| ১৮+ এলার্ট
®রোজা রহমান
‘
সময় বহমান কথাটা চিরন্তন সত্য। সময় চলে তার আপন গতিতে। তেমনি চলে গেল দুইটা মাসের বেশি সময়। এই দুইটা মাসে অনেক কিছুই পাল্টেছে। মাস, দিন, ক্ষণ, বার সবই পাল্টেছে। পাল্টেছে মালিথা ভিলার রঙ৷ হাসি খুশি মালিথা ভিলা যেন মরুভূমি হয়ে ছিল। বাড়ির আসল প্রাণগুলো না থাকায় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে ছিল৷ প্রাণের সঞ্চার ঘটানো সদস্যের জন্য বাড়িটা মৃত্যুপুরি হয়ে ছিল। সব সময় যে মালিথা ভিলায় হাসিখুশি বিরাজমান থাকত সেই হাসি মালিথা ভিলায় দুই মাসে কালেভদ্রে দেখা যেত। মন চাইলে একটু প্রাণখুলে হাসত না চাইলে বিরস বদনে দিনযাপন করত।
এই দু’মাসে সকলে এক একটা দিন গুণেছে বাড়ির আসল প্রাণগুলোর ফিরে আসার৷ আসল ছায়াটাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে আসার৷ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুধু ফরিয়াদ করেছে তাদের হাসি খুশির কারণ যিনি তিনি যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন৷ আবার আগের মতো চলতে চায় সকলে।
‘
দুই মাসের বেশি সময় গিয়ে মাসের নাম পাল্টে এসেছে ডিসেম্বর মাস৷ বাংলা মাসের নাম পরিবর্তন হয়ে এসেছে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাস। ঋতু নাম পরিবর্তন হয়ে এসেছে শীতকাল। আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে হয়েছে ঠান্ডা,শুষ্ক।
ডিসেম্বরের ত্রিশ তারিখ। আজ মালিথা ভিলা উৎসবমুখর মনে হচ্ছে। হবে না-ই বা কেন? বাড়ির বট গাছটা যে ফিরছে। আল্লাহ সেই বট গাছকে সুস্থতা দান করেছেন। জাকির মালিথা এখন অনেকটা সুস্থ। তিনি এখন সকলকে চিনতে শিখেছেন, কথা পরিষ্কার করে বলতে শিখেছেন৷ প্যারালাইড পাশটাও নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷ তবে এখনো ঠিক হয়নি৷ নাড়াচাড়া করতে পারেন কিন্তু তুলতে পারেন না।
ঢাকায় বড় হসপিটালে নিয়ে বড় বড় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বড় বড় চিকিৎসক দিয়ে জাকির মালিথার চিকিৎসা করানো হয়েছে। সেখানে উন্নত চিকিৎসক ও উন্নতমানের চিকিৎসায় জাকির মালিথা সুস্থ হয়েছেন অনেকটা৷ চিকিৎসকের বিভিন্ন রকম থেরাপি সহ বিভিন্ন পরামর্শ জাকির মালিথাকে দেয়া হয়েছে। কোনো ত্রুটি রাখা হয়নি। আল্লাহর মর্জিতে তিনি সুস্থতা পেয়েছেন৷ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম সহ সব ধরনের সেবা জাকির মালিথাকে দেয়া হয়েছে৷ আর এইসব কিছু শুধু আর শুধু মাত্র মালিথা ভিলার কৃতিত্বে। জাকিয়া স্বামীকে নিয়ে এক মূহুর্ত অবহেলা করেননি। আর না স্বামীকে নিয়ে হাঁপিয়ে ওঠেছেন। কোনো কষ্ট মনে করেননি সর্বদা স্বামীর সেবায় নিয়জিত ছিলেন। পাশে ছিলেন আম্বিয়া, নীহার, তুহিন। জাকিয়া একা হাতে সব সামলেছেন। স্বামীর প্রতি ভালোবাসা নিয়ে তিনি সব কাজ নিজে হাতে করে গেছেন।
আম্বিয়া পাশে থেকে জা’কে সঙ্গ দিয়েছেন। নীহার, তুহিন মা, চাচি, চাচুকে আগলে রেখেছে। ডক্টরের যত প্রকার রুটিন, সেবা, পরামর্শ নেয়া এসব কিছু নীহার, তুহিন করেছে। আজ তারা ঢাকা থেকে ভোর ছয়টায় রওনা হয়েছে। এবার বাড়িতে এসে চিকিৎসা চালাবে৷ ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে সেই অনুযায়ী বাড়িতেই সেবা দেয়া হবে জাকির মালিথাকে।
‘
ঘড়ির কাঁটায় সকাল আটটা। মালিথা ভিলাতে আনন্দের জোয়ার নেমেছে৷ সকলে হাসি মুখে দৈনন্দিন কাজ করছে। সোরগোল, দৌড়ঝাপ করে কাজ করছে। রান্না বান্না সহ গোছগাছ করছে৷
শিশির সপ্তাহ খানেক আগে থেকে হাঁটাচলা করে৷ সপ্তাহখানেক আগে নিয়ে গিয়ে ব্যান্ডেজ সহ আবার এক্সরে করে আনা হয়েছে। ডক্টর জানিয়েছেন এখন সুস্থ। আর কোনো অসুবিধা হবে না। হাঁটাচলা করতে পারবে।
বাড়িতে বউ এবং শাশুড়ীর সেবায় জলদি সুস্থ হয়েছে। কুয়াশা এক মূহুর্তের জন্য কাছ ছাড়া হয়নি। সর্বদা স্বামী সেবায় নিয়জিত ছিল৷ আজমিরা নিজের সংসার সহ মেয়ের সংসারের খেয়ালও রেখেছন৷ কুয়াশাকে সবকিছু দেখিয়ে, বুঝিয়ে দিয়েছেন৷ মেয়ে তার পাক্কা গিন্নি তৈরি হয়েছে৷ শিশির সেসব দেখে দেখে শুধু মুগ্ধ হয়েছে। রোজ গোসল করানো, তিন বেলা খাওয়ানো সাথে সময় মতো ঔষধ খাওয়ানো সবকিছু একা হাতে সামলেছে। শাশুড়ীর মতো সে-ও স্বামী সেবায় নিয়জিত ছিল৷ দুই শাশুড়ী বউ মিলে স্বামী সন্তানকে সুস্থ করেছে৷ একেই তো বলে স্বামীর প্রতি দায়িত্ব।
ইয়াসমিন আজমিরাকে সাহায্য করেছে সাথে বৃষ্টিকে সব সময় সঙ্গ দিয়েছে। বৃষ্টির এখন সাত মাস চলছে। পেট অনকটা বড় হয়েছে তার। হাঁটা চলা করে না বেশি। সব সময় ঘরেই থাকে। আজমিরা বৃষ্টিকে একটুও নিচে নামতে দেন না। উনার কথা বাড়িতে দুঃখ সময়ের অভাব নেই। আর কোনো দূর্ঘটনা যেন না হয় সে-সব দিকেই খেয়াল রাখেন। তুষার বউ বাচ্চা সহ নিজের ডিউটি, সংসার, এবং বাবার জন্য সব ধরনের করনীয় কাজ সামলেছে৷ বাড়ির বড় ছেলের দায়িত্ব সে নিজে হাতে পালন করেছে। ছোট্ট হিম ভাইদের সকল কাজে সাহায্য করা শিখে গেছে। অনেক দায়িত্ব বুঝতে শিখে গেছে। বাস্তবতা চোখের সামনে মেলে ধরতে শিখেছে।
‘
সকাল এগারোটার দিকে শশী, মিহির এলো জিনিয়ারা কাল আসবে৷ আজ শশী জোর করে চলে এসেছে। সে আগে খালুকে দেখবে৷ শিশির ভাই সুস্থ হয়েছে সেটা শুনে আরোই থাকেনি৷ ঈশা, স্মৃতি, রিজভী প্রায় এসে এসে কুয়াশা, শিশিরকে সঙ্গ দিয়ে গেছে। আজ বিকেলে তারাও সকলে আসবে।
দুপুর দেড়টার দিকে জাকির মালিথাকে নিয়ে এম্বুলেন্স এসে মালিথা ভিলার সামনে থামল। তুষার, শিশির দৌড়ে এগিয়ে গেল। জাকিয়ারা কার থেকে নেমে দাঁড়াল। ছেলেরা সকলে আদরে৷ আহ্লাদে ভেঙে পড়ল বাবাকে দেখে৷ ছলছল চোখে চেয়ে রইল। জাকির মালিথাকে এম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে বসানো হলো। শিশির, তুষার এক সাথে হুইল চেয়ারে থেকে বাবাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল,
” বাবা..! কেমন আছো বাবা?”
জাকির মালিথা ছলছল চোখে কান্না ভেজা কন্ঠে ঠোঁটে অমায়িক হাসি ফুটিয়ে তুললেন৷ ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললেন,
” আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?”
” আলহামদুলিল্লাহ “
দুইভাই এক সাথে বলে উঠল। এরপর শিশির বলল,
” আমরা তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি বাবা৷ বুকটা এতদিন ফাঁকা ফাঁকা ছিল। এখন শান্তি লাগছে “
জাকির মালিথা অমায়িক হাসলেন। চোখ ঘুরিয়ে উপস্থিত সকলকে দেখলেন৷ কয়েকজন নেই এখানে। আর সব থেকে বড় পাগলীটাও নেই। ভেবেই হাসলেন। জাহিদ মালিথার দিকে তাকিয়ে কাছে ডাকলেন৷ জাহিদ মালিথা নিচে বসে পড়লেন এগিয়ে এসে৷ ভাইয়ের পায়ের কাছে বসে ঝরঝর করে কেঁদে দিলেন৷ তার ভাই হাঁটতে পারছে না। জাকির মালিথা ভালো হাতটা তুলে মাথার উপর দিয়ে আদর করলেন। বললেন,
” আমি আবার হাঁটতে পারব দেখিস। তোদের জন্য আবার হাঁটব৷ আমার এতবড় সংসার আর ভালোবাসা কখনো বিফলে যাবে না। তোদের ভালোবাসায় আবার সুস্থ হব “
নিরবে কেঁদে দিল সব৷ শশী ফুঁপিয়ে এগিয়ে এসে বলল,
” খালু, আমাকে চিনতে পারছেন তো?”
” এই ছোট্ট মিষ্টি মামনিটাকে না চিনলে চলে? এদিকে এসো “
শশী গিয়ে কাছে বসতেই আদর দিলেন জাকির মালিথা। হিম এগিয়ে এসে চাচুকে জড়িয়ে ধরল। চাচু ছোট ছেলেটাকে অনেক আদর করল। সকলে মুচকি হাসল। জাকিয়া বললেন,
” চলো ভেতরে গিয়ে রেস্ট নেবে আগে “
সকলে জাকিয়ার দিকে তাকাল। কতটা শুকিয়ে গেছে! স্বামীর জন্য দিনরাত এক করেছিলেন তো শুকোবে না? চোখের নিচে কালি পড়ে দেবে গেছে চোখজোড়া। বয়সটা যেন বেড়ে গেছে৷ শিশির এগিয়ে গিয়ে মা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। মা’য়ে গন্ধ কতদিন পর পেল সে! আহ্ প্রাণটা জুড়িয়ে গেল৷ তার মা সেরা মা৷ বাবার জন্য সব ছেড়ে ছুড়ে কোথায় পড়ে ছিল!
তুষার গিয়ে বাবার হুইল চেয়ার ধরে বাড়ির মধ্যে এগিয়ে গেল। সকলে পিছন পিছন গেল৷ দরজার মুখে যেতেই আজমিরা দৌড়ে এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে পায়ের কাছে বসে পড়লেন৷ কেঁদে দিলেন ঝরঝর করে। জিজ্ঞেস করলেন,
” ভাইজান, কেমন আছেন আপনি?”
জাকির মালিথা আজমিরার মাথার উপর হাত দিয়ে সালামের জবাব দিয়ে অমায়িক হেসে বললেন,
” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷ তোমরা সকলে কেমন আছো? “
” আমরাও ভালো আছি “
এরপর কিছু কথা বলে বসার ঘরে সোফায় বসিয়ে দেয়া হলো জাকির মালিথাকে। অনেকদিন বাদে নিজের বাড়িতে পা রেখে, নিজের আপন জনদের দেখে আপন সত্ত্বায় ফিরে এসেছেন তিনি। সকলে জাকির মালিথাকে নিয়ে ব্যস্ত হলো। বৃষ্টি ইয়াসমিনকে নিয়ে আলগোছে নেমেছে৷ বৃষ্টিকে দেখে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক আদর দিলেন৷ ইয়াসমিনকেও একই ভাবে আদর দিলেন৷ সকলের মুখে প্রশান্তিময় হাসি৷ জাহিদ মালিথা ভাইয়ের পাশে আগের ন্যায় বসলেন। ঠিক যেমন আগে বসত তেমন। টুকটাক কথা বলে তিনি চোখ ঘুরিয়ে কাউকে খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না৷ জিজ্ঞেস করলেন,
” আমার মা কই? “
সকলে বুঝল কার কথা বলছে৷ তাকিয়ে দেখল সে নেই৷ শিশির জবাব দিল,
” তোমার আহ্লাদী কাঁদছে বোধহয় ঘরে বসে “
” যাও নিয়ে এসো আমার মা’কে। আমার মা’কে দেখার জন্য আমার বুকটা খা-খা করছে ”
সকলে মুচকি হাসল৷ শিশির শশীকে বলল কুয়াশা ধরে আনতে। আহ্লাদী সবকিছুতে আহ্লাদ করে। শশী গিয়ে কুয়াশাকে জোর করে আনল। সে আসবে না। অভিমান করেছে চাচুর উপর। সিঁড়ি দিয়ে নেমে ফুঁপাতে ফুঁপাতে এগিয়ে এলো৷ চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে৷ চাচুকে কতদিন পর দেখল? কতটা শুকিয়ে গেছে! সেই মানুষটা আর নেই। জাকির মালিথা একমাত্র মেয়েটাকে দেখলেন৷ জাকিয়ার থেকে পরে সব শুনেছিলেন তিনি যে কাউকে চিনতে পেরেছিলেন না৷ শিশিরের এক্সিডেন্টের কথাও শুনেছিলেন। ডাকলেন,
” কুহেলি মা..! “
আহ্! কতদিন পর ডাকটা শুনল। প্রাণ জুড়িয়ে গেল সাথে শব্দ করে হাউমাউ করে কেঁদে চাচু পাশে বসে বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিল। ঝরঝর করে কাঁদতে থাকল। চাচু তাকে চিনেছে। চাচু তাকে আবার ডেকেছে। এর থেকে আনন্দের আর কি হয়? এটা আনন্দের কান্না৷ জাকির মালিথা মুচকি হেসে মেয়েকে আগলে নিলেন৷ বললেন,
” আমার মা “
” চাচু, ও চাচু কেমন আছো তুমি?”
” আমি ভালো আছি মা৷ আমার এই কুহেলি মা’কে দেখে আরো ভালো হয়ে গেলাম। বুকে শান্তি লাগছে৷ আমার চঞ্চল মা’য়ের দৌড় ঝাপ দেখলে আরো সুস্থ হয়ে যাব “
কুয়াশা ঝরঝর করে কাঁদল। কোনো কথা বলল না৷ অনেকক্ষণ কেঁদে চোখ মুছে চাচুর শরীরের গরম শাল চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে দিল। এরপর বাড়ির সকলকে দেখল। শাশুড়ীকে দেখে জড়িয়ে ধরল। হাসল জাকিয়া৷ মেয়েটাকে আগলে ধরল। কী অবস্থা হয়েছে মানুষটার! সেই ফর্সা, লম্বা, একহারা শরীরের সুন্দরী মহিলাটার কী হাল হয়েছে? বলল,
” আম্মু! কেমন আছো তুমি?”
” আমি ভালো আছি মা “
এরপর টুকটাক কথা বলে সকলে ফ্রেশ হয়ে দুপুরে খাবার খেল একসাথে। অনেক দিন পর আবার আগের মতো এক টেবিলে বসে। তুষাররা বাবাকে বাবার সেই চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছে। তিনি হাত দিয়ে খেতে না পারুক একসাথে বসতে তো পারবে? মনে তো হবে সেই শক্ত ভিতটা এখনো পাশে আছেন! আজকে কুয়াশা খাইয়ে দিল চাচুকে। জাকিয়ার দায়িত্ব কমল৷ এখন সকলে মিলে দেখবেন জাকির মালিথাকে।
খাবার খেল আর টুকটাক গল্প সাথে হাসি মজাও চালাল। আহ্ সকলের বুকটা নিমেষেই শান্তি তো মিলেছেই সাথে ভারী পাথর নেমে হালকা হয়েছে৷ মালিথা ভিলা আবার আগের সত্ত্বায় ফিরে এসেছে। কানায় কানায় হাসিখুশিতে ভরে গেছে৷ আবার হাসতে শিখেছে মালিথা ভিলা৷
‘
বিকেলে স্মৃতি, রিজভী, ইয়াসমিনের বাবারা এলেন। বাড়িটা ভরে গেল। আগামীকাল সকল আত্মীয়রা আসবে জাকির মালিথাকে দেখতে। আগামীকাল মিলাদ পড়ানো হবে বড় করে। সেসবের আয়োজনও করা হলো। জাহিদ মালিথা সহ তুষাররা করছে
সন্ধ্যা গড়িয়ে গেছে। সকলে রেস্ট নিয়ে আজান দিলে নামাজ আদায় করে নিল। বসার ঘরে বসে আছে সকলে। স্মৃতিরা আজ থাকবে। শিশির জোর করে আঁটকে রেখেছে। বসার ঘরে সব আড্ডাতে মেতেছে। বৃষ্টিকেও আনা হয়েছে৷ বৃষ্টিকে ছাড়া যেন সকলের আড্ডা জমে না। বড় ভাবি হিসেবে খুবই ফ্রি সে৷ সকলের ভালোবাসার একটা ব্যক্তি। জাকির মালিথাকে উপরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিন জা রান্না করছেন৷ অনেকদিন পড়ে আবার তিন জা একসাথে হয়েছেন।
___________
রাত এগারটা। আজ সকলে ক্লান্ত। তাই খাওয়া দাওয়ার পার্ট চুকিয়ে সকলে শুতে চলে গেছে। একটু আগেই সব খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে৷
কুয়াশা ওদিকে সামলে ঘরে এলো। শিশির বই পড়ছে কম্বলের নিচে বসে৷ সে অসুস্থ থেকে ঘরে বসেই পড়ত৷ পরীক্ষা তার জানুয়ারিতে। কুয়াশা এসে ভ্রু কুঁচকাল। খিটমিট করছে চোখমুখ। বুনো ওলটা কী সব ভুলে গেছে! দরজা শব্দ করে আঁটকাল৷ এগিয়ে এসে শরীরের চাদরটা খুলে রেখে এলো৷ বলল,
” এ্যাই যে পড়ুয়া বুনো ওল! আপনি কী পড়েই যাবেন?”
মুখ তুলে তাকাল শিশির। ভ্রু কুঁচকাল। তো কি করবে সে? প্রশ্ন করল,
” তো এখন কি করব আমি? সাত তারিখ থেকে পরীক্ষা আমার। তাই পড়ছি। তুই ঘুমো “
কটমট করে উঠল কুয়াশা। রেগেমেগে বলল,
” ওরে আমার পড়ুয়া ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রে .. পড় তুই বুনো ওলের বাচ্চা! পড়তে পড়তে মঙ্গলগ্রহে যাহ্। তারপর সেখান থেকে লয়ার হয়ে ফিরিস “
বলতে বলতে রেগেমেগে ধাপধুপ করে বিছানায় উঠে কম্বলের নিচে শুয়ে চোখমুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল৷ সবকিছু এত জলদি হলো যে শিশির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। যাক বাবাহ্ সে কি করল? এই গোবর ঠাঁসার আবার কি হলো? পড়তেই তো ছিল! এতে এমন রাগের কি হলো!
” আমি কি করলাম? “
” কিছু করিস নি। পড় তুই “
” এ্যাই গোবর ঠাঁসার বাচ্চা তুই তুকারি করছিস কিন্তু! “
” জানি আমি “
কতত বড় ফাজিল চিন্তা করা যায়! তবে শিশির মিটমিট করে হাসল। আরো কিছুক্ষণ পড়ল। এরপর ঘড়ি দেখল। মুচকি হাসল। বই রেখে সোয়েটার খুলে ফেলল। শরীরে শুধু ফিনফিনে পাতলা একটা সাদা শার্ট পরিহিত। অতিরিক্ত লাইট অফ করে দিল। জিরো লাইট জ্বালাল৷ তাকাল কুয়াশার দিকে। ঘণ হয়ে এসেছে নিঃশ্বাসের শব্দ। ঘুম এসে গেছে বোধহয়। হাসল আবার মুচকি।
আরো একবার ঘরের পূূর্ব দিকে সৌখিন ওয়াল ঘরিটার দিকে তাকাল আবছা আলোয়। এক মিনিট বাকি। এগিয়ে গেল কুয়াশার কাছে। কাছে একদম অতি কাছে। কুয়াশার চুলের শ্যাম্পুর ঘ্রাণ নাকে এলো। ঝুকে কাৎ হয়ে অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে থাকা কুয়াশার মুখের উপর দৃষ্টি দিল৷ আবছা হলুদাভ আলোয় বউয়ের মুখটা মায়াময়ী অপ্সরা লাগছে৷ মন, মস্তিষ্ক আওরাল,
” আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউ “
ভাবতে ভাবতে তার শরীর উত্তপ্ত হয়ে এলো৷ শরীর এলোমেলো হয়ে এলো৷ বহু প্রতিক্ষার কিছু চাওয়া পাওয়া শরীর, মন, মস্তিষ্কে জেঁকে বসল। এমন তো হয় না! আজ কেন হচ্ছে? এতগুলো মাস এক সাথে এক বিছানায় থেকে বুকে নিয়ে শুয়েছে তবুও এতটা উত্তেজিত হয়নি৷ মরুভূমির ন্যায় খা-খা করছে হৃদয়। উত্তাপে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে শরীর সহ অন্তর। এ কী অবস্থা হচ্ছে! তার ভাবনারা কি লুটোপুটি খাচ্ছে? যেটা সে সপ্তাহ খানেক আগে ভেবেছিল? মাথা সহ পুরো শিরা উপশিরা দপদপ করছে ঠিক যেমনটা বিয়ের রাতে হয়ে উঠেছিল। অশান্ত, অস্থির।
বড় নিঃশ্বাস টেনে কুয়াশা গ্রীবাদেশের কাছে মুখ নিয়ে ঘ্রাণ নিল। নিজের শীতল, ঠান্ডা ডান হাতটা কম্বলের নিচে দিয়ে কুয়াশার কামিজ জামার মাঝে গলিয়ে দিল। অবাধ্য হাত স্লাইড করতে করতে গভীরে গেল। কুয়াশা ঠান্ডা হাত পেয়ে কেঁপে উঠেছে। ঘুম হালকা হয়ে গেছে৷ যখন বুঝল একটা হাত তার পেটে বিচরণ করছে তখন ঘুম ছুটে গেল। শিশির ঝুঁকে থেকে পিছনে তাকাল। ঠিক বারটার কাঁটার কাছে সেকেন্ড, মিনিট ও ঘন্টার কাঁটা ঠেকল। কানের কাছে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ছেড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে সে বলল,
” এ্যাই..আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউ! শুভ জন্মদিন। আঠারটা বছর পাড় করে এলি আমার লেজ ধরে দুনিয়ায় এসে। আরো হাজার বছর আমার বুকে শুয়ে কাটানোর আহ্বান করছি। “
কুয়াশার পুরো শরীরে বিদ্যুৎের সঞ্চার হলো৷ ঝটকা দিল৷ শিরা উপশিরা, নিউরনে নিউরনে কথাগুলো বাড়ি দিল। শরীরের রগ সহ লোম অবধি তরতাজা হয়ে উঠল৷ উত্তেজনায় কাঁপতে লাগল৷ তড়াক উঠে বসে পড়ল। শিশিরও উঠে বসল। হলুদাভায় বউয়ের দিকে তাকাল। কাঁপা-কাঁপি সহ হাঁপড়ের মতো বুক উঠা নামা করছে। সেদিকে সুক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে শিশিরের আরো উন্মাদনা বাড়ল৷
কুয়াশা স্বামীর দিকে তাকাল। এই প্রথম শিশির তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাল যা আজ গত আঠার বছরেও করেনি। প্রতি জন্মদিনে মা-রা মা-রি চুলোচুলি বাঁধত একটা জিনিস নিয়ে। আর সেটা তাদের জন্মদিন একই মাসে এবং একই তারিখ হওয়াতে। শিশিরের উইশ করার বদলে একটাই ডায়লগ ছিল,
” গোবর ঠাঁসা তুই আমার লেজ ধরে দুনিয়ায় এসেছিস”
কান পঁচে গেছে তার শুনতে শুনতে। এই কথা শোনা মাত্র ঝগড়া, মা-রা মা-রি, চুলোচুলি বেঁধে যেত। আর সেটাও ঘুম থেকে উঠে। প্রতি জন্মদিন এভাবেই কাটত তাদের। কেউ কাউকে সহ্য করত না এই দিনটাই। এতটাই ঘৃণীত ছিল যে জীবনে কখনো জন্মদিন উপলক্ষে কিছু করতেও নারাজ হতো৷ নিজেরা তো কিছু করতই না উল্টে বাড়ির কোনো সদস্যকে কিছু করতে দিত না৷ শুধু ঝগড়া আর চুলোচুলি। গেল বছর জন্মদিনেও ঠিক সেটাই হয়েছিল। আর এবার জন্মদিনে? সেই বুনো ওল নিজে উইশ করছে? কতটা পরিবর্তন এটা, ভাবা যায়! তারা স্বামী স্ত্রী এখন। ভাবতেই আবার উত্তেজিত হলো অন্তর। বলল,
” তুমি উইশ করলে আমায়? “
শিশির হেসে ফেলল। তাদের পুরোনো কথা মনে পড়ে গেল৷ জন্মদিনে কখনো উইশ করেনি কেউ কাউকে। আজ এমনটা হবারই। হেসে কুয়াশার দিকে গভীর দৃষ্টি দিল৷ আজকের দৃষ্টিটাও কেমন উত্তপ্ত যেন কুয়াশাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাঁক করে দেবে। কুয়াশা সেই চাহনীতে কেঁপে উঠল৷ শিশির উপর নিচ বার কয়েক মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। অর্থাৎ হ্যাঁ করেছে সে উইশ। তাদের সম্পর্ক আজ অন্যরকম। আর সেই ঝগড়ুটে কুয়াশা শিশির নেই৷ কুয়াশার মনে প্রজাপতিরা উড়ল। এগিয়ে একদম কাছে ঘনিষ্ঠ হলো সে। ফিসফিসিয়ে বলল,
” শুভ জন্মদিন টু বুনো ওল ওরফে তোমার আহ্লাদী বউয়ের সুদর্শন স্বামী। আঠারটা বছর আমাকে সহ্য করেছ এখন হাজারটা বছর সহ্য করার জন্য প্রস্ততি নাও। তোমার লেজ আমি ছাড়ছি না। মৃত্যুই হবে বিচ্ছিদের একমাত্র অস্ত্র “
সহসা শিশির কেঁপে উঠল। মৃত্যুর কথা শুনে চমকে উঠল। তাকাল কুয়াশার দিকে। টেনে নিল কোমড় ধরে। শিশির কিঞ্চিৎ কুয়াশার মুখের দিকে মুখ করে ছিল৷ এবার পুরোটা ঘুরে গেল। দু’জন দু’জনের দিকে তাকাল আবছা আলোয়। শীতল পরিবেশ কিন্তু অন্তর তাদের মরুভূমি৷ উত্তপ্ত দা-বালনের ন্যায় জ্বলছে। আগুনের শিখার ন্যায় জ্বলে পুড়ে ধোঁয়া উড়ছে। পাঁজরে থাকা হৃৎপিণ্ড বাড়ি দিচ্ছে ধরাস ধরাস করে। দু’জন বোধহয় শব্দ শুনে নিচ্ছে। উত্তাপ নিঃশ্বাস পড়ছে একে অপরের মুখে। নিঃশ্বাসের বাতাস যেন অনল শিখা। পুড়িয়ে দিচ্ছে একে অপরকে।
শিশিরের অস্থির মন আরো অস্থির হলো। বহু অপেক্ষাকৃত বাসনা পূরণের জন্য অন্তর, কায়া আন্দোলন শুরু করল। লোমকূপ গুলো জানান দিল প্রয়োজন তোর প্রয়োজন এই সামনে থাকা মেয়েটিকে নিজের করে, আপন করে। আর অপেক্ষা কিসের? কিসের এত দ্বিধা? মন মিলেছে, ভালোবাসা হয়েছে এখন শরীর তো চাইবেই আকাঙ্ক্ষিত জিনিস। যা অতি আদিমকাল থেকে তার নিয়মে চলে আসছে৷ শুকনো খরখরা হৃদয়ে এক পশলা বৃষ্টির নামে চাইছে মন। শিশির ঠোঁট গোল করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। ঠোঁট ভিজাল। নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবে ভেবে পাচ্ছে না। আশ্চর্য! রোজ তাকে বুকে নিয়ে শোয় এছাড়া ছোঁয়া ছুঁই যে একদমই হয়নি তাও না। তবুও এতটা উত্তেজনা কীসের জন্য! বুঝল না সে। শিশির নিজের দাবানলের ন্যায় পুড়তে থাকা শরীরের একটি অঙ্গ অর্থাৎ হাত কুয়াশার কপোল গলিয়ে দিল৷ কুয়াশা কাঁপল। স্বামীর প্রতিক্ষিত ছোঁয়াতে। সায় দিতে চাইল। জড়িয়ে এলো। অন্তর তারও পুড়ল৷ শিশির ফিসফিস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিঃশ্বাসের সাথেই বলল,
” কুয়াশা, আ’ম ক্যান নট রেসিস্ট মাইশেল্ফ! “
সহসা চমকে উঠল কুয়াশা। স্বামী তার কী বুঝাতে চাইল এবং কী বলল তার বুঝতে একটুও দেরি হলো না। এই শীতল ঋতুতে দু’টি মন উত্তপ্ত। কুয়াশা কিয়ৎক্ষণ শিশিরের প্রগাঢ় দৃষ্টিতে অবলোকন করল। এরপর ঝুঁকে শিশিরের বুকে কপাল ঠেকিয়ে দিল। লজ্জায় দিল নাকি সম্মতিতে দিল বোঝা গেল না৷ শিশিরের অন্তর জুড়াল। পাতলা সাদা শার্টটার বুকের কাছের দুই-তিনটা বোতাম খোলা। সেই হালকা হালকা লোমশ বুকে মুখ ডুবিয়ে দিল৷ নাক ঘষতে থাকল৷ শিশির আরো উন্মাদ হলো৷ হাসল সহসা৷ জিজ্ঞেস করল,
” আজ গন্ধ লাগছে না? “
” উহু, নেশা… আফিম..”
নাক ঘষতে ঘষতে অকপটে নেশালো কন্ঠে উত্তর তার। মুখ খুলে হেসে ফেলল শিশির৷ আবার সেই এক উত্তর। অথচ এই গোবর ঠাঁসা বলেছিল তার শরীরে দূর্গন্ধ। আর সে কী পাগলামিটায় না করেছিল! মনে উঠে হাসল আরেকটু৷ বলল,
” শরীরে নেশা বুঝি? “
” হুঁ “
” বলেছিলাম না? তোর ভাষায় আমার এই দূর্গন্ধযুক্ত শরীরের নেশা চড়াব! নেশা না চড়িয়ে ক্ষান্ত হব না৷ “
কুয়াশার মনে পড়ল সেদিন দুপুরের কথা। ঘর্মান্তক শার্ট মুখে ফেলাতে নাক ছিটকিয়েছিল সে। অথচ এই শরীর তার এখন রীতিমতো নেশা। যা আফিমের ন্যায় টানে তাকে। ভেবে নিয়ে আবারো অকপটে উত্তর করল,
” হুঁ, তুমি সক্ষম। এই শরীর আমার নেশ। আফিমের ন্যায় টানে আমায় “
বলে বিড়াল ছানার মতো মুচড়াতে লাগল বুকের উপর। শিশিরের বুকে ঢুকে যেতে চাইল৷ কিন্তু শিশিরের সায় পেল না বলে সক্ষম হলো না। কুয়াশার সাপের ন্যায় মুচড়াতে দেখে শিশির মাথাটা তুলল বুক থেকে। ঘাড় গলিয়ে চুলের পিছনে হাত নিয়ে শক্ত করে মুঠোয় ধরল। কুয়াশার নজরে নজর দিল। মুখে, ঠোঁট চোখ বুলাল৷ বলল,
” আমার মতো বুনো ওলের জ্বালা মেটানোর জন্য তোর মতো এই বাঘা তেঁতুল কুয়াশারই প্রয়োজন আজীবন, আমরণ ”
কুয়াশা শিউরে ওঠল। সেদিনের সেই না বুঝে অকপটে বলা কথাটা যে আজ এই ভাবে সত্যি হয়ে যাবে সে কি ঘুনাক্ষরেও বুঝেছিল? সে তো ব্যস বলে দিয়েছিল৷ কিন্তু কথাটার মানে যে এতটা গভীর ছিল বা হয়েছিল তার মস্তিষ্ক ধারনই করেনি কখনো৷ আজ ভবিতব্য তাদের কতদূর এনেছে৷ কুয়াশা অস্থির কন্ঠে বলল,
” সেদিনের অকপটে বলা কথাটা এভাবে সত্যি হবে বুঝি নি৷ চিরন্তন সত্য এটা, বুনো ওলের জ্বালা মেটানোর জন্য বাঘা তেঁতুলেরই প্রয়োজন হবে আমরণ”
” আমারও প্রয়োজন হবে “
কুয়াশা লজ্জায় নূয়ে পড়ল৷ চোখ বুজে এলো। শিশির আর দেরি করল না৷ তার ভেতরে চলা তোলপাড় কুয়াশাকে বুঝিয়ে দিতে চাইল৷ চাইল তার অতি প্রতীক্ষিত বাসনা মেটাতে৷ কুয়াশার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল৷ গভীর, গাঢ় অধর চুম্বনে মিলন ঘটাল। কুয়াশা দু’হাতে আঁকড়ে ধরল স্বামীর ঘাড় সহ গলা৷ শিশিরের এক হাত কুয়াশার চুলে মাঝে একহাত কোমড়ে চেপে ধরল। টেনে নিল নিজের শরীরের সাথে৷ শরীরে শরীর মিলল, ঠোঁটে ঠোঁট মিলল দু’টি মানব মানবির৷ দু’জনে উন্মাদ হলো। নিঃশ্বাসের শব্দও হলো ঘণ, গাঢ়। সেই শব্দ বাড়ি খেতে লাগল আবছা আলো-আঁধারি ঘরে৷
শিশিরের অস্থির মন, হাত গভীর হতে লাগল৷ চাওয়া পাওয়া গভীর হতে লাগল৷ কুয়াশা এক চুল পরিমাণ আঁটকাল না৷ চুম্বন অবস্থারততেই কুয়াশা শিশিরের ঘাড় থেকে একটা হাত তুলে শিশিরের কান চেপে ধরল৷ আচ্ছা জোরে দিল ঘুরিয়ে। ব্যথা পেল শিশির৷ এমন বিশেষ সময়ে, বিশেষ মুহূর্তে কুয়াশার এই কাজটাতে প্রচুর বিরক্ত হলো সে। ঠোঁট ছেড়ে অস্থির হয়ে হাঁপানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” কি করছিস? “
” যেটা সবসময় করি ”
কুয়াশার দুষ্টু নজরে দুষ্টু হাসিতে ফিসফিসানো উত্তর। শিশির ফিসফিস করে হেসে ফেলল মাথা ঝুঁকিয়ে। হেসে নিয়ে মুখ তুলে কুয়াশার ঘাড়ের পেছনের চুল টেনে দিল আচ্ছা জোরে৷ কুয়াশা ‘আহ্’ করে উঠল৷ শিশির মুচকি হেসে বলল,
” এটা তো সব সময়ই চলে এবং চলবে। আপাতত এখন যেটা চলছে সেটা চলতে দে। ডো’ন্ট ডিসট্রাব মি গোবর ঠাঁসা “
বলেই কুয়াশাকে কিছু বলতে না দিয়ে আবার অধর চুম্বন করল। কুয়াশাও আর কিছু বলল না। শিশিরের আদর মেশানো ভালোবাসা সামলাতে লাগল। চুম্বন অবস্থাতে শিশিরের শার্ট খুলতে ব্যস্ত হলো। একের পর এক বোতাম গুলো খুলে দিল৷ শিশির টান দিয়ে খুলে ফেলে সাহায্য করল৷ কুয়াশা শিশিরের ঠোঁট ছেড়ে দিল। মুখ তুলে তাকাল শিশিরের দিকে। কিছু পল দেখে ঝুঁকে শিশিরে সেই কামড় দেয়া ক্ষত স্থানে মুখ নামিয়ে নিল৷ যেখানে সে দুই দুই বার কামড় দিয়েছিল৷ বুকের উপর৷ সখানে ঠোঁট দাবিয়ে গাঢ় চুমু খেয়ে আদর দিল৷ শিশির কুয়াশাকে ধরল। মুখ নামিয়ে কুয়াশার উন্মুক্ত কাঁধের উপর নাক ঘষল। কুয়াশা সেখানে চুমু দিয়ে আস্তে আস্তে সারা বুকে চুমু দিল ছোট ছোট। অস্থির করে তুলল শিশিরকে৷ শিশিরের কন্ঠ মনিতে চুমু আঁকল। সে কুয়াশার নরম শরীরটা দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে নিল৷ ডুবিয়ে দিল কুয়াশার বক্ষবিভাজিকায় মুখ৷ সেখানে সহ গ্রীবাদেশে ছোট ছোট আদর দিল। কুয়াশা সাপের ন্যায় মুচড়াতে লাগল। বুঝল শিশির তা৷ নিয়ন্ত্রণে নিতে বউকে নিয়ে বিছানায় শরীর ছেড়ে দিল৷ পিষিয়ে ফেলতে চাইল কুয়াশার নরম শরীরটা নিজের শক্তপক্ত বুকের নিচে৷ কুয়াশা শিশিরের নগ্ন পিঠে নখ বসিয়ে দিল। শিশির কুয়াশার গ্রীবাদেশে চুমু আঁকল। এরপর কামড় দিল। অনেকটা জোরে। ব্যথাতে গুঙিয়ে উঠল কুয়াশা। ব্যথা সহ্য করতে আরো জোরে নখ বসাল স্বামীর পিঠে। সেদিকে হুস নেই শিশিরের। সে তার কাজে ব্যস্ত৷ এদিকে কুয়াশার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে অথচ মুখে তৃপ্তিময় হাসি। শিশিরের কাঁধের উপর চুমু দিল। ফিসফিস করে বলল,
” এ্যাই বুনো ওল..! ভালোবাসি খুব “
শিশিরের কানে যেতেই থেমে গেল। গ্রীবাদেশ থেকে মুখ তুলে নিল৷ তাকাল বউয়ের দিকে। আজ প্রথম ভালোবাসি শব্দ পেল বউয়ের মুখ থেকে। আজকের সবকিছু স্পেশাল। দিন, রাত, ক্ষণ, তারিখ, মাস, সবকিছু স্পেশাল। শিশির মুচকি হাসল। পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখল কুয়াশার চোখে পানি। জিজ্ঞেস করল,
” চোখে পানি কেন? “
” সুখে, তোমার সুখ আমাকে গ্রাস করেছে। সুখে মরছি আমি। “
শিশির মুগ্ধ নয়নে চায়ল। এর থেকে সুখের আর কি হতে পারে একটা পুরুষের কাছে? তার বউ তার কাছে সুখী৷ শিশির মুচকি হাসল আবার। এবার সে-ও ফিসফিস করে বলল,
” আমিও ভালোবাসি আমার ঝগড়ুটে আহ্লাদী বউকে৷”
কুয়াশা রাগল এখন ঝগড়ুটে বলতে শুনে৷ ভ্রু কুঁচকে কামড় বসাল শিশিররের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িযুক্ত চিবুকে৷ শিশির ‘ইশশ’ করে উঠল। কুয়াশা খিলখিল করে হাসল। সেই হাসি বন্ধ করল ঠোঁটে কামড় দিয়ে। কুয়াশা ব্যথা পেল৷ বিরক্ত হলো৷ বলল,
” শুধু কামড় দেয়, বুনো ওল একটা “
” ঠিক করেছি, তুই দিলি কেন? “
এই দুইটা জীবনেও শুধরাবে না৷ তারা রোমান্সেও চুলোচুলি তো করছেই সাথে এখন ঝগড়াও করছে। কতটা ফাজিল দু’টো চিন্তা করা যায়!
কুয়াশা কিছু বলতে যাবে তৎক্ষনাৎ গাঢ় একটা চুমু খেল কুয়াশার অধরে অধর ডুবিয়ে। এরপর গ্রীবাদেশে একটা গাঢ় চুমু আঁকল। কুয়াশা পিঠের নিচে দুই হাত গলিয়ে দিল৷ বিছানা থেকে কুয়াশাকে হালকা উঁচু করে বুকের সাথে চেপে ধরল। পিঠের নিচের একহাত কুয়াশার কামিজের চেইনের উপর নিয়ে গেল। খুলে দিল তা টান দিয়ে। টের পেয়ে কুয়াশা আঁকড়ে ধরল শিশিরকে৷
শিশির কাঁধ থেকে জামা সরিয়ে সেখানে চুমু আঁকল। একে একে তার চাওয়া গভীর থেকে গভীরে গেল। কুয়াশা সায় দিল। সামলাতে ব্যস্ত হলো। মিলল দুটি মানব মানবি৷ বহু অপেক্ষার পর, বহু প্রতীক্ষার পর। দুই মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির দেখা মিলল। ভেজাল দুটি অন্তর, শরীর। দু’টি উত্তপ্ত দেহ ভিজিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। তাদের অপেক্ষা শেষ হলো। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বর্গসুখ পেল৷ মিলন কালের সুখ দুটি মানব মানবি টের পেল। আদিম কালের আদিম চাওয়াতে তারা মত্ত হলো। সুখের শ্বাস-প্রশ্বাস বাড়ি খেতে লাগল চার দেয়ালে।
সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল আজ তাদের সত্ত্বাকে ধরে রেখেও সংসার জীবনে এগিয়ে গেল। সেই একে অপরকে এক চুল পরিমাণ ছাড় না দেয়া বুনো ওল বাঘা তেঁতুল আজ এক হয়েছে। মালিথা ভিলার দু’টি হাম সেপাই নিজেদের ভালোবাসতে শিখে গেছে। বুঝদার হয়ে সংসার সাজাতে শিখে গেছে৷ তাদের এই সংসার, এই ভালোবাসা, এই মিলন খুব সোজা ছিল না। অনেক কিছু পাড় করে এসে মিলেছে
‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’
| চলবে |
( প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য এই পর্ব )
সবাই একটু পরবেন,
আমি আজকের এই পর্বটা এভাবেই ভেবেছিলাম শুরু থেকে। তাদের যেমন ঝগড়ুটে, চুলোচুলিতে এগিয়ে রেখেছিলাম ঠিক রোমান্টিকতায়, রোমান্সেও ততটায় এগিয়েছি৷ মূলত চেয়েছি সকলকে মনে রাখাতে। রোমান্সের মাঝেও তারা ঝগড়া করবে, চুলোচুলি করবে। এটাই গল্পের আসল থিম৷ তারা বুনো ওল বাঘা তেঁতুল।
এর পরেও যদি এসব খারাপের দিক মনে হয় তো বলব এরিয়ে যাবেন। কোনো বাজে মন্তব্য আমি চাই না। রোমান্টিক গল্পে রোমান্স থাকবেই। আর আমার মনে হয়না আমি ফিলিংস আই মিন অনুভূতি প্রকাশ ছাড়া বাজে দিক উদ্দেশ্য করেছি। আমি শুধু রোমান্সের ফিলিংস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। গভীর বিস্তারিত আমি দিই নি৷
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click