ডিভোর্স পেপার ২য় পর্ব
ডিসেম্বরে দুই রুমের এক ছোট্ট বাসায় আমরা উঠলাম।অনিচ্ছাকৃত বাসা নেয়ায় রিয়াদকে কেমন যেনো অন্য রকম লাগে। কথা বলে তবে একটু পর পর লাগে। কিন্তু আমি অনেক খুশি। আলহামদুলিল্লাহ্ নিজের একটু ছোট্ট সংসার হলো। নিজেকে শান্তনা দিচ্ছি একসাথে যেহেতু আছি দুদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় বাইরে গিয়ে কিছু সাংসারিক তৈজসপত্র কিনে আনলাম। ঘর-দোর সাজাচ্ছি।
ছোট ছোট প্রশ্ন করছি একের পর এক। কোন্ টা কোথায় রাখবো, কিভাবে রাখবো, এভাবে ভালো দেখাচ্ছে, তো ওভাবে রাখবো?
মনে হয় প্রশ্ন শুনতে ওর ভালো লাগছে না। আমি যেমন ইচ্ছে রাখবো ওর কোনো মতামত নেই।
দুই দিন পরে আমরা দুজন আছরের নামাজ পড়ে পাশাপাশি বসে আছি। ওর মোবাইলটা আমার হাতে। যদিও মোবাইল কখনো আমাকে ধরতে দিতে চাইতো না।
আমি হাতে পেয়ে কথার আড়ালে ম্যাসেজ এর ইনবক্সে গেলাম। সেই আনসেইভ নাম্বার শেষ তিন ডিজিট এক শুন্য শুন্য। ক্লিক করলাম সাথে সাথে গোপনে আর দ্রুত।
কিছু রোমান্টিক যৌথ ছবি তার ভিতরে রোমান্টিক কিছু কবিতার পংক্তি, কিছু বাজে পিকও সাথে।
দেখে বুকের ভেতর টা কেমন ধক করে উঠলো। ওর মোবাইলে এ ধরনের এসএমএস কে পাঠাতে পারে? এতো সেই নাম্বার যা স্টুডেন্ট এর বলেছিলো।
– এগুলো কে পাঠালো, তোমার কাছে এরকম ছবি পাঠাতে পারে কেউ?
যে আমাকে পারলে হাত মুজো পা মুজো পড়িয়ে রাখে। অচেনা নাম্বারের কল রিসিভ করতে না করে। তার মোবাইলে নোংরা পিক মাঝেমাঝে শুভেচ্ছা সহ রিপ্লাই, আজব তো!
মোবাইল টা হাত থেকে নিয়ে বলে-
– মোবাইল ধরছো কেনো, কিসের পিক কি? ওই এক ভাবি। আর ধরবে না। আবার ফোন দিও না ও নাম্বারে। নাম্বার কি মুখস্থ করে ফেলেছো নাকি? সে অভ্যেস তো ভালো আছে।
মেধা কাজে লাগাও ক্যারিয়ার গড়ো সেটাই ভালো হবে। এসব নিয়ে পড়ে থাকতে হবে না।
হ্যাঁ, আমার একটা বদ অভ্যেস আছে একটা নাম্বার দেখলেই মুখস্থ হয়ে যায়। আর সেটা নিয়েই আমাকে ব্যাঙ্গ করছে।
ওর কথাবার্তা আমার বুকে চাবুকের মতো বিঁধছে। যেখানে আমি কিনা কিছু বলবো সেখানে আমাকে থামিয়ে দিচ্ছে কেমন কৌশলী কথায়।
রিয়াদের এমন কথায় আমার সন্দেহ আরও প্রগাঢ় হচ্ছে আর নাম্বার টাও সেভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে দ্রুত।
মনের মধ্যে শুধু আঁকুপাঁকু করে। একটা কল দিয়ে দেখবো নাকি? কি পরিচয় দিয়ে কথা বলবো, আমার সাথে কি কথা বলবে? ওর আচরণও দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বাড়িতে থাকাকালীনই সম্পর্ক ভালো ছিলো বাসায় এসে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। আমাকে একদমই সময় দেয় না। কাজ ছাড়াও বেশি সময় বাইরে থাকে। ভাবে না আমি একা একা বাসায় কিভাবে থাকি। টিভি দেখা অন্যায় এজন্য একটা টিভিও কিনে দিচ্ছে না। একা একা লাগে খুব আর ওই নাম্বারের মানুষটাকেই দোষী মনে হয়। এক সকালে সাহস করে কল দিয়েই বসলাম।
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে এক ছেলে কন্ঠ ভেসে আসলো।
– ওহ সরি, রং নাম্বারে চলে গেলো।
– ওকে
– আচ্ছা ভাইয়া জায়গাটা কোথায়?
রিয়াদের এলাকার নাম।
– ও তাই, আমার এক বান্ধবী ছিলো ওখানকার।
কলেজে একসঙ্গেই পড়তাম।
– আপনার নাম কি?
– শামীম
– ফোন টা আপনার?
– না, আমার বোনের
– বোন কি করে?
– ও কলেজে পড়ে
– ওর নাম কী?
বলতে চেয়েও বললো না। মনে হলো কেউ একজন বারণ করছে।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
মোটামুটি একটা ধারণা পেলাম। যাক পরে আবার কল দিলে দেয়া যাবে।
রিয়াদ দুপুরে অফিস থেকে বাসায় ফেরে স্বাভাবিক মুড। খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে বিকেলে বাইরে গেলো। আমার ভিতর টা আনচান করছে ওকে এবিষয়ে কিছু বলে কিনা আবার। ও তাহলে নিশ্চিত হবে আমিই কল করেছি আমার উপর আরও রাগ করে থাকবে।
আমার ভিতরে কেমন হারানোর ভয় তৈরি হচ্ছে।আমি ওকে হারিয়ে কি বাঁচতে পারবো?
আমি যে পাগলের মতো ভালোবাসি। আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো যে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলে, সম্পর্ক তৈরি করে। ওকে এক পলক না দেখলে আমার ভালো লাগে না সেই মানুষটি কেনো পর হয়ে যাচ্ছে? কম কথা বলছে আমার সাথে। ভালো লাগে না একটুও।
পরের দিন সকালে অফিসে যাওয়ার আগে আমার মোবাইল থেকে সিমকার্ড খুলে নিয়ে নতুন একটা দিয়ে বললো এখন থেকে এটা ব্যবহার করো। ওটা আমার কাছে থাকুক। আমি কিচ্ছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না। এক প্রকার জোরাজুরি শেষে আমার সিমকার্ড আমাকে দিলো। তবে অনেক রেগে মেগে আছে আমার উপর।
অফিসে যাওয়ার পরে আমার আর তর সইছে না কখন ওই মেয়েকে ফোন দিয়ে বারণ করবো আর মনে একটু শান্তি পাবো। মেয়েটা সত্য টা শুনলে কেটে পড়বে নিশ্চয়ই।
এবার সরাসরি মেয়েটাই ফোন রিসিভ করলো । আমি নিজ পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলাম।
– তুমি রিয়াদ কে চেনো?
– কোন রিয়াদ?
– যে রিয়াদকে সারাদিন ফোন দাও, এসএমএস করো।
– সে আপনার কি হয়?
– আমি তার স্ত্রী। তুমি কখনো আর ফোন দিবা না। তুমি মাত্র কলেজে পড়ো সে তোমার অনেক সিনিয়র এবং ম্যারিড।
– আপনি কোথায় থাকেন? (ও ভাবলো আমাদের ও প্রেমের সম্পর্ক)
– আমরা এক সাথে ই থাকি একই বাসায়। তুমি আর ফোন দিবা না বলছি মনে রাখবে।
বাসায় এলো দুপুরে কিন্তু খাচ্ছে না কথা বলছে না। আমার উপর ভয়ানক রেগে আছে। কিছু বলবো তার সাহসও হচ্ছে না। বিকেলে বাইরে চলে গেলো।
মনটা পুড়ে যাচ্ছে যেনো। এখন মনে হচ্ছে ও আমাকে আসলেই ভালোবাসে না। ওই মেয়েকেই হয়তো আমার বিপরীত বলছে। ছোট বউ বানাবে। না হলে ওর আচরণ এমন কেনো। কেনো ও ইচ্ছেকৃত দূরত্ব বাড়াচ্ছে? বুকের ভেতর টা ভেঙেচুরে যাচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে রিয়াদ তোমাকে আমি হারাতে চাই না।
ভেতরের অভিমান চাপা রেখে একটা ফোন দিলাম ওকে যদিও কোনো কথা ছিলো না বলার।
– ফোন দিলে কেনো?
এমনি বলে আর কিছু বলতে পারলাম না কেটে দিলাম। তার মানে জেনে গেছে আমার ফোনের কথা। জোর করে নিজের ভিতরেও কিছু রাগ পুষি কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি কারণ ও রাগলে আমার ভালো লাগে না। ভীষণ কষ্ট হয়।
রাতে বাসায় ফিরে কথা বলে না। আমি ই সেধে সেধে দুয়েক কথা জিজ্ঞেস করি। তেমন উত্তর দেয় না।
– কি রান্না করবো?
– তোমার যা ইচ্ছে?
কিছু বই নিয়ে বসলো পড়তে আইনের বই। L.L.B করার খুব শখ। আমি নাড়াচাড়া করছি।
– এতো পড়ে আর কি হবে?
– (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো) হবে অনেক কিছুই হবে। তুমি আমার বিরুদ্ধে গেলে আমার বাঁচতে হবে না?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। একথা শুনবো ভাবতেই পারছিলাম না।
তারপর আবার বললো – পরীক্ষার ডেট পড়েছে এখন থেকে রেগুলার পড়তে হবে। তুমি খেয়ে দেয়ে ঘুমাও।
আমার ঘুম আসছে না কারণ ওর মোবাইল টা দেখে তারপর ঘুমোবো কিন্তু মোবাইল আগের জায়গায় রাখেনি বলে দেখতে পারছি না। গোপনে খুঁজতে থাকি। পেলাম ওর ব্লেজারের পকেটে। মিস কল, রিসিভ কল এবং ডায়াল কলে সেই নাম্বার। এখন মাথাটা খারাপ খারাপ লাগে। কী বলবো, কিভাবে জিজ্ঞেস করবো?
চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকালে নামাজ পড়ে এসে কোরআন তেলাওয়াতে বসলো মোবাইল চার্জে দিয়ে। কল আসছে দেখে এগিয়ে দিলাম রিয়াদকে। দিতে গিয়ে দেখি সেই মেয়ের নাম্বার। রিসিভ করলো না। আবার কল দিলো। এবার রিসিভ করে বাইরে চলে গেলো। চুপচাপ দেখে যাচ্ছি।
কিন্তু এবার কিছু বলবো ভাবছি।
তখন দুজনকেই বুঝিয়ে দিতে দুজনের নাম্বারে কল দিচ্ছিলাম। ওয়েটিং দুজন ই।
কথা শেষে ভিতরে এলো। চোখে মুখে রাগ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
– কে ফোন দিলো?
– তোমাকে বলতে হবে নাকি কে ফোন দিয়েছে?
কোনো নাম্বার পেলেই তাকে কল দিয়ে ডিস্টার্ব করার বদ অভ্যেস হয়ে গেছে। আর কখনো ফোন দেবে না।
– তুমি মেয়েদের সাথে নোংরামি করতে পারবে আমি সত্য বলে দিলে দোষ?
– মুখ সামলে কথা বলো। ফোন দিলে যদি তোমার ভালো হয় তবে দিতে থাকো।
– হ্যাঁ দেবো। যতক্ষণ প্রয়োজন মনে করবো দেবো।
প্রথমবারের মতো ওর মুখে উপর কথা বলতে বাধ্য করলাম নিজেকে।
নাস্তা না করে অফিসে চলে গেলো। চিন্তা করে পাচ্ছি না কি করবো এখন। এসব কথা কাউকে বলা কি ঠিক হবে? সবাই জানে আমাদের দারুণ সম্পর্ক। অনেক ভালো মানুষ রিয়াদ। মিলি ভালো বর পেয়েছে সবাই বিশ্বাস করে। এখন কার কাছে কি বলবো। কিভাবে ফেরাবো? অনেক ডিপ রিলেশন না হলে আমার সাথে বাজে বিহ্যাব করতো না।
এমন সময় ওই মেয়ে ফোন দিলো আমাকে। রিসিভ করতেই কান্না শুরু করে দিলো।
– আপু ও আপনাকেও ঠকাচ্ছে আমাকেও। আমাদের বিয়ে হয়েছে দের বছর আগে ওর ফ্যামিলি মেনে নেবে না এজন্য গোপন রাখছে। এর মধ্যে আপনাকে বিয়ে করে বাসা নিয়ে থাকছে আর আমাকে বলছে নেবে নেবে। আমার কোনো খরচাপাতি দেয় না। আপনার শিক্ষা আছে আমার সেটাও নেই। আমি কি করবো?
শুনে গেলাম শুধু কিছু বলতে পারছিলাম না। একটা পুরনো বইয়ের ভিতরে কাগজে লেখা ঠিকানা পেয়েছিলাম একটা মেয়ের নাম সুরাইয়া আক্তার সুমী। ওকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম সুমী? বললো হ্যাঁ।
রিয়াদ বাসায় এসে কোনো কথা বলে না। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে বাইরে চলে যায়। রাত ১০/১১ টা নাগাদ বাসায় ফেরে। ভাবলাম চুপ থেকে কি হবে যদি মেয়েটার কথা সত্যি হয় তবে বিষয়টি ক্লিয়ার জানা উচিত।
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটি কে?
– কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করলো। মেয়েটা আমাদের পাশের গ্রামের। ওর সাথে বিয়ের কথা ছিলো কিন্তু হয় নি। সেই থেকে মেয়েটা মাঝেমাঝে ফোন দেয়। বিয়ে হয়ে গেলে আর দেবে না। তুমি আর কখনো ফোন দিও না ওকে।
– মেয়েটা যে বললো বিয়ে হয়েছে দের বছর আগে? অনেক কান্নাকাটি করলো তো।
– হয়নি তো বললাম। মিথ্যে বলেছে। তুমি চাইলে বিয়ে করে আনতে পারি। একসাথে থাকবে বোনের মতো। থাকে না কত জায়গায়। তুমি বড় বউ থাকবে। সে তোমাকে হেল্প করতে পারবে কাজকর্মে। ঘরে তখন একা একা লাগবে না। আর না চাইলে দুই জন দুই বাড়িতে থাকবা ব্যবস্থা করে দেবো। তুমি রাজি থাকলে নিয়ে আসি।
কোনো কথা আর বলতে পারলাম না। নীরবে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে রাত পার করলাম।
দিনে দিনে আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেলো হাজার মাইল। ঠিকভাবে কথা নেই, বাসায় তেমন একটা থাকে না। কোনো কথা যেনো শুনতেও চায় না। মাসে অনন্ত দুই বার ঢাকা যাওয়ার নাম করে আমাকে পাঠিয়ে দিতো বাবার বাড়ি। কল দিলে ঠিকভাবে রিসিভ করতো না পরে ব্যাক করতো। কতোদিন যে উল্টাপাল্টা কথা বলতো বুঝতে পারতাম কিন্তু স্ত্রী আছে এমন সন্দেহ করতাম না।
সুমীর সাথে কয়েক দিন কথা হলো রিয়াদকে নিয়ে। অনেক বিষয় ওর আমার কথায় মিলে যায় সেই উল্টাপাল্টা মিথ্যে বলা কথাগুলোর। ঢাকা যাওয়ার নাম করে কখনোই ঢাকায় যায় নি। তখন সুমীর সাথে সময় কাটাতো।
বাসা নিয়ে থাকার কথা সুমীর কাছে অস্বীকার করেছে। সুমী আমার সাথে কথা বললে ওর সাথে আর কথা বলবে না। এজন্য সুমী আমার সাথে কথা বলতে ভয় পায়।
এক বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো ফিরতে রাত হবে বলে। রাত দশটার দিকে ফোন দিয়ে বলে এক আত্মীয় অসুস্থ হসপিটালে তার সাথে থাকতে হবে। কেউ এলে তাকে রেখে বাসায় চলে আসবে। কিন্তু সারারাতে আর আসেনি। প্রথমবারের মতো একা বাসায় রাত কাটালাম খুব ভয় পেয়েছিলাম। সকালে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে অফিসে চলে গেলো। প্যাশেন্ট কেমন আছে জানতে চাইলাম। বললো- আগের চেয়ে একটু সুস্থ। ওর বলার ঢংটা ভালো লাগলো না।
যাওয়ার পর সুমীকে ফোন দিলাম। রিসিভ করে বলে- আপনাকে কি বলেছে?
আমার কথা শুনে হেসে দিলো।
বাড়িতে জানালাম। আর না জানিয়ে উপায় নেই। ওকে জিজ্ঞেস করলে সব অস্বীকার করে। সাথে আমার সমন্ধে কিছু নেগেটিভ কথা বলেছে।
রাত ছাড়া ওকে বাসায় পাওয়াই যায় না কোনো কথা বলার জন্য কিংবা জানতে চাওয়ার জন্য। রাতে বাসায় ফেরার পর বিষয়টা তুললাম।
– তুমি কি করতে চাও? আমার পক্ষে এসব মেনে নেয়া সম্ভব না।
– আমার কি করতে হবে? আমারও কিছু করা সম্ভব না।
-মানে? তুমি দুজনকে ফাঁকি দিয়ে দিব্যি চালিয়ে যাবে?
আমাকে মানিয়ে নিতে জ্ঞান দান করে যাচ্ছে। তোমাকে কি ভালোবাসি না? কি সমস্যা মেনে নিতে? একসঙ্গে না থাকলে আলাদা দুই বাড়িতে থাকবা। তোমাকে নিয়ে তো বাসা করেই থাকি। তাহলে তুমি কথা বলো কেনো? কথা তো তার বলা উচিত। সে কিন্তু তোমাকে মেনে নিয়েছে। তুমিও মেনে নাও।
বললাম সেটা কক্ষনও সম্ভব নয়। তোমাকে ফিরে আসতে হবে নয়তো আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমি মেনে নিতে পারবো না।
– কষ্টের সাথে বললো আমাকে সময় দাও সংশোধনের?
– কতোদিন?
– যতোদিন সে না যেতে চায়।
– এটা কেমন কথা। তুমি আমাকে বিয়ে করেছো কেনো?
– সে অশিক্ষিত বলে কেউ মেনে নিচ্ছে না। ভাবছিলাম তাকে কখনো সামনে আনবো না। কিন্তু তোমার জন্য সেটা সম্ভব হলো না।
তুমিও আমাকে ভালোবাসো সেও বাসে। তাই বলি দুজনই মেনে নাও। কখনো ভালোবাসায় কমতি হবে না।
মনের সাথে যুদ্ধ করে চার মাস কাটলো। দিনে দিনে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। ও কোনোদিনই ওই মেয়েকে ছেড়ে আসতে পারবে না। প্রচণ্ড একাকী সময় কাটে বাসায়। ওর সাথে কোনো বিষয় শেয়ার করার মন মানসিকতাও নেই। একই বাসায় কিন্তু ভীষণ পর পর লাগে। বাড়িতে গেলেও ভালো লাগে না। চলে আসি। ও যতক্ষণ বাসায় থাকে ততক্ষণ ই ভালো লাগে। কথা না বললেও। ভেতরে ভেতরে এক কথায় মরে যাচ্ছিলাম। আমাদের সম্পর্ক তখন কাগজেই বিদ্যমান বলা চলে। প্রায়শই রাত করে বাসায় ফেরে। এখন আর কিছু জানতেও চাই না।
সুমীর নাম্বার বন্ধ তার সিমকার্ড চেঞ্জ করে দিয়েছে। তার জন্য বাসা নিলো কিনা জানিনা। আমার কাছে কোনো যৌক্তিক প্রমাণ নেই। সুমী বলেছিলো- আমি বড়, আমি আইনি ব্যবস্থা নিলে আপনার বিয়ে টিকবে না। সত্যি তাই। আমার সাথে প্রতারণা করলো তার কোনো কাগুজে প্রমাণও আমার কাছে নেই। হয় মেনে নাও নয়তো চলে যাও- বর্তমানে এ সম্পর্কটাই আছে।
মেনে নিতে নিতে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। খাওয়া দাওয়া নেই, লেখাপড়া নেই, কারো সাথে মিশতেও ভালো লাগে না। কোথাও যেতে ভালো লাগে না। রোগা রোগা লাগে আজকাল। আর পারছি না। হয় এসপার নয় ওসপার কিছু একটা হোক। আর সৈহ্য করতে পারছি না।
এপ্রিলের এক দুপুরে বললাম- তোমার আমার মধ্যে একটা ফয়সালা হওয়া জরুরী। এভাবে কোনো সম্পর্ক টিকতে পারে না।
– তোমার যা ভালো লাগে করো। যেভাবে ভালো থাকবে সেটাই হোক।
১১ এপ্রিল অফিসে যায় নি বাসাতেই আছে। হঠাৎ ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে নিলো। ওর চোখে পানি। অনেক মন খারাপ করে বললো- মিলি, প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করো না। তুমি এমন কিছু করো না যাতে তুমিও কষ্ট পাও আর আমিও। আমি তোমাকে কোনোদিনই ছাড়বো না। তুমিও ছেড়ো না। আমাকে ছেড়ে তুমি কি থাকতে পারবে? পারবে না আমি জানি। প্লিজ আলাদা হওয়ার চিন্তা করো না।
ক’দিন ধরে ওকে বেশ চিন্তিত লাগে। নতুন ভাড়াটিয়ারা বাসা দেখতে আসছে। আমি অবাক হলাম বাসা ছেড়ে দিয়েছে আমাকে তো কিছু বললো না। ওকে বলাতে বলে- তুমি কয়েক দিন বাড়িতে গিয়ে থাকো। পরে ভালো দেখে আবার নতুন বাসা নেবো। আমি মানছি না। বাসা ছাড়া যাবে না। আচ্ছা ঠিক আছে নতুন বাসা দেখবো। ১৮ তারিখ রাতে এসে বলে নতুন বাসা ঠিক করে এলাম। যা ওর অফিস থেকে অনেক দূরে সুমীর নানা বাড়ির কাছে। আমি না করায় বললো- থাকলে ওখানেই থাকতে হবে নইলে বাড়িতে গিয়ে থাকো। আর কোনো কথা বললাম না।
খুব ভোরে নামাজ পড়ে এসে বললো-
– আমার ছোট চাচা মারা গেছে। এখন সেখানে যেতে হবে। তুমি বাড়িতে চলে যাও। আজ আসা সম্ভব হবে না। একমাত্র চাচা ই বেঁচে ছিলেন তাও শেষ হয়ে গেলো।
– আচ্ছা একদিনের জন্য বাড়িতে আর কি যাবো ছোট খালামণির বাসায় যাই।
ও রাজি হয়ে গেলো। ও রেডি হচ্ছে ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আর আমি খালার বাড়ি। কাছাকাছি বেশি দূরে নয় খালার বাড়ি। রিয়াদ রিকশা ভাড়া টা আমার হাতে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলো। আর ও বের হয়ে যাওয়ার পর পর ই আমি চলে আসি। হ্যাঁ, এটাই আমার শেষ বারের মতো চলে আসা। ওই ১৯ তারিখে আমাকে পাঠিয়ে দিয়ে বাসার সব মালামাল নিয়ে চলে যায়।
২০ এপ্রিল সকালে বলে- আমি বাসায় আসতেছি। পৌঁছলে তোমাকে ফোন দেবো। তারপর তুমি এসো। বিকেলে বলে- আমি বাসায় এসেছি। আমি চলে গেলাম। গিয়ে দেখি বাসায় তালা দেয়া। বাড়িওয়ালা অবাক হলো আমাকে দেখে। আমি জানি না কিছুই এ কথা শুনে।
বলেন- তোমাদের সম্পর্ক ভালো না এটা তো কখনো জানতাম না। তাহলে বাধা দিতাম।
রিয়াদ কে ফোন দিলাম বলে- আমি খারাপ মানুষ এজন্য সরে গেলাম। তুমি ভালো থেকো।
কষ্টে যখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছি তখন বাবা ফোন দিয়ে জানালো – তোর নামে রিয়াদ চিঠি পাঠিয়েছে সম্ভবত ডিভোর্স লেটার।
বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটা সম্ভব না। খালার বাসায় চলে এলাম আবারও। কোনো ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না- রিয়াদ আমাকে ডিভোর্স দিতে পারে?
১৮ এপ্রিল আমাকে ডিভোর্স দিয়ে বাসায় এসে বলেছিলো। নতুন বাসা ঠিক করে এলাম। আসলেই নতুন বাসা ঠিক করে এলো যেখানে আর আমি নেই।
আমার অন্ধ বিশ্বাসের,
আমার অন্ধ ভালোবাসার পরিসমাপ্তি এনে দিলো একটা ডিভোর্স পেপার।
লকলকিয়ে বেড়ে ওঠা একটা স্বপ্নের মৃত্যু এনে দিলো একটা ডিভোর্স পেপার।
অভিমানে চোখের সাগর পুড়ে জলন্ত আগ্নেয়গিরির সন্ধান দিলো একটা ডিভোর্স পেপার।
চলবে…….
উম্মে কুলসুম লাইজু
বি:দ্র: প্রথম পর্বে সবার প্রেরণাদায়ক মন্তব্যে অভিভূত ও কৃতজ্ঞ। আশা করি ২য় পর্বও সবার ভালো লাগবে।