#অবন্তিকা_তৃপ্তি
আকাশটা হঠাৎ করে ভীষণ কালো হচ্ছে। বোধহয় বৃষ্টি পরবে আজ, এক্ষুনি! ধ্রুব এই আসন্ন বৃষ্টির পরোয়া করলো না, বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো। দুপুরে ঘুমুতে চেয়েছিল, অথচ বাবার প্রতি অজানা-বিশ্রী রাগ মাথায় চেপে থাকার দরুন, সেই ভাতঘুমও নেওয়া হলোনা। মাথায় বৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ে যেভাবে ছিলো সেভাবেই বেরিয়ে এসেছে বাড়ি ছেড়ে। রাগটা আপাতত তুঙ্গে! তাই আজ শুধু মিটমাট করবে না, বরং পি টিয়ে আসবে কাউকে। সেই চিন্তা নিয়েই ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে এসেছে ধ্রুব ইয়ামিন।
মহাখালীতে সৌরভের চা-পাতার ফ্যাক্টরি আছে।সাইড ব্যবসা সেটা। সৌরভ চেয়েছেন, কখনো পদ চলে গেলে এসব ফ্যাক্টরির ব্যবসা দিয়েই চলে যাবেন বাকিটা জীবন। তাই আজকাল বেশি সময় দেওয়া হচ্ছে ওসবে। ফ্যাক্টরিতে এসব ঝামেলা রোজ লাগে, ধ্রুবই সবসময়ই মিটিয়ে দিয়ে আসে সব। বলা যায়- সৌরভ ইয়ামিনের ডান হাত তার ছেলে, ধ্রুব ইয়ামিন।
ফ্যাক্টরির সামনে ইট দিয়ে কতগুলো বসার জায়গা করে কিছু তরুণ ছেলেপেলে বসে আছে। সবাই বসে রাস্তায়ই কার্ড খেলছে। ধ্রুব বাইক বসেই ওদের কে তীক্ষ চোখে দেখল। পেছন থেকে সুমন বলে উঠল-
‘আঙ্কেলের পাঠানো ছবিটা ওদের সঙ্গে মিলছে, ভাই।’
‘বাইক থেকে নাম।’ -ধ্রুব বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ করতে করতে বলল।
সুমন নেমে দাড়ালো। ধ্রুব বাইকের ছবি প্যান্টের পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে এগিয়ে যাচ্ছে ওদের দিকে।
বড়বড় পা ফেলে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল ধ্রুব। ওরা তেমন একটা পাত্তা দিল না ওকে। নিজেদের মতো করেই কার্ড খেলতে ব্যস্ত সবাই! অথচ ওদের কপালে যে শনি নাচছে, সেটা তো ওরা জানেই না।
ধ্রুব কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল, তারপর আচমকা সোজা জুতো দিয়ে পিষে ধরল রাস্তায় পরে থাকা কার্ডগুলো।
‘কোন মাদার**’ বে?’ —একটা ছেলে ধ্রুবর জুতোয় ঘুষি দিয়ে মাথা তুলে উপরে তাকালো। ধ্রুব নিজস্ব ভঙ্গিতে ভ্রু নাড়িয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
ওরা ধ্রুবকে চেনে, সৌরভ ইয়ামিনের উশৃঙ্খল ছেলে। আজ অব্দি সৌরভ ইয়ামিনের টিকি-টাও কেউ নড়াতে পারেনি, তার পেছনে সবচেয়ে বড় হাত তার ছেলে; ধ্রুব ইয়ামিন।
সবকিছুই জেনে-বুঝেই সৌরভ ইয়ামিনের বিরুদ্ধে ওরা মাঠে নেমেছে। এর পেছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে বিপক্ষ দলের একজন। উদ্দেশ্য; কোনো একটা হাঙ্গামায় সৌরভ ইয়ামিনের নামটা জড়িয়ে তার পদ হাতিয়ে নেওয়া।
ওরা ধ্রুবকে দেখে দ্রুত তেজ দেখিয়ে উঠে দাড়িয়ে গেল। সবাই তীক্ষ্ম চোখে ধ্রুবকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে দেখছে!
ধ্রুব মাথাটা হালকা কাত করে সবাইকে একবার দেখে নিল। তারপর হঠাৎ এগিয়ে গিয়ে সোজা ঘুষি দিয়ে বসল সামনে থাকা ছেলেকে, নাম রাজু। ছেলেটা নাকে হাত চেপে মৃদু আর্তনাদ করে ছিটকে সরে গেল দু কদম: ধ্রুব সরতে দিল না, বরং কলার চেপে ওকে নিজের সামনে এনে আবারও দাঁড় করালো। তারপর সোজা নাক বরাবর আরেকটা এক ঘুষি!
বাকি ছেলেরা আচমকা এমন আঘাত দেখে কিছুটা ভড়কে গিয়েছে! ওরা ফ্যালফ্যাল করে রাগান্নিত ধ্রুবকে দেখছে। তবে ওদের নেতা শাহিন ধ্রুবকে তখনও ভালো করে চিনে না। ও ধ্রুবর এমন কাজে রেগেমেগে এগিয়ে এসে ধ্রুবর কলার ধরে চেঁচিয়ে উঠল-
‘ওই শা/লার পুত..রাজুর কলার ধরসোস ক্যান? শুয়ো** বাচ্চা। বাপের চামচা সাজস?’
ধ্রুব কোণা চোখে ভ্রু বাঁকিয়ে শাহিনের কলার ধরা হাতটার দিকে একবার তাকাল। তারপর ধীরে ভাবে তাকাল ওর দিকে। চোখ ভয়ংকর লাল হয়ে গেছে ওর; অত্যাধিক শান্ত স্বরে বললো-
‘কলারটা ছাড়।’
শাহীন ছাড়ে না, বরং ভাব দেখিয়ে হাতের মুঠোয় আরও শক্ত করে পিষে ধরে ধ্রুবর এলোমেলো, ইস্ত্রিবিহীন শার্টের কলার, চেঁচিয়ে বললো-
‘ এই ধরছি, কি বা* ফালাবি ফালা দেখি।’
ওই ছেলে তখনও জানে না, আগত ঝড় সম্বন্ধে। ধ্রুব ইয়ামিন- যে তার এক থাবায় চারপাশের সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে ফেলে। ওর জন্যে ছোট একটা শাহিনকে সামলানো তুড়ির ব্যাপার।শাহীন তখনও রক্ত-চোষার ন্যায় ধ্রুবর দিকে চেয়ে আছ। ধ্রুব এবার মৃদু হাসল, বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে হঠাৎই রাজুর কলার ধরে রাখা অবস্থাতেই কলার পা দিয়ে লাথি দিয়ে বসলো শাহিনের একদম মেইন পয়েন্টে।
তাৎক্ষণিক কুকড়ে উঠে ছিটকে গেল ও দু কদম। দুহাতে চেপে ধরলো ব্যথাতুর জায়গা। ধ্রুব চিৎকার করে উঠেলো- ‘তোর কলিজা কত বড় রে শুয়ো** বাচ্চা? আমার, ধ্রুবর কলার চাপস? আজকে তোরে -‘
রাগে অন্ধ ধ্রুব ওর সামনে থাকা ছেলের মাথাটা টেনে নিয়ে ব্যথায় নীল হয়ে যাওয়াশাহিনের মাথায় ধাক্কা খাইয়ে বাড়ি দিল। দুটোর মাথা একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়াই দুজনেই ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
চিৎকার-চেঁচামেচিতে মুহূর্তেই লোক জড়ো হয়ে গেল জায়গাটায়। সবাই অবাক চোখে দেখছে- মন্ত্রীর ছেলের বখাটেপনা, লড়াই! ধ্রুব পাগলের মতো লাথি দিচ্ছে ওদের গায়ে! একজন তো ধ্রুবর এমন মারামারি দেখে বলেই উঠেছে-‘কবে যে এসব নেতাদের থাইকা মুক্তি মিলবো আমাদের দেশের? দেশটারে খাইয়া ছাড়লো এই গুন্ডারা!’
অদিতি ওদিকটায় যাচ্ছিল, ওর টিউশনি আছে আজ। ভীষণ জ্বর ওর গায়ে। তবুও আজ পড়াতে বেরিয়েছে। নাহলে একদিনের স্যালারি কাটা যাবে। অদিতি অবশ্য বলেওছিলো স্টুডেন্টের মা-কে ওর অসুস্থতার কথা। কিন্তু তিনি খুব একটা সহানুভূতি না দেখিয়ে দোনামনা করতে লাগলেন। তাই না চাইতেও অদিতি বেরিয়েছে এই অসুস্থ শরীরেই।
আসার পথে রাস্তায় ধ্রুবকে কাউকে মারতে দেখে ও দাঁড়িয়ে গেল সেখানে। কীজন্যে অদিতি জানে না। কিন্তু দাঁড়াল ও, সেটা বুঝতে পারছে।
পাশ থেকে মুরুব্বিদের এতকথা শুনে অদিতি তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব রাগে কাঁপছে, কাঁপতে কাঁপতে এবার পাশ থেকে স্টিক তুলে মারতে শুরু করেছে কয়েকটাকে। সুমন বারবার আটকানোর চেষ্টা করছে ধ্রুবকে, পারছে না।ওতটুকু সুমন কি পারে আদৌ খ্যাপা ধ্রুবর সঙ্গে? সুমনকে ঠেলে ছিটকে ফেলে দিয়েছে ধ্রুব। তাই আপাতত সুমন একপাশে কোনঠাসা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
অদিতি দেখছে তখনও; কেমন পা/ষণ্ডের মতো মা/রছে ওই লোক! গাঁয়ের লোম সোজা হয়ে গেল অদিতির এসব দেখে। গ্রামে মারামারি লাগলে, কখনো অদিতি সরাসরি দেখেনি। দ্রুত ওর মা ওকে ঘরে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে রেখে দিয়েছে। কিন্তু আজ যা দেখছে- ও সেসব জীবনের প্রথম দেখছে। অদিতি চোখ-মুখ খেলছে আতঙ্ক, ভয়ে-ভয়ে দেখতে থাকছে খ্যাপাটে ধ্রুবকে।
ধ্রুবকে দেখতে দেখতে সুমনের হঠাৎ চোখ গেল একটু দূরে তটস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অদিতির দিকে। চোখ গুলো দূর্বলতায় ভেঙ্গে আসছে যার; অসুস্থ লাগছে ওকে! অদিতি দেখে সুমন ওর দিকেই চেয়ে আছে! অদিতি দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলো।
সুমন এগিয়ে গিয়ে ধ্রুবের হাত টেনে ধরলো। ধ্রুব তাকাল, সুমন মিনমিন করে বললো-
‘ধ্রুব ভাই, ভাবি দেখছে।’
ধ্রুব রক্তলাল চোখে আশেপাশে তাকাল! ওই যে; ওই মেয়ে দাঁড়িয়ে, আতঙ্কিত মুখটা বানিয়ে ধ্রুবকেই দেখছে। অথচ যেইনা ধ্রুবর চোখে চোখ পরলো অদিতির, ওমনি অদিতি আঁতকে উঠে দ্রুত পেছন ফিরে পা চালিয়ে পালাতে লাগলো।! ধ্রুব দেখল, বেনুনি দুলিয়ে মেয়েটা পালিয়ে যাচ্ছে ওদিক থেকে।ধ্রুবর থেকে পালাচ্ছে, হাহ!
ধ্রুব আবার সুমনের দিকে তাকাল। সুমন ধ্রুবর ওই তাকানো দেখে ভরকে গেল একপ্রকার, সঙ্গেসঙ্গে ঠোঁটে আঙুল চাপল ও। ধ্রুব দাঁত খিঁচিয়ে বললো
‘সুমন, ডু ইউ থিঙ্ক,আই ফ্যাকিং কেয়ার অ্যাবাউট হার?’
সুমন আড়চোখে অদিতির দাঁড়িয়ে থাকা জায়গার দিকে তাকালো। অদিতি নেই; অদিতি তখন চোখ-মুখ কুঁচকে দ্রুত ব্যাগ হাতে জায়গা থেকে পালিয়েছে। ধ্রুব সুমনের থেকে মুখটা সরিয়ে অগ্নি শ্বাস ফেলে সামনে তাকালো। ছেলেটার নাকে শেষবারের মতো ঘু/ষি বসাতেই ওই ছেলে ধ্রুবর পা ধরে বসে পড়ল। কাতরাতে কাতরাতে বলতে লাগল-
‘ভাই, আর এই ভুল হইবো না, আমার আম্মার কসম! ছাইরা দেন ভাই, দোহাই আপনার।’
ধ্রুব পা নাড়িয়ে ওকে সরাতে চেষ্টা করলো, পারলো না। একটুপর ধ্রুব জোরে শ্বাস টেনে পা ধরে বসে থাকা ছেলেটার দিকে চেয়ে কণ্ঠে আগুন ঝেড়ে বললো—‘নেক্সট টাইম মনে রাখবি- ধ্রুব ইয়ামিন এন্ড ওর বাপ-দুটোই এই ঢাকা শহরের কোন ত্রাস! একটার সঙ্গে লাগতে যাবি- অপরটা তোর হাড়-হাড্ডি এমন জায়গায় ফেলবে যে কুত্তায়ও মুখ দেবে না।’
ধ্রুব কথাটা বলে ছেলেটাকে লাথি দিয়ে চলে গেল বাইকের দিকে। পেছন পেছন সুমন দৌড়ে এগিয়ে আসছে।
________
বৃষ্টির মধ্যে বাইকটা বেশিক্ষণ চালাতে পারেনি ধ্রুব। সুমন টেনে নামিয়ে দিয়েছে ওকে! নাহলে ধ্রুব ছোঁয়চে বেশি। অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। সামান্য বৃষ্টিও সহ্য হয়না; ওর বাবাও একই রকম! দুজনের জিন একই জায়গায় এসে থমকে যায়।
কিন্তু ধ্রুব নিজের শরীরের পরোয়া কখনোই করে না, তবে সুমন তো করে! ও তাই বড্ড বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাইক থেকে নামমালো ধ্রুবকে। একটা ছাওনিতে দুটো দাঁড়িয়েছে। বাইকটা পাশেই রাখা। ধ্রুব ছাওনির নিচে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাল। সুমন পাশ থেকে কিছুটা ভয়-ভয় নিয়ে বলল-‘ভাই আজকে বিকেলের মধ্যেই অলরেডি ৭ টা হয়ে গেছে। এবার থামো প্লিজ।’
ধ্রুব সিগারেট মুখে নিয়েই হাসল! আবারও ওই বিশ্রী, ভাবলেশহীন হাসি! সুমন ওই হাসি দেখে গুটিয়ে গেল! ধ্রুব সিগারাটের ধোয়া মাথা উঁচু করে উপরের দিকে ছেড়ে দিল। তারপর বলল- ‘তোর সমস্যা হলে তুই চলে যা। বিরক্ত করবি না আমাকে।’
সুমন আর কথা বাড়াল না। ও ধ্রুবকে এই অবস্থায় এখানে রেখে কিছুতেই যাবে না, এটা ধ্রুব নিজেও জানে। তাই সুমন চুপচাপ দেখতে লাগলো ধ্রুবকে, ধ্রুবর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে পরে থাকা সিগারেটকে।
আচমকা এক পশলা বৃষ্টির মতোই কোথা থেকে দৌঁড়ে অদিতি এদিকেই আসছে। সুমনে সবার আগে দেখল অদিতিকে। অদিতি মাথায় ব্যাগ দিয়ে নিজের মাথাটা ঢেকে দৌঁড়াচ্ছে ছাওনির দিকে! সুমন অস্ফুট স্বরে বলল-‘ভাই, ভা-ভাবি।’
ধ্রুব হেলায় তাকাল সামনে! অদিতি দৌঁড়াচ্ছে। ওর পা-দুটো বৃষ্টির পানি ছুয়ে ছুয়ে যাচ্ছে, মসৃণ পায়ের আঘাতে রাস্তায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছলকে উঠছে। ভিজে যাচ্ছে অদিতির মসৃণ পা কাদা মাখা জলে।
এই বৃষ্টির মধ্যে পায়জামা একটু তুলে দৌঁড়াচ্ছে! তারপরও পায়জামার নিচে কাদা লেগে গেছে। ধ্রুব সিগারেট খেতে খেতে দেখছে সব! অদিতি দৌঁড়ে এসে ছাওনির নিচে ততক্ষণে দাঁড়িয়েছে।
ধ্রুব ওর পাশে দাঁড়ানো, অদিতি তখনও ধ্রুবকে খেয়াল করেনি। অদিতি মাথার উপর থেকে ব্যাগ নামিয়ে ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে গায়ের জামা থেকে পানি ঝাড়ার চেষ্টা করছে। ততক্ষণে ধ্রুবও চোখ সরিয়ে নিয়েছে অদিতির থেকে। ও নিজের মতো করেই আনমনেই সিগারেট খাচ্ছে!
জামা ঝাড়তে ঝাড়তে হঠাৎ অদিতির চোখ গেল পাশে! ধ্রুব দাঁড়িয়ে; ধ্রুব ইয়ামিন, ওর পাশেই। নিজের মতো করে সিগারেট খাচ্ছে! আশপাশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন। অদিতির আঁতকে উঠলো, ওর চোখে ভাসছে- আজকের দুপুরের ঘটনা! কিভাবে ন/রপি/শাচের মতো পি/টিয়েছে ওসব ছেলেদের!
অদিতি ঢোক গিলে! ব্যাগটা নিজের সঙ্গে আরো ভালো করে চেপে ধরে একটু সরে দাঁড়ালো পাশে! ধ্রুব সিগারেট খেতে খেতে ফিক করে হাসল! যাকে বলে তাচ্ছিল্যের হাসি। হয়তো ও লক্ষ্য করেছে- অদিতি ওকে ভয় পাচ্ছে, গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে ওর থেকে! ধ্রুব কিছুই বলল না, শুধু একটু হেসে আবারও আগের মতো নির্বিঘ্নে সিগারেট ফুঁকতে লাগল!
সুমন পাশ কথা বলার জন্যে উশখুশ করছিল। ও নিজেকে দমাতে না পেরে বলেই ফেলল শেষমেশ;‘ভাবী এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় গেছিলেন?’
আবারও ‘ভাবি’! অদিতির মুখের রং ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ও চোরা চোখে ধ্রুবর দিকে তাকাল! হয়তো আশা করেছিল, ধ্রুব মানা করবে! কিন্তু ধ্রুব তেমন কিছুই করল না। ও তখনও উদাসিন।
সুমন অদিতির এমন অস্বস্তিকর তাকানো দেখে নিজেই বুঝে নিলো। ও দ্রুত নিজেকে শুধরে বলল- ‘সরি, নট ভাবি! ওনলি অদিতি। এখন বলেন কোথায় ছিলেন এই বৃষ্টিতে?’
অদিতি জড়োসরো ভাবে দাঁড়িয়ে, ছোট করে বলল -‘ টিউশনি করাতে গেছিলাম।’
সুমন অবাক হল, বলল -‘এতো বৃষ্টিতে? ‘
অদিতি উত্তর দিল না। মলিন হেসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল! ধ্রুব এসব শুনছে না; ও এসবে নেই!
আচমকা আকাশ চিঁড়ে আলো দেখা গেল! অদিতি চমকে আকাশের দিকে তাকাল! তারপর আচমকা এক ভয়াবহ আকাশের গর্জন! অদিতি চেঁচিয়ে উঠে ছাওনির পিলার চেপে ধরল! সুমনও কিছুটা ভয় ওয়েছে। ও অদিতির দিকে তাকাল। মেয়েটার চোখ-মুখের রং বদলে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে ফাঁকে-ফাঁকে। আকাশের গর্জনে ফোবিয়া আছে অদিতির?
পাশ থেকে সুমন ধ্রুবর কানের কাছে উঁচু হয়ে এসে বিড়বিড় করল—‘ভাই; ভাবি মনে হয় বৃষ্টি ভালোবাসে না। রোমান্সের খাতায় আপনার আরো এক নম্বর কাটা।’
ধ্রুব এসব ফালতু কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে সুমনের দিকে তাকাল! সুমন সঙ্গেসঙ্গে ঠোঁটে আঙুল চেপে আবারো সোজা হয়ে দাঁড়াল!
কিছুক্ষণ পর বাঁচাল সুমন আবারও কথা তুলে; অদিতিকে জিজ্ঞেস করল- ‘আপনার বৃষ্টি ভালো লাগে না নাকি? ভা- অদিতি?’’
অদিতির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল! ও আনমনে আকাশের দিকে তাকাল! আকাশে তখন ঝড়ো বৃষ্টি, ঝুমঝুমিয়ে রাস্তায় পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা! ভীষণ সুন্দর ছন্দ তুলছে! অদিতি আনমনে শেষ দেখতে দেখতে বলে উঠল-‘
‘বৃষ্টি আমার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়েছে! আম-‘
বাকি কথা শেষ করতে পারে না অদিতি। তার পূর্বেই ধ্রুব সিগারেট মেঝেতে ফেলে এই বৃষ্টির মধ্যেই ছাওনি থেকে বেরিয়ে গেল। সুমন হতবাক! ও দৌঁড়ে গেল ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব বাইক চালু করছে। ইতিমধ্যে দুজন ভিজে একাকার। সুমন বৃষ্টিতে ভিজছে, বলল-
‘ভাই, বৃষ্টিটা থামুক? আরও একটু থাকি। তুমি অসুস্থ হয়ে যা-‘
ধ্রুব তাকাল, ভ্রু কুঁচকে চাপা স্বরে বললো; -‘ তুই গেলে যা, না গেলে মুড়ি খা, আমারে টানবি না এসবে।’
ধ্রুব কথাটা বলে বাইকের ইঞ্জিন চালু করলো। সুমন আর কি করবে? না চাইতেও এই বৃষ্টি-বাদলের দিন ধ্রুবর বাইকে চড়ে বসল। অদিতি দেখছে- ধ্রুব চলে যাচ্ছে! সম্পূর্ণ কাকভেজা, মাথার চুল লেপ্টে গেছে কপালে। ঝড়ো বাতাসে ধ্রুব ইয়ামিনের গলা ঝুলানো ষ্টার লকেটের চেইন ক্রমাগত দুলছে!
#চলবে