®রোজা রহমান
‘
শীতের দিন, রাত সবই ঠান্ডা, শুষ্কতা বিরাজ করে। বিকেল হয় ঠান্ডা মৌসুম। সুর্যহীন এই বিকেলে দু’জোড়া চোখ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দূরের আকাশের মেঘ সহ, প্রকৃতির গাছপালা দেখতে ব্যস্ত৷ পাখপাখালিরা শীতের প্রকটতা থেকে বাঁচতে জলদি তাদের নীড়ে ফিরছে৷ সারাদিন নিজেদের কাজে ব্যস্ত থেকে দিন পাড় করেছে৷
চোখ জোড়া যেমন ব্যস্ত প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত তেমনই তার মস্তিষ্কও চিন্তায় মগ্ন। ভাবনারা লুটোপুটি খাচ্ছে কিছু কথা হানা দিয়ে। ভাবনায় তার আসছে, ইশশ যদি ঐ পাখিগুলোর মতো তার আপন মানুষটাও দিন শেষে যদি তার কাছে আসত? এমন সারাদিন পর যদি রাতটায় তার সঙ্গ পেত? রাতের একলা ঘরের নিঃসঙ্গতা যদি কাটাতে পারত? একা যে রাত কাটানো বড় দায়! দিন তো যেমন তেমন চলে যায়, কিন্তু রাত? রাতে কি প্রিয় ভালোবাসার মানুষটাকে না ছাড়া যায়!! কতশত স্মৃতিরা দৌড়ে বেড়ায়৷ একাকিত্ব আঁকড়ে ধরে রাখে৷ খোঁজে পাশে ভালোবাসার মানুষটিকে৷ বাহিরে নিজেকে শক্ত দেখালেও, সে কি আদৌ শক্ত থাকতে পারে ভেতরে? সকলের সাথে দিনে তো চলে যায় কিন্তু রাতে তো প্রিয় সঙ্গীটাকে খোঁজে! মানুষটা শক্ত হতে শিখিয়ে গেছে সে-ও হয়েছে। কিন্তু কতটুকু হতে পেরেছে শক্ত?
আজ কত মাস হলো তাকে কাছে পায় না? ভাবনার মাঝেই সংখ্যার হিসেবটা মিলিয়ে নিল। এক না দুই না তিন না পুরো সাতটা মাস পাড় হয়ে গেল৷ এই সাতটা মাস কি খুব সহজ? উহু, অতিশয় কঠিন। নীহারের যাওয়া সাতটা মাস হয়ে গেল। আর কত দিন, সপ্তাহ, মাস অপেক্ষা করতে হবে? নাকি বছরের পর বছরও অপেক্ষা করতে হবে আপন মানুষটার জন্য! অপেক্ষা জিনিসটা যে খুব কঠিন!! অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়না, কাটে না দিন-রজনী৷
প্রিয় মানুষটার সাথে কাটানো ঐ কয়েকটা দিনের কথা মনে এখনো কাঁটা দেয় শরীরে, শিহরণ হয় শরীর৷ কতই না মধুর ছিল! আবার কবে পাবে ঐভাবে কাটাতে? ভালোবাসা, সুখ, শান্তি, আনন্দময় ছিল কয়টা দিন৷ আর যেদিন গেল সেদিন? সেদিনের কথা মনে উঠলে তো বুকটা এখনো কাঁপে। শরীরটা ভারী হয়ে আসে৷ পা যেন অবস হয়ে যায়। মানুষটার চলে যাওয়া তার হৃদয়ের সুক্ষ্ম ব্যথার কারণ৷ এই ব্যথা ততদিন স্থায়ী যতদিন মানুষটা তার থেকে দূর থেকে বহু দূর রবে৷
নীহারের ঘরের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে ভাবনায় মত্ত শশীর ভাবনা আবার উল্টে গেল নীহারের যাবার দিন সহ ক্ষণিকের কাটানো মূহুর্তে চলে গেল৷ বিয়ের পর যে দিনগুলো কাছে পেয়েছিল, কাছে ছিল সে-কটা দিন সব সুখ ছিল তাদের মাঝে৷ মানুষটা আদরে, আহ্লাদে ভরিয়ে রেখেছিল৷ বাড়িটা মেতে ছিল খুশিতে। যেদিন গেল কতই না পাগলামি করল তবুও একা রেখে চলে গেল৷ একটু মায়া-দয়া করল না৷ ভাবলনা কষ্টে তার বুকটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল৷ ভালোবাসা শুধু পুড়ায়৷ তাদের ভালোবাসায় শুধুই দূরত্ব। সে প্রথম থেকে দূরত্ব এখনো সেই দূরত্ব। তফাত বিয়ে আগে আর পরে৷ কবে আসবে সে!!
” কবে আসবেন আপনি? আমার অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ করবেন? আমার যে আর একলা রজনী কাটে না! আপনার আদর, ভালোবাসা বড্ড প্রয়োজন। কেন আমাদের ভালোবাসায় এত দূরত্ব! সূদরে কি আপনি ভালো আছেন আমায় ছেড়ে! আমি যে ভালো নেই। কবে ফিরবেন আপনি! “
কথাগুলো ঠোঁটজোড়ার নিচে বিরবির করে আওড়াতে আওড়াতে কান্নায় ভেঙে পড়ল শশী। রেলিঙের পাশ ঘেঁষে বসে পড়ল। হাঁটুতে মুখ গুঁজে গুঙিয়ে, ডুকরে উঠল। গায়ের শাল চাদরটা একপাশ নিচে খসে পড়ল সেদিকে খেয়াল করল না। চোখের পানি ফেলতে লাগল স্বামীর জন্য, ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে না পাবার কষ্টে।
‘
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো ধরণীর বুকে। আজান দেবে দেবে ভাব। আরো একজোড়া চোখ সূদুরে অবলোকন করছে৷ কিচিরমিচির করে শহুরে পাখিরা নীড়ে ফিরছে। সে একজনের উপর রাগ, অভিমান পুষে নিয়ে দিব্যি দিন কাটাচ্ছে। রাগ করার তার অধিকার। করবে সে রাগ। কারণ ছাড়াই করবে। বউ সে, রাগ করবে না তো কে করবে? সে-ই করবে এবং ভাঙাবে ঐ মানুষটা। অভিমানে মন সিক্ত করল আরো। আসলেও কথা বলবে না। ভাবনার মাঝে চারিদিকে আজানের ধ্বনি কানে ভেসে এলো কুয়াশার কানে। বেলকনি থেকে সে ঘরে এলো৷ ধীর পায়ে। ঘরে গিয়ে ওজু করে নিল। মাগরিবের নামাজ আদায় করে সে ঘর থেকে বের হলো।
শশী ঘরের দিকে গেল। দরজা ভিড়ানো ছিল। ঘরে ঢুকে পেল না৷ বেলকনিতে গেল৷ দেখল এই শীতের মাঝে বেলকনিতে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। হাসল কিঞ্চিৎ। এগিয়ে গিয়ে পেট ধরে হালকা ঝুঁকল কুয়াশা৷ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকল,
” শশী…! “
মুখ তুলে তাকাল শশী। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে প্রচুর। মলিন সে-ও হাসল। মেয়েটার কষ্ট সে বুঝল৷ নতুন নতুন সে-ও তো এমন পাগলামি করত!! কত রাত দিন বসে বসে কাঁদত৷ এখন আর কষ্ট হয়না সয়ে গেছে। পুরুষরা তো সব সময় চাইলে ঘরে বউয়ের কাছে বন্দী হয়ে থাকতে পারে না! তাদের বাহিরে যেতেই হয় কাজের জন্য। কিছু করার নেই। কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে হয়৷ কুয়াশা বলল,
” ওঠ, নিচে চল। আমি কাঁদতে মানা করি না? তবুও কেন কাঁদিস? “
” কি করব বুবু? সহ্য হয় না আমার৷ তোমার ভাইকে ছাড়া সব শূণ্য মনে হয়”
আবারও কিঞ্চিৎ হাসল কুয়াশা৷ মেয়েটা আর বড় হলো না৷ এই দূরন্তপনা মেয়েটার যখন মন ভালো থাকে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে আর যখন মন খারাপ থাকে তখন এমন একা বসে কাঁদবে। বলল,
” ওঠ, তুই না আমার স্ট্রোং বোন? তো এখন এমন অবুঝপনা কেন? জলদি আসবে ভাইয়া। আর কাঁদিস না সোনা৷ আমরা আছি তো! চল নিচে যায়। আমারও ভালো লাগছে না৷”
শশী দেখল কুয়াশা এখনো ঝুঁকে আছে৷ সে তৎক্ষনাৎ চোখ মুছে নিয়ে বলল,
” আরেহ্ বুবু তুমি ঝুঁকে আছো কেন? সোজা হও৷ ওর কষ্ট হবে “
বলতে বলতে ঝটপট উঠে দাঁড়াল৷ চাদরটা তুলে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
” চলো এখানে অনেক বাতাস, ঠান্ডা লাগবে তোমার “
কুয়াশা মুচকি হাসল। মেয়েটা নিজের চাপা কষ্ট ভুলে তার খেয়ালে ডুবল৷ তার কোনটাতে সমস্যা হবে সেই খেয়ালে৷ শশী আবার তাড়া দিলে পা বাড়াল৷ দু’জনে বেড়িয়ে গেল৷ সিঁড়ি দিয়ে সাবধানতা বজায় রেখেই নামল৷ অল্প থেকেই অতি সাবধান সে৷
বসার ঘরে সকলেই আছে৷ এই সময়টা আগাগোড়াই মা’য়েরা, বউরা নামাজ পড়ে নিচে থাকে৷ বৃষ্টি, বর্ষণ, ইয়াসমিন, জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা সকলে বসে আছে৷ বর্ষণ আগের থেকে আরো চঞ্চল হয়েছে। পাকা কথা বলে এখন৷ বলবে না? তিনটা বছর পাড় করে এসেছে সে৷ সোফায় বসে চিপস খাচ্ছিল সে। কুয়াশাকে দেখে লাফ দিয়ে নেমে ফুপি ফুপি করতে করতে ঝাঁপটে ধরল পা৷ কুয়াশা হেসে হাত ধরল। বলল,
” কি খাচ্ছিস তুই এগুলো? “
” চিপত “
” ও, চিপত খাচ্ছিস? দে আমায়?”
” নাও “
বলেই প্যাকেট এগিয়ে দিল৷ কুয়াশা হেসে ফেলল। বলল,
” না বাবা, তুই খা৷ “
সে হাসল৷ চিপস তুলে মুখে পুরল। সে জানে ফুপু খায় না শুধু বলেই৷ শশীকে দেখে বলল,
” শশামা খাবে? “
শশীকে সে শশামা বলে। প্রথম প্রথম ডাকতে পারত না৷ পরে যখন শিখল তখন সকলের মুখে শশী নাম শুনে শুনে সে ছছা (শশা) ডাকত শুধু। তার সাথে কিছু যোগ করত না৷ সকলে কী না হাসি এ নিয়ে! শশী অবশ্য মুখ ফুলিয়েও থাকত৷ এরপর যখন দেখল এই ছেলে এই ডাক বন্ধ করবে না হাজার বলেও তখন, শশীই ওকে শশার সাথে মা শিখিয়েছিল। প্রথম প্রথম ডাকত না ছছা-ই বলত৷ এরপর আস্তে আস্তে ছছমা বলা ধরেছিল। এখন কথা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে অনেক কথা স্পষ্ট আসে অনেক কথা আসে না৷ তোতলা হয়। যেমন ছছা থেকে শশা হয়েছে। এখন নিয়মিতই ডাকে শশামা বলে৷ সকলে প্রথমে মানা করলে শশী বলেছিল এখন ছোট ডাকছে ডাকুক কয়েকবছর গেলে বুদ্ধি হয়ে গেলে ঠিক করে শিখে যাবে।
” না রে পাকনা তুই-ই খা তোর চিপত। “
বলে কোলে তুলে নিল৷ বসল সোফায়। চা নাস্তা করছে সকলে৷ আজমিরা হেসে কুয়াশাকে বলল,
” শরীর কি আর খারাপ লাগছে? “
” না আম্মু “
জাকিয়া বললেন,
” ফলগুলো খা “
” খেতে মন চাচ্ছে না৷ রাখো পরে খাব “
জাকিয়া চোখ পাকিয়ে তাকালেন৷ তা দেখে একটা কমলা তুলে নিল৷ ছিলতে ছিলতে বলল,
” দেখো খেতে পারি না তবুও কেন জোর করো।? “
বৃষ্টি বলল,
” আর আমার তো খিদে পেত। কিন্তু পেটে রাখতে পারতাম না “
” তুমিই ভালো ছিলে৷ “
ইয়াসমিন পাশে থেকে শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল গোপনে৷ তার ভেতরের সুপ্ত ব্যথাটা নিরাময় হয়না৷ কুয়াশা কমলা ছিলে অর্ধেকটা বর্ষণের হাতে দিয়ে দিল৷ সে অর্ধকেটা নিল৷ টুকটাক গল্পের মাঝে হিম এলো। তার পড়ার চাপ প্রচুর। রোজ বাড়িতে আসতে এমন রাতই হয়৷ সামনেই তার এইচএসসি পরীক্ষা। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সর্বদা খেঁটে চলেছে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে। হিম এলে বর্ষণ চেঁচিয়ে উঠল,
” কুটি তাচু..! “
বলেই নামতে নিলে সে তড়িঘড়ি করে বলল,
” বসো বসো চাচু, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। শরীর নোংড়া। “
বলেই এগিয়ে এসে একটা ব্রিটানিয়া কেকের প্যাকেট দিল বর্ষণের হাতে। দিয়ে চলে গেল৷ বর্ষণের জন্য রোজ আনবে কিছু না কিছু হাত খরচের টাকা থেকে৷ বর্ষণ এত এত খাবারের মাঝে থেকে রোজ চাচুর আনা এই জিনিসগুলো খুব পছন্দ করে। অনেক আনন্দ পায়৷ এই জন্য হিম এই সময় বাড়িতে এলেই সে দৌড়ে যাবে৷ ছোট ছেলেপেলের মন কীনা!! খাবার জিনিস পেলেই আনন্দিত।
রাত নয়টার পরে জাকির মালিথা, তুহিন, হিম সহ তিন জা আর বউরা সকলে খেতে বসেছে। বাড়িতে উপস্থিত বর্তমান সদস্যই এরা। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার ঘরে চলে গেল৷ কুয়াশার ঘরে শশী থাকে। দু’জনে একা থাকবে ভেবে জাকিয়া বলেছেন একসাথে থাকতে৷
‘
পরেরদিন সকাল দশটার দিকে খাওয়া দাওয়া করে সকলে একটু দুপুর টাইমের অলসতা কাটাতে যে যার ঘরে আছে৷ সেই সময়ে বাড়ির বেল বাজতে শুনে শশী গিয়ে খুলে দিল। খুলেই চেঁচিয়ে উঠল,
” ভাইয়া…! “
শিশির হাসল। বলল,
” কেমন আছিস বুড়ি? “
” আমি ভালো আছি। তুমি ভালো আছো তো?”
” হ্যাঁ ভালো আছি”
“কেমন ঘুরলে বন্ধুদের সাথে? সব বলতে হবে কিন্তু? ছবিও দেখব সব খানের। “
শশীর কথা শুনে হেসে ভেতরে ঢুকল। দুইজনে হেঁটে আসতে আসতে বলল,
” হ্যাঁ সব বলব। ছবিও দেখাব। আগে বল তোর বুবু কেন কাল ফোন ধরেনি? কি হয়েছে আহ্লাদীর? আচ্ছা খুব রেগে আছে নাকি রে? “
” হ্যাঁ বহুত রেগে। এতটাই রেগে আর অভিমানে আছে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না৷ আর তোমার উপর আহ্লাদী অভিমান করে কি কাজ করেছে সেটাও যখন জানবে তখন বুঝবে “
শিশির মাত্রই সিঁড়িতে পা দিতে যাচ্ছিল৷ শশীর কথা শুনে সে ভ্রু কুঁচকাল৷ পেছন ঘুরে বলল,
” কি করেছে? “
” উপরে যাও দুই-তিন সপ্তাহের নাম করে মাসের বেশি কাটিয়ে এলে! “
” আসলে ওরাই এমন লেট করল। সকলে মিলে অনেকদিন পর একসাথে হয়েছিলাম এই জন্য “
” আচ্ছা যাও আহ্লাদীর আগে রাগ ভাঙাও গিয়ে। দেখো গিয়ে তোমার জন্য সারপ্রাইজ নিয়ে বসে আছে “
শিশির শশীর কথা বুঝতে পারল না। তবে অনেক কিউরিসিটি বাড়ল। সেই কৌতুহল থেকেই উপরে গেল আর কিছু বলতে না দিয়ে৷ শশী মিটমিট করে হাসল। সে-ও উপরে নিজের ঘরে চলে গেল৷
‘
কুয়াশা জেগে ছিল। ঘুম খুব কম হয়৷ জেগেই ছিল৷ বেলের শব্দ পেয়ে সে উঠেছিল৷ নেমে বের হয়ে শশী দরজা খুললে শিশিরের কথা পায়। শিশির এসেছে শুনে আনন্দে মন নেচে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণে মনটা অভিমানী হয়ে ওঠে। তাই নিচে না যেয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়৷ এখানে রোদ আসে সকালের দিকে। শীতের রোদ মিষ্টি লাগে।
শিশির ঘরে এলো আহ্লাদী কাল থেকে কল ধরছে না তার মনটা অনেক উত্তেজিত। বউটাকে আজো কাছ ছাড়া করে থাকতে পারে না। তবে কি আর করার? সব সময় তো আর বউয়ের কথা ভাবলে হয় না! ঘর কুনো পুরুষ হলে চলবে না। বউ বউয়ের জায়গায় আর কাজ কাজের জায়গায়। ঘরে নেই তাই ডাকল,
” কুয়াশা, এ্যাই কুয়াশা! “
কুয়াশা বেলকনি থেকে এলো৷ স্বামীর অবাধ্য হতে ইচ্ছে হলো না৷ অভিমানী মন নিয়ে ভেতরে এলো গুটি গুটি পায়ে৷ কুয়াশা আসতেই শিশিরের চোখের দৃশ্যপটে কিছু একটা দৃষ্টিয়মান হয়ে সেখানেই থমকে গেল সে। মাত্রই ব্যাগ রেখে শার্ট খুলতে খুলতে কুয়াশাকে ডাকছিল। আর কুয়াশাকে এই রূপে, এই ড্রেসে, এই ভাবে দেখে তার মাথায় কিছু একটা বাড়ি দিল৷ থমকে শুধু দাঁড়িয়েই আছে। কুয়াশা শিশিরের দিকে তাকিয়ে গাল ফুলানো ভাব করে এগিয়ে গেল কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়াল সে। শিশির কুয়াশার মুখের দিকে একবার তাকাল একবার পেটের দিকে। বার কয়েক দেখে হতবাক হয়ে গেল। এগিয়ে গেল বিস্ময় নিয়ে৷ কিছুক্ষণ কথা এলো না মুখে। হাত পা কেন যেন কাঁপতে লাগল৷ অনুভূতি কেমন যেন কাঁপন ধরিয়ে দিতে লাগল৷ মাথায় একটা শব্দই বাড়ি দিতে লাগল,
” সে বাবা হতে যাচ্ছে কী!! “
শিশিরের শরীরের লোমগুলো খাঁড়া হয়ে উঠল৷ বিঁধল তা কাঁটার ন্যায়। অনিমেষ চেয়ে রইল পেটের দিকে৷ এরপর কুয়াশার মুখের দিকে তাকাল আবার৷ কুয়াশা নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিশির ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিল। বলল,
” বলিস নি কেন? ”
” কেন বলব?
একদম কাটকাট উত্তর। শিশির ভ্রু কুঁচকাল৷ কুয়াশা আবার বলল,
” কে তুমি? আমাদের চিন্তা করো তুমি? তুমি যেখানে খুশি সেখানে যাও। আমার আর প্রয়োজন নেই তোমাকে। আমার একাকিত্বের সঙ্গী আমি পেয়ে গেছি “
শিশির কুয়াশার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল চোখ মুখ কুঁচকে। মাথার উপর চাটি মে-রে বলল,
” আচ্ছা? আমিই এখন কে? আর আমাকেই এখন প্রয়োজন নেই? “
কুয়াশা ফুঁসে উঠল। একে তো রেগে ছিল তারউপর মুড সুইং হয়। এখন মা-রাতেই রাগ উঠল। মনের মতো শিশিরকে মে-রে নিল। মিটিয়ে নিল গায়ের ঝাল। রাগ, অভিমান ঝেরে পেটের উপর হাত দিয়ে বলল,
” দেখেছিস বাবু তোর বাবা আমায় মা-রছে? শুধু মা-রে আমায় জানিস? “
ঝঙ্কার তুলল শিশিরের শরীরে৷ অনুভূতিরা এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে। কীভাবে, কি করে প্রকাশ করবে এই অনুভূতি?
” তোর বাবা “
শব্দটা বুকের গভীরে গিয়ে তীরের ন্যায় বিঁধল। এক লহমায় আবেগী হয়ে উঠল সে। বাবা হবার আনন্দ আর বাবার স্বত্ত্বা জেগে উঠল। হাঁটু মুড়িয়ে বসে পড়ল তৎক্ষনাৎ। আনন্দে কেন যেন চোখটাও জ্বালা করে উঠল৷ বসে চোখের দৃষ্টি পেটের উপর রাখল। আজ এতদূর পাড়ি দিয়ে বাড়িতে এসে কি জেনেছিল সে বাবা হবে এই খবর শুনবে? আবেগী হাত বাড়িয়ে দিল পেটের দিকে। ছুঁলো সেখানে৷ আহ্! এ কী অনুভূতি!! তার সন্তান, তার অস্তিত্ব এখানে? কুয়াশা মুচকি হাসছে কিন্তু শিশিরকে দেখাতে নারাজ সে৷ কুয়াশার শরীরে ঢিলাঢালা ম্যাক্সি পরিহিত। সেই ম্যাক্সির উপর হাত রেখেছে। যদিও এখনো ম্যাক্সি পরার মতো হয়নি তবুও সপ্তাহ খানেক আগে থেকে পরে। খুবই অস্থির লাগত থ্রিপিচের পাজামায়। পেটে কেমন টান অনুভব হতো। এই জন্য ম্যাক্সি পরার নির্দেশনা দিয়েছেন জাকিয়া।
শিশির হাত বুলিয়ে দিল এরপর পেটের উপর রেখেই কুয়াশার দিকে তাকাল ফ্যালফ্যাল নয়নে। বলল,
” কতদিনের ও? “
” চার মাস পড়বে সপ্তাহ বাদ “
চমকে উঠল আবার সে। চার মাস!! শিশির হতভম্ব হয়ে গেল৷ এতদিন পর সে জানতে পারছে? এটা কি করে সম্ভব? এবার কিছুটা রূঢ় হলো। কপট রাগ দেখিয়ে বাহুতে এটা চাপ্পড় বসাল৷ বলল,
” গোবর ঠাঁসার বাচ্চা! তুই আমাকে আজ জানাচ্ছিস? আমি আজ জানতে পারছি ওর আসার কথা? মনটা তো বলছে! “
” বাবুর লাগছে তো বার বার মা-রছ! “
থেমে আবার বলল,
” বাবু লেগেছে তোর? দেখ তোর বাবা পঁচা৷ তুই নাই-ই আসতে মা-রছে। কথা বলব না আমরা একটুও হুম? “
শিশিরের কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে সে বাবুর সাথে আহ্লাদী বাণী ছুড়ল। শিশিরের রাগ পড়ে গেল। কুয়াশার হাত ধরে একদম সামনে নিল। তৎক্ষনাৎ জড়িয়ে ধরল কোমড়। কোমড় জড়িয়ে ধরে ঠোঁট ছোঁয়াল। একপাশ করে মাথা রাখল কুয়াশার পেটের উপর। বলল,
” স্যরি বাবা, আর মা-রব না। লেগেছে তোমার? প্রমিস আর মা-রব না। আমার বাবা তুমি বাবার কাছে জলদি চলে আসো অন্নেক আদর দেব তখন তোমায়। “
কুয়াশা মিটমিট করে হাসল। শিশির ওভাবেই থেকে বলল,
” গোবর ঠাঁসারে.. আমার এত আনন্দ লাগছে কেন? অতিরিক্ত সুখ লাগছে যে..! “
” তো আবার কি? নাচো তা ধীন ধীন করে। “
” সত্যিই নাচতে ইচ্ছে করছে। “
” হ্যাঁ, তা তো করবেই এখন। রাজি তো হচ্ছিলে না৷ এখন আসবা না খবরদার অধিকার দেখাতে! “
শিশির দুইহাতে কোমড় জড়িয়ে রাখা অবস্থাতেই মাথা তুলে উপরে তাকাল কুয়াশার দিকে। চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,
” গোবর ঠাঁসা, দেখ এখন মা-রতে পারছি না। আমার বাবাকে প্রমিস করেছি তাই। সো, উল্টা পাল্টা করিস না সব জমিয়ে রেখে এবারে শোধ তুলব। এমনিতেই না জানিয়ে বড় অপরাধ করেছিস “
” এ্যাই বুনো ওল! বার বার যে গোবর ঠাঁসা বলছ, ও কিন্তু শুনে নেবে “
কুয়াশার কথায় নজর পেটের উপর দিয়ে আবার তাকাল কুয়াশার পানে বলল,
” সুযোগের সৎ ব্যাবহার করছিস? “
কুয়াশার খিলখিল করে হাসল। শিশির আবার পেটে মাথা রাখল৷ অনেকক্ষণ কথা বলল না কেউ। শুধু অনুভব করল এই ক্ষণ, এই অনুভূতি। বলার মতো না তা৷ বাবার হবার সুখে শরীর কাঁপছে। কুয়াশা বোধহয় টের পেল৷ এবার একহাত পিঠে রাখল আর এক হাতে শিশিরের মাথায়৷ চুলের মাঝে আঙুল চালিয়ে দিল৷ শিশির বলল,
” এ্যাই আহ্লাদী বউ! কেন আমায় আরো আগে জানালি না? “
” ঠিক করেছি। তুমি শুধু আমায় একা ফেলে ফেলে চলে যাও তাই জানায়নি। এখন আমি ডাবল হয়ে গেছি। ওর জন্য আর আমার একা মনে হয় না “
” সোনা…! এই অনুভূতি সত্যি আমি প্রকাশ করতে পারছি না “
” আমিও পারি নি। তুমি যেদিন এলে ঢাকা থেকে তার দুইদিন আগে টেস্ট করে পজেটিভ পাই। তোমাকে সামনে থেকে বলে নিজের চোখে অনুভূতি দেখব ভেবে জানাতে চেয়েছিলাম তুমি আসলে৷ কিন্তু তুমি আমাকে আগেই রাগিয়ে দিলে৷ আমার মন বিষয়ে দিলে৷ তাই আমিও বলি নি। “
শিশিরের মনে পড়ল ঢাকা থেকে শেষ আসার পর কুয়াশার অস্বাভাবিক আচরণ। নিজেকে গুটিয়ে রাখা, মুখ ফিরিয়ে থাকা এই ঘরে অধিকাংশ না কাটানো আর অসুস্থও মনে হওয়া। কিন্তু সে তো এটার নোট কখনো করেই নি৷ ভেবেছিল সে ইন্ডিয়ায় যাচ্ছে বলে এমন করছে। না বললে বুঝবে কি করে? সে কী আগে কখনো বাবা হয়েছে নাকি! ব্যস্ততায় এত কিছু খেয়ালও করেনি। আচ্ছা সেটা না হয় বাদ যে, আহ্লাদী অভিমান করে জানায়নি কিন্তু বাড়ির লোক? বাড়ির কেউই কি একবারও জানাতে পারে নি? ভেবেই আবার মুখ তুলে বলল,
” বাড়ির কেউ-ই কেন জানাল না আমায়?”
বলেই কুয়াশাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার মুখের কাছে গিয়ে ডাকল,
” আম্মু, আম্মু! “
বার কয়ে ডাকলে জাকিয়া উত্তর নিতে নিতে বেড়িয়ে এলেন। ছেলে এসেছে তার কখন? ঘুম থেকে মাত্রই উঠে ছেলের কন্ঠ পেলেন তিনি। শিশির এরপর ডাকল,
” ছোট আম্মু, ছোট আম্মু! “
আজমিরাও বেরিয়ে এলেন। শিশির এমন চেঁচিয়ে ডাক শুনে বৃষ্টি, ইয়াসমিন, শশীও বেরিয়ে এলো। শিশির ডেকে আবার ঘরে এলো। কুয়শাকে হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল। জাকিয়া এসে প্রশ্ন করলেন,
” আব্বু কখন এলি তুই? “
” একটু আগে৷ ফ্রেশ হয়ে যেতাম দেখা করতে। কিন্তু তোমাদের এই আহ্লাদী তো তা হতে দিল না। এসব কি আম্মু? “
জাকিয়া বুঝলেন কী বলছে ছেলে। এমনকি সবাই-ই বুঝল। মুচকি হাসলেন তিনি৷ ছেলের প্রশ্নের উত্তরে বললেন,
” আহ্লাদীর আহ্লাদীপনা৷ আমাদের প্রথমে না টের পেতে দিয়েছে আর তা বলেছে। তোর বউ জেদ করে তোকেও বলতে দেয়নি। এমনকি নীহার, তুষারেও জানাতে দেয়নি। আমরাও আহ্লাদীর আহ্লাদটাতে সায় দিয়েছি। ইচ্ছেটা পূরণ করে দিয়েছি।”
” তোমরা কি করে এই গোবর ঠাঁসার এত বড় আহ্লাদটা মেনে নিলে? “
” কি করব? যতই হোক দ্বিতীয় বারের মতো দাদি হতে যাচ্ছি কিনা? তাই আবদারটা রেখেই দিলাম৷ আচ্ছা তা যাক, আমি দাদি হব নাকি নাকি নানি হব এটাই আজ এতদিনে জানতে পারলাম না! আব্বু তুই বলত কি হলে ভালো হয়? “
সকলে হেসে ফেলল। শিশির ভড়কে গেল। কুয়াশা লজ্জা পেয়ে গেল। শিশির বলে উঠল,
” আম্মু…! তুমিও? “
সকলে আবার হাসল। শশী বলল,
” আমি কিন্তু ফুপু হব ভাইয়া। তোমার বোন আমি। চাচি হব না আমি। ডিল ফাইনাল করেছি বুবুর সাথে “
শিশির কি বলবে বুঝল না৷ এখানে নীহারকে এই সময় খুব মিস করল শিশির। এমনই হয়ে আসছে আজ কয়েকটা মাসে৷ ভাইকে সে খুব মিস করে৷ তার ভাই থাকলে নিশ্চিয়ই বলত,
” তোমরা কে কি হবে আমার দেখার বিষয় না, আমি মামা হচ্ছি এটাই কনফার্ম “
ইশশ কতদিন ভাইটার সাথে আড্ডা, মজা করা হয় না। শিশির দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। আজমিরাকে বলল,
” ছোট আম্মু তুমি কি হতে চাও? তোমারও কি কিছু হওয়া নিয়ে কনফিউশন আছে?”
” একদম নাহ্ আমি তো নানি হচ্ছি! “
সকলে আবার হাসল। বৃষ্টি, ইয়াসমিন একসাথে বলে উঠল।
বৃষ্টি বলল,
” চিন্তা করো না দেবরজী আমি বড় আম্মুই হব। “
ইয়াসমিন বলল,
” আমি মেজো আম্মু হব এত ভাবিস না। “
শিশির কুয়াশার দিকে তাকাল৷ সে হাসছে। শিশিরও হাসল কিঞ্চিৎ। জাকিয়া এগিয়ে এসে ছেলের গালের উপর হাত রেখে বললেন,
” অভিনন্দন আমার ছোট মানিক। এভাবেই সুখী থাক তোরা। আমরা কোনো ভুল কাজ করিনি। তোদের সুখী হওয়া দু’চোখ ভরে সামনে থেকে দেখতে পেরে শান্তি লাগে৷ তোদের পরিবার এইভাবেই পূর্ণ হোক৷ কানায় কানায় সুখ, খুশি ছেঁয়ে আসুক। আমাদের একমাত্র মেয়ে আজ আমার ছেলের কাছে সুখী এর থেকে শান্তির কি হয়? তোর বাবা, চাচু কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি দেখেছিস তো? ওনারা তোর কাছেই আমাদের মেয়ে সুখী হবে বলে মনে করেছিলেন৷ আমার ছেলে যে রত্নখনি! তোর বাবা,চাচু ঠিকই চিনেছিল তোকে। তোরা স্বাভাগত ঝগড়া করতি কিন্তু সুপ্ত শ্রদ্ধা, সম্মানও ঠিক ছিল আর টানও ছিল৷ আমি, আজমিরা কখনো এসব ভাবিই নি কিন্তু তোর বাবা ভেবেছিলেন। মানুষটা কখনো আমাকে সেটা বলেও নি। তোদের বিয়ের পর রোজ চিন্তায় থাকতাম, মেয়েটার জীবন নষ্ট করে দিলাম না তো নিজ হাতে? আমার ছেলে যতই হোক সে আর মেয়েকে সহ্য করতে পারে কিন্তু কুয়াশাকে না সে মানতে পারবে তো? এসব হাজারো চিন্তা হতো৷ কিন্তু বিয়ের মাস খানেক পর থেকে তোদের অনেক পরিবর্তন পেয়ে আনন্দে ভেঙে পড়তাম৷ আজমিরাকে সব সময় অভয় দিতাম বলতাম, দেখিস আমার ছেলেই পারবে। এখন আমার কথা সত্যি হয়েছে৷ আমার ছেলেই পেরেছে। আমি মাথা উঁচু করে বলব, ‘আমার ছেলেই তোর মেয়ের জন্য যোগ্য আজমিরা। আমার ছেলেই তোর মেয়ের সুখের কারণ দেখে নে দু’চোখ ভরে’ “
আজমিরার চোখ টলমল করে এলো৷ কুয়াশারও চোখ ভিজে এলো৷ শিশির মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল৷ জাকিয়া ছেলের মাথা ঝুঁকিয়ে নিয়ে কপালে চুমু আঁকলেন৷ বললেন,
” আমাদের ছেলেরা এক একটা রত্নখনি “
শিশির অমায়িক হাসল। এরপর আজমিরা শিশিরের কাছে এসে মাথা হাত রেখে বললেনন,
” তোর কাছে শুধু একটাই আবদার। আমার মেয়েটাকে নিয়ে চিরজীবন সুখে থাকিস আর ওকে সুখে রাখিস “
” সর্বদা “
তৎক্ষনাৎ উত্তর করল শিশির৷ সকলে মুগ্ধ হলো৷ কুয়াশার চোখ ভরে এলো৷ এরপর আরো কিছু কথা বলে চলে গেল সকলে। শিশির দরজা আঁটকে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে কাটখোট্টা স্বরে বলল,
” শো চুপচাপ, আমি গোসল করে আসছি”
বলে চলে গেল বাথরুমে। কুয়াশা ভেঙচি কাটল। শুয়ে পড়ল কম্বলের নিচে৷
কিছুক্ষণের মাঝে শিশির বেরিয়ে এলো। নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করে একটা এ্যাশ কালারের ফুল স্লিভের টিশার্ট পড়ে কুয়াশাকে বলল,
” সরে শো “
কুয়াশা বীনা বাক্য সরে গেল৷ সে-ও তৎক্ষনাৎ শুয়ে পড়ল। শুয়ে কুয়াশাকে টেনে নিল৷ কম্বল ভালো করে জড়িয়ে নিল দু’জনের শরীরে। পেটের উপর আলতো করে হাত রাখল৷ কাৎ হয়ে শুয়ে কুয়াশার যেন না লাগে সেভাবে শুয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিল। বড় নিঃশ্বাস টেনে নিল। কুয়াশা কিছু বলল না। কিন্তু একটু চেপে গেল৷ টের পেয়ে মুখ গুঁজে রেখেই বলল,
” লেগে যাবে তো পেটে “
” লাগবে না “
বলে শিশিরের গালে চুমু দিল ওমনই। ফিসফিস করে বলল,
” কংগ্রাচুলেশন’স অ্যাডভোকেট শিশির মালিথা আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন “
শিশির মুখ তুলল তৎক্ষনাৎ। তাকাল কুয়াশার পানে। চোখ লাল তার। আবেগে ভেসে যাচ্ছে সে বোঝায় যাচ্ছে। প্রথম বাবা, মা হবার আনন্দ তারা টের পাচ্ছে৷ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কুয়াশার কপালে চুমু দিল, চোখের পাতায় দিল, দুই গালে দিল, নাকে দিল এরপর ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেয়ে বলল,
” থ্যাঙ্গিউ সো মাচ উডবি অ্যাডভোকেট কুয়াশা মালিথা। আমরা ডাবল থেকে ট্রিপল হতে চলেছি৷ আপনি মা আর আমি বাবা।”
” উহু মিসটেক হলো একটু তুমি বুনো ওল বাবা! “
” আর তুই বাঘা তেঁতুল মা?”
খিলখিল করে হাসল কুয়াশা৷ বলল,
” হ্যাঁ “
শিশির কুয়াশার পেটে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কুয়াশার বুকের উপর একটা চুমু দিল। কুয়াশা বলল,
” অনুভূতি বলো!”
” এর পরেও জানতে চাচ্ছিস অনুভূতি? “
কুয়াশা তা শুনে শিশিরে বুকে চুমু দিয়ে বলল,
” আমরা-ই কি সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল? যারা আজ সব কিছু ফেলে এসে মা, বাবা হতে চলেছি? “
” হ্যাঁ, আমরা-ই সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল”
কুয়াশা আবার হাসল। জড়িয়ে ধরল শিশিরকে বুকে মুখ গুঁজল। শিশিরেও মুচকি হেসে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরল। বলল,
” সেই কাপড়ের টুকরোর মাঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখা আমার আহ্লাদী বউ আজ নিজেই মা হতে যাচ্ছে, ভাবা যায়!! “
তা শুনে কুয়াশা বুকে মুখ গুঁজে রাখা অবস্থাতেই শিশিরের পেট গলিয়ে পিঠে রাখা হাতটা উঠিয়ে কিল বসিয়ে দিল পিঠের উপর। বলল,
” অসভ্য বুনো ওল “
শিশির হাসল ঠোঁট কামড়ে। মাথায় চুমু দিয়ে আগলে নিল তার আহ্লাদী বউকে।
‘
এরাই সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল যারা আজ দাম্পত্য জীবনে এতটা দূর এগিয়ে এসেছে। তারা ঝগড়া, চুলোচুলি কিন্তু এখনো কমায়নি! আজকে খুশির খবর পেয়েও তারা আগে ঝগড়া করে নিল এরপর মা-রা মা-রিও করে নিল৷ সে-সব বজায়ই রেখেছে এবং সেটা বজায় রেখেই তারা আজ দুই থেকে তিন হতে যাচ্ছে। তারা একে অপরের স্বত্ত্বাকে নিজের মাঝে ধরে রেখে বাবা, মা হতে যাচ্ছে। সময় কথা বলে। সময়ের সাথে সাথে কতকিছু মেনে নিয়ে মানিয়ে চলে পরিবর্তন হলো তাদের!
সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুলের বিয়ে হলো, একে অপরকে নতুন রূপে চেনা ধরল, প্রেমে পড়ল, ভালোবাসা বাসি হলো, কাছে আসাআসি হলো অতঃপর তারা সংসার করতে লাগল এবং সেই সংসার আলো করে আজ পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। বুনো ওল বাঘা তেঁতুলের মিলন ঘটিয়ে আজ চমৎকার এক প্রাণের জন্ম হতে যাচ্ছে। যেটা সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুলরই ভালোবাসার প্রতীক, সুখ, শান্তি।
| চলবে |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click