#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_২২
গাড়ির মধ্যে নীরবতা। কেবল সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসে মিশে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা চিত্রার দৃষ্টিতে একঝাঁক নিরব অভিমান জমে আছে। ফারাজ তার পাশেই। সিগারেট ঠোঁটে রেখে নিস্পৃহ ভঙ্গিতে সে চিত্রাকে বলল,
“আহারে! তোমার সেই না হওয়া কালো বুড়োর শোকে পাথর হয়ে গেছো দেখি। চু চেড।”
চিত্রা এক ঝটকায় তার দিকে তাকাল। চোখে স্পষ্ট রাগ। “এসব বলে মন ভরতে পারবেন না দারাজ এলাচী। “
“এই বউ নাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে না বলে দিচ্ছি। মনের পাওয়ার পয়েন্টে গিয়ে লাগে কিন্তু। “
চেত্রা মুখ ভেংচি কাটে। ফারাজ নির্বিকার। ধোঁয়া উড়িয়ে গুনগুন করে সে গান ধরে,
“আদরে সোহাগে মনটা ভরে দিবো রে
ভালোবাসো যদি আমারে।”
গান থামিয়ে জলদি জিহ্বা কাটে ফারাজ।
“বাল সোহাইগার জ্বালায় গান গেয়েও শান্তি নাই। ম্যাংগোর নাতি সব খানে টপকায়।”
চিত্রার বিরক্তি দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সে ধীর গলায় বলল,
“ভালো মানুষ হতে এত কিসের জ্বালা? খোঁচাখোচি না করলে পেটের ভাত হজম হয় না?”
ফারাজ কাঁধ ঝাঁকাল। চিত্রার কথাগুলো তার কাছে একদম অর্থহীন। “ভালো মানুষ তো ছোটলোকরা হয়। দেশে ভালো মানুষের দাম আছে? তুমি নিজে ভালোমানুষ বলো তো? তোমার না হওয়া কাইল্লা পাঠার মতো দেখতে বুড়োটা মরিচ কিনতে যে চলে গেল, কই এক ফোঁটা জলও তো তোমার চোখ দিয়ে বেরুলো না? আমি তো আরো অভ্রকে দিয়ে নতুন একবক্স টিস্যু কিনে আনিয়েছিলাম। ধ্যাত টাকাটাই গিয়া পানি মে।”
চিত্রা তীব্র চোখে তাকাল ফারাজের দিকে,” ফারাজ এলাহী যে এত হিসেবি মানুষ জানতাম না তো? হৃদয় এত ছোট?”
ফারাজ আবারো হেসে বলল, “হৃদয় আমার বিশাল বউ। তবে তোমার দেখার দৃষ্টি ছোট। তাই বিশালতা দেখতে পাও না। তুমি বউ ছোটোলোকি কারবার করো। দিস ইজ নট ফেয়ার।”
চিত্রা ঠোঁট কামড়ে রাগ সামলানোর চেষ্টা করল,” আচ্ছা এত যে মানুষকে কিরমির কথা বলেন আমার তো মনে হয় একগাদা আপনার পেছনেও আছে।”
ফারাজ মিটমিট করে হাসল। ” শুধু পেছনের কথা বলছো কেন? সামনেও দেখার মতো অনেক কিছুই আছে।”
চিত্রা সামনের সিটে বসে থাকা অভ্রর দিকে তাকাল। অভ্র কোনো ভ্রুক্ষেপ করল না। বরং হাত নাড়িয়ে বলল,
“আমি কানে শুনতে পাই না ভাবী। কিছু শুনি নি। আপনারা চালিয়ে যান।”
চিত্রার মেজাজ চড়ে গেল। এই লোককে ভালোবাসবে কীভাবে? এই লোকের মাথায় আসলেই গন্ডগোল আছে। সে রাগে নিজেকে ফারাজের থেকে আরও দূরে সরিয়ে জানালার দিকে গা ঘেঁষে বসল। ফারাজ আলতো করে চিত্রার ঘাড়ে হাত রাখল।
“এভাবে দূরে গিয়ে কি আমাকে নিজের কাছে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছো? সাবধান বউ ভালো হবে না কিন্তু!”
চিত্রা মুখ চেপে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল।
ফারাজ তখন চোখ মেরে বলল,
“আরে বলডি! কাছে আয়। আমি কাছে আসলে কিন্তু আজ গাড়িতেই কাঁদতে হবে। এই কালু কুদ্দুসের বাপ! টিস্যুটা পেছনে পাস করোতো।”
ফারাজ চিত্রার কাছে এসে মিটিমিটি হেসে বলে,” কাইল্লা বুড়োকে জম্পেশ লেগেছে নাকি? মোস্তাক-তিশাকে হারিয়ে বাংলাদেশের সেরা জুটি হয়ে যেতে কিন্তু!”
ফারাজের খোঁচা মারা কথা শুনতেই চিত্রা এবার সত্যি সত্যি কান্না করে ফেলে রাগে। ফারাজ দেখে বিপাকে পড়ে যায়। চেঁচিয়ে দূরে সরে গিয়ে বলে,”বলেছিলাম না আমি কাছে আসলেই কাঁদতে হবে? কিরে অভ্র তোর ভাবী তো চোখের জলে আমাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। টিস্যুটা কি পেছনে পাস করবি না?”
–
নতুন ছেলে-পেলে কিছু লাগবে। যাদের কাজ হবে ভোরে ট্রলার থেকে মাছ তোলা। এসব কাজের জন্য অল্পবয়সী ছেলে হলেই চলবে। কাজ তেমন একটা কঠিন নয়। এই তো ট্রলার থেকে দুই হাতে মাছ ছুড়ে ফেলবে পারের চাতালে। রাজন, রোশান সকাল সকালই আজ আড়তেই চলে এসেছে। তাদের দেখতে আসা লোকের অভাব নেই। এর একটা কারন আছে। এলাহী বাড়ির মানুষ দয়াশীল। অত্যান্ত ভালো মনের মানুষ। তাদের আগে-পিছে থেকেও মানুষ উপরে উঠে গিয়েছে। যদিও রাজন কথায় কথায় একটু রেগে যায়৷ অশ্রাব্য ভাষায় বাপ-মা তুলে গালাগাল দেয় তবুও লোকের আপত্তি নেই। মন মেজাজ বেশি খারাপ থাকলে তো কখনো কখনো সটাসট চড়থাপ্পড়ও বসিয়ে দেয়। তবুও মানুষ তাকে ভালোবাসে। ওই যে টাকা পায় তো।
মাছের আড়তটা আজকে জমজমাট। সদ্য ধরা মাছের কাঁচা গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে আছে। বিশাল এক চাতাল, চারপাশে পানিতে ভিজে থাকা কাঠের পাটাতন। যেখানে সারি সারি বাঁশের খাঁচা আর প্লাস্টিকের বাক্সে মাছ রাখা হয়। ট্রলারগুলো নদীর ঘোলা জলে দুলতে দুলতে এসে ভিড়ছে পাড়ে। মাঝি-মাল্লারা কোমর পর্যন্ত পানি ভেঙে মাছ নামাচ্ছেন। আড়তের এক পাশে বসে আছেন পাইকাররা। মোটা গামছা কাঁধে ফেলে, হাতে লম্বা কাঠি নিয়ে মাছ দেখছেন। কেউ কেউ দরদাম করছে, কেউ বড় বড় ঝুড়িতে বরফের চাঁইয়ের নিচে মাছ সাজিয়ে নিচ্ছে। ছেলেপেলেরা চোখের পলকে ট্রলার থেকে মাছ তুলছে, মাটিতে সজোরে ছুঁড়ে দিচ্ছে। একটা চিৎকার ওঠে, “এই যে, পাঙ্গাশ মাছগুলো সরাও!” আরেকজন বলে ওঠে, “বড় মাছটা দে, ওটা আলাদা কর।” লোকজন ব্যস্ত, কেউ টাকা গুনছে, কেউ হিসেব লিখছে খসখসে খাতায়। হালকা আলোয় মাছের উজ্জ্বল আঁশ চিকচিক করে, লালচে র*ক্ত আর বরফ গলে গলে চারপাশ ভিজে যাচ্ছে।
আড়তের হিসাব-নিকাশের দায়িত্ব মুসফিক রহমানের। এখানেই তার কর্মস্থল। প্রতিদিনের মতো আজও ব্যস্ত সে। রাজন এসে বসতেই মুসফিক এক কাপ চায়ের জন্য নির্দেশ দিলেন।
“চা খামু না।” রাজন নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল। “কাম কেমন চলতাছে?”
“মোটামুটি,” মুসফিক সংক্ষেপে জবাব দিল।
“মোটামুটি ক্যান? মানুষ মাছ খাওয়া ছাইড়া দিছে নাকি?” রাজনের কণ্ঠে কৌতূহল।
“না ভাই, তেমন কিছু না। মাছের বাজার তো এমনই। ভালো-মন্দ মিলিয়াই চলে। সব মিলায়ে আলহামদুলিল্লাহ। তবে ভাই, পদ্মার ইলিশ আইছে!”
রাজন খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, “বড় দশটা ইলিশ বাড়িতে পাঠাইয়া দিস।”
“আইচ্ছা, ভাই।”
মুসফিক একটু ইতস্তত করে থামল, তারপর নিচু স্বরে বলল, “ভাই…”
রাজন হাত তুলল। “মিজান সাহেবের খবর জানি। তোর বলা লাগবে না। আর কে তারে টপকাইছে তাও জানি। তুই তোর কাজে যা। খাতায় যেন হিসাবের গড়মিল না হয়।”
মুসফিক মাথা নাড়িয়ে চুপ করে গেল। রাজনের চোখেমুখে কোনো ভাবান্তর নেই। কারন এই শহরের উত্থান-পতন, হার-জিত সবই তার জানা, সবই তার হাতের মুঠোয়। তাই এসব নিয়ে সে চিন্তা করে না। কিন্তু মিজানকে মারা ঠিক হয় নি। তার ঘাটতি পূরন হবার নয়।
–
বিছানায় শুয়ে পায়ের ওপর পা তুলে ফোন ঘাঁটছে নিহান। ফারিয়া আজ একটা সুতীর শাড়ি পরেছে। উজ্জ্বল গড়নের অধিকারীদের একটা সুবিধা আছে। যেই রঙই গায়ে জোড়াক না কেন ফুটে উঠে।
“এই যে পেয়ারামাখা খাও।”
পেয়ারার প্লেটটা ফারিয়া নিহানের দিকে এগিয়ে দিতেই নিহান পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকায় ফারিয়ার চোখের দিকে। উঠে বসে। পেয়ারার প্লেটটা হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর রেখে উঠে দাঁড়ায়। ফারিয়াকে একবার ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালো করে দেখে এগিয়ে আসে তার দিকে। ফারিয়া একটু আগেই গোসল সেরে এসেছে। ভেজা গামছাটা খোঁপার মতো পেঁচিয়ে চুলে জড়ানো। তার গা থেকে স্নানের মৃদু সৌরভ ছড়াচ্ছে। নিহান ফারিয়ার কাছে এগিয়ে আসে। একদম কাছে এসে মুখ থুবড়ে পড়ে ফারিয়ার খোলা ঘাড়ের ওপর। উষ্ণ ঠোঁট ছুঁয়ে যায় সেখানে। তারপর আঙুল চালিয়ে খুলে ফেলে খোঁপা বাঁধা গামছাটা। ভেজা চুলের মধ্যে আঙুল বুলিয়ে দেয়। নিজের ওজন খানিকটা ফারিয়ার গায়ে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“ফারু তোমাকে দেখলে আমার ভেতরটা এমন অস্থির হয় কেনো?মনে হয় এই যে প্রথম বার দেখলাম। প্রথম বার ছুঁলাম।”
“কারন তুমি যে আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসো।”
“কিন্তু তোমার মতো করে এত গুছিয়ে তো আর বাসতে জানি না।”
” তবুও তোমার অগোছালো ভালোবাসাগুলোই আমায় তৃপ্তি দেয়।”
নিহানের স্পর্শ ধীরে ধীরে গভীর থেকে গভীর হয়। তার আঙুল শরীর বুলাতে বুলাতে রহস্যের জালে হারিয়ে যায়। এই রহস্য ভালোবাসার। এই রহস্য উন্মোচন করতে নেই। করাও যায় না।
“কি..কর..ছেন কি?”
“হিশ!!!!”
–
ফারাজ চিত্রাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেই নিরু ও রুমানা ঘর থেকে বেরিয়ে এল। মোহনা ও নদীও নিচে নেমে এল তাদের দেখতে। চিত্রাকে দেখে নদী খুশি হলেও অন্যদের চোখে ঠিক কেমন অভিব্যক্তি তা বোঝা গেল না। তবে মিতালির মুখে খাঁটি আনন্দের ছাপ স্পষ্ট ছিল। ফারাজ তখনো বাইরে। চিত্রা অপেক্ষা না করেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। হলরুমে তাকে ঘিরে ধরল সবাই। এতদিন পর ফিরে আসায় কেউ আন্তরিক উচ্ছ্বাস দেখাল। কেউবা ভেতরে ভেতরে বিরক্তি চেপে রাখল।
“তোমাকে অনেক মিস করেছি,” নদী আন্তরিক কণ্ঠে বলল।
চিত্রা হাসল। “আমিও ভাবী।”
“দাওয়াত কেমন খেলে?”
চিত্রা উত্তর দিতে যাবে, ঠিক তখনই নিরু মাঝখান থেকে বলে উঠল, “যেমন খাওয়ার, তেমনই খেয়েছে হয়তো!”
তার কথায় এক মুহূর্ত নীরবতা নেমে এলো। নদী কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই রুমানা কড়া কণ্ঠে নিরুকে থামিয়ে দিল।
“নিরু, কার সঙ্গে কেমন কইরা কথা বলতে হয়, সেইটা মনে হয় এখনো ঠিকমতো শিখস নাই!”
নিরু একটু কুণ্ঠিত স্বরে বলল, “কিন্তু বড়মা…”
চিত্রা বিষয়টা আরও বড় হওয়ার আগেই সামলে নিয়ে হাসিমুখে বলল, “না না, দাওয়াত ভালোই ছিল। বাড়িতে গিয়ে বেশ ভালো লেগেছে।”
চিত্রা এক নজর মোহনার দিকে তাকায়। নীলচে ফিনফিনে শাড়ির আঁচলে মোড়ানো মোহনার শরীর, শাড়ির ফাঁক গলে তার ফর্সা কোমর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চিত্রা তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নেয়। তবে মোহনার চোখে সে অবশ্যই ধরা পড়ে। মোহনা তার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
“বাহ! দিন দিন তো আরও সুন্দর হয়ে যাচ্ছো দেখি! সৌন্দর্যের রহস্য কী?”
চিত্রা লজ্জায় পড়ে যায়। কী বলবে বুঝতে পারে না। সে মুখ খোলার আগেই পেছন থেকে ফারাজের কণ্ঠ ভেসে আসল,
“রাতে ফারাজ স্পেশাল পিরিতের তেল মাখে যে, তাই! এটাই বিবিজানের সৌন্দর্যের রহস্য। দয়াকরে তেল চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ভাবী। তেলের দাম কিন্তু কড়া।”
সবাই একসঙ্গে ফারাজের দিকে তাকায়। সকলে লজ্জায় পরে যায়। চিত্রার এবার লজ্জার বেগ বৃদ্ধি পায়। তবে সে কি করে বলবে সবাইকে? তার লটপটি মন্ত্র পড়া ফাটকাবাজ স্বামী দামি সিরামটির নাম বলতে ওই ভুংভাং রেখেছে। তার ওপর দেখো কত বড় কথা? ওইসব মেখে নাকি সুন্দর হয়েছে? কানা লোক কি দেখে নি চিত্রা আগে থেকেই সুন্দর? আর ওই সিরাম মাত্র একরাতেই লাগিয়েছিল? ঢং যত্তসব! ফারাজের বুকের কাছে দুটো বোতাম খোলা। সাদা শার্ট পড়হিত। তার লম্বা, চওড়া, আকর্ষণীয় দৈহিক গড়ন। চোখ ফেরানো মুশকিল। এমন পুরুষ নাকি বিয়ে করেছে হাঁটুর কাছে পড়ে থাকা এক বাচ্চা মেয়েকে! মোহনা ভেতর ভেতর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রুমানা বেগম ছেলের এই বেয়াড়া আচরণে বিব্রত বোধ করেন। জলদি সেখান থেকে সরে যান। এই ছেলে দু’দিন পর নিজে বাচ্চার বাবা হবে অথচ এখনও এমন। আল্লাহ জানে ভবিষ্যতে এর কী হবে! না, এ ছেলে আর বদলাবে না…
–
ফারাজের মাথা ভার হয়ে আছে। সারা সন্ধ্যা অফিসের কাজে ডুবে থাকার পর অবশেষে বাড়ি ফিরেছে সে। ক্লান্ত দেহ নিয়ে দরজার চৌকাঠ পেরিয়ে আসতেই চিত্রা মিতালিকে ফারাজের জন্য খাবার ও একগ্লাস লেবুর শরবত রুমে দিয়ে যেতে বলল। তবে মিতালীর এখনো কোনো খোঁজ নেই।
ফারাজ কোনো বিরতি না নিয়ে সরাসরি গোসল সেরে সুলেমান এলাহীর ঘরে চলে গেল। বাবার সঙ্গে তার কথা হয় কম। প্রয়োজনের বাইরে কোনো আলোচনাতেই সে স্বচ্ছন্দ নয়। এদিকে চিত্রা রুম থেকে বেরিয়ে একবার উপর থেকে অন্দরমহলের দিকে তাকাল। নিচতলায় শ্বশুর-শাশুড়ির ঘর। আচমকাই নিচ থেকে ডাকে উঠল কেউ,
“আপা, নিচে নামেন। খালু আপনাকে ঘরে ডাকছে।”
মিতালির গলা।
“আসছি।”
সুলেমান এলাহীর সামনে দাঁড়ালে চিত্রার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। এক ধরনের সংকোচ, আবার এক ধরনের আশ্রয়ের অনুভূতিও। বাবা-মা না থাকায় এই পরিবারই তার সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে। রুমানা প্রায়ই তার হয়ে কথা বলে। চিত্রার মনে হয়, যদি তার নিজের মা বেঁচে থাকতেন, তিনিও হয়তো এমনই করতেন ? যেমন করে সুলেমান তাকে “আম্মাজান” বলে ডাকেন, হয়তো বাবাও বেঁচে থাকলে ঠিক এমন করেই ডাকতেন?
চিত্রা মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিচের দিকে চেয়ে সিড়ি বেয়ে নামে। সিঁড়ি বেয়ে নামতে ভালোই লাগে। মজা পায় বেশ। তবে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠার সময় ফারাজের এলাহীর কথা মনে পড়ে। কোলে তুলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যাওয়ার জন্য হলেও প্রতিটি মেয়ের একটা করে দারাজ ভাই থাকা দরকার।
হঠাৎ করে, চিত্রার সামনে এসে দাঁড়াল কেউ। তাল সামলাতে না পেরে চিত্রা প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তখনই তাড়াহুড়োয় একজোড়া শক্ত হাত তাকে ধরে ফেলল। ভুলবশত লোকটার নখ চিত্রার বাহুর মধ্যে গেঁথে গেল। চিত্রার মুখ থেকে একটা ভোঁতা শব্দ বেরিয়ে এলো। তবে দ্রুত সে নিজেকে সামলে সামনে তাকাল। একবার নিজের বাহুর দিকেও চোখ বুলিয়ে নিল। লোকটি তার বাহুর দিকে তাকিয়ে উদ্বেগপূর্ণ সুরে বলল, “দেখি, লেগেছে তোমার? সরি, কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না আমার। প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না।”
চিত্রা জোহানের দিকে তাকালো। কিছু বলার আগে নিজেকে শান্ত করে মনকে প্রশ্ন করল, “সামান্যই তো লেগেছে। ইচ্ছে করে তো দেয়নি সে। তবুও তার চোখজুড়ে সৃষ্টি হওয়া এই ব্যাকুলতার কারণ কি?”
চলবে?
(কালকে সারাদিন বাসায় থাকবো না। তাই গল্প আসবে না। কারো বাসায় বেড়াতে গিয়ে যদি ফোনে সারাদিন গল্প লেখি তাহলে নিজের কাছেও খারাপ দেখা যায়।)