®রোজা রহমান
‘
রাত দশটার দিকে কুয়াশা ঘরে এলো। শীতের রাত দশটা মানেই অতিরিক্ত। বেশিক্ষণ জেগে থাকা দায়। এখন তার অধিকাংশ জিনিসই শিশিরের ঘরে থাকে। শুধু পড়াশুনোটা সে নিজের ঘরে করে। বইপত্র সব সেখানেই।
এসে দেখল শিশির কম্বলের নিচে বসে কী যেন লিখছে হয়তো কিছু নোট করছে। কথা না বলে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে এসে বিছানায় বসল। জিজ্ঞেস করল,
” পড়বে এখনো? “
শিশির প্রশ্ন পেয়ে মুখ তুলে চায়ল। আবার নিজের কাজে মন দিয়ে বলল,
” নাহ্, আজ আর বেশি ভালো লাগছে না৷ ক্লান্ত লাগছে। সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। শুবো এই নোট টুকু করে। তুই শুয়ে পর। “
কুয়াশা কথা বাড়াল না। পাশে শুয়ে পড়ল। শিশির কিছুক্ষণ পর সব রেখে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল। কুয়াশাকে বলল,
” এদিকে সরে আয়”
জেগেই ছিল সে। কথা অনুযায়ী এগিয়ে গেল। এগিয়ে যেতেই শিশির কাছে টেনে নিয়ে বলল,
” কিছু কথা বলব। পুরোটা শুনে তারপর কথা বলবি। “
কুয়শা ভ্রু কুঁচকে অন্ধকারেই শিশিরকে দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু সক্ষম হলো না। ভাবল কী এমন কথা যে এমন ফর্মালিটি করছে! জিজ্ঞেস করল,
” কি কথা? “
শিশির দীর্ঘ শ্বাস টানল আর ফেলল৷ এরপর কুয়াশাকে আরেকটু টেনে কাছে নিল। কুয়াশা প্রশ্ন ছাড়া নির্বিকার থাকল। শিশির বলল,
” এই মাস থেকে আমার পরীক্ষা জানিস তো? “
” হ্যাঁ সাত তারিখ থেকে “
” হুঁ, আর শেষ হবে ফ্রেব্রুয়ারীর শেষের দিকে অর্থাৎ প্রায় দুই মাস ধরে হবে। “
কুয়াশা শিশিরের কথায় ইতিবাচক ইঙ্গিত দিল। বলল,
” হ্যাঁ, তো? ”
শিশির কুয়াশাকে দেখার চেষ্টা করল কিন্তু সে-ও সক্ষম হলো না। তবুও কুয়াশা মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলল,
” পরীক্ষা দেবার এক মাসের মাঝে ঢাকায় চলে যাব। সেখানে দুই বছর কিংবা একটু বেশি সময় থাকতে হবে। আবার কমও লাগতে পারে। “
শোনা মাত্র কুয়াশার বুকের মাঝে ধুক করে উঠল। কী বলে! দুই বছর কেন? মানে দুই বছর বাড়িতেই আসবে না? কুয়াশা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করল,
” দুই বছর কেন? আর দুই বছর লাগবে সেটা ঠিক আছে এতে এভাবে বলার কি আছে? “
শুনে শিশির স্মিত হাসল তা মলিন৷ বলল,
” থাকতে পারবি দুই বছর আমাকে ছাড়া?”
এবার কুয়াশা চমকে উঠল৷ ধরফড়িয়ে উঠে বসল। শিশিরও উঠল। উঠে জিরো লাইট জ্বালাল। কুয়াশার দিকে তাকাল৷ মুচকি হাসল। তারও তো একই সমস্যা! এই মেয়েকে ছাড়া একটা রাত পাড় করতে পারবে না সেখানে এতগুলো দিন কি করে কাটাবে? যদিও দুই বছরও লাগতে পারে আবার কমও লাগতে পারে কিংবা বেশিও লাগতে পারে৷ আবার তার আসারও সুযোগ থাকবে অনেক। কিন্তু সে আসবে না৷ কারণ বার বার আসলে আর থাকতে পারবে না৷ একবারে পড়াশুনো সব সম্পূর্ণ করেই ফিরবে৷ এই মেয়েটাকে ছাড়া তারও আর রাত দিন কাটে না। এছাড়া কখনো দুই দিনের জন্য না দেখে থাকেও নি। কুয়াশা প্রশ্ন করল,
” তোহ্ তুমি কি বলতে চাইছ? “
” দুই বছরে আমি বাড়িতে আসেতও পারি নাও পারি। অতিরিক্ত চাপ থাকবে। এরপর যদি আসার সুযোগ পাই তো আসব “
কুয়াশা এবার ফুঁপিয়ে উঠল। শিশির যা ভেবেছিল তাই। এই আহ্লাদীও তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। থেকেছে নাকি কখনো ? নাকি সে সেই সুযোগ দিয়েছে? কুয়াশার বাহু ধরে টেনে নিয়ে আবার শুয়ে পড়ল। লাইট জ্বালানো বন্ধ করল। ভালো করে কম্বল টেনে জড়িয়ে নিল বউকে। বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে চলল বউ তার। বলল,
” কেঁদেই যাবি নাকি আমার কথাও শুনবি? “
কুয়াশা ফুঁপাল আরো কিছুক্ষণ। শিশির কিছু বলল না। বুক থেকে মুখ তুলে নিয়ে চোখ মুছিয়ে দিল। বলল,
” চুপপ, কিছু করার নেই। যেতেই হবে আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য। কিছু পেতে গেলে একটু সেক্রিফাইজ করতেই হয়৷ আমাকেও করতে হবে। তোকে কখনো একটানা দুইদিন না দেখে থাকিনি। ছোট থেকেই চোখের সামনে। হাজার মা-রা মা-রি করলেও কেউ কখনো মুখ ঘুরিয়ে একদিনের জন্যও একে অপরকে না দেখে থাকি নি। সেখানে একটু কষ্ট হবেই৷ তবে সেটাকে মানিয়ে নিতে হবে৷ আমি আসার চেষ্টা করব। তবে এই দুই বছরে চাপ থাকবে খুব। এলএলএম ভর্তি হতে হতে ক্লাস শুরু হয়ে যায়। “
কুয়াশা শুনে আবার ফুঁপিয়ে উঠল। কথা তো ঠিক। এক সাথে থাকলে মায়া ভালোবাসা কতটা বাড়ে? আর সেখানে তারা এখন স্বামীস্ত্রী। কি করে থাকবে একে অপরকে ছাড়া? ভালোবাসার মানুষটি দূরে গেলে কতটা কষ্ট হয়? যেখানে মন চায় সারাক্ষণ ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গতে থাকতে, ক্ষণিকের জন্য দূরে গেলে বুকটা খা-খা করে সেখানে একের পর একটা দিন, একের পর একটা রাত কি করে কাটাবে? বিয়ের পর যে মেয়েটা একটা রাতের জন্যও একা রাত কাটায় নি সে কি করে থাকবে? শিশির বলল,
” চুপপ, এখনো আছি কয়েকমাস। এখন আমার কথাগুলো শোন “
কুয়াশা ফুঁপানি কমাল। তবে উত্তর করল না৷ শিশির বুঝে বলা ধরল,
” ভেবেছিলাম এলএলবি করেই ইন্টার্নশীপ সহ বিসিএস দেব। কিন্তু সেটা এখন করব না। আমি এলএলএম কোর্সও করব আগে। এলএলবি শেষ করেই ঢাকায় কোনো আইন অনুষদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম কোর্স করব। এরপর বিসিএসের পরীক্ষার পড়া সহ আমাকে বার কাউন্সিলের সনদ গ্রহণ করতে হবে সেটার জন্য পরীক্ষা দিতে হবে৷ বার কাউন্সিলের সনদপ্রাপ্তর জন্য আমাকে আবেদন করতে হবে। “
কুয়াশা কথাগুলো জানে তবে আরেকটু ভালো করে বুঝতে কথার মাঝেই প্রশ্ন করল,
” এসব শুনেছি। আমি এখনো এগুলো নিয়ে মাথা ঘামায়নি। ইন্টারের পড়াশুনোই ফোকাস করে যাচ্ছি। পরীক্ষা শেষ হলে এসব নিয়ে ঘাটব। তবে এখন আমাকে একটু ভেঙে বলো তুমি “
শিশির কুয়াশার প্রশ্ন পেয়ে বলা ধরল,
” বাংলাদেশের অ্যাডভোকেট হতে গেলে যেকোনো সরকারি, বেসরকারি, জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইন অনুষদে ভর্তি হতে হবে। এইচএসসির পরে হতে হবে চাইলে আলাদাভাবে অর্নাস করার পরেও আইন নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে। সেটার ক্ষেত্র আলাদা৷ তোকে এইচএসসির পরেরটা বলি। তো এইচএসসি দিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়তে হয় আগে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে হবে। ভর্তির পর এলএলবি (চার বছর অনার্স কোর্স) চাইলে এলএলএম (এক বছর মাস্টার্স কোর্স) করতে পারবি পরেও করা যায়। এরপর স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীর পর তোকে সনদ গ্রহন করতে হবে। তার জন্য পরীক্ষা দিতে হয়৷ সনদটি হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ। সেখানে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর ছয় মাস প্র্যাক্টিসিং করতে হবে। সেটা করতে হলে কোনো সিনিয়র অ্যাডভোকেট যিনি কমপক্ষে দশ বছর নিয়মিত উকালতি করেছেন এমন অ্যাডভোকেটের সাথে চুক্তি করতে হয়। সনদপ্রাপ্ত হতে গেলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুকূলে নির্ধারিত ফির ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার প্রেরণের রসিদ। চুক্তিপত্র, এফিডেভিট ও ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার প্রেরণের রসিদ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সেক্রেটারি বরাবর পাঠিনো লাগে। ছয় মাসের প্র্যাক্টিসিং শেষে কেস রিপোর্ট সাবমিশন করে বার কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য ডাকে। সেখানে পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সনদপ্রাপ্ত হলে অ্যাডভোকেট হিসেবে পেশাজীবন শুরু। তখন থেকে নিম্নআদালতে কাজ করা যায়৷ সেখানে দুই বছর কাজ করে হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে সনদ নেওয়ার যোগ্যতা হবে। সেখানে যোগ্যতা পেলে আবার এক বছরের জন্য সিনিয়র অ্যাডভোকেটের সাথে প্র্যাক্টিসিং করতে হয়৷ এরপর আবার বার কাউন্সিলের সনদ গ্রহন করতে হয়। আর সর্বচ্চকোর্ট সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগে প্র্যাকটিস, তোর যদি হাইকোর্ট বিভাগে প্র্যাকটিসের বয়স পাঁচ বছর হয় এবং হাইকোর্টের বিচারপতিরা যদি এই মর্মে স্বীকৃতি দেন যে তুই আপিল বিভাগে আইন পেশা পরিচালনা করার জন্য সঠিক ও উপযুক্ত ব্যক্তি, তবে কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন সাপেক্ষে এনরোলমেন্ট কমিটি তোকে আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনার সুযোগ দেবে। এই ভাবেই তোর আইনজীবী জীবনের পদন্নোতি হবে এবং তুই অ্যাডভোকেট।”
অনেকক্ষণ কথা বলে থামল শিশির। কুয়াশা শিশিরের পুরো কথা মন দিয়ে শুনল। শিশিরকে থামতে দেখে বলে উঠল,
” আল্লাহ এত কিছু করতে হয়!”
” হ্যাঁ, আইন নিয়ে পড়া অত সোজা না। যতটা মনে করিস৷ লাফাস তো আইন নিয়ে পড়বি। এসবের জন্য যেমন পড়াশুনো করতে হয় তেমনি থাকতে বুদ্ধি, বিচক্ষণতা। যা দ্বারা আদালতে কেস লড়তে পারবি। ক্লাইন্টদের সঠিক ন্যায় দিতে পারবি৷”
কুয়াশা বলল,
” তবুও আমি পড়ব। আচ্ছা একটা কথা বলো, তুমি তো বললে সনদপ্রাপ্ত হলেই অ্যাডভোকেট হওয়া যায়! আবার বললে বিসিএস দেবে। আমি যতদূর জানি বিসিএস দিলে তো ম্যাজিস্ট্রেট হয়। তাহলে আল্লাহর কৃপায় তুমি যদি ক্যাডার হয়ে যাও তবে তো ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে যাবে। অ্যাডভোকেট তো আর থাকলে না!”
এই প্রশ্নের উত্তরে শিশির বলল,
” হ্যাঁ, ঠিকই জানিস তুই। বিসিএস দেবার পর টিকতে পারলে ম্যাজিস্ট্রেট হয়। কিন্তু অ্যাডভোকেটও থাকা যায়। আমি চাইলে থাকতে পারব। তবে সে ক্ষেত্রে আমার বিসিএস ক্যাডার আর থাকবে না কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে যাব। কিন্তু আমার এখনই ম্যাজিস্ট্রেট হবার ইচ্ছে নাই। তবে আমি আবার যদি জর্জ বা ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাই সে-ক্ষেত্রে আমাকে আবার একটা পরীক্ষা দিতে হবে। সেটা হচ্ছে বিজিএস অর্থাৎ ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন’ এই পরীক্ষা সহ আবার বার কাউন্সিল থেকে সনদপ্রাপ্ত নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারব। “
কুয়াশা সব শুনে বলল,
” তাহলে বিসিএস দিয়ে লাভ কী তোমার?”
” এখানে লাভ ক্ষতি নেই। তবে অনেক সুযোগ সুবিধা পাব৷ কোর্টে কেস পেতে, লড়তে এসবের দিকে। এছাড়া বললাম না? সনদপ্রাপ্তর পর নিম্নমানের কোর্টে অ্যাডভোকেট হয়ে যায়! এরপরই বিসিএস দিয়ে যারা ম্যাজিস্ট্রেট হতে চায় তারা হতে পারে। তো সেক্ষেত্রে আমি বিসিএসের পরীক্ষা দিলে আমার জ্ঞানটা বারবে চর্চার উপর থাকব আদালতের সকল দিকগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারব৷ মোস্ট ইম্পরট্যান্ট আমি একটা ডিগ্রী পাব। এসবের যদি এগিয়ে থাকি আমার দক্ষতা দেখলে এমনি আমার নাম আসবে। আদালত দেখে, একজন অ্যাডভোকেটের দক্ষতা, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা৷ সেটা তুই নিম্নআদালত থেকে দেখাতে পারলে তোর পদোন্নতি হতে কষ্ট হবে না৷ আর সরকারি ভাবে কেস পাওয়া আরো সহজ হয়। আল্লাহ চাইলে এই ভাবনাতেই এগিয়ে যাব। জজ,ম্যাজিস্ট্রেট পরের বিষয় আমি আগে অসহায় মানুষদের ন্যায় বিচার পেতে সাহায্য করব৷ দেশে টাকার লোভে ঘুষ নিয়ে সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে কতশত অসহায়রা ন্যায় বিচার পায় না। এটাই আমার স্বপ্ন “
কুয়াশা মুগ্ধ হয়ে গেল। স্বামীর কথায় সে গর্ববোধ করল তার স্বামীর চিন্তা ভাবনার কথা শুনে। আর সে তো এসব কখনো ভাবেই নি? সে তো এই সামনে জড়িয়ে শুয়ে থাকা তার ভাষায় বুনো ওল নামক মানুষটার সাথে লড়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এই জন্য আইন পড়তে চাই। সে যে আইন পড়ে দেশের জন্য কিছু করবে এসব তো কখনো ভাবেই নি! কুয়াশা শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরল। বুকে চুমু দিয়ে বলল,
” তুমি এত ভালো আগে কখনো না মেনেছি আর না জেনেছি। আমি তো এসব কখনো ভাবিই নি! আমার তো জেদ তোমার সাথে লড়ব। এই জন্য ল’ নিয়ে পড়তে চাই “
ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে শিশির অমায়িক হাসল। তবে সেই হাসি তার আহ্লাদী বউ দেখে পেল না৷ আর বুঝতেও পেল না। সে বলল,
” অতও সোজা না৷ সরকারি ভাবে করতে গেলে এসবের জন্য একই কোর্টের অনুমোদন পত্র লাগে। তোর দক্ষতা দেখবে আগে এরপর সব হবে। সেই জন্য ভালো করে পড়াশুনো কর৷ গোবর ঠাঁসা বুদ্ধি বাড়া৷ তারপর যদি কখনো সুযোগ আসে তখন দেখব কী করে আমার সাথে লড়িস! তখন কিন্তু তুই আমার বউ থাকবি না! আমি মানবই না “
বলে ঠোঁট কামড়ে হাসল শিশির৷ কুয়াশা অন্ধকারেই শিশিরের গলা চেপে ধরল একহাতে। শিশির জোরে হাসল এবার। বলল,
” তবে আমিও চাই তুই আমার সাথে একই কোর্টে লড়ার সুযোগ পাস। “
কুয়াশা হাত সরিয়ে বলল,
” হুঁ, তখন তোমাকেও দেখিয়ে দেব এই কুয়াশার কী গুণ “
” আচ্ছা?”
” হ্যাঁ, আর শুনো! “
শিশির উত্তর বলল,
” হ্যাঁ বলো “
কুয়াশা চমকে উঠল। কখনো তুমি বলেছে কি? বিস্মিত হয়ে বলল,
” তুমি আমাকে তুমি করে বললে? “
” নাহ্, তোর সুরে উত্তর করলাম। তোকে তুমি বলতে আমার বইয়ে গেছে। তোকে তুই বলতেই ভালো লাগে। আর সব থেকে বড় কথা অভ্যাস। ওসব তুমি টুমি হবে না আমার “
বলে কুয়াশার গলার উপর চুমু আঁকল। কুয়াশার শরীর শিরশিরাল তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শিশিরের বাহুতে কি-ল বসিয়ে বলল,
” বুনো ওল একটা! “
” গোবর ঠাঁসা একটা “
কুয়াশার মতোই সুর ধরে বলে সে-ও অন্ধকারে কুয়াশার গালের উপর না লাগার মতো করে থাপ্পড় দিল৷ বলল,
” এখন বল কী বলতে চাইছিলি? “
শিশিরের কথায় বলল,
” তুমি একদমই না আসার প্ল্যান করে আছো তাই না? “
শিশির চমকাল৷ কুয়াশাকে আবার দেখার বৃথা চেষ্টা করল৷ না পেরে কুয়াশাকে শক্ত করে ধরল৷ গলায় মুখ গুঁজে দিল৷ মুখ গুঁজে দিয়েই বলল,
” আসলে যেতে কষ্ট হবে “
কুয়াশার বুকটা ভেঙে এলো আবার। স্বামীর থেকে এতটা ভালোবাসা পাবে ভেবেছিল কি? সে কপাল করেই জন্মেছিল! তার ভাগ্যে কী ভালোবাসা একটু বেশিই? কুয়াশা শিশিরের মুখটা তুলল আন্দাজে অনুমান করে। কপালে অধর দাবিয়ে চুমু আঁকল। বলল,
” আমার যে থাকতে কষ্ট হবে৷ ”
” আমারও হবে, তবে কিছু করার নেই। সব কমপ্লিট করেই আসব আমি৷ “
বলে থেমে আবার বলল,
” তোর ভালোবাসা আমায় গ্রাস করেছে৷ সেই নেশায় বারবার ছুটে এলে আমার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারকেও গ্রাস করবে। তার থেকে বরং দুই বছর কষ্ট করে নিলাম? একটু কষ্টের জন্য যদি ভালোকিছু হয় তো ক্ষতি কি? তবে বিপদ আপদের কথা আলাদা। আর এর ভেতরেও যদি প্রয়োজন পড়ে তো আসতে হবে। কিন্তু ঘণ ঘণ আসব না। তোকে ছাড়া এমনি আমি রাতে ঘুমাতে পারি না ”
” এত ভালো কবে কবে বাসলে? “
” জানি নাহ্ “
বলে আবার গলায় মুখ গুঁজল। কুয়াশার গ্রীবাদেশে গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। শিশির জোরে জোর শ্বাস নিল। সেই সময়ে কুয়াশার ফোনে আলো জ্বলে উঠল। বারটা বেজে গেছে দেখল৷ আলো জ্বলার কারণ সিম কম্পানীর পক্ষ থেকে অফার এসেছে হ্যাপি নিউ ইয়ারের। আর দেখো বারটা বাজতে বাজতেই এসে হাজির। কুয়াশা বিরক্ত হলো গ্রামীণ কোম্পানীর উপর। তবে সেটাকে দূরে হটিয়ে বলল,
” হ্যাপি নিউ ইয়ার টু থাউজ্যান্ড টুয়েন্টি ফোর ইজ কামিং।”
শিশিরের তা শুনে মনে পড়ল নিউ ইয়ারের কথা। ওভাবেই বলল,
” হ্যাপি নিউ ইয়ার “
কেউ আর কথা বলল না৷ শিশির মুখ গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করল৷ আর কুয়াশা শিশিরের মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে চোখ বুজল।
____________
এদিকে এই কনকনে শীতের মাঝে শশী আর নীহার নিউ ইয়ার পালন করতে ছাদে এসেছে। অবশ্য ছাদে যায়নি সিঁড়ি ঘরের নিচে আছে। বাহিরে কুয়াশায় ঘেরা। নীহার বিরক্ত কারণ, শশী জেদ ধরে ডেকে এনেছে। তার কথা প্রথম বছর তার হবু বরের সাথে কাটাবে। রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে এনেছে। নীহার এই শীতে কম্বলের নিচে থেকে বের হতে নারাজ। নীহার বিরক্ত নিয়ে বলল,
” এসবের কোনো মানে আছে? আর নিউ ইয়ার কীসের? এসব অসহ্য লাগে আমার”
” আরে রাখেন তো আপনার অসহ্য। আমার ভালো লাগে। “
বলে নীহারের হাত ধরে টেনে নিয়ে বসিয়ে দিতে দিতে বলল,
” বসেন এখানে “
নীহার না পেরে শশীর পাশে বসল। ঠান্ডা ফ্লোর। মেজাজটা আরো বিগড়াল। গমগমে স্বরে বলল,
” ফ্লোর ঠান্ডা শশী “
” এই নিন স্যান্ডেল নিন আমার। ঠান্ডা অনুভব হবে না আর “
মানে এই মেয়ে কি এ? নিজের স্যান্ডেল খুলে দিচ্ছে তবুও তার নিউ ইয়ার পালন করতেই হবে? নীহার সত্যি নিল। কারণ ঠান্ডা সহ্য হচ্ছে না। তারা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসা। এখানে আলো নেই। শশী ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ফোন উপর করে রেখেছে। সেটারই আলো ছড়িয়েছে। নীহার এবার শশীর দিকে তাকাল। তার পরনে হুডি ওয়ালা কালো জ্যাকেট পরা সাথে সাদা টাউজার৷ শশীও তাকিয়ে দেখল৷ শশীর শরীরে সোয়েটার সহ শাল চাদর আছে। সে চাদর খুলে নীহারকে সহ নিজেকেও ঢেকে নিল। নীহার অবাক হয়ে তাকাল৷ তবে টিপ্পনী কেটে বলল,
” এমনটা কোন ড্রামাতে দেখেছ? “
শশী বিরক্ত হলো৷ মানে, যে কিছু করলেই ড্রামা সিরিয়াল হয়ে যায় এই লোকের কাছে? এ তো দেখি বিয়ের পর সবকিছুই ড্রামা সিরিয়াল ভেবে নেবে! রাগল একটু। তাই ঝটকা দিয়ে নিয়ে নিল আবার চাদর৷ বলল,
” আপনার কাছে সব কিছুই ড্রামা লাগে?”
নীহার ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসল। বলল,
” হ্যাঁ, কারণ তুমি আমার লাইফে এসেছই তো ড্রামা সিরিয়ালের মতো করে আর সেটার টেকনিকেই এন্ট্রি নিয়েছ। মনে আছে সব আমার। এখন তুমি কিছু করলে সেটাই মনে হয়। এতে আমার দোষ কোথায়? “
বলেই শশীকে কোলের উপর বসিয়ে শশীর চাদর দিয়ে দু’জনকেই ঢেকে নিল৷ শশী কিছু বলল না সে বিষয়ে৷ কারণ এই একটা কথা সে অনেকবার কলে শুনে থাকে। কিছু বললেই নীহার ড্রামার কথা তুলবে সাথে এই ডায়লগ। সে নীহারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” আপনার এই জিনিসটা খুব মুগ্ধ করে আমায় “
নীহার ভ্রু কুঁচকাল। না বুঝতে পেরে প্রশ্ন করল,
” কোন জিনিস? “
” এই যে কোনো বাজেভাবে টাচ না করে ধরে আছেন৷ তাও আবার কোলের উপর “
নীহার শশীর কথা তাকিয়ে রইল। সে যে অতি কৌশলে শশীর পেট টেট কিছু টাচ না করে সুন্দরভাবে ধরে আছে হাত দিয়ে৷ সেটা এই ইঁচড়েপাকাটা নোট করছে!
আসলে সে চাদর সমেত শশীর হাত এবং শশীকে ধরে বসেছে। নীহার তাকিয়ে থেকে বলল,
” আমি চাই না বিয়ের আগেই আমার কোনো স্পর্শে তুমি অস্বস্তিবোধ করো। আর তেমন করে স্পর্শ করাও অনুচিত এখন৷ সম্পূর্ণ বৈধতার সম্পর্কে তোমাকে স্পর্শ করব৷ আপতত যেগুলো চলে ওগুলো প্রেমে একটু আধটু হয়ই। কমন বিষয়। সো গভীর স্পর্শ করে আমাদের পবিত্র ভালোবাসায় অস্বস্তি আনতে চাই না৷ তুমি আমার কাছে যেন কোনো অস্বস্তি নিয়ে আসতে না পারো সেটাই করার চেষ্টা করি। “
শশী মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বলল,
” আল্লাহ আমায় শ্রেষ্ঠ জিনিস দিয়েছেন। “
নীহার চমকাল এই মেয়ে মুখে এতবড় পাকনা কথা শুনে। তাকিয়ে থেকে বলল,
” সত্যি তোমার নাম দেয়া আমার স্বার্থক।”
বলে নাকে নাক ঘষে দিল। আবার বলল,
” এই পাখির ছানাটাকে পেয়ে আমিও ধন্য। কিচিরমিচির করে আমার আমার প্রাণ জুড়োয়। আমার ইঁচড়েপাকা পাখি “
শশী খিলখিল করে হাসল। নীহার সাবধানী বাণী দিয়ে বলল,
” এ্যাই, আস্তে! এত জোরে হাসছ কেন? “
শশীও ভুল বুঝতে পেরে মুখ পেড়ে ধরল। আবার ছেড়ে বলল,
” ইশশ, ভুলে গেছিলাম৷ “
নীহার হাসল। দু’জনেই আরো অনেক রকম গল্প করতে থাকল। নতুন বছর নতুনভাবে শুরু হোক প্রিয় মানুষটার সাথে কাটিয়ে।
| চলবে |
সকলে কষ্ট করে পড়বেন একটু অতি গুরুত্বপূর্ণ,
★নোট ১- উল্লেখিত অ্যাডভোকেট হওয়া নিয়ে আমি যেসকল তথ্য লিখেছি ওগুলো অনেক ভাবে অনেক জায়গা থেকে যোগার করেছি। নিজের যা জানা ছিল এবং গুগল সহ সরাসরি লইয়ারের সাহায্যও নিয়েছি। এরপরেও যদি ভুল কিছু থাকে তো হাঙ্গামা না করে ধরিয়ে দিয়েন আমি শুধরে নেব।
আর হ্যাঁ কোনো এক পর্বে লিখেছিলাম এলএলবি করেই বিসিএস দেবে পরে এলএলএম করবে সেটা আমার এখন থিম অনুযায়ী আবার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়েছে৷
★নোট ২- বিসিএস দিয়েও অ্যাডভোকেট থাকা যায় এটা সরাসরি একজনকে দিয়ে লইয়ারের থেকে জেনেছি।
মূলত এই তথ্যটায় আমার প্রয়োজনছিল। আর তার সাথে আরো একটা তথ্যর প্রয়োজন ছিল যেটা ভুল ধারণা ছিল। তবে এটা পেয়েছি বলে থিম আর চেঞ্জ করা লাগবে না।
★নোট ৩- উল্লেখিত অ্যাডভোকেট নিয়ে বিস্তারিত আমি আজই শেষ করলাম। এরপর আর এটা নিয়ে বিস্তারিত লিখব না৷ এখন যা লিখব গল্পের জন্য। বলা যদিও ঠিক হচ্ছে না তবুও বলে দিচ্ছি কয়েক পর্ব পর একবারে দুই বছর পরের কাহিনী আসবে।
★নোট ৪- যেহেতু আমি গল্পে ল’ নিয়ে পড়া অবস্থাতে শুরু করেছি সেহেতু এই বিস্তারিটুকু দেয়া আবশ্যক মনে করলাম৷ আর গল্প যতটুকু লাগবে আমি ততটুকু দিয়েছে এর বেশি দিই নি। কারণ আমার মনে হয়, এরবেশি লাগবেও না।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click