১.
কলেজ থেকে বাসায় এসেই যে আমি এতবড় একটা টাস্কি খাবো , জানলে বাসায় না ফিরে নানু বাড়ি চলে যেতাম। বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করতেই আমি আমার যমকে দেখতে পাই। নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই যম কাকে বলছি। এই যম আর কেউ নয় আমার চাচাতো ভাই আদ্র। যে একপ্রকার সাইকো।
আমি শিশির। পুরো নাম অনামিকা শিশির চৌধুরী। আমি এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমরা দুই ভাই বোন। আমরা জয়েন ফ্যামেলি। আমার বাপ চাচারা তিন জন। বাবা সবার ছোট ।আর পরিবারে সবচেয়ে ছোট আমি । তাইতো সবার আদরের মধ্যমনি ও আমি। বড় চাচার ২ছেলে। আদ্র আর আয়ান ভাইয়া। আয়ান ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে। সেখান ছোট ছোট দুজন জমজ আমার কলিজারা আছে। মিন্নাহ আর মিন্নাত।মেজ চাচার ও ২ ছেলে। নাহিদ আর নিজাম ভাইয়া। ওনারা দুজনই পুলিশে চাকরি করেন। আর আমার বাবার ঘরের কথা তো জানেন ই। এই পরিবারে একমাত্র মেয়ে আমি। ওপস বেশি কথা বলে ফেললাম তাই না।গল্পে যাওয়া যাক।
আদ্র ভাইকে আমি এতো দিন ধরে মোবাইল ই দেখেছি। অবাক লাগলেও সত্যি ই, আমি বোঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই শুনে আসছি আদ্র ভাইয়া আর আমার ভাইয়া এব্রোডে পড়াশোনা করে। যদিও আমার ভাইয়া দেশে ফিরতো প্রতিবছরই কিন্তু আদ্র ভাইকে আমি ফিরতে দেখিনি। তার নাকি একটা আবদার আছে সেটা যদি না মানে সে নাকি কখনো দেশে ফিরবে না। তার লাশ ও না। কয়েক দিন আগে শুনেছি বাবা চাচারা তার আবদার মানতে রাজি। আদ্র ভাইয়া দেশে ফিরবেন। মাই (আদ্রের মা, সবাই বড়মা বলে ডাকে আর আমি মাই) নাকি একটু অসুস্থ, তার বুকে তার ছেলে চাই, আর দাদী ও আদ্র ভাইকে দেখার জন্য আকুতি মিনতি করছে। দাদীর শরীর বেশি ভালো না, যেকোনো সময় আল্লাহর কাছে চলে যেতে পারেন, তাই বাধ্য হয়ে বাবা চাচারা আদ্র ভাইয়ার দাবি মেনে নিয়েছে। তবে সেই দাবিটা কি আমি জানি না।আদ্র ভাইয়ার কর্মকাণ্ড শুনলে আমার কলিজা কেঁপে উঠে। ছোট্ট অবস্থায় নাকি এক ছেলেকে মেরে আধোমারা করে ফেলেছে। এটা নাকি সে রোজ করতো, তাইতো তাকে এব্রোড পাঠানো হয়।
যাকে চিকিৎসা করতে এব্রোড পাঠানো হয়, সেই আদ্র আজ একজন বড় ডা. । দেশ বিদেশে তার নাম অনেক। দেখতে ও মাশাআল্লাহ। চোখে তাক লাগানোর মতো। তবে সে একটা সাইকো এর প্রমাণ আমি সময়মতো আপনাদের ও দেখাবো।
আমি গুটিসুটি মেরে ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে আছি। আড়চোখে একবার আদ্র ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ওমা বাড়ির সকল মহিলারা তার আপ্পায়নের কমতি রাখছে না, বাবা চাচারা দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান ভাইয়া আর ভাবি ও। ওমা আমার বিচুতি শয়তান দুটি আদ্র ভাইয়ার কোলে বসে আছে। মিন্নাহ আর মিন্নাত। একজন অপরজনের থেকে মাত্র ২০ সেকেন্ডের বড় ।
মিন্নাহ – আরে অনিমা এসে গেছে, অনিমা আমরা দেখ কার কোলে।
আদ্র মিন্নাত এর মতো করে সামনে তাকালো। মুখে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠল। এতো বছর পর নিজের প্রিয়তমা কে দেখে। কিন্তু অনি এভাবে দাড়িয়ে আছে কেন? অনি কি খুশি হয়নি তার আসাতে। নাকি ভয় পাচ্ছে।
শিশির – আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া, হে হে (হেসে)কেমন আছেন?
এর মধ্যেই পিছন থেকে একজনের কথা শুনতে পেলাম – অশি (অনামিকার অ , শিশির এর শি, অশি, আমার ভাইয়া ডাকে)
আমি কিন্তু ল্যাগেজ ভর্তি শুধু চকলেট এনেছি, আর তুই এতো লেইটে আসলি যে, সব চকলেট মিন্নাহ আর মিন্নাত অর্ধেক নিয়ে গেছে।
পিছনে ফিরে তাকাতেই ভাইয়াকে দেখে চমকে উঠলাম, সাথে খুশি ও ওফ্ আজ দুইবছর পর ভাইয়া এসেছে। আমাকে আর রাখে কে? এক দৌড়ে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম। ভাইয়া আমার কপালে একটা মিষ্টি পরশ দিল। ভাইয়া কে পেয়ে আমি বাকি সবাইকে ভুলে গেলাম।
ভাইয়া কথা বলতে বলতে খাবার টেবিলে আদ্র ভাইয়ার সাথে বসল। সবাই আদ্র ভাইকে বেশি বেশি দিচ্ছে বলে আমি নাক ফুলিয়ে মা আর চাচির হাত থেকে খাবারের বাকি কেড়ে নিয়ে বললাম – আমার ভাইকে চোখে দেখো না? কত্তো ক্ষুদা পেয়েছে ভাইয়ার।
মাই মুচকি হেসে বলল – আরে আমার অশির কী হলো? আমি কি কম রান্না করেছি নাকি? যথেষ্ট আছে, তুই ও খেতে বসে পর।
দাদি – ঐ ছেমরি, তোর কি মাথা আজ নষ্ট হয়ে গেছে, চোখে দেহোস না আমার নাতি টা আজ ১৮ বছর পর দেশে ফিরছে।
আমি ভেঙচি মেরে বললাম -ফিরছে ই তো। এখন আমি কি করবো?আমি এতো দিন পর ভাইকে পেয়েছি, হুহ ঠুস যাও তো বুড়ি।
অন্যদিকে আদ্র ভাইয়ার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। ওনি কি সবসময় এমন লাল বান্দর হয়ে থাকে নাকি?
হঠাৎ আদ্র ভাইয়া বল্ল – হা রে শিশির (চমকে তাকালাম, শিশির নামটা কেউ সহজ এ বলে না, সবাই অনি অথবা অশি বলেই ডাকে)
শিশির – হুম, ভাইয়া।(মেকি হাঁসি দিয়ে)
আদ্র – আমার সম্পর্কে সব কিছুর ধারনা আছে তোর? শুনেছিস কি আমার সম্পর্কে?
তা তোর ভাই কয়টা?
শিশির আদ্রের কথার অর্থ বুঝতে পারলো না, তবে চঞ্চল শিশির হাত দিয়ে হিসাব করছে আপনি ও তো ভাইয়া ই, আপনাকে নিয়ে ৫ জন।
আদ্র হেসে উঠে, ভুল তোর জন্য তোর ভাই ৪টা । হাত ধুয়ে গটগট করে চলে আসলো।
ধেৎ এক্সট্রা ঢং, হু ।
___
সন্ধ্যায় যেন চৌধুরী মহলে খুশির মেলা বসেছে।আজ সবাই উপস্থিত। ড্রইংরুমে হৈচৈ। শব্দ শুনে আমি রুম থেকে বের হয়ে এসেছি। নাহিদ আর নিজাম ভাইয়া কে দেখে আমি এক চিৎকার ভাইয়া বলে। কোনমতে দৌড়ে নাহিদ ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম, সাথে সাথে একবক্স চকলেট গিফট দিল, আবার নিজাম ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলাম সেও চকলেট বক্স গিফট দিল।
আদ্র দূর থেকে এগুলো দেখছে আর জ্বলছে। কিন্তু শিশিরের অজানা। বাঘের সামনে মাংস নিয়ে খেলা হচ্ছে। খেলোয়াড় বড্ড কাঁচা। ধেংধেং করে লাফিয়ে ভাইয়ের সামনে গেলাম, ভাইয়া তোমার লেগেজের চকলেট গুলো ও দেও না?
আদ্রের মুখে হাসি ফুটে উঠল ভয়ংকর হাসি। যেন এবার বাঘ তার শিকার কে ভাগে পেয়েছে।
ভাইয়ার কথায় আমার আত্মা বের হওয়ার উপক্রম…
চলবে…
শিশিরের আদ্র পর্ব ১
সকল পর্বের লিংক একসাথে
https://kobitor.com/category/nil-2/adro/
#Neel
(রিসপন্স পেলে কনটিনিউ করবো)