| ১৮+ এলার্ট
®রোজা রহমান
‘
রাত প্রায় বারটার দিকে কিছু নিয়ম-কানুন পালন করে রিজভীকে স্মৃতির ঘরে দেয়া হলো৷ স্মৃতিকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে সাজানো হয়েছে। মেয়েটাকে আজ একটু বেশিই মিষ্টি লাগছে। দুপুর থেকে যে ঝড়টা গেল দুটি মনের উপর। এক মূহুর্তের জন্য দুটি মন ভেঙে যেতে নিয়েছিল। দুটি মন আলাদা হতে গেছিল।
আল্লাহ চাইলে কিনা পারে! সব ভাগ্যর পরিহাস। আজ যদি রিজভী সাথে স্মৃতির ভাগ্য জোরা না থাকত হাজার কোনো জারিজুরিই খাটত না৷ তাদের আশা পূরণ হয়েছে। নিয়তিতে যদি না থাকত হাজার ভালোবেসে কী হবে? ভাগ্যর উপর কী জারিজুরি খাটে? খাটত না। রিজভী তার রসমালাইকে হারাত৷ স্মৃতি নিয়তি মেনে অন্যর সংসার করত৷ ভালোবাসা না থাকলেও জোর করে বাসতে হতো। কিন্তু সুপ্ত চাওয়া দু’জনের মনে থেকেই যেত।
পরিবার মানা তো একটা অছিলা মাত্র! পরিবার না মানলেও যদি রিজভী স্মৃতির নিয়তিতে এক হওয়া থাকত তবে সেটা কাররি সাধ্য থাকত না তাদের মিলনে বাঁধা হবার যে করেই হোক, যে ভাবেই হোক মিলন তাদের হতোই। নয়তো একটা শাসন করা পরিবার কী করে মেনে নিল? এটা নিশ্চয়ই হবারই ছিল?
রিজভী, স্মৃতি আজ যতবার আল্লাহকে ডেকেছে দু’জন দু’জনকে না পেলে বোধহয় কাঁচের ন্যায় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেত।
‘
রিজভী পরীক্ষার হল থেকে যেমন ছিল তেমনই বেড়িয়ে এখানে এসেছে৷ বাসাতেও আর যায়নি। আর চেঞ্জ ও করতে পারেনি। বিয়েটাও হয়েছে তেমন অবস্থাতেই। তাই স্মৃতির বাড়ি থেকে আপাতত ড্রেসের ব্যবস্থা করেছে। অনেক রাত হয়ে গেছে মার্কেটের দোকানগুলো বন্ধ নতুন কিছু কিনতে যেতে পারেনি৷ জানিয়েছে সকালে মেয়েজামাইকে কিছু কিনে এনে দেয়া হবে। তাই এখন লুঙ্গি আর টিশার্ট দেয়া হবে রিজভীকে রাতে পরার জন্য।
রিজভী স্মৃতির ঘরে ঢুকে বসে আছে বিছানায়। স্মৃতি বাহিরে ছিল মাত্রই আসল সাথে করে রিজভীর জন্য লুঙ্গি টিশার্ট এনেছে। মা এগুলোই দিয়েছে। এসে দরজার সামনে থেকে দু’জনের চোখাচোখি হলো। ধুক করে উঠল দু’জনের বুক। তাকিয়ে রইল কিছু পল। স্মৃতি লজ্জায় মাথা নূয়ে ভেতরে ঢুকে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিল। রিজভী সালাম নিয়ে ফেরত সালাম দিল। স্মৃতি সালামের জবাব দিয়ে মায়ের বলা কথাগুলো বলল আর রিজভীকে চেঞ্জ করতে বলল৷ রিজভী সবটা শুনে বলল,
” সমস্যা নেই। এতেই চলবে৷ নিজেই ভাবিনি আজই আমার বিয়ের কপালটা খুলে যাবে। এখন লুঙ্গি পরে শ্বশুরবাড়ি তাও আবার বউয়ের ঘরে থুরি বাসর ঘরে রাত কাটাব।”
রিজভীর লাগাম ছাড়া কথা শুনে স্মৃতির পুরো অন্তর, কায়া কেঁপে উঠল। হাতুড়ি পিটা শুরু হলো বুকে। কিছু বাড়ি দিচ্ছে বুকে। লজ্জায় কান, মুখ লালাভ হয়ে উঠল। শিউরে ওঠল শরীর। কাটার ন্যায় বিঁধল লোমগুলো। রিজভী হাসল। আপাতত বউকে লজ্জা দেয়া থেকে দূরে রাখল। স্মৃতির হাত থেকে জিনিসগুলো নিয়ে বিছানায় রেখে স্মৃতিকে কাছে টেনে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ইমোশনাল হয়ে উঠল দু’টি মন। স্মৃতি শব্দহীন কেঁদে দিল। এই জড়িয়ে ধরাতে আবেগ ছিল। রিজভী বুঝিয়ে দিল তা স্মৃতিকে। অনেক সাধনা করে পেল তার রসমালাইকে। স্মৃতি বুঝে রিজভীর শার্ট খামচে ধরল। মিশে যেতে চাইল রিজভীর বুকে। ছাড়বে না আর। ছাড়লেই যদি হারিয়ে যায়? স্মৃতি কান্না করতে করতে মিষ্টি কন্ঠে বলল,
” স্বপ্ন, স্বপ্ন মনে হচ্ছে সব। কল্পনাও করিনি আজ আপনাকে পাব। পরিবার সব সময় শাসনে রেখেছেন। দাদি সব সময় নরম থাকতে বলেছেন, ব্যবহার নরম রাখতে বলেছেন, উগ্রতা হতে দেন নি। সব সময় জানিয়েছেন মেয়ে মানুষ নরম মাটি হয়ে থাকতে হয়। এই সব ছোট থেকে পেয়ে পেয়ে নিজের ভালো, মন্দ কোনো মন্তব্য, মত দিতে পারিনি৷ রাগী বাবার উপর জোর খাটানোর সাধ্যি আমার ছিল না৷ চাচুও এক কথার মানুষ। বাড়িতে দাদি যা বলবেন তাই। এসবের বাহিরে আমার ক্ষমতা ছিল না কিছু বলার। অনেক সময় মত দিতে পারতাম অনেকসময় পারতাম না৷ মা যদিও একটু সুযোগ দিতেন কখনো সাহস করতেন না বাবার উপর৷ আমারও ইচ্ছে অনেক লেখাপড়া করার। কুয়াশা ল’ পড়তে চায় শুনে ইচ্ছে করে কিন্তু কখনো বাড়িতে জানায়নি এসব৷ যদি না মানে? যদি বলে, মেয়ে মানুষের এত কিসের লেখাপড়া? লয়ার হয়ে কী হবে? সেই তো শ্বশুরবাড়ি গিয়ে খুন্তা নাড়াতেই হবে৷ আমার বড় চাচুর বড় মেয়ের ডক্টর হবার ইচ্ছে ছিল৷ কিন্তু দাদি পড়তে দেননি৷ অযথা নাকি টাকা নষ্ট! আর দেখেন না আমার বছর যাবত বিয়ের দেখাশোনা চলত অথচ আমি জানতামই না! কতটা হেলাফেলা মনে করেন আমাকে! বড় ভাইয়ারাও বাবার মতো শাসন করে রাখেন। বাড়িতে এসে যখন এসব শুনলাম বিশ্বাস করেন পুরো পৃথিবীই ঘুরে গেছিল আমার। ভেবেই নিয়েছিলাম আমার আর পাওয়া হবে না আপনাকে। আমি শিশির ভাইয়ার কাছে চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব৷ ভাইয়া না থাকলে এসব হতো না বোধহয়। ভাইয়ার বুদ্ধি, বিচক্ষণতা সত্যি অমায়িক। সবদিকে হ্যান্ডেল করে নিল। আর আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। তিনি আমার ভাগ্যে আপনাকে লিখেছিলেন৷ শিশির ভাইয়ার মাধ্যমে আমাদের এক করে দিলেন। “
কান্না করতে করতে কথাগুলো বলল স্মৃতি। রিজভী সবটা শুনল। সে-ও শিশিরের কাছে কৃতজ্ঞ। বন্ধু সে পেয়েছে কপাল করে। আল্লাহ এমন বন্ধু কয়জনের দেন? আজ যদি আল্লাহ সহায় না হতেন? শিশির যদি রাজি না করাতে পারত? তাহলে কী হতো? ভাবতে ভাবতে স্মৃতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। স্মৃতি আরো কিছুক্ষণ কাঁদল। রিজভী স্মৃতিকে বুক থেকে তুলল এবার। কপালে চুমু খেয়ে বলল,
” কেঁদো না আর৷ আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন৷ আমাদের পথ চলা দীর্ঘ হয়েছে। যতকাল বাঁচব একে অপরকে আঁকড়ে ধরে, আগলে রেখে বাঁচব। আমরা একে অপরের নিয়তিতে ছিলাম এই জন্যই তোমার পরিবার মেনেছেন। না মানলেও আমরা এক হতাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করব চলো। “
থামল রিজভী। আবার বলল,
” আর তুমি পড়বে। তুমিও ল’ নিয়ে পড়বে। আমি পড়াব তোমায়। সব রকম সুযোগ পাবে তুমি। এখন তুমি আমার অধিকার। তোমার ঐ বুড়ি দাদির কোনো জারিজুরি খাটবে না আর। আর না তোমার ঐ খারুচ বাপ, চাচার। “
স্মৃতি হেসে ফেলল রিজভীর শেষ কথাগুলো শুনে। তবে পড়াবে শুনে খুশি হলো। আবার জড়িয়ে ধরল রিজভীকে৷ রিজভীও আগলে নিল মিষ্টি বউকে। স্মৃতি বলল,
” ফ্রেশ হয়ে আসেন৷ “
রিজভী সম্মতি দিয়ে চলে গেল। স্মৃতি ঘরের দরজা আঁটকে দিল৷ কিছুক্ষণের মাঝে রিজভী এলো। গোসল করেছে। সারাদিন পর কেমন যেন লাগছিল৷ শরীর ঘেমেও চিপচিপ করছিল। সকালে গোসল করে বেড়িয়েছিল। সে শুধু লুঙ্গি পরে বেড়িয়েছে৷ স্মৃতি সেদিকে দেখে শরীর হিম হয়ে গেল। নগ্ন শরীর রিজভীর৷ ছেলেটা অমায়িক সুদর্শন। রিজভী ভালোভাবে চুল মুছে তাকাল বউয়ের দিকে। স্মৃতির অবস্থা বুঝে হাসল ঠোঁট টিপে। বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে বলল,
” এখনি হিম হলে হবে মিষ্টি রসমালাই? রসমালাই তো এখনো ছুঁয়েই দেখলাম না!”
এই লোকটা পাক্কা ফাজিল। শুধু লজ্জা দেয়। আজ কয়টা মাস এসব শুনে সয়ে গেছে সে। তাই কিছু মনে না করলেও লজ্জা আজ বেশি করছে কেন যেন। আবার গাল লালাভ হয়ে উড়ল। রিজভী হাসল অমায়িক। টিশার্ট পরতে পরতে বলল,
” ওজু করে আসো। নামাজ পড়ব “
স্মৃতি সম্মতি দিয়ে চলে গেল৷ কিছুক্ষণ পর ওজু করে এলো। দু’জনে নফল নামাজ সহ তাহাজ্জুদ পড়ে নিল৷ আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করল সাথে এই নতুন জীবনের সূচনা যেন হাজার বছরের দীর্ঘ হয় সেই দোয়াও করল। দু’জন নামাজ শেষ করে উঠল৷
রিজভী এবার বিছানায় বসে স্মৃতির দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিল৷ সে মিররের সামনে নিজের কাজ করছে৷ মেয়েটাকে শাড়িতে অসাধারণ লাগে। এই শাড়ির জন্যই তো সেদিন মেয়েটার উপর সে পিছলিয়েছিল৷ পুরোই রসমালাইয়ের ডিব্বা৷ লাল টুকটুকে একটা সিল্ক শাড়ি পড়েছে স্মৃতি। লম্বা দীঘল কাল চুল গুলো খোঁপা করা। পিছনে ঘাড়ের উপর বড় সড় বল হয়ে আছে খোঁপার জন্য৷ শরীরে টুকটাক ছোট ছোট সোনার গহনা। রিজভীর বাড়ি থেকে কিছুই আনেনি। শুধু আঙটি এনেছিল রিজভীর মা৷ বিয়ের কিছুই ভাবনায় ছিল না৷ রিজভীর মা ছেলে বউকে পরে সব দিবেন জানিয়েছেন৷ হঠাৎ বিয়ের আর কি’বা হয়!
রিজভী উঠে গিয়ে স্মৃতিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল৷ খোঁপা চুল গুলো দিল ছেড়ে৷ ঝরঝর করে ছড়িয়ে পড়ল পুরো পিঠ, কোমড় বেয়ে। কোমড়ের নিচে চলে গেল। রিজভী দেখে অভিভূত হলো। এদিকে স্মৃতি জমে আছে। রিজভী তার পেটে হাত রেখেছে তাও আবার নগ্ন পেটে৷ শাড়ির আঁচলের নিচ দিয়ে। ভেতর পর্যন্ত জড়িয়ে আসছে৷ রিজভী চুল দেখে বলল,
” তোমার এই চুলগুলো আমার ভীষণ প্রিয় জানো! শিশিরদের বাড়ি থেকে দেখেছিলাম প্রথম৷ এত সুন্দর চুল আমি দেখে অভিভূত হয়েছিলাম৷ “
স্মৃতি লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে মাথা নূয়ে নিল৷ স্মৃতি রিজভীর কাঁধের অনেকটা নিচে লম্বাতে। তবে সেটাতে রিজভীর কোনো ভাবান্তর নেই৷ তার ছোট খাটো গুলুমুলু রসমালাই সে৷ এত মিষ্টি কেন মেয়েটা? রিজভী কিছুক্ষণ মিররে দেখল স্মৃতির নূয়ে রাখা বদনখানি। এরপর কোলে তুলে নিল হঠাৎ। স্মৃতি চমকে উঠল। গলা জড়িয়ে ধরল ভয়ে। আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,
” আরেহ্ করছেন কী? ভয় পেয়ে গেলাম একদম!”
” আরো পাও ভয়। আমি তোমার ভয়ই দেখব আজ। কিন্তু আজ ছাড়ছি না আমার রসমালাইকে। রসমালাই আজ আমি খাবই। সুযোগ করে দিল আমার খারুচ শ্বশুরমসাই, সেই সুযোগ হাতছাড়া করব আমি? আমিই বোধহয় প্রথম যে পরীক্ষার হল থেকে বেড়িয়ে প্রেমিকার বাড়িতে এসে বিয়ে করে আবার সেই শ্বশুর বাড়িতে বাসর করব তাও আবার লুঙ্গি পড়ে। ভাবা যায় কী কপাল আমার! “
বলে রিজভী দাঁত বের করে দুষ্টু চোখে দুষ্টু হাসল। স্মৃতি জমে ক্ষীর। তার ভেতরে তুফান শুরু হয়েছে৷ হাপরের মতো ওঠা নামা করছে বুক৷ লজ্জায় না পেরে রিজভীর বুকে মুখ গুঁজে দিল। সুখ সুখ লাগছে তার। প্রজাপ্রতির ন্যায় উড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। রিজভী দেখে এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। হেসে নিয়ে স্মৃতিকে কোলে নিয়েই বিছানায় বসল। মাথাটা ঝুঁকিয়ে স্মৃতির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” আমার রসমালাই কী শুধু লজ্জায় নূয়েই থাকবে নাকি একটু টেস্টও করতে দেবে? পুরো ডিব্বা কোলের উপর নিয়ে বসে আছি। সামনে রেখে অপেক্ষা করতে পারছি না তো আর! “
রিজভীর এরকম লাগামহীন কথায় স্মৃতি বার বার ম-রছে। রিজভীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখল। মুখ সে তুলবে না৷ আজ এ ছেলে তাকে লজ্জা দিয়ে দিয়েই খু-ন করে ফেলবে নির্ঘাত! মুখ তুলে তাকানোর ক্ষমতা নেই তার। রিজভী বুঝে সে এবার নিজে থেকে বউয়ের মুখ তুলল৷ তাকাল মুখের দিকে। স্মৃতির চোখ বন্ধ। আদেশের সুরে বলল,
” তাকাও আমার দিকে! আর দ্বিধা থাকলে বলো আমাকে। আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আমি অপেক্ষা করব৷ “
স্মৃতি এবার চটজলদি চোখ খুলে তাকাল রিজভীর চোখের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নেশায় বুদ হয়ে উঠল সে। তার স্বামী এখন এই ছেলে। ভালোবাসা এতগুলো মাসের যেখানে সাধনা করে পেয়েছে সেখানে বাঁধা মানা কিসের? তারা এক হতে পারলে অন্তরের জ্বালা মিটবে।
স্মৃতি সম্মতি বোঝাতে রিজভীর গলা আঁকড়ে ধরল৷ আরেটু ঘনিষ্ঠ হতে চাইল৷ রিজভীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভালোবাসি খুব “
রিজভী সম্মতি তো পেলোই সাথে খুশিও হলো। এ মেয়ের মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা বের হওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া৷ এটা নিয়ে দু’বার বলল স্মৃতি ভালোবাসি৷ রিজভী মুচকি হেসে স্মৃতিকে আরো টেনে নিল। স্মৃতির নগ্ন,নরম পেটের মাঝে হাত গলিয়ে শক্ত করে ধরল। ঝুঁকে স্মৃতির ঠোঁটে ঠোঁট দিল। স্মৃতি রিজভীর ঘাড় আঁকড়ে ধরে সম্মতি দিল৷ রিজভী স্মৃতির পেট খামচে ধরল। গুঙিয়ে উঠল সে। কিন্তু রিজভী আরো গভীর হলো। তার ছোঁয়া, চাওয়া সব গভীর হতে লাগল। স্মৃতি সামলাতে ব্যস্ত হলো অস্থির স্বামীকে।
রিজভী অবশেষে পেল তার রসমালাইকে পূরোপুরি রূপে। আজ থেকে কোনো বাঁধা নেই। তাদের প্রণয়ের পরিণয় হয়েছে। তাদের প্রণয়ের পূর্ণতা পেয়েছে। মিলেছে তাদের নিয়তি। এক সুত্রে বাঁধা পড়েছে তারা৷ ভালোবাসা সফল হয়েছে তাদের৷ আজবীনের সঙ্গী হয়েছে দু’জন৷ এখন তারা অর্ধাঙ্গ-অর্ধাঙ্গিনী।
__________
এদিকে কুয়াশা হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। সেই কখন থেকে সে হেসেই চলেছে। সেই হাসি যেন থামাথামির নাম নেই৷ বিছানার মাঝখানে বসে থেকে থেকে দম ফাটা হাসিতে মত্ত হচ্ছে সে। আর শিশির বিরক্ত মুখে চোখ-মুখ কুঁচকে বউয়ের হাসি দেখে যাচ্ছে৷
কুয়াশার হাসির কারণ শিশিরকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখে৷ স্মৃতির বাড়ি থেকে শিশিরদের আলাদা ঘর দেয়া হয়েছে। রাতে শোবার জন্য শিশিরকেও লুঙ্গি দেয়া হয়েছে। মূলত যখন থেকে শিশিরকে লুঙ্গি পরে বের হতে দেখেছে তখন থেকে তার হাসি সঙ্গী হয়েছে।
আসলে শিশির লুঙ্গি বেশি পরে না৷ সে বাড়িতে থাকলে টাউজার পরেই থাকে আর রাতেও সেটা পরেই শোয়। লুঙ্গি খুব প্রয়োজন ছাড়া ইউজ করে না। ঘরের বাহিরে তো একদমই না৷ তার নাকি আনইজি লাগে। আর বিয়ের পর লুঙ্গি পড়াও হয়নি। সেই জন্য কুয়াশা এখন লুঙ্গিতে দেখে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আগে পড়েছে কিনা কুয়াশার সেসব মনে নেই। বড় হওয়া অবধি আজ প্রথম দেখল। কিন্তু কুয়াশার কাছে নাকি খুবই হাস্যকর লাগছে লুঙ্গিতে শিশিরকে।
শিশির কটমট করছে বউয়ের কার্বার দেখে। আশ্চর্য পাগলের পাল্লায় পড়ল তো! লুঙ্গিই তো পরেছে সে! এখানে হাসির কি আছে এত? অদ্ভুত!
না পেরে দিল ধমক। বলল,
” এ্যাই গোবর ঠাঁসা! থামবি তুই?”
কুয়াশা হাসতে হাসতে বলল,
” থামছে না হাসি। সিরিয়াসলি তোমাকে সেই লাগছে! আসো একটা ছবি তুলে দিই”
শিশির কুয়াশার মাথায় এবার জোরে সোরে চাটি বসাল৷ কুয়াশার হাসি এবার আপনাআপনি পালাল। কথায় আছে না? মাই-রের আগে ভূত পালায়! ঠিক তেমন। শিশির বলল,
” ফাজিল, থামেনা বলে তোর হাসি? মা-রের আগে ভূত পালায়৷ তোকে চব্বিশ ঘণ্টা মা-রের উপরই রাখতে হবে। “
কুয়াশা দাঁত কিড়মিড় করতে করতে শিশিরের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। শিশির আবার বসাল চাটি। এবার রেগে গেল কুয়াশা। মানে তার কাছে হাস্যকর লেগেছে বলে সে হেসেছে! সেটাও আবার তারই মুখে। তো এই বুনো ওলের কী খসে পড়ল তাতে? যার জন্য মা-রতে হবে! রেগে বলল,
” এ্যাই বুনো ওল! আমার হাসি পেয়েছে তাই হাসছি৷ এখানে মারার কি হলো? বেয়াদব বুনো ওল “
শেষ কথাটা বলতে বলতে আধশোয়া হয়ে বসে থাকা শিশিরের চুলগুলো দিল আচ্ছা মতো টেনে। শিশির দু’হাত দিয়ে কুয়াশার হাত ছাড়িয়ে নিল। রাগ নিয়ে তাকাল। বলল,
” ফাজিল, হাসছিস তুই আমার উপর। আর আমি ছেড়ে দেব? ওরা এখন লুঙ্গি পরতে দিল। এখানে আমি টাউজার কই পাব গোবর ঠাঁসা? এতে তোর হাসতে হচ্ছে কেন এত? “
” কখনো দেখি নি তাই। “
” কেন তুই তোর স্বামীকে ছোট থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিস অথচ লুঙ্গি পরা দেখিস নি? “
কুয়াশা ভ্যাবাচ্যাকা খেল। বলল,
” ধুর আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আর বড় হয়ে একদিনও দেখিনি “
শিশির ভাবল। সত্যি সে তো! কখনো বাহিরে লুঙ্গি পরে বেরই হয়নি। আর সে কেন? কোনো ভাই-ই না। বেশি একটা লুঙ্গি পরে বেরোই না। বাবা, চাচু পরে শুধু। আর তুষার, তুহিন ভাই মাঝে মাঝে পরে বের হয়। নীহারও কখনো লুঙ্গি পরে না। বলল,
” হ্যাঁ, তা ঠিক। আমি লুঙ্গি পরে বের হয়না৷ প্রয়োজনে পরি। বিয়ের পর পরিও নি। আর যখন মস…..”
থেমে গেল৷ বিব্রত হলো শিশির। কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল। জিজ্ঞেস করল,
” কি?”
শিশির নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
” না মানে, যখন লুঙ্গি পরার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল তখন তোর জন্মই হয়নি। আর হলেও ছিলি লেদা বাচ্চা। দেখবি কি করে? “
কুয়াশা খুবই লজ্জা পেল৷ কী জ্বালা! বউয়ের বড় হওয়া দেখেছে এই বুনো ওল! শিশির বুঝে হাসল ঠোঁট কামড়ে। কুয়াশার পেট ধরে উঁচু করে তুলে বসিয়ে নিল নিজের ঊরুর উপর। সে আধশোয়া অবস্থায় বসে। কুয়াশার ঠোঁটে লজ্জা মাখা হাসি ঝুলছে এখনো। শিশির তা দেখে বলল,
” কী ভাগ্য আমার৷ বউয়ের জন্ম হবার পর থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত দেখলাম। তুই নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছিলি তাও আবার রাতে। আমার খুব বেশি কিছু মনে নেই৷ তবে চার বছর বয়সের স্মৃতি কিছু কিছু মনে থাকে। আমারও আছে৷ রাতে তো আর জেনেছিলাম না যে বউ আমার পয়দা হয়েছে। “
শেষ কথাটু্ুকু বলতে গিয়ে শিশির নিজেই হেসে ফেলল। কুয়াশা তা শুনে ফুঁসে উঠল। কয়েকটা কি-ল, ঘু-ষি, চা-প্পড়, থা-প্পড়ও ফ্রিতে খেল বউয়ের হাতে। সেগুলো দিয়ে কুয়াশা ক্ষান্ত হলো না। শিশিরের চুল ধরে টেনে দিয়ে বলল,
” ফাজিল বুনো ওল”
শিশির হেসে কুটিকুটি হচ্ছে কথাটা ভাবলেই। হেসে নিয়ে আবার বলল,
” আরেহ্ শুনবি তো গল্পটা! “
বলে সে আবার বলা ধরল,
” তো সকালে যখন শুনলাম বউ আমার পয়দা হয়েছে তখন কিছু বুঝেছিলাম না৷ তারপর যখন তোকে দেখলাম ছোট আম্মুর কোলের মাঝে শুয়ে ফ্যালফ্যাল করে বড় বড় চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছিস, চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছিলি তখন বুঝলাম তোর কথা বলেছে সব৷ সকলের আদিক্ষেতা দেখে আমি রীতিমতো বিরক্ত। ভাবছিলাম, আজব! এত নাচানাচির কী আছে সকলের? তোকে নিয়ে সব আমদে-আহ্লাদে মাতল। আমার পাত্তা আর কেউ দিচ্ছিল না৷ রাগে ফুঁসতাম। আমার আদর সব তুই নিয়ে নিলি৷ তোকে নিয়ে সকলে ব্যস্ত হলো৷ এর কোল থেকে ওর কোলে ঘুরতে লাগলি। আমি যে কী ঐ বাড়ির তাই-ই সকলে ভুলে গেল৷ ছোট চাচু আমি বলতে পাগল ছিল অথচ তুই হতে না হতেই তোকে নিয়ে আদর করা শুরু করল। আমাকে আর বেশি আদর করত না। নীহার ভাই তোকে কোলে করে নিয়ে নিয়ে বসে থাকতে লাগল। সে তোর কাছ থেকে উঠবেই না ভাবটা এমন। ও তো ছোট ছিল তবুও ও কী বুঝেছিল কে জানে! কিন্তু আমার কেন যেন তোর উপর রাগ ছাড়া কিছুই আসছিল না৷ আমাকে কেউ বেশি কোলে নিত না আর, আদর করত না। ভাইরা তোকে নিয়ে ঘুরত৷ এসব দেখে দেখে ছোট্ট আমি খুব হিংসা করতাম৷ এরপর থেকে তুই যত বড় হতে লাগলি তত হিংসা হতে শুরু করল৷ কারন সকলে তোর গুণগানে পঞ্চমুখ৷ কিউটের ডিব্বা হয়েছিলি নাকি৷ কিন্তু তোকে তো আমি তাকিয়েও দেখতাম না। দেখলেই মা-রতে ইচ্ছে করত। তোকে আমার কাছে পেত্নীর থেকে কম কিছু লাগত না “
এইটুকু বলতে না বলতে আবার খেল মা-র৷ বুকের উপর কি-ল খেল বউয়ের হাতে৷ শিশির ‘আহ্’ করে উঠে হাসল আবার৷ বলল,
” আরেহ্ আগে তেমন কিছুই মনে হতো আমার। তোকে সহ্যই করতে পারতাম না৷ ভাইরা যে আদিক্ষেতা তোকে নিয়ে করত বাবাহ্ রে বাবাহ্! যেন মেয়ে আর কারো বাড়ি নেই! হ্যাঁ, যদিও একটা মেয়ে ছিলি তাও তোর জন্য কেন অন্যর আদর কমাতে হবে?”
কুয়াশা শিশির বুকের উপর এবার শুয়ে পড়ল ঊরুর উপর বসে থাকতে থাকতে৷ শুয়ে শিশিরের বুকে কামড় দিল আলত করে। বলল,
” হিংসুটে বুনো ওল একটা তুমি। আর আদর কমেছিল না তোমার। শুধু আমার আদর বাড়িয়েছিল বলে তোমার এমন মনে হতো। “
” হ্যাঁ, কিন্তু তখন তো ছোট ছিলাম। ওসব কী বুঝতাম নাকি? “
কুয়াশা উত্তর করল না৷ শিশির কুয়াশা চুল কানের পিঠে গুঁজে দিল। ডান হাতটা তুলে কুয়াশা গালে রেখে বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ঠোঁটের পাশে স্লাইড করতে লাগল। করতে করতে বলল,
” তোকে তো বিয়ের পর থেকে অন্য রূপে অন্য চোখে দেখা ধরলাম। বিয়ে না হলে বোধহয় আজীবন হিংসার পাত্রীই থাকতি। কিউটের ডিব্বা তোকে বিয়ের পর মনে হয়েছে৷ আগে যদি জানতাম সেদিনের ঐ কাপড়ের টুকরোর মাঝে শুয়ে বড় বড় চোখ দু’টো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখা ইট্টুখানি মেয়েটা বউ হবে আমার তাহলে বোধহয় হিংসা না করে সেদিন থেকেই আদর করা শুরু করতাম। “
কুয়াশা আবার একটা কি-ল বসাল বুকে। লজ্জা পেয়ে হাসল। সে নিজের চিবুকের নিচে দুই হাত মেলে হাতের পিঠে ভর দিয়ে শিশিরের উপর শুয়ে আছে আর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে গল্প শুনছে৷ শোবার কায়দাটা এমন যেন সে বিছানায় উপর হয়ে শুয়ে বই পড়ছে৷ ভাবে লাগছে শিশির ওর বিছানা। শিশির গল্প বলছে আর কুয়াশার দিকে তাকাচ্ছে। কুয়াশা বলল,
” ভালোই হয়েছে হিংসা করে। তোমাকে ছোট থেকে কামড়াতে তো পেরেছি! “
বলে খিলখিল করে হাসল সে৷ শিশির বলল,
” তাই না? বেয়াদব আবার গলাবাজি করে বলছিস? মেয়ে ছিলি আর সম্পর্কে বোন হতি৷ নয়তো তোকেও দেখাতাম কামড় কত প্রকার৷ “
” হ্যাঁ, এখনতো ঠিকই দাও বুনো ওল “
এই কথায় শিশির কুয়াশাকে টেনে নিল উপরে৷ মুখোমুখি করল কুয়াশাকে। বলল,
” এখন তো তুই আমার লিখিত জিনিস। বোনটোন আছিস নাকি আর? বউ এখন৷ আর বউয়ের উপর স্বামীর জোর কত এবার ভাব! “
কুয়াশা মুচকি হেসে শিশিরের গলার মাঝে মুখ গুঁজল। চুমু আঁকল সেখানে৷ ধারাল দাঁত দিয়ে শিশিরের গলার চামড়াতে ছোট ছোট দু’টো কামড় দিল ইঁদুরের ন্যায়। শিশির টের পেল সব। বলল,
” ওহ্ তোর তো চুমুর বর্ষণ ঘটানোর কথা। নেহ্ শুরু কর তোর চুমুর বর্ষণ। তখন নাচতে নাচতে এসেছিলি চুমুর বর্ষণ ঘটাতে। এখন শুরু কর। “
কুয়াশার নিজের কপালে নিজেরই চাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করল। কোথায় ভাবল ভুলে গেছে হয়তো৷ মুখ তুলে বলল,
” আরেহ্ আনন্দে বলেছিলাম। সকলের মুখে আমার স্বামীর গুণগান শুনে৷ আমার গর্ব হচ্ছিল তাই সেই গর্ববোধ থেকে তোমাকে চুমু দিতে ইচ্ছে করছিল৷ “
” তো এখন দে সেই গর্ববোধ থেকে৷ মানা করছে কে?”
কুয়াশা বিরক্ত হলো। বিরক্ত নিয়ে নেমে যেতে নিল। শিশির নামতে দিল না৷ ফিসফিস করে বলল,
” হানিমুনে যাচ্ছি আমরা। আট দিন পর একটা পরীক্ষা আছে৷ ওটা দিয়ে দুইদিন পরেই রওনা দেব। তোর পরীক্ষাও এই সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।”
কুয়াশার বুকে বাড়ি লাগল হানিমুন শব্দটা৷ তাকাল শিশিরের দিকে৷ অদ্ভুত সেই দৃষ্টি। শিশির আবার বলল,
” সাজেক যাচ্ছি। ভেবেছিলাম কক্সবাজার যাব। কিন্তু সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছি। আরো পরে যেতাম কিন্তু এখনই যাব। আমার আহ্লাদী বউকে নিয়ে সাজকের মেঘের রাজ্যে ডুবব। “
থেমে কানের কাছে মুখ নিয়ে কানের সাথে ঠোঁট ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে বলল,
” শুধু মেঘের রাজ্যে না আমার আদরের রাজ্যেও ঘুরাব তোকে, রেডি হ গোবর ঠাঁসা। এবার আর ইতিউতি শুনব না তোর”
কুয়াশার বুকের মাঝে ধুকপুক করতে লাগল৷ শিশিরের বুকে মাথা রাখল৷ শিশির আবেশে শক্ত হাতে ধরল বউকে বুকের সাথে। মাথার চুল সমেত চুমু আঁকল।
__________
হসপিটালে সকলে জাকির মালিথাকে নিয়ে ছুটা ছুটি করছে৷ সকলে কেঁদে কেটে অস্থির।
ঠিক সে-সময়ে নীহারের ফোনে কল এলো অপরিচিত নাম্বার থেকে। আর কল পাবার সাথে সাথে ওপাশের কথা শুনে আপনা আপনি নীহারের পা জোড়া ভেঙে পড়ে গেল। বসে পড়ল ফ্লোরে। শরীর হিম হয়ে এলো। তুহিন দৌড়ে নীহারের কাছে এসে বলল,
” নীহার! ভাই ঠিক আছিস তুই? “
নীহার ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল ভাঙা ভাঙা কন্ঠে,
” ভাই, শিশির…! “
| চলবে |
নোট- শেষটুকু পর্ব ৫৪ এর ট্রেইলার
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click