দেহ পর্ব ৫
লেখক :-মো.নীল চৌধুরী
-বউয়ের সাথে কেউ এমন বাজে ব্যবহার করে?
-থাপ্পড় খেলে বুঝবি
-মামাকে ভয় পাও না? ডাক দিয়ে বলবো নাকি যে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করো?
-সাইড হয়ে দাড়া রে বইন, আমি অনেক ক্লান্ত
-রুমে চলো, ক্লান্তি দূর করে দিব বলে অনির হাত ধরতেই হাত ঝাড়ি দিয়ে অনি তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে আসার পরে জান্নাতকে দেওয়া নতুন সিম থেকে ফোন আসে।
-হ্যা জান্নাত বলো
-কন্ঠ না শুনেই বলে দিলেন?
-সিম যখন কিনেছি তখন সেভ করে নিছিলাম
-ওহহ
-হ্যা
-আচ্ছা শুনেন
-বলো
-কালকে কিন্তু লাঞ্চ আমাদের এখানে করবেন
-আচ্ছা দেখি
-দেখি কেন? না আসলে ভাববো গড়িবের বাড়িতে আসতে ইচ্ছুক না
-এসব কি বলো?
-সত্যিই তো বললাম
-আচ্ছা আসবো
-আচ্ছা এখন রিফাতকে পড়াতে বসবো,ভালো থাকবেন
-হু আচ্ছা
-আর শুনেন নামাজ যাতে মিস না হয়
-হুম শিওর
-কে যেন আপনার নাম ধরে ডাকছে
-মা
-যান তাহলে
-হুম যাচ্ছি
-এই অনি দরজা খোল বলে জোরে জোরে কয়েকটা টোকা দেয়।
হ্যা আম্মু খুলতেছি বলে দরজা খুলতেই “দরজা লক করছিস কেন?
-গোসল দিছিলাম তাই
-গোসল করলে মানুষ ওয়াশরুম লক করে আর ওনি রুমের দরজা লক করে দেয়, মায়ের পাশ থেকে সিমি কথাটি বলে দাত কেলিয়ে হাসতে থাকে।
-তুই আমার রুমে কেন? যা এখান থেকে
-এই ফাজিল হবু বউকে এসব কি বলিস?
-মা কি বলতে আসছো বলো, সারাদিন অফিসে কাজ করে ক্লান্ত হয়ে আছি
-খেতে আয়
-মাত্র তো নয়টা বাজে
-হুম সবাই একসাথে খাবো
-আচ্ছা যাও আসতেছি
-এই সিমি মা আয় তো আমার সাথে
-তুমি যাও আমি আসতেছি
-তাড়াতাড়ি আয় বলে অনির মা চলে যায়।
অনির মা চলে যাওয়ার পরেই সিমি হাসতে হাসতে খাটের দিকে তাকিয়ে “এই শুনো আমি কিন্তু এই পাশে ঘুমাতে পারবো না, তোমার বাঁম পাঁজরে মাথা রেখে ঐপাশটায় ঘুমাবো”
-আগে কয়টা প্রেম করছিস?
-ছি ছি এটা তুমি কিভাবে বললা? নিজের বউকে কেউ এমন মিথ্যা অপবাদ দেয়? অনি আমাকে কি তোমার এমন মনে হয়?
-তোর কথাবার্তায় তার চেয়েও বেশি কিছু মনে হয়
-কি এমন বললাম যে এমন মনে হলো
-তোর এসব বেশিবেশি ফাইজলামি আমার একদম ভালো লাগছে না, যা এখান থেকে
-কয়টা দিন পরেই কিন্তু এই রুমের মালিক আমি হবো হুহ বলে ভেংচি কাটে
-হাহাহা পুরান পাগলের ভাত নাই নতুন পাগলের আমদানি
-কিহহ?
-যাহ সর
-নিজের হবু বউয়ের সাথে এমন বাজে ব্যবহার করতেছো?
-তোর কি মনে নাই তোরে আমি কোলে নিয়া হাটাহাটি করলাম আর সেই তুই পিচ্ছি মেয়ে আসছিস আমার বউ হইতে
-যখন ছোট ছিলাম তখন কোলে নেওয়াতে ধন্যবাদজ্ঞাপন জানিয়ে ফিরতি কোনকিছু দিতে পারিনি, এখন নিয়ে দেখো কতকিছু দেই বলে পেত্নী মার্কা একটা হাসি দেয়
-কে বলছে কিছু দেস নাই? কোলে নিলেই ধন্যবাদস্বরূপ হিসু দিয়েছিস,আচ্ছা সিমি তুই কি এখনো আগের মত ঘনঘন এসব করিস? বিছানা ঠিক থাকে তো?
-কি বললা তুমি? বলে সাপের মত ফুঁপিয়ে উঠে
-যা বলার বলছি আর হ্যা শোন কয়েকদিন পরে আমি বিয়ে করব তাই ভাবছি বাসরঘর টা তোকে দিয়ে সাজাবো
-কিহহহ?
-চিন্তা করিস না টাকা দিব,তাও বইন সুন্দর করে সাজিয়ে দিস যাতে তোর ভাবি খুশি হয়
-গেলাম আমি বলে দাতে দাত কামড়িয়ে হনহন করে চলে যায়।
-আরে এই শোন, যাচ্ছিস কেন? লিস্ট টা এখুনি নিয়ে যা বলে হাসতে হাসতে বিছানায় হেলে পরে।
সবার সাথে খাওয়াদাওয়া শেষ করার পরে অনি তার রুমে এসে শুয়ে শুয়ে গান শুনতেছিলো এমন সময় অনির মা এসে
-বিয়েটা ডেইট কি এই সপ্তাহেই দিব?
-কার বিয়ে?
-তোর আর সিমির, আর এটা কতবার বলব?
-মা জীবন টা আমার না? আমার লাইফটাকে আমার মত করে গুছাইতে দাও
-মেয়েটা অনেক ভালো
-আর কিছু বলবা? আমি এখন ঘুমাবো
-আচ্ছা ঘুমা বলে মা মন খারাপ করে চলে যায়।
মা চলে যাওয়ার পরে লাইট অফ করে দিয়ে জান্নাতের নাম্বারে ফোন দিয়ে “কি করো”
-শুয়ে আছি,আপনি?
-আমিও
-এতরাতে ফোন দিলেন যে?
-মানা আছে?
-একটুও না
-তাহলে বললে যে
-এই প্রথম তো তাই
-ভিডিও কলে আসবা?
-কেন?
-না থাক লাগবে না
-এমবি নাই তো
-এমবি কিনা আছে,চেক করো
-প্রি-প্লান?
-যা মনে করো
-কি মনে করে?
-এমনি
-বিছানায় নেওয়ার জন্যে?
-কিহহহ?
-কথা যায় নাই?
অনি তখন আল্লাহ হাফেজ বলে ফোন রেখে দিয়ে রাগে গজগজ করতে থাকে।
মিনিট দুয়েক পরে হোয়াটসঅ্যাপের রিংটোন বেজে উঠে। অনি তখন ফোন হাতে নিয়ে দেখে জান্নাতের নাম্বার থেকে ফোন আসছে। পরপর তিনবার ফোন আসাতে অনি ফোন রিসিভ করে জান্নাতের দিকে চোখ যেতেই হা করে তাকিয়ে থাকে।
জান্নাতকে ঘোমটাপরা অবস্থায় ওর মায়াময়ী চেহারাটা দেখে একনজরে তাকিয়ে আছে।
-কি হলো কথা বলেন না কেন? রাগ করছেন? ৬ মাসের মত এসবে কাজ করছি তো তাই সবাইকেই সন্দেহ হয় বলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
-চোখে কাজল দাও নাই?
-আমি কি বলি আর আপনি কি বলেন?
-কাজল দাও না?
-রাতে কেউ কাজল দেয়?
-কারোর দেওয়ার সাথে তোমার কথা আছে নাকি? তুমি দিবা, সুন্দর লাগে খুব
-এই অপবিত্র সুন্দরের গুন গাইয়েন না
-তোমার কাজলকালো চোখগুলো বেশ মায়াবী লাগে
-আচ্ছা লাইট অন করেণ,আমিও আপনাকে দেখব।
অনি তখন বেড সুইচটা অন করে দেয়।
-রাগ করেছেন?
-নাহ
-নাকমুখ দেখেই বুঝা যায়
-এত বুঝা লাগবে না
-একটা হাসি দেন না, আপনার হাসি অনেক সুন্দর। আপনি যখন পিচ্চিদের মত সাউন্ড করে হাসেন তখন অনেক অনেক ভালো লাগে
-হিহিহি
-এই সাউন্ডটাই
-আচ্ছা এখন ঘুমাও
-তাহাজ্জুদ পড়বো
-তাহাজ্জুদ পড়ো?
-গত ছয়মাস নিয়মিত না হলেও এর আগে ক্লাস টেন থেকেই নিয়মিত পড়তাম
-মাশাল্লাহ
-সব অর্জন ঐ ছয়মাসেই শেষ বলে জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে
-মরা গরু খাওয়া হালাল না হারাম?
-হারাম
-এটা হালাল কখন হয় এবং কাদের জন্য হালাল সেটা কি জানো?
-শুনেছি যারা আহার জোগাড় করতে পারে না তাদের জন্য নাকি হালাল
-নিশ্চয় পরিস্থিতির শিকার তাই না?
-হুমম
-তুমিও তাই,পরিস্থিতির শিকার হলে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন
-নিজেকে নিজে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না
-এসব চিন্তাভাবনা করে ডিপ্রেশনে না গিয়ে এখন নামাজ পড়ো
-হুম আল্লাহ হাফেজ
-আল্লাহ হাফেজ
ফোনের মাঝেই অনি কয়েকটা স্ক্রিনশট নিয়ে নেয়,ফোনে কথা বলা শেষ হলে অনি পিকগুলো বেড় করে পিকগুলো দেখে আর ভাবে “চেহারায় এত মায়া কিভাবে হয়?” মেয়েটা কত সুন্দর,এমন একটা মায়াময়ী পেয়ে গেলে আমার আর কিছু লাগতো না, সারাদিন চোখে চোখ রেখে কাটিয়ে দিতাম। এসব ভাবতেছে আর একের পর এক ছবি পাল্টাচ্ছে।
ছবি পাল্টাতে পাল্টাতে একসময় হিয়ার হাসিওয়ালা ছবি সামনে চলে আসায় মুহূর্তেই চোখজোড়া ভিজে যায়। ফোনটা তখন পাশে রেখে লাইট অফ করে দিয়ে চোখ বুজে রাখে।
সকাল নয়টার দিকে অনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই টা পরতে যাবে, সিমি তখন রুমে ঢুকতে ঢুকতে “দাও তো লাগিয়ে দেই” বলে সামনে এসে টাই টা ধরে ঠিক করার চেষ্টা চালায়।
-কি করতেছিস এসব?
-আমার জামাইকে টাই পরিয়ে দিচ্ছি
-আমি তোর ভাই
-মামাতো ভাইকে বিয়ে করা ইসলামে জায়েজ আছে
-সর আমি বেড় হব
-টাইটা ঠিক করে দেই?
-এটা ডিজিটাল ,গলায় লাগিয়ে টান দিলেই কিচ্ছা খতম।
-আমাদের বিয়ের পরে এনালগ নিয়ে আসবা,প্রত্যেকদিন অফিসে যাওয়ার আগে আমি ঠিক করে দিব
-তোর ভাবি মাইন্ড করবে
-কিহহ?
-আমার আজ অনেক কাজ,গেলাম আমি বলে অনি বেড় হয়ে যায়।
দশটার দিকে অফিসে যেতেই দেখে জান্নাত টেবিলে বসে ফাইল হাতাচ্ছে।
-গুড মর্নিং
-গুড মর্নিং স্যার বলে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়
-কি দেখতেছিলে?
-এগারোটার দিকে আমাদের অফিসে কিছু লোক আসবে সেখানে কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে আলোচনা হবে সেগুলো ঠিক করতেছিলাম।
-বেশ মনযোগী
-বসেন, সালমান ভাইকে নাস্তা নিয়ে আসতে বলি
-আজকে নাস্তা করে এসেছি
-চেহারা দেখে ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে
-হাহাহা তোমাদের বাসায় খাব বলে কম খেয়ে আসছি
-শুনে ভালো লাগলো।
।
।
অনির বক্তব্যে…..
দুপুরের দিকে মিটিং শেষ হওয়ার পরে অফিসে বসে একটু রিল্যাক্স করছিলাম এমন সময় জান্নাত এসে
-কখন যাবেন?
-দুইটার দিকে
-এখন তো কোন কাজ নাই,এখুনি চলেন
-এখন?
-হ্যা
-আচ্ছা চলো।
-ড্রাইভারকে ডাকবেন না?
-ছুটি দিয়ে দিছি
-নিজে তো ড্রাইভ পারেন-ই
-হ্যা
-চলেন তাহলে
গাড়িতে উঠবার পরে “গাড়িতে এসব কি?”
-কোন সব?
-পিছনে
-দাওয়াত খাওয়ার জন্য কিছু তো লাগে
-তাই বলে এতকিছু?
-সমস্যা নেই,চলো
জান্নাতের বাসায় যাওয়ার পরে
-কেমন আছেন স্যার
-আন্টি আপনি আমাকে স্যার বলে ডাকছেন কেন?
-স্যার রে স্যার বলবো না তো কি বলব? বলে হাসতে থাকে
-আমি আপনার সন্তানের মতোই, স্যার বলে ডেকে লজ্জায় ফেলবেন না
-আচ্ছা বাপ এখানে বসো,এই রিফাত ঐ রুম থেকে টেবিল ফ্যানটা আইনা দে তো
-হ্যা দিচ্ছি
-আন্টি এসব লাগবে না, এই এখানে বসো বলায় রিফাত খাটের এক কোনায় বসে পরে
-নাম কি তোমার?
-রিফাত
-পড়ালেখা ঠিকঠাক হচ্ছে তো?
-হ্যা
-আচ্ছা ঠিকঠাক ভাবে পইড়ো কেমন?
-আচ্ছা
ঘন্টাখানেক পরে খাওয়ার কাজ শেষ হলে
-বাবা তোমারে একটা কথা বলি?
-হ্যা আন্টি শিওর
-জান্নাতের বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি একা সংগ্রাম করে গার্মেন্টসে চাকরি করে এতবছর খরচ চালিয়ে ছিলাম। কিন্তু ছয়-সাত মাস আগে আমার হাবিজাবি রোগ ধরা পরার কারণে আর এসব কাজে যেতে পারিনি,তারপর থেকে জান্নাত নানান জায়গা নানান কাজ খুঁজতে খুঁজতে পার্লারের কাজ নেয় আর সাথে কিছু টিউশনি করে আমাদের খরচ চালাইতো। এখন আল্লাহর রহমতে তোমার এখানে ভালো একটা চাকরি পেয়েছে। ও তো এতবেশি বুঝে না, ওর যদি কোন ভুল পাও বাবা তুমি চাকরি থেকে ছাটাই করে দিও না
-আন্টি এসব কি বলেন? ইনশাআল্লাহ এমনকিছু হবে না
-এমনটা হলে আমাদের পথে বসা ছাড়া…
চলবে