দেহ পর্ব ৩
লেখক:-মো.নীল চৌধুরী
-নাম কি তোমার?
-জান্নাতুল আক্তার মাওয়া
এটা শুনে অনি শেফালির দিলে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে
-বাহ খুব সুন্দর নাম
-থ্যাংকস স্যার
-অনি আমাকে তোমার সমন্ধে সবকিছু বলেছে,তা তোমার কাজ সমন্ধে কি অনি কিছু বলেছে?
-না স্যার
-আজ থেকে তুমি অনির পার্সোনাল সেক্রেটারি।
-ধন্যবাদ স্যার
-এই নাও বলে একটা খাম এগিয়ে দেয়।
শেফালি তখন অনির দিকে তাকালে অনিও ইশারা করে খামটা হাতে নিতে। অনির ইশারায় খামটা হাতে নেওয়ার পরে
-অনি
-হ্যা বাবা
-যাও ওকে ওর কাজ বুঝিয়ে দিও
-ওকে
-এখন যাও আমাকে আবার খান টেক্সটাইলের সাথে একটা মিটিংয়ে বসতে হবে
-ওকে আসি তাহলে
-আসসালামু ওয়ালাইকুম বলে শেফালি অনির পিছুপিছু অনির অফিস রুমে যাওয়ার পরে
-শুনেন
-হ্যা বলো বলে অনি ঘুরে দাড়াতেই শেফালি শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেই
-আরে আরে কান্না করছো কেন?
-এই ইটপাথরের শহরে আপনাকেই পেয়েছি যে কিনা বিনা স্বার্থে আমার জন্য এতকিছু করলো
-আচ্ছা এখন ছাড়ো,কেউ দেখলে খারাপ বলবে বলে অনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজ চেয়ারে বসার পরে
-দাঁড়িয়ে আছো কেন? চেয়ার টা টেনে বসো
-আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব তার বলার ভাষা নাই
-আগে তো বসো
শেফালি চেয়ারে বসার পরে
-আচ্ছা তুমি না বললা তোমার নাম শেফালি? মিথ্যা বলছিলে?
-হুম মিথ্যে বলেছিলাম
-কেন?
-জান্নাত নামটার সাথে আমার ঐ পেশা মানাইত না
-নাম কী তাহলে জান্নাত?
-হ্যা
-আচ্ছা আজকে তাহলে যাও
-আমার সাথে চলেন না
-না আজ অফিসে বাবা থাকবেন না তো তাই আমার একটু কাজের চাপ আছে
-আমার প্রথম বেতনের টাকায় আপনাকে মিষ্টিমুখ করাতে চাই
-হাহাহা সেসব পরে করা যাবে,যাও বাসায় গিয়ে তোমার মাকে মিষ্টিমুখ করাও,ওনি খুব খুশি হবেন
-আমি তাহলে কবে থেকে জয়েন করব?
-আগামীকাল থেকেই
-আচ্ছা, আর বিকালে কি সেখানে যাবেন?
-বললাম না আজ কাজের অনেক প্রেশার
-আচ্ছা আমি তাহলে আসি
-সাবধানে যেও
-আচ্ছা
শেফালি মানে জান্নাত তখন খুশিমনে একটা মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে কেজি পাঁচেক মিষ্টি নিয়ে সিএনজি করে বাসার সামনে এসে দরজায় টোকা দেওয়ার পরে ভিতর থেকে রিফাত মানে জান্নাতের ছোট ভাই দরজা খুলে দেওয়ার পরে “মা কোথায় রে”
-রান্নাঘরে
-আচ্ছা দরজা বন্ধ করে আয় তো
বোনের হাতে মিষ্টির প্যাকেট দেখে রিফাত বুঝতে পারে নিশ্চয় খুশির খবর।
-মাআআআআ
-আজ এত তারাতারি আসলি যে?
-মা বলে ডাক দিয়ে ঠোট চেপে কান্না করে দেয়
-কিরে কান্না করছিস কেন? এই পাগলি কি হয়েছে তোর?
-মা তোমাদের আর ভুগতে হবে না, তোমার মেয়ে খুব ভালো জায়গায় ভালো পদে একটা চাকরী পেয়েছে
-সত্যিইই?
-হ্যা বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
-এটা তো খুশির সংবাদ,কান্না করছিস কেন?
-নাও মিষ্টি খাও বলে প্যাকেট থেকে মিষ্টি হাতে নিয়ে মা-ভাইকে খাইয়ে দিয়ে তিনজনে গল্পের আড্ডায় মেতে উঠে। জান্নাতের মনে পরে না লাস্ট কতদিন আগে এমন খুশিমনে সবাই মিলে গল্প করছে।
-রিফাত
-হ্যা আপু বলো
-যা এগুলো সবার ঘরেঘরে দিয়ে আয়
-আপু এগুলো না দিয়ে আমরা ঘরে রেখে অনেকদিন খেতে পারবো।
জান্নাত তখন ভাইকে বুকে নিয়ে “পাগল আমাদের আর ওভাবে চলা লাগবে না, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর রহমতে এগুলো প্রতিদিন-ই খেতে পারবি,যা এগুলো ভাগাভাগি করে দিয়ে আয়”
-আচ্ছা তুই গোসল করতে যা আমি এগুলো বিতরণের ব্যবস্থা করতেছি(মা)
-জান্নাত তখন ফ্রেশ হতে চলে যায়।
এভাবে দিন গিয়ে সন্ধ্যা নামে।
অনি আজ আর অন্যকোন জায়গায় না গিয়ে সোজা বাসায় চলে যাওয়াতে “আজকে এত তারাতারি আসলি যে?”
-তারাতারি আসলেও হিসাব দেওয়া লাগবে?
-না তুই তো লাস্ট ছয়মাস ধরে সচরাচর এমন সময় বাসায় আসিস না তাই বললাম।
-আচ্ছা বাবা কি আসছে?
-হ্যা এখন চা খেতে বাহিরে গেলো
-ওহহ
-ফ্রেশ হয়ে আয়
-কেন কিছু বলবা নাকি?
-হ্যা
-এখুনি বলো
-না ফ্রেশ হয়ে আয়
-আচ্ছা
মিনিট বিশেক পরে “কি যেন বলবা বলছিলে”
-সিমির মা-বাবার সাথে কথা বলা হয়ে গেছে
-মা তোমরা এসব কি শুরু করছো?
-যা করতেছি সব বুঝেশুঝেই করতেছি
-আমার লাইফটাকে আমার করে সাজাতে দাও
-ছোট থেকে যা চেয়েছিস তা-ই দিয়েছি,এবার আমরা যা চাই তা দে
-মা সিমি ছোট্ট একটা মেয়ে, কয়দিন আগে ছোটছোট প্যান্ট পরে সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতো আর তুমি কিনা এই মেয়েকে পাত্রী হিসাবে দেখতেছো?
-মেয়ে দেখতে সুন্দর আর ছাত্রী হিসাবেও বেশ ভালো
-আশ্চর্য আমি যেই মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছি না সেই মেয়েকেই আমার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছো কেন?
-বিয়ে তুই ওকেই করবি আর যদি এটার বিপরীতে কোনকিছু বলার থাকে তাহলে তোর বাবাকে গিয়ে বল বলে কিচেনের দিকে হাটতে হাটতে চলে যায়।
-ধুরর ছাই ভাল্লাগে না বলে রুমে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে জান্নাতের ফোন। অনি তখন ফোন ব্যাক করে
-হ্যা জান্নাত
-আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
-এতবার ধন্যবাদ দেওয়া লাগবে না
-আমার পরিবার যে কত খুশি হয়েছে তা সামনে থেকে না দেখলে বুঝতে পারতেন না
-তুমি খুশি হওনি?
-বলে বুঝানো যাবে না
-বলো দেখি বুঝতে পারি কি না
-হিহিহি পরে বলব,নামাজ পড়েছেন?
-মাত্রই তো আসলাম
-এশার আজান সেই কখন দিয়েছে
-হুমম
-যান নামাজ পড়ে আসেন
-হুম পড়বো
-যোহর, আসর আর মাগরিব কি পড়া হয়েছে?
-নাহ
-আপনি না বললেন আর কখনো নামাজ মিস করবেন না?
-প্রেশার ছিলো
-এত জ্ঞানী হয়ে এগুলো কি বলেন?
অফিসের কাজকে ভয় পেয়ে এত কাজ করতে পারেন অথচ আল্লাহকে ভয় পেয়ে নামাজটুকু আদায় করতে পারেন না?
অনি এসব শুনে চুপ করে থাকে
-আজ থেকে আর নামাজ মিস করবেন না কেমন?
-আচ্ছা
-আচ্ছা এখন রাখি, মাকে ইনসুলিন দিব
-আচ্ছা
পরেরদিন দশটার দিকে জান্নাত অনির অফিস রুমে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে চেয়ারে বসতেই অনি এসে হাজির হয়।অনিকে দেখে জান্নাত বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে “গুড মর্নিং “
-আমাকে এত ভয় পাওয়া লাগবে না বলে হেসে দেয়
-ইটস মাই ডিউটি
-উমম এভাবে ডিউটি করলে খুব শীঘ্রই প্রমোশন হয়ে যাবে
-আমার আর কোনকিছু লাগবে না, যা পেয়েছি তাতেই খুশি
-আচ্ছা নাস্তা করেছো?
-হ্যা
-সালমানকে ডেকে বলো নাস্তা নিয়ে আসতে
-আচ্ছা
জান্নাত তখন সালমানকে নাস্তা আনার কথা বলে রুমে এসে…
-বাসা থেকে নাস্তা করে আসতে পারেন না?
-করেই আসি কিন্তু আজ করা হয়নি
-কেন কোন সমস্যা?
-আরে আর বইলো না,মনমেজাজ খারাপ হয়ে আছে
-দেখেই বুঝা যাচ্ছে, তা কি কারণে মন খারাপ সেটা কি জানতে পারি?
-না জানলেও চলবে
-পার্সোনাল সেক্রেটারির কাছে পার্সোনাল কোনকিছু বলা নিষেধ আছে বুঝি?
-আরে বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে
-ভালো তো, বিয়ে করে নেন
-এখন এসবে জড়াতে চাচ্ছি না
-কেন কোন সমস্যা?
-নাহ
-নির্দিষ্ট কেউ আছে?
-এতকথা বলো কেন? চুপচাপ থাকো তো
জান্নাত তখন আর কোনকিছু না বলে অন্যকাজে মন দেয়।
বারোটার দিকে
-স্যার আজকে আপনার শিকদার গার্মেন্টসের সাথে মিটিংয়ের ডেইট ছিলো(জান্নাত)
-কয়টায়?
-১.০০টায়
-চলো তাহলে
-হুম চলেন
ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর পিছনের ছিটে দুজন চুপচাপ বসে আছে। মিনিট দশেক পরে অনি সিগারেট জ্বালাতেই “এসব কি?”(জান্নাত)
-কি মানে?
-সিগারেট খাচ্ছেন কেন?
-ভালো লাগে
-আমার বিরক্ত লাগে
-মাস্ক লাগিয়ে বসো
-তাও খাবেন?
-গত দুই ঘন্টা যাবৎ একটাও খাইনি,গলা শুকিয়ে আসছে
-এই নেন পানি খান বলে পানির বোতল এগিয়ে দেয়
-এটা খেয়ে নেই?
-না বলছি না? বলে সিগারেট মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে বাহিরে ঢিল মেরে ফেলে দেয়। জান্নাত এমন ব্যবহার দেখতেই হিয়ার কথা মনে পরে যায়,হিয়াও সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারতো না। ওর সামনে সিগারেট ধরানো মানেই ছোটখাটো একটা যুদ্ধের আয়োজন করা। গত ছয়মাস এভাবে কেউ মুখ কেউ সিগারেট থাবা মেরে নিয়ে যায় নাই,আজ নিয়েছে তবে সে হিয়া না, সে জান্নাত। এসব ভাবনার মধ্যেই
“বিড়বিড় করে কি বলতেছেন?”
-কিছু না
-বকাবকি করে লাভ নাই, আমার সামনে এসব খাওয়া যাবে না কথাটা রাগি সুরে বললেও শেষে হেসে দেয়। অনি এই হাসিটা দেখে মুগ্ধকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই,আমার সামনে সিগারেট খাওয়া যাবে না বলে হাসতে থাকে, এমন সময় একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলে জান্নাত ফোন কেটে দেয়।
এভাবে ৪-৫ বার কেটে দেওয়ার পরে
-প্রিয় কেউ ফোন করেছে নাকি? ধরতে পারো কোন সমস্যা নাই
-কাস্টমার
-কিহহ? চোখ রাঙ্গিয়ে……
চলবে