মৃতির চাচা জানালেন উনারা পারলে আজই আকদ সেরে ফেলবেন৷ এই কথা রিজভীর বাবা-মা রিজভীর থেকে মতামত নিয়ে মত দিলেন। রিজভীর কোনো সমস্যা নেই। সে-ও আর নামহীন সম্পর্ক চালাতে চাই না। সুযোগ যখন পাচ্ছে তবে সমস্যা কী? তার বাবা বললেন সমস্যা হবে না তিনি এক মাত্র ছেলের বউকে রাখতে পারবেন। কিন্তু উনাদের এই ভাবনার মাঝেই স্মৃতির বাবা জানালেন মেয়ে তাদের একটা তারা আকদ করে রাখবেন পরে বিয়ে উঠাবেন ততদিন স্মৃতি তাদের কাছেই থাকবে। স্মৃতির বাবার কথায় রিজভীর বাবা জানালেন তাহলে বিয়ে উঠানোর কাজ রিজভীর পড়াশুনোর পর উঠাতে। এই কথায় কোনো দ্বিরুক্তি করলেন না কেউ। সকলে মত দিলেন৷ একেবারে মেয়ের বিয়ে উঠিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাবেন।
রিজভী আর স্মৃতির আকদ করার জন্য কাজি ডাকা হয়েছে। টুকটাক কিছু আত্মীয়দের ডাকা হলো। রিজভীর বড় বোন আর তার স্বামী এসেছেন। ছোট বোন আসতে পারবেন না। তার বাড়িটা দূরে। রিজভীর একটা ফুপু আছে তার স্বামী এসেছেন অর্থাৎ। কেউ বাড়িতে যায়নি। রিজভী বেচারা ভাবেই নি পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে এত কিছু হয়ে যাবে আবার বিয়ে পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে৷ ভাবা যায়!
রাত নয়টার দিকে রিজভী আর স্মৃতির আকদ সম্পূর্ণ হলো। সকলে আলহামদুলিল্লাহ পড়ল। শিশির সহ নীহার রিজভীকে পাশে থেকে অভিনন্দন জানাল। স্মৃতি লজ্জায় লাল, নীল হচ্ছে ভাবে লাগছে। তাদের ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো। রিজভী প্রশান্তিময় হাসল। সে তার রসমালাইকে পেয়ে গেছে। বিকেলে মনে হচ্ছিল আজ বোধহয় অন্তরটাই হারিয়ে ফেলবে। আত্নাটা বেড়িয়ে যাবে। স্মৃতিকে এই কয় মাসের মধ্যে সে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে৷ মেয়েটা সব সময় নরম সরম হয়ে থাকে। কথা বলে কী সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি করে! সে সত্যি রসমালাই। দেখতেও এবং কাজেও। ভেবে হাসল রিজভী।
স্মৃতি আর রিজভীর জীবনের নতুন ক্ষণ শুরু হয়ে গেছে। তারা এখন স্বামীস্ত্রী। দু’জন দু’জনের দিকে তাকাল। অমায়িক হাসল রিজভী৷ স্মৃতির প্রচুর লজ্জা করছে। চোখ নামিয়ে নিল। কুয়াশা, ঈশা, রনি হাসছে ওদের কার্বার দেখে৷
‘
রাত দশটা পাড় হয়ে গেল। স্মৃতির বাড়ির সকলে ঠিক করেছে রিজভীকে আজ রেখে দেবে৷ ভালোভাবে পরিচয় হলো না হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল৷ শুধু মাত্র কিছু সময়ের এবং কথার উপর ভিত্তি করে বিয়েটা দিলেন একমাত্র মেয়ের কথা ভেবে তার সুখের জন্য। ভালোভাবে খোঁজ খবরটাও নিতে পারেননি। যদিও স্মৃতির বাবা মা বুঝেছেন ছেলে ওনারা ভালোই পেয়েছেন৷ মেয়ে সুখে থাকলেই হলো। শাসন করে এতটা বছর লালন পালন করেছেন। মেয়ের ভবিষ্যতটা না হয় নিজের পছন্দমতোই হোক! ক্ষতি কী তাতে?
এদিকে শিশিররা তা শুনে রীতিমতো মজা নিতে লেগে গেছে। একপ্রকার রিজভীকে সব পেড়ে ধরেছে৷ বেচারা পড়েছে গেঁড়াকলে। শিশির টিপ্পনী কেটে বলল,
” এ দোস্ত তোর তো কপাল খুলে গেল রে.. বিয়ে করলি আবার শ্বশুরবাড়ি বাসর করার সুযোগ ও পেয়ে গেলি? আরেহ্ তোর শ্বশুর, শাশুড়ী তো তোর কপাল খুলে দিল রে! মেয়ে-জামাইর বাসরের ব্যবস্থাও করে দিল!”
রিজভী কটমট করে তাকাল শিশিরের দিকে। কিছুই বলতে পারল না। কারণ আজ তার পালা এসেছে। সে এতদিন সুযোগ বুঝে টপ দিয়ে এসেছে। নীহার ঠোঁট টিপে টিপে হাসছে। শিশির তার মতো মজা নিয়ে চলেছে একের পর এক।
রিজভীকে রাখবে শুনে রিজভীর বাবা চলে যাবেন ঠিক করলেন। ফুপা, বোনেরাও চলে যাবেন বলেছেন। সকলকেই থাকার কথা জানালেন স্মৃতির বাবারা। কিন্তু কিছুতেই রাজি হলেন না রিজভীর বাবা, মা। অবশেষে ঠিক হলো সকলে চলে যাবেন শিশির কুয়াশাকে রাখবেন। শিশির কুয়াশা রাতটা থেকে যাবে। ওরা মানা করেও কাজ হলো না জোর করে রাখল। এছাড়া স্মৃতি, রিজভীও জোর করল। এগারটার পর নীহার চলে গেল রিজভীর বাবাদের সাথে। ঈশা রয়ে গেল কুয়াশাদের সাথে।
| চলবে |
বিয়ে কিন্তু আরো একজোড়ার দিয়ে দিলাম
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click