ছেলেদের জীবন আসলে বড়ই প্যাথেটিক।
কিছুক্ষণ আগের কথা। আমার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ুয়া ভাগ্নে মন খারাপ করে বসে আছে৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে?’
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘আম্মু বকা দিছে!’
‘কেন?’
‘আজ কোচিং এ যাইনি তাই!’
‘যাসনি কেন?’
‘আজ কোচিং নাই!’
‘তাহলে বকা দিলো কেন?’
‘তামান্নার জন্য!’
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ক্লিয়ার হলাম বিষয়টা। আমার ভাগ্নের ক্লাসমেট পাশের বাসার তামান্না নাকি তার আম্মুকে বলেছে, আজ কোচিং এ স্পেশাল পরীক্ষা আছে।
বলে সে কোচিং এ গেছে৷ অথচ একই কোচিং এ পড়ুয়া আমার ভাগ্নে যায়নি। এটা নিয়েই আপু ক্ষেপে আছে।
আমার ভাগ্নে নাকি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলো, কোচিং থেকে পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু বলেনি তাকে।
তামান্নার মা নাকি কটাক্ষ করে বলেছে, ‘তা তো বলবেই না৷ এই পরীক্ষা শুধু স্পেশাল অল্প কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর জন্য৷ যারা টানা তিনমাস টপ রেজাল্ট করেছে শুধু তারাই দিবে। পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড হলে গিফট তো আছেই। সাথে পিকনিকও নাকি হচ্ছে। রাতে একবারে খাওয়াদাওয়া করে আসবে তামান্না কোচিং থেকে!’
আপু দেখলাম ভাগ্নেকে শুনায়ে জোরে জোরে বলতেছে, ‘মানুষের ছেলেমেয়ে এগিয়ে যাবে। আর তুই বসে থাক ঘরে৷ লেখাপড়া তো করবি না৷ সবার পেছনে পড়ে থাকবি৷ তামান্নার কি এমন আছে যা তোর নেই। বল।’
আমি মনে মনে বললাম, ‘তামান্নার জীবনে প্রেম আছে যা ওর নেই!’
আপু খেতে বসেও ভাগ্নেকে কথা শোনালো।
‘মানুষের মেয়ে কোচিং এর টাকায় লাঞ্চ ডিনার করে। আর তুই বাপের হোটেলে বসে বসে খা। তোর দিয়ে কিছুই হবে না!’
এবার ভাবলাম, আমার কিছু একটা করা উচিত। ভাগ্নেকে বললাম, ‘মন খারাপ?’
‘হু!’
‘মন খারাপ করিস না। আজ কি দিবস জানিস?’
‘হ্যা জানি!’
‘কি দিবস?’
‘ভালোবাসা দিবস।’
‘তামান্না কোচিং এর নাম করে কোথায় যাবে জানিস?’
‘কোথায়!’
‘বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ডেটিং এ!’
‘কি বলো! আসলেই? ওর আম্মুকে বলে আসি দাঁড়াও।’
‘আরে নাহ, থাক। কি দরকার।’ আমি ওকে থামালাম। ‘যে ডেটিং এ গেছে যাক। আমাদের কি!’
‘বলব না?’
‘দরকার নেই।’
‘শুধু শুধু বকা খাচ্ছি!’
‘মন খারাপ করিস না। আমাদের ছেলেদের জীবনই এমন! থাক, আসি আমি।’
‘কই যাচ্ছ?’
‘কাজ আছে!’
আমি দ্রুত বের হয়ে গেলাম। তামান্না আবার আমার জন্য কলেজের পেছনের গলিতে অপেক্ষা করছে৷ ওকে নিয়ে ঘুরতে যাব। আমাদের সাত মাসের প্রেম। ওক আজ গিফট কিনে দিতে হবে, লাঞ্চ আর ডিনার করাতে হবে৷ অথচ এগুলার ক্রেডিট সব যাবে কোচিং সেন্টারের নামে। আফসোস।
ছেলেদের জীবন আসলেই অনেক প্যাথেটিক৷