বাসর রাতে বেড়াল(cats) মারা একটি অতি প্রাচীন প্রবাদ।এই প্রবাদ নিয়ে ঘটে যাওয়া এক মজার রম্য গল্প শুনাব আজ।
“আপনি কি বিয়ে করছেন?”
“জ্বি- !”
“বাসর রাতে বেড়াল মারছেন নাকি?”
আবুলে কথা শুনে কিছুটা অবাক হয় মকবুল। বিরক্ত স্বরে জিজ্ঞাস করে, মিঞা ভাই, “এই প্রশ্নের মানে কি?”
আবুল এবার আগ্রহ নিয়ে মিনতির সুরে বলে,
“রাগ কইরেন না মিঞা ভাই, আমারে উদ্ধার করেন। বাসর রাতে বেড়াল মারার কথা সেই নেঙটা কাল থেকেই শুনে আসতেছি। কিন্তু কেন এই বেড়াল মারা; আর কিভাবেই তা মারে কিছুই ভেবে কূল পাচ্ছিনা।
জগৎ জুড়ে এত এত প্রাণী থাকতে- why should you kill only a cats at wedding night?”
মকবুল কোন উত্তর দিল না। ভ্রু কুঁচকে খানিকক্ষণ অবাক দৃষ্টতে তাকিয়ে রইল আবুলের দিকে।
আবুল উৎসুক দৃষ্টিতে অসহিষ্ণু গলায় আকুতি জানায়,
“ও ভাই, কিছু কন না ক্যা? আজ বাদে কাইল আমার সাদি মোবারক।অথচ বেড়াল মারার বিষয়টা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না-!”
“সত্যিই বিয়া করবেন, নাকি ইয়ার্কি?”
“না ভাই না, ইয়ার্কি নয়। সত্যিই বিয়ে!
ভাই, এক বন্ধুর মাধ্যমে বেড়ালও একজোড়া কিনে আনছি। খাটের নিচে সুতলি দিয়ে বেঁধে রেখেছি- কিন্তু-
“আবুলের কথা শেষ হবার আগেই মকবুল অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে, “একজোড়া কেন?’’
আবুল বলে, “বিড়াল মারা নিয়ে যেন বউয়ের সঙ্গে কোন ধরনের কাড়াকাড়ি-মারামারি কিংবা মনোমালিন্য না হয় তাই একজোড়া। একটা আমি মারব, আরেকটা আমার বউ…!”
মকবুল হাহাকার করে হেঁসে ওঠে। বিরক্ত স্বরে বলে, “জীবনে বহুত আবাল দেখেছি, তোর মতো দেখি নি! তুই কি সত্যি সত্যিই বাসর রাতে বেড়াল মারবি?”
“অবশ্যই! বিয়ে কি জীবনে বারবার করব নাকি। তাই শুধু বেড়াল কেন, যদি হাতি মারার কথা থাকে তাই-ই মারব!”
“আব্বে-এ-শালা আহাম্মক, এই বেড়াল সেই বেড়াল না! এইটা হল বিড়াল, বিড়াল মানে cats… ক্যাটের প্রতিশব্দ হল pussy… মানে…”
আবুলের এবার রাগ হয়, সে বিড়াল/বেড়াল সব চেনে।এসব লোকের অনভিজ্ঞ,তাই কথা বলে লাভ নেই।সে বলে দিলেই পাড়ত সে বেড়াল মারতে পারেনা।
সময় নষ্ট না করে ঝড়ের গতিতে নাক বরাবর হাঁটা শুরু করে আবুল।
সে কিছুতেই ঠাওর করতে পারছে না।হাতে সময় খুবই কম,বেড়াল মারা শিখতেই হবে।
রাত সাড়ে এগারটা।
আবুলকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা এঁটে দিয়েছে প্রতিবেশী ভাবিরা।
সহজ-সরল হাবাগোবা আবুলের কীর্তি-কলাপে সকলেই ব্যাপক বিনোদিত।সে একজোড়া বেড়াল জোগাড় করে খাটের তলায় বেঁধে রেখেছে।
বেড়ালকে জবাই দেবার জন্যেই কামারশালা থেকে শানিত ছুরি নিয়ে এসে গেঁথে রেখেছে ঘরের বাতায়।
কালা আবুল্যা ভাগ্যগুণে পেয়ে গেছে রূপবতী এবং শিক্ষিত এক মেয়েকে একেলা ঘরে। একেবারে নির্জন নিরিবিলি রাজনি!
আবুল তার বেড়াল(cats) এবং নববধুকে নিয়ে কী কী উদ্ভট কান্ড করে তা দেখার জন্য বেড়ার ফাঁকফোকর দিয়ে চোখ/কান পেতে রেখেছে গোটা দশেক মানুষ!
আবুল বাসর ঘরে ঢুকে খাটের কাছে যেতেই,খাট থেকে নেমে এসে পা ছুয়ে সালাম করে সাদিয়া।
সাদিয়ার কাঁধে হাত রেখে আবুল তাকে উঠিয়ে নিয়ে খাটে বসায়। নরম সূরে ডাকে,
– বউ
– জ্বি
– আজ আমাদের সংসার জীবনের প্রথম রজনী। বেঁচে থাকলে জীবনে এইরূপ অসংখ্য রজনী পাব। কিন্তু সর্বপ্রথম জরুরি একটা বিষয়ে কথা বলতে চাই-
– জ্বি, বলুন
– খাটের তলায় দু’টা বেড়াল বেঁধে রাখছি, আওয়াজ পাইছ?
– জ্বি!
– কেন রাখছি, কও দেখি?
সাদিয়া ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে থাকে। উত্তরটা তার জানে নেই। কিন্তু জানতে সে খুবই আগ্রহী।
বাসর রাতে বেড়াল মারার কথা সাদিয়া নিজেও শুনেছে বহুবার। সে এতদিন ভেবেছে এইগুলা নেহাতই কথার কথা মাত্র।
কিন্তু এই মানুষটা সত্যি সত্যিই বেড়াল মারবার পায়তারা করছে নাকি? আজব তো!
মানুষটা দেখতে খুবই সহজ সরল।নামটাও খুব গাইয়্যা। নামের মতোই বোকা নাকি উনি?
– সাদিয়া
– হু
– এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম, বেড়াল হচ্ছে একটি নোলা জাতিয় প্রাণী। নোলা কারে কয় জান?
– জ্বি না।
– নোলা মানে লোভী। অন্যের খাবার দেখে লোভ সামলাতে না পেরে জিব থেকে লালা ঝরায় যে তারেই লোকে বলে নোলা।চোরের মতো এর-ওর খাবারে মুখ দেয়।
সাদিয়া বিস্ময়ের ভান করে
আবুল বলে, মানব জাতির মধ্যেও বেড়ালের মতো নোলামি আছে। আমাদের এই সরকার বাড়িতেই রহিমা নামের একটা মেয়ে থাকে। সে বিবাহিতা, কিন্তু রোজ রাতে এর-ওর ডাক শুনে পাটক্ষেতে অভিসারে যায়। রহিমার স্বামী তমিজ যখন বাড়িতে থাকে না, বিভিন্নসব পুরুষের সাথে রহিমা রঙ্গলিলা করে।
সাদিয়া হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।
অন্যদিকে বাসরঘরের বাইরে যারা চোখ/কান পেতে ছিল, তাদের মধ্যে রহিমা ছিল, তার স্বামীও ছিল…
হুট করেই বাহির থেকে একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ ভেসে আসল আবুলের কানে।
রহিমা “ও-বাবা-গো,মা-গো” বলে গুঙিয়ে উঠতে যায়, তার আগেই সেলিম ওর মুখ চেপে ধরে বাশঁবনের দিকে সরে যায়।
রহিমার আজ খবর আছে!
এইসব আওয়াজ অবশ্যি বাসর ঘরে আবুল ছাড়া আর কোন কানে পৌছালো না!
আবুল বলে, শুনছো
– জ্বি
– একটা জরুরি কথা বলি, মন দিয়ে শুন।
– বলুন
– আমাদের সবার ভেতর নোলা বেড়ালের মতো একটা মন্দ বেড়াল বাস করে।
আজ রাতে এই জীবন্ত বেড়াল(cats) দুইটাকে আমরা মুক্ত করে দেব। বিনিময়ে স্রষ্টার কাছে দোয়া করব। আমাদের বুকের ভেতর যে শয়তান বেড়ালগুলি রয়েছে, তার কবল থেকে দয়াময় স্রষ্টা যেন আমাদের মুক্তি দান করেন।
সাদিয়া নিজেও টের পায় নি, কখন ওর চোখ থেকে সকরুণ জলধারা নেমে এসেছে। এই সহজ সরল মানুষটাকে তার পছন্দ হয়েছে। খুব পছন্দ হয়েছে!
আবুলের কথা অবশ্য তখনও শেষ হয় নি। ঘরের বাতায় গেঁথে রাখা শান দেয়া চকচকে ছুরির দিকে তাকিয়ে বলে, “যদি কখনো তোমার মনে হয়, আমার ভেতরের নোলা বেড়াল জেগে উঠেছে
যদি দেখ, অন্যকোন মেয়ের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিবের জল ঝড়াচ্ছি;তখন এই ছুরিটা ঘুমের ভেতরেই আমার বুকে বসিয়ে দিও।আমি তোমাকে অগ্রিম অনুমতি দিয়ে রাখলাম।“
সাদিয়া নির্বাক!
আবুল বলে,”আর যদি কোনদিন তোমার মধ্যে এই আচরন দেখি?
সাদিয়া বলে,”ok, Done!”
আবুল অবাক দৃষ্টিতে জানতে চায়, “ওকে ডান- মানে কি?”
সাদিয়া বলে, “এর মানে হচ্ছে, আমাদের বুকের ভেতর যদি কখনো নোলা বেড়াল উৎপাত শুরু করি তাহলে আমরা তাকে খুন করে ফেলব।“
যদি আমার ভিতর বেড়াল(cats) ঢুকে, খুন করবেন আপনি। আর যদি আপনার ভেতর ঢুকে, খুন করব আমি!”
আবুল হাসিমুখে বলে,”ওকে ডান!”
সাদিয়া জলভেজা চোখে আবুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে দয়াময় স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে,”নোলা বিড়ালের উৎপাত থেকে আমাকের হেফাজত করুন, প্রভু!
আমাদের বেঁচে থাকার আগামি দিনগুলিকে আরও বেশি মঙ্গলময় করুন। আরও বেশি পূণ্যময়!”
cats বা বেড়াল কেন সকল মুসলমানের পোষা উচিৎ সে সম্পর্কে জানতে এই ব্লগ পড়ুন।
গল্পটি ভাললাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।