দেহ পর্ব ২
-লেখক:-মো.নীল চৌধুরী
-সিমি কে কেমন লাগে রে তোর?(মা)
-ভালোই তো
-বলছিলাম না সিমিকে ওর ভালো লাগবে? ওর বাবার সাথে কথাবার্তা বলে তারাতারি সব ঠিক করে নাও
-কি ঠিক করতে বলছো?
-তোর সাথে সিমির বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাই
-এই পিচ্ছি মেয়েরে আমি বিয়ে করব?
-পিচ্ছি মানে? তোর থেকে মাত্র ৭ বছরের ছোট
-আম্মু এসব ফাইজলামি বন্ধ করো, আমার এসব ভালো লাগে না
-১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এটাই ফাইনাল(বাবা)
বাবার মুখ থেকে এটা শোনবার পরে আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ প্লেট রেখে অনি নিজরুমে চলে আসে।
অন্ধকার রুমে শুয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে অনি শেফালির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে থাকে। মেয়েটা দেখতে মাশাল্লাহ কত সুন্দর কিন্তু এসব খারাপ কাজ করে কেন? এর পিছনে কি আসলেই ওর অসহায়ত্ব লুকিয়ে আছে? নাকি আমার সামনে অভিনয় করে চলে গেছে? এসব ভাবতে ভাবতে একসময় চোখে ঘুম চলে আসে।
পরেরদিন সন্ধ্যায় লেকের পাশে বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে এমন সময় পিছন থেকে শেফালি গলা ঝাড়ি দিয়ে অনির ধ্যানভঙ্গ করবার চেষ্টা করে।
অনি শেফালির উপস্থিতি বুঝতে পেরে
-কেমন আছো?
-আমাদের আর ভালা,আপনে কেমন আছেন?
-এইতো
-আইচ্ছা স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
-হুম শিওর
-এখানে আপনারে নিয়মিত আসতে দেখি,কি জন্য আসেন সেটা কি জানতে পারি?
-এমনিতেই আসি
-আমার সাথেরজনকে আপনার কথা জিজ্ঞাসা করছিলাম, সে কইলো আপনার সাথে নাকি আগে সুন্দর কইরা একটা মাইয়া আসতো
-ফ্রেন্ড
-ফ্রেন্ড নাকি মোর দ্যান ফ্রেন্ড
-কি?
-না মানে রিলেশন ছিলো নাকি?
-সেসব তোমাকে জানতে হবে না
-ধোকা দিয়েছে?
-বলছি তো এসব জানা লাগবে না
-স্যরি
-তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়?
-কুমিল্লা
-ওহ এই রাস্তায় কয়দিন ধরে?
-সাত মাস হইছে
-পড়ালেখা করো নাই?
-অনার্স কমপ্লিট
এটা শুনে অনি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে অনার্স পাস করা একটা মেয়ে কোন সেন্সে এই রাস্তায় এসেছে।
-কিছু কি ভাবতেছেন?
-না মানে অনার্স পাস করে এসবে আসলে কেন?
-টাকা ছাড়া ভালো চাকরি হয় না তো, হলে হয়তো এই ঘৃণাজনক কাজে জড়িত হতাম না বলে শরীরের পুরো দমে একটা নিশ্বাস ফেলে,পাশে থাকা অনির মনে হচ্ছে এই নিশ্বাসের সাথে একরাশ অভিশাপ বেড় হয়ে আসছে এই নষ্ট সমাজের জন্য।
-এগুলো ছেড়ে দেওয়া যায় না? অনি কথাটা একটু অনুনয়ের সুরে বলে
-আমার মা বাচবে না তো বলে ঠোট বাঁকিয়ে কান্না করে দেয়
-আরে আরে কান্না করছো কেন?
-মাঝেমধ্যে মনে হয় মরে যাই,যদি মা আর ভাইটা না থাকতো তাহলে ঠিকই গাড়িরচাকার নিচে চলে যেতাম
-আত্মহত্যা মহাপাপ
-এজন্যই বেচে আছি আর না হয় ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে মা আর ভাইকে নিয়ে খেয়ে মরে থাকতাম
-কালকে থেকে আমার অফিসে কাজ করবা
-পার্মানেন্ট পতিতা হিসাবে রাখবেন? হাস্যজ্জল মুখে কথাটি বলে।
ওর মুখে এই কথা শুনে অনির তো মেজাজ গড়ম হয়ে গেছই সাথে আবার ছন্দবিহীন হাসি।
-থাপ্পড় চিনো?
-ওরা যখন হায়নার মত কামড়েছিড়ে খায় তখন অনেক থাপ্পড় দেয় তাই সেটা অচেনা থাকার কথা না
-আচ্ছা আমাকে কি তোমার এসব মনে হয়?
-আপনাদের মতোই হাইফাই লোকগুলো এসবের দ্বার ধারে যদিও আপনি অন্যরকম, ঐযে বলে না হাজারের মধ্যে একটা, ঐ একটা আর কি
-আমি গেলাম
-কেন?
-এমনি
-আপনি উত্তর দেওয়া এড়িয়ে গেলেও আপনার চোখের ভাষা কিন্তু অন্যকিছু বলে
-মানে?
-আমার কথায় রাগ হয়েছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি,কি করবো বলেন? যখন শুনি কেউ জব দিবে তখন নিজের সাথে ঘটে যাওয়া পূর্বের সবকিছু মিলাতে বাধ্য হওয়া লাগে।
-সবাইকে এক পাল্লায় মাপাও ঠিক না
-আমার মত পাপী মানুষকে আপনার অফিসে ঠাই দিবেন?
-পাপী তুমি না যারা খারাপ সময়ের সুযোগ নিয়ে ব্যবহার করেছে তারা পাপী।
-আচ্ছা আজকে তাহলে যাই আবার কাল দেখা হবে যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন
-কোথায় যাবা? ঐ আড্ডায়?
-যা মনে করেণ
-যদি এমনটা আর চোখে পরে তাহলে আমি তোমার সাথে জীবনেও কথা বলবো না
-হু আচ্ছা আসি বলে হাটতে হাটতে একসময় অন্ধকারে মানুষের ভীড়ে মিশে যায়।
পিছন থেকে বেশ কতক্ষণ লক্ষ্য করে শেফালিকে দেখবার চেষ্টা করে।
মানুষের ভীড়ে হাড়িয়ে গেলে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে আসে।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে অনির মা-বাবা বসে বসে টিভি দেখছে এমন সময় অনি সোফায় বসতে বসতে
-বাবা একটা কথা বলার ছিলো
-হ্যা বলো
-একটা মেয়ে অনার্স পাস করার পরে চাকরী না পেয়ে বেশ বিপদের মুখে আছে
-সুযোগ হলে সাপোর্ট করো
-চাচ্ছিলাম আমাদের অফিসের যদি কোন একটা পদে দিয়ে দিতে
-কোন পদ তো খালি নাই
-মেয়েটি একা পুরো পরিবার সামলানো লাগে
-তোমার পিএস হিসাবে একজনকে খুঁজতে ছিলাম, তুমি তো নিয়মিত বসো না তাই তুমি নিজেই না করে দিয়েছিলে
-তুমি একটা সুযোগ করে দিলে মেয়েটার জন্য অনেক অনেক ভালো হবে
-আচ্ছা ওকে ওর সব কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলবা,আমি কথা বলে দেখি
-মেয়েটি অসহায় আর তুমি কথা বলার পরে ডিসিশন নিবা? (মা)
-তোমার ছেলের পিএস পদে দিতে হলে তো একটু যাচাইবাছাই করা লাগবে
-অনি না জেনেশুনে বলছে নাকি? এই অনি মেয়েটারে একদিন আসতে বলিস আমি দেখব
-হু
-এই টিভি বন্ধ করো,খেয়ে আমাকে মুক্তি দাও বলে অনির মা কিচেনের দিকে চলে যায়।
বাবাকে রাজি করাতে পেরে অনির মনটা খুশিখুশি লাগছে। রাত সাড়ে বারোটার দিকে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসার পরে অনি ফোন রিসিভ করে
-হ্যালো কে বলছেন?
-অভাগী
-শেফালি?
-হুম কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?
-এইতো, কি করেন?
-শুয়ে শুয়ে গান শুনতে ছিলাম
-ওহ কালকে কি কার্ডে দেওয়া ঠিকানা মোতাবেক আসব?
-হ্যা
-আচ্ছা
-অবশ্যই সব সার্টিফিকেট সহ
-সার্টিফিকেট ও লাগবে?
-বাবা দেখবে
-কি আপনার বাবা?
-হ্যা
-আমার কেমন জানি লাগছে
-ভয়?
-হুম
-ভয়ের কিছু নাই,আমার বাবা খুব মিশুক যদিও বাহ্যিক দিক দেখে শক্তপোক্ত মনে হবে
-আপনি সাথে থাকবেন না?
-হ্যা
-আচ্ছা ঘুমান তাহলে
-কোথায় আছো এখন?
-বাসায়
-আচ্ছা রাখি তাহলে বলে ফোনটা রেখে অনি গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায়।
পরেরদিন সকালবেলায় শেফালির ফোনে ঘুম ভাঙ্গার পরে
-এত সকাল সকাল ফোন দিলে যে?
-নামাজ পড়ে ভাবলাম আপনাকে ফোন দেই(শেফালি)
-নামাজ পড়ছো?
-বাচার জন্য বেশ্যাগিরি করলেও মরার ভয় তো আছে তাই নামাজ মিস করি না
-আবার এসব কথা কেন? আমার কিন্তু এসব শুনলে ভালো লাগে না
-নামাজ পড়ছেন?
-না
-পড়েন
-এখন সময় শেষ
-কাজা পড়েন
-কালকে থেকে পড়ব
-আজকে থেকে পড়লে আমি খুশি হব।
খুশি হবে বলায় অনি ফোন রেখে নামাজ আদায় করে নেয়।
বেলা এগারোটার দিকে
-হ্যালো(শেফালি)
-কোথায় তুমি? এত লেইট করতেছো কেন?
-আমি আপনাদের অফিসের গেইটের নিচে দাঁড়িয়ে আছি
-আমার অফিসে আসো
-আমি চিনবো না
-কারোর কাছে আমার কার্ড শো করলেই এগিয়ে দিয়ে যাবে
-আপনি আসলে ভালো হয়
-আচ্ছা ওয়েট
অনি তখন তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি লিফট দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে নেমে গেইটের কাছে যাওয়ার পরে খেয়াল করে দেখে নীল শাড়ি পরিহিত শেফালি দাঁড়িয়ে আছে। শাড়িতে কাউকে এত সুন্দর লাগে এটা বোধ হয় ওকে না দেখলে বিশ্বাস করা যেতো না।
-আসসালামু ওয়ালাইকুম স্যার
দারোয়ানের দেওয়া সালাম শুনে অনির ঘোর ভাঙ্গে
-চলো
-শেফালি তখন অনির পিছু পিছু হাটা শুরু করে।
লিফটে উঠার পরে
-আমার ভয় করছে
-আরে ভয়ের কি আছে?
-জানিনা কিন্তু ভয় করছে খুব
-ভয়ের কিছু নাই,তুমি গেলে বাবা পরিচিত হবে এই আর কি
-আমি গেলে মানে? আপনি যাবেন না?
-না
-তাহলে আমাকে বাহিরে দিয়ে আসুন
-আচ্ছা আচ্ছা আমি যাবো
-আচ্ছা
-বাবা ওকে নিয়ে আসছি
-ওহ হ্যা বসো এখানে
দুজন বসবার পরে
-নাম কি তোমার?
-জান্নাতুল আক্তার মাওয়া
এটা শুনে অনি শেফালির দিলে চোখ বড়বড় করে……
চলবে