®রোজা রহমান
‘
ভালোবাসার দহন সকলকেই পুড়ায়। তেমনি পুড়াচ্ছে আরো একজোড়া হৃদয়কে৷ দূরে যাবার কষ্টে পুড়ছে স্মৃতি, রিজভীও৷ তারা তো এক সাথে থাকত না। বিয়ের পর এক সপ্তাহ বাদে হোক আর দুই সপ্তাহ বাদে হোক সময় কাটাত একসাথে। রিজভী শ্বশুরবাড়ি যেত৷ এছাড়া ফোনালাপেই তাদের সংসার৷ এই জন্য কিঞ্চিৎ হলেও কম তাদের কষ্টটা৷ শিশির, কুয়াশা ছোট থেকে একসাথে থেকেছে বিধায় তাদের দূরত্বের বিরহটা অতিব। তবুও স্মৃতি রাতে কান্নাকাটি করেছে৷ রিজভীও জানিয়েছে সব কমপ্লিট করেই আসবে৷ এই জন্য তারও কষ্টের মাত্রাটা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এতদিন এক সপ্তাহ হোক আর দুই সপ্তাহ হোক পরে দেখা হতো, ভালোবাসা বাসি সহ আদর সোহাগ হতো৷ কিন্তু এখন দীর্ঘ দূরত্বটা স্মৃতিও মানতে পারেনি৷ ভালোবাসার বিয়ে তাদের। মন দেয় নেয়া আগে থেকেই। কষ্ট তো হবেই!
রিজভী গতকাল রাতে শিশিরের সাথে সব ঠিকঠাক করে বাড়িতে গোছগাছ করে শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল। রাতটা তার রসমালাই বউয়ের সাথে কাটাবে বলে৷ সেখানে রাত থেকে সে ভোরের দিকেই শ্বশুরবাড়ির সকলের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ি চলে আসে। কারণ এখানেই ওর সব ছিল৷ এছাড়া মা বাবার থেকে দোয়া নিয়ে যাত্রা শুরু করবে ভাবনায় রেখেছিল৷ ভোরে স্মৃতির কান্না থামিয়ে আদর করে অভয় দিয়ে এসেছে। কুয়াশার মতো পাগলামি না করলেও সে-ও ঠিক নেই। স্বামী দূরে গেলে কষ্ট সবারই হয়৷
‘
রিজভীর বাড়ির সামনে শিশির সহ গাড়ি এসে থামল। রিজভী অপেক্ষায় করছিল। রিজভীর মা, বাবা সহ বড় বোন, ভাগ্নি,ভাগিনা দাঁড়িয়ে। শিশির নেমে সকলের সাথে কথা বলে বিদায় নিল রিজভী আর ওঁ। দু’জনই গাড়িতে উঠে বসল। রিজভীর মা সকালে ছেলেকে ধরে কেঁদেছেন। কারণ একমাত্র ছেলে ওনার। রিজভীও এই প্রথম বাহিরে যাচ্ছে। মা’য়েরা সন্তানদের কাছ ছাড়া করতে কষ্টই পায়।
বিদায় নিয়ে রিজভীর বাড়ির সীমানাও অতিক্রম করল গাড়ি। এরপর রোডে উঠল চলতে লাগল গাড়ি তার আপন গতিতে। গাড়ির গতির সাথে গাড়ির ভেতরে থাকা দু’টি মনের বিষাদের গতিও বাড়তে লাগল৷ আপন মানুষ ছেড়ে আপন জায়গা ছেড়ে ভিন্ন মানুষের মাঝে ভিন্ন জায়গায় পাড়ি জমাল স্বপ্ন পূরণের আশায়।
শিশির, রিজভী দুইজন দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। মনের অবস্থা করুন৷ দুই’জন দুই’জনের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কেন যেন দু’ইজনই হেসে ফেলল শব্দ করে৷ কষ্টের মাঝেও হাসি পেল বিষয়টা অদ্ভুত!!
রিজভী বলল,
” জীবনেও আর বিয়ে করতাম না দোস্ত! “
শিশির হেসে বলল,
” আর আমি তো সব ভাইদের সাজেশন দেব ব্যাচেলর লাইফে যেন বিয়ে টিয়ে না করে। আর ব্যাচেলর লাইফ কেন পড়াশুনো শেষ টেষ না করেই যেন বিয়ের কথা মুখেও না আনে৷ জীবন এক্কেবারে তেজপাতা৷ সাথে আরো বলব ডিফেন্স জবও যেন কেউ না করে ও হ্যাঁ আর যেন বিদেশেও না যায় কেউ ভাই, বাবাহ্ রে বাবাহ্!! “
শিশিরের কথা শুনে রিজভী সহ ড্রাইভারও হেসে দিল৷ রিজভী হাসতে হাসতে বলল,
” কী একটা অবস্থা রে দোস্ত! মনে হচ্ছে বইসা বইসা মনির খান, আসিফের গান শুনি। লাইক, ‘ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়’ ফিলিংস আসছে আমার ভাই! “
শিশির আবার হাসল৷ ড্রাইভার সামনে থেকে বলল,
” ভাই’রা নতুন বউ রাইখি প্রথম যাইতিছ বুঝি?”
” হ ভাই, বহুত ঝামেলা বউজাতি আর বিয়ে টিয়ে “
শিশির, রিজভী দু’জনই একসাথে বলে উঠল কথাটা। ড্রাইভার খেঁক খেঁক করে হেসে বলল,
” ঝামেলা না গো ভাইরা। নতুন নতুন সবারি কষ্ট হয়। বিয়ের পর আমিও প্রথম যখন কাজে বাইর হইছিলাম আমার বউও মন খারাপ কইরি বসি থাইকত। ভাড়ার গাড়ি চালাতাম। যখন সুমাই সুযোগ পাতাম বাড়ি যাতাম। বউ আমার কাইনত৷ কি আর করার কও? পেটের দায়ে তো কাজ করাই লাগবি তাই না? “
শিশির, রিজভী দু’জনই শুনল আর দীর্ঘ শ্বাস ফেলল দুইজনই৷ বিষাদেরা গলায় এসে বিঁধল। কেউ আর কথা বলল না৷ আপন মানুষদের ছাড়া দিন কেমন কাটবে কে জানে! যদিও ব্যস্ততায় দিন পাড় হবে তবুও কি ছটফট করবে না? হুম করবে। খুব করবে!
দু’জনই গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিল৷ চোখ বন্ধ করল৷ রাতে কেউ ঘুমায়নি৷ এখন একটু ঘুমানোর চেষ্টা করল৷ লং জার্নি জেগেও কাটানো সম্ভব নয়৷
__________
শিশির চলে গেলে কুয়াশাকে কেউ আর ঘরে যেতে দেয়নি। বসার ঘরে নিয়ে বৃষ্টি আর ইয়াসমিন বসেছে। জানে ঘরে গেলে বসে বসে কাঁদবে৷ তার থেকে বরং একটু আড্ডা দিক হালকা হবে৷ বৃষ্টির কোলে বর্ষণ ছিল কুয়াশা নিয়ে বসেছে৷ নীহার বাহিরে চলে গেছে। হিম শুধু বাড়িতে। জাহিদ মালিথা, তুষার, তুহিন, আম্বিয়াও বের হয়ে গেছে। আজমিরা সব গোছগাছ করছে। জাকিয়া স্বামীর কাছে।
ইয়াসমিন বলল,
” এত ভালো কবে কবে বাসলি রে! চোখ মুখ ফুলিয়ে বেগতিক করেছিস? আর বুকে ওমন আঁচড় কেন তোর? “
কুয়াশা বর্ষণের হাত ধরে নাড়াচাড়া করছিল। ইয়াসমিনের কথা শুনে বুকের দিকে তাকাল। দেখল আঁচড় লাগা দেখা যাচ্ছে ওড়না সরে গিয়ে। তড়িঘড়ি করে ঢেকে নিল। আমতাআমতা করে বলল,
” এমনই লেগে গেছে “
” লেগে গেছে? “
বৃষ্টির হেয়ালি প্রশ্ন। কুয়াশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ভাবিদের সাথে বন্ধুর মতোই সম্পর্ক তার। বলল,
” রাগে, কষ্টে, অভিমানে করেছি৷ কি করব বলো? একটুও সহ্য হচ্ছে না৷ বাড়িটা কেমন খা-খা করছে দেখেছ? তেমনই আমার বুকটা খা-খা করছে “
কুয়াশার কথায় দুইজন দুইজনের দিকে দৃষ্টি বুলাল। এরপর দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ইয়াসমিন উঠে কুয়াশার পাশে বসল৷ বলল,
” প্রথম একটু খারাপ লাগবে। পরে সয়ে যাবে। এত ভেঙে পরিস না৷ জানি সবারই খারাপ লাগে। তোর ভাই কিছু ঘন্টার জন্য বাহিরে থাকে তাতেই আমার খারপ লাগে। নানান চিন্তা হয়। এটা স্বাভাবিক৷ কষ্ট পাস না “
বৃষ্টি বলল,
” তোমাদের দেখি আর অবাক হয় বিশ্বাস করো! যারা এমন কোনো দিন ছিল না যে ঝগড়া আর মা-রা মা-রি না করে ভাত খেয়েছে। এখন তারা একে অপরকে ছাড়তেও পারে না! অবিশ্বাস্য!! বাবা আর চাচুর প্রতিটা কথা সত্যি ফলে গেল। তোমরা দায়িত্ব কখনো এড়াও নি আর না অধিকার ছেড়েছ। ঠিক বুঝে নিয়েছ নিজেদের অধিকার। আর সেই অধিকারবোধ থেকেই ভালোবাসা হয়েছে৷ এখন তোমাদের এই দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক সাথে সংসার দেখলে সত্যি খুশি লাগে আনন্দ লাগে। চিরজীবন এমনই থাকো। তোমাদের দূরত্বের দীর্ঘতা জলদি শেষ হোক৷ তোমাদের সব সময় ঝগড়া আর চুলোচুলি আমরা মিস করি এমনকি আস্ত মালিথা ভিলাও করে। “
কুয়াশার চোখ টলমল করতে লাগল। ইয়াসমিন মাথাটা এলিয়ে নিল টেনে। জা’য়ের আগে বড় বোন সে। কুয়াশা বলল,
” তোমাদের দেবরের মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যর বিষয়। কপাল করে পেয়েছি। রাজকপাল বলব৷ সালাম আমার চাচুদের, জোর করে নিজেদের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে জীবন রাঙিয়ে দিয়েছেন। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দায়িত্ববান, স্ট্রোং ব্যক্তিত্বের জীবন সঙ্গী পেয়ে। একদম বড় চাচুর মতোই হয়েছে। যখন থেকে প্রেম, ভালোবাসা, বিয়ে নিয়ে বোঝা ধরেছিলাম তখন শুধু চাচুকে দেখতাম যে একটা মানুষ এতটা পারফেক্ট কি করে হয়? আমার চাচু একা হাতে সংসার গোছাত সাথে বড় আম্মু সঙ্গী। চাচু একা হাতে সকলের খেয়াল রাখত৷ দাদু তো ছিল না। আমার কোন জিনিস লাগবে না লাগবে, মাস শেষে টিউশন ফি সহ স্কুল, কলেজের খরচবাবদ সব চাচু আর মেজো চাচু দিয়েছেন বাবা চলে যাওয়ার পর। কিন্তু মেজো চাচু তো বাড়িতে থাকে না! তাই ভালোমন্দ বড় চাচু করেছেন৷ তুষার ভাইকে আদেশ দিয়েছিলেন আমার সব জিনিসের খেয়াল রাখতে তাদের নাকি একমাত্র মেয়ে আমি। তাই বড় চাচুর প্রতি আমার মুগ্ধতা ক্ষণে ক্ষণে বাড়ত৷ একটা মানুষ এতটা ভালো হয়? আজ কাল ভাইয়ের মেয়ের এতটা যত্ন কে করে? বাবা মা-রা যাবার পর চাচুকে বাবার আসনে বসিয়েছিলাম। আর মনে স্বপ্ন বুনেছিলাম চাচুর মতো ব্যক্তিত্বের ছেলেকে বিয়ে করব। এমন ছেলেকে বিয়ে না করতে পারলে জীবন রঙিন হবে না। মেয়েরা বাবার মতো ব্যক্তিত্বের স্বামী চায় সব সময় কারণ সব মেয়েদের কাছে তাদের বাবা থাকে বেস্ট এবং সুপার হিরো। আমিও বড় চাচুর মতো ব্যক্তিত্বের জীবনসঙ্গী চেয়েছিলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে চাইতামও আল্লাহ্’র কাছে। আল্লাহ আমর চাওয়া, আশা, স্বপ্নটা যে এভাবে কবুল করে নিবেন আমার কল্পনার বাহিরে ছিল। এই বাড়ির প্রতিটা ছেলেকে চাচু নিজে হাতে গড়েছেন৷ মেজো চাচু, বাবা, ভাইদের সকলকে। সেই জন্যইতো আমাদের ভাইগুলো এক একটা দায়িত্ববান তৈরি হয়েছে। তোমাদের দেবরকে পেয়ে আমি ধন্য। আমাকে ভালোবাসার গভীরতা সে-ই বুঝিয়েছে। আমাকে বিয়ের পর ভালো না বাসলেও কখনো অসম্মান করেনি। বরং জানো! বিয়ের দিন রাতে আমার থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিল। সেই সময় নিয়ে আস্তে আস্তে অপছন্দ, হিংসা কাটিয়ে ভালোবেসেছে, যত্ন নিয়েছে, দায়িত্ব পালন করেছে। অসুস্থ হলে নিজে হাতে সেবা, যত্ন করেছে। ভালোবাসা ছিল না কিন্তু তবুও দায়িত্ব পালন করেছে বউয়ের৷ আমি সেই সবেই মুগ্ধ হয়েছি, ভালোবেসে ফেলেছি। তাহলে বলো! এত এত আদর, যত্ন, ভালোবাসা ছেড়ে কি করে দিন কাটবে আমার? “
কুয়াশা একভাবে কথাগুলো বলে থামল৷ শিশিরকে নিয়ে মনের অনুভূতিগুলো শেয়ার করল। বৃষ্টি, ইয়াসমিন মুগ্ধ হয়ে শুনল। সত্যি বুঝদার এ দুটো। ভালোবাসা ছিল না সময় নিয়েছে কিন্তু পিছিয়ে যায়নি। অত্যাচার করেনি৷ সময় নিয়ে ভালোবেসেছে। এদের ভালোবাসা আর সম্পর্ককে স্যালুট জানাতে হবে। এরাই সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল যারা কিছুতেই কেউ কারো থেকে কম না। ঝগড়া, মা-রা মা-রি, চুলোচুলি, ভালোবাসা সব কিছুতে সমানে সমানে। খাঁটি দম্পত্তি৷ বৃষ্টি, ইয়াসমিন কথাগুলো ভাবনায় আপনাআপনি চলে এলো। হাসল অমায়িক। এবার বৃষ্টিও উঠে কুয়াশার পাশে বসল। বলল,
” আল্লাহ এভাবেই তোমাদের সম্পর্ক চিরজীবন অটুট রাখুক। মুগ্ধ হলাম আমার দেবরের প্রতি৷ মেয়েদের সে আগাগোড়ায় সম্মান করে। শুধু তোমাকে স্বভাব দোষে সহ্য করতে পারত না। “
” হুঁ, কিন্তু কখনো অসম্মান করেনি আমাকে। পতিতালয় থেকে এসেছিলাম কোনো দিনও এটা নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেসা বা কিছু বলে নি৷ অবহেলা করেনি৷ আগে বোন হিসেবে সম্মান করেছে পরে বউ হিসেবে সম্মান আর ভালোবাসা দিয়েছে। পাড়ার চাচি কথা শুনিয়েছিল আর ওঁ কি বলেছিল জানো? আমি ওর ‘পবিত্র পুষ্প’। আমাকে কখনো হেরে যেতে মানা করেছিল। সাহস যুগিয়েছিল। পাশে থেকে স্বামীর জোর দেখিয়েছিল। ওর জন্যই আমি আমার জীবনের কালো রাতটা ভুলতে পেরেছি। লড়তে পেরেছি সমাজে। ভেঙে যেতে দেয়নি আমাকে। আমার সেরা স্বামী সে। তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসব না? কষ্ট পাব না?”
ক্ষণে ক্ষণে মুগ্ধ হলো বৃষ্টি, ইয়াসমিন। বৃষ্টি মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল,
” তুমি আমাদের জা’য়ের থেকে ননদ বেশি। তোমার সুখ দেখে শান্তি পেলাম। বাবারা যেই দায়িত্ব পালন করেন সেটা তোমার চাচুরা করেছেন৷ সঠিক ছেলে নির্বাচন করেছেন তোমার জন্য “
কুয়াশা বৃষ্টির কথায় বাতাসের সাথে নিঃশ্বাস ছাড়ল দীর্ঘ একটা৷ আল্লাহ এই সুখ চিরস্থায়ী করুক৷ স্বামী তার সফল হয়ে ভালোই ভালোই বাড়ি ফিরুক৷ ঐ বুক বড্ড মিস করবে সে। শূন্যে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবল৷
এদিকে পেছন থেকে আজমিরা সহ জাকিয়া সব শুনলেন। আজমিরার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে একমাত্র মেয়ের সুখের কথা শুনে৷ জাকিয়া মুগ্ধ ছেলে আর ছেলের বউয়ের উপর৷ জাকিয়া আজমিরাকে আশ্বাস দিতে ধরলেন৷ অমায়িক হাসলেন৷ আজমিরা এবার শব্দ করে কেঁদে জাকিয়াকে জড়িয়ে ধরলেন৷ বললেন,
” বুবু, বুবু গো তোমাদের লাখ লাখ শুকরিয়া। আল্লাহর কাছে আমি বান্দা কীভাবে শুকরিয়া আদায় করব? এত শান্তি, সুখ কই রাখব আমি? আমাকে তিনি সর্বস্বান্ত করেননি। আমার মেয়ের জন্য ভাইজানরা এতটা চিন্তা করেছেন এত ভালো ছেলের হাতে দান করেছেন আমি ধন্য। বড় কৃতজ্ঞ তোমাদের উপর “
জাকিয়া কিছু বললেন না। শুধু শুনলেন৷ কুয়াশারা কান্না পেয়ে তখনি পিছন ঘুরে মা’য়েদের দেখে৷ মা’কে দেখে বর্ষণকে বৃষ্টির কোলে দিয়ে উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। নিরবে চোখের পানি ফেলল৷ তার মা’য়ের কষ্ট আজ হারে হারে বুঝতে পারছে সে৷ তার মা’য়ের পথ চলা কতটা কঠিন ছিল আজ বুঝছে। তার মা-ও সেরা। আজমিরা কুয়াশার সারা মুখে চুমু আঁকলেন। বললেন,
” আমার মা। আমার মা’টা আজ কত সুখী! আমার শান্তিতে বুক ভরে উঠল। “
কুয়াশা ঠোঁট প্রশারিত করে হাসল শুধু। জাকিয়া মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন,
” এভাবেই চিরসুখী হয়ে থাকিস আমার ছেলেকে নিয়ে। আমার ছেলের দায়িত্ব তোকে দিয়ে দিলাম। “
“চিরজীবন পালন করব তা”
বলে কুয়াশা আবেশে জাকিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখল। সকলের মুখে অমায়িক হাসি আর বুকে প্রশান্তি। এই দুটো বুনো ওল বাঘা তেঁতুল হাম সেপাইরা এভাবেই খুঁনসুটিতে সংসার করে জীবন পাড় করুক।
____________
সারাটা সকাল, দুপুর বিষন্নতায় কাটাল কুয়াশা। টুকটাক গল্প আর শুয়ে, ঘুমিয়ে৷ পড়াশুনোয় মন বসেনি৷ শিশির এখনো ফোন দেয়নি৷ বলেছিল পৌঁছে সব ঠিকঠাক করে ফ্রি হয়ে রাতে ফোন দেবে৷ তার আগে যেন সে না দেয়। কারণ ব্যস্ত থাকবে। কথা মেনে সে-ও দেয়নি। কিন্তু ছটফটিয়ে বেড়াচ্ছে। কখন একটু দেখবে বা কন্ঠ শুনবে।
বিকলের দিকে স্মৃতি কল দিল৷ স্মৃতির কল পেয়ে স্মৃতির কথা মনে হলো৷ মনে হলো স্মৃতিও তো তারই গোয়ালের! তারা তো একই গোয়ালের গরু! তৎক্ষনাৎ কল রিসিভ করল। হ্যালো বলতেই স্মৃতির কথা শোনা গেল। তার কন্ঠও নির্জিব শোনাল। কুয়াশার কেন জানি এবার একটু হাসি পেল। হাসল-ও ফিক করে। হেসে নিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করল আগে। এরপর বলল,
” তুই-ও কি স্বামী শোকে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিস নাকি? “
ওপাশ থেকে স্মৃতি বলল,
” নাওয়া খাওয়া বন্ধ করিনি কিন্তু কাইন্দা কাইন্দা চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি৷ “
স্মৃতি মজা করেই বলল নাকি দুঃখে বলল বুঝল না কুয়াশা। তবে হেসে ফেলল সে। হেসে নিয়ে বলল,
” আর কাইন্দস না সখী। স্বামী আমাগো বিদেশ, ফিলিংস তেমনই আইতাছে “
ওপাশ থেকে স্মৃতিও শব্দ করে হেসে দিয়েছে। কুয়াশাও হাসল৷ দুই জনে এমন নানান কথা বলতে লাগল৷ অনেকটা সময় কথা চালিয়ে গেল৷ মনটাও দুই বান্ধবীর হালকা হলো৷ কথায় বলে না! রতনে রতন চেনে এদের হয়ে তেমন। দুইজনের কষ্ট দুু’জন উপলব্ধি করতে পারছে। তারা যে একই গোয়ালের গরু!!
‘
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমে এসেছে। কুয়াশা নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে স্বামীর সুস্থ, এবং ভালো থাকা নিয়ে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ করল।
নামাজ শেষে উঠে তার আপন ঘর অর্থাৎ শিশির ও তার ঘরের দিকে গেল। আজ সারাদিন সে ঐ ঘরে পা রাখেনি। ঘরে কেন সামনেও আসে নি। ঘরের সামনে আসতেই বুকটা কেঁপে উঠল। আবার খা-খা করতে লাগল বুকটা। শূন্যতা আঁকড়ে ধরল। সারাটা দিন গেল মানুষটার মুখটা দেখা হয়নি। এমনকি কন্ঠটাও শোনা হয়নি। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। নিস্তব্ধতায় ছেয়ে আছে ঘরে৷ বুকের ভেতর জ্বলতে লাগল৷ আজ থেকে আর এই ঘরে মানুষটাকে পাবে না৷ ভেবেই চোখটা জ্বলে যেতে লাগল৷
ভেতরে ঢুকল। সারা ঘরে শিশিরের শরীরের গন্ধ ছড়িয়ে আছে তা নাকে এসে বাড়ি দিল। চোখ বন্ধ করে বড় নিঃশ্বাস টেনে নিল। পুরো শরীর শীতল হয়ে গেল। মনে হলো শিশির তাকে জড়িয়ে ধরল পিছন থেকে। অদ্ভুত শিহরণ হলো। পুরো ঘরে চোখ বুলাল। তার আর শিশিরের খুঁনসুটি, ভালোবাসার এক একটা স্মৃতি দৌড়ে, দাপিয়ে বেড়াতে লাগল। কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে কী বলেছে, কী করেছে সব৷ এগিয়ে এসে ফ্যান চালু করে ফোনটা বিছানার পাশে রেখে বিছানায় বসে শরীরটা ছেড়ে দিল। চিৎ হয়ে শুয়ে সিলিং দেখতে লাগল। বিছানার চাদর থেকেও শিশিরের শরীরের গন্ধ আসছে৷ বুকের ব্যথা ক্রমেই বারতে লাগল। নিঃসঙ্গতায় ছেয়ে গেল পুরো শরীর, মন। রাতের একএকটা স্মৃতি মনের, চোখের মানসপটে ভেসে উঠতে লাগল। শিশিরের বলা কথা, কন্ঠ সব কানে বাড়ি খেতে লাগল। সারা শরীর জ্বলে উঠল। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল৷ সেগুলো গড়িয়ে চোখের কোল বেয়ে বিছানায় পড়তে লাগল। নিঃসঙ্গতা কুঁড়ে কুঁড়ে আঁকড়ে ধরল ক্রমেই। চাদর খামচে ধরল মুঠোর মাঝে৷ ঝগড়া, চুলোচুলি মিস করছে বড্ড। যেটা নিয়মমাফিক না করলে শান্তি লাগে না৷ কিন্তু করবে কার সাথে?
গুঙিয়ে কেঁদে দিল। ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে লাগল। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। শান্তির বুকটা লাগবে। কিন্তু হায় আফসোস! সেটা সে চাইলেও আর পাবে না। ভেবেই কাৎ হয়ে শুয়ে মুখ ঢেকে ডুকরে উঠল। আঁটকানো কন্ঠে আস্তে আস্তে বলল,
” প্লিজ আসো! আমি সহ্য করতে পারছি না। বড্ড প্রয়োজন তোমায়। একটু আদর দিয়ে যাও! তোমার ঐ বুক লাগবে আমার।”
বলতে বলতে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। এক হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে দিয়ে৷ নিস্তব্ধ ঘরে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল, শুধু ফুঁপানির আওয়াজ। কিছুক্ষণ কান্নার পর হঠাৎ ফোন বেজে উঠল। চমকে উঠল সে। তড়িঘড়ি করে ফোনে চোখ বুলাল। কাঙ্ক্ষিত মানুষটা ফোন দিয়েছে! ভেবেই তড়িৎ চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করল। কেঁদে কন্ঠ বসে গেছে। সেটা ঠিক করার চেষ্টা করতে করতে ফোন রিসিভ করল। সালাম দিতে ওপাশ থেকে সালামের উত্তর পাওয়া গেল। আহ্ শান্তি!! শরীর, মন শীতল হয়ে উঠল। শিহরণ হলো হৃদয়ে। ঠোঁটের কোনে সুক্ষ্ম হাসির রেখা ভেসে উঠল। সারাদিন পর এই কন্ঠ শুনল।
ওপাশ থেকে শিশির বলল,
” ভিডিও কল দিচ্ছি রিসিভ কর “
বলেই ফোন কেটে দিল৷ কিছু সেকেন্ডের মাঝেই হুয়াট্স আপে আবার ভিডিও কল এলো। কুয়াশা চোখ মুখ মুছে নিল ভালোভাবে। রিসিভ করল। সে বিছানায় বসেছে উঠে। রিসিভ করতেই সারাদিন যেই মুখটা দেখেনি সেটা দেখতে পেল৷ ইশশ প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। ছলছল চোখে চেয়ে রইল।
শিশির তার আহ্লাদী বউকে দেখল সারাদিন পর। বুকটা এতক্ষণ খা-খা করছিল। চেয়ে রইল। অনিমেষ অবলোকন করল বউটাকে৷ ঠোঁটে আলত হাসি ফুটাল।
দু’জন দু’জনকে দেখতে লাগল। কিছুক্ষণ কেউ কথা বলল না। এরপর একসময় শিশির বলল,
” কাঁদছিলি কেন? “
” এই ঘরে আমাকে নিঃসঙ্গতা কুঁড়ে ধরেছে। সারাদিন আসিনি একটু আগে আসলাম৷ তোমার গন্ধ ঘর, বিছানায় পাচ্ছি৷ কন্ঠ কানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। “
শিশির বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইল৷ বুকটা ভারী হয়ে এলো। এখন কাছে থাকলে কি করত? জড়িয়ে ধরত নাহ্? তার বউটা তার বুকে মাথা রাখত নাহ্? সে-ও যত্ন করে ধরে কপালে চুমু আঁকত নাহ্? ভেবেই বুকে ব্যথা অনুভব হলো৷ সেই বুকে বউয়ের মাথাটাকে খুব মিস করল৷ তাকিয়ে থেকে বলল,
” সোনা..! “
আহ্, বুকের গভীরে বাড়ি দেয়া সম্মোধন। কুয়াশার চোখ বন্ধ হয়ে এলো শিহরণে। চোখ খুলে আবার তাকাল। ঠোঁট কামড়ে ফুঁপিয়ে বলল,
” খুব মিস করছি তোমায় ”
” আমিও “
শুনতেই ঝরঝর করে কেঁদে দিল কুয়াশা। শিশিরেরও কেন যেন এবার চোখটা ভিজে এলো৷ কিছু বলল না কাঁদতে দিল কিছুক্ষণ। সে-ও দেখল আহ্লাদীর কান্না৷ এই ঝগড়ুটে আহ্লাদী তাকে কতটা ভালোবাসে দেখল৷ আবার কিছুক্ষণ পর ডেকে উঠল,
” এ্যাই আমার সোনা…!”
কুয়াশা মাথা তুলে তাকাল৷ সে বলল,
” আর কাঁদিস না সোনা। জলদিই ফিরব তোর কাছে। “
কুয়াশা তবুও ফুঁপাতে লাগল। বলল,
” তোমার বুকটা লাগবে আমার “
শিশিরের সব এলোমেলো হয়ে এলো৷ এই মেয়ে বার বার তাকে ইমোশনাল করে দিচ্ছে। যত চাচ্ছে শক্ত হতে তত আবেগী করে তুলছে। এ এতটা ইমোশনাল কবে থেকে হলো? আগে তো কখনো দেখেনি! বলল,
” আমারও এই বুকে আমার আহ্লাদীকে লাগবে। তবে খুব জলদিই আমি তাকে এই বুকে নেব। আর কাঁদিস না লক্ষ্মীটি। এবার একটু স্বাভাবিক ভাবে কথা বল! “
শিশিরের কথায় স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল বাধ্য মেয়ের মতো। কিছুক্ষণ সময় নিল। এরপর দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে আবার ছেড়ে দিল। শিশির তাকিয়ে রইল। কুয়াশা বলল,
” কোথায় উঠেছ? “
” আপাতত হোটেল ডি মেরিডিয়ান লিঃ এ উঠেছি “
” এটা কোথায়? “
” ঢাকা, উত্তরায়। “
” ও, রিজভী ভাইয়া নেই? “
” হ্যাঁ আছে, ও-ও কথা বলছে স্মৃতির সাথে”
বলে মুচকি হাসল। ফোন ঘুরিয়ে দেখালও সেটা৷ দেখল বিছানায় শুয়ে কথা বলছে সে। অবশ্য ভিডিও কলে না। কুয়াশা দেখে মুচকি হাসল। হাসিটা দেখে একটু শান্তি লাগল শিশিরের। বলল,
” খাওয়া দাওয়া করেছিস ঠিক মতো সারাদিন? “
” হ্যাঁ, তুমি খেয়েছ তো? “
” হ্যাঁ দুপুরে খেয়েছি। একটু আগে কফি খেয়ে এসেছি। রাতের খাবার নয়টার পরে খাব “
” ভালোভাবে নিয়ম করে খাওয়া দাওয়া করবা কিন্তু! আমার স্বামী যেন শুকিয়ে না যায়! যেমন পাঠিয়েছি তেমনই যেন পাই! “
শিশির ঠোঁট টিপে হাসল। বলল,
” আচ্ছা, তেমনই থাকার চেষ্টা করব। তবে বউয়ের আদরের অভাবে যদি শুকিয়ে যায় আমার কিন্তু দোষ নেই! বউয়ের আদরের ভিটামিনের প্রয়োজন পড়বে তখন। বাড়ি গেলে সেই ভিটামিন যেন বউ পূরণ করে দেয়! “
” অসভ্য বুনো ওল! ”
ইশশ সারাদিন পর শুনল ডাকটা। মনটা আনন্দিত হলো। কুয়াশা-ও ফাজলামো করা ধরল এবার। বলল,
” রাতের ডোজ গুলোই দুই বছরের বেশি লাস্টিং করবে তাই আমার মনে হয়না বউয়ের আদরের ভিটামিনে ভুগবা! “
এই কথা শুনে শিশির তড়িৎ ঘুরে পাশে তাকাল৷ রিজভী শুনে নিল কিনা দেখল৷ নাহ্ সে-ও বউয়ের সাথে মজে আছে। তাই রুমের ডিভান থেকে উঠে দূরে চলে গেল। গিয়ে সেখানে জানালার উপর বসল। রাতের ব্যস্ত ঢাকা শহর নজরে এলো। গাড়ি-ঘোড়া পরিপূর্ণ রোড। হরেকরকম লাইট,বাতি। সেদিকে একবার দেখে বউয়ের দিকে তাকাল৷ উত্তর করতে বলল,
” হ্যাঁ, দুই যুগেও মিটবে না। ঠোঁটের অবস্থা যে করেছিস কিছুই খেতে পারছি না। জ্বলে যাচ্ছে। সকালে কতটা আনইজি লাগছিল সকলের সামনে জানিস? “
” ঠিক করেছি। দেখবা আর মনে করবা ঘরে তোমার আহ্লাদী বউ আছে। তারই চিহ্ন তোমার বুকে, ঠোঁটে “
কুয়াশার স্বভাব সূলভ কথার ধাঁচ পেয়ে শান্তি পেল। সে-ও বলল,
” ফাজিল গোবর ঠাঁসা! পিঠ, বুক সব ব্যথা করে এখন আবার বলছিস ঠিক করেছিস! “
” হ্যাঁ, ঠিক করেছি! ওগুলো আমার সিলমোহর। বাহিরের মেয়েদের নজর থেকে আমার সুদর্শন স্বামীকে রক্ষা করার কালো টিকা!”
বেশ দাম্ভিকতার সাথে বলল কুয়াশা। শিশির হেসে ফেলল শব্দ করে। সারাদিন পর হাসল। এই মেয়েটার জন্যই সে কষ্ট পাচ্ছিল আবার এই মেয়েটার জন্যই হাসল৷ কী অদ্ভুত সম্পর্ক নাহ্! কুয়াশাও শিশিরের হাসিতে হেসে দিয়েছে। মনটা অনেকটা হালকা হলো সারাদিন পর। শিশির কুয়াশার হাসি দেখতে দেখতে বলল,
” ফাজিল গোবর ঠাঁসা!”
” অসভ্য বুনো ওল!”
এরপর কিছুক্ষণ চুপ রইল। কুয়াশা জিজ্ঞেস করল,
” আম্মুর সাথে কথা বলেছ? বাড়ির কাউকে জানিয়েছ তুমি পৌঁছেছ? “
” হ্যাঁ সকলকে জানিয়েছি৷ আম্মুর সাথেও কথা হয়েছে৷ আম্মুর সাথে, বাবার সাথে কথা বলা শেষ করে তোকে কল দিয়েছি৷ নীহার ভাইকেও দিয়েছিলাম৷ কাল সকালে সকলের সাথে ভিডিও কলে কথা বলব৷ আজ আর বলছি না। “
” আচ্ছা “
এরপর আবার নিস্তব্ধতা বিরাজ করল। দুইজন দুইজনের দিকে অনিমেষ চায়ল৷ কুয়াশা বলল,
” ভালোবাসি!”
” আমিও আমার আহ্লাদীকে ভালোবাসি “
মুচকি হাসল কুয়াশা৷ আবেগী হয়ে উঠল হঠাৎ আবার। দুটি মনেরই এক অবস্থা হলো৷ এটাই স্বাভাবিক। নতুন নতুন এমন হবেই৷ সময় গেলে ঠিক হয়ে যাবে৷ এতদিন এই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল কাছে ছিল। কাছে থেকে সব করত এখন দূরে গেছে তাই দূরত্ব পুড়াবেই৷ আরো কিছুক্ষণ গল্প করল দুইজন। গল্প করে নয়টা বাজাল৷ একসময় শিশির বলল,
” যাহ্ খেতে যা। নয়টা বেজে গেছে। পড়ে আবার কল দেব৷ সময় মতো খাবি আর পড়াশুনো করবি। “
কুয়াশার মনটা বেজার হয়ে গেল। এভাবেই সারাক্ষণ কথা বললে কি ক্ষতি হবে? খুব বেশি ক্ষতি হবে কী? তাহলে তো আর নিঃসঙ্গতা আঁকড়ে ধরে না! মনে হবে মানুষটা দূরে তো কি হয়েছে? এই তো তবুও কাছে৷ সূদুরে থেকেও অতিব নিটকে!! কিন্তু হায় আফসোস! সারাদিন কি আর এভাবে কথা বলা সম্ভব? অতিশয় বাচ্চামি ভাবনা না? শিশির বুঝল কুয়াশার মনের অবস্থা। বলল,
” মন খারাপ করিস না সোনা৷ কষ্ট করে দুইটা বছর চলে গেলে ইনশাআল্লাহ সব ভালো হলে আবার বাড়িতে চলে যাব। তখন আর দূরে থাকতে হবে না৷ যেখানে থাকব দূজন একসাথে। এটা শুধু ক্ষনিকের দূরত্ব। আমরা কখনো আলাদা ছিলাম না আর থাকবও না। সবাই বলে নাহ্ আমরা ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ ! তো তুই বল বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুল কি আলাদা হতে পারে? নাকি থাকতে পারে? নাকি লোক মুখেই আলাদা হয়? বুনো ওল এলেই সবার আগে বাঘা তেঁতুলের কথাই আসবে। তেমনই শিশিরের কথা এলে কুয়াশার কথা আগে আসবে। আমরা কখনো আলাদা হব না। লোকমুখের কথার মতো আমরণ এক থাকব। আমরণ আমাদের অন্তরেরও মিলন রবে৷ আমরা অর্ধাঙ্গ অর্ধাঙ্গিনী সব সময় এক আত্নায় বাঁধা থাকব৷ দূরে থেকে মন থেকে কাছে থাকব। আর মন খারাপ করে থাকিস না। ক্ষণিকের জন্য মেনে নে। বি নরমাল, সব ঠিক হয়ে যাবে আবার। ভালো থাকবি কেমন? “
আহ্ কী সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল! মনটা শান্তিতে ভরে গেল৷
“আমরা আলাদা কখনো হব না৷ কখনো না”
কথাটা মনে মনে আওড়াল কুয়াশা৷ বলল,
” হুঁ, মানব৷ আর ভালো থাকব৷ তুমিও ভালো থাকবে কেমন? “
” থাকব “
এরপর বিদায় নিয়ে কল কেটে দিল শিশির৷ দীর্ঘ শ্বাস ফেলল একটা৷ আপন মানুষদের থেকে এ দূরত্ব জলদি ঘুচুক।
| চলবে |
উফফ কবে যে গল্পটা শেষ করতে পারব
শিশির কুয়াশাকে নিয়ে লিখতে গেলে কেন যেন আপনাআপনি শব্দভাণ্ডার পূর্ণ হয়ে যায় আমার।
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click