#ইশরাত_জাহান_জেরিন
#পর্ব_২৩
“চিত্রাঙ্গনা!”
সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে ফারাজ। হাত দুটো বুকের কাছে গুঁজে রেখেছে, কপালে গভীর ভাঁজ। চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। একবার জোহানের দিকে তাকাল, তারপর আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিল। জোহান কৌশলে হাসি বুলিয়ে বিদায় নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেল। চিত্রা নিচে নামতেই ফারাজ তার হাত আঁকড়ে ধরল। কণ্ঠে স্পষ্ট হতাশা,
“ঘোমটা কই?”
চিত্রা কিছু না বলে চুপচাপ আবার বড় করে ঘোমটা টেনে নিল। তারপর ফারাজের হাত ধরে সুলেমান এলাহীর কক্ষে প্রবেশ করল। রুমানার সামনে পান সাজানো রয়েছে। ফারাজ চিত্রাকে নিয়ে ঘরে ঢুকতেই মিতালি ছুটে এল। উজ্জ্বল মুখে হাতে এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিয়ে বলল,
“খালু, লেবুর শরবত!” ফারাজ গ্লাসটা হাতে নিতেই মিতালির মুখে আফসোসের সুর,
“খালু, বাজারে লেবুর যা দাম! মানুষ খাইবোডা কী?”
ফারাজ হেসে বলল, “যেভাবে তুই আমার মাথা খাচ্ছিস, মানুষও তেমনি কারও না কারও মাথা খাবে। আর যদি লেবুর জন্য এতই আফসোস হয়, তাহলে আজ থেকে ভিম খাবি! শুনেছি, ওতে নাকি ১০০ লেবুর শক্তি থাকে।”
মিতালী বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
“হাছাই”
ফারাজ ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে জবাব দিল,
“না, মিছাই!”
রুমানা চিত্রাকে পাশে বসিয়ে পান মুখে দিয়ে প্রশ্ন করলেন, “নাতি-নাতনির মুখ কবে দেখমু?”
চিত্রা এই প্রশ্নে বিব্রত বোধ করে। কী উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারে না। সুলেমান এলাহীও তার জবাবের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছেন। তবে চিত্রাকে কিছু বলতে হলো না। ফারাজ পাশ থেকে বলে উঠল, “এটা পূর্ণদৈঘ্য বাংলা ছায়াছবি পাও নি আম্মা। যে পায়ের সঙ্গে পা লাগলেই ছাদ ভেঙে গেডাগেডি টপকাবে। সময় হোক। ধর্য্য ধরো। ধর্য্যের ফল একেবারে তেতো ইয়ে মানে মিষ্টি।”
রুমানা একেবারে চুপ হয়ে গেলেন। পরিস্থিতি হালকা করতে ফারাজ আবার বলল, “চিন্তা নেই, আম্মা। ভালো ফলই পাবে। নিশ্চিত থাকো।”
চিত্রা মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করল। এই লোকের সঙ্গে আসা উচিত হয়নি। সে উঠে ফারাজের পাশে দাঁড়ায়। তবে তাদের মধ্যে এখনও দূরত্ব রয়ে গেছে। ফারাজ চিত্রাকে কাছে টানতে তার বাহুতে হাত রাখে। তখনই চিত্রার মুখ থেকে ব্যথায় মৃদু ‘আহ্’ শব্দ বেরিয়ে আসে। ফারাজ বাহুর দিকে তাকানোর আগেই চিত্রা আঁচল ফেলে জায়গাটা ঢেকে দেয়। ফারাজ তা উপেক্ষা করে বলে, “আমার মাথা ধরেছে। ঘুমাতে গেলাম।”
সুলেমান এলাহী বললেন, “চিত্রা, আরেকটু থাক।”
ফারাজ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “বউ কার?”
“তোর।”
“তাহলে আমার সঙ্গেই যাবে। তুমি নিজেরটা নিয়ে থাকো।”
ফারাজ চিত্রার হাত শক্ত করে ধরে বলে, “অনেকদিন ধরে ব্যায়াম করি না। আজকে করতে হবে রে।”
–
রাত নেমেছে নদীর ঘাটে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। শুধু মাঝে মাঝে ঢেউয়ের মৃদু শব্দ ভেসে আসছে। আকাশে অগুনতি তারা জ্বলজ্বল করছে। মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে কোনো নাম না-জানা রাতপাখির ডাক। দূরে, বেঁধেদের ঝুপড়িগুলোতে তেলের কুপির মৃদু আলো দুলছে বাতাসে। নদীর উপর সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে এক অদ্ভুত রহস্যময় আবহ তৈরি করেছে।
সোহান বসে আছে ঘাটের ধারে। গা এলিয়ে দিয়েছে একটা কাঠের নৌকার গায়ে। চোখে তার অনির্বচনীয়তা। হয়তো সে কিছু খুঁজছে, অথচ কি খুজছে তা নিজেও জানে না। রাতের নীরবতায় কখনো কখনো ঝুপড়ির দিক থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসছে। বেঁধেদের কেউ হয়তো কোনো পুরোনো গল্প বলছে, কেউ গানের সুর তুলছে। একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে থামে সোহানের সামনে। ছেলেটা বেঁধেদেরই এক সন্তান, গায়ে ছেঁড়া পাজামা, চোখে সরল কৌতূহল।
“তুমি এইখানে একা বইসা আছো কেন?”
সোহান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। বলল,
” জানি না। হয়তো নদী আমারে ডাকতাছে।”
ছেলেটা বোঝে না, কিন্তু মাথা নাড়িয়ে আবার দৌড়ে চলে যায়। সোহান এ পাড়ার কেউ নয়। তবু তার কথায় এদের জীবন চলে। বিনা কারণেই সে এই বেঁধেদের দায়িত্ব নিয়েছে। কারও ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠায়, কারও অভাবে পাশে দাঁড়ায়, কারও বিপদে দেয় মাথার ছায়া। কেন এসব করে সে নিজেও জানে না। হয়তো পাপের বোঝা কমানোর চেষ্টা। হয়তো নিজের ভেতরের অপরাধবোধকে চাপা দেওয়ার প্রয়াস। কেউ তাকে প্রশ্ন করে না, বেঁধেরা প্রশ্ন করা শেখেনি। এদের জীবন চলে নদীর স্রোতের মতো। যেমন আসে, তেমনই বয়ে যায়। তবু সোহানের মধ্যে এক অদ্ভুত টান অনুভব করে তারা।
“ভাইজান আম্মায় আজকে কচুর মুখি দিয়া ইলিশ মাছের মাথা,লেজ রানছে। ওই যে ওইদিন আপনে যেই মাছটা পাঠাইছিলেন না? ওইটার মাথা দিয়াই রানছে। কয়ডা খাইয়াজান। মেলাদিন হইল আমাগো লগে খান না।”
আমেনার বয়স ষোলো। এই পাড়াতেই থাকে। আমেনার বাসায় অসুস্থ মা ছাড়া কেও নেই। সোহান যেদিন আমেনার কথা শুনেছিল সেদিন বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল তার দিকে। পরক্ষণেই আমেনাকে পড়ালেখা করাবে বলে সে সিদ্ধান্ত নেয়। আমেনার পরিবারের দায়িত্ব, তার মায়ের চিকিৎসার খরচ সোহান সেই দেয়। একবার আমেনা সোহানকে বলেছিল, “আমার তো ভাই নাই। তাই এত দুঃখ।”
সেদিন থেকেই সোহান আমেনার বড় ভাই হয়ে পাশে আছে।
“রাইতে খাইয়া যামু নি। আম্মার কাছে যাও। উনারে একা রাইখো না।”
আমেনা “আচ্ছা।” বইলা নৌকার দিকে পা বাড়ায়। সিফাত সোহানের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। আমেনা চলে যেতেই সে বলল,
“ভাই, মিজান সাহেবরে উপরে পাঠাইয়া দিলেন, তাও আবার লা*শ ওইখানে ফালাইছেন! এসব নিয়া তদন্ত হইবো, সেইটা তো জানেন, তাই না?”
“আমার কোনো চিন্তা নাই। মাঝে মাঝে একটু বিনোদনের প্রয়োজন আছে। ফারাজ লা*শ দেখতে অবশ্যই আইছে তাই না?
“হ। মাগার মিজান সাহেব কিন্তু অনেক কাজের মানুষ আছিল,” চিন্তিত কণ্ঠে বলল সিফাত।
“একজন মরলে হাজারজন আসে। আর ওই বুড়ার তো এমনিতেই বয়স হইয়া গেছিল। আমি না মারলেও মরতোই। কেবল প্রশ্ন হইলো, কার হাতে মরতো?”
“আর কার হাতে? ফারাজ এলাহীর হাতে।” এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল সিফাত। তারপর একটু থেমে যোগ করল, “তবে আমার কেমন জানি অস্বস্তি লাগতাছে। উনার মতো মানুষ একটা মাইয়ার জন্য বিদেশ থাইকা চইলা আসতে পারে?”
“জানি না তবে এইডা জানি কিছুতো একটা ওই মাইয়ার মধ্যে আছে। এখন তো মিসেস এলাহীর সঙ্গে আমার দেখা করবার জন্যে অন্তর ছটফট করতাছেরে। ডিলের ব্যাথা বাড়তাছে সিফাইততা।”
–
বাতাসের দাপটে বারান্দার সাদা পর্দাটা বেপরোয়া নর্তকীর মতো ছটফট করছে। বারবার আঘাত করে যাচ্ছে লোহার রেলিংয়ে। জানালার আধখোলা পাল্লাটা কাঁপতে কাঁপতেঅদ্ভুত ছন্দে ঠোকাঠুকি করছে কাঠের ফ্রেমের সঙ্গে। যেন কারও দমবন্ধ করা আকুল আবেদন, খোলা রাখো, বন্ধ করো, আবার খোলা রাখো!
দূর আকাশের কালো মেঘগুলো একত্র হয়ে ভারী হয়ে উঠেছে। বাতাসের ঘূর্ণি ধুলো উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, শুকনো পাতাগুলো মাটির উপর নাচতে নাচতে ছুটে যাচ্ছে দূরে। গাছের পাতাগুলো একসঙ্গে ঝাঁকুনি খাচ্ছে।
চিত্রা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকায়। অনুভব করে সেই আগত বিসর্জনের ছন্দ, বৃষ্টির প্রথম ফোঁটার প্রতীক্ষা। গুমোট আকাশ থেকে ভেজা গন্ধ ভেসে আসছে। আবারও জানালার দরজা প্রচণ্ড শব্দে বারি খায়, যেন শেষবারের মতো হুঁশিয়ারি দিচ্ছে, বৃষ্টি নামছে। আবার বৃষ্টি নামবে।
“মিতালি ভাত দিয়ে গিয়েছে। খাইয়ে দেব?”
ফারাজ কোনো জবাব দেয় না। মুখে বলেছে মাথা ধরেছে অথচ ল্যাপটপ কোলের ওপর নিয়ে একনাগাড়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আঙুলগুলো এক মুহূর্তের জন্যও থামছে না।
“জবাব দিচ্ছেন না কেন? উঠুন, আমি আগে মশারী টাঙাই।”
চিত্রা ফারাজের দিকে এগিয়ে আসতেই হঠাৎ বজ্রপাত হয়। সঙ্গে প্রবল দমকা হাওয়া। বাতাসের ঝাপটায় তার বাহুর ওপর থেকে আঁচল সরে যায়, কিন্তু চিত্রার সে দিকে খেয়াল নেই।
“বারান্দায় কাপড় আছে, ভিজে যাবে। একটু নিয়ে আসবেন? এই ভয়ানক আবহাওয়ায় ওখানে যেতে ইচ্ছে করছে না। এমনিতেও সেদিন দুটো লাশ পাওয়া গেছে।”
ফারাজের চোখ অনেক আগেই ল্যাপটপের পর্দা ছাড়িয়ে চিত্রার দিকে চলে গেছে। তবে তার দৃষ্টি পড়েছে অন্যখানে। চিত্রার ডান বাহুতে। ফর্সা, নরম চামড়ার ওপর নখের গভীর দাগ বসে আছে। কতটা শক্তি প্রয়োগ করলে এমন দাগ পড়ে? নখ গেঁথে গিয়ে র*ক্ত জমে ? ফারাজ শুষ্ক গলায় ঢোক গিলে বলল, “নিজের কাজ নিজে করো।”
চিত্রা থমকে যায়। ফারাজের এমন রুক্ষ স্বর সে আগে কখনো শোনেনি। ফারাজ তার সঙ্গে এমন করে কখনো কথা বলে না।
“দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও।”
চিত্রা চোখ সরু করে তাকায়। তারপর নিচু স্বরে বলে, “আপনি দেখছি বহুরূপী!”
ফারাজ ফাঁকা হেসে উঠে। “তুমিও বহুরূপী হয়ে দেখো। দেখবে, দুনিয়া তোমার কথায় নাচছে।”
“শখ নেই।”
“কিন্তু তুমি তো আগ থেকেই বহুরূপীই মিসেস ফারাজ এলাহী।”
চিত্রা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থেকে এক মুহূর্তও দেরি না করে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়। বারান্দায় পা রাখতেই বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা গায়ে এসে পড়ে। চিত্রার বৃষ্টি ভালো লাগে। রাতের বেলা বজ্রপাত তাকে শিহরিত করে, তবুও বৃষ্টির প্রতি তার আকর্ষণ অমলিন। বৃষ্টি দেখলেই ছুঁতে ইচ্ছে করে। রেলিংয়ের বাইরে হাত বাড়াতেই বর্ষার নরম স্পর্শ তার আঙুল ছুঁয়ে যায়। কিন্তু এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়ানো যাবে না। বারান্দার রশিতে টাঙানো কাপড় ভিজে যাবে, আর ভিজে যাবে সে নিজেও। হঠাৎ আকাশ বিদীর্ণ করে নেমে আসে বিজলির ঝলকানি। এক মুহূর্তের জন্য চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। আর সেই আলোয় তার দৃষ্টি আটকে যায় পুকুরটার দিকে। চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দুটো নিথর দেহ। জলকাদায় মাখামাখি, নিস্তব্ধ, শূন্য দৃষ্টিতে লাশ দুটো তাকিয়ে আছে তার দিকে। কি ভয়ানক ভ্রম!
চিত্রা প্রচণ্ড ভয়ে পেছনে সরে যায়, পিঠ গিয়ে ঠেকে প্রস্তরের মতো শক্ত একটি বুকে।
“এত ভয় কিসের?”
চিত্রা কোনো কথা না বলে ফারাজকে জড়িয়ে ধরে। চোখ-মুখ খিঁচে ফারাজকে আঁকড়ে ধরে। চিত্রার হাতের মুঠোয় ফারাজের সাদা শার্টের অংশ। পরক্ষণেই ছিটকে এক পা পিছয়। ফারাজ গম্ভীর। কথা না বলে চিত্রাকে টেনে সে বুকে জড়িয়ে নেয়। নেশালো গলায় গান ধরে,
“কাছে এলে যাও দূরে সরে
কতদিন রাখবে আর একা করে?
মনে..…টেনে নাও।”
বৃষ্টির ছিটকে আসা জলের পরিমান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। দু’টো দেহ আবারো ভিজে যায়। ঠান্ডায় চিত্রার ছোট্ট দেহ কাঁপছে। ফারাজের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে শক্ত করে চেপে ধরে চিত্রার ডান হাতের বাহু। ব্যাথায় আবারো মৃদু আর্তনাদ গলা থেকে বেড়িয়ে আসে চিত্রার। ফারাজ কথা না বলে ব্যথার জায়গায় ঠোঁট রাখে। তবে শীতল চুমুর মাধ্যমে পরশ ছোঁয়াতে নয় বরং হিংস্রতা নিয়ে সেখানে দাগ বসাতে। চিত্রার চোখে আপনাআপনি জল চলে আসে। তবুও সে প্রতিবাদ করে না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখের কোণে জমা জল ফারাজ দেখে নি,দেখবেও না। জল তো বৃষ্টির ফোঁটায় মিশে যাচ্ছে। বৃষ্টি চিত্রার চোখের জলকে আড়াল করে দিচ্ছে বার বার। ফারাজের হাত চিত্রার শাড়ি ভেদ করে কোমর ছুঁয়ে যায়। চিত্রা অনুভব করে ফারাজের নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে স্পর্শ করছে। তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে ওঠে। কিন্তু সে কোনো প্রতিবাদ করে না। ফারাজের হাত ধীরে ধীরে চিত্রার কোমর থেকে উপরে উঠে আসে। তার পিঠ বেয়ে ঘাড়ের কাছে পৌঁছায়। চিত্রা চোখ বন্ধ করে ফারাজের স্পর্শ অনুভব করে। হঠাৎ ফারাজ চিত্রার মুখের দিকে ঝুঁকে আসে। তার ঠোঁট চিত্রার ঠোঁটের কাছে এসে থেমে যায়। চিত্রা চোখ খুলে ফারাজের চোখের দিকে তাকায়। সেখানে এক অদ্ভুত আকর্ষণ দেখতে পায়। ফারাজ ধীরে ধীরে চিত্রার ঠোঁটে চুমু খায়। তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্কের সূচনা হয়। আধো ভেজা শরীরেই ফারাজ চিত্রাকে কোলে তুলে নেয়। বারান্দা থেকে বেড়িয়ে রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। গায়ের পানিতে বিছানা ভিজে যাচ্ছে। তবুও কারো খেয়াল নেই সেদিকে। চিত্রার সাড়াশব্দ নেই শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের আন্দোলন বাড়ি খাচ্ছে ফারাজের কানে। ফারাজের তৃষ্ণার্ত ঠোঁট জোড়া প্রেয়সীর সংস্পর্শে এসে নিয়ন্ত্রণ হারায়। দু’জোড়া ঠোঁট মিলিত হয় গভীর আলিঙ্গনে। চিত্রার বাঁধা দেওয়ার তাড়া নেই। তাড়া গুলো আজ কোথায় গুম হয়েছে । চিত্রা নিজের আবদার বোঝাতে হাতে হাত মিলিয়ে জড়িয়ে ধরেছে ফারাজকে। সময় পেরিয়ে যায় বেশ কিছুক্ষণ। বজ্রের শব্দে কেঁপে উঠে চিত্রা। ফারাজ তাকে পরম আদরে গভীর আলিঙ্গনে আবারো জড়িয়ে ধরে। মেয়েটার ঘাড়ে গালে গলায় উষ্ম স্পর্শে বেসামাল করে তুলে। হঠাৎ করে ফারাজ চিত্রার ওপর থেকে নিজের ভারী দেহটা উঠিয়ে নেয়। চিত্রার সাহস নেই ওই নেশাভরা চোখের দিকে তাকানোর। সে তাকায় না। ফারাজ গা থেকে ভেজা শার্ট খুলে নিচে ছুরে ফেলে। পরনে এখন কেবল তার কালো ট্রাউজার৷
“তাকাও। তাকাও আমার দিকে।”
চিত্রা তাকায়। ফারাজ চিত্রার হাত নিজের বুকের ওপর রাখে। চিত্রা ফারাজের অনাবৃত বুকে আঙুলের ছোঁয়া দিতেই ফারাজ তার হাত ধরে নেয়। সে চিত্রার ওপর ঝুঁকে পড়ে।
“সিউর তো?”
চিত্রা জবাব দেয় না। ফারাজ গম্ভীর গলায় বলে,
“নিরবতা কিন্তু সম্মতির লক্ষ্মণ আগুন সুন্দরী।”
ফারাজ আরেকবার চিত্রার বাহুর দিকে তাকায়। তারপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
“তোমার এই নাম,এই শরীর এই মন কেবলই আমার। এখানে অন্য পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। যদি কেও প্রবেশ করার চেষ্টা করে কসম বউ ধ্বংস করে ফেলবো সব। আমাকে খু*নী হওয়ার সুযোগ করে দিও না।”
ফারাজ ক্রমশ অসংলগ্ন হয়ে উঠলো। চিত্রা আবিষ্কার করলো অন্যরকম ফারাজকে। যে প্রতিটি স্পর্শে ভালোবাসার জানান দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।গলায় ঘাড়ে এলোপাতাড়ি চুমুগুলো কামড়ে রূপান্তরিত হচ্ছে। যত্নে পরা শাড়িটা ফারাজ কোথায় ছুড়ে মেরেছে কে জানে। দুটি দেহের সন্ধিক্ষণে ফারাজের বেপরোয়া ভাব বাড়তে থাকে……ক্রমশ বাড়তে থাকে।
চলবে?