| অন্তিম অধ্যায় | প্রথমাংশ
®রোজা রহমান
‘
” ইউর অনার, আমার প্রতিপক্ষ অ্যাডভোকেট সাহেবের বক্তব্যর আগে আমার মহামান্য আদালতের কাছে একটা বিশেষ আর্জি জানানোর আছে। সেটার জন্য সম্মানিয় আদালতের অনুমতি পেলে আমি বার্তাটা পেশ করতে পারি “
বিচারপতি কুয়াশাকে অনুমতি দিলেন,
” অনুমতি দেয়া হলো “
অনুমতি পেয়ে সে আবার বলল,
” ইউর অনার, সম্মানিয় আদালত একটা বিষয় অবশ্যই জানেন যে, সব কেসেরই একটা সত্যর দিক থাকে এবং একটা মিথ্যার দিক থাকে। আমার প্রতিপক্ষ অ্যাডভোকেট সাহেব যদি সেই সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে আমার মক্কেল তাসলিমা ইসলামের ন্যায় বিচার না পেতে দেন সেটা নিশ্চয়ই মহামান্য আদালত বিচারকার্য মানবেন না? আমি চাই সত্যকে মিথ্যা করে না এখানে যেন সত্যরই জয় হয় “
কুয়াশার যুক্তিসংগত কথাগুলো বিচারক সহ উপস্থিত সকলে শুনলেনে। সে থামলেই অ্যাডভোকেট শিশির মালিথা বলল,
” ইউর অনার, আমার প্রতিপক্ষ অ্যাডভোকেট কুয়াশা মালিথার পেশ করা বার্তাগুলো একদম যুক্তিসংগত। আমি নিজেও আমার প্রতিপক্ষ অ্যাডভোকেট কুয়াশা মালিথার যুক্তিগুলো মেনে নিলাম”
এই পর্যন্ত বলে সে কুয়াশার দিকে তাকাল। কুয়াশাও তাকাল। তার তাকানো ক্ষিপ্ত। এত হেঁয়ালিপনা কথা বলে এই লোকটা! শিশির আড়ালে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বিচারকের দিকে তাকাল। বলল,
” ইউর অনার, আমার প্রতিপক্ষ মিস?? “
” মিসেস “
শিশিরের উপর চুড়ান্ত রাগ উঠল কুয়াশার। কিড়মিড় করে তাকাল শিশিরের দিকে৷ মনে মনে আওড়াল,
” বুনো ওল একটা “
শিশির ভেতরে ভেতরে হেসে নিল একটু। এরপর নিজেকে নিপুনতার সাথে সামলে বলল,
” হ্যাঁ, মিসেসে কুয়াশা মালিথার গুরুত্বপূর্ণ কথা শেষ হয়েছে আশা করি! আমি এবার আমার মক্কেল মিঃ সুমনের জন্য মহামান্য আদালতের কাছে কিছু প্রমান দেখানোর জন্য অনুমতি চাইছি! “
” অনুমতি দেয়া হলো “
শিশির অনুমতি পেলে কিছু কাগজ পেশকারের কাছে দিল। পেশকার সেটা জর্জের কাছে দিলেন৷ শিশির বলল,
” ইউর অনার, আমার মক্কেল সুমন এখানে সম্পূর্ন নির্দোষ একজন ব্যক্তি। আপনি জানেন যে, যেদিন ভিক্টিমকে ধ-র্ষণ করা হয় সেদিন আমার মক্কেল ঢাকায় গিয়েছিল ঠিক কিন্তু তিনি মিস তাসলিমার ঘটনাস্থলে ছিলেন না। “
” অবজেকশন ইউর অনার! “
বিচারক শিশিরকে থামার নির্দেশ দিলেন৷ কুয়াশা অনুমতি পেয়ে বলল,
” থ্যাঙ্কিউ ইউর অনার “
বলে আবার বলল,
” প্রসিটিউর সাহেব, তিনি আই মিন মিঃ সুমন ঢাকায় গেলেন তবে সেদিনই কেন গেলেন? আর আমার মক্কেল মিস তাসলিমা ইসলামকে মিঃ সুমনের দোকানের সামনেই কেন পাওয়া গিয়েছিল? ভিক্টিমকে সেখানে খুবই বাজে ভাবে পাওয়া যায় এবং তিনি পুরো একমাস জীবন মরণের সাথে লড়াই করেছেন। তাকে গণ ধ-র্ষন করা হয়। এবং মিস তাসলিমার শরীরে সুমনের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। সেসব প্রমান তো এর আগে পেশ করা হয়েছে ইউর অনার। তাহলে নতুন করে আজ কেন আমার প্রতিপক্ষ সাহেব পুরোতন যু্ক্তি টেনে এনে নতুন নাটক খাঁড়া করছেন? “
শিশির আবার ঠোঁট দুটো প্রশারিত করে হাসল। সেই দাম্ভিকতার সাথে ডান হাতটা তুলে তর্জণী আঙুল দিয়ে ডান পাশের ভ্রুর কাছটায় বার কয়েক ঘষা দিয়ে চুলকাল৷ এরপর বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ইউর অনার আমি আমার বার্তা পুরো করতে চাই! “
বিচারক কুয়াশাকে বসার নির্দেশ দিলেন। কুয়াশা বসল। শিশির বলল,
” ইউর অনার, আপনি জানেন যে সুমনের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে কিন্তু সেটা মিস তাসলিমার সাথে ঘটনাটির দিন সকালে ধস্তাধস্তি হয়। কারণ সুমন তাসলিমাকে ভালোবাসত তাসিলামা বাসতো না। সে ভালোবাসাই জাহির করতে গিয়েছিল এবং সে সেদিনই ঢাকায় বিএসসি কোর্স করার জন্য কিছু কাজ করতে গেছিল পরীক্ষা দেবে বলে। এটা ঠিক তো মিঃ সুমন? “
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সুমন হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াল৷ সে আবার বলল,
” ইউর অনার, ঢাকায় যাবার কারণের প্রমাণ গতবার আদালতের কাছে পেশ করেছিলাম। কথায় ফিরি, তো মিস তাসলিমা মামাতো ভাইয়ের সাথে সে সম্পর্ক করতে চায় না। আর ইউর অনার, হাতের ছাপ পাওয়া গেছে সেটা শুধু আর শুধু মাত্র হাতের কব্জাতে। এতে কি করে আমার মক্কেল দোষী প্রমাণিত হতে পারে?”
থেমে আবার বলল,
” ইউর অনার, আমার মক্কেল বন্ধুদের সাথে কোনো প্ল্যান করে মিস তাসলিমাকে ধর্ষণ করেনি এমনকি বন্ধুরা এসবে ছিলই না। এখানে সম্পূর্ণ নির্দোষ সে এবং তারা৷”
বলে আবার বলল,
” আমি এবার জোড়ালো কিছু প্রমাণ দেখাতে চাই ইউর অনার। প্রমাণটি পেশ করার জন্য মহামান্য আদালতের কাছে অনুমতি চাইছি “
” দেয়া হলো অনুমতি “
শিশির অনুমতি পেয়ে এবার প্রমাণের জিনিসগুলো পেশকারের কাছে দিল৷ বলল,
” ইউর অনার, আপনি একটু প্রমাণগুলো দেখেন আর এর আগে আমি এ-ও বলেছি যে, তাসলিমার সাথে নিরব শত্রুতা ছিল তারই কাজিন মিস নয়না ইসলামের এবং সে নিজে সুমনকে ভালোবাসত সুমন বাসত না ইভেন মিস নয়নাকে সহ্য করত না। আর সেই ভালোবাসা সে সমুনের থেকে না পেয়ে সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। মিস নয়নার ইচ্ছে ছিল তাসলিমাকে মে-রে ফেলার আর তিনি এ-ও জানত যে পাড়ার বখাটে ছেলেদের নজরে ছিল তাসলিমা। তাসলিমার সাথে অনেকভাবেই বাজে ব্যবহার করত। “
” অবজেকশন ইউর অনার! “
কুয়াশাকে আবার বলার সুযোগ দেয়া হলো। সে অনুমতি পেয়ে বলল,
” কিন্তু অ্যাডভোকেট সাহেব আপনি হয়তো জানেন যে, ভিক্টিম নিজে স্বীকার করেছে সে মিঃ সুমনের কন্ঠ পেয়েছিল ঐ সময়। তবুও কি করে বলতে পারেন তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ?”
থেমে আবার বলল,
” ইউর অনার, মিঃ সুমনের দিকে সম্পূর্ণ প্রমাণ আছে এবং তিনিও ঘটনাস্থলে ছিলেন৷ ইউর অনার, আমি চাই মিঃ সুমনকে কঠোর ভাবে ধরে তার মুখ থেকে সত্য বের করে আমার মক্কেল তাসলিমাকে ন্যায় বিচার দেয়া হোক “
” মিসেস কুয়াশা মালিথা আপনি কি করে প্রমাণ ছাড়া শাস্তির দাবি করেন? “
” প্রামাণ ছাড়া তো করি নি? সম্পূর্ণ প্রমাণ আমি গত আদালতে সুনানিতে দিয়েছি। ভিক্টিমের বয়ান সহ প্রমাণ। আপনি সেদিন কোথায় হারিয়েছিলন অ্যাডভোকেট সাহেব? “
” আমি সেদিন সবই সচক্ষে দেখেছি এবং আপনি যাদের দোষী করেছেন আসলে উনারা দোষীই না৷ “
ওদের ঝগড়ার মাঝে বিচারক অর্ডার অর্ডার বলে থামার নির্দেশনা দিলেন। কুয়াশা ক্ষিপ্ত চোখে চেয়ে চুপ করল৷ শিশির বিরক্ত চোখে কুয়াশার দিকে দেখে বলল,
” ইউর অনার আমি এবার আরো একটা প্রামাণ পেশ করতে চাই এবং ভিক্টিম সহ কিছু নতুন মুখকে আনার অনুমতি চাই! “
” অনুমতি দেয়া হলো “
আদালত থেকে তাসলিমাকে কাঠগড়ায় ডাকা হলো। সে আজ প্রথম উপস্থিত হয়েছে আদালতে এতদিন হসপিটালে ছিল৷ শিশির তাসলিমার কাছে গেল৷ জিজ্ঞেস করল,
” মিস তাসলিমা তাই তো? “
” জ্বী “
” মিস তাসলিমা আপনি সন্ধ্যার পর গলি দিয়ে কোচিং থেকে ফিরছিলেন একা তাই তো? “
” হ্যাঁ “
” আপনার সাথে কেউ যাতায়াত করে নাহ্? “
” হ্যাঁ, করে আমার কাজিন নয়না “
” তো সেদিন তিনি ছিলেন নাহ্? “
” নাহ্ সেদিন সে কোচিং থেকে বলেছিল সে সুমন ভাইদের ওখানে যাবে৷ ভাইদের বাসা কোচিং সেন্টার থেকে খুব বেশি দূরে না মিনিট পাঁচ-সাতেক লাগে হেঁটে যেতে৷ আমাদের বাসা কোচিংএর উল্টো পথে। আমাদের বাসায় আসতে দশ মিনিটের সময় লাগে। নয়না আমাদের কাছে থাকে খালা মা-রা যাওয়াতে। পড়াশুনো একসাথেই করি আমরা। আমি মামাদের ওখানে যেতে চাইতাম না সুমন ভাইয়ের জন্যই। সেদিন ও গেছিল আমি বাড়ির দিকে হাঁটা দিই। “
থামলে শিশির আবার বলল,
” তারপর বলেন “
” এরপর আমাদের বাসায় আসতে একটা গলি পড়ে সেখানে সুমসাম বেশি থাকে। আর রাতের সময় একটু বেশিই সুমসাম হয়। ঐ রাস্তায় রাসেল নামে একটা ছেলে উত্তক্ত করত বলে আমারও আসতে আনইজি লাগত। কেমন দৃষ্টিতে চায়ত শুধু। কিন্তু সেদিন সে ছিল না সেখানে। আমি নির্দিধায় সেদিন আসতে ছিলাম কিন্তু পেছন থেকে আমার মুখ সহ চোখ বন্ধ করা হয় এবং কিছুক্ষণের মাঝে আমি জ্ঞান হারা হয় তারপর আর কিছু মনে পরে না৷ যখন জ্ঞান ফিরে হাত পা বাঁধা পাই এবং পুরো জায়গা অন্ধকারে ঘেরা। যত সম্ভব কোনো ঘর বা এমনই অন্যকিছু ছিল এবং আমি চেঁচামেচি করলে কয়েকটা পায়ের শব্দ আসে কানে৷ কিছুক্ষণের মাঝে কোনো কথা ছাড়া আমার শরীরের উপর আক্রমন হয় কয়েকজনের। এর মাঝে আমি ঐ অবস্থায় সুমন ভাইয়ের কন্ঠ পাই যেটা দ্বারা বুঝতে পারি আমার .. “
আর বলতে পারল না মেয়েটা৷ কান্নায় ভেঙে পড়ল। শিশির দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। কুয়াশা বলে উঠল,
” ইউর অনার, ভিক্টিমের মুখের বয়ানের থেকে আর কি কোনো প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে? যদিও আদালত প্রমাণে বিশ্বাসী আর সেই প্রমাণও দেখানো হয়েছে। “
শিশির বলল,
” ইউর অনার, আমি কথা বলছি। আমার প্রশ্ন এখনো শেষ হয়নি “
বিচারক কুয়াশাকে থামতে বলেন এবং তিনি সব নোট করছেন। শিশির আবার বলল,
” মিস তাসলিমা আপনি বয়ান দিয়েছেন সেদিন ঘটনাস্থলে সুমনের কন্ঠ পেয়েছেন এবং বেশ কয়েকজনের কন্ঠ পেয়েছেন?”
” জ্বী “
” আপনাকে কিছু একটায় করে কোনো এক জায়গায় নেয়া হয় এবং সেটা আপনার পরিবারের দাবি করে সুমনের কম্পিউটারের দোকানের সামনে আপনাকে পেয়েছে? “
” এটাই বলেছে সকলে৷ আমার জ্ঞান ছিল না “
” এই তো ঠিক এই কথাটাই আমি আদালতের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি। ইউর অনার, ভিক্টিমের বাড়ির লোক দাবি করেছে ভিক্টিমকে সুমনের দোকানের সামনে পাওয়া গিয়েছিল। তবে মহামান্য আদালতের কাছে এইটা জানতে চাই আমি যে, কোন আসামি দোষ করে প্রমান চোখের সামনে রেখে দেয়? মিঃ সুমন যদি ধর্ষণ করেই থাকে তবে সে নিজের দোকানের সামনে ভিক্টিকে রেখে আবার তালা মেরে ঢাকায় পলাতক হবে? “
উপস্থিত সকলের মাঝে একটা গুঞ্জন শুরু হলো৷ কুয়াশার এবার রাগের থেকে অবাক হলো সাথে মুখটা হাস্যজ্জল হয়ে উঠল৷ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সুমনের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বিচারক পয়েন্টটা ধরলেন৷ শিশির বলল,
” ইউর অনার, আমি যেসব প্রমাণ পেশ করেছি সেখানে কিছু ল্যাব টেস্টের প্রমাণ এবং কয়েকজনের নাম, ছবি সহ একজনের কথার স্বরের অডিয়ো রেকর্ড রয়েছে৷ অনুগ্রহ করে সেগুলো চেক করলে কৃতজ্ঞ হব। “
একে একে সব দেখল বিচারক এবং কন্ঠের অডিয়ো রেকর্ডটা চালু করতেই চমকে উঠল সকলে৷ কারণ কন্ঠটা পুরোটাই সুমনের মতো। সুমন এবার ভয় পেয়ে গেল৷ শিশির আশ্বাস দিল। আবার বলল,
” ইউর অনার এই রেকোর্ডটা করা হয়েছে আগামীকাল চাইল তারিখটা দেখে নিতে পারেন আপনি৷ এবং এই রেকর্ডটা ইন্সপেক্টর আহসানকে দিয়ে করানো হয়েছে। আপনি অনুমতি দিলে আমি উনার মুখের বয়ান দেয়াতে পারি! “
” অনুমতি দিলাম “
বিচারক অনুমতি দিকে পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো এবং তিনি সেটাই বললেন৷ শিশির বলল,
” ইউর অনার, এবার আমি মিস নয়নাকে কাঠগড়ায় ডাকার অনুমতি চাইছি “
বিচারক অনুমতি দিলে নয়নার দিকে সকলে নজর দিল৷ নয়না সমানে ঘামতে লাগল এবং ঢক গিলতে লাগল। সে উঠে এলো। কাঠগড়ায় দাঁড়ালে শিশির হাসল। সেই হাসিতে কেঁপে উঠল নয়না। শিশির বলল,
” তো মিস নয়না! আপনি সেদিন কেন মিঃ সুমনের বাড়িতে গেছিলেন? “
” সুমন ভাই সেদিন ঢাকায় যেতে চেয়েছিল শুনে দেখা করতে গেছিলাম “
” কিন্তু আপনি তো মামার বাড়ি পৌঁছেছিলেন রাত নয়টার দিকে। পাঁচ- সাত মিনিটের রাস্তা সন্ধ্যার পর থেকে রাত নয়টা বাজিয়ে দিলেন? “
ঢোক গিলল নয়না।,
” আপনার মামি জানিয়েছেন আপনি নয়টার দিকে গেছিলেন। আর সুমন রাত এগারটার গাড়িতে ঢাকায় গেছিল। ভিক্টিম সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিল এবং তাকে সকালে পাওয়া যায়। দোষ যদি সুমন করে থাকে তাহলে আপনি এত ঘামছেন কেন মিস নয়না? কোথায় ছিলেন নয়টা পর্যন্ত? আপনি সত্যিটা বলবেন নাকি আমি প্রমাণ দেব আদালতের কাছে?”
শিশিরের প্রতিটা কথায় নয়না কেঁপে কেঁপে উঠছিল এতটায় ভারী স্বর ছিল তার। নয়না এবার কেঁদে দিল ভয়ে। ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব সত্যিটা বলে দিল৷ সে শত্রুতা করে সেই পাড়ার বখাটে ছেলেদের কাছে তাসলিমাকে তুলে দিয়েছিল এবং সাহায্য করেছিল৷ সেই পাড়ার বখাটে ছেলেটাকে অভয় দিয়ে বুদ্ধি দিয়েছিল৷ সব ঠিকঠাক করে সে নয়টায় মামার বাড়ি গেছিল। তাসলিমার জ্ঞান ফেরে রাত দশটার পর তখনই তাকে গণধর্ষণ করা হয়। একটা ভালোবাসার লোভে এতটা নিচে নেমেছিল। যার বাড়ি খায় তারই সর্বনাশ করেছে। সবটা শুনে শিশির বলল,
” আপনার তো লজ্জা হওয়া উচিত, একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সর্বনাশ করেছেন৷ যার বাড়ির নূন খান তাদের সাথেই নেমকহারামি করেছেন! সে তো বোন লাগে আপনার!”
শিশিরের প্রতিটা কথায় কেঁপে উঠল নয়না। কুয়াশা মুগ্ধ হলো। তাসলিমা কান্না করে দিল। সুমন তাকিয়ে দেখল৷ বিচারক প্রমাণ পেয়ে রায় দেবার জন্য সকলকে শান্ত হতে বললেন। কিন্তু শিশির বলল,
” ইউর অনার, আমি রাসেল সহ তার সঙ্গীদের আদালতে আনার জন্য অনুমতি চাইছি “
বিচারক অনুমতি দিল। পুলিশ চারজনকে ধরে আনল। এবং তাদের মাঝের একজনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কন্ঠ শুনল। সে মানুষের কন্ঠ কপি করতে পারে সেটারও প্রমাণ দিল এবং বখাটে রাসেলের বয়ান নিল। সে বরবর করে সব বলে দিল। সব শুনে এবং প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত ভিক্টিমকে ন্যায় বিচার দিলেন। ধর্ষকদের আমৃত্যু যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন এবং নয়নাকে পনের বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন।
বিচারকের বিচারের পর শিশির, কুয়াশা দুজন দু’জনের দিকে তাকাল৷ শিশির একটা বাঁকা হাসি ঠোঁট ঝুলাল৷ কুয়াশাও শিশিরের মতো অগোচরে মুখ ঝামটা দিল আর গাল ফুলানোর মতো করে রইল।
আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে কুয়াশা এবং স্মৃতি বের হলো। স্মৃতি কুয়াশার কেসের সাথে সাহায্যকারী উকিল ছিল। পিছন পিছন শিশির বের হলো।
‘
বাহিরে এসে কোর্টে উপস্থিত থাকা একজন মেয়ে অ্যাডভোকেট এসে কুয়াশা আর স্মৃতির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
” অ্যাডভোকেট মিসেস কুয়াশা মালিথা! “
” জ্বী হ্যাঁ! “
” ওয়াইফ অফ অ্যাডভোকেট শিশির মালিথা রাইট? “
কুয়াশা মহিলাটার কথা শুনে মুচকি হাসল। পেছন ঘুরে শিশিরের দিকে তাকাল৷ শিশির অন্য একটা উকিলের সাথে কথা বলছে৷ শিশিরও তাকাল। হাসি উপহার দিল একটা অমায়িক। তা দেখে কুয়শা ঘুরে গর্ববোধ করে গর্বের সাথে একটা দাপটে হাসি দিল। উত্তর করল,
” ইয়েস, আ’ম ওয়াইফ অফ অ্যাডভোকেট শিশির মালিথা। “
মহিলাটা হাসল। বলল,
” ইউ আ’র অ্যা লাকি গার্ল। একজন সনামধন্য নামকরা ব্যক্তির ওয়াইফ আপনি। মিঃ মালিথা একজন অমায়িক পার্সোন। আজ অবধি কোনো কেস হারার কথা শুনি নি৷ এতটাই কনফিডেন্ট উনার! কেস বুঝে যান তিনি!”
কুয়াশা আবার হাসল৷ হাসল স্মৃতিও। তিনি আবার বললেন,
” তবে আপনার এটা ফার্স্ট কেস লড়া উনার সাথে?”
” হ্যাঁ, “
” বাহ্ স্বামীর কাছেই প্রথমবারের মতো কেস হারলেন? “
” এটায় আমি প্রাউড ফিল করছি। সে আমার গর্ব। “
মহিলাটা হাসল৷ বলল,
” হাইকোর্টের কেস লড়া হয়েছে এর আগে? “
” না এটাই ফার্স্ট পেয়েছিলাম “
” ও আচ্ছা “
” জ্বী “
” আচ্ছা আসি তবে! কখনো আবার দেখা হবে৷ “
” অফকোর্স, ইনশাআল্লাহ “
মহিলাটা হেসে চলে গেল বিদায় নিয়ে৷ কুয়াশা দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলল। স্মৃতির দিকে তাকিয়ে হাসি দিল। বলল,
” ভাইয়া আসবে না? “
” আসছে, ম্যাসেজ দিয়েছিলাম “
” আচ্ছা চল এগুই! তোর পুচ্চুকে নিয়ে আজ আসবি দু’জনে। “
” চেষ্টা করব। “
কথা মাঝে শিশির এসে দাঁড়াল ওদের সামনে। কুয়াশা কু-লিম সা-পের মতো ফুঁসতে লাগল আবার। কারণ তাকে আদালতে ছোট করেছে সে৷ যদিও কেস লড়তে গেলে এসবই শুনতে হয় তবুও সে তার আহ্লাদী বউ ভুলে গেছিল? এটায় তার রাগের কারণ৷ অবুঝ হয়ে উঠেছে স্বামীর কাছে সে। বুঝদার একজন অ্যাডভোকেট। শিশিরকে দেখে স্মৃতি বলল,
” কংগ্রেস ভাইয়া “
” থ্যাঙ্কিউ স্মৃতি “
” ওয়েলকাম, কেমন আছেন ভাইয়া? “
” আলহামদুলিল্লাহ, ভালো ছিলাম এখন আরো ভালো হয়ে গেছি। তোমার বান্ধবীকে হারাতে পেরে। এত জারিজুরি, প্রমাণ সব তো হাওয়া করে দিলাম! কি যেন ডায়লগ দিত, তোর মতো বুনো ওলের সাথে আমি কুয়াশা কোর্টে লড়ব এবং হারাব তোকে’ হাহ্! এই তো নমুনা পাওয়া গেল।”
বলে অদ্ভুত ভাবে হাসল শিশির। সেই হাসি এবং শিশিরের ব্যাঙ্গ করা কথায় ওর গা পিত্তি জ্বলে উঠল দা’উ’দা’উ করে দাবানলের ন্যায়। কটমট করতে করতে কিছু বলতে যাবে স্মৃতি বলল,
” আরেহ্ থাম এটা কোর্ট “
কুয়াশা তা শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিল। তবে এমন একটা লুক দিল শিশিরের দিকে যেন শিশিরকে ভ-স্ম করে দেবে সেই লুকে। শিশির তা দেখে কুয়াশার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” এই নজরে তো কবেই ভস্ম করেছিস! আবার নতুন করে কি ভ-স্ম করবি? আমি তো তোর রূপের আগুনে পুড়তে পুড়তে তোর ভালোবাসায় ভ-স্ম হতে চাই, ডুবতে চাই তোর হৃদয় মাঝে!! “
কুয়াশা শিউরে ওঠল। এই লোকটা এখন শুধু রাগ, ঝগড়ার মাঝে প্রেমের তীর ছুঁড়ে দেয়। আর কিছু বলতে পারে না সে।
স্মৃতি এই দুটোর দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া দেখে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। সেসময়ে রিজভী এলো। বলল,
” অভিনন্দন দোস্ত “
বলে শিশিরকে জড়িয়ে ধরল। শিশির হেসে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করল৷ ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করল৷ এরপর হাঁটতে হাঁটতে টুকটাক গল্প করতে করতে ওরা বেড়িয়ে এলো কুষ্টিয়া কোর্ট থেকে৷ বাইকের কাছে এলো ওরা৷ হাসি মুখে বিদায় নিল স্মৃতি, রিজভী৷ কুয়াশা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল শিশিরের দিকে৷ শিশির বলল,
” ওঠেন অ্যাডভোকেট মিসেসে কুয়াশা মালিথা “
কুয়াশা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,
” যাব নাহ্ আমি কারোর সাথে৷ আমি একাই যেতে পারব “
বলে পা বাড়াতে গিয়েও পাড়ল না৷ শিশির দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করতে করতে বলল,
” থাপ্পড় না খেতে চাইলে উঠে বোস! এটা কিন্তু কোর্ট গোবর ঠাঁসা! “
কুয়াশা ফুঁসতে ফুঁসতে উপাই না পেয়ে উঠে বসল। শিশির এখনো বাইক নিয়ে চলাচল করে৷ বাড়িতে প্রয়োজনের জন্য প্রাইভেট কার কেনা হয়েছে৷ সেটাতে বড়রা চলাচল করেন। বিশেষ করে জাকির মালিথার সুবিধার জন্য কেনা হয়েছে৷
কুয়াশা বসলে শিশির বাইক স্টার্ট দিল। কুয়াশা শিশিরকে শাস্তি দিতে সেই আগের মতো পেট চেপে ধরল যেটা শিশির আজো সহ্য করতে পারে না৷ দিল রাম ধমক কুয়াশাকে৷ ধমক খেয়ে হেসে কাঁধ ধরল৷ বেরিয়ে এলো কোর্ট থেকে তারা।
____________
গুটিগুটি পায়ে তিন বছর আটটা মাস চলে গেছে৷ কুয়াশা এখন হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট। সে এলএলবি করার পর বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দেয়। এলএলএম আর করেনি৷ এলএলবি কমপ্লিট করে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিয়ে এতদিন নিম্ন আদালতে কেস লড়ত টুকিটাকি। এই প্রথম কেস সে হাইকোর্টে পেয়েছে এবং সেটা সরকারি ভাবে৷ তার বুদ্ধি বিচক্ষণতায় সে এতদূর চলে এসেছে। মহিলা অ্যাডভোকেট হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেছে সে।
শিশির এখন অনেক খ্যাতি অর্জন করেছে৷ অনেক বড় বড় কেস সে হ্যান্ডেল করেছে এবং বুদ্ধি বিচক্ষণতার সাথে তা সল্ভও করেছে। আজকের এই কেসটা মাস দেড়েকের আগের কেস ছিল। শিশিরকে প্রতিপক্ষরা নিজেরা পরিচালনা করার জন্য শিশিরকে ইনফর্ম করেছিল।
| চলবে |
বিঃদ্রঃ | আদালত নিয়মাবলিতে কাঁচা আমি। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
এক পর্বে হলো না বাকিটুকু রাতে পোস্ট করব ইনশাআল্লাহ। তবে একটু রাত হবে। এক পর্বে দিতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে। ফুটিয়ে তুলতে পারব না।
এবার উত্তর কি পেয়েছে যারা অভিযোগ করেছিল আমি গল্প টেনেছি? যারা বলেছেন গল্প টেনে বড় করেছি তারা কি প্রথম পর্ব মন দিয়ে পড়েন নি? আমি ওখানে যে লিখেছিলাম কুয়াশা লইয়ার হবে এবং শিশিরের সাথে লড়বে এটা কি এমনি এমনি বলেছিলাম? এতগুলো বছর আমি কিছু না লিখেই দিয়ে দেব যে এত বছর পর লইয়ার হলো কুয়াশা? আশ্চর্য না হয়ে পারি না ঐসব ভাবনা ওয়ালা পাঠকদের ভাবনা দেখে৷ এটা একটা পারিবারিক গল্প আরো বড় করতে পারতাম আমি অনেক কিছু স্কিপ করে লিখেছি তবুও। প্রতিটা চরিত্রকে প্রাধাণ্য দেবার চেষ্টা করেছি। আমার ধারণাই ছিল না এই গল্পটা এত বড় হবে৷ ৪০+ পর্ব করার ইচ্ছে ছিল অথচ এত হয়ে গেল।
এবার যারা অভিযোগ করবেন টেনে বড় করেছি তাদের উত্তর হবে আপনারা গল্পের থিমই বুঝেন নি৷
বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’
| অন্তিম অধ্যায় | ‘শেষাংশ’
®রোজা রহমান
‘
” বুনু উল, বাগা তিঁটুল “
বাক্যগুলো বার বার আওড়াতে আওড়াতে দৌড়ে খেলে বেড়াচ্ছে প্রহেলিকা কুজ্ঝ৷ বসার ঘর জুড়ে তার আনাগোনা। হাতে চিপসের প্যাকেট।
” গোবল টাঁসা, গোবল টাঁসা “
আবার আওড়াল বাক্যগুলো কয়েকবার। উপর থেকে বর্ষণ নামতে নামতে ভ্রু কুঁচকাল৷ বিড়বিড়াল,
” কী বলছে এই কুলঝুটি কাকাতুয়া!! “
নিচে নেমে ধমক দিল কুজ্ঝকে। বলল,
” এ্যাই কুলঝুটি? ওভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিস কেন? আর কিসব বলছিস? “
” তো তোমাতে তবো আমি? আমি দা ইত্তা বুলে বেলাব! “
একদম ঝারিপারি নেবার মতো করে বলে আবার বলতে লাগল,
” বুনু উল, বাগা তিঁটুল, গোবল টাঁসা “
বর্ষণ আবার ভ্রু কু্ঁচকাল৷ সে এবার কুজ্ঝকে থামাতে ধরল হাত চেপে৷ হাতের চিপস কেঁড়ে নিল। নিয়ে সে খাওয়া ধরল। বলল,
” যাহ্ এবার খেল। “
কুজ্ঝর রাগ তো হলো তার চিপস নেয়ার জন্য এখন তার হাতটা পেড়ে ধরাতে লাগলও। সে এবার কান্না করে দিল। চেঁচিয়ে কেঁদে বাড়ি মাথায় করল৷ রান্না ঘর থেকে দাদিরা, নানি, চাচিরা ছুঁটে এলো উপরে ঘর থেকে চাচু, মামারা বেড়িয়ে এলো। ইয়াসমিন ঘরে ছিল তার ছেলে শ্রাবণকে নিয়ে। দেড় বছরের ছেলে তার৷ নীহার, হিম মাত্রই বসার ঘর থেকে উপরে গেছিল গোসল করবে বলে। নীহার, হিম ছুঁটে আসতে আসতে নিচে বৃষ্টি ছুঁটে এলো। এসে তড়িঘড়ি করে কুজ্ঝর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কি হয়েছে আম্মু? কান্না করছ কেন? বলো আম্মু? “
বলতে বলতে বৃষ্টি কোলে তুলে নিল কুজ্ঝকে। সে এবার কান্না করতে করতে বলে উঠল,
” বোলো আম্মু…! বলছন মেলেছে। আল আমাল চিপত কেলে নিল “
বড় আম্মুর কাছে অভিযোগ করে সে বৃষ্টির গলার মাঝে মুখ গুঁজে দিল। দিয়ে শব্দ করে কাঁদতে লাগল। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়েও উঠতে লাগল। এই যে এই কান্নার ধরণটা সে মায়ের থেকে পেয়েছে। কুয়াশা যেমন কাঁদতে গেলে গলায় মুখ গুঁজে কাঁদে ঠিক তেমন। গলা জড়িয়ে ধরে বৃষ্টির গলার মাঝে মুখ গুঁজে রেখে কেঁদে চলল। বৃষ্টি কুজ্ঝর অভিযোগ পেয়ে বর্ষণের দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকাল। রূঢ় স্বরে বলে উঠল,
” বর্ষণ…! এসব কি? তোমাকে বলেছি না বোনকে মা-রবে না? এ্যাই তুমি দেখো না ও একদম ছোট? “
বর্ষণের যেন কথাগুলো গায়েই লাগল না৷ সে আয়েশে টপাটপ চিপস মুখে পুরে চলেছে। সোফায় বসতে বসতে বলল,
” আরেহ্ আম্মু রাখো তো ঐ ঢংগীর ঢং। ওকে সুন্দর করে জিজ্ঞেস করলাম যে, কি করছিস? না বলে তর্ক করছিল। “
তা শুনে কুজ্ঝ কাঁদতে কাঁদতে মুখ তুলে বলল,
” মিত্যা কতা! বোলো আম্মু বলছন মিত্যা কতা বলতে। “
বর্ষণ চোখমুখ কুঁচকে ফেলল৷ তার এত সুন্দর নামের বারটা বাজিয়ে দেয় সবসময়। মানে এক্কেবারে রফাদফা। বিড়বিড়াল,
” তুতলী কুলঝুটি কাকাতুয়া একটা”
বৃষ্টি বলল,
” ও মিথ্যা বলে না আমার জানা আছে। “
হিম, নীহাররা তাকিয়ে দেখছিল এতক্ষণ। এ দুটো পুরোই শিশির কুয়াশার আপডেট ভার্সন!! চোখের সামনে যেন সকলে শিশির, কুয়াশার ছোট বেলা দেখতে পায়। এক বুনো ওল বাঘা তেঁতুল বড় নাই-ই হতে আরেকটা তৈরি। এ দু’টোকে কি নাম দেবে তারা? বুনো ওল বাঘা তেঁতুল প্রো ম্যাক্স!! বাড়ির কেউ কারো দিকে হতে পারে না। এ দু’টোর পর্তা পড়ে খুব কম। তবে বর্ষণ খুব বেশি অপছন্দ করে না। সময়মতো ভালোবাসে বোনকে৷ স্কুল থেকে কিছু আনলে কুজ্ঝকে দেয়৷ তবে সেটা তার মনের উপর ডিপেন্ড করে৷ তার নামের বারটা যখন বাজায় আর সকলের আদর যখন কুজ্ঝ বেশি পায় তখন সে হিংসায় জ্বলে ওঠে। তার ভালোবাসা এই মেয়ের জন্য কমে গেছে৷ তার মা-ও এই মেয়েকে নিয়ে আদিখ্যেতা করে এমনকি তার প্রাণ প্রিয় ফুপুরও আদর কম পায়। চাচুও আদর কমিয়ে দিয়েছে। এসবের জন্য তার রাগ৷ বাড়ির প্রতিটা সদস্য কুজ্ঝ কুজ্ঝ করে৷
কেউ আর কিছু বলতে পারল না৷ নীহার গিয়ে কুজ্ঝকে নিল আর হিম গিয়ে বর্ষণের পাশে বসল৷ নীহারও বসল পাশে৷ বৃষ্টিরা আবার চলে গেল রান্নাঘরে। দুপুরের রান্না হচ্ছে। জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা এখন আর রান্নাঘরে যান না। আজ অনেক রান্না বলে বৃষ্টিদের সাহায্য করছেন। ইয়াসমিন রান্নার কাছেই ছিল ছেলের জন্য ঘরে গেছিল। আল্লাহ তুহিন, ইয়াসমিনকে সন্তান দিয়েছেন। অনেক প্রতীক্ষার পর। শশী, বৃষ্টি আছে রান্নাঘরে। আত্মীয়রা আসবে একটু পর। নীহার বলল,
” আমার মামা কান্না থামাও সোনা “
বর্ষণ আঁড়চোখে চায়ল৷ হিম বর্ষণের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলল,
” আমার চাচু তো এমন ছিল না? চাচুকে আমারা কত্ত ভালোবাসি চাচু কি সেটা জানে না? “
” হ্যাঁ জানে কিন্তু এই কুলঝুটির জন্য সেগুলো কমিয়ে দিয়েছ “
নীহার বলল,
” উহুম, একদম না চাচু। আমরা তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি এই বাড়ির ছেলে তেমনই কুজ্ঝ এই বাড়ির মেয়ে তোমরা দুইজনই আমাদের কাছে ইম্পর্ট্যান্ট। দুই জনকেই আমরা ভালোবাসি। বাবা, বোন হয় তোমার এভাবে বলতে নেই। বোনকে আদর, ভালোবাসা দিতে হয় জানো তো! দেখো না আমরা তোমার কুয়াশা ফুপিকে কত্ত আদর করি, ভালোবাসি! তো আমাদের কি আদর কমে গেছে? কমে নি তো! কুয়াশা যেমন আমাদের একমাত্র বোন কুজ্ঝও তেমন তোমার শ্রাবণের বোন৷ তোমরা ও’কে ভালোবাসবা তবেই তো ও তোমাদের ভালোবাসবে? “
বর্ষণ মন দিয়ে শুনে বিজ্ঞের ন্যায় মাথা নাড়াল শুধু। কুজ্ঝ নীহারের কাঁধে মাথা রেখে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে আর ফুঁপাচ্ছে৷ বর্ষণ দেখে এগিয়ে গেল। কুজ্ঝর পিঠে হাত রেখে বলল,
” এ্যাই কুলঝুটি লেগেছে বেশি? “
” বুলব না তুমি কুলদুটি বলো তেন আমাতে? আমার নাম পয়েলিকা কুদ্দ “
সকলে এবার শব্দ করে হেসে দিল। বর্ষণ জোরে জোরে হেসে নিয়ে বলল,
” নিজেই তো নিজের নাম ঠিক করে বলতে পারিস না আবার আসিস আমার ভুল ধরতে?”
বলে আবার হাসল। হিম হেসে বর্ষণের কাঁধ জড়িয়ে ধরল। নীহার কুজ্ঝকে আদর করতে করতে হাসল৷ কুজ্ঝ রেগেমেগে চোখমুখ কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
‘
নীহারের জবের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে বলে সে বিয়ের অনুমতি পেয়েছে এবং সেই অনুমতি থেকে দুই মাসের ছুটিতে এসেছে গত সপ্তাহে সে। যাবার পর মাঝে এবার এসেছিল দুইবছরের মাথায় সপ্তাহ দুয়েকের ছুটিতে৷
হিম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষে আছে। ঢাকাতেই থাকে সে। এসেছে দুইদিন হলো। কুয়াশার অর্জন করা টাকা হিমের জন্য বরাদ্দ করেছে কুয়াশা। মা আর ভাইয়ের জন্য সে এখন টাকা খরচ করে।
‘
দুপুর একটার পর শিশির, কুয়াশা এলো বাড়িতে। মা-বাবা আসতেই কুজ্ঝ নীহারের কোল থেকে নেমে দৌড়ে বাবা বলে ডেকে উঠে বাবার কোলে উঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল। শিশির হেসে মেয়েকে কোলে তুলে নিল৷ তার এই এক টুকরো জান্নাতি সুখ। গালে চুমু দিল মেয়ের। মেয়েও দিল। কুয়াশা এই বাবা মেয়ের ভাব দেখে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল৷ সে কি কিছুই না এদের? এই দুটোর ভালোবাসার সময় সে কখনোই পাত্তা পায় না। শিশির মেয়েকে বলল,
” আমার বাবা কি করছিল? “
” কেলতে থিলাম “
” তো আম্মুকে কি মনে আছে কারোর? “
কুয়াশার কথায় পাশে তাকাল বাবা মেয়ে। কুজ্ঝ বলল,
” না, বুলে গেতি “
শিশির মেয়ের উচিত জবাব শুনে জোরে করে এবার হেসে দিল। কুজ্ঝও কথাটা বলে খিলখিল করে হেসে দিয়েছে বাবার সাথে। কুয়াশা রাগে ফুঁসে উঠল। বলল,
” এ্যাই পাঁজি মেয়ে আমি তোর কেউ না নাহ্? এই লোকটাই তোর সব? তোকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে জন্ম দিয়েছি এই কথা শোনার জন্য? থাক দুই ফাজিল একসাথে আমি চলে গেলাম। “
” কোথায় যাবি? বাপের বাড়ির তো পাশের ঘরে! “
কুয়াশার রাগ হলে সে কুজ্ঝকে এমন বলবে আর চলে যেতে চায়বে। তখন শিশির উক্ত ডায়লগ দেয়, ‘বাপের বাড়ি তো পাশের ঘরে!’ কুয়াশা তখন আরো ফুঁসে উঠে কিন্তু মেয়ের সামনে সে শিশিরকে কিছু করতে পারে না। তারা মেয়ের সামনে মা-রা মা-রি করে না। টুকিটাকি তর্ক করে। কিন্তু যখন সুযোগ পায় কুয়াশা তখন তার সেই বিখ্যাত আনলিমিটেড চাপ্পড়, থাপ্পড়, কি-ল, ঘু-ষি সহ চুলগুলো সুন্দর করে টেনে দেয়। ঘরে যখন কুজ্ঝ থাকে না তখন তারা তমুল ঝগড়া করে আর বুনো ওল, গোবর ঠাঁসা তখন বলে। কুজ্ঝ অনেক সময় বাহিরে থেকে শুনে নেই তাদের নিক নেমগুলো আর শুনেই সে-গুলো মনে রাখে পরে রিপিট করে বেড়ায়৷ বাঘা তেঁতুলটা শিশিরই বলেছে কুজ্ঝকে।
কুয়াশা রাগ করে চলে যেতে নিলে শিশিরের কথা শুনে আবার ফস করে উঠল৷ ক্ষীপ্ত নজরে চেয়ে বলল,
” এই জন্য তোমাদের আরো স্পর্ধা তাই নাহ্? দেখো যে আমার যাবার জায়গা নেই তাই এভাবে বলো? বাপের ঘরেই যাব আমি! “
বলে খেয়েফেলা লুক দিয়ে চলে গেল ধাপধুপ পা ফেলে৷ শিশির হাসল। কুজ্ঝ বলল,
” আম্মু লেগে গেতে বাবা! “
” হ্যাঁ বাঘা তেঁতুল প্রচুর ক্ষেপে গেছে “
কুজ্ঝ তা শুনে বলল,
” তলো ঘলে। লাগ বাঙাব আম্মুল “
শিশির আবার হাসল৷ মেয়েটাও তার মতো। রাগিয়ে দিয়ে আবার আলাপ করে। এতক্ষণ সোফায় বসে সবটা দেখছিল নীহাররা। জাকিয়ারা রান্নাঘর থেকে এলো কুয়াশা আর শিশিরের চিল্লানোর শব্দ পেয়ে। তুষার নামল সেই সময়ে। সে সকালে এসেছে।
তুষারের খুলনা থেকে পোস্টিং পাল্টে পাবনায় গেছে৷ তার পদোন্নতি হয়েছে সে এখন এডিশনাল এসপি অফিসার৷
নীহার বলল,
” ব্যাপারটা কি বলতো? কুশু অতটা ক্ষেপে কেন? কি করেছিস আমার বোনের সাথে? “
” তোর বোন কোর্টে হেরেছে আমার কাছে। এটাই তোর বোনের রাগের কারণ। তার বড় বড় কথা আমি হাওয়ায় উড়িয়েছি এতে আহ্লাদী ক্ষেপেছে। “
জাকিয়া বললেন,
” শুধু এটার জন্য ও রাগবে না৷ কিছু একটা করেছিস তুই? কোর্ট হার জিৎ এটা ও জানে, বোঝে। “
” আরেহ্ আম্মু আমি কিছুই করি নি৷ কোর্টের মাঝে একটু ঝগড়া হয়েছে এই। তোমাদের আহ্লাদী বলতো না? আমার সাথে ও লড়বে আর আমাকে হারাবে তো সেটা তো পারেনি! এই জন্য জেদ হয়েছে৷ এর বেশি কিছু না “
হিম বলে উঠল,
” কংগ্রাচুলেশন’স ভাই। প্রথমেই হারিয়ে দিলে? “
শিশির হাসল। বলল,
” হ তোর বোনের মুখটা দেখার মতো হয়েছিল৷ “
নীহার পাশে থেকে হিমের মাথায় চাটি বসিয়ে বলল,
” কুশু একদম ঠিকই বলে। ভাই কা চামচা”
শিশির বলল,
” এ্যাই রাজা-কারের বংশধর! তো আমার শা-লাটা কি তোর মতো রাজ-কার হবে বলতে চাইছিস?”
সকলে হেসে ফেলল। জাকিয়া ছেলের দিকে চোখ গরম করে চায়ল। নীহার বলল,
” তুই খাঁটি বাঙালির বড়াই বন্ধ কর! জানা আছে আমাদের। এখন সাধু সাজছিস? “
কুজ্ঝ বলল,
” বাবা লাজাকাল তি?”
” ঐ তো তোমার নীহার মামা একটা রাজা-কার “
” মামা লাজাকাল? “
” হ্যাঁ তোর মতো একদম। তুইও সেই রাজা-কারের বংশধর”
কুজ্ঝর প্রশ্নে বর্ষণ উত্তর করল। বৃষ্টি বলল,
” বর্ষণ, ছিহ্! কি বলো এসব? “
কুজ্ঝ ঝারি নিয়ে বলল,
” তুমি লাজাকাল একতা! “
সকলে আবার হেসে ফেলল। শিশির বলল,
” বর্ষণ আব্বুটা ফুপির মতো এত ক্ষেপে আছে কেন? “
” তোমার মেয়ে দোষী “
” কি করেছে আমার মেয়েটা? “
” বাবা বলছনই আমাতে মেলেতে। আমি কিতু কলি নি “
” এভাবে মা-রা মা-রি করো কেন বাবা? ওটা তোমার ভাই তো। আর বর্ষণ এটা তোমার বোন হয় নাহ্? “
বর্ষণ কিছু বলল না৷ শশী বলল,
” দুইটা তোমাদের মতো হয়েছে একদম।”
শিশির শুনে বর্ষণের দিকে তাকাল একবার আর একবার মেয়ের দিকে৷ তাদের ছোট বেলারই প্রতিচ্ছবি যেন চোখের সামনে৷ এদের দেখলে তার আর তার গোবর ঠাঁসার বউটার কথা মনে পড়ে। জাকিয়া বললেন,
” আব্বু যাহ্ ফ্রেশ হয়ে নে৷ খাবার সময় হয়ে এলো৷ “
” দাদিন মাতেল মাতা আমাল কিন্তু “
” আচ্ছা দাদিন তোমারই “
” দাদিন কুলঝটিই সব খাবে নাকি? আমার টাও যেন থাকে! “
বর্ষণের পর শিশিরও বলে উঠল,
” আমার টাও যেন থাকে! “
ল্যাহ এই বাড়িতে মাছের মাথা খাওয়ারও লোক কত হয়ে গেছে। আগে শুধু শিশির কুয়াশা খেত এখন কুজ্ঝ, বর্ষণও যোগ হয়েছে। ওদের তিনজনের কথা শুনে সকলে চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে রইল। তা দেখে বর্ষণ সহ শিশির কুজ্ঝকে নিয়ে উপরে চলে গেল। জাকিয়ারা সকলে হেসে ফেলল। এদের নিয়ে আর পারে না কেউ।
সকলে এবার যে যার কাজে চলে গেল। গোসল করে নামাজ পড়বে সব। তুহিন অফিসে আছে। জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথাও উপরেই আছেন। জাহিদ মালিথা এখন অবসরপ্রাপ্ত। জাকির মালিথার সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন সেখান থেকে তাকে অবসর দিয়ে দিয়েছেন। দুই ভাই এখন ভালোই দিন কাটান নাতিপুতিদের সাথে বাড়িতে থেকে।
শিশির ঘরে এসে দেখল বউ আজ আর বাপের ঘরে যায়নি৷ গোসলে ঢুকেছে৷ মেয়েকে বিছানায় বসিয়ে দিল৷ সে চেঞ্জ করে নিল৷ এরপর মেয়ের সাথে খেলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কুয়াশা এলো। আবার দুইটার ভাব দেখে জ্বলে উঠল। মিররের সামনে যেতে নিলে কুজ্ঝ ডাকল,
” আম্মু শুনু “
” পারব না “
” আলেহ্ শুনু নাহ্! ও আম্মু..! “
” কি হয়েছে? “
ঝারি নিল সে। কুজ্ঝ আহ্লাদ করে ডাকল,
” ইত্তু আতো নাহ্!”
কুয়াশা মেয়েকে জান দিয়ে ভালোবাসে। এই যে এই আহ্লাদগুলো করে তার বুকটা ভরে যায়। তার রাজকন্যা। সে এগিয়ে গেল কুজ্ঝ বিছানায় উঠে দাঁড়িয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরল। চুমু দিল অসংখ্য। একদম বাপের কায়দায় অভিমান ভাঙায়। শিশির মিটমিট করে হাসছে। মা মেয়েকে মুগ্ধ হয়ে দেখল৷ কুয়াশার সদ্য গোসল করা স্নিগ্ধ মুখটার মন ভরে দেখল। পরনে তার শাড়ি। আজ শাড়ি পরেছে। তাদের বিশেষ দিন শাড়ি না পরলে হয়!! আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী। আজকের তারিখ ভুললে চলবে? তাদের জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছিল আজকের এই তারিখে৷ কেউ কারো মুখ দেখেও কবুল বলতে নারাজ ছিল৷ দুইজন জনম শত্রু বুনো ওল বাঘা তেঁতুলকে বিয়েতে বসানো হয়ছিল আজকেরই দিনে৷ আজ সেই ২-ই আগস্ট। তাদের বিবাহ বার্ষিকী৷ আজীবন এই তারিখ সবার কাছে স্মৃতি হয়ে থাকবে সবার মনে থাকবে সব সময় মা-রা মা-রি, চুলোচুলি করা দু’জন দু’জনকে একচুল পরিমাণ ছাড় না দেয়া ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ এর বিবাহ হয়েছিল।
কুয়াশা মেয়ের আহ্লাদীপনায় হেসে ফেলল। বাপের মতো হিংসুটে হলেও তার মতো আহ্লাদীও হয়েছে৷ বাপ, মায়ের মিশেলে হয়েছে। কুয়াশা মেয়েকে চুমু দিয়ে বলল,
” এখন ঢং করা হচ্ছে নাহ্? বাপ, বেটি মিলে আমাকে আলাদা করে দিয়ে আদিখ্যেতা করা হয়! আমি তো কারোর কেউ নাহ্ “
” উহু তুমি আমাল জান আম্মু। আমাল একমাতল পিয়ু আম্মু “
” আর আমার একমাত্র আহ্লাদী বউ “
শিশির কথাটা বলে উঠে দাঁড়িয়ে কুজ্ঝকে সহ কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরল আষ্টেপৃষ্টে। কুজ্ঝ হেসে উঠল খিলখিল করে। কুয়াশাও মুচকি হাসল। তবে কুজ্ঝর অগোচরে শিশিরের বুকে দাঁত বসিয়ে দিল। কামড় দিল শিশিরের বুকে। খুব বেশি জোরে দেয়নি অবশ্য। শিশির মেকি রাগ দেখিয়ে মাথায় আলতো চা-টি বসাল যেটা মেয়ের অগোচরে৷ কুয়াশাও এবার খিলখিল করে হেসে দিল। তা দেখে সেও অমায়িক হাসল। হেসে কুয়াশার কপালে চুমু আঁকল গাঢ় করে। আনমনে আওড়াল,
” আমার আহ্লাদীরা “
‘
বিকেল পাঁচটার দিকে ইয়াসমিনের বাড়ির সকলে, জিনিয়ারা সহ জাকিয়ার ভাইরা, রিজভী তার রসমালাই অর্থাৎ স্মৃতি, তাদের তিন বছরের ছেলে সানভী, ঈশা, মিহির চলে এলো৷ ঈশা আর মিহিরের বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো৷ মিহির কথা রেখেছে। সে দেখিয়ে দিয়েছে সকলকে। বয়স দিয়ে না যোগ্যতা দিয়ে ঈশাকে জিতেছে৷ তাদের বিয়ের কৃতিত্ব নীহার, শিশির আর রিজভীর৷ এরা তিনজনে মিলে সবকিছু হ্যান্ডেল করেছে৷ মিহির এখন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের টিচার। যোগ্যতাবান হয়ে সে ঈশার বাবার কাছে তার ধানিলঙ্কাকে চেয়েছে। ঈশা প্রেগন্যান্ট পাঁচ মাসের৷
আজ শিশির, কুয়াশা বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে সকলে এক জায়গায় হবে বলে প্ল্যান করেছিল। নীহারও এসেছে তুষারও এসেছে সবমিলিয়ে সময় সুযোগ আর দিন,ক্ষণ এবং তারিখ মিলে গেছে বলে এই প্ল্যান৷ সবাই বসার ঘরে বসেছে।
‘
কুয়াশা তৈরি হচ্ছে। একটু সাজুগুজু করছে আরকি। পরনে তার সেই সুতির শাড়িটা যেটা শিশির ওকে প্রথম গিফট করেছিল। শিশির এলো নিচ থেকে৷ কুয়াশাকে দেখল। মেয়ে নেই৷ সে কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে একটা চুমু দিল। তার সেই উপমা আওড়াল,
” আমার অপ্সরা আহ্লাদী বউ “
কুয়াশা শিউরে উঠল৷ মুচকি হাসল। এই উপমা সবসময় তাকে কাঁপিয়ে তোলে৷ এত বছরেও পরিবর্তন আসেনি৷ সেসময়ে কুজ্ঝ ছুঁটে এলো। কোমড়ে হাত রেখে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” বাবা তুমি শুদু আম্মুতে বেতি বালোবাতো আমাতে বাতো না “
” তোমাকেও বেশি ভালোবাসি আমার প্রিন্সেস। এসো বাবা!”
বলে হাত বাড়িয়ে দিল। সে ছুঁটে এসে বাবার কোলে চড়ল। কুয়াশা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে। কিড়মিড় করতে করতে বলল,
” হিংসুটে মেয়ে একটা৷ একদম বাবার মতো হিংসুটে হয়েছে। আদর সহ্য করতে পারে নাহ্ “
” আমার মেয়ে আমার মতো হয়েছে। সমস্যা তোর? “
কুয়াশা ভেঙচি কেটে হাটা ধরল। শিশির মেয়েকে কোলে করে নিয়ে নিচে গেল। তার পরনে সাদা পাঞ্জাবি সাথে কালো রঙের কোটি। কুজ্ঝর পরনে হলুদ রঙের বেবি ফ্রোক।
‘
শশী শাড়ি পরে সাজছে হালকা পাতলা। নীহার সেসময়ে ঘরে এলো। এসেই আঁটকে গেল তার ইঁচড়েপাকা বাচ্চা পাখি বউটার উপর৷ শরীরটা আগের থেকে একটু উন্নতি হয়েছে। নীহার এগিয়ে এসে বলল,
” এ্যাই বউ পাখি? অপূর্ব লাগছে তোহ্! “
শশী হাসল কিঞ্চিৎ। বলল,
” ছাড়েন দেরি হচ্ছে সকলে অপেক্ষা করছে “
নীহার শুনে শশীর সাথে আরেকটু গভীর হলো। শাড়ির নিচে উন্মুক্ত পেটে হাত রেখে বিচরণ করল। ঘাড়ে চুমু খেল৷ বলল,
” এ্যাই বউ পাখি.. আমি বাবা হব! “
শিউরে উঠল শশী৷ সারা অঙ্গে যেন শীতল কিছু পড়ল৷ তাকে যেন কেউ বরফের মাঝে ছুঁড়ে দিয়েছে। কাঁটা হয়ে গেছে লোমগুলো। শশী কিছুই বলতে পারল না৷ লজ্জারা আঁকড়ে ধরেছে। নীহার আবার বলল,
” কি হলো উত্তর কই আমার? “
” আমারও একাকিত্বের সঙ্গী চাই “
নীহার চট করে চোখ খুলে মুখ তুলে তাকাল শশীর পানে। শশীর চোখ টলমল। সে শশীকে ঘুরাল৷ কিছুক্ষণ দেখল। এরপর হঠাৎ শশীর অধরে অধর ডুবিয়ে গাঢ় একটা চুমু খেল৷ তার বউটা তার কাছে কান্না করলেই সে এভাবে আদর দিয়ে কান্না থামাত৷ শশীকে ছেড়ে বলল,
” আমার ইঁচড়েপাকা বউটা। ইনশাআল্লাহ তোমার একাকিত্বের সঙ্গী আসবে অতি শিগ্রহই “
শশী নীহারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। নীহারও আগলে নিল তার ইঁচড়েপাকা পাখিটাকে।
‘
সকলে নিচে আবার একসাথে হতে পেরে আনন্দে মেতেছে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ধরে ভালোবাসা বাসি প্রকাশ করে আনন্দ উপভোগ করছে। জাকিয়া, আম্বিয়া, আজমিরা জিনিয়া সহ বড়রা একজায়গায় গল্পে মেতেছেন৷ জাকির মালিথা, জাহিদ মালিথা, আমিনুল হক, হানিফ সাহেব সহ জাকিয়ার ভাইয়ারও আলাপচারিতা করছেন।
এদিকে কুজ্ঝ, বর্ষণ, সানভী, শ্রাবণকে নিয়ে খেলছে৷ কুজ্ঝ, বর্ষণ দুইজনই শ্রাবণকে খুব ভালোবাসে৷ কুজ্ঝ শ্রাবণের সাথে খেলছে সেসময়ে সানভী পাশে থেকে তার হাতের চকলেট দিয়ে বলল,
” কুজ্জু তকলেত খা “
কুজ্ঝ নিয়ে একটা হাসি দিল। বর্ষণ বিরক্ত হলো৷ সে ছোট স্বরে বিড়বিড়াল,
” এই আরেকটা এসছে আদিখ্যেতা করার জন্য৷ এই কুলঝুটিকে নিয়ে আদিখ্যেতা করার লোকের অভাব নেই দুনিয়ায়, যত্তসব! “
বলে উঠে চলে গেল অন্যদিকে৷ নীহাররা সব আড্ডা দিচ্ছে। সেই আগের মতো আজ মালিথা ভিলা পরিপূর্ণ। হাসিখুশি মালিথা ভিলায় প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। আবার ফিরে পেয়েছে মালিথা ভিলার আগের রূপ। ফিরেছে নীড়ে তাদের রত্নখনিরা৷ মালিথা ভিলা এমনই হাসিখুশি আর পরিপূর্ণতে মানায়। এটা এই বাড়ির সৌন্দর্য। সব পুত্রগণ আজ একসাথে৷ মায়েরা, বাবারা ছেলেদের একসাথে আবার পেয়েছে৷ সকল ভাইগুলো একসাথে হতে পেরে আনন্দে বিমোহিত। বৃষ্টি, ইয়াসমিন, কুয়াশা, শশী, স্মৃতি, ঈশা সেই আগের মতো আড্ডা দিচ্ছে। নীহার, শিশির সেই আগের মতো এখনো টিপ্পনী কেটে মজা উড়াচ্ছে বউ নিয়ে দুটো ঝগড়া করছে৷ সকলে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। হিম আগের মতো সুযোগ বুঝে ভাইদের টপ দিচ্ছে। ভবিষ্যত ডক্টর অতি চালাক! পুরোটা বিকেল সকলে হাসি, ঠাট্টা, আড্ডা মজা, করে কাটাল। আজ সকলকে আঁটকে রাখলেন জাকিয়ারা। ছেলে মেয়েরা একজায়গায় হয়েছে বাড়িটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সেগুলো নিশ্চুপ হতে দিলেন না কেউ।
‘
গল্পগুজব করে নয়টার পর খাওয়া দাওয়া করল সকলে। এরপর ছাদে গেল শিশির কুয়াশার বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ আহ্লাদ করবে। তেমন কোনো আয়োজন না। এসব জাকির মালিথা করতে দেন না৷ তাই বাড়ির কর্তার কথা মান্য করে কেউ এসবের দিকে এগুই না। বড়রা ছোটদের মজা করতে ছেড়ে দিয়েছেন। নাতিপুতিদের দায়িত্ব তাঁরা নিয়েছেন৷
তারা ছাদের ফুটফুটে জ্যোৎস্না রাতে পাটি বিছিয়ে বসেছে। চারিদিক থেকে বেস ফুরফুরে সমীরণ শরীর লাগছে৷ তাতে সকলের অন্তুর, কায়া জুড়চ্ছে। আড্ডার মাঝে নীহার বলল,
” ভাবা যায়! তোরা সেই বুনো ওল বাঘা তেঁতুল যারা কিনা কাউকে ছেড়ে কথা বলতিস না তারা আজ এতগুলো বছর একসাথে বিবাহবন্ধনে পাড় করে এলি?”
সকলে হেসে ফেলল। শিশির, কুয়াশা বিব্রত হলো। বৃষ্টি বলল,
” শুধু কি তাই? পেড়েধরে বিয়ে দেয়া বিবাহবন্ধন তাদের৷”
হিম বলল,
” দু’টো যে হারে লাগত দেখে তো আমার পপকর্ন নিয়ে বসতে ইচ্ছে হতো আর বলতে ইচ্ছে হতো, ওয়ান্স মোর ওয়ান্স মোর! “
সকলে হা হা করে হেসে উঠল। শিশির কুয়াশা কটমট করে তাকাল। ইয়াসমিন বলল,
” আমার তো মনে হতো কোনো ঝগড়া চুলোচুলির অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা দেখতে এসেছি “
আবার হাসির রোল পড়ল। শশী বলল,
” আমি তো এখানে আসলে রীতিমতো হাঁপসে যেতাম তবুও এদুটো একে অপরের পিছে লেগে হাঁপাসাতো না। বাবাহ্ রে বাবাহ্! “
তুষার, তুহিন বলল,
” আর আমাদের তো কিছু বলাটাও দোষের ছিল৷ কারো পক্ষ তো হওয়া যাবেই না সাথে কিছু বললেই দুটে গাল ফুলিয়ে ঢোল করত৷ “
আবার হাসল একদফা৷ রিজভী, স্মৃতি, ঈশা, মিহির একসাথে বলে উঠল,
” এরা জীবনেও শুধরাবে না। কারণ এরা ঝগড়া, চুলোচুলি করা ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ “
সকলে হা হা করে হেসে গড়াগড়ি খাবার জোগার৷ কুয়াশা শিশির আহাম্মকের মতো চেয়ে থেকে পাশাপাশি বসে সকলের তাদের নিয়ে মজা উড়ানো দেখছে। কারোর কোনোই উত্তর করতে পারল না৷ পারবে কি করে? সব তো আর মিথ্যা বা বানিয়ে বলল না! তারা তো করত তেমনই। তারা সত্যি ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’
এইভাবে সকলে হাসাহাসি, মজা, আড্ডা করে রাত একটা পাড় করল ঘুম ধরে গেল বলে সব নিচে নেমে শুতে চলে এলো৷
‘
কুয়াশা মিররের সামনে গহনা খুলছে৷ শিশির নিজের প্রয়োজনীয় কাজ করে এসে কুয়াশাকে বলল,
” মেয়ে কই? আনবি না? “
” বড় আম্মুর কাছে। তুমি আনো। “
শিশির তা শুনে চলে গেল। গিয়ে মায়ের ঘরের সামনে নক করল। জাকিয়া খুললে মেয়েকে নেবার কথা বলল৷ জাকিয়া বললেন,
” এখানে ঘুমোক আজ৷ তোরা শুয়ে পর গিয়ে৷ বর্ষণও আছে৷ শ্রাবণ আর সানভীকে শুধু নিয়ে গেল ওরা৷ এরা থাক আমাদের কাছে৷ আজমিরা, আম্বিয়া আছে সমস্যা হবে না। “
বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছেলের কাঁধের উপর হাত রেখে আদর করলেন৷ মুখের উপর হাত রেখে বললেন,
” আমার ছেলে মেয়েরা আজ একসাথে কতগুলো বছর পাড় করে এলো! যাহ্ তোদের আজকে দিনটা শান্তিতে ঝগড়া, মা-রা মা-রি, চুলোচুলি করার জন্য স্পেস নিয়ে দিলাম। আফটার অল, আ’ম ইউর ডিজিটাল মাদার! ”
বলেই জাকিয়া হেসে দিলেন। তিনিও সুযোগ বুঝে মজা উড়ান। শিশির চোখজোড়া ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে উঠল,
” আম্মু….! “
আবার হাসলেন তিনি। জড়িয়ে ধরল শক্ত করে মা’কে। ছেলেকে তিনিও জড়িয়ে ধরলেন। সেসময়ে কুয়াশা এলো। দেড়ি হচ্ছিল বলে এসেছে। মা ছেলেকে দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আহ্লাদ করতে দেখে বলল,
” আচ্ছা এখানে মা, ছেলের আদর দেয়া নেয়া হচ্ছে? আমাকে আদর করা লাগে নাহ্ কারোর? “
জাকিয়া ছেলেকে ছেড়ে কুয়াশাকে ডাকলেন,
” আয় এদিকে “
কুয়াশা এগিয়ে গেলে মেয়েকে জড়িয়ে নিয়ে কপালে চুমু দিলেন৷ আজমিরা কথা পেয়ে উঠে গেছিলেন। তিনিও দেখলেন একজন শাশুড়ী কতটা ভালোবাসে তার ছেলেবউকে৷ চোখজোড়া জুড়িয়ে গেল৷ চোখে পানি মুছে নিলেন৷ মেয়ের সুখে তার শুধু কান্না পায়। শিশির ভেতরে ঢুকে কুজ্ঝকে চুমু দিল। পাশে থাকা বর্ষণকেও দিল। কুয়াশাও এসে চুমু দিল দু’জনকে৷ বলল,
” এ দু’টোর একটুও পড়ে না। “
এরপর বিদায় নিয়ে ওরা দু’জন বেড়িয়ে এলো৷
‘
ঘরে এসে শিশির দরজা বন্ধ করে দিল। কুয়াশা শাড়ি খুলতে চাইলে খুলতে দিল না সে। অতিরিক্ত লাইট অফ করে দিয়ে জিরো লাইট জ্বালাল। আলমারি থেকে কিছু একটা নিয়ে এলো৷ কুয়াশা দেখল একটা ছোট্ট বক্স। শিশির খুলল বক্সটা খুলতেই একটা পাথর বসানো সুন্দর ডিজাইন করা হীরার আঙটি দেখল৷ কুয়াশা অবাক হলো। শিশির কুয়াশার হাতটা নিয়ে সেটা পড়িয়ে দিল। মুচকি হাসল শিশির। বলল,
” আরো একটা নতুন বছর কাটাব আমার আহ্লাদী বউটার সাথে। “
কুয়াশাও হাসল। শিশিরের বুকে মাথা রেখে বলল,
” ইনশাআল্লাহ, ইশশ! কতগুলো বছর পাড় করে এলাম আমার প্রিয় স্বামীর সাথে? এইভাবেই যেন আরো হাজার বছর তার বুকে মাথা রেখে পাড় করতে পারি “
শিশির মুচকি হাসল। কুয়াশাকে কোলে তুলে নিল। কুয়াশা গলা জড়িয়ে ধরে স্বামীর চোখের দিকে তাকাল। স্বামীর না বলা ভাষা সে বুঝে গেছে। শিশির ঠোঁট কামড়ে হেসে নাকে নাক ঘষল। শুয়ে পড়ল কুয়াশাকে নিয়ে৷ বুকের কাছে টেনে নিয়ে মিশিয়ে নিল। কুয়াশা স্বামীর বুকে নাক ঘষল। শিশির বলল,
” অনুভূতি বল, আজ তোর স্বপ্ন পূরণ করে এলি! আমার সাথে কেস লড়তে পারলি আবার হেরেও এলি!”
বলে ঠোঁট টিপে হাসল। কুয়াশা এই সময় এমন কথা পেয়ে ফুঁসে উঠল। শিশিরের বাহুতে চাপ্পড় দিয়ে বুকে কামড় দিল।বলল,
” বুনো ওল একটা “
শিশির নিঃশব্দে হাসল। তবে কুয়াশার চুল মুঠোয় পুরো জোরে করে টান দিল। দিয়ে বলল,
” তুই চিরকাল গোবর ঠাঁসাই রয়ে যাবি “
কুয়াশা ‘আহ্’ করে উঠেছে৷ এই দু’টো সত্যি জীবনেও আর শুধরাবে না। তাদের এই চুলোচুলি, চলে এবং চলবেই৷
কুয়াশা কিড়মিড় করে উঠল। শিশির তা দেখে কুয়াশার শাড়ির নিচে উন্মুক্ত পেট খামচে ধরল। এরপর কিছুটা স্লাইড করে কোমড়ের কাছে বাঁকা খাঁজের মাঝে নিয়ে গেল। কুয়াশার শরীর জড়িয়ে এলো৷ এই ছেলেটা এমন ভাবে ছোঁয় যেটাতে এতগুলো বছর পরেও তার শিহরণ হয়। বুক কেঁপে উঠে গভীর ছোঁয়ায়। শিশির দুষ্টু চোখে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে বউয়ের অবস্থা দেখে৷ এবার টেনে নিল আরেকটু৷ কুয়াশা কিছু বলবে শিশির তার অধরে অধর ডুবিয়ে অধর চুম্বন করল। কুয়াশার কোমড়ে রাখা হাতটা গলিয়ে দিল কুয়াশার চুলের মাঝে। ঘাড়ের পেছনে মুঠো করে ধরল। কুয়াশা সায় দিতে শিশিরের গালের উপর হাত দিল। কিছুক্ষণ পান করল দু’জন অমৃত সুধা।
একে অপরকে ছেড়ে দিয়ে তাকাল দু’জনে। নজরে নজর পড়ল। লজ্জা পেল কুয়াশা। বুকে মুখ গুঁজে দিল। শিশির বলল,
” নতুন করে লজ্জা পাওয়া শিখলি নাকি?”
” ধেৎ..! “
বলে আবার নাক ঘষতে লাগল। শিশির টের পেল তার বিড়াল ছানার নাক ঘষা৷ এতগুলো বছরেও পাল্টায়নি কিচ্ছু৷ আবেগী হয়ে উঠল সে৷ বলল,
” এ্যাই আমার সোনা..! “
” হুঁ “
” ভালোবাসি”
বলে শিশির কুয়াশাকে বুকের উপর তুলে নিল। কুয়াশা নির্বিকার৷ মুখের সামনে টেনে নিয়ে বলল,
” আমার আহ্লাদী বিড়াল ছানার কিছুই পাল্টাবে না। আমি পাল্টাতে দেবও না। সে আজীবন আমার অভ্যাস হয়ে রবে। আমি আজীবন তাতে ডুবে থাকব। এমন হাজার বছর আমরা একসাথে কাটাব৷ পাল্টাবে না কিচ্ছু। আমরা এভাবেই বুড়ো হব। আমার আহ্লাদী বউকে আজীবন বুকে নিয়ে ঘুমাব। “
কুয়াশা মুচকি হাসল। স্বামীর বুকে চুমু দিল৷ বলল,
” আজীবন তোমার কোলে চড়ে সময় কাটাব। বক্ষে চেপে ঘুমাব। তোমার দুই হাতের আঁজলায় চড়ে হাড়কাঁপা শীতের মাঝে হিমেল হাওয়ায় পাহাড় পর্বতের চূড়ায় ভেসে বেড়াব। তুমি হাঁপিয়ে উঠে জিড়াতে বসে ঘাসের বুকে শিশির বিন্দু হবে, আমি ভেসে ভেসে তোমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে কানে কানে বলব ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি আমার প্রিয় স্বামী। “
শিশির হাসল অমায়িক৷ কুয়াশাকে শক্ত করে বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। ডুবল তারা আদর, ভালোবাসার সাগরে৷ এভাবেই তাদের দিন পাড় হবে৷ তারা না পাল্টাবে আর না শুধরাবে৷ তারা এমনই থাকবে। এই চিরন্তন ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ প্রবাদ বাক্যর মতো তারাও তাদের চিরন্তন স্বত্বাকে ধরে রাখবে।
‘
“”প্রতিনিয়ত খন্ডযুদ্ধের নাটকীয়তায়
অনুভূতির আলোড়ন সৃষ্টি প্রণয়ের ঠিকানায়
শত্রুতার বেড়াজালে একে অপরের সমতুল
” বুনো ওল বাঘা তেঁতুল!!””
~~ মহোসিনা (~রুদ্র) ~~
| সমাপ্ত |
বুনো ওল বাঘা তেতুল গল্পের লিংক ( all part ) click
অবশেষে সকলের প্রিয় ‘বুনো ওল বাঘা তেঁতুল’ মাঝে আমাদের এই লম্বা সফর শেষ হলো।
কি বলব?? আমার অনুভূতি আমি প্রকাশ করতে অক্ষম। বুনো ওল বাঘা তেঁতুলকে নিয়ে আমার অনুভূতি এতটায় বৃদ্ধি পেয়েছে যে সেটা লিখে প্রকাশ করতে গেলে আরো একটা পর্ব তৈরি হবে। মনের মাধুর্যতা৷ মিশিয়ে লিখার চেষ্টা করেছি বুনো ওল বাঘা তেঁতুল।
আমার দ্বিতীয় ধারাবাহিক গল্প এটা। কল্পনাতীত একটা মাধ্যম, যেটার মাধ্যমে আমি পাঠকসমাজের কাছে ঢেঢ়সারি ভালোবাসা পেয়েছি হয়তো আরো পাব। পাঠকসমাজ আমাকে চিনেছে এই বুনো ওল বাঘা তেঁতুলের মাধ্যমে। আমার একদম সাধারণ গল্প এটা। আর এটাই যে সকলের কাছে এতটা প্রিয় হবে ধারণার বাহিরে ছিল। একটা পারিবারিক, ফানি, রোমান্টিক গল্পের থিম ভেবেছিলাম৷ সকলের কাছে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম৷ আমি এখন সার্থক।
১০০% পাঠকের মাঝে ৯৮% পাঠকের প্রিয় বুনো ওল বাঘা তেঁতুল আর বাকি ২% এর কাছে ভালো লাগেনি। খুব কমই এই কথাটা শুনেছি৷
এবার একটু ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলি। লিখার মাঝে কিছু বাঁধা বিপত্তি এসেছিল কিন্তু আমি থামি নি। আমার গল্প নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ সহ, আলোচনা, সমালোচনা করবেন, অবশ্যই করবেন। কিন্তু গল্পনিয়ে একটু যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা করবেন। আর এমন সমালোচনা করবেন যেটা গল্প পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে আমার পরিবার, বংশপরিচয় পর্যন্ত আসবেন না দয়া করে। লেখিকার জন্মপরিচয় নিয়ে সমালোচনা করার কোনো রাইট নাই পাঠকদের।
মালিথা ভিলা আমি তৈরি করেছি আমার স্বপ্নের মাধ্যমে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না। আর বাস্তবে চাইলেও হাজারটা মালিথা ভিলা তৈরি করা সম্ভব শুধু প্রয়োজন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো সমাজের ঘাটিয়া বোধবুদ্ধি পাল্টানো। তাহলেই মালিথা ভিলা গড়া সম্ভব।
বলবেন এমন কয়জনে হয়? সবার বিবেক এক না তবে বলব আমি গল্পের মাঝেই আরো দুইটা পরিবার দেখিয়েছি।
১. স্মৃতির পরিবার
২. শশীর পরিবার
সবশেষে ভালোবাসা আমার সকল পাঠককে যারা আমাকে সাপোর্ট করেছে, ভালোবেসে পাশে থেকেছে। এত লম্বা সফরের পাশে থেকেছে৷ এভাবেই আরো দূর তোমাদের সাথে যেন আমার সফর হয়।
আসব আবার নতুন রূপে নতুন কোনো গল্প নিয়ে। ততদিন সকলে ভালো থেকো আর আমার ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা কোরো।